Join to Our Community
Community Grows With You

Jhulan Yatra 2023 || ঝুলন যাত্রা বা ঝুলন পূর্ণিমার মাহাত্ম্য

এই অধ্যায়ে বর্ণন করছি ঝুলনযাত্রা ২০২৩ কবে? ঝুলনযাত্রা কী? ঝুলন যাত্রা বা ঝুলন পূর্ণিমার মাহাত্ম্য কী? ঝুলন যাত্রা কীর্তন কি কি? 

‘ঝুলন’ শব্দটি এসেছে ‘দোলনা’ শব্দটি থেকে। ভগবান অবতার রূপে আবির্ভূত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন কার্যকলাপ করে থাকেন, যাকে এককথায় ‘যাত্রা’ বা ‘লীলা’ বলে। ভগবানের প্রতিটি লীলা বা যাত্রা শিক্ষামূলক, যা তিনি রচনা করেন আমাদেরকে শিক্ষা দেবার জন্য।  শাস্ত্রজ্ঞদের মতে, বয়ঃসন্ধিতে কিশাের কৃষ্ণ ও রাধারানীর যে মাধুর্যপূর্ণ প্রেমের পরিপূর্ণ প্রকাশ বৃন্দাবনে স্থাপিত হয়েছিল, সেই প্রেমলীলার স্বরূপাই হল ঝুলনযাত্রা

✤ ঝুলন যাত্রা ২০২৩ – সময়সূচী 

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

ঝুলনযাত্রা আরম্ভ                      – রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩

ঝুলনযাত্রা সমাপ্তি                     – বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩

ঝুলন যাত্রার অন্যান্য নাম       – ঝুলন পূর্ণিমা, শ্রাবণী পূর্ণিমা, Swinging festival

ঝুলন যাত্রার পালন দিন           – শ্রাবণ মাসের শুক্লা একাদশী (পবিত্ররোপণ একাদশী)

 হিন্দু ধর্মীয় উৎসবের কারণ    –  যা ভগবান কৃষ্ণকে উৎসর্গ করা হয়।

উৎসব বিধি                                – দোলনায় ভগবান কৃষ্ণকে দোলানো।

ঝুলন যাত্রা বা ঝুলন পূর্ণিমার মাহাত্ম্য

(Significance of Jhulan Yatra)

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

ভগবানকে তাঁর সৃষ্টি ও সেই সৃষ্টিকে রক্ষার জন্য অবতারত্ব গ্রহণ করেন। অবতার রূপে তাঁর নানারূপ কার্যকলাপকে এককথায় ‘যাত্রা’ বা ‘লীলা’ বলে। ঝুলনযাত্রা তেমনি ভগবানের প্রেম মাধুর্যময় একটি লীলা, যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সহিত শ্রীরাধার মাধুর্যপূর্ণ প্রেমের পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে।

বছরের তিনটি পূর্ণিমাকে শ্রীকৃষ্ণের লীলা বা যাত্রা বলে অভিহিত করা হয়। যেমন, (১) দোলপূর্ণিমায় দোলযাত্রা, (২) তারপর শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমাতে ঝুলনযাত্রা ও (৩) সবশেষে লীলা শ্রেষ্ঠ রাসপূর্ণিমাতে রাসলীলা

এই তিন লীলা তত্ত্বের প্রতীকস্বরূপ বর্ণনা :– প্রথমে স্পন্দন, দ্বিতীয় হিন্দোল বা আন্দোলন এবং তৃতীয়ে নৃত্য বা উল্লাস।

ঝুলনযাত্রা বা লীলা বর্ষার লীলা। সাধারণত শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি (পবিত্ররোপণ একাদশী) থেকে পূর্ণিমা তিথি,এই পাঁচদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব এই ঝুলন উৎসব বা ঝুলন যাত্রা। তাই ঝুলন পূর্ণিমাকে শ্রাবণী পূর্ণিমাও বলা হয় ।  রাখি পূর্ণিমার মাধ্যমে ঝুলন যাত্রার সমাপ্তি ঘটে। শ্রাবণী পূর্ণিমাকে একাধারে ঝুলন পূর্ণিমা বলে।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কৃপা করে দ্বাপরযুগে এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তার বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে বৃন্দাবন তথা নন্দালয়ে নানারকম লীলাসাধন করেছিলেন। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে, বয়ঃসন্ধিতে কিশাের কৃষ্ণ ও রাধারানীর যে মাধুর্যপূর্ণ প্রেমের পরিপূর্ণ প্রকাশ বৃন্দাবনে স্থাপিত হয়েছিল, সেই প্রেমলীলার স্বরূপাই হল ঝুলনযাত্রা তারপর থেকে যুগ যুগ ধরে এই ঝুলন উৎসব চলে আসছে।

