Join to Our Community
Community Grows With You

Padmini Ekadashi 2023 ✤ পদ্মিনী একাদশী মাহাত্ম্য-সংকল্প-পারণ

অধিমাসের শুক্লপক্ষে একাদশী হল ‘পদ্মিনী একাদশী’। এটি  পুরুষোত্তম মাসের প্রথম একাদশী। নিষ্ঠাসহকারে এই একাদশী পালন করলে শ্রীহরির পাদপদ্মে অহৈতুকী ভক্তি লাভ হয়।

সেই সঙ্গে বর্ণন করা হয়েছে পদ্মিনী একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Padmini Ekadashi), সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত, সংকল্প মন্ত্র, পারণ মন্ত্র। পদ্মিনী একাদশী ব্রত (Padmini Ekadashi Vrat) পালনের উদ্দেশ্য কি?

সেই সঙ্গে জেনে রাখা উচিত কেন আমরা একাদশী ব্রত পালন করব? তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য

 ━━━━━━◆❃◆━━━━━━

✤ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ✤

একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবন এর সদগতি হয় তা নয়, একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই পিতা মাতাকে নরকের থেকে উদ্ধার করতে পারবে।

একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে ব্যক্তি যেমন নরকবাসী হয়, তেমনই অন্যকে অন্নভোজন করালেও নরকবাসী হয়। কাজেই একাদশী ব্রত পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল ──

১। মাতৃ হত্যার পাপ।
২। পিতৃ হত্যার পাপ।
৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
৪। গুরু হত্যার পাপ।

আমরা মাত্র একটি দানা নয় প্রতি গ্রাসে হাজার হাজার দানা ভক্ষণ করি। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, যে পাপ কাজ আদৌ করি নি সেই পাপ কাজের ভাগীদার আমাদেরকে হতে হবে।

বিভিন্ন পুরানে একাদশী মহাব্রত সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?

১। সকল পুরাণে মুনিদের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ)

২। একদা শ্রী যমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, “হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন।” ──(পদ্মপুরাণ)

৩। একাদশীতে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)

৪। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠ লোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।

৫। একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

৬। বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করে ছিলেন। ──(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা (১৫/৮-১০)

৭। অনেকের ধারনা পুরী ধামে শ্রীজগন্নাথ দেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।

৮। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রণয় কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পঁচে মরতে হয়। ──(শারদীয় পুরাণ)

৯। হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। ──(অগ্নিপুরাণ)

১০। বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। ──(কাত্যায়ন সংহিতা)

১১। যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপাসনা করেন, তার হাতের মহা মূল্যবান রত্ন পরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। ──(তত্ত্বসাগর)

১২। দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবী কে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরি বাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে। ──(স্কন্দপুরাণ)

১৩। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। ──(স্কন্দপুরাণ)

তাহলে কেন আমরা জেনে শুনে পাপ কর্ম করছি? যেসকল ভক্তবৃন্দরা একাদশী মহাব্রত পালন না করে যে পাপ করছেন তা থেকে বিরত থাকুন। তারা সহ সকল ভক্তবৃন্দরাই একসাথে একাদশী মহাব্রত পালন করি এবং আমাদের এই দুর্লভ মানব জীবনকে স্বার্থক করি।

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

 ━━━━━━◆❃◆━━━━━━

✤ পদ্মিনী একাদশী মাহাত্ম্য ✤

(Significance of Padmini Ekadashi)

কৃষ্ণভক্তি লাভই শ্রী একাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে।

◼️ এই পদ্মিনী একাদশী পালন করিলে ভগবৎ পাদপদ্মে স্থান লাভ হয়

◼️এই একাদশী ভক্তি প্রদায়িনী এবং সর্বপাপবিনাশিনী একাদশী

◼️ যিনি এই ব্রত মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবন করেন, তিনি বহু পুণ্যলাভ করেন।

◼️ শ্রী হরির অর্চনে নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করলে নিঃসন্তান ব‍্যক্তির সন্তানলাভ হয়। 

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

✤ পদ্মিনী একাদশী ২০২৩ : সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত ✤

(Padmini Ekadashi 2023 : Timing and Pārana Muhūrta)

যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।

দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 29 জুলাই 2023 শনিবার পদ্মিনী একাদশী।

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১২ই শ্রাবণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শনিবার ভোরে ( অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে)  স্নান সেরে ভগবানের সম্মুখে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করবেন।

পারণ : পদ্মিনী একাদশীর ঠিক রদিন অর্থাৎ রবিবার সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের  মধ্যে  –

সকাল ০৫:৩৩ থেকে ০৯:৪৫ মিনিটের মধ্যে ঢাকা, বাংলাদেশ সময় এবং

সকাল ০৫:০৯ থেকে ০৭:০৬ মিনিটের মধ্যে কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতীয় সময়।

সকাল ০৫:৪১ থেকে ১০:১২ মিনিটের মধ্যে দিল্লি, ভারতীয় সময়।

ভোরে স্নান সেরে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের নিকট অবশ্যই অর্পণ করবেন, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন।

একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের এই দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

পদ্মিনী একাদশী সংকল্প মন্ত্র

(Padmini Ekadashi Saṅkalpa Mantra)

একাদশীর দিন ভগবান কৃষ্ণের সম্মুখে আমরা অবশ্যই সংকল্প নেব –

একাদশ্যাম্‌ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।

ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্‌ মে ভবাচ্যুত।।

অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

পদ্মিনী একাদশী পারন মন্ত্র

(Padmini Ekadashi Pārana Mantra)

একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর অর্থাৎ, উপবাসের পরদিন সকালে যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে একাদশীর পারণ মন্ত্র তিনবার ভক্তিভরে পাঠ করতে হয়। এরপর প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত ভাবে দরকার, নতুবা একাদশীর পূর্ণ ফল লাভ হবে না। আর অবশ্যই একাদশীর আগের দিন ও পরের দিন নিরামিষ প্রসাদ গ্রহণ করতে হবে। 

একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ —

ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥

                                             —- (বৃ: না: পু: ২১/২০)

অনুবাদ: হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।

এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

✤ পদ্মিনী একাদশী ব্রত কথা ✤

(Padmini Ekadashi Vrat Kathā)

স্মার্তগণ পুরুষোত্তম মাস বা অধিমাসকে ‘মলমাস’ বলে এই মাসে সমস্ত শুভকার্য পরিত্যাগ করে থাকেন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই মাসকে পারমার্থিক মঙ্গলের জন্য অন্য সকল মাস থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে নির্ণয় করেছেন। তিনি নিজের নামানুসারে এই মাসের নাম ‘পুরুষোত্তম’ মাস রেখেছেন।

একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন– “হে কৃষ্ণ! হে জনার্দন! আমি বহুধর্ম ও ব্রতের কথা শুনেছি। এখন পুরুষোত্তম মাসের সর্বপাপবিনাশিনী ও পুণ্যদায়িনী শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর নাম কী? এবং এই একাদশী পালনের বিধিনিয়মই বা কি? আপনি সেই কথা আমার কাছে বর্ণনা করুন। যা শ্রবন করলে পরমপদ প্রাপ্ত হওয়া যায়।”

শ্রী ভগবান বললেন, “হে অজাতশত্রু! অধিমাসের শুক্লপক্ষে একাদশী হল পদ্মিনী একাদশী। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর ২৪টি একাদশী হয়। কিন্তু যখন অধিমাস বা মলমাস আসে, তখন আরও ২টি একাদশী বেড়ে একাদশীর সংখ্যা হয় ২৬।

অধিমাসে ২টি একাদশী হল — পদ্মিনী একাদশী (শুক্লপক্ষ) এবং পরমা একাদশী (কৃষ্ণপক্ষ)।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ  যুধিষ্ঠির মহারাজকে বললেন, “এই পদ্মিনী একাদশী পালন করলে ভগবৎ পাদপদ্মে স্থান লাভ হয়।  এটি ভক্তি প্রদায়িনী এবং সর্ব পাপনাশিনী একাদশী। দশমীর দিন থেকেই এই ব্রতের শুরু হয়। কাঁসার পাত্রে ভোজন, মুসুর, ছোলা, শাক এবং অপরের অন্ন ও আমিষ দশমীর দিন বর্জন করতে হয়। পরের দিন প্রাতঃকৃত্যের পর সুগন্ধী ধূপ, দীপ, চন্দনাদি দিয়ে ভগবানের পূজা করতে হয়। রাত্রিতে জাগ্রত থেকে ভগবানের নাম,গুণ কীর্তন করতে হয়। এখন এই ব্রতের পরিপেক্ষিতে একটি সুন্দর ঘটনা বর্ণন করছি, যা পূর্বে পুলস্ত মুনি দেবর্ষি নারদকে এই ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন।”

