Join to Our Community
Community Grows With You

হরিদাস ঠাকুরের তিরোধান || Haridasa Thakura Disappearance

এই অধ্যায়ে বর্ণন করছি হরিদাস ঠাকুরের তিরোধান (Haridasa Thakura Disappearance)। উনি গৌর লীলায় প্রজাপতি ব্রহ্মাপ্রহ্লাদ মহারাজের মিলিত অবতার ছিলেন। তিনি প্রত্যহ তিন লক্ষ হরিনাম করার পর স্বল্প প্রসাদ নিতেন। তিনি ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর  একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন এবং তার অন্তিম সংস্কার স্বয়ং মহাপ্রভু নিজহাতে করেছিলেন। সেই সাথে তার শেষকৃত্যের জন্য স্বয়ং মহাপ্রভু নিজে পুরীর দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা করেছিলেন (যদিও তিনি ভগবান তার কিছুরই অভাব নেই তবুও লীলা সম্পাদনের জন্য তিনি নিজ ভক্তের জন্য ভিক্ষা করেন। ভগবান চেয়েছিলেন এমন শুদ্ধ পরম বৈষ্ণবের সেবায় সকলকে যুক্ত করতে যাতে সকলে ভগবানের কৃপা প্রাপ্ত হয়)। মহোৎসব করে সমস্ত সাধু, সন্ত, ভক্ত, বৈষ্ণব দের নিজের হাতে প্রসাদ বিতরন করেন। সেই পরম করুনাময় ভগবান শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু শ্রীচরণে বারংবার প্রণতি জানাই। কোটি কোটি প্রণতি জানাই মহাপ্রভুর সেই পরম একনিষ্ঠ ভক্ত শ্রী শ্রী নামাচার্য্য হরিদাস ঠাকুরের শ্রীচরণে।

✤ ২০২৩ হরিদাস ঠাকুরের তিরোধান দিবস কবে?

ভাদ্র শুক্লা চতুর্দ্দশী তিথিতে শ্রীল হরিদাস ঠাকুর তিরোধান করেন। ভক্ত চূড়ামণি নামাচার্য্য হরিদাস ঠাকুরের তিরোধান তিথি হল ━

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার। 

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১১ই  আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, শুক্ল পক্ষ, চতুর্দশী

✤ হরিদাস ঠাকুরের তিরোধান

আজও বঙ্গোপসাগরের তীরে পুরী ধামে তালগাছে ঘেরা ছোট ছোট ঘর দেখতে পাওয়া যায়; সেখানে একটি পাথরের বেদীকে বিশেষ স্থান রূপে চিহ্নিত করা রয়েছে কারণ ঐ স্থানে বসে মহান বৈষ্ণব হরিদাস ঠাকুর একাকী কিংবা কোন ভক্তের সঙ্গে কৃষ্ণ ভজনা করতেন। সেখানে তিনি সমস্ত দিন রাত্রি ভগবানের দিব্যনাম জপ করে অতিবাহিত করতেন। তিনি মহামন্ত্রের পবিত্র শব্দ কোমল স্বরে ঘন্টার পর ঘন্টা পুনঃ পুনঃ উচ্চারণ করতে করতে তাঁর জপমালার গুটিগুলিকে গুনতে থাকতেন। এক একদিনে এই পবিত্ৰ মহামন্ত্র তিন লক্ষবার তিনি উচ্চারণ করতেন।

হরিদাস ঠাকুরের নির্জন কুটিরের অনতিদূরে ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং তার অনুগামীরা বাস করতেন, যারা উচ্চৈস্বরে মহামন্ত্র জপ করে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা কীর্তন করতেন। ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে সাধারণ মানুষেরা কেবল একজন অসাধারণ ভক্ত হিসাবে সম্মান জানাতেন, যদিও অতি অল্পজনই জানতেন যে, তিনি হলেন প্রকৃতপক্ষে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার; যিনি এই জগতে ভগবানের দিব্য নাম প্রচারের জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন। যেহেতু হরিদাস ঠাকুর মহামন্ত্র জপে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন সেইজন্য ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর প্রতি বিশেষরূপে স্নেহশীল ছিলেন এবং তাকে তাঁর ঘনিষ্ঠ পার্ষদদের মধ্যে গণ্য করতেন। ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং তাঁর অনুগামীরা প্রায়ই হরিদাস ঠাকুরের কাছে যেতেন।

