ভক্তপ্রবর প্রহ্লাদ মহারাজ শ্রীনৃসিংহদেব (Shri Narasimha)-কে জানান “হে শ্রীহরি, লোকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও ভয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আপনার এই মঙ্গলময় নৃসিংহ-অবতার (Narasimha Avatar)-কে স্মরণ করবে।” শ্রীকৃষ্ণই আসুরিক নাস্তিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কাছে উগ্র-ভয়ংকর রূপে প্রকাশিত হন। অসুরেরা তাঁকে মৃত্যুরূপে দর্শন করেন। কিন্তু সেই নৃসিংহরূপ দেখে প্রহ্লাদের মতো ভক্তরা ভয় পান না। বরং অনাবিল স্নিগ্ধ আনন্দ অনুভব করেন। দৈনন্দিন জীবনে ভক্তেরা কোথাও বেরোবার সময় বা যানবাহনে চড়বার সময় শ্রীনৃসিংহ-বন্দনা (Shri Narasimha Stotra) করে থাকেন। ভগবানের পরম ভক্ত ও ভৃত্য প্রহ্লাদ মহারাজকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু বধ করতে উদ্যত হলে রাজসভাগৃহে এক তীব্র অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়। এমন শব্দ এর আগে কেউ কখনও শোনে নি। সেই শব্দ শুনে অন্যান্য অসুর নায়েকেরা ভয় পেয়ে যায়। সভার সবাই সেই শব্দের উৎপত্তি বুঝতে পারছিল না। যখন প্রহ্লাদ মহারাজ তাঁর পিতাকে বলেন ভগবান সর্বত্র বিরাজমান, এমনকি এই সভার প্রত্যেক স্তম্ভের মধ্যে বিরাজমান। হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত রাগে দম্ভে জিজ্ঞাসা করেন ” এখন তোমার ভগবান কোথায় রয়েছেন? তিনি কি এই স্তম্ভে রয়েছেন?” ভগবান অত্যন্ত কৃপালু ও ভক্তবৎসল। তাই ভক্তের কথার সত্যতা স্থাপনের জন্যে সেই স্তম্ভ থেকে বেরিয়ে আসেন ভগবান অর্ধ মানুষ ও অর্ধ সিংহের বিচিত্র রুপ ধরে। এতে ব্রহ্মাও আশ্বস্ত হলেন তাঁর প্রতিজ্ঞা ভগবান রক্ষা করেছেন যে, হিরণ্যকশিপু কোন মানুষ অথবা পশু বধ করতে পারবে না। বিশাল নৃসিংহরুপী ভগবানকে দেখার পরেও মূঢ় অসুর হিরণ্যকশিপু চিনতে পারলেন না, উল্টে গদা দিয়ে তীব্র আক্রমন করলেন। সেক্ষেত্রে ভগবান তাকে নিষ্কৃতি হওয়ার সুযোগ দেন। হিরণ্যকশিপু ভাবলেন ভগবান তাঁর শক্তিতে ভয় পেয়েছেন। তারপর সে খড়গ ও ঢাল নিয়ে তীব্রভাবে ভগবানকে আক্রমন করেন। এরপর বিশালদেহী নৃসিংহদেবজী তাকে চেপে ধরেন, তাতে ব্যাথিত হিরণ্যকশিপু আঘাতের চেষ্টায় হাত-পা ছুঁড়তে থাকেন। শেষমেশ ভগবান নৃসিংহদেব সভাগৃহের দ্বারদেশে তাঁর ঊরুতে অসুরকে রেখে ধারালো নখ দিয়ে উদরকে ছিন্নভিন্ন করেন। হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করার পর ভগবান শ্রী নৃসিংহ দেব নিজ সিংহাসনে বসলেন। তাঁর মুখ ও কেশর রক্তস্নাত হয়েছিল এবং সেই সঙ্গে অসুরের ক্ষুদ্রান্ত্র মালার মতো জড়িয়ে গিয়েছিল, ফলে ভগবানকে একদিকে অত্যন্ত সুন্দর দেখাচ্ছিল অন্যদিকে তাঁর বাক্রুদ্ধ ভঙ্গি, পূর্ণ তেজ ও ভয়ঙ্কর মুখমণ্ডল দেখে কেউ তার সামনে যাওয়ার সাহস পায়নি। ব্রহ্মা, রুদ্র, ইন্দ্র, ঋষি, বিদ্যাধর, নাগ, মনু, প্রজাপতি, গন্ধর্ব, চারণ, যক্ষ, কিমপুরুষ প্রভৃতি সবাই দূর থেকে তাঁর প্রশংসা করতে লাগলেন এবং স্বর্গ থেকে পুষ্প বৃষ্টি করতে লাগলেন। হিরণ্যকশিপুর ভয়ানক অবস্থা দেখে একই সাথে তারা খুব খুশি হল যে ভগবান রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপুকে খেলার মধ্যেই বধ করেছেন। ব্রহ্মা, রুদ্র, ও আদি দেবগণের প্রশংসা শুনেও ভগবানের ক্রোধ প্রশমিত হল না। বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় ব্রহ্মা লক্ষ্মীর কাছে প্রার্থনা করলেন যে গিয়ে ঈশ্বরের ক্রোধ প্রশমিত করুন। এমনকি লক্ষ্মীও ভগবানের এমন ভয়ানক রূপের সামনে যাওয়ার সাহস সঞ্চয় করতে পারেননি। তখন ব্রহ্মাজী শ্রী প্রহ্লাদ মহারাজকে কিছু করতে বললেন কারণ ভগবান শ্রী প্রহ্লাদ মহারাজকে রক্ষা করার জন্যই এমন বাক্রুদ্ধ রূপ ধারণ করেছিলেন। প্রহ্লাদজী অতি সরল ভঙ্গিতে সমস্ত দেবদেবীকে প্রণাম করলেন এবং ভগবান শ্রীনৃসিংহ দেবের সামনে গিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। ভগবানকে তাঁর প্রিয় ভক্তের কাছে প্রণাম করতে দেখে, বাৎসল্য প্রেমে পরিপূর্ণ হয়েছিলেন, তিনি প্রহ্লাদের মাথায় তাঁর দিব্য হাতের তালু রাখলেন। যার কারণে প্রহ্লাদ ব্রম্ভজ্ঞান লাভ করেন। তিনি ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন “জন্ম, ঐশ্বর্য, বিদ্যা, তপস্যা, যোগবল আদি কোন কিছুর দ্বারাই ভগবানের প্রসন্নতা বিধান করা যায় না৷ একমাত্র শুদ্ধ ভক্তির দ্বারাই ভগবানের প্রসন্নতা বিধান করা সম্ভব৷ না৷ ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে যে, কেবল ভক্তি দ্বারাই ভগবানকে জানা যায় (ভক্ত্যা মামভিজানাতি)৷ ভগবান যদি ভক্তের সেবায় প্রসন্ন না হন, তা হলে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন না (নাহং প্রকাশঃ সর্বস্য যোগমায়াসমাবৃতঃ)। এটিই সমস্ত শাস্ত্রের অভিমত৷ ভগবানের কারও প্রার্থনা ও সেবার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু ভক্ত যদি তাঁকে প্রার্থনা নিবেদন করেন, তা হলে ভক্তের মহা লাভ হয়৷ তাই, নিম্ন কুলে জন্ম অজ্ঞান ব্যক্তিরাও ঐকান্তিকভাবে ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা নিবেদন করতে পারেন, এবং ভগবান তা স্বীকার করেন৷ কেউ যখন ভগবানের প্রার্থনা করেন, তৎক্ষণাৎ তিনি ব্রহ্মভূত স্তরে