শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী হল ‘কামিকা একাদশী’ (Kamika Ekadashi)।
এই একাদশী পালনে সকল পাপমোচন হয়ে যায়। তাছাড়া এই একাদশীর মাহাত্ম্য শ্রবণ করলে বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ প্রাপ্ত হয়। গঙ্গা, গোদাবরী, কাশী, নৈমিষ্যারণ্য, পুষ্কর ইত্যাদি তীর্থ দর্শনের সমস্ত ফল কামিকা একাদশীর মাধ্যমে কোটিগুণ লাভ করা যায়। সাগর ও অরণ্য সমৃদ্ধ সমগ্র পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। দুগ্ধবতী গাভী দানের ফল এই ব্রত পালনে সহজেই লাভ হয়।
যে সব ব্যাক্তিগন ব্রহ্মহত্যা, ভ্রূণহত্যা কিংবা তার থেকেও বেশি পাপপূর্ণ সাগরে নিমজ্জিত থাকে, তাদের কামিকা একাদশী ব্রতের মাধ্যমে সহজেই সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
নিষ্ঠাসহকারে এই একাদশী পালন করলে শ্রীহরির কৃপায় তাঁর সকল পাপ বিনষ্ট হয় এবং বিষ্ণুলোকে গতি হয়ে থাকে।
অভিধানগত অর্থানুসারে, “কম” বা “ক” ধাতুগত শব্দ থেকে “কামনা”, “কামিকা” ইত্যাদি বহু শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। সাধারণভাবে এই “কম” বা “ক” এর নেতিবাচক অর্থ হল— (১) কম (২) কদাচিৎ (৩) কুৎসিত (৪) কদাকার (৫) কপট (৬) কাম (লোভ) ইত্যাদি প্রায় ১২৫টি শব্দ।
আবার তন্ত্রমতে “ক” এবং “ম” হল বীজমন্ত্র। মতান্তরে জলজ এবং শিব প্রভৃতি।
“কামিকা”-এর মধ্যে রয়েছে কাম্ধাতু এবং এই শব্দের অর্থ হ’ল (১) আকাঙ্ক্ষিত (২) কামনায় ভরপুর (৩) সফলতা বা বিজয়ী নির্দিষ্ট করে ইত্যাদি।
সেই সঙ্গে আমাদের জানা দরকার কামিকা একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Kamika Ekadashi), কামিকা একাদশী সংকল্প, কামিকা একাদশী পারণ, কামিকা একাদশী ব্রত কথা।
সেই সঙ্গে জেনে রাখা উচিত কেন আমরা একাদশী ব্রত পালন করব? তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ✸✤
◉একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবন এর সদগতি হয় তা নয়, একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই পিতা মাতাকে নরকের থেকে উদ্ধার করতে পারবে।
◉একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে ব্যক্তি যেমন নরকবাসী হয়, তেমনই অন্যকে অন্নভোজন করালেও নরকবাসী হয়। কাজেই একাদশী ব্রত পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।
◉ ১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল ──
১। মাতৃ হত্যার পাপ।
২। পিতৃ হত্যার পাপ।
৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
৪। গুরু হত্যার পাপ।
আমরা মাত্র একটি দানা নয় প্রতি গ্রাসে হাজার হাজার দানা ভক্ষণ করি। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, যে পাপ কাজ আদৌ করিনি সেই পাপ কাজের ভাগীদার আমাদেরকে হতে হবে।
◉ বিভিন্ন পুরানে একাদশী মহাব্রত সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?
