অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী হল ‘উৎপন্না একাদশী’ (Utpanna Ekadashi)। উৎপন্না একাদশীর আবির্ভাব যেহেতু শ্রীবিষ্ণুর পরাশক্তি থেকে, তাই এই ব্রত পালনকারী সকলে ভগবানেরই পূজা করে থাকেন। এর ফলে প্রত্যেক ব্রত পালনকারী ভগবানের কৃপায় মুক্তি লাভ করে। শুধু তাই নয়, এই ব্রতপালনকারীর শত্রূবিনাশ হয়, পরমগতি এবং সর্বসিদ্ধি লাভ হয়।
সেই সঙ্গে আমাদের জানা দরকার উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Utpanna Ekadashi), উৎপন্না একাদশী সংকল্প, উৎপন্না একাদশী পারণ, উৎপন্না একাদশী ব্রত কথা।
সেই সঙ্গে জেনে রাখা উচিত কেন আমরা একাদশী ব্রত পালন করব? তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ✸✤
◉একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবন এর সদগতি হয় তা নয়, একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই পিতা মাতাকে নরকের থেকে উদ্ধার করতে পারবে।
◉একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে ব্যক্তি যেমন নরকবাসী হয়, তেমনই অন্যকে অন্নভোজন করালেও নরকবাসী হয়। কাজেই একাদশী ব্রত পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।
◉ ১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল ──
১। মাতৃ হত্যার পাপ।
২। পিতৃ হত্যার পাপ।
৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
৪। গুরু হত্যার পাপ।
আমরা মাত্র একটি দানা নয় প্রতি গ্রাসে হাজার হাজার দানা ভক্ষণ করি। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, যে পাপ কাজ আদৌ করিনি সেই পাপ কাজের ভাগীদার আমাদেরকে হতে হবে।
◉ বিভিন্ন পুরানে একাদশী মহাব্রত সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?
১। সকল পুরাণে মুনিদের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ)
২। একদা শ্রী যমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, “হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন।” ──(পদ্মপুরাণ)
৩। একাদশীতে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)
৪। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠ লোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।
৫। একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
৬। বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করে ছিলেন। ──(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা (১৫/৮-১০)
৭। অনেকের ধারনা পুরী ধামে শ্রীজগন্নাথ দেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।
৮। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রণয় কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পচে মরতে হয়। ──(শারদীয় পুরাণ)
৯। হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। ──(অগ্নিপুরাণ)
১০। বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। ──(কাত্যায়ন সংহিতা)
১১। যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপাসনা করেন, তার হাতের মহা মূল্যবান রত্ন পরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। ──(তত্ত্বসাগর)
১২। দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবী কে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরি বাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে। ──(স্কন্দপুরাণ)
১৩। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। ──(স্কন্দপুরাণ)
তাহলে কেন আমরা জেনে শুনে পাপ কর্ম করছি? যেসকল ভক্তবৃন্দরা একাদশী মহাব্রত পালন না করে যে পাপ করছেন তা থেকে বিরত থাকুন। তারা সহ সকল ভক্তবৃন্দরাই একসাথে একাদশী মহাব্রত পালন করি এবং আমাদের এই দুর্লভ মানব জীবনকে স্বার্থক করি।
আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য ✸✤