রাধাকৃষ্ণ বৃন্দাবনের কুঞ্জবনে বিশুদ্ধ প্রেমের আদানপ্রদানের মাধ্যমে এই জীবজগতে প্রথম প্রেমের প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন ।

শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধিকা তাঁদের অষ্টসখী ললিতা, বিশাখা, চিত্রা, ইন্দুরেখা, চম্পকলতা, রঙ্গদেবী, তুঙ্গবিদ্যাসুদেবী সহ গোপিনীদের সাথে এই লীলা করেছিলেন।

ঝুলন উৎসবে শুধুমাত্র রাধা, কৃষ্ণ আর গোপীরা থাকে, যেখানে নন্দ মহারাজ, মাতা যশোদা, অন্যান্য বন্ধু, ভৃত্য ও সহচরদেরকে অনুমতি দেওয়া হয় না। গোপীদের প্রেম আধ্যাত্মিকভাবে প্রেমের সর্বোচ্চ স্তরে স্থিত যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। গোপীরা কীভাবে কৃষ্ণের সাথে সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিকভাবে সংযুক্ত তা সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে!

ঝুলন পূর্ণিমায় রাধা কৃষ্ণের বিগ্রহ দোলনা বা ঝুলনে স্থাপন করে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে দোলানো হয়। সূর্যের উদয়,অস্ত ও অবস্থানের দিক নির্দিষ্ট করেই তা করা হয়।সূর্য হচ্ছে পৃথিবীর সর্ব প্রকার শক্তির উৎস।আর পৃথিবীর গতি হচ্ছে দু’টো, আহ্নিকগতি ও বার্ষিকগতি।দুই গতিধারায় বছরে দু-বার কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখায় গিয়ে অবস্থান করে।তখন ঘটে সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণ অবস্থান।সেই কারণেই শ্রীকৃষ্ণের ঝুলনযাত্রা অনুষ্ঠানে দোলনাটিকে ঝোলানো হয় উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে। এখানে প্রতীকী হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন -পরা প্রকৃতি বা পুরুষোত্তম আর রাধারাণী হচ্ছেন – অপরা প্রকৃতি, ভক্ত স্বরূপিনী। আধ্যাত্মিক অর্থে-ভক্ত ভগবানের খেলা।

শাস্ত্রমতে রাধারাণি হলেন শ্রীকৃষ্ণরই অংশ, শ্রীকৃষ্ণের শরীরের বামভাগ থেকে তার জন্ম। তিনি কৃষ্ণের পরম ভক্ত স্বরূপিণী। কৃষ্ণ প্রেমে তিনি পাগল, কৃষ্ণের পরম আরাধ্যা দেবী তাই কৃষ্ণকে পেতে গেলে রাধার উপাসনা অবশ্য কর্তব্য। রাধার কৃপা থাকলে অতি সহজেই কৃষ্ণকে লাভ করা যায়। আবার রাধার শক্তিতে কৃষ্ণ বলবান, তাই এরা এক ও অভিন্ন।

ঝুলন হল বর্ষার লীলা যার আরেক নাম হিন্দোলনলীলা। ব্রজবাসীরা কদমগাছে ঝুলা বেঁধে রাধাকৃষ্ণকে দোল খাওয়ায়। কাজরী গান হয়। মেঘমল্লারে বৃন্দাবনের আকাশবাতাস সঙ্গীতমুখর হয়ে ওঠে। 

ঝুলনযাত্রা রূপকধর্মী। দোলা বা হিন্দোলনের অর্থ তাৎপর্যপূর্ণ যা মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, বিরহ-মিলনকে সঙ্গে নিয়ে জীবন চলাকে বোঝায়। জীবনে কখনও আসবে দুঃখ, তারপরেই আসবে সুখ। কখনো বিরহ, কখনো মিলন। কখনো আনন্দ, কখনো বিষাদ। স্থির হয়ে থাকাটা জীবন নয়। জীবন মানেই প্রবাহ, চলা।   এই দোলনার আসা ও যাওয়াটি হল রূপকমাত্র। সেই জন্যেই তো বলে “চক্রবত পরিবর্ততে সুখানি চ দুখানি চ’।

উপনিষদে বলে “আনন্দ ব্রহ্মেতি ব্যজনাত” অর্থাৎ ব্রহ্ম আনন্দস্বরূপ। ভগবান সৎ চিত আনন্দ। তাইতো তিনি বন্ধু-বান্ধব, পিতা-মাতা, দাস-দাসী, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীর মত সম্পর্কের জালে আবদ্ধ করেছেন মানুষদের। প্রেমের আবাহনে পুরুষ আর প্রকৃতির যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠে হিন্দোলন বা ঝুলনের মত উৎসব। সম্পর্ক টিঁকিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রজাপিতা ব্রহ্মকে দিয়েছেন এরূপ দায়বদ্ধতা। মানুষ যাতে মানুষকে নিয়ে অহোরাত্র বেঁঁচে থাকে…… আর সেখানেই ঝুলন নামক মিলনৎসবের সার্থকতা !

