এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করব কুরুক্ষেত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ১০টি প্রতিজ্ঞা মানুষের মুক্তির উদ্দেশ্যে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভগবানের মুখ নিঃসৃত প্রতিজ্ঞা আমাদের মতো মূর্খ মানুষদের উদ্ধারের জন্য, সুতরাং আমাদের বিনা দ্বিধায়, বিনা সন্দেহে তা অনুসরন করা উচিত। জানবেন তাতে আমাদেরই মুক্তি, ভগবানের নয়!
► আরও পড়ুন: ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ১০টি প্রতিজ্ঞা মানুষের মুক্তির উদ্দেশ্যে
► আরও পড়ুন: ৩৫টি মহাভারতের রহস্যময় অজানা তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বাণী ||ইসকন
► আরও পড়ুন: দেবতারা কেন স্বর্গে থাকেন আর দানবরা কেন পাতালে থাকেন ?
► আরও পড়ুন: মঙ্গলাচরণ ইসকন ( Iskcon Mangalacharan in Bengali)
► আরও পড়ুন: Shri Narasimha Kavacham Iskcon -শ্রীনৃসিংহ কবচম্, স্তব, নাম
মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণের প্রথম প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ৪/ শ্লোক ৯ –
জন্ম কর্ম চ মে দিব্যম্ এবম্ যঃ বেত্তি তত্ত্বতঃ ৷
ত্যত্ত্বা দেহম্ পুনঃ জন্ম ন এতি মাম্ এতি সঃ অর্জুন ৷৷
জন্ম — জন্ম; কর্ম — কর্ম; চ — এবং; মে — আমার; দিব্যম্ — দিব্য; এবম্ — এভাবে; যঃ — যিনি; বেত্তি –– জানেন; তত্ত্বতঃ —যথার্থভাবে; ত্যত্ত্বা — ত্যাগ করে; দেহম্ — বর্তমান দেহ; পুনঃ — পুনরায়; জন্ম — জন্ম; ন — না; এতি — প্রাপ্ত হন; মাম্ — আমাকে; এতি — প্রাপ্ত হন; সঃ — তিনি; অর্জুন — হে অর্জুন।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন “হে অর্জুন, যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম ও কর্ম যথাযথভাবে জানেন, তাঁকে দেহত্যাগ করার পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয় না, তিনি আমার নিত্যধাম প্রাপ্ত হন।”
তাৎপর্যঃ ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৩৩) বলা হয়েছে, ভগবানের রূপ অনন্ত, ভগবানের অবতার অনন্তঅদ্বৈতমচ্যুতমনাদিমনন্তরূপম্। ভগবানের রূপ অনন্ত হলেও তিনি এক এবং অদ্বিতীয় পরমেশ্বর ভগবান। এই সত্যকে সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে বুঝতে হবে, যদিও জড় জ্ঞানী ও পণ্ডিতদের কাছে এই পরম সত্য একদমই বোধগম্য নয়। বেদে (পুরুষবোধিনী উপনিষদ) বলা হয়েছে—
একো দেবো নিত্যলীলানুরক্তো ভক্তব্যাপী হৃদ্যন্তরাত্মা।
“এক ও অদ্বিতীয় ভগবান নানা দিব্যরূপে তাঁর শুদ্ধ ভক্তদের সঙ্গে লীলা করতে নিত্য অনুরক্ত।” বেদের এই উক্তিকে ভগবান নিজেই গীতার এই শ্লোকে প্রতিপন্ন করেছেন। যিনি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে বেদের এই কথাকে, ভগবানের এই কথাকে সত্য বলে গ্রহণ করেন এবং দার্শনিক জল্পনাকল্পনার মাধ্যমে কালক্ষয় করেন না, তিনি মুক্তির সর্বোচ্চ স্তর লাভ করেন।