অধিষ্ঠিত হন৷ ভগবান নৃসিংহদেব কেবল প্রহ্লাদ মহারাজ জীর মঙ্গলের জন্যই আবির্ভূত হননি, তিনি সমগ্র মানব-সমাজের কল্যাণের জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন৷ ভগবান নৃসিংহদেবের প্রচণ্ড রূপ অভক্তদের কাছে অত্যন্ত ভয়ানক বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ভক্তদের কাছে তিনি তাঁর অন্য রূপের মতোই স্নেহপরায়ণ৷ জড় জগতে বদ্ধ জীবন অত্যন্ত ভয়ঙ্কর; প্রকৃতপক্ষে ভক্ত অন্য কোন কিছুর ভয়ে ভীত নন৷ ভব-ভয়ের কারণ অহঙ্কার৷ তাই প্রতিটি জীবের জীবনের চরম লক্ষ্য হচ্ছে ভগবানের দাসের অনুদাস হওয়া৷ এই জগতে জীবের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার নিবৃত্তি কেবল ভগবানের কৃপার প্রভাবেই সম্ভব৷ তাই প্রতিটি জীবের কর্তব্য তথাকথিত জড় সুখের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে, সর্বতোভাবে ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের শরণাগত হওয়া৷ সেটিই হচ্ছে মানব-জীবনের উদ্দেশ্য৷ ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া মূর্খতা মাত্র৷ ভগবানের ভক্ত হওয়া বা অভক্ত হওয়া উচ্চ অথবা নিচকুলে জন্মগ্রহণের উপর নির্ভর করে না৷ তিনি ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবকে ক্রোধ ত্যাগ করতে বলেন কারন তাঁর পিতা মহা অসুর হিরণ্যকশিপু এখন নিহত হয়েছে। ঠিক যেমন সাধু ব্যক্তি কোনও সৰ্প অথবা বৃশ্চিক হত্যা করে আনন্দিত হন, তেমনি সমগ্র জগৎবাসী এই অসুরের মৃত্যুতে পরম সন্তোষ লাভ করেছেন। এখন তারা তাদের সুখ সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়েছে, এবং ভয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তারা সর্বদা আপনার এই মঙ্গলময় অবতারকে স্মরণ করবে।” ভগবান শ্রীনৃসিংহ খুশি হয়ে প্রহ্লাদ মহারাজকে বর চাইতে বললেন। প্রহ্লাদ মহারাজ বললেন- প্রভু! আমার কোন ইচ্ছা নেই, আমি কোন বর চাই না। ভগবান নৃসিংহ বললেন- প্রহ্লাদ! আমি তোমাকে কিছু দিতে চাই। অতএব, আমার ইচ্ছা পূরণের জন্য, একটি বর চাও। প্রহ্লাদ মহারাজ বললেন- হে ভগবান! আমাকে এমন বর দাও যে চাওয়ার ইচ্ছা আমার অন্তরে নেই। ভগবান হেসে বললেন- এটা ঠিক না। আমাকে কিছু বর জিজ্ঞাসা করুন। তখন শ্রী প্রহ্লাদ মহারাজ বললেন- যদি ভগবান তাঁকে বর দিতে চান, তা হলে তিনি যেন এই বর প্রদান করেন, যেন তাঁর হৃদয়ে কখনও জড় বাসনার উদয় না হয়। কাম অত্যন্ত অনিষ্টকর। তার উদয়ে ইন্দ্রিয়, মন, প্রাণ, আত্মা, ধর্ম, ধৈর্য, বুদ্ধি, লজ্জা, শ্রী, তেজ, স্মৃতি, সত্য— সব কিছুই বিনষ্ট হয়ে যায়। হৃদয়ে যখন আর কোন জড় বাসনা থাকে না, তখনই কেবল শুদ্ধ ভক্তিতে ভগবানের সেবা সম্পাদন করা যায়। প্রহ্লাদের ঐকান্তিক ভক্তিতে ভগবান অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছিলেন। প্রহ্লাদ ভগবানের কাছে কোন বর না চাইলেও ভগবান তাঁকে একটি বর প্রদান করেছিলেন—তিনি এই জগতে পূর্ণরূপে সুখী হবেন এবং তাঁর পরবর্তী জীবনে তিনি বৈকুণ্ঠলোকে নিবাস করবেন। ভগবান তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন যে, তিনি মন্বন্তর কাল পর্যন্ত এই জড় জগতের রাজা হবেন, এবং এই জড় জগতে থাকলেও তিনি ভগবানের মহিমা শ্রবণ করার সুযোগ পাবেন এবং নিষ্কাম ভক্তিযোগ অবলম্বনে ভগবানের সেবা সম্পাদন করে সর্বতোভাবে ভগবানের উপর নির্ভর করবেন। ভগবান প্রহ্লাদ মহারাজকে উপদেশ দিয়েছিলেন ভক্তিযোগের মাধ্যমে যজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে, কারণ সেটি রাজার কর্তব্য। শ্রী প্রহ্লাদ মহারাজ তা স্বীকার করে ভগবান নৃসিংহদেবকে বললেন ‘আমার বাবা আপনাকে আক্রমণ করেছেন। তাকে ক্ষমা করুন এবং পবিত্র করুন এবং তার প্রতি দয়া করুন।’ ভগবান বললেন- প্রহ্লাদ! তোমার বাবা আমাকে দেখেছেন, স্পর্শ করেছেন, তাতে কি তিনি শুদ্ধ হননি? যে বংশে তুমি জন্মেছ এই বংশ কি এখনও অপবিত্র রয়ে গেছে? প্রহ্লাদ ! ভক্তির প্রভাবে কেবল তোমার পিতাই লাভবান হননি, একই সাথে সেই বংশের একুশ জন্মের পিতা-মাতা রক্ষা পেয়েছেন, তারা ভগবানের অধিবাস পেয়েছেন। ভগবান প্রহ্লাদ মহারাজকে তাঁর পিতার ঔর্ধ্বদৈহিক কার্য সম্পাদন করার উপদেশও প্রদান করেছিলেন। এমনই কৃপা-ভগবান নৃসিংহ দেবের। উগ্রম্ বীরম্ মহাবিষ্ণুম্ জ্বলন্তম্ সর্বতোমুখম্ ৷ নৃসিংহম্ ভীষণম্ ভদ্রম্ মৃত্যোমৃত্যুম্ নমাম্যহম্ ৷৷ মহা অসুর হিরণ্যকশিপুর চার সুযোগ্য পুত্রের মধ্যে প্রহ্লাদ ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। সমস্ত দিব্য গুণ তাঁর মধ্যে ছিল কারণ তিনি ছিলেন ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত। প্রহ্লাদের গুণাবলী হলঃ ১! ব্রাহ্মণ গুণ সম্পন্ন, শম, (মন সংযত), দম (দশ ইন্দ্রিয়কে সর্বতোভাবে সংযতকরণ), তপ, শৌচ, ক্ষান্তি (সমস্ত জীবের প্রতি দয়ালু এবং সৌহার্দ্যপরায়ণ), সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য এ সবই তাঁর মধ্যে ছিল। ২! সৎ চরিত্র, তাঁর আচরণে কোনও দোষ পাওয়া যেত না। ৩! তিনি পরম সত্যকে জানতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, পরমসত্য পরমেশ্বর ভগবানকে তিনি সর্বদা দর্শনের যত্ন করতেন। ৪! সম্মানিত ব্যক্তিদের কাছে তিনি কৃত্যের মতো আচরণ করতেন, দরিদ্রদের প্রতি