daextlwcn_print_scripts(false);
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতরন-এর উদ্দেশ্য কি_1

ভগবান “শ্রীকৃষ্ণের অবতরন”-এর উদ্দেশ্য কি?

1 min


193
162 shares, 193 points

এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করেছি ভগবান “শ্রীকৃষ্ণের অবতরন”-এর উদ্দেশ্য কি?

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতরনের উদ্দেশ্য?

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার চতুর্থ অধ্যায়ের অষ্টমতম শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন –

পরিত্রাণায় সাধূনাম্‌ বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।। (৪/৮)

■ অনুবাদঃ  সাধুদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।    

সুতরাং ভগবান বলেছেন, “আমি অবতীর্ণ হয়ে মূলত তিনটি কার্য সমাধা করি—

১। সাধুদের পরিত্রাণ : ভগবদগীতা অনুসারে কৃষ্ণভাবনাময় মানুষ বা ভক্তরা হলেন সাধু। কোন মানুষকে আপাতদৃষ্টিতে অধার্মিক বলে মনে হলেও তাঁর অন্তরে তিনি যদি সম্পূর্ণভাবে কৃষ্ণভাবনাময় হন, তবে তাঁকে সাধু বলেই বুঝতে হবে। আর যারা কৃষ্ণভাবনাকে গ্রাহ্য করে না, তারাই হল দুষ্কৃতাম্। এই সমস্ত অসাধু বা দুষ্কৃতকারীরা লৌকিক বিদ্যায় পারদর্শী হলেও তারা প্রকৃতপক্ষে মূঢ় ও নরাধম হিসাবে গণ্য হয়। কিন্তু যিনি সর্বতোভাবে ভগবদ্ভক্তিতে নিয়োজিত, তিনি শিক্ষিত ও সুসভ্য না হলেও তিনি সাধু হিসাবে গণ্য হয়।

ভগবান বলছেন, আমার যে সকল ভক্ত আমার দর্শনাকাঙ্ক্ষায় অতিশয় উৎকন্ঠ চিত্ত, তাঁদের দর্শন দান করি। তাঁদের বিরহ বেদনা দূর করি অর্থাৎ ভক্তদের সঙ্গে লীলা আস্বাদন করি।

২। দুষ্কৃতি বিনাশ : সমাজে উৎপীড়নকারী অসুরদের বিনাশ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করি।

৩। ধর্ম সংস্থাপন : জগতে জীবের কল্যাণার্থে তাঁদের ধর্মযোগ শিক্ষা প্রদান করি, যার মাধ্যমে জীব আমার ধামে ফিরে আসতে পারে”।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতরন-এর উদ্দেশ্য কি_2

দুষ্কৃতি বিনাশ ধর্ম সংস্থাপন এই দুইটি গৌণ কারণ। ভগবানের অনন্ত শক্তি রয়েছে, তাই তিনি সর্ব শক্তিমান। যার ইচ্ছাতেই এই  জগত সৃষ্টি বা ধ্বংস হয়, সেখানে এই জগতের অন্তর্গত সমস্ত অসুরদের বিনাশের জন্য ভগবানের আসার প্রয়োজন হয় না।

ধর্ম সংস্থাপনার জন্য ভগবান তাঁর প্রেরিত দূত বা ভগবানের শক্তি সমন্বিত মহান শক্তিশালী আচার্যরা এই কাজটি করতে পারেন। আজও পরম্পরাক্রমে বর্তমান আচার্যগন ধর্মকে জগতের প্রতিটি দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং মহাপ্রভুর বাণী সার্থক করার জন্য ব্যাপৃত আছেন।

সুতরাং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতরনের মুখ্য উদ্দেশ্যটি হলো অসুর তথা দুষ্কৃতিদের উৎপাত থেকে সাধুদের পরিত্রাণ করে ভক্তদের শান্তি বিধান করা। ভক্তদের বিরহ বেদনা দূর করার জন্য, ভক্তদের আনন্দ বিধানের জন্যই তিনি এ জগতে ছুটে আসেন।

