আজ এই অধ্যায়ে বিশেষভাবে আলোচনা করেছি ভগবতগীতায় উল্লেখিত শ্রীকৃষ্ণের নাম ও অর্জুনের নামের অর্থ কি? (Names of Krishna and Arjuna in Bhagavad Gita and their significance)।
ভগবতগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৪৭টি নাম এবং অর্জুনের ২২টি নাম উল্লেখ আছে। প্রতিটি নাম ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ও তাৎপর্য বহন করে।
ভগবতগীতায় উল্লেখিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম ও তার অর্থ
ভগবতগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ৪৭টি ভিন্ন নামে সম্বোধন করা হয়েছে। এত নামের ব্যবহারের কারণ কি? কেবলমাত্র বৈচিত্র সৃষ্টির জন্য নাকি এর কোন বিশেষ উদ্দেশ্য আছে? মহান আচার্যগণের মতে, শ্রীকৃষ্ণের প্রতিটি নামের প্রতিটিরই বিশেষ অর্থ ও তাৎপর্য আছে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর ভক্তদের নিকট প্রকটিত হন, তখন তিনি তাঁর নানা রূপ, গুণ, দিব্য কার্যাবলী (লীলাবিলাস) প্রকাশ করেন। তাঁর এইসব রূপ, গুণ, লীলাবিলাস অনুসারে তিনি ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত হন। যেমন – মুরলীধর, শ্যামসুন্দর প্রভৃতি নাম তার রূপ বর্ণনা করে; দীনবন্ধু, ভক্তবৎসল নাম তাঁর গুণ বর্ণনা করে, গোবিন্দ, মধুসূদন, গিরিধারী_ এসব নাম তাঁর কার্যাবলী বা লীলাবিলাস বর্ণনা করে। ভগবানের এইসব ভিন্ন নামের প্রতিটিই পরম, অপ্রাকৃত, ভগবানেরই মত শক্তিসম্পন্ন ও অভিন্ন; স্বয়ং ভগবানের সঙ্গে ভগবানের দিব্য নামের কোন পার্থক্য নেই।
ভগবদ্গীতায় কেবল দর্শনতত্বই নয়, ভগবান ও ভক্তের (কৃষ্ণ ও অর্জুনের) রূপ-গুণ বৈশিষ্ট্যাদিও অতিসুন্দরভাবে পরিফুটিত হয়েছে – বিশেষতঃ তাদের নামের মাধ্যমে । এখানে সংক্ষেপে তারই কিছু বর্ণনা করা হল।
◉ ১) অচ্যুত – যিনি কখনো তাঁর অবস্থান হতে চ্যুত হন না; যিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি হতে চ্যুত হন না। যেমন শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভক্তবৎসল, তাই তিনি ভক্ত অর্জুনের রক্ষার্থে সামান্য রথের সারথি হয়ে, তার আদেশ পালন করে, তার পদাঘাত সহ্য করে, তার বিজয় সুনিশ্চিত করে তিনি অর্জুনের প্রতি বাৎসল্য প্রকাশ করেছেন । ভঃগীঃ- ১/২১, ১১/৪২, ১৮/৭৩।
◉ ২) অনন্ত – যিনি অসীম, অবিনশ্বর, অপরিমেয়, শাশ্বত।
ভঃগীঃ – ১০/২৯, ১১/১১, ১১/৩৭, ১১/৪৭।
◉ ৩) অনন্তরূপ – তিনি অনন্তরূপ-বিশিষ্ট; যদিও তাঁর আদি স্বয়ং রূপ হল শ্রীকৃষ্ণের রূপ, তবু বিভিন্ন স্বাংশ প্রকাশ, অংশ-অবতার কলারূপে তাঁর অসংখ্য রূপ রয়েছে।
ভঃগীঃ- ১১/৩৮।
◉ ৪) অনন্তবীর্য – যাঁর শক্তি বা শৌর্য অসীম, অপরিমেয়; ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ‘সমগ্র বীর্য’-র অধিকারী, তাই তিনি “অনন্তবীর্য”।
ভঃগীঃ- ১১/১৯, ১১/৪০।
◉ ৫) অপ্রতিমপ্রভাব – যার প্রভাব বা প্রাধান্য তুলনারহিত, অপরিমেয় !
