daextlwcn_print_scripts(false);
বামন দ্বাদশী_বলি মহারাজ (Bali Maharaj) ও বামনদেবের (Vamanadeva Avatar) লীলা কাহিনী_1

বামন দ্বাদশী || বলি মহারাজ (Bali Maharaj) ও বামনদেব (Vamanadeva)-এর লীলা কাহিনী

1 min


245
214 shares, 245 points

এই অধ্যায়ে বর্ণন করেছি বামন দ্বাদশী কি? তার সাথে কি ভাবে যুক্ত বলি মহারাজ (Bali Maharaj) ও বামনদেবের (Vamanadeva Avatar) লীলা কাহিনী।

◼️ বামন দ্বাদশী সময়সূচী: ২০২৩ ◼️

মহিমান্বিত বামন দ্বাদশী পালিত হবে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে ০৯ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

◼️ বলি মহারাজ ও বামনদেবের লীলা কাহিনী ◼️

ভগবান আমাদের কোন কিছু গ্রহণ অথবা দান করেন দুটি ক্ষেত্রেই তা হল ভগবানের করুণা প্রদর্শন ।

ভক্তদের সাহায্য করার জন্য ভগবান বিভিন্ন অবতারে অবতীর্ণ হয়েছেন। বলি মহারাজও একজন ভক্ত ছিলেন এবং যদিও তিনি দৈত্যকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তবুও বামনদেব তাকে কৃপা করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

প্রত্যেক ভক্তের নিজস্ব ভাবের সঙ্গে ভগবান আদান প্রদান করেন। বলি মহারাজ দাতা ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি সেই সব ব্রাহ্মণদের সাহায্যে সম্পদ লাভ করেছিলেন যাদের তিনি প্রচুর দান করতেন। সেই জন্য ভগবান বিষ্ণু বলি মহারাজের সেবা গ্রহণের জন্য একজন ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করেছিলেন এবং তাঁর কাছ থেকে কিছু দান ভিক্ষা করেছিলেন। যেহেতু বলি মহারাজ ব্রাহ্মণদের দান করতে স্থির প্রতিজ্ঞ ছিলেন, তিনি বামনদেব যা চেয়েছিলেন সব দিতে রাজী হয়েছিলেন। বামনদেব উত্তর দিয়েছিলেন যে, তিনি ত্রিপাদ ভূমি গ্রহণ করবেন। বলি মহারাজ অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন।

বলি মহারাজ বলেছিলেন যে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি অধিক বুদ্ধি সম্পন্ন। তুমি একটি সম্পূর্ণ গ্রহ চাইতে পারতে। কেন তুমি আমার কাছে সামান্য ত্রিপাদ ভূমি চাইছ?”

বামনদেব উত্তরে বললেন যে, “যদি আমি ত্রিপাদ ভূমিতে সন্তুষ্ট না হই তাহলে আমি সম্পূর্ণ গ্রহেও সন্তুষ্ট হব না।”

শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের জন্য বিশেষতঃ ব্রহ্মচারীদের জন্য এই নীতি নির্ধারণ করেছিলেন; তোমার প্রয়োজন হলো ক্ষুদ্র সেবা, স্বল্প প্রসাদ এবং রাত্রে শয়নের জন্য অল্প স্থান। এখানে ত্রিপাদ হল — ভূমি,  স্বল্প প্রসাদ ও সেবা। বামনদেব স্বয়ং ব্রহ্মচারীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। সেইজন্য তিনি এই উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন।

বামন দ্বাদশী_বলি মহারাজ (Bali Maharaj) ও বামনদেবের (Vamanadeva Avatar) লীলা কাহিনী_7

বলি মহারাজ ত্রিপাদ ভূমি দিতে স্বীকৃত হওয়ার পর বামনদেব নিজেকে এক বিশালকায় রূপে বিস্তার করলেন।

(১) এক পাদে তিনি সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে আবৃত করলেন এবং তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মাণ্ডের আবরণ ছিদ্র করল; ফলস্বরূপ কারণ সাগরের চিন্ময় বারি সেই ছিদ্র দিয়ে ব্রহ্মাণ্ডে প্রবেশ করল এবং সেই চিন্ময় বারি গঙ্গানদীতে পরিণত হলো।

(২) অতঃপর দ্বিতীয় পাদে পাতালকে আবৃত করলেন। অতএব দুই পাদে তিনি সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে আবৃত করেছিলেন। তাঁর এই কার্যের ফলে বলি মহারাজ তার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে অসমর্থ হয়ে পড়লেন এবং এর জন্য তাকে শাস্তি পেতে হতো।

