Join to Our Community
Community Grows With You

ভক্তসঙ্গের গুরুত্ব ✤Significance of Association of Devotees✤

শ্রীমদ্ভাগবতমের (৪।১২।৩৭) তাৎপর্যে শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছেন, ভক্তসঙ্গ (Association of Devotees) ব্যতীত কেউ কৃষ্ণভাবনামৃতে অগ্রগতি করতে পারে না। সেই জন্যই আমরা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছি। বস্তুত এই সংঘে যারা আছেন তাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কৃষ্ণভাবনামৃত বিকশিত হয়। শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য ও প্রবচনে বহুবার সঙ্গের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছেন। আমাদের ভবিষ্যতকে আকার দিতে সঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। বলা হয়, আমরা আমাদের সমস্ত সঙ্গের প্রতিফলন।

চরিত্রবান মানুষের সঙ্গ আমাদের ভালো অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করে, আর দুশ্চরিত্র মানুষের সঙ্গ সাধারণত আমাদেরও দুশ্চরিত্র করে তোলে। তাই পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো আমাদের অসৎসঙ্গ পরিহারপূর্বক সাধুসঙ্গে থাকার পরামর্শ দেয়। শ্রীউদ্ধবগীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর প্রিয়ভক্ত উদ্ধবকে সাধুসঙ্গের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।

শ্রীমদ্ভাগবতমের (৬।১৬।৪৪) তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে শ্রীল ভক্তিচারু স্বামী গুরুমহারাজ বলেছেন, আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, মায়া হচ্ছেন কৃষ্ণের শক্তি। তিনি অত্যন্ত তেজস্বিনী। সুতরাং, আমাদেরকে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে করে আমরা তার কষাঘাতের শিকার না হই। তাই আমাদের উদ্বিগ্ন থাকা উচিত, মায়াকে ভয় পাওয়া উচিত এবং ভক্তসঙ্গের আশ্রয় গ্রহণ করা উচিত।

꧁✸ কিভাবে সঙ্গ আমাদের উপর ক্রিয়া করে ✸꧂

প্রথমে আমরা আমাদের জীবনের উপর বিশেষত সেইসকল গুণের উপর দৃষ্টিপাত করি যা আমাদের আছে, যা আমরা প্রশংসা করি এবং সেই সমস্ত গুণ যা আমরা পছন্দ করি না ও ত্যাগ করতে চাই। এবার আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি যে কিভাবে আমরা সেইসকল গুণগুলি গ্রহণ করেছি। কিছু গুণ আমাদের শিশুকাল থেকে আছে এবং কিছু পরবর্তীতে হয় আমাদের বিদ্যালয় থেকে নতুবা মহাবিদ্যালয় থেকে অথবা অন্য কোথাও থেকে আমরা গ্রহণ করেছি। প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমরা দেখব যে, ভালো অথবা মন্দ গুণগুলি আমরা অন্যদের থেকে গ্রহণ করেছি। উদাহরণ স্বরূপ কেউ তার মাতৃগর্ভ থেকে ধূমপান বা মদ্যপানের শিক্ষা নিয়ে আসে না। যে কোন ধূমপায়ী বা মদ্যপকে জিজ্ঞাসা করলে সে আপনাকে বলবে যে হয় সে কাউকে অনুকরণ করেছে অথবা কোনভাবে অন্যদের দ্বারা এই অভ্যাস গ্রহণ করতে প্ররোচিত হয়েছে। অনুরূপভাবে, যদি আপনি অন্যদের কোন ভালোগুণের প্রশংসা করেন এবং তাদের গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলবেন যে কারোর দ্বারা উৎসাহিত হয়ে তারা নিজের জীবনে প্রয়োগ করছেন। সুতরাং আমাদের খুব সতর্কতার সঙ্গে আমাদের সঙ্গ নির্বাচন করতে হবে।

শুধুমাত্র লোকেরা নয় আমাদের চারিদিকের বিষয়ও আমাদের মানসিকতার উপর ক্রিয়াশীল হয়। সীতামাতা অত্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে আমাদের চেতনা প্রভাবিত হয়। তিনি নিম্নলিখিত কাহিনীটি তাঁর পতি ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের কাছে তাঁদের বনবাসকালে ভ্রমণের সময় বিবৃত করেন। 