ভঃগীঃ – ১১/৪৩।
◉ ৬) অমিতবিক্রম – যার বিক্রম বা পরাক্রম অপরিমেয়, তুলনাহীন।
ভঃগীঃ – ১১/৪০।
◉ ৭) অরিসূদন – যিনি তাঁর শত্রুদের বিনাশ করেন (অরি = শত্রু; সূদন – হন্তা); ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসসহ লক্ষ লক্ষ দানব, অসুর, দূরাচারীদেরকে বধ করেছেন। এজন্য তার আরও নানা নাম রয়েছে, যেমন কেশব, মধুসূদন ইত্যাদি ।
ভঃগীঃ – ২/৪।
◉ ৮) আদিদেব – দেবতাদেরও আদি; শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত দেব-দেবীর আদি উৎস, তিনি স্বয়ং তা বলেছেন- অহং আদির্হি দেবানাং (১০/২)। তিনি কেবল সমস্ত দেব-দেবীর আদি উৎস নয়, সমস্ত সৃষ্টির উৎস, সমস্ত অবতারের উৎস; তাই ভগবান হলেন সমস্ত অবতারের অবতারী।
ভঃগীঃ – ১১/৩৮, ১০/১২।
◉ ৯) ইশ্বর – যিনি সকলকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ।
ভঃগীঃ – ৪/৬, ১৫/১৭, ১৮/৬১ |
◉ ১০) কেশব – (১) কেশী নামক দৈত্য নিধনকারী, (২) যার কেশ অত্যন্ত সুন্দর, (৩) যিনি ব্রহ্মা ও মহাদেবকে নিয়ন্ত্রণ করেন (বিশ্বনাথ চক্রবর্তী-কৃত টীকা) ।
ভঃগীঃ – ১/৩০, ২/৫৪, ৩/১, ৩/১০, ৩/ ১৪, ১১/৩৫, ১৩/১, ১৮/৭৬।
◉ ১১) কেশিনিসূদন – যিনি কেশী নামক দানবকে নিধন করেছিলেন।
ভঃগীঃ – ১৮/১।
◉ ১২) কৃষ্ণ – (১) যিনি সকলের হৃদয়কে আকর্ষণ করেন, পরাকর্ষক, পরমানন্দময়। (২) যাঁর গায়ের রঙ তমাল বৃক্ষের মত এবং যিনি মা যশোদার দ্বারা পালিত হন।
ভঃগীঃ – ১/২৮, ৩১, ৪০, ৫/১, ৬/৩৪, ৩৭, ৩৯, ১১/৪১, ১৭/১, ১৮/৭৮ ।
◉ ১৩) কমলপত্রাক্ষ – যার চোখদুটি পদ্মাফুলের পাপড়ির মত বিশাল, প্রান্তের দিকে রক্তাভ এবং দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, মনোরম ।
ভঃগীঃ – ১১/২।
◉১৪) গোবিন্দ – (১) যিনি ‘গো’ অর্থাৎ গরু বা গাভীদের রক্ষাকর্তা; বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন ধারণ করে গাভীদেরকে রক্ষা করেছিলেন; (২) যিনি সকলের ‘গো”, অর্থাৎ ইন্দ্র-সমূহ আকর্ষণকারী, সকলের আনন্দদাতা ।
ভঃগীঃ – ১/৩২, ২/৯ ।
◉ ১৫) জগৎপতে – যিনি জগতের সকলের পতি, নিয়ন্তা, পালক, পোষক।
ভঃগীঃ – ১০/১৫।
◉ ১৬) জগন্নিবাস – যিনি সমগ্র জগতের আশ্রয়স্বরূপ।
ভঃগীঃ – ১১/২৫, ৩৭, ৪৫।
◉ ১৭) জনার্দন – (১) সমস্ত জীবের পালনকর্তা; (২) যিনি সমাজের অকল্যাণকারীদেরকে ধ্বংস করেন; (৩) ভক্তিপথের বাধাবিঘ্ন যিনি ধ্বংস করেন (শ্রী বলদের বিদ্যাভূষণ-কৃত ভাষা)।
ভঃগীঃ – ১/৩৫, ৩৮, ৪৩, ৩/১, ১০/১৮।
◉ ১৮) দেববর – দেবশ্রেষ্ঠ; সমস্ত দেবতাদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ।
ভঃগীঃ – ১১/৩১।
