Join to Our Community
Community Grows With You

✤মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti)✸পৌষ সংক্রান্তি (Poush Sankranti)✤

মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti) বা পৌষ সংক্রান্তি (Poush Sankranti) থেকে উত্তরায়ণ শুরু হয়, তেমনি আষাঢ়ের সংক্রান্তি থেকে দক্ষিণায়ণ শুরু হয়।

বৈদিক গণনানুসারে কাল বা সময় গননা হয় দুইভাবে ━

১) চন্দ্র মাস গননা

২) সৌর মাস গননা

আর এই সৌর গণনা শুরু হয় সংক্রান্তি দিয়ে। প্রতি মাসের শেষ দিন অর্থাৎ যে দিন মাস পূর্ণ হবে সেই দিনকে সংক্রান্তি বলা হয়।সংক্রান্তি অর্থাৎ সংক্রমণ মানে প্রবেশ করা বা গমন করা। সূর্যের প্রবেশ। অর্থাৎ সূর্য যে রাশির মধ্যে প্রবেশ করে সেই রাশির সংক্রান্ত বলা হয়। এমনিতেই সংক্রান্তি ১২ রকমের। কিন্তু ৪ ধরনের সংক্রান্তি বিশেষ মাহাত্ম্য পূর্ণ। সেগুলো হল মেষ, কর্কট, তুলামকর সংক্রান্তি

মকর সংক্রান্তি বিশেষ মাহাত্ম্য কারন এই দিনে সূর্যদেব দক্ষিণায়ন থেকে উত্তারায়ন হয়। অর্থাৎ সূর্যদেব উত্তরদিকে যাত্রা শুরু করে। এর আগে সূর্যদেব দক্ষিন দিকে যাত্রা শুরু করেছিল এখন উত্তর দিকে যাত্রা শুরু করবে। এভাবে ৬ মাস দক্ষিন দিকে অর্থাৎ দক্ষিণায়ন আর বাকি ৬ মাস উত্তরদিকে অর্থাৎ উত্তরায়ণ

মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় এই ছয় মাস উত্তরায়ণ কাল এবং শ্রাবন, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্ত্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ, এই ছয় মাস দক্ষিনায়ন কাল। সেজন্য আষাঢ়ের সংক্রান্তিতে দক্ষিণায়ণ শুরু হয় এবং পৌষ সংক্রান্তিতে উত্তরায়ণ শুরু হয়।

পৌষ মাসের শেষ দিনে সূর্য উত্তরায়নের দিকে যাত্রা শুরু করে বলে একে উত্তরায়ণ সংক্রান্তিও বলা হয়৷ অর্থাৎ মর্ত্যলোকের উত্তরায়নের ছয়মাস দেবতাদের একটি দিন এবং মর্ত্যলোকের দক্ষিনায়ণের ছয়মাস দেবতাদের একটি রাত৷ রাতে মানুষ যেমন দরজা জানালা, প্রধান ফটক বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন তেমনি দেবতাগনও রাত্রে অর্থাৎ দক্ষিনায়নে সবকিছু বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় বাইরে থেকে প্রবেশ করার সুযোগ নেই অর্থাৎ দক্ষিনায়নে দেবলোক পুরোপুরি বন্ধ থাকে৷ আবার দেবতাগনের রাত পৌষ সংক্রান্তির দিন শেষ হয় বলে পরবর্তি সূর্য উদয়ের ব্রহ্মমুহূর্ত থেকে দেবতাগনের দিন শুরু হয়। উক্ত সময়ে স্বর্গবাসী ও দেবলোকের সকলের নিদ্রা ভঙ্গ হয় এবং নিত্য ভগবৎ সেবামূলক ক্রিয়াদী শুরু হতে থাকে৷ এই জন্য সনাতন ধর্মাম্বলম্বীগন ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান, নামযজ্ঞ, গীতাপাঠ, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটিকে আনন্দময় করে তোলেন।

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

◼️ মকর সংক্রান্তি (পৌষ সংক্রান্তির) অর্থ ◼️

🕉️ মকর সংক্রান্তি অর্থ হচ্ছে – এখানে ‘মকর‘ শব্দটি মকর রাশিকে বুঝানো হয়েছে।

🕉️ সং + ক্রান্তি = সংক্রান্তি

সং অর্থ সঙ সাজা এবং ক্রান্তি অর্থ সংক্রমণ বা গমন করাকে বুঝায়। আর ‘সংক্রান্তি‘ অর্থ হচ্ছে সংক্রমণ অর্থাৎ প্রবেশ করাকে বুঝায়। অর্থাৎ ভিন্ন রুপে সেজে অন্যত্র গমন করাকে বোঝায়৷ সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন করাকে সংক্রান্তি বলা হয়৷