সঙ্গ দোষে সাধু ঘাতক হন

=====================

একজন সাধক বনে কঠোর তপস্যা করছিলেন। স্বর্গের রাজা ইন্দ্র চিন্তিত হলেন যে সাধুর কাছে তিনি তাঁর রাজ্য হারাতে পারেন। তিনি চাইলেন কোনওভাবে সাধুর তপস্যাকে রোধ করতে। সুতরাং একদিন ভীত ইন্দ্র সৈনিকের বেশে বনে কৃচ্ছ্রসাধনকারী (অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্রত বা সাধনাকারী) সাধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তার সঙ্গে একটি তরোয়াল ছিল ৷ যখন সাধুর সঙ্গে দেখা হল, তিনি তাকে তার একটি প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আসা পর্যন্ত তরোয়ালটি রক্ষা করতে বললেন। সাধু তরোয়ালটি নিরাপদে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন। সুতরাং সাধু সর্বদা তরোয়ালটিকে তার সাথে বহন করতেন। যখন ফুল এবং ফল সংগ্রহে যেতেন তখনও তরোয়ালটি সঙ্গে নিতেন। তপস্যার সময়ও সতর্ক হয়ে তরোয়ালটি রক্ষা করতেন। ধীরে ধীরে সাধুটির চরিত্রে নিষ্ঠুরতার বিকাশ হল। তিনি ফুল ও ফল সংগ্রহের জন্য গাছপালার ডাল কাটতে তরোয়াল ব্যবহার করতে লাগলেন। শুধু তাই নয় ধীরে ধীরে তিনি বিভিন্ন প্রাণীদেরও তরোয়াল দিয়ে আক্রমণ ও হত্যা করতে লাগলেন। ক্রমশঃ তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর হয়ে গেলেন। সবাই তাকে ভয় পেতে শুরু করল। নিরীহ প্রাণীরা তাকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করল। অন্যান্য তপস্যারত সাধুরা সেই স্থান পরিত্যাগ করলেন এবং অন্যত্র গমন করলেন। সঞ্চিত সকল পবিত্রতা হারিয়ে তিনি একজন নিষ্ঠুর ব্যক্তিতে পরিণত হলেন। একথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, ইন্দ্ৰ কখনোই তার তরোয়াল নিতে আসেন নি। সাধুর যে মহান লক্ষ্য ছিল, শুধুমাত্র তরোয়ালের সঙ্গ তাকে এক নিষ্ঠুর হত্যাকারীতে পরিণত করল। মৃত্যুর পর তিনি নরকে গেলেন।

শাস্ত্রের এই কাহিনীগুলি আমাদের জীবনে কুসঙ্গে পরিণাম বুঝতে সাহায্য করে। কোন লোকের সঙ্গ করব এবং কোন্ বস্তুর সঙ্গ করব সে বিষয়ে অত্যন্ত যত্নশীল হতে হবে। শুধুমাত্র তরোয়ালের সঙ্গ করে সাধু তার সাধুসুলভ গুণগুলি হারালেন। সুতরাং কেবলমাত্র লোকের সঙ্গই নয়, বস্তুর সঙ্গের বিষয়েও আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।

বস্তু সঙ্গ সাবধানতা জরুরী

======================

বর্তমানে সবাই মোবাইল ব্যবহার করেন। এটি প্রয়োজনীয়তায় রূপান্তরিত হয়েছে কিন্তু সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার না করলে আমরা বিপদে পড়তে পারি। যেমন গণধ্বংসী কোন অস্ত্র পৃথিবীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে তেমনই মোবাইল সঠিকভাবে ব্যবহৃত না করতে পারলে আমাদের জীবনে ধ্বংসের কারণ হবে। আজকাল মোবাইলে আসক্তি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। সাধু যেমন সর্বদা তরোয়াল বহন করেছিলেন, আমরাও দিনের ২৪ ঘন্টাই মোবাইল সঙ্গে রাখি। যখন ঘুমাই মোবাইলও বিছানায় থাকে। এমন কি বাথরুমেও আমরা মোবাইল নিয়ে যাই। আমাদের মোবাইলে উচ্চগতির ইন্টারনেট যোগাযোগ থাকে এবং সেই জন্যে এই ছোট্ট যন্ত্রে আমরা সবকিছু দেখতে এবং করতে পারি। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও দেখা এবং বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে অর্থাৎ বিনোদনের জন্য মোবাইলে আমরা অনেক সময় নষ্ট করি। এটি অবশ্যই আমাদের চেতনার অবনমন ঘটায় এবং শ্রীকৃষ্ণ থেকে দূরে নিয়ে যায়। সুতরাং শুধু প্রয়োজনের সময়ই এই সকল যন্ত্র সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা শ্রেয়। এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এমন কিছু না করা যা আমাদের কৃষ্ণ থেকে দূরে নিয়ে যায়

