Join to Our Community
Community Grows With You

✤Papankusha Ekadashi✸পাপাঙ্কুশা (পাশাঙ্কুশা) একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ✤

আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী হল পাপাঙ্কুশা একাদশী (Papankusha Ekadashi) বাপাশাঙ্কুশা একাদশী(Pashankusha Ekadashi)নিষ্ঠাসহকারে এই একাদশী পালন করলে শ্রীহরির কৃপায় তাঁর সকল পাপ বিনষ্ট হয় এবং বিষ্ণুলোকে গতি হ‌য়ে থাকে। এই একাদশী পাপনাশে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ

সেই সঙ্গে আমাদের জানা দরকার পাপাঙ্কুশা একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Papankusha Ekadashi), পাপাঙ্কুশা একাদশী সংকল্প, পাপাঙ্কুশা একাদশী পারণ, পাপাঙ্কুশা একাদশী ব্রত কথা

সেই সঙ্গে জেনে রাখা উচিত কেন আমরা একাদশী ব্রত পালন করব? তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ✸✤

একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবন এর সদগতি হয় তা নয়, একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই পিতা মাতাকে নরকের থেকে উদ্ধার করতে পারবে।

একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে ব্যক্তি যেমন নরকবাসী হয়, তেমনই অন্যকে অন্নভোজন করালেও নরকবাসী হয়। কাজেই একাদশী ব্রত পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল ──

১। মাতৃ হত্যার পাপ।
২। পিতৃ হত্যার পাপ।
৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
৪। গুরু হত্যার পাপ।

আমরা মাত্র একটি দানা নয় প্রতি গ্রাসে হাজার হাজার দানা ভক্ষণ করি। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, যে পাপ কাজ আদৌ করিনি সেই পাপ কাজের ভাগীদার আমাদেরকে হতে হবে।

বিভিন্ন পুরানে একাদশী মহাব্রত সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?

১। সকল পুরাণে মুনিদের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ)

২। একদা শ্রী যমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, “হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন।” ──(পদ্মপুরাণ)

৩। একাদশীতে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)

৪। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠ লোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।

৫। একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

৬। বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করে ছিলেন। ──(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা (১৫/৮-১০)

৭। অনেকের ধারনা পুরী ধামে শ্রীজগন্নাথ দেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।

৮। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রণয় কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পঁচে মরতে হয়। ──(শারদীয় পুরাণ)

৯। হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। ──(অগ্নিপুরাণ)

১০। বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। ──(কাত্যায়ন সংহিতা)

১১। যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপাসনা করেন, তার হাতের মহা মূল্যবান রত্ন পরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। ──(তত্ত্বসাগর)

১২। দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবী কে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরি বাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে। ──(স্কন্দপুরাণ)

১৩। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। ──(স্কন্দপুরাণ)

তাহলে কেন আমরা জেনে শুনে পাপ কর্ম করছি? যেসকল ভক্তবৃন্দরা একাদশী মহাব্রত পালন না করে যে পাপ করছেন তা থেকে বিরত থাকুন। তারা সহ সকল ভক্তবৃন্দরাই একসাথে একাদশী মহাব্রত পালন করি এবং আমাদের এই দুর্লভ মানব জীবনকে স্বার্থক করি।

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ পাপাঙ্কুশা একাদশী মাহাত্ম্য ✸✤

(Significance of Papankusha Ekadashi)

কৃষ্ণভর্তি লাভই শ্রী একাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে।

🕉️ ১) পাপাঙ্কুশা একাদশী তিথিতে যথাবিহিত ভগবান শ্রী পদ্মনাভ-এর পূজা করতে হয়। গয়া, কাশী এমনকি কুরুক্ষেত্রেও শ্রীহরিবাসর অপেক্ষা পুণ্যস্থান নয়।  এই একাদশী সর্বপাপ বিনাশক এবং সর্বশুভদায়ক

🕉️ ২) পাপাঙ্কুশা একাদশী ব্রতাচরণকারীর পিতৃকুলের দশ পুরুষ এবং মাতৃকুলের দশ পুরুষ উদ্ধার করতে সমর্থ হন।