১। সকল পুরাণে মুনিদের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ)
২। একদা শ্রী যমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, “হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন।” ──(পদ্মপুরাণ)
৩। একাদশীতে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)
৪। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠ লোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।
৫। একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
৬। বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করে ছিলেন। ──(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা (১৫/৮-১০)
৭। অনেকের ধারনা পুরী ধামে শ্রীজগন্নাথ দেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।
৮। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রণয় কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পচে মরতে হয়। ──(শারদীয় পুরাণ)
৯। হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। ──(অগ্নিপুরাণ)
১০। বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। ──(কাত্যায়ন সংহিতা)
১১। যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপাসনা করেন, তার হাতের মহা মূল্যবান রত্ন পরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। ──(তত্ত্বসাগর)
১২। দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবী কে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরি বাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে। ──(স্কন্দপুরাণ)
১৩। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। ──(স্কন্দপুরাণ)
তাহলে কেন আমরা জেনে শুনে পাপ কর্ম করছি? যেসকল ভক্তবৃন্দরা একাদশী মহাব্রত পালন না করে যে পাপ করছেন তা থেকে বিরত থাকুন। তারা সহ সকল ভক্তবৃন্দরাই একসাথে একাদশী মহাব্রত পালন করি এবং আমাদের এই দুর্লভ মানব জীবনকে স্বার্থক করি।
আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ কামিকা একাদশী মাহাত্ম্য ✸✤
(Significance of Kamika Ekadashi)
ব্রতশ্রেষ্ঠ একাদশী শ্রীহরির অত্যন্ত প্রিয়। কৃষ্ণভর্তি লাভই শ্রী একাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে। কামিকা একাদশীর মতো পবিত্র পাপনাশক শ্রেষ্ঠ ব্রত আর জগতে নেই ।
🕉️ ১) কামিকা একাদশী ব্রত পাপনাশক ও মহাপূণ্যফলদায়ী।
🕉️ ২) সমস্ত তীর্থভ্রমনের কোটিগুন ফল লাভ হয়।
🕉️ ৩) সাগর ও অরণ্য সমৃদ্ধ সমগ্র পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়।
🕉️ ৪) দুগ্ধবতী গাভী দানের ফল এই ব্রত পালনে সহজেই লাভ হয়।
🕉️ ৫) যে সব ব্যাক্তিগন ব্রহ্মহত্যা, ভ্রূণহত্যা কিংবা তার থেকেও বেশি পাপপূর্ণ সাগরে নিমজ্জিত থাকে, তাদের কামিকা একাদশী ব্রতের মাধ্যমে সহজেই সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
🕉️ ৬) পরবর্তী জীবনে নিম্নযোনি (পশু জীবন) প্রাপ্ত হয় না এবং মনুষ্য শরীর সুনিশ্চিতভাবে প্রাপ্ত হয়।
🕉️ ৭) কামিকা একাদশী ব্রতে তুলসীপত্রে শ্রীহরির পূজায় কৃষ্ণভক্তি লাভ হয়।
🕉️ ৮) রাত্রি জাগরণ করে যিনি এই ব্রত পালন করেন, তিনি কখনও দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত হন না।
🕉️ ৯) ব্রত মাহাত্ম্য কেবল শ্রবনেই বাজপেয় যজ্ঞের (একপ্রকার বৈদিক যজ্ঞ) ফললাভ হয়। তাছাড়া যিনি এই ব্রত মাহাত্ম্য শ্রদ্ধা সহকারে পাঠ অথবা শ্রবণ করবেন তিনি সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলােকে গমন করবেন।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ কামিকা একাদশী সংকল্প ✸✤
(Kamika Ekadashi Saṅkalpa)
যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।
দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, “হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।”
পরদিন অর্থাৎ একাদশী তিথিতে সম্পূর্ণ দিন পালিত হবে কামিকা একাদশী ━
