এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করব হরিনাম জপ ও হরিনামের মাহাত্ম্য কতখানি মনুষ্য জীবনে?
কান্তম্ কারণকারণম্ আদিমনাদিম্ কালমনাভাসম্
কালিন্দীগতকালিয়শিরসি মুহুরর্নৃত্যন্তম্ নৃত্যন্তম্ ।
কালম্ কালকলাতীতম্ কলিতাশেষম্ কলিদোষঘ্নম্
কালত্রয়গতিহেতুম্ প্রণমত গোবিন্দম্ পরমানন্দম্ ।।
অনুবাদ : যিনি কারণসমূহের আদিকারণ, অনাদি; যিনি কালস্বরূপ হয়েও যমুনা নদীতে কালিয়নাগের মাথায় নৃত্য করেছিলেন; যিনি কাল হয়েও কালাতীত, সর্বজ্ঞ; যিনি ত্রিকাল গতির কারণ এবং কলির দোষনাশক; সেই পরমানন্দময় শ্রীশ্রীগোবিন্দকে প্রণাম করি।
-: হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র :-
হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।।
► আরও পড়ুন: মঙ্গলাচরণ ইসকন ( Iskcon Mangalacharan in Bengali)
উচ্চৈস্বরে ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ কীর্তনের এমনই প্রভাব যে, তা বৃক্ষলতার কর্ণও ভেদ করতে পারে। সুতরাং পশু বা মানুষের কি কথা!
এ প্রসঙ্গে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু একবার হরিদাস ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “বৃক্ষলতা উদ্ধার পাবে কি করে?”
উত্তরে হরিদাস ঠাকুর বলেছিলেন, “উচ্চৈস্বরে ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ কীর্তন করার প্রভাবে কেবল বৃক্ষলতাই নয়; পোকামাকড়, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি সমস্ত প্রাণীরা ও উদ্ধার পাবে।”
তাই, উচ্চৈস্বরে ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র ‘ শুনলে বিরক্ত হওয়া উচিত নয়; কেননা তা কেবল কীর্তন কারীরই মঙ্গল সাধন করে না, যে শুনে তারও মঙ্গল হয়।
“পশু পক্ষী কীটাদি বলিতে না পারে,
শুনিলে হরিনাম তারা ও সবে তরে।”
💦 জয় গোবিন্দ হরি জয় নন্দলাল,
কৃষ্ণ কানাই জয় জয় ব্রজের গোপাল 💦
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।।
অনেকে বলে হরিনাম জপ বা কীর্তন মনকে শান্ত করে ধর্মের পথে নিবিষ্ট করে। কিন্তু পার্থিব প্রাপ্তি যা জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সেই প্রাপ্তি আহরনে কোন ভুমিকা রাখে না।
কলিযুগের আগে মানুষ আর অসুর আলাদা দুটি প্রানী ছিল। কলিযুগে অসুর আলাদা না থাকলেও একই মানুষের ভিতরে অসুর ভাব রয়ে গেছে।
নামজপ ও কীর্তন মানুষের অসুর ভাব দমন করে মনুষ্যত্বের দিকে এগিয়ে নেয়। ফলে মানুষ যেমনি আধ্যাত্মিক দিকে এগিয়ে যায় তেমনি পার্থিব প্রাপ্তি যা জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন যেমন, সৎ পথে চলা ও সৎ জীবন যাপন করায় এক বিরাট ভূমিকা পালন করে। পক্ষান্তরে যারা ধর্মিয় পথে না চলে তাদের অসুরত্ব বৃদ্ধি পায়।
অনেকে বলে আমিষভোজী যারা তাদের মুক্তি নাই। তাদের যুক্তি আমিষ যেহেতু গোবিন্দের ভোগে দেওয়া যায় না, তাই প্রসাদ ভোজী ছাড়া কারো ভগবদ্ধাম প্রাপ্তি হবে না এবং তারা জন্ম মৃত্যুর চক্রে ঘুরতে থাকবে। একথাটা যুগোপযোগী কথা নয়।
তাহলে আমিষভোজী যারা তারা কিভাবে মুক্তি পাবে? ভগবান তাঁর দিব্য নাম জপে সকলকেই অধিকার দিয়েছেন। এই নাম জপে আমিষ ভোজী বা প্রসাদ ভোজী দুয়ের মধ্যে কোন জাত পাতের ভেদাভেদ নেই।
শ্রীমদ্ভাগবত ৩ .৩৩.৭ এ বলা আছে —
অহো বত শ্বপচোহতো গরীয়ান্
যজ্জিহ্বাগ্রে বর্ততে নাম তুভ্যম।
তেপুস্তপস্তে জুহুবুঃ সাস্নরার্যা।
ব্রহ্মানুচুর্নাম গৃণন্তি যে তে।।
আহা! যাঁরা আপনার পবিত্র নাম কীর্তন করেন, তাঁরা কত ধন্য। কুকুরভোজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও এই প্রকার ব্যক্তিরা পূজ্য। যাঁরা আপনার পবিত্র নাম কীর্তন করেন, তাঁরা সর্ব প্রকার তপস্যা এবং অগ্নিহোত্র যজ্ঞ সম্পাদন করেছেন এবং তাঁরা আর্যদের সমস্ত সদাচার অর্জন করেছেন। আপনার পবিত্র নাম গ্রহণ করার জন্য তাঁরা নিশ্চয়ই সমস্ত পবিত্র তীর্থ স্নান করেছেন এবং সমস্ত আবশ্যকতা পূর্ণ করেছেন।