daextlwcn_print_scripts(false);
✤Shattila Ekadashi✸ষটতিলা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প, ও পারণ✤1

✤Shattila Ekadashi✸ষটতিলা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প, ও পারণ✤

1 min


215
184 shares, 215 points

মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী হল ষটতিলা একাদশী’ (Shattila Ekadashi)। ষটতিলা ব্রতের প্রভাবে দারিদ্রতা, শারীরিক কষ্ট, দুর্ভাগ্য প্রভৃতি বিনষ্ট হয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রতের বিধি অনুসারে তিলদান করলে মানুষ অনায়াসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়। 

সেই সঙ্গে আমাদের জানা দরকার ষটতিলা একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Shattila Ekadashi), ষটতিলা একাদশী সংকল্প, ষটতিলা একাদশী পারণ, ষটতিলা একাদশী ব্রত কথা

সেই সঙ্গে জেনে রাখা উচিত কেন আমরা একাদশী ব্রত পালন করব? তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ✸✤

একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবন এর সদগতি হয় তা নয়, একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই পিতা মাতাকে নরকের থেকে উদ্ধার করতে পারবে।

একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে ব্যক্তি যেমন নরকবাসী হয়, তেমনই অন্যকে অন্নভোজন করালেও নরকবাসী হয়। কাজেই একাদশী ব্রত পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল ──

১। মাতৃ হত্যার পাপ।
২। পিতৃ হত্যার পাপ।
৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
৪। গুরু হত্যার পাপ।

আমরা মাত্র একটি দানা নয় প্রতি গ্রাসে হাজার হাজার দানা ভক্ষণ করি। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, যে পাপ কাজ আদৌ করিনি সেই পাপ কাজের ভাগীদার আমাদেরকে হতে হবে।

বিভিন্ন পুরানে একাদশী মহাব্রত সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?

১। সকল পুরাণে মুনিদের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ)

২। একদা শ্রী যমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন। ──(পদ্মপুরাণ)

৩। একাদশীতে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)

৪। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠ লোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।

৫। একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

৬। বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করে ছিলেন। ──(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা (১৫/৮-১০)

৭। অনেকের ধারনা পুরী ধামে শ্রীজগন্নাথ দেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।

৮। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রণয় কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পচে মরতে হয়। ──(শারদীয় পুরাণ)

৯। হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। ──(অগ্নিপুরাণ)

১০। বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। ──(কাত্যায়ন সংহিতা)

১১। যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপাসনা করেন, তার হাতের মহা মূল্যবান রত্ন পরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। ──(তত্ত্বসাগর)

১২। দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবী কে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরি বাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে। ──(স্কন্দপুরাণ)

১৩। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। ──(স্কন্দপুরাণ)

তাহলে কেন আমরা জেনে শুনে পাপ কর্ম করছি? যেসকল ভক্তবৃন্দরা একাদশী মহাব্রত পালন না করে যে পাপ করছেন তা থেকে বিরত থাকুন। তারা সহ সকল ভক্তবৃন্দরাই একসাথে একাদশী মহাব্রত পালন করি এবং আমাদের এই দুর্লভ মানব জীবনকে স্বার্থক করি।

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ ষটতিলা একাদশী মাহাত্ম্য ✸✤

(Significance of Shattila Ekadashi)

কৃষ্ণভর্তি লাভই শ্রী একাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে।

🕉️ ১) ষটতিলা ব্রতের প্রভাবে দারিদ্রতা, শারীরিক কষ্ট, দুর্ভাগ্য প্রভৃতি বিনষ্ট হয়।

🕉️ ২) এই ব্রতের বিধি অনুসারে তিলদান করলে মানুষ অনায়াসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়।

◼️ ষটতিলা একাদশীতে তিলের ব্যবহার ◼️

ষটতিলা একাদশীতে ছয়টি ভিন্ন উপায়ে তিল ব্যবহার করা হয়, তাই এই একাদশীর নাম ষট (ছয়) তিলা (তিল)

(১) তিল মেশানো জলে স্নান স্নানের জলে তিল মিশিয়ে ‘‌ওম্‌ নমোঃ ভগবতে বাসুদেবায়‘‌ বা ‘হরিমন্ত্র’ জপ করতে করতে স্নান করুন।

(২) তিল শরীরে ধারণ কিছুটা তিল পুঁটলি করে গলায় বা কব্জিতে মাধুলি হিসাবে ধারণ করুন, তিলের তেল শরীরে মাখুন।

