daextlwcn_print_scripts(false);
Who is Devi Durga_ দেবী দুর্গা কে_ দশ হাতে অস্ত্র কি কি_1

দেবী দুর্গা কে (Who is Devi Durga?) ✤ দশ হাতে অস্ত্র কি কি?

2 min


203
172 shares, 203 points

এই অধ্যায়ে বর্ণন করা হয়েছে দেবী দুর্গা কে? (Who is Devi Durga?)  দশ হাতে অস্ত্র কি কি? দুর্গা অর্থ কি? মহামায়া ও যোগমায়া কী একই জন না অভিন্ন? …. প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  

তিনি ভুবনেশ্বরী, তিনি বিশ্বরূপা, তিনি বিশালাক্ষী। তিনি শ্রী। তিনি রুদ্রাণী। তিনি শিবাণী, হরপ্রিয়া, শিবকান্তা, মহেশ্বরী। তিনি সুভদ্রা, বারুনি, দাক্ষায়নী, চন্দ্রিকা, ভগবতী, অম্বিকা, শর্বাণী, বিজয়া, কমলপ্রিয়া, অজা। তিনি স্তুতি, যাদবী, ভার্গবী, দুর্গা, ভদ্রা, ঈশানী, নিরাঞ্জনা, সিংহবাহিনী, কান্তা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, উমা, গৌরী— অনেক নামেই তিনি বন্দিতা ও পুজিতা।

মার্কণ্ডেয় পুরাণের ৮১ হতে ৯৩ অধ্যায় শ্রী শ্রী চণ্ডী নামে খ্যাত। চণ্ডীতে ১৩টি অধ্যায়ে ৭০০ মন্ত্র আছে বলে একে ‘‘সপ্তশতী স্ত্রোত্র’’ বলে। চণ্ডী ‘‘দেবী-মাহাত্ম্য’’ হিসেবেও পরিচিত।

❝ ওঁ সর্ব্ব মঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্রম্ব্যকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে॥ ❞ 

                                           ━━┉┈┈‌(শ্রী শ্রী চণ্ডী ১১/১০)

অনুবাদ: ঐশ্বর্য্যপূর্ণ দক্ষরাজের নন্দিনী এবং বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ দেবাদিদেব ভোলানাথের ঘরণী (পত্মী) হলেন দুর্গাদেবী, যিনি হরি সহায়িনী তথা হরিভক্তি প্রদায়িনী। হে দেবী, আপনি সকল মঙ্গলের মঙ্গলস্বরূপা, কল্যাণকারিণী, চতুর্বর্গ (ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ) প্রদায়িণী, ত্রিনয়না, গৌরবর্ণা হে নারায়ণি আপনাকে প্রণাম।

❝ ওঁ সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি।
গুনাশ্রয়ে গুণময়ি নারায়ণি নমোহস্তুতে॥ ❞

                                           ━━┉┈┈‌(শ্রী শ্রী চণ্ডী ১১/১১)
অনুবাদ: হে দেবী, আপনি সৃষ্টি, স্থিতি (পালন) ও সংহারের (ধ্বংস) শক্তিরূপিণী। আপনি সনাতনি ও ত্রিগুণের (তমঃ, রজঃ, সত্ত্বঃ) আশ্রয়ে থেকেও ত্রিগুণ থেকে মুক্ত (নিগুর্ণা)। হে নারায়ণি আপনাকে প্রণাম।
❝ ওঁ শরণাগত দীনার্ত্ত- পরিত্রাণায়-পরায়ণে।
সর্ব্বস্যার্ত্তি হরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তুতে॥ ❞
                                           ━━┉┈┈‌(শ্রী শ্রী চণ্ডী ১১/১২)
অনুবাদ: হে দেবী, আপনি শরণাগত, দীন ও আর্তগণকে পরিত্রাণ করেন। সকলের দুঃখ-নাশিনী। হে নারায়ণি আপনাকে প্রণাম।

TABLE OF CONTENTS

দেবী দুর্গা কে

(Who is Devi Durga?)

◼️  ব্রহ্মসংহিতায় দুর্গাদেবীর বর্ণনা ◼️

দেবী দুর্গা সম্পর্কে ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৪৪ নং শ্লোকে) সৃষ্টিকর্তা ব্ৰহ্মা বলেছেন ━

❝ সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-সাধন-শক্তিরেকা
ছায়েব যস্য ভুবনানি বিভর্তি দুর্গা।

ইচ্ছানুরূপমপি যস্য চ চেষ্টতে সা

গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি॥ ❞ ‌

অনুবাদ: “আমি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীগোবিন্দের ভজনা করি যাঁর মায়াশক্তিকে বলা হয় দুর্গা। এই দুর্গা হচ্ছেন সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় সাধনকারী এক শক্তি যিনি সমস্ত ভুবনকে ভরণ পোষণ করেন। কিন্তু তিনি ঠিক ভগবানের স্বরূপ শক্তি বা চিৎশক্তির ছায়া স্বরূপা এবং তিনি শুধু আদি পুরুষ গোবিন্দের ইচ্ছা অনুসারে কার্যই সম্পাদন করেন।” (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৪)।  সুতরাং দেবী দুর্গা হলেন শ্রীকৃষ্ণের মায়াশক্তি। তার মানে তিনি একজন পরমা বৈষ্ণবী। তাই এই সংসারে যারা শ্রীগোবিন্দের অনুগত, অর্থাৎ কৃষ্ণভক্ত, শ্রীদুর্গার ত্রিশূল তাদের জন্য নয় ।

শক্তি উপাসকেরা খুব উৎসাহের সঙ্গে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। কিন্তু তারা ভুলে যান যে তিনি শ্রীগোবিন্দের ছায়া শক্তি এবং শ্রীগোবিন্দের ইচ্ছার বাইরে তিনি কিছু করেন না। দেবী উপাসকেরা মায়ের কাছে ধন দাও, জন দাও, রূপবতী ভার্যা দাও ━ এই ভাবে অসংখ্য জড় জাগতিক ক্ষণস্থায়ী বর প্রার্থনা করে। অন্য দিকে কৃষ্ণভক্তরা কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করে যে আমি ধন চাই না, জন চাই না, সুন্দরী স্ত্রী চাই না। কৃষ্ণভক্তের একমাত্র কাম্য হচ্ছে অহৈতুকী কৃষ্ণপ্রেম, যা জীবনের নিত্য সম্পদ।

বৃন্দাবনের গোপীরাও দেবী দুর্গাকে কাত্যায়নী রূপে আরাধনা করেছিলেন। কিন্তু তারা দুর্গার কাছে কৃষ্ণকে স্বামীরূপে লাভ করার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তাই আমরাও গোপীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দুর্গার কাছে শুধু কৃষ্ণপ্রেম প্রার্থনা করব। তাহলেই দুর্গা আমাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হবেন এবং আমাদেরকে কৃষ্ণভক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবেন। অন্যথায় তিনি মহামায়ারূপে জীবের জড় বাসনা পূর্ণ করার পাশাপাশি তাঁর ত্রিশূলের আঘাতও চালিয়ে যাবেন।

তার আগের শ্লোকটিতে (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৩) বলা হয়েছে যে, গোবিন্দের (অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের) নিজ ধামের নাম হচ্ছে ‘গোলোক‘। গোলোকের তলে রয়েছে হরি ধাম অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর নিবাস যা ‘বৈকুণ্ঠলোক‘ নামে খ্যাত। তার তলে রয়েছে মহেশ ধাম অর্থাৎ ভগবান শিবের নিবাস যা ‘শিবলোক‘ নামে খ্যাত। আর তার তলে রয়েছে দেবী দুর্গার ধাম অর্থাৎ এই জড় জগত যা ‘দেবীধাম‘ নামে খ্যাত। এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ধামে যিনি নিজ শক্তি এবং ক্ষমতা বন্টন করে প্রদান করেছেন, আমি সেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীগোবিন্দের ভজনা করি।

এইভাবে শক্তি বন্টন করে বিভিন্ন দেবদেবীকে প্রদান করার ফলে ভগবান শ্রীগোবিন্দ কিন্তু শক্তিহীন হয়ে যান না। শ্রীঈশোপনিষদে বলা হয়েছে ━

❝ ওঁ পূর্ণমিদং পূর্ণমদঃ পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে॥ ❞

                                           ━━┉┈┈‌(আবাহন বা মঙ্গলাচরণ)

অনুবাদ: “ভগবান পূর্ণ। তাঁর সৃষ্টি পূর্ণ। পূর্ণ থেকে পূর্ণই উদ্ভূত হয় ৷ পূর্ণ থেকে পূর্ণ আদায় করলে পূর্ণই অবশিষ্ট থাকে। অর্থাৎ ভগবান যদিও অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডে অনন্ত কোটি দুর্গা প্রমুখ দেবদেবী নিযুক্ত করেছেন, এবং তাদেরকে অনন্ত পরিমাণ শক্তি প্রদান করেছেন, তা সত্ত্বেও ভগবান শ্রীগোবিন্দের শক্তি কিন্তু পূর্ণ রয়ে গেছে। এক বিন্দু শক্তিও কমে যায়নি।”