(৩) বলি মহারাজ এই সমস্যার অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান খুঁজে বার করলেন এবং ভগবানকে বললেন যে, “আপনি আপনার চরণ আমার মস্তকে স্থাপন করুন এবং এইরূপে আমি আমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করব।”

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

◼️ ভক্তি কি? ◼️

উত্তর : ভক্তি শব্দের অর্থ হল ভগবানের প্রেমময় সেবা। ভগবানকে মন-প্রান ভরে সেবা করা। আমরা যতটা নিজেদের দেহ-গৃহ ও স্বজনদের ভালোবাসি ঠিক ততটা আমাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিও ভালবাসা থাকতে হবে। একজন শিশুর মত সরল হয়ে আমাদের ভগবানের প্রতি শরনাগত হতে হবে। সুখে দুখে অবিচল থেকে কৃষ্ণসেবা করতে হবে। জীবনকে প্রভু শ্রীকৃষ্ণ সেবায় উৎসর্গ করতে হবে। নিষ্কামভাবে শ্রীকৃষ্ণকে সেবা করার নাম হল ভক্তি।

ভক্তি অনুশীলনের নয়টি পন্থা রয়েছে— শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, বন্দন, পাদ-সেবন, দাস্যম, সখ্যম, অর্চন, আত্মনিবেদন

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

◼️ বলি মহারাজ ও বামনদেবের লীলা বিশ্লেষণ ◼️

আত্মনিবেদন অর্থ সবকিছু ভগবানের চরণে উৎসর্গ করা। সেক্ষেত্রে বলি মহারাজকে আত্মনিবেদনের দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা হয়।প্রকৃতপক্ষে তিনি অন্য কোন ভক্তি অনুশীলন করেননি, কিন্তু তিনি সম্পূর্ণরূপে নিজেকে এবং তাঁর সবকিছু ভগবানের চরণে নিবেদন করেছেন এই মনোভাব নিয়ে “ঠিক আছে, আমি নিজেকে তোমার কাছে উৎসর্গ করলাম, তুমি নিজের ইচ্ছেমত আমার বিচার কর।” এই হল পূর্ণ শরনাগতি। এখানে বোঝার বিষয়টি হল, বলি মহারাজের যখন অহংকার চূর্ণ হল তিনি বামনদেবকে সাধারণ ব্রাহ্মণ রূপে নয়, ভগবান রূপে অনুভূত করেলেন। মূর্খের মতো ভগবানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে গেলেন না, লড়াই করলেন না বরং যথার্থ জ্ঞানীর মতো নত স্বীকার করলেন, আত্মনিবেদন করলেন, পূর্ণ শরনাগত হলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, “রাখে হরি মারে কে! মারে হরি রাখে কে! ” অর্থাৎ শ্রীহরি যদি কাউকে রক্ষণ করেন কার সাধ্যি আছে তাকে মারে, আবার তিনি যদি কাউকে মারতে চান কার সাধ্যি আছে তাকে রক্ষা করে।   

অবশ্যই তখন কৃষ্ণ তাঁর দ্বারপাল হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “ঠিক আছে, তুমি এই স্থান ছেড়ে দাও এবং আমি তোমাকে তোমার নিজস্ব লোক দান করব, এবং সেই লোক এই স্থানের চেয়ে উন্নত হবে। কেননা ইন্দ্র ও তোমার মাঝে… তুমি সবসময় ভয়ে থাকো কখন ইন্দ্র তোমাকে আক্রমণ করবে, আর ইন্দ্রও ভীত থাকে কখন তুমি তাঁকে আক্রমণ করবে। তুমি সেখানে চল। আর আমি তোমাকে সমগ্র একটি লোক দেব এবং কেউ যেন তোমাকে আক্রমণ করতে না পারে, সুরক্ষা দিতে আমি নিজে সেখানে আমার সুদর্শন চক্রসহ অবস্থান করব। তোমাকে কারো আক্রমণের ভয়ে ভীত হতে হবে না।

এভাবে ভক্তের কখনো বিনাশ হয় না। কৃষ্ণ ভক্তকে সুরক্ষা দানের প্রতিজ্ঞা করেন। সেক্ষেত্রে প্রহ্লাদ মহারাজ নৃসিংহদেবের দ্বারা সুরক্ষিত হয়েছিলেন, বরাহদেব বসুন্ধরাকে উদ্ধার করেছিলেন, আপনি দেখবেন, এইসব ব্যাপারগুলি অলীক মনে হয়, কিন্তু পরিশেষে আমরা যদি কৃষ্ণের অসীম শক্তি সম্পর্কে ধারণা করতে পারি, তখন কোনটিই আর প্রকৃতপক্ষে অলীক মনে হবে না। তাঁর পক্ষে কোন কিছু করাই অসম্ভব নয়। কিন্তু আমরা যদি ভগবানের মূল শক্তি সম্পর্কে বুঝতে না পারি, অবশ্যই তখন সবকিছু কল্পনাপ্রসূত মনে হয়।

