Join to Our Community
Community Grows With You

হিন্দু ধর্মের যুগ বিভাগ ~ সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগ

এই অধ্যায়ে আমরা জানব হিন্দুধর্মে হিন্দু ধর্মের যুগ বিভাগ কয় প্রকার ও কি কি? হিন্দু শাস্ত্রীয় মতে, চার প্রকার যুগ হল সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপরযুগ ও কলি যুগ।

তাছাড়াও আমরা জানব ব্রহ্মান্ডের মোট বয়স কত? ব্রহ্মান্ডের বর্তমান বয়স কত?

এই কলিযুগকে কেন প্রতারণা পূর্ণ যুগ বলা হয়?

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কী ব্যাখ্যা করে গেছেন কলিযুগ সম্পর্কে?

কলির প্রভাব থেকে কিভাবে মুক্ত হবো ??

প্রত্যেক জীবের প্রত্যহ মঙ্গলাচরণ পাঠ করা উচিত, ভগবানের জন্য নয় নিজের স্বার্থে, নিজের মুক্তির জন্য।

** সত্য যুগ **

বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষে তৃতীয়া তিথিতে রবিবারে সত্যযুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ১৭,২৮,০০০ বছর। 

অবতার সংখ্যা চারঃ মৎস্য (মাছ), কুর্ম (কচ্ছপ), বরাহ (শুকর), নৃসিংহ (মানুষ ও সিংহের সমন্বিত রূপ)

ছয় জন শাসকঃ বলি, বেণ, মান্ধাতা, পুরোরবা, ধুন্ধুমার, কাত্তাবীর্য্য অর্জুন

সত্য যুগে পুণ্য ছিল, পাপ ছিল না। প্রাণ ছিল মজ্জায়। মৃত্যু ছিল ইচ্ছাধীন। সোনার পাত্র ব্যবহার করা হত। বেদ ছিল সামবেদ। তীর্থ ছিল পুষ্কর তীর্থ। আয়ু ছিল ১,০০,০০০ – ১০,০০০ বছর। ৩১ – ২১ ফুট শরীরের উচ্চতা।

ভগবান প্রাপ্তির উপায় ছিল ধ্যান ও তপস্যা তারক ব্রহ্মনাম ছিল –

নারায়ণ পরাবেদা, নারায়ণ পরা অক্ষরা।

নারায়ণ পরামুক্তি, নারায়ণ পরা গতি ।।

অর্থাৎ নারায়ণ পরম বেদ, নারায়ণ পরম অক্ষর, নারায়ণ পরম মুক্তি, নারায়ণ পরম গতি।।

** ত্রেতা যুগ **

কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে সোমবারে ত্রেতা যুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ১২,৯৬,০০০ বছর।

এই যুগের পালনকর্তা বিষ্ণুর তিন অবতার যথাক্রমে বামন, পরশুরাম এবং রাম। পুণ্য তিন ভাগ, পাপ এক ভাগ। সূর্য বংশের শাসক- ব্রহ্ম, মরীচি, কাশ্যপ, সাবর্ণিক, মনু, ধনু, সুষেণ, হরিদাস, যৌবনাশ্ব, মুচুকুন্দ, শতবাহু, বেন, পৃত্থু, ইক্ষাকু, দ্যোতকর, কৎসর্প, শ্রেষ্ঠধর, ককুৎস্থ, শতঞ্জীব, দণ্ড, হরিষ, বিজয়, হরিশচন্দ্র, রোহিতাশ্ব, মৃত্যুঞ্জয়, মহাপদ্ম, ত্রিশঙ্কু, উচ্চাঙ্গদ, মরুৎ, অনরণ্য, বিকর্ণবাহু, সগর, অংশুমান, অসমঞ্জা, ভগীরথ, অশ্বঞ্জয়, মণি দীলিপ, রঘু, অজ, দশরথ, শ্রীরাম, লব, কুশ।

প্রাণ ছিল অস্থিতে। বেদ ছিল ঋগ্বেদ। রূপার পাত্র ব্যবহার করা হত। তীর্থ ছিল নৈমিষ অরণ্য। আয়ু ছিল ১০,০০০- ১,০০০ বছর। ২১ – ১০ ফুট শরীরের উচ্চতা।

ভগবান প্রাপ্তির উপায় ছিল হোম ও যজ্ঞ। তারক ব্রহ্মনাম ছিল –

রাম নারায়ণানন্ত মুকুন্দ মধুসুদন।

কৃষ্ণ কেশব কংসারে হরে বৈকুণ্ঠ বামন।।

অর্থাৎ রাম নারায়ণ অনন্ত মুকুন্দ মধুসুদন কৃষ্ণ কেশব কংস অরি হরি বৈকুণ্ঠ বামন।

** দ্বাপর যুগ **

ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে বৃহস্পতিবারে দ্বাপর যুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ৮,৬৪,০০০ বছর।