(৩) তিল দিয়ে যজ্ঞ গরুর ঘিতে তিল মিশিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে আরতি বা যজ্ঞ করুন।

(৪) তিল মিশ্রিত জল পান সারাদিন তিল মেশানো জল পান করুন এতে অনেক রোগ নিরাময় হয়। তাছাড়া, দক্ষিণ দিকে মুখ করে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তিল মিশ্রিত জল তর্পণ করলে পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ পাওয়া যায়, তাদের আক্রোশ কমে যা জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।

(৫) তিল ভোজন তিলের লাড্ডু, গুড় দিয়ে তিল চিটে, কিংবা খাবারে তিল ব্যবহার করে ভগবানকে ভোগ নিবেদন করুন এবং পরে তা প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করুন। 

(৬) তিল দানষটতিলা একাদশীতে অবশ্যই তিল দান করুন বা ভগবানকে নিবেদনের পর তিলের প্রসাদ দান করুন, এর ফলে তিনি নরকের কষ্ট থেকে রক্ষা পান। 

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤Shattila Ekadashi✸ষটতিলা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প, ও পারণ✤2

✤✸ ষটতিলা একাদশী সংকল্প ✸✤

(Shattila Ekadashi Saṅkalpa)

✡ যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।

✡ দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

✡ পরদিন অর্থাৎ একাদশী তিথিতে সম্পূর্ণ দিন পালিত হবে ষটতিলা একাদশী ━

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 06-ফেব্রুয়ারি-2024 (মঙ্গলবার)
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২২শে মাঘ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মনে রাখবেন, একাদশীর দিন ভোরে (অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে) শয্যা ত্যাগ করে স্নান সেরে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে অবশ্যই  সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করে সংকল্প নিতে হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে মঙ্গলবার ভোরে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করতে হবে।

◼️ একাদশী সংকল্প মন্ত্র ◼️

❝ একাদশ্যাম্‌ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্‌ মে ভবাচ্যুত॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ ষটতিলা একাদশী পারণ ✸✤

(Shattila Ekadashi Pārana)

ষটতিলা একাদশীর ঠিক রদিন অর্থাৎ 07-ফেব্রুয়ারি-2024 (বুধবার) সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের মধ্যে ━

পশ্চিমবঙ্গ : সকাল 06:14 – 09:58
বাংলাদেশ : সকাল 06:36 – 10:20

অর্থাৎ একাদশী ব্রত পালন করে পরের দিন ভোরে স্নান সেরে পারন সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে তিনবার ভক্তিসহকারে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের সম্মুখে ভক্তিসহকারে অবশ্যই অর্পণ করতে হয়, এরপর সেই অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ অর্থাৎ একাদশী ব্রত ভঙ্গ করতে হয়, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হয়।

◼️ একাদশী পারন মন্ত্র ◼️

❝ ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।

একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের এই দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ ষটতিলা একাদশী ব্রত কথা ✸✤

(Shattila Ekadashi Vrat Kathā)

মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া ‘ষটতিলা একাদশী’ ব্রত মাহাত্ম্য ভবিষ্যোত্তরপুরাণে বর্ণিত আছে।

যুধিষ্ঠির মহারাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, হে জগন্নাথ! হে মধুসূদন! মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথির নাম কি, বিধিই বা কি এবং তার কি ফল, সবিস্তারে বর্ণনা করুন।

ভগবান মনে মনে খুশি হয়ে প্রত্যুত্তরে বললেন, হে রাজন! মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী ষটতিলা নামে খ্যাত। একসময় দালভ্য ঋষি মুনিশ্রেষ্ঠ পুলস্ত ঋষিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মর্ত্যলোকে মানুষেরা ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, অন্যের সম্পদ হরণ আদি পাপকর্ম দ্বারা নরকে গমন করে। যাতে তারা নরক গতি থেকে রক্ষা পায়, তা যথাযথভাবে আমাকে উপদেশ করুন। অনায়াসে সাধন করা যায় এমন কোন কাজের মাধ্যমে যদি তাদের এই পাপ থেকে উদ্ধারের কোন উপায় থাকে, তবে তা কৃপা করে বলুন।