◉ ১৯) দেবেশ – দেবতাদেরও ঈশ্বর, নিয়ন্তা বা প্রভু।
ভঃগীঃ – ১১/২৫, ৩৭, 8৫।
◉ ২০) দেবদেব – যিনি ব্রহ্মা, শিবাদি দেবতাদেরও প্রভু ।
ভঃগীঃ – ১০/১৫।
◉ ২১) পুরাণপুরুষ – যিনি আদি পুরুষ (Oldest Personality – শ্রীল প্রভুপাদ) ।
ভঃগীঃ – ১১/৩৮।
◉ ২২) প্রভু – (১) অধীশ্বর, (২) যিনি সমস্ত কার্য অত্যন্ত চমৎকারভাবে সুসম্পন্ন করতে সক্ষম ।
ভঃগীঃ – ৫/১৪, ৯/১৮, ২৪, ১১/৪, ১৪/২১।
◉ ২৩) পরমেশ্বর – (পরম + ঈশ্বর) অর্থ হল যিনি পরম ঈশ্বর, অর্থাৎ সর্বোচ্চ নিয়ন্তা অর্থাৎ ঈশ্বরগণেরও ঈশ্বর।
ভঃগীঃ – ১১/৩, ১৩/২৮।
ঈশ্বর শব্দের অর্থ প্রভু। প্রকৃতির এক একটি ক্ষমতা যারা কৃষ্ণের কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছে! তাদের অনেক সময় প্রভু বা ঈশ্বর বলা হয়। আর এই ঈশ্বরগণেরও যিনি ঈশ্বর, তিনিই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ব্রহ্ম সংহিতায় (৫/১) বলা হয়েছে!
ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ
অনাদিরাদিগোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম।।
অনুবাদ – ” শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম পরমেশ্বর ভগবান। তার শ্রীবিগ্রহ অর্থাৎ শ্রীদেহ সৎ- চিৎ আনন্দঘন! অর্থাৎ নিত্য শাশ্বত, চিন্ময় বা জ্ঞানময় এবং চিদানন্দময়। তার কোন আদি নেই। কারণ তিনিই অনাদির আদি! সব কিছুর উৎস। তিনিই সর্বকারণের আদি কারণ! সকল অস্তিত্বের পরম উৎস।”
◉ ২৪) পরমব্রহ্ম – নির্বিশেষ ব্রহ্মেরও যিনি ঊর্ধ্বে; যিনি ব্রহ্ম তত্ত্বেরও আশ্রয়-স্বরূপ|
ভঃগীঃ – ১০/১২।
◉ ২৫) পুরুষোত্তম – (১) পুরুষের মধ্যে যিনি উত্তম অর্থাৎ যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ; (২) যিনি সমস্ত মুক্ত ও বদ্ধ চিৎ-সত্তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম অর্থাৎ যিনি ‘সর্বোচ্চ সত্ত্বা’।
ভঃগীঃ – ৮/১, ১০/১৫, ১১/৩, ১৫/১৮, ১৯।
◉ ২৬) প্রপিতামহ – যিনি পিতামহ ব্রহ্মারও পিতা ( শ্রীকৃষ্ণের স্বাংশ প্রকাশ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভি- পদ্ম থেকে ব্রহ্মার সৃষ্টি)।
ভঃগীঃ – ১১/৩৯।
◉ ২৭) বাসুদেব – (১) বসুদেবের পুত্র বাসুদেব নামে অভিহিত (২) যিনি সর্বব্যাপী এবং যাঁর থেকে সবকিছু সৃষ্টি হয়, তিনিই বাসুদেব।
ভঃগীঃ – 8/১৯, ১০/৩৪, ১১/৫০, ১৮/৭৪ |
◉ ২৮) বার্ষ্ণেয় – যিনি বৃষ্ণি বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন, বৃষ্ণিবংশপ্রদীপ।
ভঃগীঃ – ১/৪০, ৩/৩৬।