মথুরা, বৃন্দাবনের মতোই বাংলার নবদ্বীপ, মায়াপুরে ঝুলন উৎসবের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। অঞ্চলভেদে ঝুলন উৎসবেও দেখা যায় নানা আচার অনুষ্ঠান ও সাবেক প্রথা। এটি দোল পূর্ণিমার পরবর্তী বৈষ্ণবদের আরেকটি বড় উৎসব। শাস্ত্রমতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্ত-অভক্ত নির্বিশেষে সকলকে অনুগ্রহ করার জন্য গোলকধাম থেকে ভূলোকে এসে লীলা করেন।

‘ঝুলন’ শব্দটি এসেছে ‘দোলনা’ শব্দটি থেকে। তাই এই সময় ভক্তরা রাধাকৃষ্ণের প্রেমময় মূর্তিকে দোলনায় বসিয়ে পূজা করেন। পাঁচদিন তাদের নানারকম সাজে সাজানাে, প্রেমভক্তি, নামগান বৃন্দাবনে তাদের বিশুদ্ধ প্রেমপর্ব সমস্তকিছু ভক্তগনের সামনে ঝুলন যাত্রার মাধ্যমে পরিবেশন করা হয় । এককথায় রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলার পাঁচদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান ঝুলন উৎসব নামে পরিচিত।  এই সময় প্রতিদিন ২৫-৩০ রকমের ফলের নৈবেদ্য, লুচি, সুজি, মিষ্টান্ন প্রভৃতি ভোগ নিবেদন করা হয়।

ঝুলনযাত্রা লীলাকথামৃত মাহাত্ম্য

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

স্কন্দপুরাণে উল্লেখ আছে –

❝দোলে চ দোল গোবিন্দ চাপে চ মধুসূদন ।
রথে চ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে॥ ❞ ‌

অনুবাদ: ঝুলনকালে দোলনায় শ্রীগোবিন্দকে, নৌবিহারকালে শ্রীমধুসূদনকে এবং রথযাত্রায় রথোপরি বামনাকৃতির শ্রীজগন্নাথদেবকে কেউ দর্শন করলে, তার আর পুনর্জন্ম হয় না।

শ্রীপাদ বিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী ঠাকুর ”কৃষ্ণভাবনামৃত” গ্রন্থে রাধাকৃষ্ণের আনন্দঘন ঝুলন যাত্রা লীলা লিপিবদ্ধ করেছেন। এই গ্রন্থে অনেক সুন্দরভাবে ঝুলন উৎসবের বর্ননা করা হয়েছে। কৃষ্ণলীলায় রাধাকুন্ডের তীরে ঝুলন উৎসবটি লীলায়িত হয়েছিল।

একদিন সমস্ত ব্রজ গোপীরা নিজ নিজ ঘর থেকে সুন্দরভাবে সেজে রাধাকুন্ডের পাশে কুঞ্জবনে একত্রিত হল এই মনোবাঞ্ছা নিয়ে কখন তারা তাদের প্রানের যুগলমুর্ত্তি নবকিশোর রাধা-কৃষ্ণকে ঝুলনে বসিয়ে দোল দেবে, তাঁদেরকে প্রেম আনন্দে ভাসিয়ে দেবে। কিন্তু রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ এই ঝুলন উৎসবকে আরও আনন্দঘন প্রেমময় করে তোলার জন্য এক অদ্ভুত কিন্তু সুন্দর লীলা গোপীদের সাথে করেছিলেন।

তুলসী মহারানী বৃন্দাদেবী শ্রীকৃষ্ণের মনের ভাব বুঝতে পেরে এই লীলাকে আরও সুন্দর আরও মধুময় করে তোলার জন্য ষড়ঋতুকে আহ্‌বান করেন এবং  তাদেরকে নির্দেশ দেন যেন তারা তাদের ষড়ঋতুর প্রভাব এই কুঞ্জবনে সর্বশ্রেষ্ঠ স্তরে বিস্তার করেন। এই হল শ্রেষ্ঠ শুদ্ধতম ভক্তির ভাব, ভগবানের ইচ্ছা কি তা বলে দিতে হয় না, তিনি ভাবেই বুঝতে পারেন, আর ভগবানের ইচ্ছা পূরণের চেষ্টায় নিজেকে উজাড় করে দেন।  