দেবী দুর্গার প্রণাম মন্ত্রে বলা হয়েছে ━

❝ যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ॥ ❞

অনুবাদ:  “যে দেবী সর্বভূতে (সর্বজীবে) বিষ্ণু মায়ারূপে বিরাজ করেন, তাঁকে বারংবার নমস্কার।”

মহামায়া বা দুর্গাদেবী হলেন লীলা পুরুষোত্তম পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বহিরঙ্গের শক্তি (মায়া শক্তি)। তিনি শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গাশক্তি বা পরাশক্তি শ্রীমতি রাধারানীর ছায়া রূপা। শ্রীকৃষ্ণ তার এই বহিরঙ্গা শক্তি দেবী দুর্গার মাধ্যমে মহাবিশ্ব প্রকাশ করেন। এই পার্থিব জগতের সৃষ্টি, পালন এবং ধ্বংসের তত্ত্বাবধান করেন। সমগ্র বিশ্বের অধীশ্বরী দেবী এই দুর্গা। তিনি দশভূজারূপে দশ প্রকারের ফল প্রদান করেন। তিনি সিংহের ওপর আরোহণ করে তাঁর মহাশক্তির প্রদর্শন করেন। তিনি মহিষাসুরকে পদদলিত করেন যে মহিষাসুর সমস্ত পাপকার্যের প্রতিনিধি ছিল। দুর্গার শব্দের অর্থ যিনি দূর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন।

Who is Devi Durga_ দেবী দুর্গা কে_ দশ হাতে অস্ত্র কি কি_7

বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি সচরাচর দেখা যায় সেটি পরিবারসমন্বিতা বা সপরিবার দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যস্থলে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী; তাঁর ডানপাশে উপরে দেবী লক্ষ্মী (ধন অর্থাৎ পার্থিব ঐশ্বর্য বা বৈশ্যশক্তির প্রতীক) ও নিচে গণেশ (সাফল্য বা শুদ্রশক্তির প্রতীক); বামপাশে উপরে দেবী সরস্বতী (জ্ঞান বা ব্রহ্মণ্য শক্তির প্রতীক) ও নিচে কার্তিক (সৌন্দর্য বা ক্ষত্রিয় শক্তির প্রতীক)।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছাতেই দেবীদুর্গা কৃষ্ণভক্তি বিমুখ ব্যক্তিদের সংশোধনের (শাসনের) জন্য এ জড় জগৎরূপ দূর্গ বা কারাগারে আবদ্ধ করে রেখেছেন এবং এই কারাগারের কর্ত্রী হলেন দেবীদুর্গা। বন্দীদেরকে যেমন বিশেষ পোশাক দেওয়া হয় অনুরূপভাবে আমাদেরও একটি পোশাক দেওয়া হয়েছে মানবদেহ রূপী পোশাক, পশুরূপী পোশাক, বৃক্ষরূপী পোশাক ইত্যাদি। যতক্ষণ আমরা এই দেহে এই জড়জগতে বাস করব আমরা দুর্গাদেবীর নিয়ন্ত্রণাধীন। আমাদের বুঝতে হবে যে, দুর্গাদেবী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ অনুসারে কার্য করেন। সুতরাং তিনি স্বাধীন কিন্তু পরম নিয়ন্তা নন, তিনি শুধু পরমেশ্বর ভগবানের আদেশ অনুযায়ী কার্য করছেন যেমনভাবে ছায়া কোন বস্তুকে অনুসরণ করে।

দেবী দুর্গার দশ হাতে ত্রিশূল ইত্যাদি অস্ত্র রয়েছে। ‘ত্রি’ মানে তিন এবং ‘শূল‘ মানে ব্যথা বা যন্ত্রণা ৷ জড় জগৎরূপ দূর্গ বা কারাগারে তিনি আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিকআধিদৈবিক – এই তিন প্রকার ক্লেশ বা যন্ত্রণা প্রদান করছেন, যার প্রতীকরূপে তাঁর হাতে ত্রিশূল দেখা যায়।

আধ্যাত্মিক ক্লেশজড়দেহ ও মন থেকে উৎপন্ন দুঃখকে বলে আধ্যাত্মিক ক্লেশ। যেমন- ক্ষুধা-তৃষ্ণা, শোক-ভয়, বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি, মানসিক যন্ত্রণা – উদ্বেগ ইত্যাদি।
আধিভৌতিক ক্লেশঅন্য কোনো জীবের কাছ থেকে প্রাপ্ত দুঃখকে বলে আধিভৌতিক ক্লেশ। যেমন- বিভিন্ন রোগ-জীবাণু, মশা-মাছি-ছাড়পোকা, হিংস্র জন্তু-জানোয়ার ইত্যাদির কাছ থেকে দুঃখ। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, হ্যাকিং, যুদ্ধ-বিবাদ, শত্রুতা, ষড়যন্ত্র, হানাহানি, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, এসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি।
আধিদৈবিক ক্লেশদেবতাদের দ্বারা প্রদত্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ যে ক্লেশ পেয়ে থাকে তাকে বলে আধিদৈবিক ক্লেশ (দুঃখ)।  যেমনঃ ঝড়-তুফান, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, খড়া-বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, অত্যধিক গরম, অত্যধিক ঠাণ্ডা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: ত্রিতাপ ক্লেশ / ত্রিতাপ দুঃখ কি? (What is Tritaap Kleshas)

আদি দুর্গার স্বামী হচ্ছেন সদাশিব, যাকে মহাবিষ্ণুও বলা হয়। সদাশিব যখন দুর্গার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন, তখনই শুরু হয় জড় জগতের সৃষ্টি।

◼️  শ্রীমদ্ভাগবতম্ গ্রন্থে দুর্গাদেবীর বর্ণনা ◼️

শ্রীমদ্ভাগবতম্ গ্রন্থেও এই দুর্গাদেবী সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। ঐ গ্রন্থের ১০ম স্কন্ধের ৮৭নং অধ্যায়ের ২৮ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে ━

হে গোবিন্দ, যদিও আপনার কোনও জড় ইন্দ্ৰিয় নেই, তবুও আপনি হলেন প্রতিটি জীবের ইন্দ্রিয় শক্তির স্বয়ং উদ্ভাসিত শক্তি প্রদাতা। সমস্ত দেবতাগণ এবং স্বয়ং দুর্গাদেবী (অজয়া) আপনাকে সম্মান করেন। আবার তাঁদের উপাসনাকারীদের প্রদত্ত উপহারও তারা উপভোগ করেন। ঠিক যেমন অধীনস্থ করদানকারী মিত্র রাজারা রাজাধিরাজকে কর প্রদান করেও প্রজাদের দ্বারা প্রদত্ত কর তাঁরা নিজেরাও ভোগ করেন। এই ভাবে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টাগণ আপনার ভয়ে বিশ্বস্ত ভাবে তাঁদের প্রতি আপনার দ্বারা প্রদত্ত সেবার দায়িত্বভার পালন করেন।

◼️  কেন দুর্গাদেবী জীবকে শাস্তি প্রদান করেন ? ◼️

ব্রহ্ম সংহিতার ৫/৪৪ নং শ্লোক বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, দুর্গাদেবী হলেন এই জড়জগতের “সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় সাধনকারী।” কিন্তু তিনি স্বাধীনভাবে কোন কর্ম করেন না, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছানুসারে তিনি সকল কর্ম সম্পাদন করেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণের ভগিনীরূপে আবির্ভূত হন দ্বাপর যুগে।

জড়জগত তথা এই কারাগাররূপী দুর্গের কর্ত্রী হলেন দুর্গাদেবী, এই দুর্গকে রক্ষা করার জন্য তিনি তার হাতে দশপ্রকার অস্ত্র ধারণ করেন। সুতরাং যত শক্তিশালীই হোক না কেন এই দুর্গ থেকে কেউ পলায়ন করতে পারবেন না। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ৭/১৪ শ্লোকেতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুনিশ্চিত করেছেন যে, “দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া।” অর্থাৎ আমার এই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমণীয়।

যে সমস্ত মানুষ শ্রীকৃষ্ণের প্রতি করণীয় সেবা থেকে বিস্মৃত হয়, তাদেরকে এই কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং সেই সব জীবাত্মাগণ সূক্ষ্ম ও স্থূলদেহে আবদ্ধ থাকে। সেইহেতু এই পার্থিব জগতে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা পাই না এবং আমরা এখানে যে জড়সুখ ভোগ করি তা সর্বদাই যন্ত্রণাময় ।