পিতার মতো বাৎসল্য প্রকাশ করতেন। সমান ব্যক্তিদের প্রতি ভায়ের মতো অনুরক্ত ছিলেন। গুরু ও জ্যেষ্ঠ গুরুভাইদের প্রতি ঈশ্বরতুল্য সম্মান করতেন। ৫! বিদ্যা, ঐশ্বর্য, সৌন্দর্য ও আভিজাত্য জনিত গর্ব থেকে প্রহ্লাদ সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ছিলেন। ৬! অসুর পরিবারে জন্ম নিয়েও আসুরিক না হয়ে শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত ছিলেন। ৭! চরম বিপদেও তিনি উদ্বিগ্ন হতেন না। ৮! প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বৈদিক সকাম কর্মে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। ৯! সমস্ত জড়বস্তুকে তিনি অর্থহীন মনে করতেন, তাই সমস্ত কামনা বাসনা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন। ১০! শৈশব থেকে শিশুসুলভ খেলাধুলার সামগ্রীর প্রতি উদাসীন ছিলেন। কেবল শ্রীকৃষ্ণ ভাবনায় মগ্ন থাকতেন। ১১! জগতের সহস্র সহস্র বিচিত্র সুখদুঃখের ঘটনা নিয়ে দুনিয়ার লোক নিমগ্ন হলেও প্রহ্লাদ সে সবেতে ভ্রূক্ষেপ করতেন না। তাঁর শ্রীকৃষ্ণ ভাবনাময় চিত্তে সেগুলি প্রভাব বিস্তার করত না। ১২! তিনি শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক আলিঙ্গিত হতেন। তাই বুঝতে পারতেন না কি বসেছেন, কি শুয়ে আছেন, কি ভোজন করছেন, কি জলপান করছেন, কি বেড়াচ্ছেন, কি কথা বলছেন, এ সমস্ত দৈহিক প্রয়োজনগুলি তাঁর আপনা-আপনি অনুষ্ঠিত হয়ে চলত। ১৩! শ্রীকৃষ্ণপ্রেমে বিহ্বল চিত্তে তিনি কখনও কাঁদতেন, কখনও হাসতেন, কখনও আনন্দ প্রকাশ করতেন, কখনও উচ্চস্বরে কীর্তন করতেন, কখনও ভগবানকে দর্শন করে পূর্ণ উৎকণ্ঠার বশে উচ্চস্বরে তাঁকে ডাকতেন, কখনও আনন্দে উদ্দণ্ড নৃত্য করতেন, কখনও শ্রীকৃষ্ণ ভাবনায়, তন্ময় হয়ে ভগবানের লীলার অনুকরণ করতেন। কখনও ভগবানের করকমলের ছোঁয়া পেয়ে আনন্দে মৌন থাকতেন, কখনও বা তাঁর শরীর রোমাঞ্চিত হত, কখনও বা কৃষ্ণপ্রেমে অর্ধনিমীলিত চোখে অশ্রুধারা ঝরে পড়ত। ভগবানের শুদ্ধভক্ত শ্রীনারদমুনির সঙ্গপ্রভাবে শিশু প্রহ্লাদের ভক্তি বৈশিষ্ট্য লাভ হয়েছে। তাই তিনি নিরন্তর ভগবানের পাদপদ্ম সেবায় যুক্ত হয়েছিলেন। প্রহ্লাদ মহারাজকে দর্শন করেই অসংখ্য লোক শুদ্ধ পবিত্র জীবনযাপন করতে আন্তরিক প্রেরণা লাভ করত। প্রহ্লাদ মহারাজকে দর্শন করেই লোকের দিব্য আনন্দ হত। জয় ভগবান শ্রী নৃসিংহদেব। জয় প্রহ্লাদ মহারাজ। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,** ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের বাৎসল্য প্রেম **
** প্রহ্লাদ মহারাজের মহান গুণাবলী **
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
** নৃসিংহ চতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য **
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে নৃসিংহ জয়ন্তী বা নৃসিংহ চতুর্দশী পালিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই তিথিতে ভগবান বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করার জন্য নৃসিংহের অবতার গ্রহণ করেছিলেন এবং হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করেন এবং তার একান্ত ভক্ত প্রহ্লাদকে এর সন্ত্রাস থেকে রক্ষা করেন। ভগবান বিষ্ণু নৃসিংহ অবতারে অর্ধেক সিংহ ও অর্ধেক মানুষের রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই ভগবানের এই রূপকে বলা হতো নৃসিংহ রূপ।
নৃসিংহ বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার। পুরাণ, উপনিষদ ও অন্যান্য প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে তার উল্লেখ রয়েছে। তিনি হিন্দুদের জনপ্রিয়তম দেবতাদের অন্যতম। সাধারণত দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের অন্যতম প্রতীক তিনি ৷ প্রাচীন মহাকাব্য অনুসারে এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে তার পূজা প্রচলিত রয়েছে। অতীতে শাসক ও যোদ্ধারা নৃসিংহের পূজা করতেন। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, নৃসিংহ মহারক্ষক, তিনি ভক্তকে তার প্রয়োজনের সময় সর্বদা রক্ষা করে থাকেন।
বৃহন্নারসিংহ পুরাণে ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব ভক্ত প্রহ্লাদকে বললেন —
বর্ষে বর্ষে তু কর্তব্যম্ মম সন্তুষ্টি কারণম্ ।
মহা গুহ্যমিদম্ শ্রেষ্ঠম্ মানবৈর্ভবভীরুভিঃ ॥
“প্রতি বছর আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে চতুর্দশী ব্রত কর্তব্য। জন্ম-মৃত্যুময় সংসার ভয়ে ভীত মানুষ এই পরম গোপনীয় ও শ্রেষ্ঠ ব্রত পালন করবে।” বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশীতে শ্রীনৃসিংহদেব আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাই এই তিথিতে ব্রতপালনপূর্বক তাঁর পূজা ও উৎসব করতে হয়।
শ্রীনৃসিংহদেব বললেন, আমার ব্রতদিন জেনেও যে ব্যক্তি লঙ্ঘন করে, চন্দ্র-সূর্য যতদিন থাকবে ততদিন নরক যন্ত্রণা ভোগ করবে। যদিও আমার ভক্তরা এই ব্রত করে থাকে তবুও প্রত্যেকের এই ব্রতে অধিকার আছে।
প্রহ্লাদ বললেন, হে ভগবান্! হে নৃসিংহরূপ! হে সকল দেবগণের আরাধ্য প্রভু আপনাকে প্রণাম জানাই। আমি জিজ্ঞাসা করছি, হে প্রভু, তোমার প্রতি আমার ভক্তি কিরূপে উৎপন্ন হল? কিরূপে আমি তোমার প্রিয় ভক্ত হলাম?