যিনি বুঝতে পেরেছেন, শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর অথবা যিনি ভগবানকে বলতে পারেন, “তুমিই সেই পরব্রহ্ম, স্বয়ং ভগবান” — সুনিশ্চিতভাবে তৎক্ষণাৎ মুক্তিপ্রাপ্ত হন এবং তাঁর জন্য ভগবানের চিন্ময় সাহচর্য লাভ অবশ্যম্ভাবী। অর্থাৎ ভগবানের এই রকম একনিষ্ঠ ভক্তই পরমার্থলাভ করেন।
আবার বেদে (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ) বলা হয়েছে—
তমেব বিদিত্বাতি মৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেঽয়নায়।
“পরমেশ্বর ভগবানকে জানবার ফলেই জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং তা লাভ করার অন্য কোনও পথ নেই।” (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/৮)।
শ্রীকৃষ্ণের দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ৪/ শ্লোক ১১ –
যে যথা মাম্ প্রপদ্যন্তে তান্ তথা এব ভজামি অহম্ ৷
মম বর্ত্ম অনুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ৷৷
যে — যারা; যথা — যেভাবে; মাম্ — আমাকে; প্রপদ্যন্তে — আত্মসমর্পণ করে; তান্ — তাদের; তথা — সেভাবে; এব — অবশ্যই; ভজামি — পুরস্কৃত করি; অহম্—আমি; মম — আমার; বর্ত্ম — পথ; অনুবর্তন্তে — অনুসরণ করে; মনুষ্যাঃ — সমস্ত মানুষ; পার্থ — হে পৃথাপুত্র; সর্বশঃ — সর্বতোভাবে।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “যারা যেভাবে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে, আমি তাদের সেভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। হে পাৰ্থ, সকলেই সর্বতোভাবে আমার পথ অনুসরণ করে।”
তাৎপর্যঃ শ্রীমদ্ভাগবতে (২/৩/১০) বলা হয়েছে —
“সব রকম কামনা থেকে মুক্ত ভক্তই হোক অথবা কামনাবিশিষ্ট সকাম কর্মীই হোক বা মোক্ষকামী যোগীই হোক, সকলেরই কর্তব্য হচ্ছে চরম সিদ্ধির জন্য ভক্তিযোগের দ্বারা ভগবানের আরাধনা করা, যা অন্তিমে কৃষ্ণভাবনায় পর্যবসিত হবে।”
শ্রীকৃষ্ণের তৃতীয় প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ৮/ শ্লোক ৭ –
তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু মাম্ অনুস্মর যুধ্য চ ৷
ময়ি অর্পিত মনঃ বুদ্ধিঃ মাম্ এব এষ্যসি অসংশয়ঃ ৷৷
তস্মাৎ — অতএব; সর্বেষু — সব; কালেষু — সময়ে; মাম্ — আমাকে; অনুস্মর — স্মরণ করে; যুধ্য — যুদ্ধ কর; চ — ও; ময়ি — আমাতে; অর্পিত — সমর্পিত; মনঃ — মন; বুদ্ধিঃ — বুদ্ধি; মাম্ — আমাকে; এব — অবশ্যই; এষ্যসি — পাবে; অসংশয়ঃ —নিঃসন্দেহে।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “অতএব হে অর্জুন, সর্বদা আমাকে স্মরণ করে তোমার স্বভাববিহিত যুদ্ধ কর। এভাবে আমাতে তোমার মন ও বুদ্ধি অর্পণ করে নিঃসন্দেহে তুমি আমাকেই লাভ করবে।”
তাৎপর্যঃ ভগবান অর্জুনের মধ্য দিয়ে আমাদের মতো জড়-জাগতিক কার্যকলাপে নিয়োজিত প্রতিটি মানুষের উদ্দেশ্যে বলছেন মানুষকে তার কর্তব্যকর্ম পরিত্যাগ না করে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার মাধ্যমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করতে হবে। তার ফলে সে জড়-জাগতিক কলুষতা থেকে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে তার মন ও বুদ্ধিকে নিয়োজিত করতে পারে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামকীর্তন করার ফলে সে নিঃসন্দেহে পরম ধাম কৃষ্ণলোকে উত্তীর্ণ হবে।