দুর্গাদেবী হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বহিরঙ্গা শক্তি। তার হস্তে আমাদের, বন্দীদের সংশোধনের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে। এখানে যে শাস্তি আমরা পাই তা সর্বদা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে এটি আমাদের স্থায়ী নিবাস নয় এবং কোন জড় সুখ স্বাচ্ছন্দ্যই আমাদের যন্ত্রণামুক্ত করতে পারে না। যদিও এটি প্রকৃতপক্ষে শাস্তি নয়। এটি রূপান্তর করণের মাধ্যম মাত্র ৷ এই জড় জগতেও যখন কেউ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয় তখন তা সত্যিকারে শাস্তির জন্য নয় তা রূপান্তরের জন্য। তাই দেবী দুর্গার কাছে ত্রিশূল আছে। ত্রিশূল জড়জাগতিক ত্রিতাপ ক্লেশকে প্রকাশ করে ━ আধ্যাত্মিক ক্লেশ (আমাদের শরীর এবং মনের ক্লেশ), আধিভৌতিক ক্লেশ (অন্য জীব দ্বারা প্রাপ্ত ক্লেশ) এবং আধিদৈবিক ক্লেশ (প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে প্রাপ্ত ক্লেশ)। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রত্যেকেই এই তিন প্রকারের ক্লেশের কোন না কোন একটিতে পীড়িত হচ্ছে। সুতরাং এই ক্লেশ আর কিছুই নয় এটি দেবী দুর্গার ত্রিশূল। তিনি প্রতিনিয়ত তাঁর ত্রিশূল দিয়ে জীবকে বিদ্ধ করে চলেছেন। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবকুলকে সচেতন করা, শাস্তি প্রদান করা নয়।

তথাপি দুর্ভাগ্যক্রমে অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞানতাবশতঃ বিশ্বাস করে যে জড় ঐশ্বর্যের সাহায্যে তারা এখানে সুখে বসবাস করতে পারে। সেইজন্য তারা ঐশ্বর্য, সম্পদ, সন্তান, সুন্দর পতি, সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি জাগতিক বর প্রার্থনা করে দুর্গাদেবীর কাছে। যদিও তিনি অনিচ্ছা সহকারে এই সকল অভিলাষ পূর্ণ করেন। কারণ তিনি জানেন যে এই ব্রহ্মাণ্ডে যে চৌদ্দ ভুবন আছে সেখানে কেউ স্থায়ীভাবে সুখী হতে পারে না। এই জড়জগতের পরম সত্য মৃত্যু আমাদের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে নেবে। সেইহেতু তিনি চান যে আমরা শ্রীকৃষ্ণের নিকট শ্রীকৃষ্ণের ধাম গোলোক বৃন্দাবনে প্রত্যাবর্তন করি যেখানে আমাদের জীবনসহ সকলই নিত্য ।

প্রকৃতপক্ষে দুর্গাদেবী আমাদের দূর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন। জেলার যেমন কয়েদীকে দুঃখ দানের মাধ্যমে সংশোধন করেন এবং কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পথ প্রশস্ত করেন, তেমনি বদ্ধজীবদের দুঃখ দানের মাধ্যমে দুর্গাদেবী জীবকে পাপের ফল ভোগ করান এবং প্রতিনিয়ত দুঃখ পাওয়ার ফলে জীব এ জগৎ যে দুঃখালয় ও অশাশ্বত তা অনুভব করে।

বদ্ধজীবের প্রতি দেবী দুর্গার দুই প্রকার কৃপা
==============================

১) সকপট কৃপা : এই কৃপা দ্বারা দেবী মায়ামুগ্ধ জীবদের ধন, জন, রূপ, যশ ইত্যাদি জড় বিষয়

প্রদান করে মায়া দ্বারা মোহিত করে রাখেন।

২) অকপট কৃপা : এই কৃপা দ্বারা তিনি জীবকে কৃষ্ণভক্তি প্রদান করেন।

এভাবে, দেবী দুর্গা মহামায়া রূপে অনিত্য জড় সুখ ও দুঃখ দানের মাধ্যমে জীবকে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখেন এবং তিনিই যোগমায়া রূপে আমাদের এ দূর্গতি নাশ করেন, মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের চিন্ময়ধামে ফিরে যেতে সহায়তা করেন। তাই তিনি একই সঙ্গে দূর্গতি দায়িনী এবং দূর্গতি নাশিনী।

◼️ আসন্ন দুর্গপূজায় দেবী দুর্গার কাছে কি প্রার্থনা করতে হবে? ◼️

দুর্গাদেবী সর্বাপেক্ষা সন্তুষ্ট হন যখন তিনি কোন আত্মাকে শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হবার জন্য সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করতে দেখেন। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর বিশ্লেষণ করেছেন, “এই সকল শাস্তিপ্রাপ্ত জীবের সংশোধনের কর্মই দুর্গাদেবীর উপর ন্যস্ত হয়েছে। তিনি গোবিন্দের অভিলাষ অনুসারে নিরন্তর এদের মুক্তিপ্রদানের কর্মেও নিয়োজিত আছেন। যখন সৌভাগ্যক্রমে গোবিন্দকে বিস্মৃত হয়ে কারাগারে আবদ্ধ কোন জীব আত্মতত্ত্বজ্ঞানী কোন আত্মার সংস্পর্শে আসে এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রেমময়ী সেবার সহজাত প্রবৃত্তি তার মধ্যে জাগরিত হয়, দুর্গাদেবী স্বয়ং তখন গোবিন্দের অভিলাষ অনুসারে তাদের মুক্তি প্রদান করেন।”

শ্রীব্রহ্ম-সংহিতার ৫।৪৪ তাৎপর্য অনুসারে দুর্গাদেবী এই পৃথিবীতে আমাদের শ্রীকৃষ্ণের ভক্তে রূপান্তরিত করাতে আসেন। এই পবিত্র দুর্গাপূজায় আসুন আমরা কোন জাগতিক সম্পদের জন্য তাঁর নিকট প্রার্থনা না করে পারমার্থিক সম্পদের জন্য তাঁর নিকট প্রার্থনা করি। আসুন আমরা তাঁর নিকট এই প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের হৃদয়ের সকল জাগতিক অভিলাষ অপসারিত করে আমাদেরকে তাঁর প্রিয় শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরূপে গড়ে তোলেন ।

🙏🌺 জয় মা দুর্গা 🌺🙏

◼️ কেন আমি এই জড় জগতে এত কষ্ট পাচ্ছি? ◼️

‘যখন আমি গর্ভে নয় মাস উপুড় হয়ে ছিলাম যেখানে অন্ধকারে কৃমি কীটেরা প্রতিমুহূর্তে আমাকে দংশন করত। জন্ম গ্রহণের পরে আমি পুনরায় জরা ও ব্যাধি দ্বারা তাড়িত হব এবং পরিশেষে মৃত্যু এসে আমার সব কিছু কেড়ে নেবে’। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির উপরেই সদাসর্বদা চিন্তাভাবনা করি এবং দেবী দুর্গা বারবার চেষ্টা করেন আমাদেরকে বোঝাতে যে, কারাগার রূপী এই পৃথিবী দুঃখে পরিপূর্ণ, এটি হচ্ছে ‘দুঃখালয়ম্‘ (গীতা ৮.১৫)।

এই কারণেই শাস্ত্র সমূহ এবং ভগবানের শুদ্ধ ভক্তরা ক্রমান্বয়ে আমাদের স্মরণ করাতে থাকেন যে, এই পৃথিবীর অনিত্য আনন্দের পিছনে আমাদের কখনোই ছোটা উচিত নয় বরং এই কারাগার থেকে মুক্তির জন্য আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ধামে ফিরে যাওয়া উচিত।

─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─

দুর্গা অর্থ কি?

(Meaning of Durga)

বিভিন্ন কারণে ভগবানের এই বহিরঙ্গা শক্তিকে দুর্গা বলা হয় ।

হিন্দু শাস্ত্রে ‘দুর্গা’ শব্দটির ব্যাখ্যা বর্ণন করা হয়েছে ━

“ দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত ॥
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত॥ ❞

অনুবাদ: ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, ‘উ-কার’ বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও ‘অ-কার’ ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।

মহিষাসুর দেহস্থ প্রবল রিপুর প্রতীক। কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ, মাৎসর্য ━ এই ছয় রিপুতে ঘনীভূত মূর্তি হল মহিষাসুর। আমাদের মধ্যেও রয়েছে এই অসুরের বাস। ভক্তিপথে অগ্রসর হতে হলে এই ছয় রিপুকে বর্জন করে স্বাত্বিক গুণ অর্জন করতে হবে যা অত্যন্ত কঠিন। তার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেন দেবী দুর্গা। ভগবানের বহিরাঙ্গা শক্তি।

অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা” – অর্থাৎ, দুর্গম্‌ নামক অসুরকে যিনি বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা। (শব্দকল্পদ্রুম ৩/১৬৬৬; পূজা বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা ১৯৯৯,পৃষ্ঠা ৪৪)। বলা বাহুল্য, দুর্গম হল হিরণাক্ষপুত্র রুরুর বংশধর।

আবার, ‘দুঃ‘ মানে কষ্টসাধ্য। ‘‘ মানে গমন। যেখানে গমন করা দুঃসাধ্য, তাকেই বলে দুর্গ। এজন্য জেলখানাকে দুর্গ বলা হয়, এবার এই দুর্গকে স্ত্রীলিঙ্গে বলা হয় দুর্গা। জেলখানার চারপাশে বিশাল প্রাচীর দেওয়া থাকে। যার ফলে এই প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে কোনও মানুষ বা প্রাণী সহজে এই দুর্গে প্রবেশ বা বাইরে বেরুতে পারে না। ঠিক তেমনি সমস্ত জড় ব্রহ্মাণ্ডগুলি পঞ্চভূত দ্বারা নির্মিত অতি দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। এটি হচ্ছে ভগবানের দ্বারা নির্মিত জেলখানা তথা দুর্গ । আর এই দুর্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে বলে দুর্গা ।

