বিজয়া দশমী (Bijaya Dashami) এবং দশেরা (Dussehra) সম অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কেউ বলে দশেরা, কেউ বা দশহারা, কেউ বা বলে নবরাত্রি দুর্গোৎসব। দুর্গোৎসব সনাতনধর্মের অন্যতম প্রাচীন উৎসব। এই উৎসব আশ্বিন মাসে অর্থাৎ ইংরেজি মাসের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আয়োজিত হয়। মহালয়ার ঠিক পরের দিন অর্থাৎ আশ্বিন মাসে শুক্ল পক্ষের প্রতিপদে শুরু হয় দুর্গা পুজো এবং চলে দশমী পর্যন্ত।
শুধুমাত্র এ উপমহাদেশেই নয়, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই দুর্গোৎসব পালিত হয়। তবে নেপালে এই উৎসবটি জাতীয় উৎসব।
─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─
✤ বিজয়া দশমী ও নবরাত্রি কি ✤
🕉️ বিজয়াদশমী হল বিজয় (‘বিজয়’) এবং দশমী (‘দশম দিন’) দুটি শব্দের মিলিত যুক্ত শব্দ, যা দশম দিনে অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির বিজয় উদযাপনের উৎসবকে বোঝায়।
🕉️ আবার ‘নবরাত্রি‘ মানে ‘নয়টি রাত‘। রাতের সাথে অন্ধকার জড়িত। যা ব্যাক্তির অজ্ঞতার অন্ধকারকে চিহ্নিত করে। নবরাত্রির উদ্দেশ্য হল সেই অজ্ঞতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ দেওয়া। যখন দেবীর কথা বলা হয়, তা হল দুর্গা, লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর একক রূপ। এই তিন দেবী (ত্রিদেবী) একসাথে শক্তি বা শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এই শক্তি যা প্রকৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রকৃতি তিনটি গুণ নিয়ে গঠিত – সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ। সরস্বতী সত্ত্ব গুণ (বিশুদ্ধতা) প্রতিনিধিত্ব করে, লক্ষ্মী রাজ-গুণ (শক্তি এবং কার্যকলাপ) প্রতিনিধিত্ব করে, এবং দুর্গা তমো-গুণ (অলসতা বা জড়তা) প্রতিনিধিত্ব করে। যেহেতু প্রকৃতি এই তিনটি গুণ (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ) থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তাই তাদের অন্তর্নিহিত প্রকৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য মানুষ দুর্গা, লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর পূজা করে, কারণ তারা এই গুণাবলীর মূর্ত দেবী। শক্তির কৃপা লাভের জন্য মানুষকে ত্রিগুণ বিশুদ্ধতা থাকতে হবে – হৃদয়ের বিশুদ্ধতা, কথার পবিত্রতা এবং কর্মের পবিত্রতা।
🕉️ নবরাত্রি ব্রত আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত। এই নয়দিন মা দুর্গা আবির্ভূত হন নয় রুপে। পিতামহ ব্রহ্মা দেবীর এই নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন। নয়টি নামের নয়টি বৈচিত্রময় রূপভেদ। এঁরা প্রত্যেকেই দেবীর নয়টি কায়াব্যূহ মূর্তি। নবদুর্গা নামে এঁরা বিশেষ পরিচিত। শ্রীশ্রী চন্ডীতে এই নয়টি নামের উল্লেখ আছে। নবদুর্গার এই নয়টি নাম :-
✤ (১) শৈলপুত্রী :– ( পর্বতের কন্যা)
✤ (২) ব্রহ্মচারিণী :- (যিনি ব্রহ্মাকে স্বয়ং জ্ঞান দান করেন, ভক্তকেও ইনি ব্রহ্মপ্রাপ্তি করান )