শ্রীনৃসিংহদেব বললেন, হে বুদ্ধিমান একান্ত মনে শোনো। প্রাচীন কল্পে তুমি ব্রাহ্মণ ছিলে, কিন্তু বেদপাঠ করনি। তোমার নাম ছিল বসুদেব এবং তুমি ছিলে বেশ্যাসক্ত। তোমার কোন সুকর্ম ছিল না, কেবল একটি মাত্র আমার ব্রত করেছিলে। সেই ব্রত প্রভাবে তোমার এরকম আমার প্রতি ভক্তি হয়েছে।
প্রহ্লাদ বললেন, হে নৃসিংহ! হে অচ্যুত! হে প্রভু! আমি কার পুত্র হয়ে কি করতাম? বেশ্যাসক্ত অবস্থায় কিভাবে তোমার ব্রত করলাম? দয়া করে বলুন।
শ্রীনৃসিংহদেব বললেন, পুরাকালে অবন্তীপুরে এক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ছিল। তার নাম ছিল বসুশর্মা। ধর্মপরায়ণ ও বৈদিক ক্রিয়া অনুষ্ঠানে তৎপর। তাঁর ভার্যা জগৎপ্রসিদ্ধা সুশীলা পতিব্রতা সদাচারিণী। তাদের পাঁচ পুত্র ছিল। চারজন ছিল সদাচারী, বিদ্বান, পিতৃভক্ত। কিন্তু কনিষ্ঠ পুত্রটি ছিল অসদাচারী, সর্বদা বেশ্যাসক্ত, সুরাপায়ী। সেই কনিষ্ঠ পুত্রটি ছিলে তুমি। নিত্য বেশ্যাগৃহেই তুমি বসবাস করতে।
এক বনমধ্যে তুমি ও সেই তোমার বান্ধবী বেড়াতে গিয়েছিলে। তোমরা মনে করেছিলে দিনটা বেশ ভালোই কাটবে। কিন্তু তোমাদের নিজেদের মধ্যে চরিত্র বিষয়ে বিশেষ রকমে কলহ বেধে যায়। তোমাদের মধ্যে মনোমালিন্যের কারণে মৌনভাবে তোমরা আলাদাভাবে একটি স্থানে এসে বসেছিলে। সেখানে তুমি অতি পুরানো ধ্বংসাবশেষ গৃহ নিদর্শন স্বরূপ কিছু ইট পাথর দেখেছিলে। সেই নির্জন স্থানে আলাদাভাবে উপবেশন করে তোমরা দুইজন ক্রন্দন করছিলে আপন আপনভাবে। সারাদিন তোমরা অনাহারী ছিলে, এমনকি জল পর্যন্ত পান করনি। সারারাতও তোমরা জাগরিত ছিলে।
ক্লান্ত শরীরে দুঃখিত অন্তরে মনোমালিন্য ভাবে তুমি সেখানে শুয়ে পড়ে প্রার্থনা করছিলে, “হে ভগবান, হে শ্রীহরি, এই জগতের কত লোক সুন্দর! আমার মা-বাবা কত সুন্দর ধর্মপ্রাণ। আমার ভাইয়েরা কত সুন্দর। তারা নিষ্ঠাবান, চরিত্রবান। কিন্তু আমি অধঃপতিত। আমি মহা মন্দমতি। আমি চরিত্রহীন। পথের পাগলের চেয়েও অধম। হে ভগবান, ভালো লোকেরা তোমার শরণাগত। আমি মূর্খ কারও শরণাগত নই। আমি অতি নিঃসঙ্গ। আমি বড় অসহায় অবস্থায় তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, হে ভগবান, আমাকে বিশুদ্ধ জীবন দান করো।” এভাবে তুমি ক্রন্দন করছিলে।
আর তোমার বান্ধবী, সেও একান্ত মনে প্রার্থনা করছিল, “হে ভগবান, আমি সমাজের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য স্তরের জীব। সভ্য সমাজ থেকে আমি বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন। এই জগতে অনেক নিষ্ঠাবতী সাধ্বী সুন্দরী নারী রয়েছে। আর, আমি মহাপাপী গণিকাবৃত্তি করেই জীবন নষ্ট করেছি। প্রতিদিনই কেবল পাপের বোঝা বাড়িয়েছি। নরকযাতনা কতই না এই পোড়া কপালে অপেক্ষা করছে। ভদ্র সমাজে কেউ কোনওদিন আমাকে তাকাতেও চায় না। আমিও এই জগতের কোনও পথ খুঁজে পাই না। হে পরম করুণাময় ভগবান, যদি তোমার অহৈতুকী কৃপাদৃষ্টি আমার প্রতি থাকে তবে দয়া করে আমার এই জীবন পরিবর্তন করে দাও!” এভাবে সে আকুল অন্তরে ক্রন্দন করতে লাগল।
শ্রীনৃসিংহদেব বললেন, হে প্রহ্লাদ, সেই স্থানটি ছিল আমার প্রাচীন মন্দির। সেই দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশী—আমার আবির্ভাবের দিন। তোমরা উপবাসী ছিলে, রাত্রি জাগরণ করছিলে, জীবনের কল্যাণ প্রার্থনা করছিলে। অর্থাৎ অজ্ঞাতসারেই তোমরা আমার পরম-মঙ্গলময় চতুর্দশী ব্রত পালন করেছিলে। সেই ব্রত প্রভাবে তুমি এ জন্মে আমার প্রিয় ভক্তরূপে জন্মগ্রহণ করেছ। আর সেই বেশ্যাও স্বর্গলোকে অপ্সরা জীবন লাভ করে ত্রিভুবনে সুখচারিনী হয়েছে।
হে প্রহ্লাদ! আমার ব্রতের প্রভাব শোনো
🚩 সৃষ্টিশক্তি লাভের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মা আমার এই চতুর্দশী ব্রত পালন করেছিলেন,
🚩 ত্রিপুরাসুরকে বধের উদ্দেশ্যে মহাদেব এই ব্রত করেছিলেন,
🚩 স্বর্গসুখ লাভের জন্যই দেবতারা চতুর্দশী ব্রত পালন করে থাকেন,
🚩 বেশ্যাও এই ব্রত প্রভাবে ত্রিলোকে সুখচারিনী হয়ে থাকেন।
🚩 যে সমস্ত মানুষ আমার এই ব্রতশ্রেষ্ঠ পালন করবে, শতকোটি কল্পেও তাদের সংসারে পুনরাগমন নেই।
🚩 আমার ব্রত প্রভাবে অপুত্রক ভক্তপুত্র লাভ করে, দরিদ্র ধনশালী হয়, তেজস্কামী তেজঃলাভ করে, রাজ্যকামী রাজ্য পায়, আয়ুষ্কামী দীর্ঘায়ু লাভ করে। স্ত্রীলোকেরা আমার এই চতুর্দশী ব্রত পালন করলে ভাগ্যবতী হয়, এই ব্রত সৎপুত্র প্রদ, অবৈধব্যকর ও পুত্রশোক বিনাশন, দিব্য সুখপ্রদ। স্ত্রী-পুরুষ যারা এই উত্তমব্রত পালন করে, তাদের আমি সুখ ও ভুক্তি-মুক্তি ফল দান করি।
হে প্রহ্লাদ, দুরাত্মাদের আমার ব্রত পালনে মতি হয় না। পাপকর্মেই সর্বদা তাদের মতি।