꧁✸ শুদ্ধ ভক্তসঙ্গের ফল ✸꧂

উচ্চস্তরের শুদ্ধ ভক্তসঙ্গে জড় বাসনার অবসানবৈষ্ণবীয় আচরণ প্রাপ্তি হয়

===========================================================

ভক্তসঙ্গ মানুষের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির বাসনা দমন করতে সাহায্য করে, ভগবানের সেবাকর্ম ও ভগবৎ-সাহচর্যের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে। তাই ভগবান বলেন ─
ততো দুঃসঙ্গম্‌ উৎসৃজ্য সৎসু সজ্জেত বুদ্ধিমান্।
সন্তঃ এব অস্য ছিন্দন্তি মনোব্যাসঙ্গম্‌ উক্তিভিঃ॥
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।২৬।২৬)
অনুবাদ: অতএব বুদ্ধিমান মানুষের উচিত সমস্ত প্রকার অসৎসঙ্গ পরিহার করে শুদ্ধ ভক্তদের সঙ্গ করা, যাতে তাঁদের বাক্যের দ্বারা তার মনের অত্যধিক আসক্তি ছিন্ন হয়।
কপিল মুনি তাঁর মাতা দেবহূতিকে উপদেশ দিয়েছেন যে,─
❝ তে এতে সাধবঃ সাধ্বি সর্বসঙ্গবিবর্জিতাঃ
সঙ্গঃ তেষু অথ তে প্রার্থ্যঃ সঙ্গদোষহরা হি তে॥
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ৩।২৫।২৪)
অনুবাদ: হে মাতঃ! হে সাধ্বি ! মানুষের কর্তব্য হচ্ছে বিষয়াসক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গ ত্যাগ করে. কৃষ্ণভাবনাময় ভক্তসঙ্গের অন্বেষণ করা, এবং এই প্রকার সঙ্গ প্রভাবে তিনি পারমার্থিক উন্নতি সাধন করতে পারবেন। তাঁদের বাণী এবং উপদেশের দ্বারা তিনি সংসার বন্ধন ছেদন করতে সক্ষম হবেন।
একদিকে উচ্চস্তরের শুদ্ধ ভক্তসঙ্গে জড় বাসনার অবসান হয়, সেইসাথে বৈষ্ণবীয় আচরণ প্রাপ্তি হয়। বৈষ্ণবীয় আচরণ হল ভক্তের আটটি গুণ। ভগবান তাঁর ভক্তের আটটি বিশেষ গুণ উল্লেখ করেছেন—
❝ সন্তঃ অনপেক্ষাঃ মৎ-চিত্তাঃ প্রশান্তাঃ সমদর্শিনঃ।
নির্মমাঃ নিরহঙ্কারা নির্দ্বন্দ্বাঃ নিষ্পরিগ্রহাঃ॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।২৬।২৭)
অনুবাদ: আমার ভক্তগণ আমার প্রতি মনোনিবেশ করে জাগতিক কোন কিছুর উপর নির্ভর করে না৷ তারা সর্বদা শান্ত, সমদর্শী, আর তারা মমত্ববুদ্ধি, মিথ্যা অহংকার, দ্বন্দ্ব এবং লোভ থেকে মুক্ত৷
সুতরাং,
১. শুদ্ধ ভগবদ্ভক্ত জাগতিক কোনোকিছুর ওপর নির্ভরশীল নন (অনপেক্ষাঃ);
২. তাঁরা সর্বদা ভগবৎ-চিন্তায় মগ্ন থাকেন (মৎ-চিত্তাঃ);
৩. তাঁরা সর্বদা প্রশান্তচিত্ত (প্রশান্তাঃ);
৪. তাঁরা সমদর্শী অর্থাৎ সবকিছু সমানভাবে দর্শন করেন (সমদর্শিনঃ);
৫. নিজের অধিকার ভাব তথা মমত্ববুদ্ধি থেকে মুক্ত (নির্মমাঃ);
৬. মিথ্যা অহংকার থেকে মুক্ত (নিরহঙ্কারা);
৭. সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয় ইত্যাদি দ্বন্দ্বভাব থেকে মুক্ত (নির্দ্বন্দ্বাঃ) এবং
৮. জাগতিক লোভ থেকে মুক্ত (নিষ্পরিগ্রহাঃ)।
মচ্চিত্ত গুণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা অন্য গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করে। এসকল গুণগুলি আমরা শুদ্ধভক্তের সঙ্গ প্রভাবে লাভ করতে সক্ষম।

উচ্চস্তরের ভক্তসঙ্গ আধ্যাত্মিক দর্শনে সাহায্য করে 

==========================================

শুদ্ধ ভক্তসঙ্গ (উত্তম ভক্তসঙ্গ বা সাধুসঙ্গ) এতই দুর্লভ যে, তার সঙ্গে কোন জড়-জাগতিক সুখ – স্বাচ্ছন্দের তুলনা হয় না। কেউ যদি ক্ষনিকের তরেও ভগবানের শুদ্ধ ভক্তের সঙ্গ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন, তাহলে স্বর্গলোকে উন্নীত হওয়া অথবা জড়জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সমস্ত পূণ্যকর্মের ও তার সাথে তুলনা হয়না। হিরণ্যকশিপু প্রহল্লাদকে বলেছেন, হে পুত্র! সঙ্গের প্রভাব স্ফটিকের মতো, যা তার সম্মুখস্ত সব কিছুকেই প্রতিফলিত করবে। কেউ যদি ভগবদ্ভভক্তের সঙ্গ করেন তা হলে অবশ্যই ভগবদ্ভভক্তের সমস্ত দিব্য গুনাবলী তার হৃদয়ে প্রতিফলিত হবে।