(Significance of Utpanna Ekadashi)
ব্রতশ্রেষ্ঠ একাদশী শ্রীহরির অত্যন্ত প্রিয়। কৃষ্ণভর্তি লাভই শ্রী একাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে।
🕉️ ১) যারা এই উৎপন্না একাদশী ব্রত পালন করে সেই ব্রত পালনকারীর সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হয়, অর্থাৎ তাদের সকল মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
🕉️ ২) উৎপন্না একাদশীর আবির্ভাব যেহেতু শ্রীবিষ্ণুর পরাশক্তি থেকে, তাই এই ব্রত পালনকারী সকলে ভগবানেরই পূজা করে থাকেন। এর ফলে প্রত্যেক ব্রত পালনকারী ভগবানের কৃপায় মুক্তি লাভ করবে।
🕉️ ৩) এই ব্রতপালনকারীর শত্রূবিনাশ হয়, পরমগতি এবং সর্বসিদ্ধি লাভ হয়।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ উৎপন্না একাদশী সংকল্প ✸✤
(Utpanna Ekadashi Saṅkalpa)
যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।
দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, “হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।”
পরদিন অর্থাৎ একাদশী তিথিতে সম্পূর্ণ দিন পালিত হবে উৎপন্না একাদশী ━
◉ ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 27-নভেম্বর-2024 (বুধবার)।
◉ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মনে রাখবেন, একাদশীর দিন ভোরে (অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে) শয্যা ত্যাগ করে স্নান সেরে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।” ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে অবশ্যই সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করে সংকল্প নিতে হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে বুধবার ভোরে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করতে হবে।
◼️ একাদশী সংকল্প মন্ত্র ◼️
❝ একাদশ্যাম্ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্ মে ভবাচ্যুত॥ ❞
━━┉┈┈(৩ বার)
অনুবাদ: “হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।”
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ উৎপন্না একাদশী পারণ ✸✤
(Utpanna Ekadashi Pārana)
উৎপন্না একাদশীর ঠিক পরদিন অর্থাৎ 28-নভেম্বর-2024 (বৃহস্পতিবার) সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের মধ্যে ━
❏ পশ্চিমবঙ্গ : সকাল 05:59 – 06:26
❏ বাংলাদেশ : সকাল 06:21 – 06:56
অর্থাৎ একাদশী ব্রত পালন করে পরের দিন ভোরে স্নান সেরে পারন সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে তিনবার ভক্তিসহকারে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের সম্মুখে ভক্তিসহকারে অবশ্যই অর্পণ করতে হয়, এরপর সেই অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ অর্থাৎ একাদশী ব্রত ভঙ্গ করতে হয়, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হয়।
◼️ একাদশী পারন মন্ত্র ◼️
❝ ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥ ❞
━━┉┈┈(৩ বার)
অনুবাদ: “হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।”
একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের এই দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─ (Utpanna Ekadashi Vrat Kathā) ❃ অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া ‘উৎপন্না একাদশী’ ব্রত মাহাত্ম্য পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে। ❃ এই ব্রত সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, ━ “হে হৃষীকেশ! হে যোগেশ্বর! অগ্রহায়ণের পুণ্যপ্রদায়ী কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে কি কারনে ‘উৎপন্না’ বলা হয়, কিসের জন্য এই একাদশী পরম পবিত্র ও কেনই বা এই ব্রত দেবতাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়, তা জানতে আমি অত্যন্ত কৌতুহলী। আপনি কৃপা করে আমাকে তা সবিস্তারে বর্ণনা করুন।” ❃ সখার ব্যাকুলতা দেখে শ্রীভগবান প্রসন্ন হয়ে বললেন, ━ “হে পার্থ! হে গুড়াকেশ! পূর্বে সত্যযুগে ‘মুর’ নামে এক দানব ছিল। বিকট আকৃতিবিশিষ্ট সেই দানব ছিল অত্যন্ত ক্রোধী। তার প্রতাপে দেবতারাও ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তার উপর সে মহাদেবের কাছ থেকে বর পেয়েছিল যে ‘কোন অস্ত্রে তার পরাজয় হবে না, এমনকি ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রেও না।’ তখন মুর দানব এই বর পেয়ে আরও পরাক্রমি হয়ে ওঠে এবং যুদ্ধে স্বর্গরাজ ইন্দ্রসমেত বাকি দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গ জয় করে দেবতাদের বিতারিত করে।” ❃ সেই কারনে দেবতারা পৃথিবীতে বিচরণ করতে বাধ্য হয়। তখন দেবতারা মহাদেবের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজেদের সমস্ত দু:খ সবিস্তারে জানিয়ে সাহায্য চাইলেন। শুনে চিন্তিত মহাদেব বললেন, ━ “হে দেবরাজ! আমি তাকে বর দিয়েছি, আমিই তাকে বধ করতে পারব না। আপনারা ভগবান বিষ্ণুর স্মরনাপন্ন হন, এই সঙ্কটকালে তিনিই কেবল আপনাদের সাহায্য করতে পারবেন। যেখানে শরণাগতবৎসল জগন্নাথ, গরুধ্বজ বিরাজ করছেন, তোমরা সেখানে যাও। তিনি আশ্রিতদের পরিত্রাণকারী। তিনি নিশ্চয়ই তোমাদের মঙ্গল বিধান করবেন।” ❃ দেবাদিদেবের কথামতো দেবরাজ ইন্দ্র দেবতাদের নিয়ে ক্ষীরসমুদ্রের তীরে গমন করলেন। জলে শায়িত শ্রীবিষ্ণুকে দর্শন করে দেবতারা হাত জোড় করে তাঁর স্তব করতে লাগলেন এবং একে একে নিজ নিজ দৈন্য ও দু:খের কথা ভগবানকে খুলে বললেন। ❃ ইন্দ্রের কথা শুনে ভগবান শ্রীবিষ্ণু বললেন, ━ “হে ইন্দ্র! সেই মুর দানব কি রকম, সে কেমন শক্তিশালী, তা আমায় বর্ণন করুন।” ❃ ইন্দ্র বললেন, ━ “হে ভগবান! প্রাচীনকালে ব্রহ্ম বংশে তালজঙ্ঘা নামক এক অতি পরাক্রমী অসুর ছিল। তারই পুত্র হল মুর যে অত্যন্ত বলশালী, পরাক্রমী ও দেবতাদের কাছে ত্রাসের কারন। সে চন্দ্রাবতী নামে এক পুরীতে বাস করে। স্বর্গ থেকে আমাদের বিতাড়িত করে তার স্বজাতি দানবদের কাউকে রাজা, কাউকে অন্যান্য দিকপালরূপে প্রতিষ্ঠিত করে এখন সে দেবলোক সম্পূর্ণ অধিকার করেছে। তার প্রবল বিক্রমে আজ আমরা পৃথিবীতে উদ্ভ্রান্তের মতো বিচরণ করছি।” ❃ ইন্দ্রদেবের কথা শুনে ভগবান অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। তিনি দেবতাদের সঙ্গে চন্দ্রাবতী পুরীতে গেলেন। শ্রীবিষ্ণুকে দেখামাত্রই দৈত্যরাজ মুর বারবার তর্জন-গর্জন করতে লাগল। দেবতা ও অসুরের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হল। শ্রীভগবান অসুরপক্ষের সমস্ত যোদ্ধাদের দিব্য বাণের আঘাতে হত্যা করতে লাগলেন। তখন তারা প্রাণবাঁচাতে নানা দিকে পালাতে লাগল। সেই সময় শ্রীবিষ্ণু দৈত্য সৈন্যদের হত্যার জন্য সুদর্শন চক্র নিক্ষেপ করলেন। ফলে সমস্ত সৈন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হল। একমাত্র মুর অসুরই জীবিত রইল। তখন শ্রীবিষ্ণু মুরের সাথে বাহুযুদ্ধে লিপ্ত হলেন। ❃ এইভাবে দেবতাদের হিসাবে এক হাজার বছর যুদ্ধ করার পরেও তার মৃত্যু কোন অস্ত্রেই হল না। তখন শ্রীহরি বিশেষ চিন্তান্বিত হয়ে বদরিকা আশ্রমে গমন করলেন। সেখানে সিংহাবতী নামে একটি গুহার মধ্যে প্রবেশ করে শয়ন করলেন। এই গুহাটি এক-দ্বার বিশিষ্ট এবং বারোযোজন অর্থাৎ ৮৬ মাইল বিস্তিৃত। মুর দানব ভগবানের পিছু পিছু সেই গুহায় প্রবেশ করল। ❃ সে শ্রীবিষ্ণুকে নিদ্রিত দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে ভাবতে লাগল, আমার সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিষ্ণু এখানে গোপনে শুয়ে আছে। এখন আমি তাকে অবশ্যই বধ করব। দানবের এইরকম চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর শরীর থেকে এক নারীমূর্তির আবির্ভাব ঘটল। তিনি হলেন ‘উৎপন্না’। তিনি রূপবতী, সৌভাগ্যশালিনী, দিব্য অস্ত্র-শস্ত্রধারিনী ও বিষ্ণু