শ্রীকৃষ্ণের চতুর্থ প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ৮/ শ্লোক ৮ –
অভ্যাস যোগযুক্তেন চেতসা ন অন্যগামিনা ৷
পরমম্ পুরুষম্ দিব্যম্ যাতি পার্থ অনুচিন্তয়ন্ ৷৷
অভ্যাস — অভ্যাস; যোগযুক্তেন — যোগে যুক্ত হয়ে; চেতসা — মন ও বুদ্ধির দ্বারা; ন অন্যগামিনা — বিক্ষিপ্ত না হয়ে; পরমম্ — পরম; পুরুষম্ — পুরুষকে; দিব্যম্ — দিব্য; যাতি — প্রাপ্ত হন; পার্থ — হে পৃথাপুত্র; অনুচিন্তয়ন্ — অনুক্ষণ চিন্তা করে।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “হে পার্থ, অভ্যাস যোগে যুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে যিনি অনুক্ষণ পরম পুরুষের চিন্তা করেন, তিনি অবশ্যই তাঁকে প্রাপ্ত হবেন।”
তাৎপর্যঃ হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার মাধ্যমে মনকলুষমুক্ত হয়ে পবিত্র হয় এবং শ্রীকৃষ্ণের স্মৃতি পুনর্জাগরিত হয়। পরমেশ্বর ভগবানের নাম সমন্বিত এই দিব্য শব্দতরঙ্গের শ্রবণ ও কীর্তন নিয়মিত অনুশীলন করার মাধ্যমে কর্ণ, জিহ্বা ও মন ভগবানের সেবায় নিয়োজিত হয়। মন চঞ্চল, তাই তাকে জোর করে শ্রীকৃষ্ণের চিন্তায় নিয়োজিত করতে হয়। ধ্যানের এই পন্থা অনুশীলন করা অত্যন্ত সহজ এবং তা পরমেশ্বর ভগবানকে লাভ করতে সাহায্য করে। এই সম্বন্ধে শুঁয়াপোকার উদাহরণ তুলে ধরা যাক, যে সর্বক্ষণ প্রজাপতির চিন্তায় মগ্ন থাকার ফলে সেই জীবনেই প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়। সেই রকম আমরাও যদি সর্বক্ষণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চিন্তা করি, তবে আমরা নিঃসন্দেহে এই জীবনের শেষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতো চিন্ময় দেহপ্রাপ্ত হবে।
পুরুষম্ শব্দটির অর্থ ভোক্তা। সমস্ত জীবেরা যদিও ভগবানের তটস্থা শক্তির অন্তর্গত, কিন্তু তারা জড় কলুষের দ্বারা আচ্ছন্ন। তারা নিজেদের ভোক্তা বলে মনে করে, কিন্তু তারা কখনই পরম ভোক্তা নয়। এখানে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে যে, পরমেশ্বর ভগবানই পরম ভোক্তা।
শ্রীকৃষ্ণের পঞ্চম প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ৯/ শ্লোক ৩৪ –
মন্মনাঃ ভব মৎ ভক্তঃ মৎ যাজী মাম্ নমস্কুরু ৷
মামেব এষ্যসি যুত্ত্বৈবম্ আত্মানম্ মৎপরায়ণঃ ৷৷
মন্মনাঃ — সর্বদা আমার চিন্তায় বিভোর; ভব— হও; মৎ — আমার; ভক্তঃ — ভক্ত; মৎ — আমার; যাজী — পূজাপরায়ণ; মাম্ — আমাকে; নমস্কুরু — নমস্কার কর; মাম্ — আমাকে; এব — সম্পূর্ণরূপে; এষ্যসি — প্রাপ্ত হবে; যুত্ত্বৈবম্ — এভাবে অভিনিবিষ্ট হয়ে; আত্মানম্ – তোমার আত্মা; মৎপরায়ণঃ— আমাতে উৎসর্গীকৃত হয়ে।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন “তোমার মনকে আমার ভাবনায় নিযুক্ত কর, আমার ভক্ত হও, আমার পূজা কর এবং আমাকে প্রণাম কর। এভাবে আমাতে উৎসর্গীকৃত হয়ে সম্পূর্ণরূপে আমাতে অভিনিবিষ্ট হলে নিঃসন্দেহে তুমি আমাকে লাভ করবে।”
