Join to Our Community
Community Grows With You

আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষ কয় প্রকার ও তাদের গুণাবলী

এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করেছি আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষ কয় প্রকার ও তাদের গুণাবলী।

সংসারে কিছু মানুষ আছে যারা প্রায়ই বুলি আওড়ায়, ‘মন যা চায় তাই করো। শাস্ত্র-টাস্ত্র বেশী পড়ে কাজ নেই।’ অথচ তারা তর্ক’বিবাদে বেশ অভ্যস্ত। মহর্ষি ব্যাসদেব রচিত মহাভারতের শান্তি পর্বে ২৪৬ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন যে, দশ প্রকারের আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষ বৈদিক শাস্ত্রের ধার ধারে না। কদাচারী হওয়া সত্ত্বেও তারা নিজেকে সদাচারী বলে সমাজে জাহির করে।

আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষের প্রকারভেদ

বৈদিক শাস্ত্র কথা শুনতে বা মানতে আগ্রহী নয় সেই দশ প্রকারের আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষ হলো —

(১) অপ্রশান্ত:

প্রশান্ত মানে হলো প্রকৃষ্ট সুখ নিয়ে যারা রয়েছে। আর অনিত্য জড়জাগতিক নিকৃষ্ট বস্তুকেই সুখ সম্ভোগের বিষয় বলে যারা মনে করে, তারা অপ্রশান্ত। তারা বৈদিক শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় না।

(২) অজিতেন্দ্রিয়:

এই প্রকার মানুষ জড়জগতের রূপের প্রতি, রসের প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট।

(৩) তপস্যা বিমুখ:

এই প্রকার মানুষ কারও কথা সহ্য করতে পারে না, তারা আরাম প্রিয়ও এবং কোনও কষ্ট সহ্য করতে চায় না।

(৪) বেদবিহীন :

এই প্রকার মানুষ বৈদিক সংস্কার বিহীন পরিবার জন্মায় এবং এরা নিষিদ্ধ কর্মে আকৃষ্ট, বৈদিক শিক্ষা অনুশীলন করে না।

(৫) অবশীভূত:

এই প্রকার মানুষ নিজেকে স্বাধীন এবং অতি চালাক বলে মনে করে ।

(৬) অসূয়া পরতন্ত্র:

এই প্রকার মানুষ অন্যের গুণ দেখতে পারে না, যারা অন্যের গুণের মধ্যে দোষ আরোপ করে। তাছাড়া অন্যের সৌভাগ্য বা উন্নতিতে দ্বেষ বা হিংসা করাই এদের স্বভাব।

(৭) অসরল:

পেঁচালো ধরনের স্বভাবাপন্ন মানুষ।

(৮) যথেচ্ছচারী:

এই প্রকার মানুষ অন্যের কথায় ভালোমন্দ, কর্তব্য অকর্তব্য, দিকদিশা, পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা না করে ইচ্ছে মতো আচরণ করে। এই মুহূর্তে তারা কারও কথা মতো চলল, আবার ঠিক পরক্ষণেই অন্য একজন যা নির্দেশ দিল সেটির ভালো বা মন্দ বিচার না করেই সেই মতো চলতে লাগলো। এরকম ব্যক্তি যখন যা ইচ্ছা সেই মতোই আচরণ করে। যখন যা শুনবে সবেতেই সে সায় দেয়, কিন্তু কর্তব্য অকর্তব্য নির্বাচন করে না।

(৯) প্রতিকূল-তর্কপরায়ণ:

যখনই এরকম ব্যক্তি শাস্ত্র কথা শোনে তখনই তার বিরুদ্ধাচারী কোনও চরিত্রের কথা সে চিন্তা করতে থাকে, যাতে সে শাস্ত্র-নির্দেশের বিপক্ষে থাকাটা ঠিক বলে জাহির করতে পারে।

(১০) কুটিল:

এই প্রকার মানুষরা হয় চতুর ও কপট। এরা কোনও বিধি নিষেধ মানে না, অথচ তারা লোককে দেখাতে চায় যে, সে অত্যন্ত বিধিপালনকারী নিষ্ঠাবান ব্যক্তি। অথচ তারা কলির চারটে পাপকর্ম—আমিষ আহার, নেশাভাঙ, জুয়া, অবৈধ সঙ্গ—কোনও না কোনটার সাথে জড়িত থাকে। এই ধরনের মানুষেরা কোনদিন ভক্ত হতে চাইবে না। এবং তারা বৈদিক শাস্ত্র কথার প্রতি উদাসীন থাকবে। অবশ্য, এই ধরনের কোনও উচ্চাসীন ব্যক্তিও সাধুসঙ্গ ক্রমে সাধু-গুরু-শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধান্বিত হতে পারে যদি সে হরিনামের প্রতি একটুখানি মননিবেশ করে। যত পাপী তাপী ছিল হরিনামে উদ্ধারিল। তার সাক্ষী জগাই মাধাই।

আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষের গুণাবলী

আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষের গুণাবলী, চিন্তাধারা ও কার্যকলাপ ভগবদ্গীতার ১৬ অধ্যায়ের ১৩-১৬ নং শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে –

❏ আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষের মধ্যে প্রকাশিত হয় দম্ভ, দর্প, অহঙ্কার, ক্রোধ, বাক্যে কর্কশতা, ব্যবহারে উগ্রতা, এবং অবিবেকচতা।