** কিভাবে নৃসিংহ চতুর্দশী পালন করবেন ? **
ভগবান শ্রী নৃসিংহদেব প্রহল্লাদ মহারাজকে উদ্দেশ্য করে এই উক্তিটি করেন – যে ব্যাক্তি নৃসিংহ চতুর্দশী ব্রত তিথি জেনেও পালন করেন না, চন্দ্র, সূর্য যতদিন থাকবে ততদিন তাকে নরক যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে।
*এক নৃসিংহ চতুর্দশী = ১০,০০০ দূর্গা অষ্টমীর উপবাস*
*এক নৃসিংহ চতুর্দশী= ১০০০ একাদশীর সমান।*
কলিযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু একাদশীকে মহাব্রত বলেছে।
এখন আমরা জানবো কিভাবে এই ব্রত পালন করবো।
🚩- আগের দিন অর্থ্যাৎ আজ নিরামিষ আহার করবেন। নেশাজাতীয় যে কোন দ্রব্য চা, কফি, তামাক জাতীয় দ্রব্য অবশ্যই বর্জন করবেন।
🚩- রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবশ্যই দন্তমার্জন করে তারপর ঘুমাতে যাবেন।
🚩- উপবাসের দিন ব্রহ্ম মুহুর্তে (মোটামুটি ভোর ৪ টা থেকে ৪ঃ৩০ টা) নিদ্রা ত্যাগ করে শৌচকর্ম ও স্নানাদি সম্পন্ন করে নেবেন।
🚩- বৈশাখী শুক্লা চতুর্দশী ব্রত পালনকারীরা পাপাচারীদের সঙ্গে কথা বলবে না, মিথ্যা আলাপ বর্জন করবে, স্ত্রীসম্ভাষণ বর্জন করবে, দ্যূতক্রীড়া (বা জুয়াখেলা) ত্যাগ করে ভগবানের রূপগুণলীলার কথা স্মরণ করবে।
🚩- সন্ধ্যা বা গৌধূলী লগ্ন পর্যন্ত নির্জলা উপবাস করবেন। গোধূলি লগ্নে শ্রীনৃসিংহদেবের অভিষেক নৃসিংহদেবকে দুধ, দই, ঘি, মধু, মিছরির জল এবং ফলের রস দিয়ে অভিষেক করবেন (নৃসিংহদেবের চিত্রপটে অভিষেক করা যাবে)। তারপর অভিষেকের চরণামৃত দিয়ে উপবাস ভেঙ্গে একাদশীর ন্যায় অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করা যেতে পারে। নৃসিংহদেবের শ্রী বিগ্রহ বা চিত্রপট না থাকলে শ্রী নারায়ণ বিগ্রহ বা চিত্রপটে ভোগ নিবেদন করে (পঞ্চশস্য ব্যতীত একাদশীর মতো) প্রসাদ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন ভিন্ন প্রকারের ফল, জল, দুধ, দই, ভেজা বাদাম, ভাজা বাদাম, আলুর দম বা তরকারি, সবজি, সবজির স্যুপ, ইত্যাদি। এছাড়া আলু ছোট করে টুকরো করে বাদাম দিয়ে এক বিশেষ ভোগ দিতে পারেন। (রান্না ঘি দিয়ে করলে উত্তম, তবে সূর্যমুখী তেল বা বাদাম তেল ব্যবহার করতে পারেন)। তবে নির্জলা ব্রতই উত্তম।
কিন্তু ব্রতের দিন অন্ন, রুটি, লুচি, পরোটা গ্রহণ করা যাবে না। তবে অবশ্যই নৃসিংহদেবকে “পান্কম” নিবেদন করতে পারেন। “পনকম্” হলো শীতল জল, তাল-মিছরি, লেবুর রস এবং আদা দিয়ে তৈরি একরকম পানীয় যা নৃসিংহদেবের অত্যন্ত প্রিয়।
নিচে পান্কম বানানোর রেসিপি দেয়া হলোঃ-
● চার কাপ ঠাণ্ডা জল
● অর্ধেক চামুচ এলাচি ক্রাশ করা
● এক চামুচ আদা রস
● অল্প কেশর
● একটি লেবু
● এক বাটি গুঁড়
এই সবগুলো উপাদান এক সাথে মিশিয়ে তারপর ছেঁকে ভগবান নৃসিংহ দেবকে নিবেদন করতে পারেন।
বি.দ্রঃ-ভক্তসংখ্যানু্যায়ী উপকরণের পরিমাণ বাড়বে।
🚩- নৃসিংহ লীলা মহিমা পাঠ করবেন, নৃসিংহদেবের ১০৮ টি নাম অবশ্যই পাঠ করবেন (নিচে দেওয়া আছে)। যারা সদা গ্রহাদির পীড়ন ভোগ করছেন তারা নৃসিংহ চতুর্দশী তিথিতে উপবাস থেকে ১০৮ জোড়া তুলসীপাতা দ্বারা নৃসিংহ দেবের অষ্টোত্তর শতনাম (১০৮) পাঠ করে চরণে অর্পণ করলে সমস্ত অপগ্রহাদির উপদ্রুব বিদূরিত হয়৷
🚩- বেশি বেশি হরিনাম জপ (কমপক্ষে ১৬ মালা, যেখানে ১মালা = ১০৮ বার) করবেন।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
🚩- বাড়িতে শ্রীমদ্ভাগবত থাকলে শ্রীমদ্ভাগবতের ৭ (সপ্তম) স্কন্ধের ৮ম অধ্যায় শ্রীনৃসিংহদেবের আবির্ভাব লীলা পাঠ করুন। অথবা শুদ্ধভক্তের নিকট থেকে শ্রবণ করুন। ব্রতের দিন নৃসিংহদেবের প্রণাম মন্ত্র এবং স্তব পাঠ করুন (নিচে দেওয়া আছে। মনে রাখবেন নৃসিংহদেব অত্যন্ত কৃপালু।তিনি ভক্তের মনোবাসনা অবশ্যই পূরণ করবেন। তিনি অত্যন্ত করুণাময়। তিনি তাঁর ভক্তকে সর্ববিপদ থেকে রক্ষা করেন, যেমন—-তাঁর ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন।
🚩- পরিশেষে উপবাসের পর দিন সূর্যোদ্বয়ের পর অন্ন ভোগ নিবেদন করে সেই অন্ন প্রসাদ গ্রহন করে এই ব্রত সুসম্পন্ন করবেন।
হরেকৃষ্ণ।
❤ আপনি নিজে এই ব্রতটি পালন করুন এবং অন্যকেও পালন করতে সহযোগীতা করুন। দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি পেতে, বৈশাখী চতুর্দশীতে পালন করুন এই নিয়মগুলি।
** শ্রীনৃসিংহদেব স্তব **
( Shri Narasimha Stava)
জয় নৃসিংহ শ্ৰী নৃসিংহ ।
জয় জয় জয় শ্রীনৃসিংহ ৷৷ ১ ৷৷
উগ্রম্ বীরম্ মহাবিষ্ণুম্
জ্বলন্তম্ সর্বতোমুখম্ ৷
নৃসিংহম্ ভীষণম্ ভদ্রম্
মৃত্যোমৃত্যুম্ নমাম্যহম্ ৷৷ ২ ৷৷
শ্রীনৃসিংহ জয় নৃসিংহ জয় জয় নৃসিংহ ।
প্রহ্লাদেশ জয়পদ্মমুখ পদ্মভৃঙ্গম্ ৷৷ ৩ ৷৷
তব করকমলবরে নখম্অদ্ভুতশৃঙ্গম্
দলিতহিরণ্যকশিপু তনুভূঙ্গম্ ।