বামন দ্বাদশী_বলি মহারাজ (Bali Maharaj) ও বামনদেবের (Vamanadeva Avatar) লীলা কাহিনী_4

শ্রীল প্রভুপাদের উপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপা

শ্রীল প্রভুপাদ একবার স্মৃতিচারণ করে উক্তি করেছিলেন যে, “ভারতবর্ষের এক জ্যোতিষী ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, তিনি ভারতে সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি হবেন।” প্রথমে শ্রীল প্রভুপাদ ব্যবসায় অত্যন্ত সফল ছিলেন। কোলকাতায় ডঃ বোসের রাসায়নিক গবেষণাগারের প্রবন্ধক হিসাবে এবং পরে তাঁর নিজের ব্যবসার মালিক হিসাবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ব্যবসায় ধীরে ধীরে লোকসান হতে থাকে এবং শ্রীল প্রভুপাদ এই শ্লোকটি পরলেন (যস্যাহম্ অনুগ্রহণম্) যেখানে ভগবান কৃষ্ণ বলছেন যে, কোন ভক্তের প্রতি তাঁর বিশেষ করুণার প্রথম ভাগে তিনি তার সকল সম্পদ হরণ করেন যাতে সেই ভক্ত উপায়ান্তর না দেখে পরমেশ্বর ভগবানের নিকট শরণাগত হয়। যদি সেই ভক্ত পুনরায় সম্পদ অর্জনের চেষ্টা করে ভগবান তাও হরণ করেন যতক্ষণ না পর্যন্ত জড় জাগতিক সম্পদ উপভোগের নিষ্ফল চেষ্টা সেই ভক্ত ত্যাগ করে। এখন কেউ ভগবানের এই বিশেষ করুণার কথা শুনে ভীত হতে পারে যে, যদি আমি ভক্ত হই তাহলে আমাকে আমার সমস্ত সম্পদ হারাতে হবে সুতরাং আমার ভক্ত না হওয়াই ভাল।

 কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভগবান সর্বদা ভক্তের সম্পদ হরণ করেন না; কখনো কখনো ভগবান ভক্তকে অধিক সম্পদ দানও করেন। এটি নির্ভর করে একজন বিশেষ ভক্তের বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনটি সর্বোত্তম তার ওপর। সুতরাং ভগবানের প্রতি আমাদের এই বিশ্বাস থাকা উচিত যে, আমাদের পক্ষে যা সর্বোত্তম তাই তিনি করবেন।

আমি বম্বেতে এমন বহু ঘটনা দেখেছি যেখানে ভক্তেরা ভগবানের কৃপায় অসীম সম্পদের অধিকারী হয়েছে। বম্বেতে ডঃ নরেন্দ্র দেশাই নামে একজন ভক্ত ছিলেন যিনি পরবর্তীকালে নাথজী দাস নামে দীক্ষিত হয়েছিলেন। ডঃ দেশাই-এর পিতা একজন চতুর ব্যবসায়ী এবং সংসদ সদস্য ছিলেন। হঠাৎ তার মৃত্যু হলে ডঃ দেশাই অত্যন্ত যুবা বয়সে পারিবারিক ব্যবসার সমস্ত দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আমি সেই সময় বম্বের বহু সম্পদশালী লোকের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম । এবং তাদের কাছে ডঃ দেশাই সম্বন্ধে শুনতাম যে, তিনি ব্যক্তি হিসাবে ভাল কিন্তু তার পিতার ন্যায় সুচতুর নন। তাই ব্যবসাতে তিনি ভাল নাও করতে পারেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ডঃ দেশাই এই ব্যবসাকে অনেক গুণে বর্ধিত করলেন। তার বাবার সময় ব্যবসাটি বিশাল তো ছিলই, তিনি সেই ব্যবসাকে আরও অনেক গুণে বাড়িয়ে তুললেন।