◉ ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 31-জুলাই-2024 (বুধবার)।
◉ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৫ই শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মনে রাখবেন, একাদশীর দিন ভোরে (অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে) শয্যা ত্যাগ করে স্নান সেরে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।” ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে অবশ্যই সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করে সংকল্প নিতে হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে বুধবার ভোরে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করতে হবে।
◼️ একাদশী সংকল্প মন্ত্র ◼️
❝ একাদশ্যাম্ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্ মে ভবাচ্যুত॥ ❞
━━┉┈┈(৩ বার)
অনুবাদ: “হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।”
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ কামিকা একাদশী পারণ ✸✤
(Kamika Ekadashi Pārana)
কামিকা একাদশীর ঠিক পরদিন অর্থাৎ 01-আগস্ট-2024 (বৃহস্পতিবার) সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের মধ্যে ━
❏ পশ্চিমবঙ্গ : সকাল 05:06 – 09:30
❏ বাংলাদেশ : সকাল 05:28 – 09:52
অর্থাৎ একাদশী ব্রত পালন করে পরের দিন ভোরে স্নান সেরে পারন সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে তিনবার ভক্তিসহকারে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের সম্মুখে ভক্তিসহকারে অবশ্যই অর্পণ করতে হয়, এরপর সেই অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ অর্থাৎ একাদশী ব্রত ভঙ্গ করতে হয়, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হয়।
◼️ একাদশী পারন মন্ত্র ◼️
❝ ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥ ❞
━━┉┈┈(৩ বার)
অনুবাদ: “হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।”
একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের এই দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─ (Kamika Ekadashi Vrat Kathā) ❃ শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া ‘কামিকা একাদশী’ ব্রত মাহাত্ম্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ‘যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে’ বর্ণিত আছে। ❃ এই ব্রত সম্পর্কে জানবার উদ্দেশ্যে যুধিষ্ঠির মহারাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে জনার্দন! হে বাসুদেব! শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয় তিথিতে যে একাদশী পালন করা হয় সেই একাদশীর নাম কি এবং এ একাদশীর মাহাত্ম্যই বা কি? কৃপা করে আমাকে সবিস্তারে বর্ণনা করুন। তা শুনতে আমি অত্যন্ত কৌতুহলী।” ❃ মহারাজ যুধিষ্ঠিরের জানার ইচ্ছার ব্যাকুলতা দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আন্তরিকভাবে অতি প্রসন্ন হলেন এবং প্রত্যুতরে জানালেন – “হে রাজন! এর পূর্বে দেবর্ষি নারদ এই বিষয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছ থেকে সবিস্তারে জ্ঞাত হয়েছেন। প্রজাপতি ব্রহ্মা যেমন করে বলেছিলেন তেমন করেই আমি পুনরায় বলছি, আপনি মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করুন।” ❃ একদা ভক্তশ্রেষ্ঠ দেবর্ষি নারদ ব্রহ্মাজির কাছে জানতে চেয়েছিলেন – “হে ঈশ্বর! শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষ তিথিতে যে একাদশী পালন করা হয় এই একাদশীর নাম কি, এই একাদশী পালনের মাহাত্ম্যই বা কি, এই একাদশীর আরাদ্ধ দেবতা কে, এই একাদশী পালনে কি ফল লাভ হয়? কৃপা করে এই সকল বিষয় সবিস্তারে বর্ণনা করে জ্ঞাত করুন, আমি ধন্য হই।” ❃ শ্রীনারদের কথা শুনে ব্রহ্মা অত্যন্ত তৃপ্ত হলেন এবং উত্তরে বললেন – “হে বৎস! তুমি যে প্রশ্ন করেছো তার দ্বারা মনুষ্য জাতি অনেক উপকৃত হবে। শুধু