✤ (৩) চন্দ্রঘন্টা :- ( দেবীদুর্গার মহিষাসুর বধের জন্য দেবরাজ ইন্দ্রের প্রদত্ত ঘন্টা যার মধ্যে গজরাজ ঐরাবতের মহাশক্তি নিহিত ছিল, চন্দ্রের চেয়েও লাবণ্যবতী ইনি )
✤ (৪) কুষ্মান্ডা :- ( উষ্মার অর্থ তাপ । দুর্বিষহ ত্রিতাপ হল কুষ্মা। আর যিনি এই ত্রিতাপ নিজের উদরে বা অন্ডে ধারণ করেন অর্থাৎ সমগ্র সংসার ভক্ষণ করেন ইনি )
✤ (৫) স্কন্দমাতা :- ( দেব সেনাপতি কার্তিকেয় বা স্কন্দের মা )
✤ (৬) কাত্যায়নী :- ( কাত্যায়ন ঋষির আশ্রমে দেবকার্যের জন্য আবির্ভূতা ইনি বৃন্দাবনে দেবী গোপবালা রূপে পূজিতা। ব্রজের গোপবালারা এই কাত্যায়নীর কাছে প্রার্থণা করেছিলেন নন্দের নন্দন শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য তাই ব্রজের দুর্গার নাম কাত্যায়নী )
✤ (৭) কালরাত্রি :- ( ঋগ্বেদের রাত্রিসুক্তে পরমাত্মাই রাত্রিদেবী। মহাপ্রলয়কালে এই রাত্রিরূপিণী মাতার কোলেই বিলয় হয় বিশ্বের।অনন্ত মহাকাশে নৃত্যরত কালভৈরবের দেহ থেকেই আবির্ভূতা ইনি দেবী যোগনিদ্রা মহাকালিকা বা কালরাত্রি নামে আখ্যাত )
✤ (৮) মহাগৌরী :- (তিনি সন্তানবত্সলা, শিবসোহাগিনী, বিদ্যুদ্বর্ণা মা দুর্গার প্রসন্ন মূর্তি) এবং
✤ (৯) সিদ্ধিদাত্রী :- ( অপরূপ লাবণ্যময়ী চতুর্ভুজা, ত্রিনয়নী, প্রাতঃসূর্যের মত রঞ্জিতা যোগমায়া মাহেশ্বরী ইনি সকল কাজে সিদ্ধি প্রদান করেন )।
─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─
✤ রামায়ণ অনুসারে বিজয়া দশমী : শ্রীরামচন্দ্রের বিজয়োৎসব ✤
বিশেষ করে ভারতবর্ষে দশেরা উৎসব খুব জাঁকজমক করেই পালন করা হয়। ‘দশেরা‘ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ “দশহর” থেকে, যার অর্থ দশানন রাবণের মৃত্যু।
বাল্মীকি রামায়ণে বলা হয়েছে, ত্রেতা যুগে লংকার রাজা রাবণ শ্রীরামচন্দ্রর পত্নী সীতাকে অপহরণ করেছিলেন। যদিও তিনি প্রকৃত সীতা ছিলেন না, ছিলেন ছায়া সীতা। দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে রাম সীতাকে (ছায়া সীতাকে) উদ্ধার করতে লঙ্কা আক্রমণ করেন। আশ্বিন মাসের শুল্কা দশমী তিথিতেই ভগবান শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করেছিলেন সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্বে। রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রামের জয়লাভকেও চিহ্নিত করে বিজয়া দশমী।
পরবর্তীতে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধের আনন্দস্বরূপ আশ্বিন মাসের শুল্কা দশমী তিথিতে বিজয়োৎসব পালন করেন। এই দশেরার দিন রাবণের কুশপুত্তলিকা জ্বালানো হয়। সমস্ত অসুর বিনাশ স্বরূপ এই পুত্তলিকা জ্বালানো হয়।
◼️মনে রাখবেন: ক্রেতাযুগে রাবণকে বধ করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। ঐ রাবণই সত্যযুগে হিরণ্যকশিপু এবং দ্বাপরযুগে শিশুপাল ছিলেন, তখন তাঁদেরকে বধ করেছিলেন যথাক্রমে ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব এবং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─