যদি আমরা মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বদের জীবনী পাঠ করি তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, তাঁরা তাদের সময় কার সাথে এবং কিভাবে অতিবাহিত করবেন সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। এমনকি এক মুহূর্ত সময়ও তারা নষ্ট করেন নি। প্রথমতঃ তারা অভক্ত সঙ্গ এবং যা কিছু তাদের ভক্তির অন্তরায় তা ত্যাগ করেছেন। এবং তারপর শ্রীকৃষ্ণের নিষ্ঠাবান ভক্তদের সঙ্গ করা নিশ্চিত করেছেন। যেমন, সূর্যরশ্মি অনতিবিলম্বে সকল অন্ধকার দূরীভূত করে, অনুরূপভাবে একনিষ্ঠ ভক্তদের সঙ্গ আমাদের হৃদয়কে আলোকিত করে।

❝ সন্তো দিশন্তি চক্ষুংষি বহিঃ অর্কঃ সমুত্থিতঃ।
দেবতা বান্ধবাঃ সন্তঃ সন্তঃ আত্মা অহম এবচ॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।২৬।৩৪)

অনুবাদ: সূর্যালোক আমাদের দেখতে সহায়তা করে, আর তা সম্ভব হয় যখন সূর্য আকাশে উদীয়মান থাকে, কিন্তু আমার ভক্তগণ (ভগবদ্ভক্তরা) তাঁদের বাণীর আলোকে জীবের দিব্যচক্ষু (জ্ঞান চক্ষু) উন্মোচন করে দেন, ফলে অজ্ঞতার অন্ধকার বিনষ্ট হয়। আমার ভক্তগণ হচ্ছে সকলের উপাস্য বিগ্রহ এবং প্রকৃত স্বজন; তারাই সকলের আত্মস্বরূপ, এবং সর্বোপরি আমার থেকে অভিন্ন।

মূর্খতা হলো অধার্মিকের সম্পদ, যারা নিজেদের জড় জাগতিক সম্পদকে অধিক মূল্যবান মনে করে এবং নিজেদের অজ্ঞানতা ও অন্ধকারে রাখতেই পছন্দ করে। কিন্তু ভগবানের শুদ্ধভক্তরা সূর্যের মতো। তাদের বাক্যের আলো দিয়ে জীবের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হয়, অজ্ঞানতা ও অন্ধকার দূরীভূত হয়। তারাই আমাদের প্রকৃত বন্ধু ও আত্মীয়। তাই তারাই যথার্থ সেব্য- ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য আলোড়নকারী স্থূল জড় দেহটি নয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে সাধুসঙ্গের জ্ঞান প্রদান করেন। তাই আমরাও যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ভগবদ্ভক্তদের সঙ্গলাভের সুযোগ গ্রহণ করি, নিজেদের সামর্থ্য দিয়ে তাদের সেবা করি এবং আমাদের চূড়ান্ত অভীষ্ট কৃষ্ণভক্তি অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করি।

শ্রীমদ্‌ভাগবতে নারদমুনি তাঁর শিষ্য ব্যাসদেবকে তাঁর জীবনের কাহিনী বিবৃত করতে গিয়ে উচ্চস্তরের ভক্তদের সঙ্গ করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। দেবর্ষি নারদমুনি বলেছেন যে, চার মাস ব্যাপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহান ভক্তদের সঙ্গ করার একটি সুযোগ তাঁর জীবনকে সম্পূর্ণ রূপান্তরিত করে দিয়েছিল। পূর্বজন্মে এক পরিচারিকার পুত্ররূপে তিনি জন্মগ্রহণ করলেও মহান ভক্তদের সেবার মাধ্যমে চিন্ময় গুণাবলীর বিকাশ ঘটিয়েছিলেন।

চৈতন্য চরিতামৃত মধ্যলীলা ২২।৫৪ তে বলা হয়েছে, এমন কি এক মুহূর্ত কৃষ্ণভক্তের সঙ্গ করার সুযোগ লাভ করলেই একজন জীবনে সম্পূর্ণ সাফল্য প্রাপ্ত হবেন।