ভগবানকে সেবা করার উত্তম সুযোগ পেয়ে ষড়ঋতুগন মুর্ত্তিমান রুপ ধারন করে তাদের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করতে থাকে, ফলে এই কুঞ্জবনে একই সময়ে ভগবান যেন সব ঋতুর সৌন্দর্যতাকে উপভোগ করতে পারেন। আর ভগবান পুলকিত হলেই হবে তাদের সেবার সার্থকতা। গ্রীষ্মঋতু ঝলমল রৌদ্র, বর্ষাঋতু কালো মেঘ থেকে পুষ্পম বৃষ্টির কণা, শরৎঋতু নির্মল প্রকৃতিকে জাগ্রত করে গাছে গাছে পাতায় পাতায় শিহরন সঞ্জিবতায় কদম, কেয়া, শিউলি ফুলের মৃদুগন্ধ ছড়িয়ে দেয়, তীরে তীরে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল আকর্ষণীয়ভাবে সুসজ্জিত করে অন্য জগত গড়ে তোলে। শ্বেতশুভ্র পুঞ্জ মেঘের নীচে হেমন্তঋতু শুষ্ক বিবর্ণ ধূসর প্রকৃতিকে হিমেল স্নিগ্ধতায় শীতের হিমহিম ভাব জাগায়, সেই সঙ্গে প্রকৃতি মুগ্ধ হয়ে ওঠে ভেসে আসে চাষীদের ফসল কাটার গানে। শীতঋতু কুয়াশার আচ্ছাদন দিয়ে প্রকৃতিকে আরও মায়াময় করে তোলে, শিশিরে সিক্ত ঘাস কার্পেটের থেকেও কোমল আচ্ছাদন বিছিয়ে প্রতীক্ষায় বসে ভগবানের কমল শ্রীচরণ মস্তকে ধারণ করার জন্য। বসন্তঋতু অশোক, পলাশ, কৃষ্ণচুড়া, শিমুল গাছের ডালি ভরে ফুল প্রস্ফুটিত করে অপেক্ষমান কতক্ষণে ভগবানের শ্রীমস্তকে অর্পণ করবে, ফুল প্রতীক্ষায় বসে ভগবানের শ্রীঅঙ্গ স্পর্শ করার জন্য।  কোকিলের মত সব গোপীরা গোপীগীত করে অপেক্ষমান যুগলমুর্ত্তি রাধা-কৃষ্ণকে আজ দোলনে দোল দেবার জন্য।

নিকুঞ্জ বনের কুঞ্জে আজ রাধাকৃষ্ণ বিশ্রাম ছেড়ে ললিতা বিশাখার ডাকের অপেক্ষায় প্রতীক্ষমান কখন তারা দোলনায় দোল দেওয়ার জন্য ডাকবে!

আজ এক অদ্ভুত মাধুর্য্য লীলা করার জন্য কৃষ্ণের ইচ্ছে হল রাধাকে আজ তিনি তার নিজের হাতে ইচ্ছামত সাজাবে, প্রথমে রাজী না থাকলেও শেষমেশ রাধাকে রাজী করানো হল। কৃষ্ণ মনের মাধুরী দিয়ে রাধাকে সাজাতে লাগল। নানারকম রং দিয়ে কৃষ্ণের পোশাকের মত পোশাক পড়ে, চুল কোকড়া করে মাথায় পাগড়ি বেঁধে, মূল্যবান বেশভূষা ও অলংকারে সজ্জিত করে, কুমকুম রেনু ছড়িয়ে, কৃষ্ণের মত হাতে চুড়ি-বালা পরে, মুখে পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে রাধাকে সত্যিকারের কৃষ্ণ সাজিয়ে দুই যুগল কিশোরমূর্ত্তি হাতে বংশী ধরে অপেক্ষায় প্রহর গুনছে কখন সখীরা ডাকবে।

যখন সব সখীরা রাধাকুন্ডে একত্রিত হল তখন ললিতা বিশাখা বলল, “চল আমরা নিকুঞ্জ কুঞ্জে গিয়ে রাধাকৃষ্ণকে দর্শন করে ডেকে নিয়ে আসি।” কুঞ্জের ভিতরে প্রবেশ করে তারা সকলেই হতবাক!