✤ পুরাণ অনুসারে বিজয়া দশমী : দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধ ✤
শ্রীশ্রীচন্ডী পুরান অনুসারে, দুর্গাদেবী পরমা প্রকৃতি। জড় জগত সৃষ্টির আদি কারণ; মহাদেবের স্ত্রী। ব্রহ্মার বর পেয়ে মহিষাসুর প্রবল ক্ষমতাশালী হয়ে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল দখল করে নেয়। সে দেবরাজ ইন্দ্রকে স্বর্গ থেকে বিচ্যুত করেন। এরপর স্বর্গচ্যুত দেবতারা ব্রহ্মার শরণ নিলে ব্রহ্মা তখন শিব ও অন্য দেবতাদের সকলকে নিয়ে বিষ্ণুর কাছে আসেন। ব্রহ্মা মহিষাসুরকে বর দিয়েছিলেন যে কোনও পুরুষ তাঁকে হত্যা করতে পারবেন না। বিষ্ণু দেবতার নির্দেশ দেন নিজ শক্তির সঙ্গে মিলিতভাবে নিজ নিজ তেজ একত্রিত করতে।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের মিলিত ত্রিশক্তি থেকে দেবী দূর্গার আবির্ভাব। প্রত্যেক দেবতার তেজে দেবীর বিভিন্ন অঙ্গ – প্রত্যঙ্গ গড়ে উঠে এবং দেবী দূর্গার দশটি হাত আবির্ভূত হয়।
✺✺ দেবী দুর্গার দশ হাতে থাকা দশ অস্ত্র হল ━
ডানহাতের পাঁচটি অস্ত্র
===================
❃১) ত্রিশূল ─── মহাদেব
❃২) খড়্গ বা তলোয়ার ─── গণেশ
❃৩) সুদর্শন চক্র ─── শ্রীবিষ্ণু
❃৪) বাণ (তীর) ─── পবনদেব
❃৫) শক্তি (অগ্নিভল্ল বা অগ্নিবর্শা) ─── অগ্নিদেব
এছাড়াও দেবী ডান হাতে ব্যবহার করেছেন —
✸পদ্ম ─── ব্রহ্মা
✸ অক্ষমালা বা জপমালা ─── ব্রহ্মা
✸কমন্ডলু ─── ব্রহ্মা
বামহাতের পাঁচটি অস্ত্র
===================
❃৬) শঙ্খ (পাশ) ─── বরুণদেব
❃৭) কুঠার (পরশু) ─── বিশ্বকর্মা
❃৮) ঢাল (খেটক)─── বিশ্বকর্মা
❃৯) ধনুক (পূর্ণচাপ) ─── পবনদেব
❃১০) ঘন্টা ─── ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত
এছাড়াও দেবী বাম হাতে ব্যবহার করেছেন —
✸ গদা (কালদণ্ড) ─── যমরাজ
✸ বজ্র (অশনি) ─── ইন্দ্র
✸ সর্প (নাগপাশ) ─── শেষনাগ
❃বস্ত্র-ভূষন-অলঙ্কার – ক্ষীরসমুদ্র প্রদান করেছিলেন বস্ত্র, ভূষন, অলঙ্কার। এগুলি হোল শুভ্র হার, দুটি অজর (চিরনবীন) বস্ত্র, দিব্য চূড়ামণি , কুণ্ডল দ্বয়, বলয়, শুভ্র অর্ধচন্দ্র, সকল হস্তে কেয়ুর , উজ্জ্বল নুপূর দ্বয় , অতিসুন্দর কন্ঠভূষণ এবং সমস্ত অঙ্গুলিতে রত্ন খচিত আংটি।
❃সিংহ – হিমালয় মহাশক্তির জন্য প্রদান করেছিলেন একটি বাহন – সিংহ ও নানান রত্ন। সিংহ শক্তির ধারক ।
❃পানপাত্র – কুবের দিলেন সুরা পূর্ণ (মধুপূর্ণ) পানপাত্র।
এ সকল অস্ত্র দেবী দুর্গার অসীম শক্তি ও গুণের প্রতীক । এই অস্ত্রগুলি বেদে বর্ণিত পাপ দমনকারী বিভিন্ন পুণ্য কর্মকে সূচিত করে।
শক্তির কোন আকার নেই। তাই বিভিন্ন অস্ত্রের আকার দেওয়া হয়েছে মানুষদেরকে বোঝানোর জন্য। সকল শক্তিই ব্রক্ষশক্তি। দুর্গা হলেন আমাদের দেহ দুর্গের মহাশক্তি। সাধক সাধনাকালে সেই শক্তিকে জাগ্রত করেন। সেই শক্তি যখন জাগ্রত হয়, তখন দেহস্থিত রিপুসমূহ তাকে পরাজিত করে বশীভূত করার জন্য উদ্যোগী হয়। সে সময় দেবশক্তি ও আসুরিক শক্তির সংঘর্ষ হয়। সেই অন্তর জগতের সংঘর্ষের একটি প্রতীকী রুপই হচ্ছে দেবী দুর্গা । এটাই শ্রী শ্রী চন্ডীর মাধ্যমে রুপায়িত হয়েছে।