🕉️ মকর সংক্রান্তিকে পৌষ সংক্রান্তি, উত্তরায়ণ বা তিল সংক্রান্তিও বলা হয়।

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

◼️ মকর সংক্রান্তিতে সূর্যদেব বিবস্বানের ভূমিকা ◼️

যেহেতু এটা ঋতু পরিবর্তন সময়, ফসল পাকার সময়, তাই নতুন ঋতুতে ফসলের উপর সূর্যের সরাসরি প্রভাব পড়ে থাকে। সূর্যের যে প্রকাশ, দীপ্ত, উজ্জ্বলতা এই সূর্যদেব মকর সংক্রান্তির দিন সংক্রমণ করে শুভ উত্তারায়ণের আরম্ভ করে থাকে। দেবতারা দিনের শুরু করে থাকে, যাতে আমাদের সকলের জন্য এক শুভ মাঙ্গলময় দিন শুরু করতে পারি।

তবে এই মকর সংক্রান্তিতে সবচেয়ে মাহাত্ম্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যাকে কেন্দ্র করে এই মকর সংক্রান্তি সেই সূর্যদেব বিবস্বানের ভূমিকা নিয়ে আমরা জানব।

ব্রহ্মসংহিতায় ব্রহ্মা বলেছেন সমস্ত গ্রহের মধ্যে রাজা এই সূর্যদেব। আর এই সূর্য হচ্ছে ভগবানের চোখ। আর এই সূর্যদেব যার আজ্ঞায় এই সময়ের যে ব্যবস্থাপনা করে থাকে সেই ভগবান গোবিন্দকে আমি প্রণাম করে থাকি। অর্থাৎ সূর্যদেব ভগবানের আজ্ঞায় তার নিজের কার্য প্রনালি করে থাকেন। তিনি কিভাবে করে থাকেন? এই সূর্যদেব একদিনও ছুটি নেন না। আমরা কখনই দেখিনি সূর্যদেব একদিনও সূর্য প্রকাশ না দিতে৷ ঠিক সময় সূর্য প্রকাশ হয়। ঠিক সময়ে উদয় আর ঠিক সময়ে অস্তমিত হয়। এক কর্মযোগীর মতো সবসময় নিরন্তর এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে প্রকাশিত করার দায়িত্ব আর কর্তব্য পালন করে থাকে। আর সূর্যদেব তিনি সমস্ত জ্ঞান প্রাপ্ত হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে। তিনি কৃষ্ণের শিষ্যত্ব গ্রহন করে থাকে। এই বিষয়ে ভগবান গীতায় ৪/১ নং শ্লোকে বলেছেন, এই গীতার দিব্যজ্ঞান প্রথম সূর্যদেবকে প্রদান করেন।

তাই এই মকর সংক্রান্তি সঠিকভাবে পালনের নিয়ম হচ্ছে, আমরাও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করব, অর্চনা করব, স্মরন করব, শরনাগতি নেব, যেভাবে সূর্যদেব নিয়েছিল। আমরা এই মকর সংক্রান্তিতে সূর্যদেব থেকে এটা শিক্ষা নিতে পারি আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরনাগতি হয়ে তার প্রাপ্ত শিক্ষা গীতার বানী নিজের জীবনে প্রয়োগ করে সূর্যের মতো তেজ ও প্রকাশ করতে পারি। আর এই কলিযুগে শরনাগতির সরল পথ হচ্ছে হরে কৃষ্ণ নাম মহামন্ত্র জপ করা।

তাই মকর সংক্রান্তিতে ভগবানের পবিত্র নাম করুন, স্মরন করুন, ভগবানের উদ্দেশ্যে এই উৎসব পালন করুন।

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

◼️ মকর সংক্রান্তি (পৌষ সংক্রান্তির) তারিখ ◼️

🕉️ শুভ মকর বা পৌষ সংক্রান্তি পালিত হবে ━

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 15-জানুয়ারি-2024 (সোমবার)
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯শে পৌষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