কেশব ধৃত-নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে ।। ৪ ৷৷
ভাবানুবাদঃ
জয় নৃসিংহ শ্ৰী নৃসিংহ ।
জয় জয় জয় শ্রীনৃসিংহ ৷৷
উগ্রম্ বীরম্ মহাবিষ্ণুম্
জ্বলন্তম্ সর্বতোমুখম্ ৷
নৃসিংহম্ ভীষণম্ ভদ্রম্
মৃত্যোমৃত্যুম্ নমাম্যহম্ ৷৷
“জয় শ্রীনৃসিংহ, জয় শ্রীনৃসিংহদেব, শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, জয় হোক, জয় হোক। সর্বদিক প্রজ্জ্বলনকারী উগ্র বীর, মহাবিষ্ণু, তিনি মৃত্যুরও মৃত্যুস্বরূপ, সেই ভীষণ ভদ্র শ্রীনৃসিংহদেবকে প্রণাম জানাই।” (ব্রহ্মসংহিতা)
শ্রীনৃসিংহ জয় নৃসিংহ জয় জয় নৃসিংহ ।
প্রহ্লাদেশ জয়পদ্মমুখ পদ্মভৃঙ্গম্ ৷৷
“প্রহ্লাদের প্রভু, লক্ষ্মীদেবীর মুখপদ্মের প্রতি ভ্রমর রূপ শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, জয় হোক।”
শ্রীদশাবতার স্তোত্রে কবি জয়দেব গেয়েছেন—
তব করকমলবরে নখম্অদ্ভুতশৃঙ্গম্
দলিতহিরণ্যকশিপু তনুভূঙ্গম্ ।
কেশব ধৃত-নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে ।।
“হে কেশব! যখন আপনি নৃসিংহরূপ ধারণ করেছিলেন, তখন আপনার করকমলের নখাবলী অতি আশ্চর্যাবহ অগ্রভাগযুক্ত হয়েছিল। আপনি ওই নখ দিয়ে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর তনুভৃঙ্গটিকে বিদারিত করেছিলেন। হে নৃসিংহরূপী জগদীশ! হে হরে! আপনার জয় হোক।”
** শ্রীনৃসিংহদেব প্রনাম **
নমস্তে নরসিংহায় প্রহ্লাদাহ্লাদ-দায়িনে ।
হিরণ্যকশিপোর্বক্ষঃ শিলাটঙ্ক-নখালয়ে ৷৷ ১ ৷৷
ইতো নৃসিংহঃ পরতো নৃসিংহো ।
যতো যতো যামি ততো নৃসিংহঃ ।।
বৰ্হিনৃসিংহো হৃদয়ে নৃসিংহো ।
নৃসিংহমাদিম্ শরণম্ প্রপদ্যে ।। ২ ৷৷
তব করকমলবরে নখম্অদ্ভুতশৃঙ্গম্
দলিতহিরণ্যকশিপুতনুভৃঙ্গম্ ।
কেশব ধৃত-নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে ।। ৩ ৷৷
ভাবানুবাদঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রতিদিন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সম্মুখে বাইশ পাহাচ (সিঁড়ি) দিয়ে উঠাকালীন বাঁদিকে নৃসিংহবিগ্রহ দর্শন করে প্রণতি নিবেদন করে নৃসিংহপুরাণের দুটি শ্লোক বারবার আবৃত্তি করতেন।
নমস্তে নরসিংহায় প্রহ্লাদাহ্লাদদায়িনে ।
হিরণ্যকশিপোর্বক্ষঃ শিলাটঙ্ক নখালয়ে ॥
“হে নৃসিংহদেব, আমি আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। আপনি প্রহ্লাদ মহারাজকে আনন্দ দান করেন, এবং পাথর কাটার ধারালো টঙ্কের মতো আপনার নখ দিয়ে আপনি হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদীর্ণ করেছিলেন।”
ইতো নৃসিংহঃ পরতো নৃসিংহো ।
যতো যতো যামি ততো নৃসিংহঃ ।।
বৰ্হিনৃসিংহো হৃদয়ে নৃসিংহো ।
নৃসিংহমাদিম্ শরণম্ প্রপদ্যে ।।
“নৃসিংহদেব এখানে রয়েছেন এবং তিনি অন্য দিকেও রয়েছেন। যেখানেই আমি যাই সেখানেই আমি শ্রীনৃসিংহদেবকে দর্শন করি। তিনি আমার হৃদয়ে রয়েছেন এবং তিনি বাহিরেও রয়েছেন। তাই আমি আদিপুরুষ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের শরণ গ্রহণ করি।”
শ্রী মদ্ভাগবতের ‘ভাবার্থদীপিকা’ নামক টীকা লিখতে গিয়ে শ্রীল শ্রীধর স্বামী শ্রীনৃসিংহদেবের বন্দনা করেছেন—
বাগীশা যস্য বদনে লক্ষ্মীৰ্যস্য চ বক্ষসি ৷
যস্যাস্তে হৃদয়ে সংবিৎ তম্ নৃসিংহমহম্ ভজে ॥
“বাক্দেবী সরস্বতী যাঁর বদনে এবং লক্ষ্মীদেবী যাঁর বক্ষোদেশে, দিব্য জ্ঞান বা সম্বিৎশক্তি যাঁর হৃদয়ে বিরাজমান, সেই শ্রীনৃসিংহদেবকে আমি ভজনা করি।” “
প্রহ্লাদহৃদয়াহ্লাদম্ ভক্তাবিদ্যাবিদারণম্ ।
শরদিন্দুরুচিম্ বন্দে পারীন্দ্রবদনাম্ হরিম্ ॥
“প্রহ্লাদ মহারাজের হৃদয়ে নিয়ত আনন্দদানকারী, ভক্তের অবিদ্যা নিধনকারী, চন্দ্রকিরণের মতো স্নিগ্ধ করুণা বিতরণকারী, সিংহের মতো বদনমণ্ডল সেই শ্রীহরিকে বন্দনা করি।”
** হরিবর্ষবাসী সপার্ষদ শ্রীপ্রহ্লাদ মহারাজের প্রার্থনা **
ওঁ নমো ভগবতে নরসিংহায়
নমস্তেজস্তেজসে আবিরাবির্ভব বজ্রনখ বজ্রদংষ্ট্র ।
কর্মাশয়ান্ রন্ধয় রন্ধয় তমো গ্রস গ্রস
ওঁ স্বাহা অভয়মভয়মাত্মনি ভূয়িষ্ঠাঃ ওঁ ক্রৌম্ ইতি ॥
ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবকে নমস্কার। হে সর্ব তেজের উৎস, হে বজ্রনখ, হে বজ্রদংষ্ট্রা, আমাদের আসুরিক কর্মবাসনা সমূলে বিনাশ করো। আমাদের অজ্ঞান-অন্ধকার বিদূরিত করো। আমাদের হৃদয়ে অভয়রূপে তুমি আবির্ভূত হও।
স্বস্ত্যস্ত বিশ্বস্য খলঃ প্রসীদতাং
ধ্যায়ন্তু ভূতানি শিবং মিথো ধিয়া ।
মনশ্চ ভদ্রং ভজতাদধোক্ষজে
আবেশ্যতাম্ নো মতিরপ্যহৈতুকী ৷৷
নিখিল বিশ্বের মঙ্গল হোক। খল ঈর্ষাপর ব্যক্তিরা অনুকূল হোক। সর্বজীব ভক্তিযোগ অনুশীলন করুক। তারা পরস্পরের মঙ্গল চিন্তা করে শান্ত হোক। সবাই কৃষ্ণভজনা করুক। আমাদের মতি শ্রীকৃষ্ণপদকমলে নিবিষ্ট হোক।