❝ সাধুসঙ্গ সাধুসঙ্গ—সর্বশাস্ত্রে কয়।
লবমাত্র সাধুসঙ্গে সর্বসিদ্ধি হয়॥ ❞

সকল মহান শাস্ত্রাদির সিদ্ধান্ত এই যে, একজন শুদ্ধভক্তের এক মুহূর্তের সঙ্গলাভে কেউ সকল সাফল্য অর্জন করতে পারেন।

সাধু এবং শাস্ত্রের বিবৃতি অনুসারে আমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারি যে, যারা শ্রীকৃষ্ণের অভিলাষী তারা সেই সকল ব্যক্তি এবং বস্তুর সঙ্গ করেন যা তাদের কৃষ্ণ দিতে পারে। শ্রীল প্রভুপাদ ইসকন প্রতিষ্ঠা করেছেন যাতে প্রকৃত অভিলাষীগণ একে অপরের সঙ্গলাভ করে কৃষ্ণভক্তি অনুশীলনে একে অন্যকে উৎসাহিত করতে পারেন। শ্রীমদ্ভাগবত ৪।১২।৩৭ এ কৃষ্ণভক্তদের সঙ্গকারীদের গন্তব্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে। যাঁরা শান্ত, সমদর্শী, নির্মল ও পবিত্র এবং যাঁরা অন্য সমস্ত জীবদের কিভাবে প্রসন্নতাবিধান করতে হয় তা জানেন, তাঁরা উপরোক্তদের বন্ধু; তাঁরাই কেবল অনায়াসে ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধি লাভ করতে পারেন

শুদ্ধভক্ত সঙ্গে কৃষ্ণকথা এবং কৃষ্ণকথার মাধ্যমে ভক্তি অর্জন

================================================

❝ তা যে শৃণ্বন্তি গায়ন্তি হি অনুমোদন্তি চ আদৃতাঃ।
মৎপরাঃ শ্রদ্দধানাশ্চ ভক্তিং বিন্দন্তি তে ময়ি॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।২৬।২৯)

অনুবাদ: যে কেউ আমার বিষয়ে আন্তরিকতা ও বিশ্বাস সহকারে শ্রবণ ও কীর্তন করলে, সে শ্রদ্ধা সহকারে আমার প্রতি নিবেদিত প্রাণ হয়ে আমার প্রতি ভক্তিযোগ প্রাপ্ত হয়।

❝ সতাং প্রসঙ্গাৎ মম বীর্যসংবিদো
                                    ভবন্তি হৃৎকর্ণরস-অয়নাঃ কথাঃ।
তৎ জোষণাৎ আশু অপবর্গ বর্ত্মনি
                                       শ্রদ্ধা রতির্ভক্তিরনুক্রমিষ্যতি॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ৩।২৫।২৫)

অনুবাদ: শুদ্ধ ভক্তদের সঙ্গে পরমেশ্বর ভগবানের লীলা-বিলাস এবং কার্যকলাপের আলোচনা হৃদয় ও কর্ণের প্রীতি সম্পাদন করে এবং সন্তুষ্টি বিধান করে৷ এই প্রকার জ্ঞানের আলোচনার ফলে, ধীরে ধীরে মুক্তির পথে অগ্রসর হওয়া যায়। এই ভাবে মুক্ত হওয়ার পর, যথাক্রমে প্রথমে শ্রদ্ধা (দৃঢ় বিশ্বাস), পরে রতি (আকর্ষণ) ও অবশেষে প্রেম-ভক্তির উদয় হয়।

কৃষ্ণকথা শ্রবণ শুধু কৃষ্ণ সম্বন্ধীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ নয়। কৃষ্ণনাম জপ করা বা কৃষ্ণকথা বলার উদ্দেশ্য মানুষকে নিজের জ্ঞান গরিমা দিয়ে চমকিত করা নয়। “অনুমোদন্তি” শব্দটি নির্দেশ করে যে, ভক্ত শুধু কথামৃত শ্রবণ বা জপ করেন না, পরন্তু এই চিন্ময় জ্ঞান অন্যদের মাঝে বিকশিত করে বৈষ্ণবীয় গুণ বিকশিত করেন

যিনি উন্নত কৃষ্ণভক্তের নিকট থেকে শ্রবণ করেন, তিনি ভবসমুদ্র থেকে উত্তীর্ণ হন। যখন কেউ সদ্গুরুর নির্দেশ মেনে চলেন, তখন তাঁর মনের কলুষিত কার্যকলাপ প্রশমিত হয়, তিনি তখন নতুন পারমার্থিক আলোকে সবকিছু দর্শন করেন, তাঁর মধ্যে ভগবানের প্রতি প্রেমময়ী সেবার ভগবৎ-প্রেমরূপ ফলপ্রদ নিঃস্বার্থ প্রবণতা প্রস্ফূটিত হয়। (ভাগবতম্‌ তাৎপর্য ১১।২৬।২৯)