অন্যদিকে, শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে দুর্গা দেবীই ‘নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ’ বা সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি।

দেবী দুর্গার অন্যান্য নাম
===================

চন্ডিকা, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরমর্দিনী, নারায়ণী, মহামায়া, কাত্যায়নী, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা ইত্যাদি।

─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─

Who is Devi Durga_ দেবী দুর্গা কে_ দশ হাতে অস্ত্র কি কি_6

দেবী দুর্গার দশ হাতে থাকা দশ অস্ত্রের মাহাত্ম্য কি

(Significance of the 10 weapons of Maa Durga)

সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের আরাধ্য দেবী ‘মহামায়া’ (দুর্গা) সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা৷ তিনি দশভুজা (দশ হাত)। বিশেষ করে দেবী দুর্গার দশ হাতে থাকা দশ অস্ত্র সম্পর্কে আমাদের অনেকের সুস্পষ্ট কোন ধারণাই নেই৷

◼️  দেবী দুর্গার কেন দশটি হাতের প্রয়োজন পড়ল? ◼️

(১) দেবী দুর্গার দশভুজা (দশ হাত) দশটি দিকের প্রতীক। দশ দিক থেকে মহিষাসুরকে বধ করার উদ্দেশ্যে দেবী দুর্গার দশটি হাত। দশ দিক হল ━ পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈর্ঋত, ঊর্ধ্ব এবং অধঃ

(২) আবার,  চার বর্ণের  প্রতিটি বর্ণের মানুষ রক্ষা করার জন্য তাকে দেওয়া হলো দুটি করে হাত। আর নারীশক্তির জন্য আরও দুটি। মোট দশটি হাত।  যাতে দশ হাতে দশ রকম অস্ত্র ধরে দশ দিক থেকে মানুষ আর দেবতাকে রক্ষা করতে পারেন দেবীদুর্গা।

দুর্গাচণ্ডিতে দেবী দুর্গাকে দশ প্রহরণধারিণী নামে অভিহিত করা হয়। মহালয়ার পূর্ণ্য তিথিতে আহ্বান জানানো হয়, “জাগো দুর্গা, জাগো দশ প্রহরণধারিণী।” ‘প্রহরণ‘ শব্দের অর্থ হাতিয়ার, প্রহার বা অস্ত্র। দশ হাতে অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে যিনি অসুর বা অপশক্তি নাশ করেন তিনিই দশ প্রহরণধারিণী।

পুরাণমতে তখন অসুরের দলের দৌরাত্ম্য তখন স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল তিন লোকেতেই। ব্রহ্মার বর পেয়ে মহাশক্তিশালী হয়ে উঠেছে অসুরের দল। এমনকি দেবতাদেরও বিতাড়িত করেছেন স্বর্গ থেকে। এদিকে পৃথিবীর মানুষও বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে অসুরদের হাতে। তার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না নারীও। এমনকি চার বর্ণের মানুষকেই নির্বিশেষে ধ্বংস করছে অসুররাজ মহিষাসুর। বিপন্ন দেবতারা তখন গিয়ে ত্রিদেব- মহাদেব, বিষ্ণু ও ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন মহিষাসুরকে বধ করার জন্য।

ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের মিলিত ত্রিশক্তি থেকে দেবী দুর্গার আবির্ভাব।  প্রত্যেক দেবতার তেজে দেবীর বিভিন্ন অঙ্গ – প্রত্যঙ্গ গড়ে উঠে এবং দেবী দুর্গার দশটি হাত আবির্ভূত হয়।

◼️  দেবী দুর্গার উৎপত্তির উৎস ◼️

সেই ধারাবাহিকতায় মহাদেবের তেজে মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর তেজে বাহু, চন্দ্রের তেজে স্তন, ইন্দ্রের তেজে কটিদেশ, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পায়ের আঙ্গুল, বসুগণের তেজে হাতের আঙ্গুল, কুবেরর তেজে নাসিকা, প্রজাপ্রতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন, সন্ধ্যার তেজে ভ্রু, বায়ুর তেজে কান এবং অন্যান্য দেবতাদের তেজে শিবারূপী দুর্গার সৃষ্টি হল।

তারপর দেবতারা দুর্গাদেবীকে একে একে বস্ত্র, পোশাক ও অস্ত্র দান করলেন……..

◼️  দেবী দুর্গার রূপ ◼️

✺✺ দেবী দুর্গার দশ হাতে থাকা দশ অস্ত্র হল ━

ডানহাতের পাঁচটি অস্ত্র
===================

১) ত্রিশূল ─── মহাদেব

২) খড়্গ বা তলোয়ার ─── গণেশ

৩) সুদর্শন চক্র ───  শ্রীবিষ্ণু

৪) বাণ (তীর) ─── পবনদেব

৫) শক্তি (অগ্নিভল্ল বা অগ্নিবর্শা) ─── অগ্নিদেব

এছাড়াও দেবী ডান হাতে ব্যবহার করেছেন — 

পদ্ম ─── ব্রহ্মা

অক্ষমালা বা জপমালা ─── ব্রহ্মা

কমন্ডলু ─── ব্রহ্মা

 

বামহাতের পাঁচটি অস্ত্র
===================

৬) শঙ্খ (পাশ) ─── বরুণদেব

) কুঠার (পরশু) ──── বিশ্বকর্মা 

৮)  ঢাল (খেটক) ─── বিশ্বকর্মা 

৯) ধনুক  (পূর্ণচাপ) ─── পবনদেব

১০) ঘন্টা ─── ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত

এছাড়াও দেবী বাম হাতে ব্যবহার করেছেন —

গদা (কালদণ্ড) ─── যমরাজ

 বজ্র (অশনি) ─── ইন্দ্র

 সর্প (নাগপাশ) ─── শেষনাগ

বস্ত্র-ভূষন-অলঙ্কারক্ষীরসমুদ্র প্রদান করেছিলেন বস্ত্র, ভূষন, অলঙ্কার। এগুলি হোল শুভ্র হার, দুটি অজর (চিরনবীন) বস্ত্র, দিব্য চূড়ামণি , কুণ্ডল দ্বয়, বলয়, শুভ্র অর্ধচন্দ্র, সকল হস্তে কেয়ুর , উজ্জ্বল নুপূর দ্বয় , অতিসুন্দর কন্ঠভূষণ এবং সমস্ত অঙ্গুলিতে রত্ন খচিত আংটি।

সিংহ – হিমালয় মহাশক্তির জন্য প্রদান করেছিলেন একটি বাহন – সিংহ ও নানান রত্ন। সিংহ শক্তির ধারক ।

পানপাত্র – কুবের দিলেন সুরা পূর্ণ (মধুপূর্ণ) পানপাত্র।

এ সকল অস্ত্র দেবী দুর্গার অসীম শক্তি ও গুণের প্রতীক । এই অস্ত্রগুলি বেদে বর্ণিত পাপ দমনকারী বিভিন্ন পুণ্য কর্মকে সূচিত করে।

শক্তির কোন আকার নেই। তাই বিভিন্ন অস্ত্রের আকার দেওয়া হয়েছে মানুষদেরকে বোঝানোর জন্য। সকল শক্তিই ব্রক্ষশক্তি। দুর্গা হলেন আমাদের দেহ দুর্গের মহাশক্তি। সাধক সাধনাকালে সেই শক্তিকে জাগ্রত করেন। সেই শক্তি যখন জাগ্রত হয়, তখন দেহস্থিত রিপুসমূহ তাকে পরাজিত করে বশীভূত করার জন্য উদ্যোগী হয়। সে সময় দেবশক্তি ও আসুরিক শক্তির সংঘর্ষ হয়। সেই অন্তর জগতের সংঘর্ষের একটি প্রতীকী রুপই হচ্ছে দেবী দুর্গা । এটাই শ্রী শ্রী চন্ডীর মাধ্যমে রুপায়িত হয়েছে।

✺✺ তিনি হস্তে সৰ্প ধারণ করেন। যেটি ধ্বংসের সৌন্দর্যকে সূচিত করে।

✺✺ দেবী হিসেবে দুর্গার গায়ের রং অতসী ফুলের মতো সোনালি হলুদ । 

✺✺ তাঁর দশটি হাত তিনটি চোখ রয়েছে। এ জন্য তাঁকে ত্রিনয়না বলা হয় । তাঁর ত্রিনয়নের ইঙ্গিতে নিয়ন্ত্রিত হয় ত্রিকাল

বাম নয়ন (বাম চোখ)– চন্দ্র স্বরুপা

দক্ষিণ নয়ন (ডান চোখ)–সূর্য স্বরুপা

তৃতীয় নয়ন (কেন্দ্রীয় বা কপালের উপর অবস্থিত চোখ)– অগ্নি স্বরুপা

অর্থাৎ তাঁর বাম চোখ চন্দ্রকে অর্থাৎ ইচ্ছাকে নির্দেশ করে, ডান চোখ সূর্যকে নির্দেশ করে এবং কেন্দ্রীয় বা কপালের উপর অবস্থিত চোখ – জ্ঞান বা অগ্নিকে নির্দেশ করে।