অবতার বলরাম শ্রীকৃষ্ণ। শাসক ছিল- শাল্ব, বিরাট, হংসধ্বজ, কুশধ্বজ, ময়ুরধ্বজ, বভ্রুবাহন, রুক্ষাঙ্গদ, দুর্যোধন, যুধিষ্ঠির, পরিক্ষিৎ, জনমেজয়, বিষকসেন, শিশুপাল, জরাসন্ধ, উগ্রসেন, কংস।

পুণ্য অর্ধেক, পাপ অর্ধেক। প্রাণ ছিল রক্তে। বেদ ছিল যজুর্বেদ। তামার পাত্র ব্যবহার করা হত। তীর্থ ছিল কুরুক্ষেত্র। আয়ু ছিল ১০০০ – ১০০ বছর। ১০ – ৬ ফুট শরীরের উচ্চতা।

ভগবান প্রাপ্তির উপায় ছিল ভগবানের মূর্তি সেবা ও পূজা। তারক ব্রহ্মনাম ছিল –

হরে মুরারে মধুকৈটভারে ।

গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে ।।

যজ্ঞেশ নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণু ।

নিরাশ্রয়ম্‌ মাম্‌ জগদীশ রক্ষো ।।

অর্থাৎ হরি মুরারী মধু কৈটভ অরি, গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরি, নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণু যজ্ঞেশ, নিরাশ্রয় আমাকে রাখ জগদীশ।

** কলি যুগ **

মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পুর্ণিমা তিথিতে শুক্রবারে কলিযুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ৪,৩২,০০০ বছর। বর্তমানে আমরা কলিযুগের অধীনস্ত।

পুণ্য এক ভাগ, পাপ তিন ভাগ। অবতার কল্কি। প্রাণ অন্নে। তীর্থ গঙ্গা। সব পাত্র ব্যবহার করা হয়। কলি যুগে মানুষের পরমায়ু ১০০ বছর। নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত নিজের শরীরের আয়তন।

ধর্ম সংকোচিত। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত। পাপে অনুরক্ত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি।

ভগবান প্রাপ্তির উপায় হল হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র জপ  তারক ব্রহ্মনাম হল-

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।।

● কলিযুগের লক্ষণ :-

বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী ব্রহ্মা সত্যযুগে সমস্ত সৃষ্টিকর্ম করেন এবং কলিতে সমস্ত সৃষ্টি উপসংহার করেন।

মনু সংহিতায় বলা হয়েছে যে সত্যযুগে তপস্যা, ত্রেতায়ুগে জ্ঞান, দ্বাপরয়ুগে যজ্ঞ এবং কলিতে দানই প্রধান হবে ।

কলিযুগের অন্তে মানে শেষের দিকে কলিযুগের অবতার রুপে অবতারিত হবেন ভগবান কল্কি এবং তাঁর স্ত্রী হবেন মাতা বৈষ্ণো দেবী (বৈষ্ণবী)। ভগবান কল্কি জন্ম নিবেন, শম্ভল নামক গ্রামে বিষ্ণুযশ নামক ব্রাহ্মণের বাড়িতে মাতা সুমতির গর্ভে, তিনি চতুর্ভুজ মুর্তি ত্যাগ করে মনুষ্য রুপে অবতারিত ( অবতারণ করবেন) হবেন।

কল্কি হবেন বিষ্ণুযশ-সুমতির চতুর্থ সন্তান । বিষ্ণুযশ-সুমতির প্রথম তিন সন্তানের নাম হবে যথাক্রমে কবি, প্রাজ্ঞ আর সুমন্তক ।

কলিযুগের শাসকের বৈশিষ্ট্যসমূহ :-

ঋষি মার্কণ্ডেয়র মতে কলিযুগের শাসকরা ন্যায়বিরূদ্ধ, নিয়মবিরূদ্ধ, নিয়মশৃঙ্খলাহীন এবং অযৌক্তিক হয়ে উঠবেন এবং তারা অন্যায়ভাবে কর আদায় করবেন। শাসকেরা তাদের প্রজাদের রক্ষা করার দায়িত্ব এবং আধ্যাত্মিকতাকে বজায় রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না এছাড়া তাদের মধ্যে অনেকেই সৎ, নিষ্ঠাবান ও কর্তব্য পরায়ণ হবেন না। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যক্তি, সমাজ এবং বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবেন।

● কলিযুগের মানুষের বৈশিষ্ট্যসমূহ :-

কলিযুগের মানুষের বৈশিষ্ট্য লিঙ্গপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, ভবিষ্যপুরাণ ও  শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে। 

● কলিযুগের মানুষেরা তিনভাগ অধর্ম ও একভাগ ধর্ম পালন করবেন ।

● কলিযুগের মানুষের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি অতিশয় কুৎসিত ,তাদের অন্তকরণ অতিশয় অপবিত্র হবে ।