🕉️ ৩) শ্রীহরিবাসর ব্রতের মতো ত্রিভুবনে পবিত্রকারী আর কোন বস্তু নেই। এই ব্রত মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবন করলে নিদারুণ যমদণ্ড থেকে মুক্তি লাভ হয়। 

🕉️ ৪) যিনি পাপাঙ্কুশা একাদশী উপবাসসহ রাত্র জাগরন করেন অনায়াসে তিনি বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হন। এই পাশাঙ্কুশা ব্রতের ফলে মানুষ সর্বপাপ মুক্ত হয়ে গোলকে গমন করতে সমর্থ হয়।

🕉️ ৫) অত্যন্ত পাপাচারী ব্যাক্তি কিংবা কোন কারণবশতঃ মোহগ্রস্থ ব্যাক্তি যদি মোহবশতঃ কোন পাপ কার্য লিপ্ত হন, সেক্ষেত্রে এই পুণ্যব্রতের অনুষ্ঠান করে তিনি রৌরব নামক নরক থেকে মুক্ত হয়ে বৈকুণ্ঠসুখ লাভ করে।

🕉️ ৬) যারা বিষ্ণুভক্তের নিন্দা করে, বৈষ্ণব হয়ে শিবভক্তের নিন্দা করে, অথবা শিবভক্ত হয়ে বৈষ্ণবকে নিন্দা করে তারা সকলে নরকে গমন করে। এই জগত সংসারে একাদশী ব্রতের ন্যায় শ্রেষ্ঠব্রত আর নেই। ভগবান শ্রীহরির শরণাপন্ন হয়ে এই একাদশী পালনে নরকযাতনা থেকে রক্ষা পায়

🕉️ ৭) শ্রী হরির অর্চনে নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করলে স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয় এবং উচ্চকূলে নিরোগ ও দীর্ঘায়ু শরীর লাভ হয়। যদিও কৃষ্ণভক্তি লাভই শ্রীএকাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে।

🕉️ ৮) এই পবিত্র একাদশী দিনে যিনি স্বর্ণ, তিল, গাভী, অন্ন, বস্ত্র, জল, ছত্র, পাদুকা দান করেন, তাঁকে আর যমালয়ে যেতে হয় না। যারা এসকল পুণ্যকার্য করে না, তাদের জীবন কামারশালার হাপরের মতো বিফল ।

🕉️ ৯) শ্রীহরির নাম সংকীর্তনের মাধ্যমে ভূমণ্ডলে যত তীর্থক্ষেত্র বা পবিত্রস্থান আছে সর্বতীর্থের ফল এই একাদশী ব্রত পালনে লাভ হয়।

🕉️ ১০) হাজার হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ , রাজসূয় যজ্ঞ এই ব্রতের শতভাগের একাংশের (১/১০০) সমান হয় না

🕉️ ১১) বালক-যুবা অথবা বৃদ্ধাবস্থায় ব্রত পালন করলে দুর্গতি হয় না। অতি দুরাচার ব্যক্তিও যদি অশ্রদ্ধাভাবে এই ব্রত করে তবে সেও সদ্গতি লাভ করে।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ পাপাঙ্কুশা একাদশী সংকল্প ✸✤

(Papankusha Ekadashi Saṅkalpa)

যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।

দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

পরদিন অর্থাৎ একাদশী তিথিতে সম্পূর্ণ দিন পালিত হবে পাপাঙ্কুশা একাদশী ━

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 14-অক্টোবর-2024 (সোমবার)
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৭শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মনে রাখবেন, একাদশীর দিন ভোরে (অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে) শয্যা ত্যাগ করে স্নান সেরে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে অবশ্যই  সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করে সংকল্প নিতে হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে সোমবার ভোরে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করতে হবে।

◼️ একাদশী সংকল্প মন্ত্র ◼️

❝ একাদশ্যাম্‌ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্‌ মে ভবাচ্যুত॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ পাপাঙ্কুশা একাদশী পারণ ✸✤

(Papankusha Ekadashi Pārana)

পাপাঙ্কুশা একাদশীর ঠিক রদিন অর্থাৎ 08-জানুয়ারি-2024 (মঙ্গলবার) সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের মধ্যে ━