একদিন ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ব্যক্তিগত সেবক গোবিন্দ তিনি হরিদাস ঠাকুরের জন্য প্রসাদ নিয়ে এলেন। প্রসাদ দিতে গিয়ে গোবিন্দ দেখলেন যে, হরিদাস ঠাকুর শুয়ে শুয়ে অতি ধীরে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করছেন।

গোবিন্দ মিনতির সুরে বললেন ━ “দয়া করে গাত্রোত্থান করুন এবং প্রসাদ গ্রহণ করুন।”

হরিদাস ঠাকুর শান্তস্বরে আক্ষেপের সুরে জানালেন ━”আমি আজ উপবাস করছি, আমি এখনো আমার দিনের সংকল্প তিন লক্ষ নাম জপ করতে পারিনি। কোন্ বিবেকে আমি প্রসাদ গ্রহণ করতে পারি?” এক মুহূর্ত হরিদাস ঠাকুর বিবেচনা করে বললেন ━”আপনি মহাপ্রসাদ এনেছেন? সুতরাং কিভাবে আমি এর অবহেলা করতে পারি?” তারপর তিনি প্রার্থনা করলেন এবং স্বল্প প্রসাদ গ্রহণ করলেন।

পরদিন ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ং হরিদাসকে দেখতে এলেন। অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ━ “হরিদাস, তুমি কি ভাল আছ?” হরিদাস ভগবানের চরণে নত হয়ে উত্তর দিলেন, ━ “আমার দেহ ঠিক আছে, কিন্তু আমার মন এবং বুদ্ধি ঠিক নেই। আমার রোগ হল যে, আমি আমার সংকল্প পরিমাণ জপ করতে পারিনি।

ভগবান শ্রীচৈতন্য হরিদাসকে সান্ত্বনা দেবার জন্য বললেন ━ “এখন তুমি বৃদ্ধ হয়েছ, তুমি তোমার জপ সংখ্যা কমাতে পার। তুমি ইতিমধ্যেই এই অন্ধকার জড়জগতে কৃষ্ণনামের মহিমা প্রচার করার জন্য অনেক বেশী জপ করেছ।”

কথাগুলো তীরের ফলার মতো হরিদাস ঠাকুরকে বিদ্ধ করল, ফলে তিনি খুব দুঃখিত হলেন। তার মনে অন্য কিছু ছিল, যা তিনি কাতর সুরে বললেন ━ “হে প্রভু! কৃপা করে আমার নিবেদন শ্রবণ করুন। আমি আমার অন্তরে অনুভব করছি যে, আপনি অতি শীঘ্রই এই জগতে আপনার লীলা বিলাস সমাপ্ত করে ভগবদ্ধামে প্রত্যাবর্তন করবেন। তার পূর্বে কৃপা করুন, যেন আমার এই নশ্বর দেহ আপনার শ্রীপাদপদ্মে তিরোহিত হয়। আমি আপনার শেষ দিনগুলি দেখতে চাই না ৷

ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু গম্ভীরভাবে উত্তর দিলেন, “প্রিয় হরিদাস, কৃষ্ণ এত কৃপাময় যে, তুমি যা চাও তিনি তাই করবেন কিন্তু তুমি পুরীতে আমার সঙ্গে অবস্থান করায় আমার আনন্দ এবং আমাকে ফেলে তুমি চলে যাবে এ ঠিক নয়।