প্রকৃত ভক্ত বা সদ্গুরু দাস্যভাব নিয়েই কৃষ্ণকথা বলেন, তিনি নিজেকে মহাজ্ঞানী বা স্বতন্ত্র লোকগুরু ভাবেন না। একজন দীন বক্তাই শ্রোতাদের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকেন, কারণ সেই ভাব নিয়েই যথোপযুক্ত ভক্তিভাবে কৃষ্ণকথা বলা সম্ভব।

মৈত্রেয়, সূত গোস্বামী, নারদ মুনি প্রমুখ শ্রীমদ্ভাগবতের বক্তাগণের মধ্যে এই ভাব দেখা যায়। যেমন, মৈত্রেয় বিদুরকে প্রশংসিত করেন এই বলে, হে বিদুর, আপনি আমার সঙ্গের জন্য প্রার্থনা করেছেন, কিন্তু আমি মনে করি আপনার সঙ্গই অধিক মূল্যবান ও দুর্লভ।আপনার পার্ষদদের সেবা করেই কৃষ্ণভক্তি অর্জন করা সম্ভব। আপনি যে বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই বংশের সন্তান-সন্ততিরা পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি অনুরক্ত। আপনার কৃষ্ণকথা শোনার আগ্রহের জন্যই আপনি প্রতিটি শব্দে, পংক্তিতে, অধ্যায়ে কৃষ্ণকথার মালা সাজান। আপনার প্রয়াসের ফলে পরমেশ্বর ভগবানের অপ্রাকৃত লীলাসমূহ প্রতিক্ষণ নব নবায়মানভাবে আস্বাদনযোগ্য হচ্ছে। (ভাগবতম্‌  ৩।৮।১)

এভাবে বক্তা ও শ্রোতার নিষ্ঠা ও সচেতনতা পুরো প্রক্রিয়াটিকেই জীবন্ত করে তোলে ও যারা কৃষ্ণকথা জানতে আগ্রহী, তাদের কাছে সহজে পৌঁছানোর যোগ্য হয়ে ওঠে।

❝পরস্পর অনুকথনম্‌ পাবনম্‌ ভগবৎ যশঃ।
মিথো রতিঃ মিথো তুষ্টিঃ নিবৃত্তিঃ মিথো আত্মনঃ॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।৩।৩০)

অনুবাদ: শ্রীভগবানের মহিমা কীর্তনের উদ্দেশ্যে ভগবদ্ভক্তদের সাথে মিলিত হয়ে কীভাবে তাদের সঙ্গলাভ করতে হয়, তা মানুষ মাত্রেরই শেখা উচিত। এই ধরনের সঙ্গলাভ প্রক্রিয়া বিশেষভাবে শুদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে। এভাবে ভগবদ্ভক্তগণ তাঁদের মধ্যে প্রেমময় সখ্যতা গড়ে তুলতে থাকলে, তাঁরা পারস্পরিক সুখ এবং সন্তোষ বোধ করতে থাকেন। আর এভাবে পরস্পরকে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে তাঁরা দুঃখ-দুর্দশার কারণস্বরূপ জাগতিক ইন্দ্রিয় উপভোগের অভ্যাস বর্জন করতে সক্ষম হন।

শুদ্ধ শ্রবণ হৃদয়কে নিষ্কলুষ করে ভক্তি অর্জন করতে সাহায্য করে। ভগবদ্ভক্তি অর্জনের পর এক শুদ্ধ ভক্তের কাছে আর কিছুই চাওয়ার বা পাওয়ার থাকে না।

❝ভক্তিং লব্ধবতঃ সাধোঃ কিম্‌ অন্যৎ অবশিষ্যতে।
ময়ি অনন্তগুণে ব্রহ্মণি আনন্দ অনুভব আত্মনি॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।২৬।৩০)

অনুবাদ: সর্ব আনন্দ মূর্তি, অনন্ত গুণসম্পন্ন, পরম অবিমিশ্র সত্য, আমার প্রতি ভক্তিযোগ প্রাপ্ত হলে, আদর্শ ভক্তের জন্য লাভ করার আর বাকী রইল?

কৃষ্ণভক্তি এতটাই আনন্দদায়ক যে ভক্তের কাছে ভগবানের সেবা ছাড়া আর কোনো কামনা থাকে না। শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের বলেন যে, তাঁর প্রতি গোপীদের ভক্তির উপহারস্বরূপ তাদের কেবল তাঁর সেবাই প্রাপ্য, কারণ ভক্তির মতো এত আনন্দ ও জ্ঞান আর কোনোকিছুতে নেই।

শুদ্ধভক্ত সঙ্গে কৃষ্ণকথা এবং কৃষ্ণকথার কারণে পাপমুক্তি

==============================================

ভগবতগীতায় ভগবান বলেছেন,

❝ মচ্চিত্তা মদ্গগতপ্রাণা বোধয়ন্তঃ পরস্পরম্।
কথয়ন্তশ্চ মাম্‌ নিত্যম্ তুষ্যন্তি চ রমন্তি চ ॥ ❞