তেজসম্ভুতা বলে মহাপরাক্রমশালী ছিলেন। দৈত্যরাজ মুরের সাথে তার তুমুল যুদ্ধ শুরু হল। কিছুকাল যুদ্ধের পর দেবীর দিব্য তেজে অসুর ভস্মীভূত হল। ❃ তারপর শ্রীবিষ্ণু জেগে উঠে সেই ভস্মীভূত দানবকে দেখে বিস্মিত হলেন। এক দিব্যনারীকে তাঁর পাশে হাত জোর করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, ━ “হে মহাপরাক্রান্ত উগ্রমূর্তি! এই মুর দানবকে কে বধ করল? যিনি একে হত্যা করেছে তিনি নিশ্চয়ই প্রশংসনীয় কর্ম করেছে।” ❃ সেই দিব্যনারী বললেন, ━ “হে প্রভু! আমি আপনার শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছি। আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন এই দানব আপনাকে বধ করতে চেয়েছিল। তাই দেখে আমি তাকে বধ করেছি। আপনার কৃপাতেই আমি তাকে বধ করতে পেরেছি।” ❃ একথা শুনে ভগবান বললেন, ━ “তুমি একাদশীতে আমার পরাশক্তি থেকে উৎপন্ন হয়েছ। তাই তোমার নাম হবে উৎপন্না একাদশী। আমি এই ত্রিলোকে দেবতা ও ঋষিদের অনেক বর প্রদান করেছি। হে ভদ্রে! তুমি দেবতাদের রক্ষা করেছ, তুমিও তোমার মনমতো বর প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে তা প্রদান করব।” ❃ একাদশী বললেন, ━ “হে দেবেশ! ত্রিভুবনের সর্বত্র আপনার কৃপায় সর্ববিঘ্ননাশিনী ও সর্বদায়িনী রূপে যেন পরম পুজ্য হতে পারি, এ বিধান করুন। আপনার প্রতি ভক্তিবশত: যারা শ্রদ্ধাসহকারে আমার ব্রত-উপবাস করবে, তাদের সর্বসিদ্ধি লাভ হবে এই বর প্রদান করুন।” ❃ ভগবান শ্রীবিষ্ণু প্রসন্ন হয়ে বললেন, ━ “হে কল্যাণী! তাই হোক। ‘উৎপন্না’ নামে প্রসিদ্ধ তোমার ব্রত পালনকারীর সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তুমি তাদের সকল মনোবাসনা পূর্ণ করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তোমাকে আমার শক্তি বলে মনে করি। তাই তোমার ব্রত পালনকারী সকলে আমারই পূজা করবে। এর ফলে তারা মুক্তি লাভ করবে। তুমি হরিপ্রিয়া নামে জগতে বিখ্যাত হবে। তুমি ব্রতপালনকারীর শত্রূবিনাশ, পরমগতি দান এবং সর্বসিদ্ধি প্রদান করতে সমর্থ হবে।” ❃ ভগবান বিষ্ণু এইভাবে ‘উৎপন্না’ একাদশীকে বরদান করে অন্তর্হিত হলেন। সমস্ত ব্রতকারী দিবারাত্রি ভক্তিপরায়ণ হয়ে এই উৎপন্না একদশীর উৎপত্তির কথা শ্রবণ-কীর্তন করলে শ্রীহরির আশীর্বাদ লাভে ধন্য হবেন। 🌸 জয় উৎপন্না একাদশী 🌸 🌸 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ 🌸 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─ ✸ শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান✸ ভক্তগণ এই হরিবাসর তিথিতে শ্রীভগবানের নাম, রূপ, গুণ, লীলা ও পরিকরাদি স্মরণ- কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি অহর্নিশ সময় পালন করিয়া দিনটি অতিবাহিত করেন। তাই সাধু -গুরু- বৈষ্ণবগণের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পূজা- অর্চনাদি, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শ্রীহরিনাম- সংকীর্তন ও শ্রীভগবৎ কথা আলোচনার মধ্যে থাকিয়া শ্রীহরি বাসর পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই সকল পালন করিলে হৃদয়ের পাপ রাশি নষ্ট হয়, ভগবৎ চরণে স্থান লাভ ঘটে। ✸ প্রনিপাত (প্রনাম)✸ ✸ সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না। ✸ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে। ✸ শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় …. ✸ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন: হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে । হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ! ► আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী✤✸ উৎপন্না একাদশী ব্রত কথা ✸✤
◼️ অসুর মুর ও দেবী উৎপন্নার কাহিনী ◼️
===========================
=================
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)