শ্রীশ্রীচন্ডীর কাহিনী অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী দুর্গা আবির্ভূতা হন এবং আশ্বিনের শুল্কা দশমীতে মহিষাসুরকে বধ করেন। মূলত “বিজয়া দশমী” সেই বিজয়কেই চিহ্নিত করে।

◼️  দেবী দুর্গার দশ অস্ত্রের মাহাত্ম্য ◼️

মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুসারে দেবী দুর্গার দশ হাতের ১০ অস্ত্রের তাৎপর্য হল নিম্নরূপ : 

(১) ত্রিশূল (Trident or Trishul):–  দেবী দুর্গার হাতে এই ত্রিশূল তুলে দিয়েছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব ৷ ত্রিশূলের তিনটি ফলা যা মানুষের তিনটি গুণ (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ), সময়চক্র (অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত) এবং প্রকৃতির সার্বজনীন চক্র (সৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং ধ্বংস) কে ইঙ্গিত করে। ত্রিশূলের চালককে ত্রয়ীর (ত্রিত্বের) নিয়ন্ত্রিতা হিসাবে গন্য করা হয়।

সত্ত্ব হল জ্ঞান, তম হল অন্ধকার, আর রজঃ হল অহংবোধ।

তমঃ গুণ হল রাক্ষস বা ঋণাত্মক শক্তির প্রকাশ অর্থাৎ সব ধ্বংসের মূল হল এই ক্রোধ, লোভ, মিথ্যা, বিলাসিতা, প্রতারণা, চুরি, হত্যা ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজ।

রজঃ গুণ হল জীব কূলের গুণ অর্থাৎ মানুষ যেমন শোক, লোভ, মায়া, মোহ, কাম, দুঃখ দ্বারা সর্বদা জর্জরিত থাকে। এই গুণ মানুষের মায়া স্বরূপ।

সত্ত্ব গুণ হলো দেবগুণ। অর্থাৎ, এই গুণ নিরহংকার, ত্যাগ ও উচ্চ অলৌকিকত্বের প্রকাশ।

ত্রিশূলের মধ্য ভাগের ফলাটি সত্ত্ব। আর বাকি দুটি রজঃ ও তমঃ গুণ বিশিষ্ট ফলা। অর্থাৎ মানব জীবনের লক্ষ্য হলো সত্ত্বঃ গুণের বিকাশ যা মুক্তির পথ। ত্রিশূল যার স্পর্শে বা স্মরণ নিলে ত্রিগুণ থেকে মুক্তি লাভ হয়।

(২) ঙ্খ বা পাশ (Conch):– দেবী দুর্গাকে বরুণদেব দিয়েছিলেন শঙ্খ। যার ধ্বনি মঙ্গলময়। শঙ্খের আওয়াজে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল অবস্থিত সমস্ত অশুভ শক্তি ভীত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। শঙ্খকে মঙ্গলের প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়। সেজন্যেই দুর্গাদেবীকে শুভ শক্তির আধার বলে মনে করা হয়। এই অস্ত্র দ্বারা দেবী যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন মহিষাসুরের বিরুদ্ধে।

পুরাণ অনুযায়ী শঙ্খ থেকে যে শব্দের সৃষ্টি হয় তা থেকেই সমগ্র জীবজগত ও প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে তাই সনাতন ধর্মে এই শঙ্খকে ইতিবাচক শক্তির আধার রূপে ধরা হয়। যা সৃষ্টির আদিম ধ্বনির প্রতীক – ওম। যা হিন্দু ধর্ম অনুসারে সৃষ্টির আদি ধ্বনি। জল এবং সৃষ্টির একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যেমন আধুনিক বিজ্ঞান অনুসারে, পৃথিবীতে জীবনের শুরু হয়েছিল মহাসাগরে।

(৩) চক্র বা সুদর্শন চক্র (Discus or Sudarshan Chakra):–  দেবী দুর্গার হাতে সুদর্শন চক্র তুলে দিয়েছিলেন শ্রীবিষ্ণু। চক্র অর্থাৎ আবর্তন। তাই তাঁকে এই চক্র প্রদান করার অর্থ হল, ‘সমস্ত সৃষ্টি ও জগতের কেন্দ্রে অধিষ্ঠান’ করছেন দেবী দুর্গা এবং দেবীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়ে চলেছে সমগ্র জগত।

আবার, ‘সু’ অর্থ = সুন্দর, অপরূপ এবং ‘দর্শন’ অর্থ = দৃশ্যমান, দেখা। সুদর্শন চক্র এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অপার সৌন্দর্যের প্রতীক। বিশ্বকর্মা এটি বিষ্ণুর জন্য নির্মাণ করেছিলেন এই জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অশুভ শক্তি বিনাশের জন্য।

(৪) গদা (Mace):–  মা দুর্গাকে যমরাজ (মৃত্যু এবং ন্যায়বিচারের দেবতা) প্রদান করেছিলেন গদা বা কালদণ্ড। এটিকে মূলত ভক্তি, আনুগত্য ও ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়। সেই সঙ্গে শক্তিরও প্রতীক। দশভূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হল গদা। তাই তাঁকে এই গদা প্রদান করার অর্থ হল – ভক্তি, আনুগত্য ও ভালোবাসার কারণে মানুষের মন-বুদ্ধি-দেহ-বিচার বোধ শুদ্ধ হয়, শুদ্ধ ভক্তির কারণে সে জড় জগত থেকে মুক্ত হয়।

জেনে রাখা দরকার, উপাসনার উপর ভিত্তি করে কেউ পিতৃলোক (মাতা-পিতার উপাসকগণেরা), দেবলোক (দেব-দেবীর উপাসকগণেরা), ব্রহ্মলোক (নিরাকারবাদীরা, ব্রহ্মার উপাসকগণেরা), শিবলোক (শিবের উপাসকগণেরা), বিষ্ণুলোক বা বৈকুণ্ঠ ধাম (বিষ্ণুর উপাসকগণেরা) কিংবা সর্বোচ্চ চিন্ময় ধাম গোলোক বৃন্দাবনে (ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসকগণেরা) পৌঁছাতে পারেন। শাস্ত্র অনুযায়ী, কেউ মুক্ত হয়ে একবার গোলোক বৃন্দাবনে পৌঁছালে তাকে আর এই জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না; সেটাই হল প্রকৃত মুক্তি।           

(৫-৭) পদ্ম (Lotus), অক্ষমালা (Rosary)কমন্ডলু (Kamandala):–  দেবী দুর্গার হাতে পদ্ম, অক্ষমালা ও কমন্ডলু তুলে দেন ব্রহ্মা। পদ্ম আলোর প্রতীক। পাঁকে বা কাদায় জন্মায় এই পদ্ম, তবুও তার সৌন্দর্য অতুলনীয়। পদ্ম জ্ঞানকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং এর অর্থ জ্ঞানের মাধ্যমে মুক্তি। তাই তাঁকে এই পদ্ম প্রদান করার অর্থ হল, অজ্ঞানতার অন্ধকারের মধ্যে ডুবে থাকা মানুষদের তিনি যেন জ্ঞানের আলো প্রদান করে মুক্ত করা। অর্থাৎ দেবীর আশীর্বাদে মানুষ তার অন্ধকারতম অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পেয়ে তা বিনাশ করে এবং শুভ শক্তির আলোকে আলোকিত হয়ে মুক্ত হয়। আধ ফোটা পদ্ম জীবনে আত্মধ্যাতিক চেতনা বিকাশকে উপস্থাপন করে।

এছাড়া দুর্গার ডান হাতে থাকা অক্ষমালা (= জপমালা) এবং কমণ্ডলু পবিত্রতার প্রতীক। কমণ্ডলু হল পবিত্র জল ধারণকারী পাত্র যা বিশুদ্ধতা, জ্ঞান এবং জীবনের প্রতীক। ব্রহ্মা বিভিন্ন মন্ত্র উচ্চারণ করে এই ঘটের পবিত্র জল মন্ত্রপূত করে ব্যবহার করতেন কোন জীবন সঞ্চারের জন্য বা কারো জীবনের আমূল পরিবর্তনের জন্য। দুর্গার হাতে কমণ্ডলু নির্দেশ করে মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে দেবীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

দেবী দুর্গাকে শঙ্খ, চক্র, গদা পদ্মধারীও বলা হয়।

(৮) বজ্র বা অশনি (Thunderbolt or Vajra):– দধীচি মুনির হাড় দিয়ে তৈরি হয়েছিল বজ্র যা পরবর্তীকালে ইন্দ্রের প্রধান অস্ত্র হয়েছিল। দেবীদুর্গার হাতে বজ্র বা বজ্রাস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র শচীপতি ৷ মায়ের হাতের এই বজ্রাস্ত্র চরিত্রের দৃঢ়তা, সংকল্প এবং সর্বোচ্চ শক্তির প্রতীক। সংহতি অর্থ ঐক্য বা একতা (সকলকে মানিয়ে নিয়ে চলা) বা সুশৃঙ্খলতা (নিয়ম মেনে জীবনে চলা)। ‘দৃঢ়তা ও সংহতি’এই দুই গুণের মাধ্যমেই মানুষ তার ভৌতিক জীবনে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হন, আবার ভক্ত তার ভক্তিজীবনে ভগবানের চরণে শরনাগত হতে পারেন। 