মাগারদারাত্মজবিত্তবন্ধুষু
সঙ্গো যদি স্যাদ্ ভগবৎ প্রিয়েষু নঃ ৷
য প্রাণবৃত্ত্যা পরিতুষ্ট আত্মবান্
সিদ্ধ্যত্যদূরান্ন তথেন্দ্ৰিয়প্রিয়ঃ ॥
হে প্রভু, কোন বিষয়েই যেন আমাদের আসক্তি না হয়। যদি আসক্তিই হয়, তবে গৃহ-স্ত্রী-পুত্র-বিত্ত বন্ধু-বান্ধব সমন্বিত সংসার কারাগারের প্রতি না হয়ে যেন য়ে যেন তোমার প্রিয় ভক্তদের প্রতিই হয়।
** শ্রীনৃসিংহ কবচম্ (প্রহ্লাদ মহারাজ কর্তৃক) **
( Shri Narasimha Kavacham)
নৃসিংহকবচম্ বক্ষ্যে প্রহ্লাদেনোদিতম্ পুরা ।
সর্বরক্ষাকরম্ পুণ্যম্ সর্বোউপদ্রবনাশনম্ ॥ ১ ॥
সর্ব সম্পৎকরম্ চৈব স্বর্গমোক্ষপ্রদায়কম্ ।
ধ্যাত্বা নৃসিংহম্ দেবেশম্ হেমসিংহাসনস্থিতম্ ॥ ২ ॥
বিবৃতাস্যম্ ত্রিনয়নম্ শরিদন্দুসমপ্রভম্ ।
লক্ষ্ম্যালিঙ্গিতবামাঙ্গম্ বিভূতিভিরু উপাশ্রিতম্ ॥ ৩ ॥
চতুর্ভুজম্ কোমলঅঙ্গম্ স্বর্ণকুণ্ডলশোভিতম্ ।
সরোজশোভিতোরস্কম্ রত্নকেয়ূরমুদ্রিতম্ ॥ ৪ ॥ [var রত্নকেয়ূরশোভিতম্]
তপ্তকাঞ্চনসঙ্কাশম্ পীতনির্মলবাসনম্ ।
ইন্দ্রাদিসুরমৌলিস্থ স্ফ ু রণমাণিক্যদীপ্তিভিঃ ॥ ৫ ॥
বিরাজিতপদদ্বন্দ্বম্ শঙ্খচক্রাদি হেতিভিঃ ।
গরুরাত্মা চ সবিনয়ম্ স্তূয়মানম্ মুদান্বিতম্ ॥ ৬ ॥
স্বহৃত্কমলসংবাসম্ কৃত্বা তু কবচম্ পঠেত্ ।
নৃসিংহো মে শিরো পাতু লোকরক্ষা আত্মসম্ভবঃ ॥ ৭ ॥
সর্বগোঽপি স্তম্ভবাসঃ ফালম্ মে রক্ষতু ধ্বনিম্ ।
নৃসিংহো মে দৃশৌ পাতু সোমসূর্যাগ্নিলোচনঃ ॥ ৮ ॥
স্মৃতিম্ মে পাতু নৃহরির্মুনিবর্যস্তুতিপ্রিয়ঃ ।
নাসাম্ মে সিংহনাসস্তু মুখম্ লক্ষ্মীমুখপ্রিয়ঃ ॥ ৯ ॥
সর্ববিদ্যাধিপঃ পাতু নৃসিংহো রসনাম্ মম ।
বক্ত্রং পাত্বিন্দুবদনম্ সদা প্রহ্লাদবন্দিতঃ ॥ ১০ ॥
নৃসিংহঃ পাতু মে কণ্ঠম্ স্কংধৌ ভূভরনান্তকৃত্ ।
দিব্যঅস্ত্রশোভিতভুজো নৃসিংহঃ পাতু মে ভুজৌ ॥ ১১ ॥
করৌ মে দেববরদো নৃসিংহঃ পাতু সর্বতঃ ।
হৃদয়ম্ যোগিসাধ্যশ্চ নিবাসম্ পাতু মে হরিঃ ॥ ১২ ॥
মধ্যম্ পাতু হিরণ্যাক্ষবক্ষঃকুক্ষিবিদারণঃ ।
নাভিম্ মে পাতু নৃহরিঃ স্বনাভি ব্রহ্মসংস্তুতঃ ॥ ১৩ ॥
ব্রহ্মান্ডকোটয়ঃ কট্যাম্ যস্যাসৌ পাতু মে কটিম্ ।
গুহ্যম্ মে পাতু গুহ্যানাম্ মন্ত্রানাম্ গুহ্যরূপধৃক্ ॥ ১৪ ॥
ঊরূ মনোভবঃ পাতু জানুনী নররূপধৃক্ ।
জঙ্ঘে পাতু ধরাভারহর্তা যোঽসৌ নৃকেসরী ॥ ১৫ ॥
সুররাজ্যপ্রদঃ পাতু পাদৌ মে নৃহরীশ্বরঃ ।
সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ পাতু মে সর্বশস্তনুম্ ॥ ১৬ ॥
মহোগ্রঃ পূর্বতঃ পাতু মহাবীরঅগ্রজোঽগ্নিতঃ ।
মহাবিষ্ণুরর্দক্ষিণে তু মহাজ্বালস্তু নৈরৃতৌ ॥ ১৭ ॥
পশ্চিমে পাতু সর্বেশো দিশি মে সর্বতোমুখঃ ।
নৃসিংহঃ পাতু বায়ব্যাম্ সৌম্যাম্ ভূষণবিগ্রহঃ ॥ ১৮ ॥
ইশ্যান্যে পাতু ভদ্রো মে সর্বমঙ্গলদায়কঃ ।
সংসারভয়তঃ পাতু মৃত্যোরর্মৃত্যুরর্নৃকেসরী ॥ ১৯ ॥
ইদম্ নৃসিংহকবচম্ প্রহ্লাদমুখমণ্ডিতম্ ।
ভক্তিমান্যঃ পঠেন্নিত্যম্ সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে ॥ ২০ ॥
পুত্রবান্ ধনবান্ লোকে দীর্ঘায়ুরুপজায়তে ।
যম্ যম্ কাময়তে কামান্ তম্ তম্ প্রাপ্নোত্যসংশয়ম্ ॥ ২১ ॥
সর্বত্র জয়মআপ্নোতি সর্বত্র বিজয়ী ভবেত্ ।
ভূম্যন্তরিক্ষ দিব্যানাম্ গ্রহাণাম্ বিনিবারণম্ ॥ ২২ ॥
বৃশ্চিকোউরগসম্ভূত বিষঅপহরণম্ পরম্ ।
ব্রহ্মরাক্ষসযক্ষাণাম্ দূরোত্সারণকারণম্ ॥ ২৩ ॥
ভূর্জে বা তালপত্রে বা কবচম্ লিখিতম্ শুভম্ ।
করমূলে ধৃতম্ যেন সিধ্যেয়ুঃ কর্মসিদ্ধয়ঃ ॥ ২৪24 ॥
দেবাসুরমনুষ্যেষু স্বং স্বমেব জয়ম্ লভেত্ ।
একসন্ধ্যম্ ত্রিসন্ধ্যম্ বা যঃ পঠেন্নিয়তো নরঃ ॥ ২৫ ॥
সর্বমঙ্গলমাঙ্গল্যম্ ভুক্তিম্ মুক্তিম্ চ বিংদতি ।
দ্বাত্রিম্ শতিসহস্রাণি পঠেত্ শুদ্ধআত্মনাম্ নৃণাম্ ॥ ২৬ ॥
কবচস্যাস্য মন্ত্রস্য মন্ত্রসিদ্ধিঃ প্রজায়তে ।
অনেন মন্ত্ররাজেন কৃত্বা ভস্মাভিমন্ত্রম্ ॥ ২৭ ॥
তিলকম্ বিন্যসেদ্যস্তু তস্য গ্রহভয়ম্ হরেত্ ।
ত্রিবারম্ জপমানস্তু দত্তম্ বার্যভিমন্ত্র্য চ ॥ ২৮ ॥
প্রাশযেদ্যো নরো মন্ত্রম্ নৃসিংহধ্যানমাচরেত্ ।
তস্য রোগাঃ প্রনশ্যন্তি যে চ স্যুঃ কুক্ষিসম্ভবাঃ॥ ২৯ ॥
কিমত্র বহুনোক্তেন নৃসিংহসদৃশো ভবেত্ ।
মনসা চিন্তিতম্ যত্তু স তচ্চআপ্নোত্যসংশয়ম্ ॥ ৩০ ॥
গর্জন্তম্ গর্জয়ন্তম্ নিজভুজপটলম্ স্ফোটয়ন্তম্ হঠন্তম্
রূপ্যন্তম্ তাপয়ন্তম্ দিবি ভুবি দিতিজম্ ক্ষেপযন্তম্ ক্ষিপন্তম্।
ক্রন্দন্তম্ রোষয়ন্তম্ দিশি দিশি সততম্ সংহরন্তম্ ভরন্তম্
বীক্ষন্তম্ ঘূর্ণয়ন্তম্ শরনিকরশতৈর্দিব্যসিংহম্ নমামি ॥
ইতি শ্রীব্রহ্মান্ডপুরাণে প্রহ্লাদোক্তম্ শ্রী নৃসিংহ কবচম্ ।
** শ্রীনৃসিংহ কবচম্ (শ্রীব্রহ্মসংহিতা থেকে ব্রহ্মা কর্তৃক)**
( Shri Narasimha Kavacham)
শ্রীনারদ উবাচ —
ইন্দ্রাদিদেববৃন্দেশ! তাতেশ্বর! জগৎপতে!
মহাবিষ্ণোনৃরসিংহস্য কবচম্ ব্রুহি মে প্রভো!