                           ━┉┈┈(গীতা-১০/৯)

অনুবাদ: যাঁদের চিত্ত ও প্রাণ সম্পূর্ণরূপে আমাতে সমর্পিত, তাঁরা আমার কথা সর্বদাই আলোচনা করে এবং আমার সম্বন্ধে পরস্পরের মধ্যে ভাবের বিনিময় করে পরম সন্তোষ ও অপ্রাকৃত আনন্দলাভ করেন।

আবার ভগবতমে ভগবান বলেছেন,

❝তেষু নিত্যং মহাভাগ মহাভাগেষু মৎকথাঃ।
সম্ভবন্তি হি তা নৃণাং জুষতাং প্ৰপুনন্তি অঘম্॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।২৬।২৮)

অনুবাদ: হে মহাভাগ্যবান উদ্ধব, আমার এইরূপ শুদ্ধ ভক্তদের সম্মেলনে সর্বদা আমার বিষয়ে আলোচনা হয়, যারা আমার মহিমা শ্রবণ-কীর্তনে অংশগ্রহণ করে, তারা নিঃসন্দেহে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়৷

সুতরাং, শুদ্ধভক্ত সঙ্গে সর্বদা কৃষ্ণকথাই আলোচনা হয় (ভ. গী. ১০/৯)। তাদের সঙ্গপ্রভাবে কেউ সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হতে পারে (ভাগবতম্‌ ১১।২৬।২৮)। শুদ্ধভক্তের মুখনিঃসৃত শ্রীমদ্ভাগবতের দিব্য শব্দতরঙ্গরূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্তের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে ভক্তিপথের বিঘ্নস্বরূপ হৃদয়ের সমস্ত মলিনতা দূর করে।

শুদ্ধভক্তের মুখনিঃসৃত হরিকথা এত শক্তিশালী ও আত্মার কল্যাণকর যে, তা ধ্রুব মহারাজ, পৃথু, প্রহ্লাদ মহারাজের মতো মহান ভক্তরাও কৃষ্ণকথাকে তাঁদের জীবনের পরম প্রাপ্তি বলে মনে করেন।
এসকল ভক্ত যখন ভগবানের দর্শন পেয়েছিলেন, তাঁরা কোনো জড়বাসনা পূরণ করতে চাননি, বরং তাঁরা প্রার্থনা করেছিলেন যেন তাঁরা শুদ্ধ ভক্তসঙ্গে কৃষ্ণকথা শ্রবণ করতে পারেন। প্রথমদিকে কেউ হরিকথা শুনতে আগ্রহবোধ না’ও করতে পারেন, কিন্তু ভক্তসঙ্গের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই হরিকথা শ্রবণে রুচি বৃদ্ধি করতে পারেন।
এমনকি ভগবান কপিলদেব তাঁর মাতা দেবহূতিকে সাধুসঙ্গের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন ━
❝ সতাং প্রসঙ্গান্মম বীর্যসংবিদো
                                       ভবন্তি হৃৎকর্ণরসায়নাঃ কথাঃ।
তজ্জোষণাদাশ্বপবর্গবর্ত্মনি
                                       শ্রদ্ধা রতির্ভক্তিরনুক্রমিষ্যতি॥❞
                                                 ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ৩।২৫।২৫)
অর্থাৎ, শুদ্ধভক্তদের সঙ্গে ভগবানের লীলাবিলাস ও চিন্ময় কার্যকলাপের আলোচনা শ্রবণ করলে আমাদের কর্ণ ও হৃদয় তৃপ্তিলাভ করে। এই জ্ঞানচর্চা আমাদের ধীরে ধীরে মুক্তির পথে নিয়ে যায় এবং পরিশেষে আমরা পূর্ণ ভগবদ্ভক্তিতে স্থিরতা প্রাপ্তিপূর্বক মুক্তিলাভ করি। তখন প্রকৃত ভক্তি ও ভক্তিপূর্ণ সেবা শুরু হয়।
যদি কেউ শুদ্ধ ভক্তের কাছ থেকে সরাসরি নির্দেশনা না-ও পায় বা তাদের সঙ্গ লাভ করতে না-ও পারে, তবুও কেবল শুদ্ধ ভক্তের মুখনিঃসৃত বাণী শুনলেও তার হৃদয় শুদ্ধ হয়। দুই প্রকারে ভক্তসঙ্গ হতে পারে- বাণী বা তার কথার মাধ্যমে এবং বপু বা তার শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে। ভক্তের শারীরিক উপস্থিতি কখনো সম্ভব হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে, কিন্তু বাণী সবসময়ই সহজলভ্য। ভক্তের বাণী সেবার অর্থ হচ্ছে তার নির্দেশাবলি পালন, যা স্বশরীরে তার সেবা করার চেয়ে অধিক মাহাত্ম্যপূর্ণ। ভক্তের স্বশরীর উপস্থিতির সময়ে যেকোনো কনিষ্ঠ ভক্ত তার সেবা করতে আগ্রহী হতেই পারে, কিন্তু যখন তিনি অনুপস্থিত, তখন সেই ভক্তের উচিত শুদ্ধভক্তের বা গুরুর নির্দেশাবলি পালনের মাধ্যমে তার সেবা করা।