◼️ মকর সংক্রান্তি (পৌষ সংক্রান্তির) মাহাত্ম্য ◼️

🕉️ পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি তিথি বিশেষ বিশেষ কারণে মাহাত্ম্যপূর্ণ ━

১। ভগবানকে পুত্ররূপে প্রাপ্তি :-

আমরা সবাই জানি ভগবানকে পাঁচরূপে লাভ করা যায়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হল বাৎসল্যপ্রেম। অর্থাৎ ভগবানকে পুত্ররূপে লাভ করা। এই পৌষ বা মকর সংক্রান্তি থেকেই মা যশোদা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পুত্ররূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করেছিলেন।

আরও পড়ুন: Qualities of Lord Krishna-RadhaRani || শ্রীকৃষ্ণের ৬৪ গুণ ও শ্রীমতি রাধারানীর ২৫ গুণ বর্ণন

২। মহাপ্রভুর সন্ন্যাসলীলা :-

এই মকর সংক্রান্তিতে কলিযুগাবতার ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে এটি হল ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ৫১৪ তম সন্ন্যাস লীলা মহোৎসব। অর্থাৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২৪ বছর বয়সে এই পৌষ-সংক্রান্তির দিনেই কন্টকনগরে অর্থাৎ কাটোয়ায় গুরু কেশবভারতের কাছ থেকে সন্ন্যাস দীক্ষা প্রাপ্ত হন। যখন সবাই গভীর নিদ্রায় শায়িত ছিলো তখন মহাপ্রভু গৃহ ত্যাগ করে এই ঠান্ডার মধ্যে নদী সাতার কেটে কাটুয়ায় যান কেশবভারতের কাছে সন্ন্যাস নিতে।

বৃন্দাবন দাস তাঁর চৈতন্যভাগবতে লিখেছেন—  

❝এই সংক্রমণ উওরায়ণ দিবসে।
নিশ্চয় চলিব আমি করিতে সন্ন্যাসে॥ ❞

┈┈(চৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যখন্ড, ২৬ অধ্যায়)

৩। মহামহিম ভীষ্মেদেবের মুক্তি :-

অষ্টবসুর মধ্যে এক বসু যিনি মহাভারতের আজীবন ব্রহ্মচর্য চরিত্র ও দ্বাদশ মহাজনের মধ্যে অন্যতম ভীষ্মদেব এই দিনে মহাপ্রয়াণ হয়েছিলেন। ভীষ্মদেব ইচ্ছামৃত্যুর বরপ্রাপ্ত ছিলেন, অর্থাৎ তিনি যখন ইচ্ছা করবেন তখনই প্রাণত্যাগ করতে পারবেন। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ১০তম দিনে ভীষ্মদেব অর্জুনের বানে শরবিদ্ধ হলেন এবং সেই অবস্থায় তিনি টানা আটান্ন (৫৮) দিন তীরবদ্ধ অবস্থায় শয্যারত ছিলেন।

কারণ তিনি আজকের মকর সংক্রান্তির দিনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। গীতায় রয়েছে, “উওরায়ণের ছয় মাস কেউ দেহ ত্যাগ করলে আর এই জগতে ফিরে আসতে হয় না।” তাই, পৌষ সংক্রান্তি দিনেই ভীষ্মদেব নিজ ইচ্ছায় প্রাণত্যাগ করেছিলেন।

অষ্টবসুর মধ্যে এক বসু যিনি মহাভারতের আজীবন ব্রহ্মচর্য চরিত্র ও দ্বাদশ মহাজনের মধ্যে অন্যতম ভীষ্মদেব এই দিনে মহাপ্রয়াণ হয়েছিলেন। গঙ্গাপুত্র ভীষ্মদেব তাঁর পিতা শান্তনু থেকে বর পেয়েছিলেন যে, তিনি যখন ইচ্ছা মৃত্যুবরন করতে পারবেন৷ মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মহাবীর, মহাপ্রজ্ঞ, সর্বত্যাগী ও জীতেন্দ্রিয় মহাপুরুষ ভীষ্মের মহাপ্রয়ানের স্মৃতির জন্য পৌষ সংক্রান্তি আরও মর্যাদা পূর্ণ হয়েছে ৷ উলেক্ষ্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরব পক্ষের চারজন সেনাপতির মধ্যে তিনিই প্রধান সেনাপতি ছিলেন৷ উভয় পক্ষের আঠার দিন যুদ্ধের দশম (১০তম) দিনে সূর্যাস্তের কিছুক্ষন পূর্বে পান্ডব পক্ষের সেনাপতি অর্জুনের শরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে ভীষ্মদেব রথ থেকে পড়ে যান৷ কিন্তু তিনি মাটি স্পর্শ না করে আটান্ন (৫৮) দিন তীক্ষ্ণ শরশয্যায় শুয়ে উত্তরায়নের অপেক্ষা করে পৌষ সংক্রান্তির দিনে যোগবলে দেহত্যাগ করেন৷