শ্রীকৃষ্ণের ষষ্ঠ প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ১০/ শ্লোক ১০ –
তেষাম্ সততযুক্তানাম্ ভজতাম্ প্রীতিপূর্বকম্ ৷
দদামি বুদ্ধিযোগম্ তম্ যেন মাম্ উপযান্তি তে ৷৷
তেষাম্ – তাঁদের; সততযুক্তানাম্ – নিত্যযুক্ত; ভজতাম্ – ভক্তিযুক্ত সেবাপরায়ণ হয়ে; প্রীতিপূর্বকম্— প্রীতিপূর্বক; দদামি — দান করি; বুদ্ধিযোগম্—বুদ্ধিযোগ; তম্— সেই; যেন—যার দ্বারা; মাম্—আমাকে; উপযান্তি—প্রাপ্ত হন; তে—তাঁরা।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “যাঁরা ভক্তিযুক্ত হয়ে প্রীতিপূর্বক আমার সেবায় নিত্যযুক্ত থাকেন, আমি তাঁদের শুদ্ধ জ্ঞানজনিত বুদ্ধিযোগ দান করি, যার দ্বারা তাঁরা আমার কাছে ফিরে আসতে পারেন।”
তাৎপর্যঃ এই শ্লোকে বুদ্ধিযোগম্ কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বুদ্ধিযোগের অর্থ কৃষ্ণভাবনাময় কর্ম। সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিবৃত্তি। বুদ্ধির অর্থ বোধশক্তি এবং যোগের অর্থ অতীন্দ্রিয় কার্যকলাপ বা যোগারূঢ়।
কেউ যখন মানবজীবনের লক্ষ্য সম্বন্ধে অবগত হওয়া সত্ত্বেও কর্মফলভোগের প্রতি আসক্ত থাকে, তখন সেই স্তরে সাধিত কর্মকে বলা হয় কর্মযোগ। কেউ যখন শ্রীকৃষ্ণকে পরম লক্ষ্যরূপে জানতে পারে এবং শ্রীকৃষ্ণকে জানবার জন্য মনোধর্মপ্রসূত জ্ঞানের আশ্রয়গ্রহণ করে তৃপ্ত হয়, তখন তাকে বলা হয় জ্ঞানযোগ। আর যখন পরম লক্ষ্য সম্বন্ধে অবগত হয়ে কৃষ্ণভাবনাময় ও ভক্তিযুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা হয়, তখন তাকে বলা হয় ভক্তিযোগ বা বুদ্ধিযোগ এবং সেটিই যোগের পরম পূর্ণতা। যোগের এই পূর্ণতাই জীবনের সর্বোচ্চ সিদ্ধির স্তর।
শ্রীকৃষ্ণের সপ্তম প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ১১/ শ্লোক ৫৫ –
মৎকর্মকৃৎ মৎপরমঃ মদ্ভক্তঃ সঙ্গবর্জিতঃ ৷
নির্বৈরঃ সর্বভূতেষু যঃ সঃ মাম্ এতি পাণ্ডব ৷৷
মৎকর্মকৃৎ — আমার কর্মে যুক্ত; মৎপরমঃ — আমাকে পরমেশ্বর জ্ঞান করেন; মদ্ভক্তঃ — আমাতে ভক্তিযুক্ত; সঙ্গবর্জিতঃ — জড় বিষয়ে আসক্তিরহিত; নির্বেরঃ — শত্রুভাবরহিত; সর্বভূতেষু — সর্ব জীবের প্রতি; যঃ — যিনি; সঃ — তিনি; মাম্ — আমাকে; এতি—লাভ করেন; পাণ্ডব — হে পাণ্ডুপুত্র।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “হে পাণ্ডব, যিনি ভক্তিযুক্ত হয়ে আমার সেবা করেন, আমার প্রতি নিষ্ঠাপরায়ণ, আমার ভক্ত, জড় বিষয়ে আসক্তিরহিত এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি শত্রুভাবরহিত, তিনি অবশ্যই আমাকে লাভ করেন।”
তাৎপর্যঃ এই শ্লোকটিকে ভগবদ্গীতার নির্যাস বলে মনে করা হয়। ভগবদ্গীতার উদ্দেশ্য হচ্ছে কিভাবে সমস্ত বদ্ধজীবেরা দিব্যজীবন লাভ করতে পারি এবং ভগবানের সঙ্গে আমাদের নিত্যসম্বন্ধ হৃদয়ঙ্গম করতে পারি, তা প্রদর্শন করা এবং কিভাবে আমরা ভগবানের নিত্যধামে তাঁর কাছে ফিরে যেতে পারি, সেই সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া। আমাদের সমস্ত শক্তি সর্বতোভাবে কৃষ্ণভাবনাময় কার্যকলাপে নিয়োজিত করা উচিত। ভক্তিরসামৃতসিন্ধুতে (১/২/২৫৫) বলা হয়েছে—