তথাপি হরিদাস নিরস্ত হলেন না। ভগবান শ্রীচৈতন্যদেবের চরণ ধরে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “হে প্রভু! মায়ায় ভোলাবেন না! আমাকে ছাড়াও আপনার লক্ষ লক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভক্ত আছেন। যদি আমার মতো নগণ্য কীট মারা যায় এতে কি ক্ষতি? বস্তুত আপনি আপনার ভক্তদের প্রতি সর্বদাই স্নেহশীল এবং যদিও আমি একজন শুধুমাত্র ছদ্মভক্ত তথাপি আমি আশা রাখি যে, আপনি আমার অভিলাষ পূর্ণ করবেন।”

ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব অতঃপর হরিদাস ঠাকুরকে আলিঙ্গন করলেন এবং পরদিন আসতে সম্মত হয়ে, তাঁর মধ্যাহ্নকালীন কার্যাবলী সমাধা করার জন্য প্রস্থান করলেন।

পরদিন ভগবান তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে পুনরায় এলেন এবং তাদের দেখে হরিদাস ঠাকুর বিনম্র চিত্তে নত হলেন। ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রিয় হরিদাস সুসংবাদটি কি?” হরিদাস আবেগের স্বরে উত্তর দিলেন ━ “হে প্রভু, সুসংবাদটি হলো আপনি আমার উপর কৃপাবর্ষণ করবেন।”

এইকথা শুনে ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন শুরু করলেন এবং তাঁর ভক্তরা হরিদাস ঠাকুরকে ঘিরে সেই কীর্তনে যোগদান করলেন। অতঃপর ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হরিদাস ঠাকুরকে তার সাধুসুলভ গুণের জন্য প্রশংসা করতে শুরু করলেন। যত বেশী ভগবান, হরিদাসের প্রশংসা করতে লাগলেন তত বেশী তিনি আনন্দ লাভ করতে থাকলেন। সমস্ত ভক্তগণ আশ্চর্যে হতবাক হয়ে হরিদাসের পাদপদ্মে নত হলেন।

অতঃপর হরিদাস ঠাকুর শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুকে তার সম্মুখে উপবেশন করতে অনুরোধ করলেন এবং তিনি তার দৃষ্টি ভগবানের চন্দ্রবদনে নিবদ্ধ করে ভগবানের পাদপদ্ম তাঁর বক্ষে স্থাপন করলেন। যেই তিনি ভগবানের নাম জপ করতে শুরু করলেন, তাঁর দুচোখ বেয়ে বাঁধ ভাঙ্গা অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তে লাগল। শীঘ্রই হরিদাস ঠাকুরের আত্মা দেহত্যাগ করল । ভাদ্র শুক্লা চতুর্দ্দশী তিথিতে শ্রীল হরিদাস ঠাকুর তিরোধান করেন।

সেই মুহূর্তে প্রত্যেকে শ্রীকৃষ্ণের দিব্যনামে মুখরিত হয়েছিলেন এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর প্রয়াত ভক্তের জন্য দিব্য প্রেমানন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন।

তিনি হরিদাসের দেহ তুলে তাঁর কোলে শয়ন করালেন এবং তারপর গভীর চিন্ময় আনন্দে সমস্ত প্রাঙ্গন জুড়ে নৃত্য করতে লাগলেন। সমস্ত ভক্তগণ তাঁর সঙ্গে নৃত্য ও কীর্তনে যোগ দিলেন।

❝ হরিদাস আছিল পৃথিবীর শিরোমণি।
তাহা বিনা রত্নশূন্য হইল মেদিনী॥ ❞ ‌
━ (চৈতন্য চরিতামৃত অন্তঃ ১১/৯৭)

✤ হরিদাস ঠাকুরের শেষকৃত্য

অতঃপর ভক্তরা হরিদাসের দেহ স্কন্ধে বহন করে সমুদ্র অভিমুখে নিয়ে গেলেন। সমস্ত পথ তাঁরা কীর্তন করলেন এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সম্মুখভাগে নৃত্য করতে লাগলেন । সমুদ্রের তীরে পৌঁছে ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব হরিদাসের দেহ সমুদ্রের ঢেউয়ে স্নান করালেন এবং ঘোষণা করলেন ━ “আজ থেকে এই সমুদ্র এক মহান তীর্থস্থানে পরিণত হলো।”