আরও পড়ুন: ✤ Bhishma Panchak Vrat ✤ ভীষ্মপঞ্চক ব্রত মাহাত্ম্য কী?✤

আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ 
===================

পৌষ সংক্রান্তির দিন সূর্য উত্তর মেরুতে হেলে পড়তে থাকে যার জন্য একে মকর সংক্রান্তি বা উত্তরায়ণ সংক্রান্তি বলে। শাস্ত্রমতে ভীষ্মদেব মৃত্যুর পরে ভাগবদ্ ধামে যাননি৷ তিনি ছিলেন ‘দৌ‘ মতান্তরে ‘দ্যু‘ নামক অষ্টবসু৷ যিনি মহর্ষি বশিষ্টের অভিশাপ গ্রস্ত হয়ে ইহলোকে মনুষ্য হিসাবে কৃতকর্ম ভোগের জন্য জন্ম নিয়েছিলেন৷ তাই তাঁর পুনরায় দেবলোকে যাবার কথা৷ কারন তিনি সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা৷ দক্ষিনায়ণের সময়ে দেবলোকে রাত্রি, সেই সময় সেখানকার সব কিছুই বন্ধ থাকে, ভীষ্মদেব যদি দক্ষিনায়ণে দেহত্যাগ করতেন তবে তাঁকে তাঁর লোকে প্রবেশ করার জন্য বাইরে প্রতিক্ষা করতে হতো৷ তিনি ইচ্ছামৃত্যু বরন করেছিলেন বলে ভেবে দেখলেন, দক্ষিনায়ণে মহাপ্রয়ান করলে দেবলোকে গিয়ে বাইরে প্রতিক্ষা করার চেয়ে এখানে থেকে উত্তরায়নের প্রতিক্ষা করাই ভালো৷ কারন এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শণ লাভ হবে এবং সৎসঙ্গ হতে থাকবে। যার ফলে সকলেরই মঙ্গল হবে৷ দেবলোকে একলা প্রতীক্ষা করে কী হবে! এই ভেবে তিনি দক্ষিনায়ণে শরীর ত্যাগ না করে উত্তরায়ণে শরীর ত্যাগ করেছিলেন৷ দীর্ঘ আটান্নদিন শরশয্যায় অবস্থানের পর পৌষ সংক্রান্তির নিশান্তে পিতামহ ভীষ্মদেব যোগবলে দেহত্যাগ করে দেবলোকে গমন করেন।

আর এই উত্তারায়ন বিষয়ে ভগবদগীতায় ৮/২৪ নং শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন —

❝ অগ্নির্জ্যোতিরহঃ শুক্লঃ ষণ্মাসা উত্তরায়ণম্।
তত্র প্রয়াতা গচ্ছন্তি ব্রহ্ম ব্রহ্মবিদো জনাঃ॥ ❞

অনুবাদ: ব্রহ্মবিৎ পুরুষগণ অগ্নি, জ্যোতি, শুভদিন, শুক্লপক্ষে ও ছয় মাস উত্তরায়ণ কালে দেহত্যাগ করলে ব্রহ্ম লাভ করেন।

অর্থাৎ মকর সংক্রান্তি থেকে শুরু করে পরের ৬ মাসে যারা দেহত্যাগ করবেন তারা উচ্চলোকে প্রবেশ করেন। আর দক্ষিণায়নে ৬ মাস যারা দেহত্যাগ করবেন তারা নিম্নলোক প্রাপ্ত হবেন। মহাভারতে আমরা দেখি, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও ভীষ্মদেব তার মৃত্যুর জন্যে উত্তারায়নকে বেছে নিয়েছেন।