● কলি যুগে হিংসা, ছলনা, মিথ্যা, আলস্য, নিদ্রা, দুঃখ, শোক ,ভয় ,দীনতা প্রভৃতি হবে এযুগের বৈশিষ্ট। কলিকালে পাষন্ড, আচারহীন,দুশ্চরিত্র,মিথ্যাবাদী,অপরাধী, ভাঁওতাবাজ (ধাপ্পাবাজ, ধূর্ত, প্রতারণাকারী) ইত্যাদি লোকের প্রভাব অত্যন্ত বাড়বে এবং এরা দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন এবং সজ্জনের হানি লক্ষিত হবে । অসমর্থ মানুষরা ধনহীন হয়ে নিরন্তর কষ্ট, যন্ত্রণা, দুঃখ, ক্লেশ ভোগ করবেন।

● বিষ্ণু পুরাণ মতে কম ধনের অধিকারী হয়ে মানুষ এ যুগে ধনের বেশী গর্ব করবেন । ধর্মের জন্য অর্থ খরচ করবেন না ।

● কলিকালে মানুষের ধর্মগ্রন্থের প্রতি আর্কষন থাকবে না । কলিযুগের মানুষেরা বেদ অধ্যয়ন করবেন না। মানুষ অশাস্ত্রীয় তপস্যা করবেন ।

● কলিযুগে মাতা পিতা এবং সন্তান সন্ততির মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিম্নকোটির হবে। পুত্র এবং কন্যা পিতৃ ও মাতৃ হত্যা করবে এবং পিতা এবং মাতা পুত্র এবং কন্যাকে হত্যা করতে কুন্ঠিত হবেন না । কলিকালে মানুষ, বৃদ্ধ, বয়স্ক ব্যক্তি, গুরু, শিক্ষক, মাতা পিতার অসম্মান ,অবজ্ঞা ও অবহেলা করবেন এবং নিজ ভাই ও ভগিনীর সাথে অভিঘাতী, প্রতিদ্বন্দ্বী, বিরোধী ও শত্র ু ভাব পোষন করবেন।

● কলিযুগের প্রধান গুন হচ্ছে কিছু মানুষ কম পরিশ্রমে বেশী অর্থ অর্জন করবেন এবং কিছু মানুষ বেশী পরিশ্রমে কম অর্থ অর্জন করবেন এবং কলিযুগের মানুষেরা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করতে অভিলাষী হবেন।

● কলিযুগে মানুষের বৃহৎ সংসার এবং একসঙ্গে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন সমবায়ে একটি প্রসারিত পরিবার নষ্ট হয়ে যাবে এবং গড়ে উঠবে পিতা মাতা ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের কেন্দ্র করে একটি সংকীর্ণ এবং যান্ত্রিক পরিবার ।

● কলিযুগে মানুষ বৈদিক ক্রিয়া, আচার সমূহ করবেন না । মানুষ স্নান না করে ভোজন করবে । গৃহস্থেরা হোমাদি করবেন না এবং উচিত দানসমূহও প্রদান করবেন না।

● কলিযুগে ধর্মানুসারে কেউ বিবাহিত থাকবেন না ।

● কলিযুগে মানুষ ধর্মের জন্য ব্যয় না করে কেবল গৃহাদি নির্মাণে অর্থ ব্যয় করবেন ।

● কলিযুগে মানুষ অন্যের সু‌খে দুঃখী এবং অন্যের দুঃখে সুখী হবেন।

● কলিযুগে মানুষ পরকালের চিন্তা না করে কেবল অর্থ উর্পাজনের চিন্তাতেই নিরন্তর নিমগ্ন থাকবেন ।

● কলিযুগে অধিকাংশ স্ত্রীলোকরা নিজেকে অত্যন্ত সুন্দরী বলে মনে করবেন ।

অধিকাংশ নারীরা সাধারনতঃ স্বেচ্ছাচারিণী ও বিলাস উপকরণে অতিশয় অনুরাগিণী হবেন । স্ত্রীলোকরা নিতান্তই লোভী হবেন , বহু ভোজনশীল হবেন । কলিযুগে অধিকাংশ স্ত্রীরা পতিকে অবহেলা করবেন এবং নিজের দেহ পোষণে ব্যস্ত থাকবেন এবং নিরন্তন কঠোর ও মিথ্যা বাক্য বলবেন। কলিযুগে সুন্দরী স্ত্রীরা যার তার সাথে বন্ধুত্ব করবেন ।

● কলিযুগের পুরুষগণ মদ, মাংস, মহিলা, মায়া এবং টাকা পয়সা-ধনসম্পদের প্রতি খুব বেশী আকৃষ্ট হবেন।কলিযুগের পুরুষ ও নারীগণ অঙ্গপ্রদর্শন করবেন । অবিবাহিত পুরুষ ও নারীগণ একসাথে বসবাস করবেন ।