পশ্চিমবঙ্গ : সকাল 06:36 – 09:55
বাংলাদেশ : সকাল 07:06 – 10:17

অর্থাৎ একাদশী ব্রত পালন করে পরের দিন ভোরে স্নান সেরে পারন সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে তিনবার ভক্তিসহকারে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের সম্মুখে ভক্তিসহকারে অবশ্যই অর্পণ করতে হয়, এরপর সেই অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ অর্থাৎ একাদশী ব্রত ভঙ্গ করতে হয়, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হয়।

◼️ একাদশী পারন মন্ত্র ◼️

❝ ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।

একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের এই দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ পাপাঙ্কুশা একাদশী ব্রত কথা ✸✤

(Papankusha Ekadashi Vrat Kathā)

আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষীয়া পাপাঙ্কুশা (পাশাঙ্কুশা) একাদশীর মাহাত্ম্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে।

একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন– “হে কৃষ্ণ! হে মধুসূদন! আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি, এই ব্রতের মাহাত্ম্য কি, ব্রত পালন বিধিই বা কি, তা কৃপা করে আমাকে বলুন। আমি তা শ্রবন করতে ব্যকুল।”

যুধিষ্ঠির মহারাজের জানার ব্যকুলতা দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রসন্ন হয়ে বলতে শুরু করলেন — “হে রাজন! এখন আমি সেই পবিত্র ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবন করুন।

আশ্বিনের শুক্লপক্ষীয়া একাদশী ‘পাপাঙ্কুশা’  নামে প্রসিদ্ধা। কেউ কেউ একে ‘পাশাঙ্কুশা’ বলে থাকেন। এই একাদশীতে অভিষ্ট ফল লাভের জন্য মুক্তিদাতা পদ্মনাভের পূজা করবে। শ্রীহরির নাম সংকীর্তনের মাধ্যমে ভূমণ্ডলে যত তীর্থক্ষেত্র বা পবিত্রস্থান আছে সর্বতীর্থের ফল এই একাদশী ব্রত পালনে লাভ হয়।

হে রাজেন্দ্র! এই তিথিতে যথাবিহিত ভগবান শ্রী পদ্মনাভ-এর পূজা করতে হয়। গয়া, কাশী এমনকি কুরুক্ষেত্রেও শ্রীহরিবাসর অপেক্ষা পুণ্যস্থান নয়। এই একাদশী সর্বপাপ বিনাশক এবং সর্বশুভদায়ক

পাপাঙ্কুশা একাদশী ব্রতাচরণকারীর পিতৃকুলের দশ পুরুষ এবং মাতৃকুলের দশ পুরুষ উদ্ধার করতে সমর্থ হন।

অত্যন্ত পাপাচারী ব্যাক্তি কিংবা কোন কারণবশতঃ মোহগ্রস্থ ব্যাক্তি যদি মোহবশতঃ কোন পাপ কার্য লিপ্ত হন, সেক্ষেত্রে এই পুণ্যব্রতের অনুষ্ঠান করে তিনি রৌরব নামক নরক থেকে মুক্ত হয়ে বৈকুণ্ঠসুখ লাভ করে।

শ্রীহরিবাসর ব্রতের মতো ত্রিভুবনে পবিত্রকারী আর কোন বস্তু নেই। এই ব্রত মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবন করলে নিদারুণ যমদণ্ড থেকে মুক্তি লাভ হয়। 

যারা বিষ্ণুভক্তের নিন্দা করে, বৈষ্ণব হয়ে শিবভক্তের নিন্দা করে, অথবা শিবভক্ত হয়ে বৈষ্ণবকে নিন্দা করে তারা সকলে নরকে গমন করে। এই জগত সংসারে একাদশী ব্রতের ন্যায় শ্রেষ্ঠব্রত আর নেই। ভগবান শ্রীহরির শরণাপন্ন হয়ে এই একাদশী পালনে নরক যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পায়।

হাজার হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ , রাজসূয় যজ্ঞ এই ব্রতের শতভাগের একাংশের (১/১০০) সমান হয় না

✸ এই পবিত্র একাদশী দিনে যিনি স্বর্ণ, তিল, গাভী, অন্ন, বস্ত্র, জল, ছত্র, পাদুকা দান করেন, তাঁকে আর যমালয়ে যেতে হয় না। যারা এসকল পুণ্যকার্য করে না, তাদের জীবন কামারশালার হাপরের মতো বিফল ।