তবে প্রতিটি নিয়মের একটি অপবাদ আছে। এই সমস্ত কর্মকান্ডীয় নিয়ম তাদের জন্যেই যারা ভগবানের ভক্ত নায় যারা কৃষ্ণের নিকট আত্মসমর্পণ করেছেন বা যারা কৃষ্ণ ভক্ত তাদের জন্যে এই উত্তারায়ন বা দক্ষিনায়ন যেকোন সময় দেহ ত্যাগ করলে তাদের গতি কৃষ্ণলোকে ও ভগবদধামে হয়। কারন ভক্তরা সবসময় ভগবানের চিন্তা আর স্মরন করে থাকেন। সেজন্যে ভগবদগীতায় ৮/৫ নং শ্লোকে বলেছেন —

❝ অন্তকালে চ মামেব স্মরন্ মুক্তা কলেবরম্।
যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবম্‌ যাতি নাস্তি অত্র সংশয়ঃ॥ ❞

অনুবাদ: মৃত্যুর সময় যিনি আমাকে স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি তৎক্ষনাৎ আমার ভাবই প্রাপ্ত হন। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

অর্থাৎ যে ব্যক্তি পূর্নরূপে ভগবানের শরনাগত হবে না তাদের জন্যে এই উত্তারায়ন ও দক্ষিণায়নের নিয়মগুলো।

৪। স্বর্গলোকে দিনের সূচনা :-

আমাদের এই মর্ত্যলোকে এক বছর পূর্ণ হলেও দেবতাদের গণনায় অর্থাৎ স্বর্গলোকে সেটা এক দিন মানে ২৪ ঘন্টা। এখন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে আবার ১২ ঘন্টা দিন (মর্ত্যলোকের হিসাবে মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় এই ছয় মাস উত্তরায়ণ কাল বা উত্তরায়ণ সংক্রান্তি। উত্তরায়নের ছয়মাস দেবতাদের একটি দিন। তাই স্বর্গলোকে বা দেবতাদের হিসেবে মকর সংক্রান্তি থেকে পরর্বতী ছ‘মাস তাদের দিন।) এবং বাকী ১২ ঘন্টা রাত (মর্ত্যলোকের হিসাবে শ্রাবন, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্ত্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ এই ছয় মাস দক্ষিনায়ন কাল বা দক্ষিনায়ন সংক্রান্তি। দক্ষিনায়ণের ছয়মাস দেবতাদের একটি রাত। তাই স্বর্গলোকে বা দেবতাদের হিসেবে কর্কট সংক্রান্তি থেকে পরর্বতী ছ‘মাস তাদের রাত)।

অর্থাৎ আমারা সহজেই বুঝতে পারছি যে, এই মকর সংক্রান্তি থেকেই স্বর্গলোকে নতুন একটি দিনের সূচনা শুরু হবে অর্থাৎ স্বর্গের দরজা খোলা হবে। 

৫। ভগীরথের পূর্বপুরুষ উদ্ধার :-

এই পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির দিনেই ইক্ষাকু বংশীয় মহারাজ ভগীরথ তিনি তাঁর পূূর্ব-পুরুষদেরকে নরক থেকে উদ্ধার করবার জন্য গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনয়ন করেছিলেন। এইজন্য গঙ্গার আরেক নাম ভাগীরথী। এই মহান ইক্ষাকু বংশে ভগবান রাম আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভগীরথ ছিলেন ভগবান রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ।

তখন গঙ্গা মহারাজ ভগীরথের পূর্ব-পুরুষদের উদ্ধার করে এই পৌষ সংক্রান্তির দিন সাগরে মিলিত হয়েছিলেন। যেহেতু গঙ্গা সাগরে মিলিত হয়েছিলেন, তাই বিশাল এক গঙ্গাসাগর মেলা অনুষ্ঠিত হয় ভারতবর্ষে।

কথায় বলে ──  সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার।

👉🏾 মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে লক্ষাধিক ভক্ত গঙ্গাসাগরে উপস্থিত হন। গঙ্গাসাগরে স্নানের পরে, সূর্যদেবকে নৈবেদ্য দেওয়া হয় এবং ভক্তগণেরা গঙ্গাসাগরে নারকেল এবং পূজার সামগ্রী নিবেদন করেন।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে স্নান করলে সমস্ত পাপ নাশ হয় এবং অনন্ত পূণ্য লাভ হয়।

প্রতি মকর সংক্রান্তিতে এখানে স্নান করলে মোক্ষ লাভ হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস।

মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে স্নান করলে মেলে অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পুণ্য লাভ করে।

বিশ্বাস করা হয় যে, এই শুভ দিনে স্নান করলে ১০০টি অশ্বমেধ যজ্ঞ করার সমান পুণ্য লাভ হয়।