(৯-১০) তীর-ধনুক (Bow and Arrows):– মা দুর্গার হাতে তীর (তূণ) ও ধনুক  দিয়েছিলেন পবনদেব। ধনুক দেখায় দিশা, তির নির্দেশ করে গতিময়তাকে। তীরটি ধনুক থেকে উৎক্ষেপণের আগে, এতে স্থিতি শক্তি (potential energy) থাকে, কিন্তু যে মুহূর্তে এটি লক্ষ্যের দিকে উৎক্ষেপিত হয়, স্থিতি শক্তি গতিশক্তিতে (kinetic energy) রূপান্তরিত হয়। ধনুক হল স্থিতি শক্তির প্রতীক এবং তীরটি গতিশক্তির প্রতীক। দেবী একজন পারদর্শী তীরন্দাজ এই প্রতীকী রূপটি নির্দেশ করে কীভাবে এক শক্তি থেকে অন্য শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে মহাবিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে।

‘তীর-ধনুক’ হল প্রাণশক্তির প্রতীক। আত্মা অবিনশ্বর, সেই মুক্ত আত্মাকে মাতৃ গর্ভে স্থাপন প্রান সঞ্চার করেন, আবার আত্মার  সাথে পরমাত্মার যোগ স্থাপন করেন, মৃত্যুকালে স্থুল শরীর থাকে সূক্ষ শরীরকে মুক্ত করেন। সুতরাং মা দুর্গা মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তির উৎসকে নিয়ন্ত্রণ করেন এটা তার প্রতীক।

আবার দেবীর হাতে থাকা এই অস্ত্র লক্ষ্যভেদের প্রতীক। সকল প্রতিকূলতার মধ্যে লক্ষ্যকে স্থির রেখে এগিয়ে চলতে নির্দেশ করে। ভক্তিপথে অনেক প্রতিকূলতা কিন্তু ভগবানের চরণে শরনাগতি হল মূল লক্ষ্য।    

(১১) খড়্গ বা তলোয়া (Curved Sword):-– মা দুর্গার হাতে পদ্ম তুলে দেন গণেশ। খড়্গ হল মানুষের বুদ্ধি এবং প্রজ্ঞার প্রতীক। খড়্গ-এর ধার হল বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা। এই অস্ত্রটি সাধারণত এমন ব্যক্তিরা বহন করেন, যাদের দায়িত্বজ্ঞান এবং বোধগম্য (বোঝার ক্ষমতা) রয়েছে। যার জোরে সমস্ত বৈষম্য এবং অন্ধকারতম অশুভকে বিনাশ করে মানুষ শুভ শক্তির আলোকে আলোকিত হয়ে মুক্ত হতে পারে।

আবার, খড়্গ হল মৃত্যু এবং ন্যায়বিচার উভয়েরই একটি মূর্ত প্রতীক। অস্ত্রটি পাপীদের শাস্তি দিতে এবং বিশ্বে ন্যায়বিচার আনতে দেবী ব্যবহার করেছেন। একটি তলোয়ার বীরত্ব, কর্তৃত্ব এবং শক্তির প্রতীক।

আবার, খড়্গ হলো মোক্ষ লাভের প্রতীক। দেবী খড়্গ দিয়ে অসুরদের মুণ্ডচ্ছেদ করেছিলেন। এই বলির অর্থ হলো  কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ,মাৎসর্য এই ছয় রিপুর বলি দিয়ে আত্মাকে শুদ্ধ করে তোলা। সেইসাথে ভক্তিপথে অগ্রসর হতে শক্তি প্রদান করেন। 

(১২) শক্তি বা অগ্নিভল্ল বা অগ্নিবর্শা (Burning Spear):– দেবী দুর্গাকে অগ্নিভল্ল (=অগ্নিবর্শা) প্রদান করেন অগ্নিদেব বৈশ্বানর। যখন এই বর্শা নিক্ষেপ করা হয় তখন তার মাথাটি জ্বলন্ত অগ্নিতে আবৃত হয়ে যায় এবং সম্পূর্ণ নির্ভুলতার সাথে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। শক্তি অস্ত্র ক্ষমতা, বীরত্ব ও সাহসের প্রতীক এবং অগ্নি হল জ্ঞান এবং বিদ্যার প্রতীক। বর্শার জ্বলন্ত শিখা সমস্ত শক্তির উৎসকে (ultimate source of energy) প্রতিনিধিত্ব করে। এটি সঠিক এবং ভুল কাজের মধ্যে পার্থক্য বোঝাতেও সাহায্য করে।

(১৩) ঘণ্টা (Gong):বিভিন্ন অস্ত্রের সঙ্গে দেবীর বাম হাতে থাকে ঘণ্টা। পুরাণে কথিত আছে, দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত করী এই ঘণ্টা দিয়েছিলেন দেবী দুর্গাকে। ঘণ্টার ধ্বনি অসুরদের তেজকে অর্থাৎ অশুভ শক্তিকে দূর্বল করে।

শ্রী শ্রী চণ্ডীতে বর্ণিত আছে দেবী মহিষাসুরকে যুদ্ধে আহ্বান করার সময় সতর্কবার্তা স্বরূপ দেবী অট্টহাস্য করেন এবং শাঁখ ও ঘণ্টার ধ্বনিতে তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। শব্দ এমন তরঙ্গ যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সেই সুদূরপ্রসারী শব্দ তরঙ্গ বার্তা বাহক হিসেবেও কাজ করে।

শাস্ত্রে বলা আছে, ‘সা ঘণ্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যো নঃ সুতাম্ইব‘। অর্থাৎ ভক্তরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করছে, মা তোমার ওই যে ঘণ্টা অসুরদের তেজ হরণ করেছিল সেই ঘণ্টার আমরাও শরণ নিচ্ছি, আমাদের পাপকে সেই ঘণ্টা যেন হরণ করে নেয়।

(১৪)  সাপ (Snake): শেষনাগ অস্ত্র হিসাবে দেবী দুর্গাকে প্রদান করেছিলেন সাপ (নাগহার বা নাগপাশ)। দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় যখন মহিষাসুর ছলনার আশ্রয় নিয়ে প্রতিমুহূর্তে রূপ বদল করছিলেন তখন মহিষাসুরকে পরাস্ত করবার জন্য শেষনাগ প্রদত্ত নাগপাশ ব্যবহার করে দেবী মহিষাসুরকে বন্দি করেন। সাধনা ও তার দ্বারা উন্মেচিত শুদ্ধ চেতনার প্রতীক হল সাপ।

(১৫-১৬) কুঠার (Axe)ঢাল (Shield):– বিশ্বকর্মা দান করেছিলেন কুঠার (পরশু), নানাবিধ অস্ত্রসমূহ এবং ঢাল (অভেদ্য বর্ম)। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হল কুঠার ও অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার প্রতীক হল ঢাল।

ব্রহ্মার পুত্র হলেন বিশ্বকর্মা, যিনি একজন অতি দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এবং তিনি দেবতাদের জন্য অসংখ্য ঐশ্বরিক অস্ত্র নির্মাণের জন্য দায়ী ছিলেন। তিনি দেবীকে একটি কুঠার উপহার দিয়েছিলেন, যেটি শক্তির সৃজনশীলতা এবং ধ্বংসাত্মকতা উভয় ক্ষেত্রেরই প্রতীক। যেমন, একটি গাছ কাটার জন্য ব্যবহৃত একটি কুড়াল ধ্বংসের প্রতিনিধিত্ব করে, আবার একটি ঘর তৈরি করতে কাঠ কাটার জন্য একই কুড়াল ব্যবহার করে যা সৃষ্টির প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং দেবী মহাবিশ্বে শক্তির আধার এবং সেই শক্তিকে দ্বৈত ভাবে ব্যবহার করেন।


 ঐশ্বরিক অস্ত্র ছাড়াও দেবতাদের কাছ থেকে দেবী পেয়েছিলেন অন্যান্য ঐশ্বরিক বস্তু।  

(১৭) সিংহ (Lion):– হিমালয় (বা গিরিরাজ) মহাশক্তির জন্য প্রদান করেছিলেন একটি বাহন – সিংহ ও নানান রত্ন।  এই সিংহ হল ‘শক্তির প্রতীক’। দেবী দুর্গার বাহন সিংহ মহাসিংহ, বাহনকেশরী ও ধূতসট নামে পরিচিত। তামসিক পশুশক্তির অধিপতি পশুরাজ সিংহ।

(১৮) বস্ত্র-ভূষন-অলঙ্কার – ক্ষীরসমুদ্র প্রদান করেছিলেন বস্ত্র, ভূষন, অলঙ্কার। এগুলি হোল শুভ্র হার, দুটি অজর (চিরনবীন) বস্ত্র, দিব্য চূড়ামণি , কুণ্ডল দ্বয়, বলয়, শুভ্র অর্ধচন্দ্র, সকল হস্তে কেয়ুর , উজ্জ্বল নুপূর দ্বয় , অতিসুন্দর কন্ঠভূষণ এবং সমস্ত অঙ্গুলিতে রত্ন খচিত আংটি।