যস্য প্রপঠনাদ বিদ্বান্ ত্রৈলোক্য-বিজয়ী ভবেৎ ॥ ১ ॥
শ্রীব্রহ্মোবাচ —
শৃণু নারদ! বক্ষ্যামি পুত্রশ্রেষ্ঠ! তপোধন।
কবচম্ নরসিংহস্য ত্ৰৈলোক্য-বিজয়াভিধম্ ॥ ২॥
যস্য প্রপঠনাদ্বাগ্মী ত্রৈলোক্য-বিজয়ী ভবেৎ ৷
স্রষ্টাহম্ জগতাম্ বৎস! পঠনাদ্ধারণাদ্ যতঃ ॥ ৩ ॥
লক্ষ্মীজগত্ৰয়ম্ পাতি সংহর্তা চ মহেশ্বরঃ ।
পঠনাদ্ধারণাদ্দেবা বভূবুশ্চ দিগীশ্বরাঃ ৷৷ ৪ ৷৷
ব্রহ্মমন্ত্রময়ম্ বক্ষ্যে ভূতাদি-বিনিবারকম্ ।
যস্য প্রসাদাদ্দুর্বাসাস্ত্ৰৈলোক্য-বিজয়ী মুনিঃ ।
পঠনাদ্ধারণাদ্ যস্য শাস্তা চ ক্রোধভেরয়ঃ ॥ ৫ ॥
ত্রৈলোক্য-বিজয়স্যাস্য কবচস্য প্রজাপতিঃ ।
ঋষিশ্ছন্দশ্চ গায়ত্রী নৃসিংহো দেবতা বিভুঃ ॥ ৬ ॥
ক্ষ্রৌং বীজম্ মে শিরঃ পাতুঃ চন্দ্রবর্ণো মহামনুঃ ৷
উগ্রম্ বীরম্ মহাবিষ্ণুম্ জ্বলন্তম্ সৰ্বতোমুখম্ ॥ ৭ ॥
নৃসিংহম্ ভীষণম্ ভদ্রম্ মৃত্যু-মৃত্যুম্ নমাম্যহম্ ৷
দ্বাত্রিংশদক্ষরো মন্ত্রো মন্ত্ররাজঃ সুরদ্রুমঃ ॥ ৮ ॥
কণ্ঠম্ পাতু ধ্র ু,বম্ ক্ষ্রৌম্ হৃদ্ভগবতে চক্ষুষী মম ।
নরসিংহায় চ জ্বালামালিনে পাতু মস্তকম্ ॥ ৯ ॥
দীপ্তদংষ্ট্রায় চ তথাগ্নিনেত্রায় চ নাসিকাম্ ।
সর্বরক্ষোঘ্নায় সর্বভূত-বিনাশনায় চ ॥ ১০ ৷৷
সর্বজ্বর-বিনাশায় দহ দহ পচ দ্বয়ম্ ৷
রক্ষ রক্ষ সর্বমন্ত্র স্বাহা পাতু মুখম্ মম ৷৷ ১১ ৷৷
তারাদি-রামচন্দ্রায় নমঃ পায়াদ্গুদম্ মম ।
ক্লীম্ পায়াৎ পাণিযুগ্মঞ্চ তারম্ নমঃ পদম্ ততঃ ।
নারায়ণায় পার্শ্বঞ্চ আং হ্রীম্ ক্লৌম্ ফ্ৰৌম্ চ হুম্ ফট্ ॥ ১২ ৷৷
ষড়ক্ষরঃ কটিম্ পাতু ওঁ নমো ভগবতে পদম্ ।
বাসুদেবায় চ পৃষ্ঠম্ ক্লীম্ কৃষ্ণায় ঊরুদ্বয়ম্ ॥ ১৩॥
ক্লীম্ কৃষ্ণায় সদা পাতু জানুনী চ মনূত্তমঃ ৷
ক্লীম্ গ্লৌম্ ক্লীম্ শ্যামলাঙ্গায় নমঃ পায়াৎ পদদ্বয়ম্ ॥ ১৪ ৷৷
ক্ষ্রৌম্ নরসিংহায় ক্ষ্রৌঞ্চ সর্বাঙ্গম্ মে সদাবতু ॥ ১৫ ॥
মিত ম্যাচ ইতি তে কথিতম্ বৎস সর্বমন্ত্রৌঘবিগ্রহম্ ।
তব স্নেহ অন্ময়াখ্যাতম্ প্রবক্তব্যম্ ন কস্যচিৎ ৷৷ ১৬ ৷৷
গুরুপূজাম্ বিধায়াথ গৃহ্নীয়াৎ কবচম্ ততঃ ।
সর্বপুণ্যযুতো ভূত্বা সর্বসিদ্ধিযুতো ভবেৎ ৷৷ ১৭ ॥
শতমষ্টোত্তরঞ্চৈব পুরশ্চর্যাবিধিঃ স্মৃতঃ ৷
হবনাদীন্ দশাংশেন কৃত্বা সাধক-সত্তমঃ ॥ ১৮ ॥
ততস্তূ সিদ্ধকবচঃ পুণ্যাত্মা মদনোপমঃ ।
স্পর্ধামুদ্ধউয় ভবনে লক্ষ্মীবাণী বসেৎ ততঃ ৷৷ ১৯ ॥
পুষ্পাঞ্জল্যষ্টকম্ দত্ত্বা মূলেনৈব পঠেৎ সকৃৎ ।
অপি বর্ষ-সহস্ৰাণাম্ পূজায়াঃ ফলমাপ্নুয়াৎ ॥ ২০ ॥
ভূর্জে বিলিখ্য গুটিকাম্ স্বর্ণস্থাম্ ধারয়েদ যদি ৷
কণ্ঠে বা দক্ষিণে বাহৌ নরসিংহো ভবেৎ স্বয়ম্ ॥ ২১ ৷৷
যোষিদ্ বামভূজে চৈব পুরুষো দক্ষিণে করে ।
বিভৃয়াৎ কবচম্ পুণ্যম্ সর্বসিদ্ধিযুতো ভবেৎ ॥ ২২ ॥
কাকবন্ধ্যা চ যা নারী মৃতবৎসা চ যা ভবেৎ।
জন্মবন্ধ্যা নষ্টপুত্রা বহুপুত্রবতী ভবেৎ ॥ ২৩ ৷৷
কবচস্য প্রসাদেন জীবন্মুক্তো ভবেন্নরঃ ।
ত্রৈলোক্যম্ ক্ষোভয়ত্যেব ত্রৈলোক্য-বিজয়ী ভবেৎ ॥ ২৪ ।
ভূত-প্রেত-পিশাচাশ্চ রাক্ষসা দানবাশ্চ যে ।
তম্ দৃষ্টা প্রপলায়ন্তে দেশাদ্দেশান্তরম্ ধ্র ুবম্ ৷৷ ২৫ ৷৷
যস্মিন্ গেহে চ কবচম্ গ্রামে বা যদি তিষ্ঠতি ।
তম্ দেশন্তু পরিত্যজ্য প্ৰযান্তি চাতিদূরতঃ ॥ ২৬ ॥
ইতিশ্রীব্রহ্মসংহিতায়াং সপ্তদশাধ্যায়ে ত্রৈলোক্যবিজয়ং নাম শ্রীশ্রীনৃসিংহকবচং সম্পূর্ণম্ ॥
** শ্রীনৃসিংহদেব স্তব (শ্রীল শ্রীধর স্বামী কর্তৃক) **
জয় জয়াজিত জহ্যগজঙ্গমাবৃতিমজাম্ উপনীতমৃষাগুণাম্ ৷
ন হি ভবন্তমৃতে প্রভবন্ত্যমী নিগমগীতগুণার্ণবতা তব ॥১॥
“হে অজিত। আপনার বারংবার জয় হোক। স্থাবর-জঙ্গমরূপ অসত্য গুণে আশ্রিত মায়াকে আপনি বিনাশ করুন। কারণ আপনি ছাড়া অন্য কেউই এই কাজে সমর্থ নয়। সমস্ত বেদ আপনার অসীম গুণের কথা কীর্তন করেন।”
দ্রুহিণবহ্নিরবীন্দ্রমুখামরা জগদিদম্ ন ভবেৎ পৃথগ্উত্থিতম্ ৷
বহুমুখৈরপি মন্ত্রগণৈরজ স্ত্বমুরুমূর্তিরতো বিনিগদ্যসে ৷৷ ২ ৷৷
ব্রহ্মা, অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্ৰাদি দেবতারা এবং এই বিশ্ব আপনা-আপনি স্বতন্ত্র হয়ে উদ্ভূত হতে পারে না। এই জন্যই বেদমন্ত্র অনন