শুদ্ধভক্ত সঙ্গের মাধ্যমে শুদ্ধভক্তের সেবা করার সুযোগ প্রাপ্তি

================================================

ভক্তদের সান্নিধ্যে শুধু কৃষ্ণকথাই শোনা যায় তা নয়, বরং কৃষ্ণের প্রিয় ভক্তদের সেবা করার সুযোগও পাওয়া যায়। তাদের সেবার মাধ্যমে, তাত্ত্বিক ভগবত্তত্ত্বজ্ঞান ব্যবহারিক উপলব্ধিতে রূপান্তরিত হয়। মৈত্রেয়র কাছ থেকে ভগবত্তত্ত্বজ্ঞান লাভের পর বিদুর তাকে বললেন, ━ আপনার কথায় আমি আত্মার বিজ্ঞান সম্পর্কে জেনেছি এবং আপনার কথায় অত্যন্ত প্রভাবিতও হয়েছি। কিন্তু আমি কিছু বিষয় উপলব্ধি করতে পারিনি। আমি নিশ্চিত যে, আপনার চরণপদ্মের সেবা করে আমি আমার এ অজ্ঞতাও দূর করতে পারবো।

❝যথা উপশ্রয়মাণস্য ভগবন্তং বিভাবসুম্।
শীতং ভয়ং তমঃ অপ্যেতি সাধূন্ সংসেবস্তথা॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।২৬।৩১)

অনুবাদ: যজ্ঞের অগ্নির নিকট উপনীত ব্যক্তির যেমন শীত, ভয় ও অন্ধকার বিদূরিত হয়, তেমনি ভগবদ্ভক্তদের সেবায় রত ব্যক্তিদের জড়তা, ভয় ও অজ্ঞানতা দূরীভূত হয়।

শুদ্ধ কৃষ্ণভক্ত সঙ্গের মাধ্যমে পতিত জীবের উদ্ধার সম্ভব

=============================================

❝ নিমজ্জ্যৎ উন্মজ্জতাম্ ঘোরে ভবঃ অব্ধৌ পরম অয়ণম্ ।
সন্তো ব্রহ্মবিদঃ শান্তা নৌঃ দৃঢ়া ইব অপ্সু  মজ্জতাম্॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।২৬।৩২)

অনুবাদ: জাগতিক জীবনের ভয়ঙ্কর সমুদ্রে যারা বারবার পতিত এবং উত্থিত হচ্ছে তাদের সর্বশেষ আশ্রয় হচ্ছে পরমজ্ঞাননিষ্ঠ, শান্ত ভগবদ্ভক্তগণ । এরূপ কৃষ্ণভক্তগণ ডুবন্ত মানুষদের উদ্ধার করতে আসা একখানি শক্তিশালী নৌকার মতো।

❝ অন্নং হি প্রাণিনাং প্রাণঃ আর্তানাং শরণং ত্বম্ ।
ধর্মো বিত্তং নৃণাং প্রেত্য সন্তঃ অর্বাক্  বিভ্যতঃ অরণম্ ॥❞
                         ━┉┈┈(ভাগবতম্‌ ১১।২৬।৩৩)

অনুবাদ: খাদ্যই যেমন সমস্ত জীবেদের প্রাণ, আমিই যেমন আর্তদের জন্য অন্তিম আশ্রয়, এবং ধর্মই যেমন পরলোকগামীগণের সম্পদ, ঠিক তেমনই আমার ভক্তরা (ভগবদ্ভক্তরা) হচ্ছে দুঃখজনক জীবনে পতিত হওয়ার ভয়ে ভীত ব্যক্তিদের জন্য একমাত্র আশ্রয়।

শুদ্ধভক্তদের আশ্রয় আমাদের জড় কামনা-বাসনার জালে আবদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচায়, কারণ কৃষ্ণভক্তি সবসময় কৃষ্ণের প্রেমময় সেবায় নিযুক্ত রাখে।

আরও পড়ুন: শ্রীকৃষ্ণের ৬৪ গুণ (64 Qualities of Krishna)✸রাধারানীর ২৫ গুণ (25 Qualities of RadhaRani)

Join to Our Community
Community Grows With You
x

This website uses cookies.