তারা দেখল সেখানে রাধারানী নেই! তার বদলে দুই কৃষ্ণ ভাবলেশহীন হয়ে উপড়ে তাকিয়ে মধুর সুরে বাঁশী বাজাচ্ছে। রাধা কোথায় গেল ভেবে সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে খোঁজাখুঁজি করতে লাগল। এ তো সর্বনাশ কাণ্ড! বৃন্দাবন মানেই অসুর দানবদের আক্রমণ! গোপীরা সর্বদা কৃষ্ণের প্রেমরসে ব্যকুল। তাদের মাথায় সহজ বিষয় বোধগম্য হয় না, কৃষ্ণকে হারানোর চিন্তায় মন অস্থির, উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে। রাধার প্রেমে কৃষ্ণ ব্যকুল। রাধাকে হারানো মানে কৃষ্ণকে হারানোর ভয়। 

তবে কিছু পরে সখীরা ভেবে আশ্চর্য হল দুইজন কৃষ্ণ কি করে হতে পারে? এদের মধ্যে একজন অবশ্যই আমাদের রাধা হবে। কৃষ্ণ সেজে আমাদেরকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে! তবে এদের মধ্যে কে যে তাদের রাধা সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু কে যে কৃষ্ণ, কে যে রাধা তারা কিছুতেই চিনতে পারল না।

ললিতা এক কৃষ্ণকে (যদিও সে সত্যিকারের কৃষ্ণ ছিল) ধরে বলতে লাগল, “হে রাধে! তোমাকে কে এমন করে কৃষ্ণ সাজিয়েছে ?”

কৃষ্ণ মজা করার জন্য ছলনা শুরু করে। রাধারানীর গলার স্বর নকল করে বলতে শুরু করে, ”ললিতা! এই দুষ্ট কৃষ্ণ আমাকে এমন করে সাজিয়েছে”।

অন্যদিকে, আসল রাধা উপরে তাকিয়ে বাঁশী বাজিয়েই চলছে। 

সব সখীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্বস্ত হল !

সখীরা বলল, “হে রাধে! বলো তোমার এই অবস্থা কে করল? কিভাবে এমন হলো?”

তখন ললিতা কৃষ্ণকে রাধা ভেবে হাত ধরে টানতে টানতে কুঞ্জের বাইরে নিয়ে এল। সব সখীরা কৃষ্ণকে তখনও রাধা মনে করে ঘিরে ধরে কাঁধে হাত রেখে গায়ে গায়ে ঘেসে ঐ দোলনার সামনে যেতে লাগল। আবার রাধারানী যেমন সখীদের সাথে আচরন করে কৃষ্ণও তেমন আচরন করতে লাগল, যাতে কেউ বুঝতে না পারে।

এদিকে সবাই বলতে শুরু করেছে, “হে রাধে! তোমার শরীর কেন পুরুষেরে মত শক্ত শক্ত লাগছে!”

কৃষ্ণ রাধিকার স্বরে উত্তর দেয়, ”সেই কপট কৃষ্ণ তার মন্ত্রপুতঃ জল আমার গায়ে ছিটিয়ে দেওয়াতেই আমার অঙ্গ কৃষ্ণের অঙ্গের মত হয়ে গেছে”।

তখন বিশাখা বলল, ”হে সখী! তবে তোমার গলার স্বর কেন পরিবর্ত্তন হয়নি ?”

কৃষ্ণ হল বাকপটু, উত্তর তাঁর ঠোঁটস্থ। প্রত্যুত্তরে বলল, ”যখন মন্ত্রপুতঃ জল দিচ্ছিল তখন আমি মুখ বন্ধ করে ছিলাম। তাই কন্ঠস্বর পরিবর্তন হয়নি।”

গোপীরা সহজ সরল, রাধার উপর অগাধ বিশ্বাস। রাধা বলেছে মানে অবাস্তবও বাস্তব। এতে কোনও দ্বিধা নেই, তাতে কোনো দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। সব সখীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্বস্ত হল। এরপর সব সখীরা জানতে চেয়ে পীড়াপীড়ি করতে লাগল, “হে রাধে! আর তোমার মধ্যে নারী থেকে পুরুষে এমন পরিবর্তন কিভাবে হলো? বলো রাধে।”

প্রত্যত্তরে কৃষ্ণ লাজুক ভান করে বলে উঠল, “হায়! হায়! সেকথা আমি সবাইকে বলতে পারব না। আমার লজ্জা করছে। তোরা যদি শুনতে চাস তবে একজন একজন করে গোপনে চল আড়ালে গিয়ে কানে কানে বলতে পারি।”