◉ ২৯) বিষ্ণু – (১) নারায়ণ: স্বাংশ প্রকাশ চতুর্ভুজ পুরুষাবতারগণ; পরমাত্মা; (বিশ্বরূপ প্রদর্শনের পর শ্রীকৃষ্ণ প্রথম অর্জুনকে তার চতুর্ভুজ বিষ্ণুরূপ প্রদর্শন করেছিলেন। (২) যিনি জগতে সর্বব্যাপ্ত, সর্বভূতে বিরাজমান। তিনি ব্রহ্মাণ্ডে অবস্থান করছেন, আবার পরমাণুর মধ্যেও অবস্থান করছেন।
ভঃগীঃ – ১০/২০, ১১/২৪, ৩০।
◉ ৩০) বিশ্বমূর্তি (বিশ্বমূর্তে) – যেহেতু তিনি সর্বব্যাপী, তাই তার রূপ সর্বত্র ব্রহ্মান্ড-ব্যাপী বিরাজমান, তাই তার আরেক নাম বিশ্বমূর্তি (বিষ্ণু সহস্র নাম স্তোত্র – ৯০)।
ভঃগীঃ – ১১/৪৬ ।
◉ ৩১) বিশ্বরূপ- যার রূপ হল এই জগত; কিন্তু এই বিশ্বরূপ চরম সত্য নয় তা অস্থায়ী, কেননা জড় জগৎ অস্থায়ী, অনিত্য। তাই জাগতিক বিশ্বরূপের আদি উৎস হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ । তিনি আদি পুরুষ; জড় জগতের সৃষ্টি – প্রলয়ে তার নিত্য সনাতন স্বরূপের কোন পরিবর্তন হয় না।
ভঃগীঃ – ১১/১৬।
◉৩২) বিশ্বেশ্বর- বিশ্বের ঈশ্বর, নিয়ন্তা। জগদীশ্বর।
ভঃগীঃ – ১১/১৬।
◉ ৩৩) ভগবান (ভগবন্) –
ঐশ্বর্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ।
জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষণ্ণাং ইতীঙ্গনা ।।
অর্থাৎ ‘ভগ’ পদটির অর্থ হল ছটি ঐশ্বর্য (সমগ্র ঐশ্বর্য, সমগ্র বীর্য, সমগ্র যশ, সমগ্র শ্রী (সৌন্দর্য), সমগ্র জ্ঞান, সমগ্র বৈরাগ্য) এবং ‘বান’- এর অর্থ ‘সমন্বিত’ বা ‘বিদ্যমান’ এমন; অতএব ভগবান শব্দের অর্থ হল যাঁর মধ্যে পূর্ণরূপে ষড়ৈশ্বর্য পূর্ণরূপে বিরাজমান। তাই তিনি এবং বিষ্ণুতত্ত্বরূপে তার বিস্তার সমূহই (নারায়ণ, বিষ্ণু, নরসিংদেব, চৈত্যন্য মহাপ্রভু প্রভৃতি) ভগবান পদবাচ্য।
শুধু তাই নয় ভগবান শব্দের প্রকৃত অর্থ হল এই ষড় ঐশ্বর্য, ১৬ কলা এবং ৬৪ গুণের অধিকারী যিনি, তিনিই হচ্ছেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান।
ভঃগীঃ – ১০/১৪, ১৭।
◉ ৩৪) ভূতভাবন – সর্বভূতের উৎস অর্থাৎ সমস্ত জীবের পিতা।
ভঃগীঃ – ১০/১৫।
◉ ৩৫) ভূতেশ – সমস্ত জীবকুলের ঈশ্বর।
ভঃগীঃ – ১০/১৫।
◉ ৩৬) মহাত্মা (মহাত্মনঃ) – সাধারণের থেকে পৃথক অত্যন্ত উন্নত- হৃদয় মহান স্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তি।
ভঃগীঃ – ১১/১২, ২০, ৩৭, ৫০, ১৮/৭৪।
◉ ৩৭) মহাযোগেশ্বর হরি (মহাযোগেশ্বরঃ হরিঃ) – সমস্ত যোগের পরম অধিকর্তা, নিয়ন্তা হলেন ভগবান । তিনি সমস্ত যোগের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং গন্তব্য, যাকে যোগীরা খুশি করতে এবং অর্জন করতে চায়।
ভঃগীঃ – ১১/৯।
◉ ৩৮) মধুসূদন – (১) যিনি মধু নামক রাক্ষসকে হত্যা করেছিলেন, (২) যিনি ভক্তের সমস্ত বিপদ দূরীভূত করেন, (৩) যিনি ভক্তের পাপ ও পুণ্য কর্মের ফল ধ্বংস করেন ( শব্দকল্পদ্রুম অর্থাৎ এটি একটি সংস্কৃত অভিধান)।