❏ আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিরা ধর্মবিষয়ে প্রবৃত্ত হতে অনিচ্ছুক এবং অধর্ম বিষয় থেকে নিবৃত্ত হতে জানে না। তাদের মধ্যে শুচিতা নেই, সদাচার নেই এবং সাত্বিক গুণ নেই।

❏ আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিরা মনে করে, এ জগতে ঈশ্বর বলে কেউ নেই। কামবশত নারীপুরুষের সংযােগেই এজগৎ সৃষ্টি হয়েছে এবং কাম ছাড়া অন্য কোন কারণ নেই। এ সমস্ত সিদ্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্ত্বহীন অল্পবুদ্ধি উগ্রকর্মা অসুর-স্বভাবাপন্ন ব্যক্তিরা জগৎ ধ্বংসকারী কার্যে নিযুক্ত হয়। মৃত্যুকাল পর্যন্ত ইন্দ্রিয় সুখভােগকে তাদের জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে।

❏ আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিরা অজ্ঞানের দ্বারা বিমােহিত হয়ে নানা রকমের দুঃশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হয়, মােহজালে বিজড়িত এবং কামভাবে আসক্ত হয়ে অশুচি নরকে পতিত হয়। এই অসুর স্বভাবের ব্যক্তিরা মনে করে, “আজ আমার অত লাভ হল, ভবিষ্যতে আমার পরিকল্পনা অনুসারে আরও লাভ হবে। এখন আমার এত ধন আছে, ভবিষ্যতে আরও ধন লাভ হবে। সে আমার শত্রু তাকে আমি নাশ করেছি এবং আমার অন্যান্য শত্রুদের নাশ করব। আমিই ঈশ্বর আমি ভােক্তা। আমি সিদ্ধ, বলবান, এবং সুখী। আমি সব চেয়ে ধনবান এবং অভিজাত আত্মীয়-স্বজন পরিবৃত। আমার মত বলবান আর সুখী কেউ নেই।“

❏ এই সমস্ত আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষেরা আত্মাভিমানী, অস্ত্র, ধন, মান ও মদান্বিত হয়ে অবিধিপূর্বক দম্ভ সহকারে নামমাত্র যজ্ঞানুষ্ঠান করে। এরা অহঙ্কার, দর্প, কাম ও ক্রোধের দ্বারা বিমোহিত হয়ে স্বীয়দেহে এবং পরদেহে অবস্থিত পরমেশ্বর স্বরূপ ভগবানকে দ্বেষ করে এবং প্রকৃত ধর্মের নিন্দা করে।

❏ আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষরা ধন-সম্পদ, অর্থ বাড়াবার জন্য নানা রকম বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে। সেক্ষেত্রে যদি তাদের কোন রকম পাপকর্ম করতে হয় তবু তারা পিছপা হয় না এবং সেই কারনে কালোবাজারী, জুয়া প্রভৃতি অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়। তারা সর্বদাই পরিকল্পনা করে কিভাবে সেগুলির আরও উন্নতি সাধন করা যায়। তারা তাদের নিজেদের শক্তি সামর্থ্যের উপরে আস্থাবান কিন্তু তারা জানে না যে, যা কিছু তারা লাভ করছে, তা তাদের পূর্বকৃত পুণ্যকর্মেরই ফল মাত্র। 

❏ আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষরা মনে করে যে, তাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফলেই এই সঞ্চিত ঐশ্বর্য আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার উপর আস্থাবান, কিন্তু তারা কর্মফলে বিশ্বাস করে না। মানুষ তার পূর্বকৃত কর্মের ফলে উচ্চকুলে জন্মগ্রহণ করে অথবা ধনবান হয়, অথবা উচ্চ শিক্ষিত হয় কিংবা রূপবান হয়। আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষ মনে করে যে, এই সমস্তই ঘটনাচক্রে এবং তাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফলে ঘটে চলেছে। 

❏ কেউ যদি এই সমস্ত আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষদের প্রতিযোগী হয়, তা হলে তারা তাদের শত্রুতে পরিণত হয়। আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষ অসংখ্য এবং তারা সকলেই একে অপরের শত্রু। এই শত্রুতা গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে প্রথমে ব্যক্তিগত, তারপর পরিবারে পরিবারে, তারপর সমাজে, অবশেষে এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অপর রাষ্ট্রের। তাই, জগৎ জুড়ে সর্বদাই বিবাদ, যুদ্ধ ও শত্রুতা লেগেই রয়েছে।

❏ প্রতিটি আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষই মনে করে যে, অন্য সকলকে বলি দিয়ে সে বেঁচে থাকবে বা উন্নতি সাধন করবে।

আরও পড়ুন: ভগবদগীতা মাহাত্ম্য ও তার তাৎপর্য

আরও পড়ুন:মহাভারতে অর্জুনকে দেওয়া শ্রীকৃষ্ণের পরম শিক্ষা || ইসকন

আরও পড়ুন: ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ১০টি প্রতিজ্ঞা মানুষের মুক্তির উদ্দেশ্যে

আরও পড়ুন: ৩৫টি মহাভারতের রহস্যময় অজানা তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বাণী ||ইসকন

আরও পড়ুন: দেবতারা কেন স্বর্গে থাকেন আর দানবরা কেন পাতালে থাকেন ?

Join to Our Community
Community Grows With You
x

This website uses cookies.