✺✺ তিনি হস্তে সৰ্প ধারণ করেন। যেটি ধ্বংসের সৌন্দর্যকে সূচিত করে।
✺✺ দেবী হিসেবে দুর্গার গায়ের রং অতসী ফুলের মতো সোনালি হলুদ ।
✺✺ তাঁর দশটি হাত তিনটি চোখ রয়েছে। এ জন্য তাঁকে ত্রিনয়না বলা হয় । তাঁর ত্রিনয়নের ইঙ্গিতে নিয়ন্ত্রিত হয় ত্রিকাল।
✸ বাম নয়ন (বাম চোখ)– চন্দ্র স্বরুপা
✸ দক্ষিণ নয়ন (ডান চোখ)–সূর্য স্বরুপা
✸ তৃতীয় নয়ন (কেন্দ্রীয় বা কপালের উপর অবস্থিত চোখ)– অগ্নি স্বরুপা
অর্থাৎ তাঁর বাম চোখ চন্দ্রকে অর্থাৎ ইচ্ছাকে নির্দেশ করে, ডান চোখ সূর্যকে নির্দেশ করে এবং কেন্দ্রীয় বা কপালের উপর অবস্থিত চোখ – জ্ঞান বা অগ্নিকে নির্দেশ করে।
মহাদেবের তেজে মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর তেজে বাহু, চন্দ্রের তেজে স্তন, ইন্দ্রের তেজে কটিদেশ, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পায়ের আঙ্গুল, বসুগণের তেজে হাতের আঙ্গুল, কুবেরর তেজে নাসিকা, প্রজাপ্রতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন, সন্ধ্যার তেজে ভ্রু, বায়ুর তেজে কান এবং অন্যান্য দেবতাদের তেজে দেবী দুর্গার সৃষ্টি হল।
অতঃপর, দিব্য অস্ত্রে সজ্জিত দেবী দুর্গা এবং মহিষাসুরের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়। মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন দুর্গাদেবী।
শ্রীশ্রীচন্ডীর কাহিনী অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী দুর্গা আবির্ভূতা হন এবং আশ্বিনের শুল্কা দশমীতে মহিষাসুরকে বধ করেন। মূলত “বিজয়া দশমী” সেই বিজয়কেই চিহ্নিত করে।
─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─
✤ মহাভারত অনুসারে বিজয়া দশমী : পঞ্চপান্ডবদের মুক্তি ✤
মহাভারতেও বিজয়া দশমী তিথিটির উল্লেখ রয়েছে। পান্ডুর পাঁচ পুত্র (যুধিষ্টির, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব) ১২ বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসের শেষে পাণ্ডবরা আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমীতেই একটি শমীগাছের কোটরে তাঁদের লুকনো অস্ত্র পুনরুদ্ধার করেন এবং ছদ্মবেশ ছেড়ে নিজেদের প্রকৃত পরিচয়ে ঘোষণা করেন।
─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─
✤ বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে বিজয়া দশমী : অশোকের কলিঙ্গ জয় ✤
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে বিজয়া দশমীর আসল নাম “অশোক বিজয়া দশমী”। কলিঙ্গ যুদ্ধে জয়ের পর ১০ দিন ধরে তৃতীয় মৌর্য সম্রাট অশোক বিজয় উত্সব পালন করেছিলেন, সেটিই অশোক বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। তাছাড়া শুক্লা দশমীতেই তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাই বৌদ্ধদের কাছেও এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ।
─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─
✤ বিজয়া দশমীর তাৎপর্য ✤