ঋষি পুলস্ত্য প্রসন্ন হয়ে বললেন, হে মহাভাগ! তুমি যথার্থ একটি গোপনীয় উত্তম বিষয়ে প্রশ্ন করেছ। মাঘ মাসে শুচি, জিতেন্দ্রিয়, কাম, ক্রোধ প্রভৃতি শূন্য হয়ে স্নানের পর সর্বদেবেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করবে। পূজাতে কোন বিঘ্ন ঘটলে কৃষ্ণনাম স্মরণ করবে। রাত্রিতে অর্চনান্তে হোম করবে। তারপর চন্দন, অগুরু, কর্পুর ও শর্করা প্রভৃতি দ্বারা নৈবেদ্য প্রস্তুত করে ভগবানকে নিবেদন করবে।

কুষ্মান্ড (=কুমড়ো), নারকেল অথবা একশত গুবাক (=সুপারি) দিয়ে অর্ঘ্য প্রদান করবে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃপালুস্তমগতীনাম্‌ গতির্ভব ইত্যাদি মন্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে হয়। কৃষ্ণ আমার প্রতি প্রীত হোন বলে যথাশক্তি ব্রাহ্মণকে জলপূর্ণ কলস, ছত্র (=ছাতা), বস্ত্র, পাদুকা (=জুতা), গাভী ও তিলপাত্র দান করবে। স্নান, দানাদি কার্যে কালো তিল অত্যন্ত শুভ।

হে দ্বিজোত্তম! ঐ প্রদত্ত তিল থেকে পুনরায় যে তিল উৎপন্ন হয়, ঠিক ততো বছর দানকারী স্বর্গলোকে বাস করে। (১) তিলদ্বারা স্নান, (২) তিল শরীরে ধারণ, (৩) তিল দিয়ে যজ্ঞ, (৪) তিল মিশ্রিত জল পান, (৫) তিল ভোজন এবং (৬) তিল দান– এই ছয় প্রকার বিধানে সর্বপাপ বিনষ্ট হয়ে থাকে। এই জন্য এই একাদশীর নাম ষটতিলা

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “হে যুধিষ্ঠির! একসময় নারদ মুনি এই ষটতিলা একাদশীর ফল ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে যে কাহিনী আমি বলেছিলাম তা এখন তোমাকে বর্ণনা করছি।

✤Shattila Ekadashi✸ষটতিলা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প, ও পারণ✤3

◼️ মহাসতী ব্রাহ্মণীর কাহিনী ◼️

পুরাকালে মর্ত্যলোকে এক ব্রাহ্মণী বাস করত। সে প্রত্যহ ব্রত আচরণ ও দেবপূজাপরায়ণা ছিল। উপবাস ক্রমে তার শরীর অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল।

সেই মহাসতী ব্রাহ্মণী অন্যের কাছ থেকে দ্রব্যাদি গ্রহণ করে দেবতা, ব্রাহ্মণ, কুমারীদের ভক্তিভরে দান করত। কিন্তু কখনও ভিক্ষুককে ভিক্ষাদান ও ব্রাহ্মণকে অন্নদান করেনি। এইভাবে বহু বছর অতিক্রান্ত হল। আমি চিন্তা করলাম, কষ্টসাধ্য বিভিন্ন ব্রত করার ফলে এই ব্রাহ্মণীর শরীরটি শুকিয়ে যাচ্ছে।

সে যথাযথভাবে বৈষ্ণবদের অর্চনও করেছে, কিন্তু তাদের পরিতৃপ্তির জন্য কখনও অন্ন দান করেনি। তাই আমি একদিন কাপালিক রূপ ধারণ করে তামার পাত্র হাতে নিয়ে তার কাছে গিয়ে ভিক্ষা প্রার্থনা করলাম।

ব্রাহ্মণী বলল — হে ব্রাহ্মণ! তুমি কোথা থেকে এসেছ? কোথায় যাবে? এখানে আসার উদ্দেশ্য কি তা আমাকে বলো।

ভগবান বললেন — হে রমণী! আমি একজন ভিক্ষুক, ভিক্ষাই আমার কর্মবৃত্তি, আমাকে ভিক্ষা দিন। ভিক্ষাং দেহি।

তখন সে ব্রাহ্মণী অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে আমার পাত্রে একটি মাটির ঢেলা নিক্ষেপ করল। ব্রাহ্মণীর মনোভাব বুঝতে পেরে স্মিত হেসে আমি সেখান থেকে চলে গেলাম।

বহুকাল পরে সেই ব্রাহ্মণী ব্রতের সুফল পেয়ে স্বশরীরে স্বর্গে যাত্রা করল। মাটির ঢেলা দানের ফলে একটি মনোরম গৃহ তার প্রাপ্ত হল। কিন্তু হে নারদ! সেখানে কোন ধান, চাল বা অন্য কোনও অন্ন ছিল না। গৃহশূন্য দেখে মহাক্রোধে সে আমার কাছে এসে জানতে চাইল — আমি ব্রত, কৃচ্ছ্রসাধন ও উপবাসের মাধ্যমে নারায়ণের আরাধনা করেছি। এখন হে জনার্দন! আমার গৃহে কিছুই দেখছি না কেন?