অনাসক্তস্য বিষয়ান্ যথার্হমুপযুঞ্জতঃ ।
নির্বন্ধঃ কৃষ্ণসম্বন্ধে যুক্তম্ বৈরাগ্যমুচ্যতে ৷৷
অর্থাৎ, শ্রীকৃষ্ণের সম্বন্ধযুক্ত ছাড়া অন্য কোন রকম কাজই করা উচিত নয়। তাঁর সম্বন্ধযুক্ত কাজকে বলা হয় কৃষ্ণকর্ম। গৃহস্থ আমরা নানা রকমের কাজকর্মে লিপ্ত হতে পারি, কিন্তু তার ফল ভোগ করার প্রতি আমাদের আসক্ত হওয়া উচিত নয়; আমাদের সমস্ত কর্মের ফল ভগবান শ্রীকৃষ্ণকেই অর্পণ করা উচিত। যেমন, কোন ব্যবসায়ীকে শ্রীকৃষ্ণের জন্য ব্যবসা করতে হবে। অর্থাৎ, মনে রাখতে হবে শ্রীকৃষ্ণই সেই ব্যবসার মালিক এবং সেই ব্যবসার সমস্ত লাভের ভোক্তা হলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই ব্যবসায়ী তাঁর লভ্যাংশ থেকে কিছু অংশ শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে মন্দিরে দান করতে পারেন, সাধ্যমতো ভক্তের জন্য প্রসাদ বিতরণ করতে পারেন। এটিই শ্রীকৃষ্ণের জন্য কর্ম।
আবার, কেউ নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য বিলাসবহুল বাড়ি না তৈরি করে কিংবা আরামদায়ক গাড়ি না কিনে তিনি শ্রীকৃষ্ণের জন্য সুন্দর একটি মন্দির তৈরি করতে পারেন। তিনি সেই মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের শ্রীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন এবং শ্রীবিগ্রহের সেবাপূজার আয়োজন করতে পারেন, যে বিষয়ে ভগবদ্ভক্তি সংক্রান্ত প্রামাণিক গ্রন্থাবলীতে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই সমস্তই কৃষ্ণকর্ম।
কর্মফলের প্রতি আসক্ত না হয়ে শ্রীকৃষ্ণকে সেই ফল অর্পণ করা উচিত। সব কিছু শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ করে ভগবানের প্রসাদরূপে তা গ্রহণ করা উচিত। কেউ যদি শ্রীকৃষ্ণের জন্য একটি অট্টালিকা নির্মাণ করে দেন এবং সেখানে শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ স্থাপন করেন, তাঁর সেখানে বসবাস করতে কোন বাধা নেই; তবে সেটিকে শ্রীকৃষ্ণের বাড়ি বলেই জানতে হবে। সেটিই কৃষ্ণভাবনামৃত। কেউ যদি শ্রীকৃষ্ণের মন্দির নির্মাণ করতে না পারেন, তা হলে তিনি শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরে নিজেকে কোনও সেবার কাজে নিযুক্ত করতে পারেন; সেটিও কৃষ্ণকর্ম।
পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ম্। তিনি বলেছেন যে, কেউ যদি পত্র, পুষ্প, ফল বা একটু জল ভক্তি সহকারে তাঁকে অর্পণ করেন, তা হলে তিনি প্রীত হন। এই ‘পত্র’ বলতে তুলসীপত্রেরই উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং, আমরা তুলসীবৃক্ষ রোপণ করতে পারি এবং তাতে জল দিতে পারি। এভাবেই অত্যন্ত দরিদ্র মানুষও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত হতে পারে। এগুলি শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত হবার কয়েকটি দৃষ্টান্ত।