(১৯) সূর্যরশ্মি (Sunrays):– সূর্যের দীপ্তিময় সূর্যরশ্মি দেবীকে প্রদান করেছিলেন সূর্যদেব। সেই দীপ্তিতে দেবীর গাত্র থেকে তেজ নির্গত হয় এবং গাত্রবর্ণ তপ্ত কাঞ্চন বর্ণ ধারন করে। সূর্যরশ্মি যেমন দশ দিক থেকে অশুভ ও অন্ধকার দূর করে, তেমনি দেবী দুর্গা অশুভ শক্তিকে বিনষ্ট করে শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করে, সেই কারনে তিনি শুভ শক্তির প্রতীক রূপে গণ্য হন। যেহেতু প্রতিটি জীবই বেঁচে থাকার জন্য সূর্যালোকের উপর নির্ভরশীল, তাই দুর্গা থেকে নির্গত আলোও মাতৃদেবী হিসাবে প্রকৃতিকে লালন-পালন ও পুষ্টি প্রদান করে। 

(২০) পানপাত্র কুবের প্রদান করেছিলেন মধুপূর্ণ পানপাত্র।

─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─

Who is Devi Durga_ দেবী দুর্গা কে_ দশ হাতে অস্ত্র কি কি_5

দুর্গা পূজা শুরু ও সমাপ্তির সময়কাল

অতঃপর, দেবতাদের মিলিত তেজে আর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে, সূর্যের তেজে তেজস্বী হয়ে বাহন সিংহের উপর চড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে আসেন এবং মহিষাসুরের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়। মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন দুর্গাদেবী। দুর্গা মহিষাসুরকে নিধন করে মহিষাসুরমর্দিনী রূপ লাভ করেন। এইভাবে তিনি তিনটি লোকেই শান্তি পুনরুদ্ধার করেছিলেন।

শ্রীশ্রীচন্ডীর কাহিনী অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী দুর্গা আবির্ভূতা হন এবং শুক্লা দশমীতে মহিষাসুরকে বধ করেন। মূলত বিজয়া দশমী সেই বিজয়কেই চিহ্নিত করে।

দুর্গাপূজা মূলত শক্তির অধিষ্ঠাত্রী পার্বতীদেবীর দুর্গা রূপের উপাসনার উৎসব। দুর্গাপূজার প্রচলন সর্বপ্রথম হয় সত্যযুগে। সত্যযুগের রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি কর্তৃক বসন্ত ঋতুতে প্রথম দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল। (মার্কন্ডেয়চন্ডী)

◼️  দুর্গা পূজার সময়কাল ◼️

সাধারণত বছরে দু’বার দুর্গোৎসবের প্রথা রয়েছে। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দুর্গাপূজা

◼️ বাংলায় প্রথম দুর্গা পূজা ◼️

জনশ্রুতি আছে, রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম মহাআড়ম্বরে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন।

◼️  দুর্গা পূজার তিথি ◼️

সাধারণত আশ্বিন শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অর্থাৎ দশমী অবধি পাঁচ দিন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ নামে আখ্যাত হয়। দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন থেকে যে দিনটি মহালয়া নামে পরিচিত। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন অর্থাৎ পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বাৎসরিক লক্ষ্মীপূজার দিন হিসাবে গণ্য হয়। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি।

  কল্প ও বোধন
=============

দুর্গাপূজার আগে কল্পারম্ভের বিধি আছে। কল্প মানে সংকল্প, অঙ্গীকার। অর্থাৎ প্রতি জীবের মধ্যে তীব্র ইচ্ছা হবে দুর্গাকে লাভ করে সমস্ত দুর্গতি দূর করার। এই অটল সংকল্প না হলে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হতে পারে না। দুর্গাপূজা তিনটি কল্পে হয়ে থাকে —

১) নবম্যাদি কল্প,

২) প্রতিপদাদি কল্প

৩) ষষ্ঠ্যাদি কল্প।

ভারতের পূর্বাঞ্চলে এরই প্রচলন বেশী। দুর্গাষষ্ঠী পূজোর দিনে এই কল্প তিন করা হয় ৷

ষষ্ঠীর দিনেই বোধন। বোধন অর্থে বোধশক্তির উন্মেষ ঘটানো তার মানে, সমস্ত বোধকে দুর্গাভাবে রূপান্তরিত করাই হল বোধন।

শাস্ত্রে বলা আছে — সায়াহ্নে বোধনং কুর্যাৎ

সন্ধ্যায় বোধনের কারণ, সম্যক ধ্যানের দ্বারা এই বোধন হতে পারে। সকল বোধের মধ্যে শুধু দেবী দুর্গাই বিরাজতা। এই ভাবে রূপান্তরিত করার জন্য সন্ধায় বোধন কার্য সম্পাদন করা হয়।

সন্ধ্যায় বোধনের তাৎপর্য – সমস্ত জীবভাব ও মনোবৃত্তি সংলীন হলেই বোধন সম্ভব ৷

দেহের সঙ্গে মহাষষ্ঠী 
================

যে দুর্গাষষ্ঠীতে বোধনের কথা বলা হল, সেটি আসলে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী। আমাদের মেরুদণ্ডের মধ্যে যে ছয়টি গ্রন্থিযুক্ত সুষন্মা নাড়ি আছে সেটি শুক্লবর্ণ, পবিত্র। ওই ছয়টি গ্রন্থি হল ষট্ চক্র ৷ যেমন—

১। মূলাধার

২। স্বাধিষ্ঠান

৩। মণিপুর

৪। অনাহত

৫। বিশুদ্ধ

৬। আজ্ঞাচক্র ৷

ঐ ছয়টি চক্রই হচ্ছে যথাক্রমে প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী। ষষ্ঠীতে ষট্ চক্রে যেতে না পারলে দুর্গাবোধন হতে পারে না। ষষ্ঠচক্র অর্থাৎ আজ্ঞাচক্রে ওই দ্বিদলপদ্মেই মাদুর্গার আবাসভূমি।

◼️  ভগবানের উপদেশ ◼️

ভগবদ্গীতায় চর্তুথ অধ্যায়ের দ্বাদশ (৪/১২) শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, 

❝ কাঙ্ক্ষন্তঃ কর্মণাং সিদ্ধিং যজন্ত ইহ দেবতাঃ।
ক্ষিপ্রং হি মানষে লোকে সিদ্ধির্ভবতি কর্মজা॥ ❞ ‌

◼️অনুবাদ: এই জগতে মানুষেরা সকাম কর্মের সিদ্ধি কামনা করে এবং তাই তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করে। সকাম কর্মের ফল অবশ্যই অতি শীর্ঘ্রই লাভ হয়।

বলা বাহুল্য, সকাম কর্মের ফল খুব তাড়াতাড়ি লাভ হয় তবে মনে রাখবেন সেটা ক্ষণস্থায়ী।

 কৃষ্ণ ভক্তদের কি করনীয়
====================

আমরা যদি জড় কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই কেবল দেবদেবীর পূজা করে থাকি, তবে সেটা নিশ্চক কপটতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা বিভিন্ন দেব-দেবীর কাছে অবশ্যই একটা জিনিসই চাইব সেটা হলো– “তাঁরা যেন আমাদের কৃষ্ণভক্তি বা কৃষ্ণপ্রীতি দান করেন।”

❝ আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি বাঞ্ছা তারে বলি কাম।
 কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা ধরে প্রেম নাম॥ ❞ ‌

━━┉┈┈(চৈতন্যচরিতামৃত আদিলীলা, ৪/১৬৫)

─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─

Who is Devi Durga_ দেবী দুর্গা কে_ দশ হাতে অস্ত্র কি কি_2

দুর্গাদেবীকে দুর্গাপুজোতে কেমনভাবে সন্তুষ্ট করা যাবে?