বালক-যুবা অথবা বৃদ্ধাবস্থায় ব্রত পালন করলে দুর্গতি হয় না। অতি দুরাচার ব্যক্তিও যদি অশ্রদ্ধাভাবে এই ব্রত করে তবে সেও সদ্গতি লাভ করে।

শ্রী হরির অর্চনে নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করলে স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয় এবং উচ্চকূলে নিরোগ ও দীর্ঘায়ু শরীর লাভ হয়। যদিও কৃষ্ণভক্তি লাভই শ্রীএকাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে।

◼️ ক্রোধন শিকারীর কাহিনী ◼️

পুরাণ অনুযায়ী বিন্ধ্যাচল পর্বতে ক্রোধন নামক অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও হিংস্র প্রকৃতির এক শিকারী বাস করত। হিংসা, লুটপাট, মদ্যপান ও কুসঙ্গে তার সম্পূর্ণ জীবন পাপ কর্মে অতিবাহিত হয়।

জীবনের অন্তিম সময়ে, যমরাজের দূত ক্রোধন শিকারীর সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন, আগামীকাল তোমার জীবনের শেষ দিন, আমরা আগামীকাল তোমাকে নিতে আসব। একথা শুনে শিকারী খুবই ভীত হয়ে পড়ল এবং জঙ্গলে তপস্যারত মহর্ষি অঙ্গিরার আশ্রমে পৌঁছে মহর্ষি অঙ্গিরার পায়ে পড়ে প্রার্থনা করতে লাগল, “হে ঋষিবর! আমি একজন শিকারী তাই অনের নিরীহ পশু-পক্ষীর হত্যা করতে হয়েছে। আমি সারা জীবন পাপ কাজ করেছি। এর ফলস্বরূপ আমাকে নরকে যেতে হবে। দয়া করে আমাকে এমন কিছু সমাধান বলুন যার দ্বারা আমার সমস্ত পাপ মোচন করা যায় এবং আমি মোক্ষ লাভ করতে পারি।” 

তাঁর অনুরোধে মহর্ষি অঙ্গিরা তাঁকে আশ্বিন শুক্লের পাপাঙ্কুশা (পাশাঙ্কুশা) একাদশীতে একটি উপবাস পালন করতে বলেন। 

ঋষি অঙ্গিরার পরামর্শ অনুযায়ী ওই শিকারী উপবাস রাখে। নিয়ম মেনে বিষ্ণুর পুজো করেন এবং উপবাস রাখেন। বিষ্ণুর আশীর্বাদে শিকারীর সমস্ত পাপ দূর হয়। শিকারীর মৃত্যুর পর যমদূত যখন তাঁকে নিতে আসে, তখন সে চমৎকার দেখে আশ্চর্যচকিত হয়ে পড়েন। কারণ পাপাঙ্কুশা একাদশীর প্রভাবে তাঁর সমস্ত পাপ দূর হয়ে গিয়েছিল। খালি হাতে ফিরে যেতে হয় যমদূতকে। বিষ্ণুর আশীর্বাদে বৈকুণ্ঠ লোকে গমন করে।

🌸 জয় পাপাঙ্কুশা একাদশী 🌸

        🌸 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ 🌸

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান
===========================

ক্তগণ এই হরিবাসর তিথিতে শ্রীভগবানের নাম, রূপ, গুণ, লীলা ও পরিকরাদি স্মরণ- কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি অহর্নিশ সময় পালন করিয়া দিনটি অতিবাহিত করেন।

তাই সাধু -গুরু- বৈষ্ণবগণের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পূজা- অর্চনাদি, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শ্রীহরিনাম- সংকীর্তন ও শ্রীভগবৎ কথা আলোচনার মধ্যে থাকিয়া শ্রীহরি বাসর পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই সকল পালন করিলে হৃদয়ের পাপ রাশি নষ্ট হয়, ভগবৎ চরণে স্থান লাভ ঘটে।

প্রনিপাত (প্রনাম)
=================

 সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।

 জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।

 শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….

ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ!

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

Join to Our Community
Community Grows With You
x

This website uses cookies.