আধ্যাত্মিক অভ্যাসের প্রতিও তিনি অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ছিলেন। প্রাতঃকালে তিনি ঘুম থেকে উঠতেন এবং গৃহে মঙ্গল আরতি করতেন এবং তারপর জপ করতেন। বম্বের একটি সুন্দর জায়গাতে তিনি বসবাস করতেন। সেই স্থানে একটি উদ্যানকে ঘিরে আরও পাঁচটি বাড়ী ছিল। উদ্যানকে কেন্দ্র করা ঐ পাঁচটি বাড়ীর সামনে দিয়ে একটি রাস্তা ছিল। প্রাতঃকালে সেই বাগানে তিনি পায়চারী করতে করতে জপ করতেন। অনেক নতুন কোম্পানী তিনি খুলেছিলেন, নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং আরও ধনী হয়েছিলেন।

সুতরাং কখনো কখনো ভক্তকে অধিক সম্পদ দিয়ে কৃষ্ণ উৎসাহিত করেন। কিন্তু যদি সেই সম্পদের দ্বারা ভক্তটি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে তা হলে কৃষ্ণ তার কাছ থেকে সেটি হরণ করে নেন যাতে সে মিথ্যা সম্মান থেকে মুক্ত হয়ে কৃষ্ণের দাস রূপে তার প্রকৃত পরিচয়ে ফিরে আসে। যা কিছু কৃষ্ণ করেন সমস্তই ভক্তদের ভালোর জন্য। তাই ভগবান হলেন সত্যিকারের পিতা। পিতা তা-ই করেন যা তাঁর সন্তানের জন্য সর্বোত্তম। কখনো তিনি তিক্ত ঔষধ দেন, কখনো তাকে মিষ্টান্ন দেন। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই তিনি সন্তানের উপকারের জন্যই করেন। কখনো তিনি সন্তানকে আদর করে কোলে তুলে চুম্বন করেন, আবার কখনো তাকে শাস্তিও দেন। কিন্তু যা কিছু তিনি করেন সমস্তই সন্তানের ভালোর জন্যই করেন। সুতরাং পরমেশ্বর ভগবান হলেন পরম পিতা যিনি তাঁর ভক্তের উপকারের জন্যই সব করেন। তিনি ভক্তকে সম্পদ দেন অথবা ভক্তের সম্পদ হরণ করেন  দুই ক্ষেত্রেই তিনি সমান ও সুন্দর ভূমিকা গ্রহণ করেন।

একজন ভক্ত ভগবানের এই ভাব সমভাবে গ্রহণ করে, তিনি ভগবানের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে শরণাগত যে, ভগবান যা করবেন তা তার ভালোর জন্যই করবেন। তাই পৃথু মহারাজ প্রার্থনা করেছেন :

হে প্রভু, আপনার মায়াশক্তির জন্য এই জগতের সকল জীবাত্মা তাদের প্রকৃত পরিচয় বিস্মৃত হয়েছে এবং এই অজ্ঞতার জন্যই তারা সর্বদা সমাজ, বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসা রূপে জাগতিক সুখের অভিলাষী হয়েছে। সেইজন্য দয়া করে আমাকে আপনার কাছ থেকে কোন জাগতিক সম্পদ গ্রহণ করতে আজ্ঞা করবেন না। কিন্তু যেমন একজন পিতা পুত্রের চাহিদার অপেক্ষা না করেই তার ভালোর জন্য সবকিছু করেন, দয়া করে আমাকেও সেই সমস্ত দিন যা আপনি আমার জন্য সর্বোত্তম বলে চিন্তা করেছেন। (ভাগবতম. ৪.২০.৩১)

শ্রীল প্রভুপাদ বলছেন, তাঁর ক্ষেত্রে কৃষ্ণ প্রথমে তাঁর ব্যবসার লোকসান রূপে সমস্ত কিছু হরণ করে তাঁকে পরীক্ষা করেছিলেন এবং পরিশেষে তাঁকে সমস্ত কিছু দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন।

এই নীতিটি যেমন একজন ব্যক্তি বিশেষের জন্য প্রযোজ্য তেমনই একটি সমাজের জন্য সমষ্টিগতভাবে প্রযোজ্য। শ্রীল প্রভুপাদ এই সাবধানবাণী করেছিলেন যেভাবে আধুনিক সভ্যতা জাগতিক সম্পদ আহরণের জন্য উন্মাদ এবং জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নিস্পৃহ — প্রকৃত উদ্দেশ্য যেখানে হওয়া উচিত কৃষ্ণদাস রূপে ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়া, সেক্ষেত্রে কৃষ্ণ আধুনিক যুগের এই বিভ্রান্ত আত্মাদের উপকারের জন্য তাদের সকল সম্পদ হরণ করতে পারেন।

যোগী ও ইঁদুরের কাহিনী

শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়ই যোগী ও ইঁদুরের কাহিনীটি বলতেন, একদা একটি ইঁদুর এক যোগীকে মিনতি করে “আমি বিড়ালের দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছি।” তখন যোগী বললেন, “তুমি কি চাও?”  ইঁদুরটি উত্তর দিল, “আমি বিড়াল হতে চাই।” যোগী বললেন “ঠিক আছে”। তিনি ইঁদুরের ইচ্ছা পূরণ করলেন। “এখন তুমি বিড়াল হলে!”