ভঃগীঃ – ১/৩, ২/১, ২/৪, ৬/৩৩, ৮/২।
◉ ৩৯) মাধব (মাধবঃ) – (১) যিনি সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রীদেবী লক্ষ্মীদেবীর পতি, অথবা যিনি বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী দেবীর পতি, তিনিই মাধব (শব্দকল্পদ্রুম) (২) যিনি যদুর পুত্র মধুর বংশে ‘অবতীর্ণ হয়েছেন।
ভঃগীঃ – ১/১৪, ১/৩৬।
◉ ৪০) যোগেশ্বর – সমস্ত যোগিক শক্তির অধীশ্বর; সমস্ত যোগের প্রভু ( যোগ অর্থ ধ্যান, সাধনা, তপস্যা; আবার যোগ অর্থ যুক্ত হওয়া বা মিলিত হওয়া।)
ভঃগীঃ – ১১/৪, ১৮/৭৫।
◉ ৪১) যোগেশ্বর কৃষ্ণ (যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণঃ) – সমস্ত যোগ- বিভূতির প্রভু, অধীশ্বর শ্রীকৃষ্ণ। (বিভূতি অর্থ ভগবানের ঐশ্বর্য বা শক্তি)।
ভঃগীঃ – ১৮/৭৮।
◉ ৪২) যোগিন (যোগিন্) – যিনি যোগমায়া শক্তি অধিকার করে রয়েছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন ‘নাহং প্রকাশ: সর্বস্য যোগমায়াসমাবৃতঃ’ (৭/২৫)
ভঃগীঃ – ১০/১৭।
◉ ৪৩) যাদব – যিনি যদুরাজার বংশে জন্ম গ্রহণ করেছেন।
ভঃগীঃ – ১১/৪১।
◉ ৪৪) শাশ্বত পুরুষ (পুরুষম্ শাশ্বতম্) – যে পুরুষ অনাদিকাল ধরে বর্তমান; যার কোন জন্ম-মৃত্যু অবস্থান্তর নেই – তিনি শ্রীকৃষ্ণ।
ভঃগীঃ – ১০/১২।
◉ ৪৫) হরি (হরিঃ) – (১) যিনি ভক্তের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট হরণ করেন, (২) যিনি সমস্ত অনর্থ দূর করেন এবং প্রেমের দ্বারা ভক্তের হৃদয় চুরি করেন।
ভঃগীঃ – ১১/৯, ১৮/৭৭।
◉ ৪৬) হৃষীকেশ – যিনি ইন্দ্রিয় সমূহের প্রভু বা ঈশ্বর; যাঁর অধীনে ইন্দ্রিয়সমূহ কর্মরত থাকে ।
ভঃগীঃ – ১/১৫, ১/২০, ১/২৪, ২/৯, ১১/৩৬, ১৮/১।
◉ ৪৭) সহস্রবাহু (সহস্রবাহো) – যিনি সহস্র বাহু যুক্ত।
ভঃগীঃ – ১১/৪৬।
ভগবতগীতায় উল্লেখিত অর্জুনের নাম ও তার অর্থ
অধিকাংশ নাম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং অর্জুনকে সম্বোধনে ব্যবহার করেছেন |
✺ ১) অনঘ – যিনি সম্পূর্ণ পাপমুক্ত।
ভঃগীঃ – ৩/৩, ১৪/৬, ৮, ১৫/২০।
✺ ২) অর্জুন – কুন্তীদেবীর পুত্র।
ভগবদ্গীতায় বহুস্থানে উল্লিখিত |
✺ ৩) ভারত – রাজা ভারতের বংশধর।
ভঃগীঃ – ২/১৪, ১৮, ২০, ৩০, ৩/২৫, ৪/৭, ৪২, ৭/২৭, ১১/৬, ১৩/৩, ৩৪, ১৪/৩, ৮, ৯, ১০, ১৫ … প্রভৃতি।
✺ ৪) ভরতর্ষভ – ভারত রাজার বংশধরগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
ভঃগীঃ – ৩/৪১, ৭/১১, ৮/২৩, ১৩/২৭, ১৪/১২, ১৮/৩৬।
✺ ৫) ভারতশ্রেষ্ঠ – ভারতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।