ভক্তরা সমুদ্রের বেলাভূমিতে একটি গর্ত খনন করলেন এবং হরিদাসের দেহ তাতে স্থাপন করলেন। অতঃপর ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব “হরিবোল! হরিবোল!” কীর্তন করতে করতে দুই হাতে করে বালু নিয়ে সেই দেহ আবৃত করতে শুরু করলেন।

ভক্তরা হরিনাম উচ্চারণ করতে করতে আরও বালু নিক্ষেপ করতে লাগলেন এবং তারপর তাঁরা সেই স্থানটিকে চিহ্নিত করণের জন্য একটি বেদী গঠন করলেন। ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সেই বেদী ঘিরে নৃত্য কীর্তন করতে লাগলেন। সমগ্র বিশ্ব কৃষ্ণনামের অনুরণনে পূর্ণ হয়ে উঠল। অতঃপর শ্রীচৈতন্যদেব ও তাঁর ভক্তরা সমুদ্রে স্নান করলেন।

❝ হরিদাসে সমুদ্রজলে স্নান করাইল।
প্রভু কহে, সমুদ্র এই মহাতীর্থ হৈল॥
হরিদাসের পাদোদক পিয়ে ভক্তগণ।
হরিদাসের অঙ্গে দিল প্রসাদচন্দন ॥
ডোর কড়ার প্রসাদ বস্ত্র অঙ্গে দিল।
বালুকায় গর্ত্ত করি তাহা শোয়াইল ॥ ❞

অবশেষে শ্রীচৈতন্যদেব জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে প্রধান দ্বারের কাছে সমস্ত দোকান থেকে প্রসাদ নেবার জন্য এগিয়ে গেলেন ━ “আমি হরিদাস ঠাকুরের তিরোভাব উৎসব উদযাপন করার জন্য প্রসাদ ভিক্ষা করছি, দয়া করে আমাকে ভিক্ষা দিন।”

❝ হরিদাস ঠাকুরের মহোৎসব তরে।
প্রসাদ মাগিয়ে ভিক্ষা দেহ ত আমারে ॥ ❞ 

যেখানে এই জড় জগতের মানুষ উদ্ধারের জন্য ভগবানের চরণে মাথা ঠোকে, আকুতি করে, অনুরোধ করে সেখানে হরিদাস ঠাকুরের তিরোভাব উপলক্ষে ভগবান ভিক্ষা করছেন, অনুরোধ করছেন। এ থেকে বোঝার অপেক্ষা রাখে না যে, হরিদাস ঠাকুর কত বড় মানের শুদ্ধ ভক্ত ছিলেন, ভগবানের কত প্রিয় ছিলেন। এ থেকে বেশী শিক্ষণীয় হল, ভগবান কতখানি করুণাময়, কতখানি ভক্তবৎসল, কথায় আছে ভক্তের ভগবান! সত্য, ভীষণ সত্য!

ভগবানের অনুরোধে অত্যন্ত আনন্দিত চিত্তে সমস্ত দোকানীরা বড় বড় ঝুড়িতে প্রসাদ নিয়ে এগিয়ে এলেন। ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব প্রসাদ বিতরণ করতে শুরু করলেন। সমস্ত ভক্তরা প্রসাদ পাওয়ার জন্য ভগবান শ্রীচৈতন্যদেবের অপেক্ষা করতে লাগলেন এবং তারপর তারা প্রসাদ পেলেন।

অনতি বিলম্বেই তারা আকন্ঠ প্রসাদ পেলেন কারণ ভগবান বিতরণকারীদের সমানে বলছিলেন, “ওদের আরও দাও! ওদের আরও দাও!”