হে নারদ! তখন আমি তাকে বললাম — সত্য রমণী, তুমি জীবনে অনেক কিছু করলেও কাউকে কখনও অন্ন দান করো নি, পরিবর্তে ভিক্ষা হিসাবে মাটির ঢেলা দিয়েছ। একাদশীর সুফলে তুমি স্বশরীরে স্বর্গে যাত্রা করেছ, মাটির ঢেলা দানের ফলে মনোরম গৃহ পেয়েছ, অন্ন দান না করার জন্য তুমি এখানে অন্নহীন রয়েছ।

ব্রাহ্মণী নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার চরণতলে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগল — প্রভু আমায় ক্ষমা করে দিন, অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। এর উপায় আমায় বলে দিন।

ব্রাহ্মণীর আকুল প্রার্থনায় আমার মন বিগলিত হল এবং বিহিতের উদ্দেশ্যে জানালাম — এর একটা উপায় আছে। মর্ত্যলোকের মানবী স্বশরীরে স্বর্গে এসেছে শুনে দেবতাদের পত্নীরা তোমাকে দেখতে আসবে। নিজ গৃহে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে কিন্তু তুমি দরজা খুলবে না। তুমি তাদের কাছে ষটতিলা ব্রতের পুণ্যফল প্রার্থনা করবে। যদি তারা সেই ফল প্রদানে রাজি হয়, তবেই দরজা খুলবে, অন্যথায় নয়।

এরপর দেবপত্নীরা সেখানে এসে তার দর্শন প্রার্থনা করল। ভগবানের উপদেশ মতো ব্রাহ্মণী তাদের কাছে ষটতিলা ব্রতের পুণ্যফল প্রার্থনা করল। শেষমেশ তাদের মধ্যে এক দেবপত্নী তাঁর ষটতিলা ব্রতজনিত পুণ্যফল তাকে প্রদান করল।

তখন সেই ব্রাহ্মণী দিব্যকান্তি বিশিষ্টা হল এবং তার গৃহ ধনধান্যে ভরে গেল। দ্বার উদঘাটন করলে দেবপত্নীরা তাকে দর্শন করে বিস্মিত হলেন।

ভগবান শেষে বললেনহে নারদ! অতিরিক্ত বিষয়বাসনা (সম্পদের জন্য লোভ) করা উচত নয়। বিত্ত শাঠ্যও (সম্পদের জন্য প্রতারনা করা) অকর্তব্য। নিজ সাধ্যমতো তিল, বস্ত্র ও অন্ন দান করবে। ষটতিলা ব্রতের প্রভাবে দারিদ্রতা, শারীরিক কষ্ট, দুর্ভাগ্য প্রভৃতি বিনষ্ট হয়। এই বিধি অনুসারে তিলদান করলে মানুষ অনায়াসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়।

🌸 জয় ষটতিলা একাদশী 🌸

        🌸 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ 🌸

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান

শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান
===========================

ক্তগণ এই হরিবাসর তিথিতে শ্রীভগবানের নাম, রূপ, গুণ, লীলা ও পরিকরাদি স্মরণ- কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি অহর্নিশ সময় পালন করিয়া দিনটি অতিবাহিত করেন।

তাই সাধু -গুরু- বৈষ্ণবগণের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পূজা- অর্চনাদি, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শ্রীহরিনাম- সংকীর্তন ও শ্রীভগবৎ কথা আলোচনার মধ্যে থাকিয়া শ্রীহরি বাসর পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই সকল পালন করিলে হৃদয়ের পাপ রাশি নষ্ট হয়, ভগবৎ চরণে স্থান লাভ ঘটে।

প্রনিপাত (প্রনাম)
=================

 সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।

 জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।

 শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….

ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ!

Read-More_4

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

x


Like it? Share with your friends!

215
184 shares, 215 points
daextlwcn_print_scripts(true);

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]