ভঃগীঃ – ১৭/১২।
✺ ৬) দেহভৃতাম বর – জড় দেহধারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
ভঃগীঃ – ৮/৪।
✺ ৭) ধনঞ্জয় – যিনি শক্রদের পরাভূত করে ধনসম্পদ জয় করেছেন।
ভঃগীঃ – ১/১৫, ২/৪৮, ৪৯, 8/৪১, ৭/৭, ৯/৯, ১০/৩৭, ১১/১৪, ১২/৯, ১৮/৭২।
✺ ৮) গুড়াকেশ – যিনি নিদ্রা, আলস্য এবং ইন্দ্রিয় সমূহ জয় করেছেন।
ভঃগীঃ – ১/২৪, ২/৯, ১০/২০, ১১/৭।
✺ ৯) কপিধ্বজ – “কপি” অর্থ হনুমান এবং “ধ্বজ” অর্থ পতাকা। অর্থাৎ যার রথের শীর্ষে হনুমান চিহ্নিত পতাকা রয়েছে।
ভঃগীঃ – ১/২০।
✺ ১০) কৌন্তেয় – কুন্তী দেবীর পুত্র।
ভঃগীঃ – ২/১৪, ৩৭, ৬০, ৩/৯, ৫/২২, ৬/৩৫, ৭/৮, ৮/৬, ১৬, ৯/৭…….. প্রভৃতি।
✺ ১১) কিরীটী – যিনি মুকুট পরিধান করেন।
ভঃগীঃ – ১১/৩৫।
✺ ১২) কুরুনন্দন – কুরুবংশীয় সন্তান।
ভঃগীঃ – ২/৪১, ৬/৪৩, ১৪/১৩।
✺ ১৩) কুরুপ্রবীর – কুরুবংশীয় যোদ্ধাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যিনি।
ভঃগীঃ – ১১/৪৮।
✺ ১৪) কুরুসত্তম – কুরু বংশের শ্রেষ্ঠ যিনি।
ভঃগীঃ – ৪/৩১।
✺ ১৫) কুরুশ্রেষ্ঠ – কুরুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যিনি ।
ভঃগীঃ – ১০/১৯।
✺ ১৬) মহাবাহো – (১) যিনি মহাবীর অর্থাৎ মহান যোদ্ধা। (২) যার বাহুদ্বয় অত্যন্ত শক্তিশালী। যার দুই বাহু (হাত) অসীম শক্তিশালী।
ভঃগীঃ – ২/২৬, ৬৮, ৩/২৮, ৪৩, ৫/৩৬, ৬/৩৫, ৭/৫, ১০/১, ১৪/৫, ১৮/৫।
✺ ১৭) পাণ্ডব – পাণ্ডু রাজার পুত্র।
ভঃগীঃ – ১/১৪, ২০, ৪/৩৫, ৬/২ প্রভৃতি।
✺ ১৮) পরন্তপ – শত্রুদমনকারী।
ভঃগীঃ – ২/৩, ৯, ৪/২, ৫, ৩৩, ৭/২৭, ৯/৩, ১০/৪০, ১৮/৪ ।
✺ ১৯) পার্থ – পৃথা অর্থাৎ কুন্তী দেবীর পুত্র।
ভগবত গীতায় ভগবান ৪১ বার পার্থ নামে অর্জুনকে সম্বোধন করেছেন।
ভঃগীঃ – ১/২৫, ২/৩, ২/২১, ২/৩২, ২/৩৯, ২/৪২-৪৩, ২/৫৫, ২/৭২, ৩/১৬, ৩/২২-২৩, ৪/১১, ৪/৩৩, ৬/৪০, ৭/১, ৭/১০, ৮/৮, ৮/১৪, ৮/১৯, ৮/২২, ৮/২৭, ৯/১৩, ৯/৩২, ১০/২৪, ১১/৫, ১২/৬-৭, ১৬/৪, ১৬/৬, ১৭/২৬-২৭-২৮, ১৮/৬, ১৮/৩০-৩১-৩২-৩৩-৩৪-৩৫, ১৮/৭২।
✺ ২০) পুরুষর্ষভ – পুরুষ শ্রেষ্ঠ।
ভঃগীঃ – ২/১৫।
✺ ২১) পুরুষব্যাঘ্র – পুরুষগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, বিখ্যাত এবং বাঘের ( ব্যাঘ্রের) মত তেজস্বী।
ভঃগীঃ – ১১/৩।
✺ ২২) সব্যসাচী – যিনি তার ডান ও বাম হাতে অস্ত্র চালনায় সমান দক্ষ।
ভঃগীঃ – ১১/৩৩।
► আরও পড়ুন: Why do We Suffer in Life || মানুষ দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে কেন?
► আরও পড়ুন: Bhagavad Gita Mahatmya || ভগবদগীতা মাহাত্ম্য ও তার তাৎপর্য