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অখিলরসামৃত। তিনি চেয়েছেন যে, সকল গোপীকে চিন্ময় জ্ঞান দান করে তাদের গত জন্মের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে। যা তারা অনেক যুগ যুগ ধরে, জন্ম জন্ম ধরে তপস্যা করে লাভ করেছিল। একইভাবে কৃষ্ণ আরও চেয়েছেন শ্রীমতি রাধারানীকে যে চিন্ময় প্রেম নিবেদন করে আনন্দবিধান করেন, আজকে তাদেরকেও সেই আনন্দ দান করবেন, যা আনন্দ লাভ করলে এই বিশ্বব্রম্মান্ডে আর কিছু প্রাপ্তির বাকী থাকে না।

যদিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত নারীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়, সকলের আরাধ্য, সমস্ত ঐশ্বর্য্যের অধিকারী, সকলের মাননীয়, পরম নিয়ন্তা ও আত্মারাম, তবুও তিনি গোপসখীদের সাথে নিজের স্বত্ত্বতা প্রকাশ করেন যে, তিনি আর রাধা একই তত্ত্ব।

❝রাধা পুর্নশক্তি, কৃষ্ণ পুর্নশক্তিমান,
দুই বস্তু ভেদ নাহি, শাস্ত্র-প্রমান ॥ ❞ ‌

              ━━┉┈┈(চৈতন্যচরিতামৃত)

ললিতা তখন সব সখীদের বলল, “তোরা সবাই এখানে থাক, আমি রাধারানীর কি গুহ্যতম কথা তা শুনে আসি।”

এই বলে ললিতা শ্রীকৃষ্ণের সাথে একটু আড়ালে গেলেন। সেখানে গিয়ে কৃষ্ণ তাকে দেখালেন যে তিনি রাধা নন, স্বয়ং কৃষ্ণ। কৃষ্ণ ও রাধা যে একই তত্ত্ব তার প্রমান সহ রাসলীলা দেখালেন এবং ফিরে এসে ললিতা চুপ।

তারপর বিশাখা গেলেন। তিনিও ফিরে এসে চুপ। একে একে সব সখীদের কৃষ্ণ রাধারানীর সাথে তার অনন্ত সম্পর্কের কথা প্রকাশ করলেন। 

কিন্তু কৃষ্ণ আবার যোগমায়া বলে আবার সবাইকে তা ভুলিয়েও দিলেন।

এবার সব সখীরা তবুও কৃষ্ণকে অনুরাগের সুরে বলছে, “হে সখী! অনেক ছলনা হল, হে রাধে! এবার তোমার স্বরুপে আসো। দোলনার সময় গড়িয়ে যাচ্ছে।”

কৃষ্ণও চুপ করে রইল।

তখন কিছু সখীরা কুঞ্জে গিয়ে রাধাকে কৃষ্ণ ভেবে অনুনয় করতে লাগল যে, তাদের সখীকে আবার রাধা করে দিতে। সেই সময় রাধারানীর সম্বিত ফিরলে বলে, “কেন রে সখীরা! আমিই ত রাধা! আমি কি করে কৃষ্ণকে রাধা বানাব!”

তখন সবাই কৃষ্ণের ছলনা বুঝতে পেরে লজ্জায় পড়ে গেল। এরপর সমস্ত সখীরা ও কৃষ্ণ হাসি তামাসা করতে লাগল, চিন্ময় আনন্দ সখীরা উপভোগ করতে লাগল, যার সীমা রইল না। এরপর সমস্ত সখীরা রাধাকৃষ্ণকে ঘিরে নৃত্যগীত করতে লাগল।

বৃন্দাদেবী (অর্থাৎ তুলসী মহারানী) আগে থেকেই ঝুলন এবং ষড়ঋতুর দ্বারা এক আনন্দঘন মনোরম পরিবেশ তৈরী করে রেখেছিল। রাধা-কৃষ্ণসহ সব সখীরা সেই ঝুলনের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখল যে ঝুলনটি সোনা ও মনিমুক্তা খচিত, গাছ থেকে রুপোর দড়িতে ঝুলছে। বিভিন্ন ফুল ফল লতা গুল্ম দিয়ে ছিল সজ্জিত। একটি গাছ আরেকটি গাছকে আলিঙ্গন করছে। পাখীরা কুঞ্জন ও ময়ুর সকল নৃত্য করছিল।

সমস্ত সখীরা সেই স্বর্নখচিত ঝুলনটিতে রাধাকৃষ্ণকে বসালেন, কেউ গান গাইতে লাগল, কেউ বাদ্য বাজাতে লাগল, অন্যরা দোল দিতে লাগল। রাধা দোলনার অপর প্রান্তে একটু দূরে সরে শক্ত করে দড়ি ধরে আছে দেখে কৃষ্ণ সবাইকে আরও জোরে দোল দিতে উৎসাহ দিতে লাগলেন।