গঙ্গাসাগর সম্পর্কে পুরাণ 
======================

🌸 কপিল মুনি গঙ্গাসাগরের কাছে একটি আশ্রম তৈরি করে তপস্যা করতেন। কপিল মুনিকে ভগবান বিষ্ণুর অংশও মনে করা হয়। কপিল মুনির সময়ে ইক্ষাকু রাজবংশের রাজা ছিলেন মহারাজ সগর। তাঁর দুই স্ত্রী ছিল ─ কেশিনী সুমতি। কেশিনীর গর্ভে অসমঞ্জ নামক পুত্র জন্মায়। পৌরানিক গাঁথা অনুসারে, সুমতির ৬০ হাজার পুত্র সন্তান জন্মায় (এখানে বলা প্রয়োজন কোনো মানবীর পক্ষে ৬০ হাজার সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব নয়। হয়তো রাজার ৬ টি সন্তান ছিলো, বাকীরা ছিলো সেনা। রাজা হলেন প্রজার পিতা। তিনি সেনাদেরও পিতা। কারন সেনারাও একভাবে রাজার প্রজা। তাই সব মিলিয়ে ৬০ হাজার বলা হয়েছে। একটা রাজ্যে ৬০ হাজার সেনা থাকা অস্বাভাবিক নয়)।

🌸 একদা ঋষি ঔর্বের নির্দেশে শত অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করেন, এতে ইন্দ্রদেব তাঁর ইন্দ্রপদ খোয়ানোর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন। কেউ যদি শত অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পূর্ণ করে তাহলে সে সমগ্র ত্রিলোকে [স্বর্গ (দেবতাদের বাসভূমি), মর্ত্য (মধ্যলোক) ও পাতাল (ভূগর্ভ)] আধিপত্য অর্জন করতে পারবে। একমাত্র দেবরাজ ইন্দ্র তার আগে শত অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন।

🌸 ইন্দ্রদেব তাঁর পদ নিয়ে বরাবরই ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন, এমন অনেক ঘটনা পুরাণে পাওয়া যায়। রাজা যদি রাজচক্রবর্তী হয়ে ইন্দ্রত্ব লাভ করে চায়, তখন পুরো স্বর্গটাই হাতছাড়া হয়ে যাবে, সুখ ও আধিপত্য দুই থেকে বঞ্চিত হতে হবে! সেই কারণে ইন্দ্রদেব ফন্দি করে একটি ঘোড়া চুরি করে কপিল মুনির আশ্রমে বেঁধে রাখেন। অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া চুরি হয়ে গেলে রাজা তার ষাট হাজার পুত্রকে তার সন্ধানে পাঠান। তারা সকলেই অনুসন্ধানে কপিল মুনির আশ্রমে গিয়ে ঘোড়াটি খুঁজে পান এবং মুনির ধ্যানভঙ্গ করে, মুনির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনেন ও অপমানিত করেন। মুনি বলেন, আমি একান্তে ভগবানের ধ্যানে মগ্ন ছিলাম। কোন পার্থিব চাহিদা আমার নেই। এই ঘোড়া কে রেখে গেছে আমি বলতে পারব না। এই শুনে তারা মারতে উদ্যত হলে প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে কপিল মুনি সগর রাজার ষাট হাজার পুত্রকে পুড়িয়ে ভস্ম করে তাদের আত্মা নরকে পাঠিয়ে দেন।

🌸 সগরের পর রাজা হন তার নাতি আংশুমান, এরপর আংশুমানের পুত্র দিলীপ এবং তারপরে দিলীপের সুযোগ্য পুত্র ভগীরথ। 

🌸 যাই হোক, বহু বছর পর, সগরের নাতি অংশুমান কপিল মুনির আশ্রমে পৌঁছে যজ্ঞের অশ্বটিকে খুঁজে পান। অংশুমান কপিল মুনিকে তুষ্ট করবার জন্য তপস্যা করেন। অংশুমানের তপস্যায় তুষ্ট কপিল মুনি অশ্বটিকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। কপিল মুনির কাছ থেকে অংশুমান জানতে পারেন, গঙ্গার পবিত্র জলে শ্রাদ্ধকর্মাদি করলে তবেই সগরপুত্রদের আত্মা মুক্তি পাবে। কিন্তু অংশুমান বা তার পুত্র দিলীপ কেউই গঙ্গাকে মর্তে আনতে অসমর্থ হন।