🕉️ বিজয়া দশমীর একটি তাৎপর্য হল, হিমালয়ের কন্যা হলেন দেবী দুর্গা বা পার্বতী বা উমা। তিনি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছিলেন দেবাদিদেব শিবকে। শিবের আবাসস্থল হল কৈলাস পর্বত। কৈলাস থেকে দেবী দুর্গা বা পার্বতী পিতৃগৃহে আসেন আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এই তিন দিন পিত্রালয়ে থাকার পর দশমী তিথিতে পতিগৃহ কৈলাসে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই কারণেই এই তিথিকে ‘বিজয়া দশমী’ বলা হয়।
🕉️ উপনিষদে আছে ‘মাতৃদেব ভব ’। অর্থাৎ নারীই পরিবারের অভিভাবক। মাতৃজাতি তথা নারী জাতিকে সম্মান করা অবশ্য কর্তব্য। যখনই সংসারে কোনও সমস্যা আসে, নারী তার সকল শক্তি দিয়ে রক্ষা করে। মানবিকতা, ন্যায় বিচার, ভালবাসা, সেবা দিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করে। মা দুর্গার পুজোতে নারী জাতিও উদ্বুদ্ধ হয়। মা দুর্গা যেমন পরিবারকে সঙ্গে আনেন এবং শত্রু বিনাশ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন, তারাও তেমনই তাদের পরিবারকে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ রেখে সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।
🕉️ নবগ্রহ হল নয়টি গ্রহ যথা রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু, ঠিক একই ভাবে মানুষের শরীরেও নবদ্বার আছে। যেমন দুই চক্ষু, দুই কর্ণ, দুই নাসিকা, মুখ, মলদ্বার, প্রস্রাব দ্বার। এই নবদ্বার যদি ঠিকঠাক কার্য করে, তবেই মানুষ সুস্থ থাকে।
নবরাত্রি মানে নয়টি রাত্রি, এই নয়টি রাত্রি নয়টি গ্রহের পরিচালনায় সঠিক ভাবে পরিচালিত হয়। শুধুমাত্র দুর্গাপুজোর বাহ্যিক আড়ম্বরই নয়, মনের অন্তর থেকে দেবীকে পুজো করে প্রতিটা গ্রহের প্রভাবে ব্যাক্তির শরীর যেন সঠিকভাবে চালিত হয়, সেই প্রার্থনা করা।
🕉️ হিন্দু শাস্ত্র মতে, দেবীকে পূজার জন্য আহ্বান করে মাটির প্রতিমাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। চার দিন ধরে চিন্ময়ী দেবীকে যে মৃন্ময়ী রূপে পুজো করা হয়, দশমীতে বিসর্জনের পর তার থেকে মুক্তি পান দেবী দুর্গা।
সুতরাং বিসর্জন নামে দেবী বা কোনো দেবের ধ্বংস নয়, যে মাটির প্রতিমাতে প্রাণশক্তি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল, তার থেকে মুক্ত করে প্রকৃতিতে সেই শক্তি ফিরিয়ে দেওয়া। অনেক ক্ষেত্রে বিসর্জন দেওয়া হয় না। দেব বা দেবীর প্রতিমা গৃহেই থাকে। পরবর্তী পূজার আগে (বছরান্তে) পুরাতন প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে নতুন প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। কাঠের প্রতিমা হলেও তা নির্দিষ্ট সময়ের পর পরিবর্তন করা হয়। ধাতব কিংবা প্রস্তরের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় না, সেক্ষেত্রে নিত্য পূজা করা হয়।
সকলকে বিজয়া দশমীর কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
► আরও পড়ুন: Kola Bou || নবপত্রিকা (কলা বউ বা কলা বৌ) কে? কেনো একে পূজা করা হয় ??
► আরও পড়ুন: Who is Devi Durga? দেবী দুর্গা কে? দশ হাতে অস্ত্র কি কি?