● কলিযুগের মানুষ একটি দেশ থেকে কাজের এবং খাদ্য অনুসন্ধানের জন্য অন্য দেশে চলে যাবেন।

কলিযুগের মানব সম্পর্কে ঋষি মার্কণ্ডেয়র বক্তব্য :-

➢ কলিযুগের মানুষের প্রধান গুন হবে – লোভ এবং ক্রোধ

➢ কলিযুগে মানুষ খোলাখুলিভাবে একে অপরকে ঘৃণা প্রদর্শন করবে। ধর্মের অজ্ঞতা ঘটবে।

➢ কলিযুগে মানুষ মানুষকে সামান্য ঝগড়া,বকাবকি ও বিবাদের জন্যে খুন করবে এবং এর জন্য অপরাধবোধ হবে না।

➢ কলিযুগে লালসা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে এবং যৌন সংসর্গকে জীবনের কেন্দ্রীয় প্রয়োজন হিসাবে দেখা হবে।

➢ কলিযুগে পাপ দ্রুত বৃদ্ধি হবে । মানুষ মাদকদ্রব্য ও ওষুধের আসক্ত হয়ে উঠবে।

➢ ব্রাহ্মণরা জ্ঞানবান, বিচক্ষণ হতে পারবেন না ,তারা সম্মান, শ্রদ্ধা হারাবেন। ক্ষত্রিয়রা সাহসী হবেন না। ব্যবসায়ী বনিকরা ন্যায়সঙ্গত লেনদেন ভুলে অসাধু হবেন ।

ধর্মগ্রন্থ অনুসারে দান করাই হবে কলিযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম । রামায়ণের শেষ খন্ডে লেখা আছে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র মর্তলোক থেকে স্বর্গলোক যাবার সময় বজরংবলী হনুমান কে বলেছিলেন কলিযুগে হরিনাম সংকীর্তনই হবে মোক্ষ প্রাপ্তির উপায়। চৈতন্য মহাপ্রভুও সেই একই কথা বলেছেন ।

** ব্রহ্মান্ডের মোট বয়স কত? **

ব্রহ্মান্ডের মোট বয়স = ব্রহ্মার ১০০ বছর

[Note: ১ কোটি = ১০,০০০,০০০

১ মিলিয়ন = ১,০০০,০০০

১ বিলিয়ন = ১,০০০,০০০,০০০

১ ট্রিলিয়ন = ১,০০০,০০০,০০০,০০০]

চার যুগের মোট পরিমাণ- ৪৩,২০,০০০ (তেতাল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার) বছর। এই চারটি যুগকে একত্রিত করে গঠিত হয় এক মহাযুগ বা চতুর্যুগ। 

১ মহাযুগ = ১ সত্য যুগ + ১ ত্রেতা যুগ + ১ দ্বাপরযুগ + ১ কলি যুগ = ৪৩,২০,০০০ (তেতাল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার) বছর

এরূপ এক হাজার মহাযুগে (চতুর্যুগে) ব্রহ্মার একটি দিন হয়। ব্রহ্মার একদিনকে বলা হয় এক কল্প। সুতরাং ব্রহ্মার একদিন হবে 432 কোটি বা 4,320 মিলিয়ন বছর বা 4.32 বিলিয়ন বছর।অর্থাৎ

ব্রহ্মার ১ দিন = ১ কল্প = ১০০০ মহাযুগ = ১০০০ x ৪৩,২০,০০০ = ৪৩২,০০,০০,০০০ বছর (৪৩২ কোটি বা ৪,৩২০ মিলিয়ন বছর বা ৪.৩২ বিলিয়ন বছর)

অনুরূপভাবে,  ব্রহ্মার ১ রাত = ১ কল্প = ১০০০ মহাযুগ = ১০০০ x  ৪৩,২০,০০০ = ৪৩২,০০,০০,০০০ বছর (৪৩২ কোটি বা ৪,৩২০ মিলিয়ন বছর বা ৪.৩২ বিলিয়ন বছর)

সুতরাং, ব্রহ্মার ১ সম্পূর্ণ দিন = ১ দিন + ১ রাত = ২ কল্প (২০০০ মহাযুগ) = ২ x  ৪৩২,০০,০০,০০০ = ৮৬৪,০০,০০,০০০ বছর (৮৬৪ কোটি বা ৮,৬৪০ মিলিয়ন বছর বা ৮.৬৪ বিলিয়ন বছর)

আবার, ব্রহ্মার ১ বছর অর্থাৎ ৩৬০ সম্পূর্ণ দিন = ৩৬০ x ২ কল্প = ৭২০ কল্প

ব্রহ্মার আয়ু ১০০ বছর (অর্থাৎ ব্রহ্মান্ডের মোট বয়স) = ১০০ x ৭২০ কল্প = ৭২,০০০ কল্প = ৭২,০০০ x ৪৩২,০০,০০,০০০ বছর = ৩১১০৪,০০০০০,০০০০০ (৩১১,০৪০ বিলিয়ন বছর বা ৩১১.০৪ ট্রিলিয়ন বছর)