সঙ্গবর্জিতঃ কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কৃষ্ণবিমুখ মানুষদের সঙ্গত্যাগ করা উচিত। ভগবত বিদ্বেষী নাস্তিকেরাই কেবল কৃষ্ণবিমুখ নয়, যারা সকাম কর্ম ও জল্পনাকল্পনাপ্রসূত জ্ঞানের প্রতি আসক্ত, তারাও কৃষ্ণবিমুখ। যখন কেউ এই প্রকার অবাঞ্ছিত সঙ্গ ও জড়জাগতিক বাসনার কলুষ থেকে মুক্ত হন, তখন তিনি অনুকূলভাবে কৃষ্ণতত্ত্ববিজ্ঞান অনুশীলন করেন। তাকেই বলা হয় শুদ্ধ ভক্তি।
আনুকূল্যস্য সঙ্কল্পঃ প্রাতিকূল্যস্য বর্জনম্। (হরিভক্তিবিলাস ১১/৬৭৬)
অর্থাৎ, শ্রীকৃষ্ণের কথা চিন্তা করতে হবে, কৃষ্ণসেবার অনুকূল বিষয়ে সঙ্কল্প করতে হবে এবং কৃষ্ণসেবার প্রতিকূল বিষয় বর্জন করতে হবে।
শ্রীকৃষ্ণের অষ্টম প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ১২/ শ্লোক ৮ –
ময়ি এব মনঃ আধৎস্ব ময়ি বুদ্ধিম্ নিবেশয় ৷
নিবসিষ্যসি ময়ি এব অতঃ ঊর্ধ্বম্ ন সংশয়ঃ ৷৷
ময়ি — আমাতে; এব — অবশ্যই; মনঃ — মন; আধৎস্ব — স্থির কর; ময়ি — আমাতে; বুদ্ধিম্ — বুদ্ধি; নিবেশয় — অর্পণ কর; নিবসিষ্যসি — বাস করবে; ময়ি — আমার নিকটে; এব — অবশ্যই; অতঃ ঊর্ধ্বম্ — তার ফলে; ন — নেই; সংশয়ঃ — সন্দেহ।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “অতএব আমাতেই তুমি তোমার মন সমাহিত কর এবং আমাতেই সমস্ত বুদ্ধি অর্পণ কর। তার ফলে নিশ্চয়ই আমাকে প্রাপ্ত হবে, সে সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই।”
তাৎপর্যঃ যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্তিযুক্ত সেবায় রত, তিনি ভগবানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত হয়ে জীবনধারণ করেন। যে ভক্ত জড়জাগতিক মোহে আচ্ছন্ন নন – তাঁর জীবন কৃষ্ণকেন্দ্রিক। ভগবানের নাম ও স্বয়ং ভগবান আলাদা নয়; তাই ভক্ত যখন হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তি ভক্তের জিহ্বায় অবস্থান করেন। ভক্ত যখন শ্রীকৃষ্ণকে ভোগ নিবেদন করেন, শ্রীকৃষ্ণ তখন সেই ভোগ সরাসরিভাবে গ্রহণ করেন এবং শ্রীকৃষ্ণের সেই উচ্ছিষ্ট প্রসাদ খেয়ে ভক্ত কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে ওঠেন। সেটি যে কি করে সম্ভব হয়, ভগবানের সেবায় ব্রতী না হওয়া পর্যন্ত তা বুঝতে পারা যায় না, যদিও ভগবদ্গীতা ও অন্যান্য বৈদিক শাস্ত্রে এই পদ্ধতির বর্ণনা করা হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণের নবম প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ১৮/ শ্লোক ৬৫ –
মন্মনাঃ ভব মদ্ভক্তঃ মদ্যাজী মাম্ নমস্কুরু ৷
মাম্ এব এষ্যসি সত্যম্ তে প্রতিজানে প্রিয়ঃ অসি মে ৷৷
মন্মনাঃ — মগতচিত্ত; ভব — হও; মদ্ভক্তঃ — আমার ভক্ত; মদ্যাজী — আমার পূজক; মাম্ — আমাকে; নমস্কুরু — নমস্কার কর; মাম্ — আমাকে; এব — অবশ্যই; এষ্যসি — প্রাপ্ত হবে; সত্যম্ — সত্যই; তে — তোমার কাছে; প্রতিজানে — প্রতিজ্ঞা করছি; প্রিয়ঃ —প্রিয়; অসি — তুমি হও; মে — আমার।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “হে অর্জুন, যেহেতু তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয় তাই আমি তোমার কাছে সত্যি প্রতিজ্ঞা করছি, তুমি সর্বদা আমার স্মরণ কর, আমার ভক্ত হও, আমার পূজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তা হলে তুমি আমাকে অবশ্যই প্রাপ্ত হবে।”