🌸 এই কাজ অসমাপ্ত রয়ে যায়। ভগীরথ ছিলেন ইক্ষাকু রাজবংশের একজন কিংবদন্তী রাজা, তিনি বিখ্যাত সগর রাজবংশের পঞ্চম পুরুষ। তিনি তাঁর ষাটহাজার হতভাগ্য পূর্বপুরুষদের যন্ত্রণাদায়ক পরিণতির কথা জানতে পারলে শোকাহত হন। গুরু তীর্থলার পরামর্শ মেনে ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে তুষ্ট করার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন ভগীরথ। এরপর তিনি মন্ত্রীদের হাতে রাজত্বের দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং পূর্বপুরুষদের মুক্তির জন্য দুঃখের সাথে হিমালয়ে তপস্যা করতে শুরু করেন।

🌸 হাজার বছর ধরে তিনি এমন তপস্যা করলেন যে ব্রহ্মা প্রসন্ন হয়ে তাকে বর দিতে উদ্যত হলেন। তখন তিনি ৬০,০০০ অভিশপ্ত পূর্বপুরুষদের উদ্ধারের প্রণতি করেন। ব্রহ্মা জেনে বললেন এই কাজ প্রভু শ্রীহরি করতে পারেন, তিনি সবকিছুর নিয়ন্ত্রা। তুমি তাঁর স্তুতি কর। তিনি আবার প্রভু শ্রীহরির তপস্যা শুরু করলেন।

🌸 তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে শ্রীবিষ্ণু খুশি হয়ে তাঁর হাতে একটি শঙ্খ দিয়ে বললেন তুমি শঙ্খ বাজিয়ে আগে আগে যাও, গঙ্গা দেবী তোমার পিছনে পিছনে পৃথিবীতে যাবেন। সন্তুষ্ট ভগবান বিষ্ণু ভগীরথকে সতর্ক করেন, স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণের সময় গঙ্গার গতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন, তা না হলে গঙ্গার দুরন্ত বেগে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তার প্রচণ্ড বেগ রুদ্ধ করতে পারেন দেবাদিদিদেব শিব। তুমি তাঁর স্মরনাপন্ন হও।

🌸 ভগীরথ তখন পরম বৈষ্ণব ভগবান শিবের কাছে প্রার্থনা করেন। শিবজি তাঁর প্রভুর আদেশ শিরোধার্য করলেন কারণ ভগবানের সেবাই তো ভক্তের আরাধনার লক্ষ্য। এমন সেবা করার সুযোগ পাওয়ায় শিবজি হলেন কৃতজ্ঞ, কারণ তাঁর আরাধ্য প্রভু তাকে সেবার জন্য নির্বাচিত করেছেন। তাই তিনি গঙ্গা দেবীকে তাঁর জটায় ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।  

🌸 কথামতো ভগীরথ চললেন আর পিছনে গঙ্গা। কিন্তু মুশকিল হল, স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণের সময় গঙ্গার গতি প্রচণ্ড বেড়ে গেল। আশুতোষ (অল্পতেই সন্তুষ্ট হন যিনি) ভগবান শিব তখন স্বর্গ থেকে পতিত গঙ্গা দেবীকে তার জটায় ধারণ করে তার বেগ নিয়ন্ত্রণ করেন এবং জটা থেকে একফালি চুলের মাধ্যমে গঙ্গাকে নদীরূপে মর্ত্যে বাহিত করেন। এর ফলে গঙ্গার পূণ্যস্রোতে পৃথিবী সুজলা সুফলা হয়ে উঠবে। অবশেষে ভগীরথ পবিত্র গঙ্গা জলে তাঁর ৬০,০০০ পূর্বপুরুষের আত্মার মুক্তির জন্য শ্রাদ্ধকর্মাদি ও ছাই ভস্ম বিসর্জন করে তাদের আত্মাকে নরক থেকে মুক্ত করেন।

🌸 তারপর থেকে মহাদেবের আর এক নাম হয় গঙ্গাধর (গঙ্গাকে ধারণ করেছেন যিনি)। রাজা ভগীরথের তপস্যায় মা গঙ্গা প্রসন্ন হয়ে মকর সংক্রান্তির দিনে পৃথিবীতে এসে কপিল মুনির আশ্রমে পৌঁছান। সেই কারণেই মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে গঙ্গাসাগরে মেলার আয়োজন হয়। রাজা ভগীরথের নাম অনুসারে তাই গঙ্গার নাম হয় ‘ভাগীরথী‘ এবং রাজা সগরের নামে সমুদ্রের নাম হয় সাগর। সমুদ্র ও নদীর মধ্যবর্তী দ্বীপের নাম হয় সাগরদ্বীপ