___________________________________

অন্যভাবে, ৪৩২ কোটি বছরে ব্রহ্মার একদিন (শুধুমাত্র দিন, অনুরূপ ভাবে হয় রাত)। একে একটি কল্প বলা হয়। প্রতিটি কল্প ১৪ মন্বন্তর (বা মনু) এবং এক-একটি মন্বন্তর আবার ৭১ মহাযুগে (বা, চতুর্যুগে) বিভক্ত। দুই মন্বন্তরের মধ্যে একটি করে সন্ধিক্ষণ আছে। এই সন্ধিক্ষণের পরিমাণ ১৭,২৮,০০০ বছর অর্থাৎ এক সত্যযুগের সমান।

১ মন্বন্তর (মনু) = ৭১ মহাযুগ = (৭১ x ৪৩,২০,০০০) বছর = ৩০৬,৭২০,০০০ (৩০৬.৭২ মিলিয়ন বছর)

সুতরাং, ব্রহ্মার ১ দিন = ১৪ মন্বন্তর (মনু) + ১৫ সন্ধিক্ষণ = (১৪ x ৭১ x ৪৩,২০,০০০) বছর + (১৫ x ১৭,২৮,০০০) বছর  

= ৪২,৯৪,০৮০,০০০ + ২৫,৯২০,০০০ = ৪৩২,০০,০০,০০০ বছর (৪৩২ কোটি বা ৪,৩২০ মিলিয়ন বছর বা ৪.৩২ বিলিয়ন বছর)

** ব্রহ্মান্ডের বর্তমান বয়স কত ? **

বর্তমানে শ্বেতবরাহ কল্প চলছে। এই কল্পের ৬টি মন্বন্তর (মনু), ২৭টি চতুর্যুগ (মহাযুগ) ও ৩টি যুগ অতীত হয়েছে। কলিযুগের ৫২০৩ বছর গত হয়েছে।

∴ ৬ মন্বন্তর (মনু) = ৬ x ৩০৬,৭২০,০০০ বছর = ১৮৪,০৩,২০,০০০ বছর

∴ ২৭ মহাযুগ = ২৭ x ৪৩,২০,০০০ বছর = ১১,৬৬,৪০,০০০ বছর

∴ ১ সত্য যুগ + ১ ত্রেতা যুগ + ১ দ্বাপরযুগ  = ১৭,২৮,০০০ + ১২,৯৬,০০০+৮,৬৪,০০০ বছর = ৩৮,৮৮,০০০ বছর

∴ কলিযুগ অতিক্রান্ত = ৫২০৩ বছর

∴ অতিক্রান্ত ৭ সন্ধিক্ষণ = (৭ x ১৭,২৮,০০০) বছর = ১,২০,৯৬,০০০ বছর

∴ মোট = (১৮৪,০৩,২০,০০০ + ১১,৬৬,৪০,০০০ + ৩৮,৮৮,০০০ + ৫২০৩ + ১,২০,৯৬,০০) বছর = ১৯৬,২০,৬২,৮০৩ বছর (১৯৬.২১ কোটি বছর বা ১.৯৬২ বিলিয়ন বছর)

** এই কলিযুগকে কেন প্রতারণা পূর্ণ যুগ বলা হয়? **

এই কলি যুগের বর্তমান সময়ে সমগ্র মানব সমাজ প্রতারক ও প্রতারিতের সমাজে পরিণত হয়েছে। সেজন্য বৈদিক শাস্ত্রে ইন্দ্রিয় সুখভোগের যথাযথ পন্থা প্রদর্শিত হয়েছে। এই যুগে সকলেই প্রায় মাছ-মাংস খেতে চায়, মদ্যপান করতে চায় এবং মৈথুন সুখ উপভোগ করতে চায়, তাই বৈদিক শাস্ত্রে বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীসঙ্গ করার, মা কালীর কাছে যথাযথভাবে বলি দেওয়ার মাধ্যমে মাংস আহার করা এবং সুনিয়ন্ত্রিতভাবে আসবপান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই শ্লোকে নিয়ম্যতে শব্দটি সেই কথাই উল্লেখ করে- পশু হত্যা, আসবপান ও স্ত্রীসঙ্গ সুনিয়ন্ত্রিতভাবে করা উচিত। ( রেফারেন্সঃ শ্রীমদ্ভাবতম্‌ ৪/২৬/৬)

** পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কী ব্যাখ্যা করে গেছেন কলিযুগ সম্পর্কে ? **

একদিন পঞ্চপান্ডব ভগবান কৃষ্ণের কাছে কলিযুগ কেমন হবে তার বর্ণনা জানার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাদের পাঁচ জনকে জঙ্গল ভ্রমণ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন অভিমুখে যাত্রা করতে ও জঙ্গলে দৃশ্যমান ঘটনা শ্রীকৃষ্ণকে এসে জানাতে। পঞ্চপাণ্ডব জঙ্গল অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।

● যুধিষ্ঠির দেখতে পেল দুই শুঁড় বিশিষ্ট এক‌টি হাতি। তিনি এসে তা শ্রীকৃষ্ণকে বলেন।শ্রীকৃষ্ণ বলেন কলিযুগে মানুষ হবে মিথ্যেবাদী স্বার্থপর। তারা মুখে বলবে এক কিন্তু কৃতকর্ম থাকবে সম্পূর্ন ভিন্ন।অর্থাৎ প্রতিশ্র ুতি আর কাজের মধ্যে কোনো মিল থাকবেনা।

● ভীম দেখতে পেল একটি গরু তার বাছুরকে চেটে চেটে আদর করছে কিন্তু এত মাত্রায় বাছুরটিকে চাটছে যে বাছুরটির গায়ের ছাল উঠে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করেছে। এসে একথা শ্রী -কৃষ্ণকে জানালে এবং পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলেন কলিযুগে পিতা-মাতার অন্ধ স্নেহ ও অতি মাত্রায় ভালোবাসাই তাদের সন্তানের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে। যেমন এতে সন্তানদের বিচার বুদ্ধিহীনতা ও পরনির্ভরশীল করে তুলবে ,যা আগামীতে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপনে তাদের বাধা হয়ে দাড়াবে।

● অর্জুন দেখতে পেল একটা শকুনের দুই বিশালাকার ডানায় বেদ লিখিত আছে কিন্তু সে নরমাংস ভক্ষন করছে। এ বিষ্ময়কর দৃশ্য অর্জুনকে মর্মাহত করে ও তিনি পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করলে পরমেশ্বর বলেন কলিযুগে ভন্ড সাধকের পরিমান বৃদ্ধি পাবে।অর্থাৎ দেশ ও সমাজের বুকে যারা ধার্মিক ও জ্ঞানী হিসেবে খ্যাতি পাবেন তাদের প্রকৃত মানষিকতা থাকবে শকুনের ন্যায়। উপরে ধর্ম ও জ্ঞানের বর্ম পরিহিত মানুষ গুলি নিজেরাই হবে ধর্মভ্রষ্ট ও শয়তান।

● নকুল দেখতে পেল এক বিশালাকার পাথর খন্ড পাহাড় থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ছে।কোনো বৃক্ষই তাকে আটকাবার ক্ষমতা রাখছে না সবকিছু তছনছ করতে করতে ভয়ংকর গতিতে নিচের দিকে নেমে আসছে। অথচ কিছুদূর নামার পর একটি গুল্ম গাছের গোড়ায় এসে পাথরটি থেমে যায় এবং বন্ধ হয় তার তান্ডব-লীলা।এ ঘটনা পরমেশ্বর কে জানালে তিনি বলেন কলিযুগে মানুষের পাপের পরিমান ওই পাথরসম হবে। যা তার জীবনকে তছনছ করে দেবে। ধ্বংস অভিমুখে চালিত করবে গোটা সমাজকে।কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি বা মানুষ শুদ্ধ মনে শুধুমাত্র আমার’ই স্বরনাপন্ন হয় তবে তাঁকে আমি’ই সর্ববিপদ থেকে রক্ষা করবো।

** কলির প্রভাব থেকে কিভাবে মুক্ত হবো ?? **

● কলি যুগে শাস্ত্রে ৪টি পাপকার্যের কথা উল্লেখ আছে। পরীক্ষিত মহারাজ কলিকে যে ৪টি স্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হচ্ছে –

১। আমিষাহার/মাছের মাংশ বা অন্য কোন জীবের মাংস ভক্ষন।
২। দ্যুতক্রীড়া/তাস/পাশা/জুয়া
৩। নেশা/ধুমপান/মদ্যপান/সকল প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য যা না খেলেও চলে
৪। অবৈধ সঙ্গ/যে কোন প্রকার অননুমোদিত সঙ্গ/ক্ষতিকারক সঙ্গ

● এই ৪টি পাপকাজের ফলে আমাদের সুন্দর ৪টি গুন নষ্ট হয়ে যায়। যা যথাক্রমে –

১। মাছ মাংস আহারে দয়া নষ্ট হয়।
২। তাশ পাশা দ্যুতক্রীয়া তে সত্যবাদিতা নষ্ট হয়।
৩। তপস্যার ক্ষমতা কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় নেশাতে।
৪। শুচিতা নষ্ট হয়ে যায় অবৈধ সঙ্গে।