অসুরেরা ভগবদ্ভক্তদের নানাভাবে কষ্ট দেয়, এমনকি ভক্ত যদি তার স্বজনও হয়। যেমন, প্রহ্লাদ মহারাজ ছিলেন হিরণ্যকশিপুর পুত্র, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর পিতার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। যদিও শ্রীকৃষ্ণের মাতা দেবকী ছিলেন কংসের ভগিনী, কিন্তু তা সত্ত্বেও কংস তাঁকে এবং তাঁর পতি বসুদেবকে নানাভাবে নির্যাতিত করেছিল; কারণ সে জানতে পেরেছিল যে, শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের সন্তানরূপে আবির্ভূত হবেন। সুতরাং, কংসকে নিধন করার থেকেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতরণের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল দেবকীকে উদ্ধার করা; কিন্তু দুটি কার্যই একসঙ্গে সাধিত হয়েছিল। তাই এখানে বলা হয়েছে যে, সাধুদের পরিত্রাণ এবং আসুরিক দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করবার জন্য ভগবান বিভিন্ন অবতাররূপে প্রকটিত হন।

অনেকের মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে ভগবান কি তাহলে সর্ব শক্তিমান নন? এ কাজটাও তো তিনি তাঁর ইঙ্গিতে করিয়ে নিতে পারেন কিন্তু করছেন না কেন?

সন্তানের বিপদে পিতামাতা যেমন বিপদকে তুচ্ছ করে কারো অপেক্ষায় না থেকে তাকে রক্ষা করে নিজ সন্তানের প্রতি প্রেম-ভালবাসা প্রদর্শন করেন। তেমনি ভগবান সমস্ত জীব বা অনন্ত কোটি সন্তানের পিতা, তাঁর অনন্ত প্রেম। তাই তাঁর সন্তানেরা যখন বিপদাপন্ন হয়ে আর্তিভরে তাঁকে ডাকেন, তখন কি আর তিনি সুস্থির থাকতে পারেন?

● তিনি সর্বদা সন্তানদের জন্য উদগ্রীব। তাই তিনি বারবার এই ধরাধামে স্বয়ং চলে আসেন। তাই ভগবানের আসার মুখ্য কারণটি হলো তাঁর ভক্তদের আনন্দ বিধানার্থে তাঁদের তাঁর লীলায় অংশগ্রহণ করিয়ে আনন্দ প্রদান করা।

●ভগবানের জন্ম-মৃত্যু আমাদের জড় দৃষ্টিতে গোচরীভূত হয় মাত্র। যেমন আমরা সূর্যকে উদয় ও অস্ত যেতে দেখি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সূর্য এক জায়গায় সুস্থির। সুর্য ডোবেও না ওঠেও না। আমাদের বিকৃত ইন্দ্রিয়ের প্রভাবে আমরা মনে করি সূর্য উদিত হয় এবং অস্ত যায়। ভগবানও তেমনি নিত্য। তাঁর আবির্ভাব এবং অন্তর্ধান সূর্যের মত, সাধারন মানুষের জন্ম-মৃত্যুর মতো নয়।

● শ্রীকৃষ্ণের রাজত্বকালে তাঁকে কৌরবরা পরমেশ্বর ভগবান বলে চিনতে পারেননি। তবে চিনতে পেরেছিলেন শুধু একজন তিনি ভীষ্মদেব। আর কৃষ্ণ নিজে প্রকাশিত হয়েছিলেন এবং বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন শুধু অর্জুনকে। গীতার জ্ঞান প্রকাশিত হওয়ার পরই আজ এই কলিযুগের মানুষেরা তাঁকে ভগবান বলে চিনতে পেরেছে।

● কংসকে নিধন করা শ্রীকৃষ্ণের অবতরণের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না, মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল তাঁর ভক্ত দেবকী-বসুদেবকে উদ্ধার করা। কিন্তু এই দুটি কাজ একসঙ্গে সাধিত হয়েছিল। তাছাড়া কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দুর্যোধনাদি দুরাচারীদের বিনাশ করে ধর্ম সংস্থাপন করেন। তাই ভগবান এখানে বলেছেন, সাধুদের পরিত্রাণ আর অসাধুর বিনাশ করবার জন্য তিনি অবতরণ করেন।

●বৃন্দাবনে প্রদর্শিত শ্রীকৃষ্ণের লীলাবিলাস ধর্মের পূর্ণতার নিদর্শন —তা প্রেমপূর্ণ ভগবৎ-শরণাগতির পরম সারাৎসার। তাঁর দিব্যানন্দময় চিত্ত-উল্লাসকর ব্রজলীলা সম্পাদনের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ বদ্ধজীবকে প্রেম-ধর্মের পথ অনুসরণে আকৃষ্ট করেন।

নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গো ব্রাহ্মণ্য হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় শ্রী কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ।।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতরন-এর উদ্দেশ্য কি_3

x

Like it? Share with your friends!

193
162 shares, 193 points
daextlwcn_print_scripts(true);

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]