🌸 কিছুদূর গিয়েই জহ্নুমুনির আশ্রম। সেখানে তিনি তপস্যায় মগ্ন ছিলেন। গঙ্গার স্রোতে তার আশ্রম, পূজার সামগ্রী গেল ভেসে। অমনি তিনি রেগে গিয়ে সমস্ত গঙ্গার জল পান করে ফেললেন। এই দেখে ভগীরথ আবার পড়লেন চিন্তায়। তিনি মুনিকে সাধ্যসাধনা, প্রার্থনা করে তুষ্ট করার প্রয়াস করলেন, মুনিও তার কথায় খুশি হয়ে নিজের জানু চিরে গঙ্গাকে মুক্ত করে দিলেন। এইজন্যই গঙ্গার আরেক নাম জাহ্নবী

৬। শ্রীল জয়দেব গোস্বামীর তিরোভাব তিথি :-

এই মকর সংক্রান্তি তিথিতেই শ্রীল জয়দেব গোস্বামীর তিরোভাব করেছিলেন।

৭। শ্রীল লোচন দাস ঠাকুরের তিরোভাব তিথি :-

এই মকর সংক্রান্তি তিথিতেই শ্রীল লোচন দাস ঠাকুরের তিরোভাব করেছিলেন।

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

◼️ মকর সংক্রান্তি (পৌষ সংক্রান্তিতে) কি করনীয় ◼️

 মকর সংক্রান্তির দিনে তিল ও দুগ্ধজাত পিঠাপুলি ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে সেই প্রসাদ ভগবানের শুদ্ধ বৈষ্ণব ভক্তদেরকে ভোজন করানোর কথা মৎস পূরাণে বর্ণিত আছে। এই মকর সংক্রান্তিকে ‘তিল সংক্রান্তি‘ ও বলা হয়।

তাই এই দিনে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, শুদ্ধ ব্রাহ্মণ বৈষ্ণবকে প্রসাদ ভোজন, সেবা প্রদান করা এবং দান করা।

মকর সংক্রান্তির দিনে ‘গঙ্গাসাগর স্নান মেলা‘ অনুষ্ঠিত হয়। তাই প্রাতঃকালে গঙ্গাসাগরে অথবা পবিত্র নদীতে অথবা গঙ্গাদেবীকে আহ্বান পূর্বক ★গঙ্গা ★গঙ্গা ★গঙ্গা ★ বলে প্রাতঃস্নান করতে হয়।

মহিমান্বিত এই দিনে আমরা যেন কোনো প্রকার আমিষ আহার না করি।

আমরা বেশি করে শাস্ত্র অধ্যয়ন এবং হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে পারি।

৫০০০ বছর পূর্ব থেকে আমরা প্রতি বৎসর পৌষ সংক্রান্তি বা উত্তরায়ণে প্রাতঃকালে (ভোরবেলা) খরকুটো জড়ো করে ও বাঁশ দিয়ে বানানো স্তুপে পিতামহ ভীষ্মদেবের প্রতিকী শবদাহ করে থাকি, অনেকে এই শবদাহকে বুড়ির ঘর বা মেড়ামেড়ির ঘর জ্বালানো বলে থাকেন এবং এই দিনে মাছ, মাংস আহার সম্পূর্ণ অনুচিত৷ কারণ উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তি অন্তোষ্টিক্রিয়া ও শ্রাদ্ধ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান৷

অন্যদিকে এই দিনটি এতই গুরুত্বপূর্ন যে, এই দিন প্রাতঃকালে দেবলোকের সকল দেবতাগন ও স্বর্গবাসী পূর্বপুরুষগন নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন৷ এই জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীগন ব্রহ্মমুহূর্তে স্নান, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, গ্রামে নগরে সংকীর্তন, গীতাপাঠ, ইত্যাদি শাস্ত্রসম্মত ভাবে ভাবগাম্ভীর্যের সহিত মঙ্গলজনক কাজ (অনুষ্ঠান) করে থাকেন।

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

Join to Our Community
Community Grows With You
x

This website uses cookies.