দয়া, সত্যবাদিতা, তপস্যা, শুচিতা এই ৪টিকে ধর্মের খুটি হিসাবে ধরা হয়। এগুলো আমাদের সনাতন ধর্মের চারটি সম্ভ। একটি টেবিলের ৪টি খুটি থাকে। যদি একটি বা তার অধিক খুটি না থাকে তাহলে টেবিলটি দাড়িয়ে থাকতে পারবেনা।

তেমনি ভাবে ধর্মের ও যদি একটি বা তার অধিক খুটি নাথাকে তাহলে আমাদের জীবনেও ধর্মটি টিকবে না। তাই আসুন আমরা এই কলিযুগের ৪টি পাপকার্য থেকে দূরে থাকি।

ভগবান পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভাগবতগীতায় বলেছেন- কাম, ক্রোধ, লোভ নরকের দ্বার।

● কামঃ- কামকে ভগবান সর্বগ্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছেন। কাম থেকে ক্রোধ উৎপন্ন হয়, ক্রোধের ফলে বুদ্ধি নাশ হয়, আর বুদ্ধি নাশ হওয়ার ফলে তার সর্বনাশ হয় (রেফারেন্স- শ্রীমদ্ভাগবতগীতা)। কাম বর্ষবর্তী হয়ে এক রমনীর দিকে দৃষ্টিপাত করায় মহাপ্রভু হরিদাস ঠাকুরকে নিজ পার্শ্বদ থেকে পরিত্যাগ করেছিলেন।

● ক্রোধঃ- ক্রোধ হচ্ছে তমোগুণের প্রতীক। ভগবান শ্রীমদ্ভাগবতগীতায় বলেছেন- তমোগুণ সম্পন্ন জীবদের আমি জন্ম জন্মান্তরে পশু যোনিতে নিক্ষেপ করি। আমরা ইহজন্মে যে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন জীবন ধারন করবো মৃত্যুর পর কামনা-বাসনা অনুযায়ী আমরা সেরকমই একটা দেহ লাভ করবো। তাই আমরা যদি কৃষ্ণ কেন্দ্রিক জীবন ধারণ করি তাহলে অন্তিমে আমরা কৃষ্ণকেই লাভ করবো, এতে কোন সন্দেহ নেই।

● লোভঃ- লোভ হচ্ছে ভক্তি পথে পতনের প্রথম ধাপ। লোভ থেকে জড় কামনা-বাসনার উদয় হয়। এই জড় কামনা-বাসনাগুলোই হচ্ছে জড় জগতের বন্ধনের মূল কারন। এর ফলে জন্ম জন্মান্তরে বার বার ঘুরে ঘুরে এই জড় জগতেই আমাদের ফিরে আসতে হবে। এমন জীবের ক্ষেত্রে ভগবৎধাম প্রাপ্তি প্রায় অসম্ভবই বলা চলে।

তাই চারটি কার্য ত্যাগ করলে সব কিছু থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

আর কলির প্রভাব কলিযুগে এতই বেশি যে তার থেকে খুব কম মানুষ বেরিয়ে আসতে পারে। তাই এসব ত্যাগ করতে হলে আপনি একবারেই পারবেন না,তাই আপনাকে একটা কাজ করতে হবে তা হলো মনে ভক্তি শ্রদ্ধা নিয়ে “হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র” জপ করা শুরু করতে হবে।তবেই আপনি আস্তে আস্তে কলির প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারবেন। আর পড়তে হবে শ্রীমদ্ভাগবতগীতা সহ ভক্তিভাব জাগানোর জন্য ধর্মীয় কিছু গ্রন্থ( “শ্রীমদ্ভাগবতম”, “শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত”, “আত্মজ্ঞান লাভের পন্থা”, “আমি কে”, “জাগ্রত  চেতনা”, “জন্মমৃত্যুর পরপারে” ইত্যাদি )।।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।

** কলিযুগের মানুষের কম আয়ু কেন ? **

মানুষের আয়ু কমিয়ে দেওয়ার পেছনে ভগবানের প্রধান কারন হল, বেশি আয়ু পেলে মানুষ জগতে আরও বেশি পরিমাণে উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টি করবে, ফলে শান্তি- শৃঙ্খলা হ্রাস পাবে। কলির মানুষ ধর্ম-জ্ঞানহীন হয়ে যা ইচ্ছা তা করতে শুরু করবে, ফলে সমাজ কলুষিত ও অশান্তি উচ্ছৃঙ্খলতায় ভরে উঠবে। বেশি আয়ু পেয়ে বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিজের কাছে সব কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টা করবে , তাতে আখেরে মানব প্রজাতি লুপ্ত হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি।