ঝুলনের গতি বাড়তে লাগল। কখনও একপাশ আস্তে আস্তে অনেক উপরে উঠতে লাগলো, আবার কখনও অন্যপাশও অনেক উপরে উঠতে লাগলো। কৃষ্ণ গোপীদের আরও আরও জোরে দোল দিতে উৎসাহ দিতে লাগল। এবার রাধা ভয় পেয়ে কুঁকড়ে যেতে লাগল, শেষমেশ যখন দেখল আর গতি নেই, বেগতিক অবস্থা! তখন দড়ি ছেড়ে কৃষ্ণকে অবলম্বন করে জড়িয়ে ধরল, ”এ হল পূর্ন শরনাগতি”।

তবুও কৃষ্ণ গোপীদের জোরে দোল দেওয়ার জন্য বলতে লাগল।

সেদিন গীত বাদ্য সখীদের হাস্য তামাশা প্রকৃতি রাধারানীর চিৎকার কৃষ্ণের হাস্য কথা সব মিলিয়ে রাসলীলার আনন্দকেও ম্লান করেছিল।

সবশেষে সকল সখীদের অংশগ্রহনে ললিতা ও বিশাখা তাদের প্রিয় যুগল কিশোর রাধাকৃষ্ণাকে আনন্দ বিধান করেছিল। ধন্য তারা।

আসুন আমরাও রাধাকৃষ্ণকে ঝুলনে বসিয়ে দোল দিয়ে তাদের প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত হই।

✤ ঝুলনযাত্রার শিক্ষণীয় বিষয় ✤

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

এই লীলা থেকে শিক্ষণীয় হল এই যে, যে কোনো পরিস্থিতিতে ভগবানের উপর আস্থা রেখে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে সঁপে দেওয়া, তিনি দেখবেন, রক্ষা করবেন, পালন করবেন। যেখানে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ রাখলে চলবে না। এই প্রসঙ্গে বলতে হয় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের ঘটনা। যখন ভরাসভায় দুঃশাসন তার বস্ত্র টেনে খুলতে লাগল দ্রৌপদী প্রথমে ভেবেছিল তিনি দুঃশাসন নামক অসুরের হাত থেকে নিজেকে সামাল দিতে পারবেন, ভগবানকে স্মরণ করার দরকার নেই। বস্ত্রতে টান আরও বাড়তে লাগল, এক হাতে বস্ত্র শক্ত করে ধরে অন্য হাত উপরে তুলে ভগবানকে স্মরণ করলেন। এখনও তিনি ভাবলেন অসুরের হাত থেকে হয়ত তিনি নিজেকে বাঁচাতে পারবেন, সম্পূর্ণ  শরনাগতি নিলেন না। শেষমেশ যখন বুঝলেন তিনি নিজেকে রক্ষা করতে অপরাগ, তখন দু হাত উপরে তুলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্পূর্ণ শরনাগতি নিলেন, তখন ততক্ষনাৎ ভগবান দ্বারকা থেকে হস্তিনাপুরে উপস্থিত হয়ে অসংখ্য বস্ত্র সরবরাহ করে দ্রৌপদীর মানসম্মান রক্ষা করলেন।

আরেকটি ঘটনা হল রুক্মিণী দেবীকে বিয়ের জন্য উঠিয়ে নিয়ে কৃষ্ণের পলায়নের ঘটনা। রুক্মিণী দেবী রাজপ্রাসাদ থেকে মন্দিরে পূজা দিয়ে কৃষ্ণের আগমনের অপেক্ষা করছেন, ক্ষত্রিয় সৈন্য সামন্ত ঘিরে রয়েছে মন্দির চত্বর। তবু কৃষ্ণের দেখা নেই। ভাবছেন এই আসবে, এই উঠিয়ে নিয়ে পলায়ন করবে। কিন্তু কৃষ্ণের দেখা নেই। রথে উঠলে ফিরতে হবে রাজপ্রাসাদে, সেখানে তার বিয়ের আয়োজন চলছে। শেষমেশ রথে ওঠার আগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্পূর্ণ শরনাগতি নিলেন, তখন ততক্ষনাৎ ভগবান চোখের নিমেষে রথে চড়ে উপস্থিত হয়ে উঠিয়ে নিয়ে পলায়ন করলেন। 

সম্পূর্ণ শরনাগতি নেবার জন্য প্রহ্লাদকে তার বাবা অসুররাজ হিরণ্যকশিপু কিছুই করতে পারে নি, বহু মৃত্যুদন্ড দিলেও সব ব্যর্থ হয়েছে। শেষমেশ ভগবান নৃসিংহ রূপ ধারন করে হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করে পুত্র প্রহ্লাদের অনুরোধে উদ্ধার করেন।     