রাজা কৃতবীর্যের কাহিনী

হে রাজেন্দ্র! ত্রেতাযুগে হৈহয় বংশের অধিপতি ক্ষত্রিয়রাজা কৃতবীর্য লঙ্কাপতি রাক্ষসরাজ রাবনকে পরাজিত করে তার কারাগারে বন্দী করে রাখেন। লঙ্কাপতি রাবণ হলেন মহামুনি পুলস্ত্য এর পৌত্র (নাতি)। এই পরাজয়ের খবর পেয়ে স্বর্গ থেকে তড়িগড়ি মহীষ্মতীপুর নগরে পৌঁছালেন। অমন তেজস্বী ওজস্বী পুলস্ত্য মুনিকে প্রণতি নিবেদন করে যথোপযুক্ত অভ্যর্থনা করলেন এবং মহর্ষির আগমনের কারণ জানতে চাইলেন। রাজার কাছে তিনি রাবনের মুক্তি প্রার্থনা করেন।

মুনির আজ্ঞায় রাজা কৃতবীর্য রাবনকে মুক্ত করেন। এই আশ্চর্যজনক কথা শুনে নারদ পুলস্ত মুনিকে জিজ্ঞাসা করেন, “হে মুনিবর! ইন্দ্রসহ সকল দেবতা যখন রাবনের কাছে পরাজিত হল, রাজা কার্তবীর্য কীভাবে রাবনকে পরাজিত করলেন?” পুলস্ত্য মুনি তখন নারদের কাছে কার্তবীর্যের জন্মরহস্য বর্ণনা শুরু করলেন।

ত্রেতাযুগে হৈহয় বংশে কৃতবীর্য নামে এক রাজা পুরীতে রাজত্ব করতেন। মহীষ্মতীপুরে তার রাজধানী ছিল। রাজার এক হাজার পত্নী ছিল। কিন্তু রাজ্যভার গ্রহন করার মত কোনো পুত্রলাভ তার ভাগ্যে হয়নি। অনেক চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকে পুত্র লাভের অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। দেবতাদের আরাধনা করে সুফল মেলেনি তার। অবশেষে সাধুদের আজ্ঞানুসারে বিভিন্ন ব্রত পালন করলেন, তবুও তিনি রইলেন অপুত্রক।

তখন মন্ত্রীর ওপর রাজ্যভার অর্পণ করে তপস্যা করার সিদ্ধান্ত নেন রাজা কৃতবীর্য। রাণীদের মধ্যে রাণী পদ্মিনী ছিলেন মহারাজ হরিশ্চন্দ্রের কন্যা, ইক্ষ্বাকু রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, রাজার সাথে বনে যেতে রাজি হন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত পতিব্রতা।  স্বামীর সাথে তিনিও তপস্যার জন্য মন্দার পর্বতে যাত্রা করেন। সেখানে তারা ১০ হাজার বছর ধরে কঠোর তপস্যা করেও পুত্রলাভ থেকে বঞ্চিতই রইলেন।

এতে রাণী পদ্মিনী তিনি অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে গেলেন। তখন রাণী ভাবলেন – “এখন আমার কিছু একটা করা উচিত! পরম সতী নারী অনুসূয়ার কাছে আমি যাব।” সাক্ষাৎ হলে তিনি মহাসাধ্বী (অর্থাৎ পরম সতী) অনুসূয়াকে উপায় বিধানের আর্তি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে সাধ্বী! পুত্রলাভের জন্য আমার স্বামী দশ হাজার বছর তপস্যা করেও বিফল হয়েছে। যে ব্রত পালনে ভগবান সন্তুষ্ট হন এবং অতিশ্রেষ্ঠ পুত্রলাভ হয়, এমন কোনো উপায় বিধান করুন।”