রাক্ষস পিচাশের মত মানুষও মাছ, ব্যাঙ, কাক, মোরগ, গরু, ছাগল, কুকুর, শুকরের হাড়-পিত্ত, রক্ত-মাংস খাবে আর হিংস্র পশুর মত আচরণ করবে। তাছাড়া আরশোলা, কেঁচো, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুকের মতো অনুন্নত জীবদের খেতেও ছাড়বে না।

তারা দিন দিন ক্রমবর্ধমান নেশাসক্ত হয়ে চা, কফি, বিড়ি, সিগাৱেট, গাঁজা, তামাক, খৈনি, দোক্তা, মদ, গাঁজা, আফিম, চরস, ড্রাগস, সাপের ছোবলের মত হিংস্র নেশা করবে। এইসব জঘন্য জিনিস সেবনপুর্বক যে কোন অশালীন নিন্দাজনক অসামাজিক আচরণ করতেও পিছপা হবে না ।

তারা হাট-বাজারে, ঘরে-বাইরে তাস, জুয়া, পাশা, দাবার আসর বসিয়ে সময় ও সদাচার নষ্ট করবে। লাভের আশায় লটারী, ঘোড়ার রেশ খেলে সময়, অর্থ, সামাজিক জীবন নষ্ট করবে।

সামাজিক নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তারা অবাধে স্ত্ৰী-পুরুষ সঙ্গ করবে। নাইট ক্লাব, বেশ্যাখানা, অশ্লীল সিনেমা ইত্যাদি সংগঠন করে, বিবাহ প্রথা বাদ দিয়ে লিভিং টুগেদার করে তারা মজমস্তি করবে এবং তারা মনে করবে এটাই তাদের জীবনের একমাত্র স্বর্গীয় আনন্দ।সামাজিক দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পছন্দ করবে।  প্রত্যাশার অপূর্ণতায় হীনমন্যতায় ভুগবে, আত্মহত্যার প্রবনতা বাড়বে।

কলির মানুষ অতি নগণ্য ধনসম্পত্তি  কিংবা খাদ্যশস্য বা আসবাব পত্ৰ ভোগ করার আশায় দিবারাত্র আত্মীয় পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে কলহ-মারামারি-হানাহানি করবে। নির্বোধের মতো মরবে কিংবা মারবে, তবু নিজের নিজের করতে ছাড়বে না। স্বল্প আয়ু শেষ হলে খালি হাতেই এই জড়া জগত থেকে ফিরতে হবে, শুনেও শুনবে না, বললেও অবুঝের মতো ভান করে বুঝতে চাইবে না। দান-ধ্যান চুলোই যাক! লোক ঠকানো, জালি-জুচ্চরি-বাটপারি করে সম্পদ আঁকড়ে শান্তি খোঁজার চেষ্টা করবে। মার খাবে, জেল যাবে তবু নির্বোধ মানুষেরা আমার আমার করতে ছাড়বে না।

অতএব , সত্যযুগের ধর্মপরায়ণ মানুষের তুলনায় কলিযুগের পাপচারি মানুষের আয় শতগুণ হ্রাস পাবে। প্রতিযুগে মানুষের আয়ু কমতে থাকবে অর্থাৎ শেষের থেকে একটি করে শুন্য বিয়োগ হতে থাকবে। যেমন,

সত্যযুগে মানুষের আয়ু ছিল ১,০০,০০০বছর
দ্বাপরে মানুষের আয়ু ছিল ১০,০০০ বছর
ত্রেতাতে মানুষের আয়ু ছিল ১,০০০ বছর
কলিতে মানুষের আয়ু হল ১০০ বছর

অবশ্য কলির শেষ পৰ্যায়ে মানুষের আয়ু আরও পাঁচ থেকে দশ গুণ অবধি হ্ৰাস পাবে। ঘোর কলিতে মানুষের আয়ু হবে ২০ বছর! এই একই ভাবে কলির মানুষের সব সৎগুণ ও আয়ু কমতে থাকবে।

ভাগবতে উল্লেখ আছে,
”কলিযুগে ধর্মের এক চতুর্থাংশ ভাগই অবশিষ্ট থাকে। প্রত্যহ অধর্মের প্রভাব বৃদ্ধির ফলে সেই অবশিষ্ট ভাগও অবিরাম হ্রাস পেতে থাকবে এবং অবশেষে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে”।। ১২/৩/২৪

কলিযুগে কৃষ্ণ ভজন সাধনে পদে পদে বাধা আসবে। আসলে কলিযুগ কঠিন পরমাৰ্থ যোগ-সাধন ক্ষেত্ৰ নয়। এই কলিযুগে মনুষ্য জীবন পাওয়ার এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হল ভগবানের নাম, রুপ, গুন লীলা শ্রবণ ও কীর্তন করা এবং ভগবানের কাছে ফিরে যাওয়ার পরম সুযোগ হল একমাত্র হরিনাম মন্ত্র জপ করা ৷

Join to Our Community
Community Grows With You
x

This website uses cookies.