ঝুলনের শেষ দিনে, পূর্ণিমায় (পূর্ণিমা) এটি আসে ভগবান বলরামের আবির্ভাব দিবসের উৎসব

ঝুলন যাত্রা বা ঝুলন পূর্ণিমার বিধি

(Jhulan Yatra Rituals)

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

হিন্দু ধর্মের বিশেষত বৈষ্ণব ধর্মাবিলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ঝুলন উৎসব। ঝুলন রাধাকৃষ্ণের বর্ষাকালীন প্রেম এবং আবেগের উৎসব। বর্তমানে বৃন্দাবন ছাড়াও মথুরা, নবদ্বীপ, মায়াপুর এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে এবং ভারতবর্ষ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে (যেখানে বৈষ্ণব ধর্মাবিলম্বীদের অবস্থান) এই উৎসব আড়ম্বরের সহিত পালিত হয়। ভক্তিমূলক গান, নাচ এই উৎসবের অঙ্গ। 

এই পাঁচ দিনে দেবতাদের পোশাক প্রতিদিন বদলাতে হবে, এবং যথাসম্ভব সুন্দর ভোগ নিবেদন করে সেই প্রসাদ বিতরণ ও গ্রহণ করতে হবে। 

বেশি বেশি নাম সংকীর্তন করবেন এবং রাধা কৃষ্ণ প্রান মোর যুগল কিশোর গানটি গাইবেন।

সক্ষম হলে একটি সুন্দর সিংহাসন তৈরি করে তার উপর রাধা-কৃষ্ণকে স্থাপন করা যেতে পারে। কীর্তনের সময় এই সিংহাসনটি মৃদুভাবে দুলানো যেতে পারে। এটি খুব ভাল হবে, এবং রাধা-কৃষ্ণ অবশ্যই অনুষ্ঠানটি উপভোগ করবেন।

ভগবানের আরতি শেষ হলে “শ্রী শ্রী যুগল আরতি” গানটি কীর্তন করবেন। 

সখীবৃন্দে বিজ্ঞপ্তি (নিবেদন)

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

(“রাধা কৃষ্ণ প্রাণ মোর” – নরোত্তম দাস ঠাকুর)

রাধা-কৃষ্ণ প্রাণ মোর যুগল-কিশোর ।
জীবনে মরণে গতি আর নাহি মোর ॥ ‌

কালিন্দীর কূলে কেলি-কদম্বের বন ।
রতন-বেদীর উপর বসাব দু’জন  ॥ ‌

শ্যাম-গৌরী-অঙ্গে দিব (চূয়া) চন্দনের গন্ধ ।
চামর ঢুলাব কবে, হেরিব মুখচন্দ্র  ॥ ‌

গাঁথিয়া মালতীর মালা দিব দোঁহার গলে ।
অধরে তুলিয়া দিব কর্পূর-তাম্বূলে  ॥ ‌

ললিতা-বিশাখা-আদি যত সখী-বৃন্দ ।
আজ্ঞায় করিব সেবা চরণারবিন্দ  ॥ ‌

শ্রী-কৃষ্ণ-চৈতন্য-প্রভুর দাসের অনুদাস ।
সেবা অভিলাষ করে নরোত্তম-দাস  ॥ ‌

শ্রী শ্রী যুগল আরতি

─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─

জয় জয় রাধাকৃষ্ণ যুগল-মিলন ।
আরতি করয়ে ললিতাদি সখীগণ ॥ ‌

মদনমােহন রূপ ত্রিভঙ্গসুন্দর ।
পীতাম্বর শিখি পুচ্ছ-চূড়া-মনােহর  ॥ ‌

ললিতা মাধব-বামে বৃষভানু-কন্যা।
সুনীলবসনা গৌরী রূপে গুণে ধন্যা  ॥ ‌

নানাবিধ অলঙ্কার করে ঝলমল।
হরিমনােবিমােহন বদন উজ্জ্বল  ॥ ‌

বিশাখাদি সখীগণ নানা রাগে গায়।
প্রিয়নৰ্মসখী যত চামর ঢুলায়  ॥ ‌

শ্রীরাধামাধব-পদ-সরসিজ-আশে।
ভকতিবিনােদ সখী পদে সুখে ভাসে  ॥ ‌

আরও পড়ুন: Purushottam Month 2023 || পুরুষোত্তম মাস কি ও তার মাহাত্ম্য

Join to Our Community
Community Grows With You
x

This website uses cookies.