তাই নয়, তারা নিম্নযোনি প্রাপ্তি থেকে উদ্ধার হবে ও পাপ থেকে মুক্ত হবে। আর সেই উদ্দেশ্যে আমি সবিস্তারে তোমায় বর্ণনা করছি, তুমি মনস্থির করে তা শ্রবণ করো। শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী ‘কামিকা’ নামে জগতে প্রসিদ্ধ। ভগবান শ্রীবিষ্ণু এই একাদশীর আরাধ্য দেবতা।” ◉এই একাদশী পালনে সকল পাপমোচন হয়ে যায়। ◉তাছাড়া এই একাদশীর মাহাত্ম্য শ্রবণ করলে বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ প্রাপ্ত হয়। গঙ্গা, গোদাবরী, কাশী, নৈমিষ্যারণ্য, পুষ্কর ইত্যাদি তীর্থ দর্শনের সমস্ত ফল কামিকা একাদশীর মাধ্যমে কোটিগুণ লাভ করা যায়। সাগর ও অরণ্য সমৃদ্ধ সমগ্র পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। ◉দুগ্ধবতী গাভী দানের ফল এই ব্রত পালনে সহজেই লাভ হয়। ◉যে সব ব্যাক্তিগন ব্রহ্মহত্যা, ভ্রূণহত্যা কিংবা তার থেকেও বেশি পাপপূর্ণ সাগরে নিমজ্জিত থাকে, তাদের কামিকা একাদশী ব্রতের মাধ্যমে সহজেই সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হয়ে যায়। ◉যে সকল ব্যাক্তিরা রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে এই ব্রত পালন করেন তাদের কখনও দুঃখ-দুর্দশা থাকে না। পরবর্তী জীবনে নিম্নযোনি (পশু জীবন) প্রাপ্ত হয় না এবং মনুষ্য শরীর সুনিশ্চিতভাবে প্রাপ্ত হয়। ◉যে ব্যাক্তি তুলসীপত্র দিয়ে বিষ্ণুপূজা করেন তাতে ভগবান এতই প্রসন্ন ও তৃপ্ত হন, মণিমুক্তাদি মূল্যবান রত্ন নিবেদন করলে তেমন প্রীত হন না। যিনি বিষ্ণুর চরণে তুলসীমঞ্জরী (দুটো তুলসীপাতা সমেত তুলসীমঞ্জরী চয়ন করবেন) লালচন্দনে লাগিয়ে নিবেদন করেন তার জন্মার্জিত সমস্ত পাপ ক্ষয় হয়ে যায়। ◉তুলসী প্রসঙ্গে ব্রহ্মা আরো বললেন – “হে নারদ! যে ব্যক্তি প্রতি দিন তুলসী পত্র দর্শন করে থাকেন তার সকল পাপ ভস্মীভূত হয়ে যায়। যে ব্যাক্তি তুলসী পত্র স্পর্শ করেন তার পাপিষ্ঠ দেহ পবিত্র হয়ে যায়। তুলসী গাছে প্রনাম করলে দেহের সকল রোগ দূরীভূত হয়। তুলসী গাছে জল সিঞ্চন করলে যমরাজও তার কাছে আসতে ভয় পায়। শ্রীহরিচরণে তুলসী অর্পণ করলে ভগবদ্ভক্তি লাভ হয়।” ◉যে ব্যাক্তি হরিবাসরে (হিন্দুমতে একাদশীর দিন) ভগবানের সামনে প্রদীপ জ্বালান তার পূণ্যের হিসাব চিত্রগুপ্তও রাখতে পারেন না। এই পূণ্য লাভে তার পূর্বপুরুষেরাও পাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গবাসী হয়ে থাকেন। 🌸 জয় কামিকা একাদশী 🌸 🌸 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ 🌸 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─ ✸ শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান✸ ভক্তগণ এই হরিবাসর তিথিতে শ্রীভগবানের নাম, রূপ, গুণ, লীলা ও পরিকরাদি স্মরণ- কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি অহর্নিশ সময় পালন করিয়া দিনটি অতিবাহিত করেন। তাই সাধু -গুরু- বৈষ্ণবগণের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পূজা- অর্চনাদি, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শ্রীহরিনাম- সংকীর্তন ও শ্রীভগবৎ কথা আলোচনার মধ্যে থাকিয়া শ্রীহরি বাসর পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই সকল পালন করিলে হৃদয়ের পাপ রাশি নষ্ট হয়, ভগবৎ চরণে স্থান লাভ ঘটে। ✸ প্রনিপাত (প্রনাম)✸ ✸ সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না। ✸ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে। ✸ শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় …. ✸ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন: হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে । হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ! ► আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী✤✸ কামিকা একাদশী ব্রত কথা ✸✤
===========================
=================
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)