তাৎপর্যঃ তত্ত্বজ্ঞানের মূল কথাটি হল শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্ত হওয়া এবং সর্বদাই তাঁর চিন্তা করে তাঁর জন্য কর্মসাধন করা। জীবনকে এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত, যাতে সর্বক্ষণ শ্রীকৃষ্ণের কথা চিন্তা করা যায়। যিনি এভাবে শুদ্ধ কৃষ্ণভাবনা লাভ করেছেন, তিনি অবশ্যই শ্রীকৃষ্ণের ধামে ফিরে যাবেন; সেখানে তিনি শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখবর্তী হয়ে তাঁর সঙ্গলাভ করতে পারবেন।
তত্ত্বজ্ঞানের এই গূঢ়তম অংশটি অর্জুনকে বলেছেন, কারণ তিনি শ্রীকৃষ্ণের অতি প্রিয় বন্ধু। অর্জুনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাধারন মানুষেরা যাতে শ্রীকৃষ্ণের পরমবন্ধু হতে পারেন এবং অর্জুনের মতো একইভাবে সার্থকতা অর্জন করতে পারেন।
শ্রীকৃষ্ণের দশম প্রতিজ্ঞা
শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ১৮/ শ্লোক ৬৬ —
সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মাম্ একম্ শরণম্ ব্রজ।
অহম্ ত্বাম্ সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ৷৷
সর্বধর্মান্ — সর্বপ্রকার ধর্ম; পরিত্যজ্য — পরিত্যাগ করে; মাম্ — আমাকে; একম্ — কেবল ; শরণম্ — শরণাগত; ব্রজ — হও; অহম্ — আমি; ত্বাম্—তোমাকে; সর্ব—সমস্ত; পাপেভ্যঃ—পাপ থেকে; মোক্ষয়িষ্যামিমুক্ত করব; মা- -করো না; শুচঃ—শোক। –
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “সর্বপ্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। তুমি শোক করো না।“
তাৎপর্যঃ ভগবান নানা রকম জ্ঞানের এবং ধর্মের বর্ণনা করেছেন -ব্রহ্মজ্ঞান, পরমাত্মার জ্ঞান, বর্ণাশ্রমের জ্ঞান, সন্ন্যাস আশ্রমের জ্ঞান, বৈরাগ্যের জ্ঞান, মন ও ইন্দ্রিয়ের দমনের জ্ঞান, ধ্যান ইত্যাদি। এখন, ভগবদ্গীতার সারাংশে ভগবান বলছেন যে, অর্জুনের কাছে বর্ণিত সমস্ত ধর্ম তাঁর পরিত্যাগ করা উচিত; তাঁর উচিত কেবল শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হওয়া। সেই শরণাগতি তাঁকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করবে, কেননা ভগবান নিজেই তাঁকে রক্ষা করবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের মহিমা অনন্য এবং খুবই শক্তিশালী, কেননা পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এবং হরিনাম এক ও অভিন্ন, কোন পার্থক্য নেই….পরম আদরে এবং অনন্য ভক্তি সহকারে জপ করার ফলেই আমরা চিন্ময় আনন্দ অনুভব করতে পারব.…
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।
জেনে রেখো কিছু কথা, কৃষ্ণ বিনা জীবন বৃথা
🌿পৃথিবীর কঠিন কাজ গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে —- নিজের উপর সন্তুষ্ট থাকা!