ভক্তদের প্রসাদ পাওয়া হলে শ্রীচৈতন্যদেব তাদের ফুলের মালা পরালেন। অতঃপর ভগবান অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে তাঁর ভক্তদের বললেন, “যারা হরিদাস ঠাকুরের তিরোধান দর্শন করেছেন, যারা এখানে নৃত্য কীর্তন করেছেন, যারা হরিদাস ঠাকুরের দেহে বালুকা প্রদান করেছেন এবং যারা এখানে প্রসাদ পেয়েছেন সকলেই খুব শীঘ্রই কৃষ্ণের কৃপা প্রাপ্ত হবেন।”

শ্রীচৈতন্য চরিতামমৃত অন্তলীলায় বিশদ বর্ননা দেয়া আছে–

❝ হরিদাসে বিজয়োৎস যে কৈল দর্শন।
যেই ইহা নৃত্য কৈল, যে কৈল কীর্ত্তন॥
যেই তারে বালুকা দিতে করিল গমন।
তাঁর মহোৎসবে যেবা করিল ভোজন॥
 অচিরে সবার হইবে কৃষ্ণপ্রেম প্রাপ্তি।
হরিদাস দরশনে ঐছে হয় শক্তি ॥ ❞ ‌

মনে রাখবেন, ভগবানের অনন্ত গুণের মধ্যে ৬৪ গুণ প্রধান এবং ৬৪ গুণের মধ্যে বিশেষ গুণগুলি হল –

সত্যবাক্যঃ (satya-vākyaḥ) — যার বাক্য কখনও মিথ্যা হয় না। সত্যবাদী (whose words are truthful) ।

সুদৃঢ়ব্রতঃ (su-dṛḍha-vrataḥ) — তিনি যা প্রতিজ্ঞা করেন তা তিনি সত্যি পালন করেন। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ (firmly determined) ।

ভক্তসুহৃৎ (bhakta-suhṛt) — ভক্তদের হিতৈষী (well-wisher of the devotees)।

শরণাগতপালকঃ (śaraṇa-āgata-pālakaḥ) — শরণাগতদের পালন ও রক্ষা করেন। শরণাগতদের রক্ষক (protector of the surrendered souls)।

সাধু-সমাশ্রয়ঃ (sādhu-samāśrayaḥ) — ভক্তবৎসল। ভক্তের প্রতি স্নেহশীল বা অনুরাগী (Partiality to devotees)।

 

আরও পড়ুন: Qualities of Lord Krishna-RadhaRani || শ্রীকৃষ্ণের ৬৪ গুণ ও শ্রীমতি রাধারানীর ২৫ গুণ বর্ণন

একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে পারে, এ কেমনতর ঘটনা যেখানে একজন মারা গেল, সেখানে শ্রীচৈতন্যদেব হাসছেন, নাচছেন, প্রসাদ খাওয়াচ্ছেন, আনন্দ উপভোগ করছেন?         

এখানেই পার্থক্য জড়জাগতিক এবং আধ্যাত্মিক স্তরে। এখানেই পার্থক্য একজন সাধারণ ও শুদ্ধ ভক্তের কর্মকাণ্ড, দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। সাধারণ যা দেখে তাই ভাবে, ও তাই নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে। নিষ্কাম ভক্ত, শুদ্ধ ভক্ত ঘটনার পেছনে ভগবানের কৃপা, করুণা দর্শন করেন, তাঁদের কাছে সবার উপরে পরমসত্য ভগবানের লীলা। অবশ্যই ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব এবং তাঁর পার্ষদগণ হরিদাসের তিরোভাবে ক্রন্দন করেছিলেন কিন্তু তারা এও জানতেন যে, তিনি কৃষ্ণের কাছে ভগবদ্ধামে ফিরে যাচ্ছেন সেই কারণে তারা আনন্দিত হয়েছিলেন। 

Join to Our Community
Community Grows With You
x

This website uses cookies.