পদ্মিনীর আকুল প্রার্থনায় অনুসূয়া প্রসন্ন হয়ে বললেন, “বত্রিশ মাস অন্তর এক অধিমাস বা পুরুষোত্তম মাস আসে। এই মাসে পদ্মিনী ও পরমা দুই একাদশী। পদ্মিনী ব্রত পালন করলে পুত্রদাতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শীঘ্রই প্রসন্ন হবেন।”

অনুসূয়ার নির্দেশে পদ্মিনী পরম শ্রদ্ধায় এই একাদশী ব্রত পালন করলেন। সেই ব্রতে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গরুড় বাহনে আরোহন করে পদ্মিনীর সম্মুখে উপস্থিত হলেন।  ভগবান বললেন, “হে ভদ্রে! আমি প্রসন্ন হয়েছি। পুরুষোত্তম মাসের একাদশী আমার পরম প্রিয়। তুমি সেই ব্রত যথাযথ পালন করেছ। তাই আমি তোমার ইচ্ছানুরূপ বর প্রদান করব।”

 ভগবানের স্তব করে রাণী বললেন, “হে ভগবান! আমার বদলে আমার স্বামীকে আপনি বর দান করুন।”

ভগবান রাণীর ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে তৎক্ষণাৎ রাজার সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন, “হে রাজেন্দ্র! আপনার অভিলষিত বর প্রার্থনা করুন।”

মহানন্দে রাজা বললেন, “হে জগত্ পতি! হে মধুসূদন! দেবতা, মানুষ, নাগ, দৈত্য, রাক্ষস আদি কেউ তাকে পরাজিত করতে পারবে না, এমন পুত্র আমি প্রার্থনা করি।”

রাজার প্রার্থনা অনুসারে বরদান করে ভগবান অন্তর্হিত হলেন। রাজা পত্নী সহ রাজ্যে ফিরে এলেন। যথা সময়ে রানী পদ্মিনীর গর্ভে মহা বলশালী এক পুত্রের জন্ম হয়। মহারাজ কৃতবীর্য পুত্রের নাম রাখেন কার্তবীর্য। ত্রিলোকে তার সমান কোনো বীর ছিল না, কেবল হরি ছাড়া আর কারো দ্বারা পরাজিত হবে না। তাই দশানন রাবন যুদ্ধে তাঁর কাছে পরাজিত হয়ে বন্দী হয়েছিল। পরবর্তীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার পরশুরাম কর্তৃক নিহত হয়।

  শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “হে মহারাজ! এই ব্রত যিনি পালন করবেন, তিনি ভগবান শ্রীহরির শ্রীপাদপদ্মে অহৈতুকী ভক্তি লাভ করবেন।”

  শ্রীকৃষ্ণের উপদেশে ধর্মরাজ সপরিবারে এই একাদশী ব্রত পালন করেন। যিনি এই ব্রত মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবন করেন, তিনি বহু পুণ্যলাভ করেন।

🌸 জয় পদ্মিনী একাদশী 🌸

        🌸 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ 🌸

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

শ্রীহরি বাসরে হরি কীর্তন বিধান 

ক্তগণ এই হরিবাসর তিথিতে শ্রীভগবানের নাম, রূপ, গুণ, লীলা ও পরিকরাদি স্মরণ- কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি অহর্নিশ সময় পালন করিয়া দিনটি অতিবাহিত করেন।

তাই সাধু -গুরু- বৈষ্ণবগণের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পূজা- অর্চনাদি, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শ্রীহরিনাম- সংকীর্তন ও শ্রীভগবৎ কথা আলোচনার মধ্যে থাকিয়া শ্রীহরি বাসর পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই সকল পালন করিলে হৃদয়ের পাপ রাশি নষ্ট হয়, ভগবৎ চরণে স্থান লাভ ঘটে।

প্রনিপাত

 সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।

 জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।

 শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….

ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ!

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

Join to Our Community
Community Grows With You
x

This website uses cookies.