🌿যতক্ষণ তুমি নিজের উপর সন্তুষ্ট থাকবে—- ততক্ষণ সবই ঠিক!
🌿 কিন্তু যখন তুমি অন্যদের ছোট করে দেখবে—-তখন এই চিন্তাই তোমার ভিতরে অহংকারের জন্ম দেবে!
🌿এই অহংকারই —- তোমার বিনাশের জন্য যথেষ্ট!
🌿তাই অন্যের সাথে তুলনা না করে—- নিজের যা আছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করো! তাহলেই অহংকার, লোভ, হিংসা থেকে দূরে থাকতে পারবে!
এই কাজটি জড় জগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এবং জড় বস্তুতে আসক্ত একজন ব্যাক্তির পক্ষে এগুলো থেকে মুক্ত হওয়া এত সহজ নয়। এর জন্য নিয়মিত অধ্যাবসায়ের সাথে করতে হবে কৃষ্ণ ভজন। কৃষ্ণ ভজন চাইলেই মন থকে পারা সম্ভব নয়, এর জন্য চাই সব থেকে বড় জিনিষ বিশ্বাস আর ভক্তি।
কৃষ্ণ ভজনের জন্য আমাদের কী দরকার ??
নারদ মুনি যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হে প্রভু, আপনি কৌরব পক্ষে না গিয়ে পান্ডব পক্ষে গেলেন কেন?’
এর উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন- ‘এর মূলে রয়েছে বিশ্বাস।’
নারদ মুনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন – ‘কৌরবদের কি বিশ্বাস ছিল না?’
উত্তরে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন- ‘কৌরবদের আমার উপর বিশ্বাস ছিল না।’ নারদ মুনি এর প্রমান চাইলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন- ‘তুমি দেখবে না শুনবে?’
নারদ বিনিত সুরে বললেন ‘দেখতে পেলে তো ভালোই হয়।’
তখন নারদ মুনিকে একটি সূচ দিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন এটা নিয়ে দূর্যোধনের কাছে গিয়ে বলো যে, ‘ভগবানের ইচ্ছায় এই সূচের মধ্যে দিয়ে একটা প্রকান্ড হাতি পারাপার হয়ে যায়!’ নারদ মুনি গিয়ে তাই বললেন কিন্তু দূর্যোধন বেশ গম্ভীরতার সঙ্গে শুনে হেসে উড়িয়ে দিলেন।
নারদ মুনি ফিরে এলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মজার ছলে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘কি হলো বিশ্বাস করেছে?’
নারদ মুনি উত্তরে বলল- ‘বিশ্বাস তো দূরের কথা! হাতে গদা ছিল মারেনি, বড়জোর বেঁচে গেছি!’
একইভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরের কাছে যেতে বললেন, সেইমতো একই কথা নারদ মুনি যুধিষ্ঠিরকে গিয়ে বলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাঠানো সন্দেশ বলে কথা! যুধিষ্ঠির তা মনোযোগ সহকারে শুনে অতি বিনীত স্বরে বললেন – ‘ এ এমন আশ্চর্যের কি আছে! আমার প্রভু স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যদি ইচ্ছা করেন সামান্য হাতি কেন, এই সূচের মধ্য দিয়ে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে কয়েকশত বার অনায়াসে পারাপার করাতে পারেন।’
নারদ মুনি ফিরে এসে বলল হে প্রভু, আপনি ঠিকই বলেছেন বিশ্বাস আর ভক্তিই সব।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পেতে হলে প্রয়োজন ভগবানের প্রতি ও তাঁর নামের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, সেই বিশ্বাস থেকে জন্মায় একনিষ্ঠ ভক্তি সেই একনিষ্ঠ ভক্তির সাথে কৃষ্ণ ভজন করা এবং নিজেকে ও নিজ কর্মফলকে প্রতিনিয়ত শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিঃশর্তভাবে সমার্পণ করা (ওম্ তত্ সৎ) ।
শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….
ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই কৃষ্ণনাম জপ করুন (১ মালা = ১০৮ বার, এভাবে কমপক্ষে ১৬মালা), তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।