কিছুদিন পরে বিড়ালটি যোগীর কাছে এসে বলল, “আমি কুকুর দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছি।’ যোগী বললেন, “তুমি কি চাও?” বিড়ালটি উত্তর দিল, “আমি কুকুর হতে চাই।” যোগী বললেন “ঠিক আছে তাই হও।”

বামন দ্বাদশী_বলি মহারাজ (Bali Maharaj) ও বামনদেবের (Vamanadeva Avatar) লীলা কাহিনী_8

কিছুদিন পর কুকুরটি যোগীর কাছে এসে বলল, “আমি সিংহের ভয়ে ভীত।” যোগী বললেন “সুতরাং তুমি সিংহ হতে চাও ? ঠিক আছে তাই হও।” কিন্তু যেই কুকুরটি সিংহে পরিণত হলো সে এমনভাবে যোগীর দিকে তাকালো যেন তার ওপর ঝাঁপিয়ে খেয়ে ফেলবে। যোগী তৎক্ষণাৎ বললেন, “পুনর্মূষিকো ভব।” অর্থাৎ পুনরায় তুমি ইঁদুর হয়ে যাও ।

শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করছেন যে, ভগবৎ কৃপায় আধুনিক সভ্যতা আরও আরও বিশাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই সম্পদের প্রাচুর্যে যদি মানুষ ভাবে যে, তারা ভগবানের পরিসমাপ্তি করে তাঁকে ব্যতিরেকেই এই সম্পদ উপভোগ করবে তাহলে ভগবানও বলতে পারেন, পুনর্মূষিকো ভব ━ তুমি পুনরায় ইঁদুর হয়ে যাও। কোন আকাশচুম্বী অট্টালিকা নয়, কোন চকচকে রাস্তা নয়, আর কোন বিশাল কম্পিউটার নয়। ক্ষেতে ফিরে যাও। জঙ্গলে ফিরে যাও ।

তা হলে জীব মিতাকাঙ্ক্ষী হবে। তারা তাদের স্বপ্ন থেকে জেগে উঠবে। কিন্তু আমাদের প্রচার এবং পুস্তক বিতরণের দ্বারাও মানুষ জেগে উঠে তাদের প্রকৃত পরিচয় এবং জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ফিরে পেতে পারে, তাহলে তাদের আর এই কষ্ট পেতে হবে না ।

ভক্তের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত

যাই হোক, আমাদের মনোভাব শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের মতো হওয়া উচিত, যিনি প্রার্থনা করেছেন ━

❝মানস, দেহ, গেহ, যো কিছু মোর ।
অর্পিলু তুয়া পদে, নন্দকিশোর ॥
সম্পদে-বিপদে, জীবনে-মরণে ।
দায় মম গেলা, তুয়া ও পদ বরণে ॥
মারবি রাখবি যো ইচ্ছা তোহারা ।
নিত্যদাস-প্রতি তুয়া অধিকারা॥ ❞ ‌

অনুবাদ: “মানস, দেহ, গেহ, যো কিছু মোর।” অর্থাৎ যা কিছু আমার আছে ━ আমার মন, আমার শরীর, আমার কথা, আমার পরিবার, আমার পারিবারিক সম্পদ’ সমস্তই তোমার। তুমি আমাকে সম্পদে রাখ, কি বিপদে রাখ আমার মন প্রাণ সব তোমার পদে অর্পণ করলাম। জীবনে বা মরণে, সুখে ও দুঃখে, বিপদে ও সম্পদে, তুমিই আমার প্রভু। আমি তোমারই সেবা করব, হে নন্দের নন্দন! তোমার সেবা ছাড়া আর আমার কোনও উদ্দেশ্য নেই।

এই হচ্ছে শুদ্ধ ভক্তি। এই আমাদের ভক্তিযোগের ভাব হওয়া উচিত।

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

Read-More_4

আরও পড়ুন: Qualities of Lord Krishna-RadhaRani || শ্রীকৃষ্ণের ৬৪ গুণ ও শ্রীমতি রাধারানীর ২৫ গুণ বর্ণন

x


Like it? Share with your friends!

245
214 shares, 245 points
daextlwcn_print_scripts(true);

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]