চন্ডীদাস দেবী দুর্গার একজন সাধক পূজারী ছিলেন এবং তার ভাই একজন শুদ্ধ বৈষ্ণব ছিল ও সে শালগ্রাম পুজা করত। চন্ডীদাস ধনী ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু তাঁর ভাই ছিল দরিদ্র। চন্ডীদাসের একটি বৃহৎ ও চমৎকার বাগান ছিল এবং সেই বাগানের ফুল তিনি দেবী দুর্গাকে প্রত্যহ অর্পন করতেন। এই দেখে তার ভাইয়ের মনেও তার পূজিত শালগ্রামের কাছে সুন্দর পুষ্প নিবেদন করার অভিলাষ দিন দিন বাড়তে লাগল। ভগবানের চরণে অর্পণ করার মানসিকতা নিয়ে একদিন তিনি সেই বাগান থেকে একটি সুন্দর রঙিন পুষ্প তুলে তার শালগ্রামের কাছে নিবেদন করলেন।

ঘটনাচক্রে ওই দিনই চন্ডীদাস একই সুন্দর রঙিন পুষ্প দেবী দুর্গাকে নিবেদন করলেন। যেই মুহূর্তে ঐ পুষ্পটি নিবেদিত হলো তৎক্ষণাৎ দুর্গাদেবী চন্ডীদাসের সম্মুখে আবির্ভূতা হলেন। “আমি তোমার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি চন্ডীদাস! তুমি কি বর চাও?”  চন্ডীদাস বিস্মিত হলেন, “আমি প্রতিদিন তোমার অর্চনা করি কিন্তু আজ তুমি আমার ওপর এত সন্তুষ্ট কেন?” দেবী জানালেন “কারণ তুমি আমাকে যে পুষ্পটি নিবেদন করেছ সেটি পূর্বেই শালগ্রামের কাছে নিবেদিত হওয়ায় সেটি ভগবানের মহাপ্রসাদ। এই প্রসাদী পুষ্পটি দেখে আমি অত্যন্ত প্রীত হয়েছি তাই আমি তোমার সম্মুখে আবির্ভূত হয়েছি।”

চন্ডীদাস ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করলেন, “দেবী! তার অর্থ কি এই যে, কেউ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অর্চনা করলেই তুমি সন্তুষ্ট হও?” দেবী দুর্গা অত্যন্ত সহানুভূতিশীল কণ্ঠে বললেন, “হ্যাঁ, পরমেশ্বর ভগবান হলেন সর্বকারণের কারণ এবং তিনিই প্রকৃতপক্ষে সকল সৃষ্টির উৎস। কেউ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অর্চনা করলেই আমি অত্যন্ত প্রীত হই। যদি তুমি আমাকে সন্তুষ্ট করতে চাও তাহলে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অর্চনা কর।” চন্ডীদাস পরম সত্যটি উপলব্ধি করে শ্রীকৃষ্ণের এক পরম ভক্তে পরিণত হলেন এবং এটি দেবাদিদেব শিবের পত্নী দেবী দুর্গাকে অত্যন্ত প্রীত করেছিল। পরবর্তীকালে চন্ডীদাস শ্রীমতি রাধারানী এবং শ্রীকৃষ্ণের বিরহের চিন্ময় ভাবের ওপর অসংখ্য গীত রচনা করেছিলেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভূ চন্ডীদাসের রচিত গীত শ্রবণ করে অত্যন্ত আনন্দ লাভ করতেন।

◼️  দুর্গাদেবীকে সন্তুষ্ট করার সর্বোত্তম উপায় ◼️

দুর্গা হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বহিরাঙ্গা মায়া শক্তি। তাঁকে পরাজিত অথবা বিভ্রান্ত করা যায় না। তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং যখন তিনি তাঁর ত্রিশূল দিয়ে আঘাত করেন তখন কোন কিছুই আমাদের রক্ষা করতে পারে না। দুর্গাদেবী আমাদের পার্থিব বর প্রদান করতে পারেন অর্থাৎ আমাদেরকে অনায়াসে মায়ায় আবদ্ধ করতে পারেন কারণ লক্ষ্য হল কেউ যেন সহজে ভগবত ভক্তি, ভগবত সেবা, ভগবত প্রাপ্তি না করতে পারে। এ সবই ভগবানের ইচ্ছা, দেবী দুর্গা তা পালন করেন। দেবীর হাতে থাকা শক্তিশালী ত্রিশূল ইঙ্গিত দেয় এই যে পৃথিবীতে ত্রিতাপ ক্লেশের দ্বারা যন্ত্রণা ভোগ করে আমরা যেন উপলব্ধি করতে পারি এ জগত একটি কারাগার, দুঃখে পরিপূর্ণ।

দুর্গাদেবীর শক্তিশালী ত্রিশূলের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো শুদ্ধ ভক্তির দ্বারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেমময় ভক্তিযোগ অভ্যাস করা। যখন আমরা দিব্যনাম জপ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশ্রয় নিই তখন দেবী দুর্গা তাঁর ত্রিশূল প্রত্যাহার করেন। আমাদের শরীরে যে সমস্ত দেবদেবী অবস্থান করেন তাঁরা আমাদের দেহের বিভিন্ন কার্য নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু যখন দেবীদুর্গা দেখেন যে, আমরা কৃষ্ণভাবনামৃতে অগ্রসর হচ্ছি তিনি তখন সেই সমস্ত দেবদেবীদের আদেশ করেন আমাদের ভক্তি পথ পরিষ্কার রাখতে  যাতে করে আমরা এই জড় জগত অতিক্রম করে চিন্ময় জগতে ফিরে যেতে পারি। তিনি আমাদেরকে এই জড় জগতে চিরকালের জন্য রাখতে চান না ৷

তিনি ভগবানের প্রতি আমাদের আত্মনিবেদনের পরীক্ষা গ্রহণ করেন এবং যখন দেখেন যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমভক্তিতে আমাদের হৃদয় পরিপূর্ণ হয়েছে তিনি তৎক্ষণাৎ আমাদেরকে এই কারাগার থেকে মুক্তি প্রদান করেন। এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, কলিযুগে পরমেশ্বর ভগবান তাঁর সমগ্র শক্তি এবং সমগ্র ঐশ্বর্য সমন্বিত হয়ে তাঁর দিব্য নাম রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন, “কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার”। তাই কৃষ্ণের দিব্য নামকে ভগবান কৃষ্ণরূপে অনুভব করা উচিত এবং ভক্তি এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর দিব্য নাম জপ করা উচিত।

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।।

দুর্গাদেবী মায়ারূপে হরিদাস ঠাকুরের কৃষ্ণভক্তির পরীক্ষা নিয়েছিলেন। হরিদাস ঠাকুর অবলীলাক্রমে সেই পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হন কারণ তিনি পরিপূর্ণভাবে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপে নিমগ্ন হয়েছিলেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, প্রত্যহ তিনি তিন লক্ষ বার মহামন্ত্র জপ করবেন।

দুর্গাপুজো — সিনেমার গান বাজানো বা তার সঙ্গে নৃত্য করা নয়। এটি সুস্বাদু খাবার খাওয়া বা মজা করাও নয়। এটি উদযাপনের প্রকৃষ্ট পন্থা হলো এটি জানা যে, দেবীদুর্গা কে এবং তিনি কিসে খুশী হন। তাঁকে সন্তুষ্ট করার সর্বোত্তম উপায় হলো চন্ডীদাসের পদাঙ্ক অনুসরণ করা। 

─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─

Who is Devi Durga_ দেবী দুর্গা কে_ দশ হাতে অস্ত্র কি কি_4

দুর্গাদেবী কৃষ্ণনাম করেন

গঙ্গা ও পদ্মার সঙ্গম স্থলে, মুর্শিদাবাদ জেলার কাশিমবাজার স্টেশন থেকে পূর্বদিকে কুড়ি মাইল দুরে, গোয়াস নামে একটি গ্রাম আছে। সেখানে শিবাই আচার্য নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তিনি ভবানী পূজায় একনিষ্ঠ ছিলেন। ভবানী পূজায় তিনি ছাগল-ভেড়া বলি দিতেন। শিবাই আচার্যের দুই পুত্র ছিল —- হরিরামরামকৃষ্ণ। তাদেরকে বলির জন্য ছাগল ও ভেড়া কিনে আনতে পাঠিয়েছিলেন বাজারে। হরিরাম ও রামকৃষ্ণ কয়েকটা ছাগল ও ভেড়া কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছিল।

সেই সময় সকাল বেলায় বিখ্যাত দুই পরম বৈষ্ণবকে তারা দেখতে পেল। অত্যন্ত সুন্দর তাঁদের রূপ। একজন হলেন শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজ এবং অন্যজন হলেন শ্রীনরোত্তম দাস ঠাকুর। তাঁদের ললাটে ঊর্ধ্বপুণ্ড্র গোপীচন্দন তিলক অঙ্কিত। দৃষ্টি বা চাহনি অত্যন্ত কারুণ্যপূর্ণ। পরনে ধুতি ও উত্তরীয়। কন্ঠে তুলসীকাঠের মালা। হাতে হরিনাম জপের মালা। তাঁদেরকে দেখে হরিরাম ও রামকৃষ্ণ আকৃষ্ট হলো। একে অপরকে বলে, আমি উনাদের মহিমা শুনেছি, এখন চোখে দর্শন করছি।

আবার তারা চিন্তা করতে লাগল, এই দুই বৈষ্ণব নিশ্চয়ই আমাদের সঙ্গে ছাগল-ভেড়াগুলোকে দেখেই জিজ্ঞেস করবে, সকাল সকাল এগুলোকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? তখন আমরাই বা কিভাবে বলব যে, বলি দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। এই সব পশুগুলোকে বলি দিয়েও আমাদের কিসের সিদ্ধি লাভ হবে? শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ষোড়শ অধ্যায়ের প্রথম দিকেই বলা হয়েছে, দেবগুণ সম্পন্ন মানুষদের গুণ হচ্ছে সত্তার পবিত্রতা, পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশীলন, লজ্জা, সরলতা, অহিংসা, সর্বজীবে দয়া, নির্লোভতা, অচপলতা, ক্ষমা, মাৎসর্যশূন্যতা ইত্যাদি। কিন্তু আমরা এই যে ছাগল-ভেড়াগুলোকে ধরে নিয়ে যাচ্ছি বলি দেওয়ার জন্যে এটা কোন্ গুণের মধ্যে পড়ছে? এটা কি আসুরিক ভাব নয়? গীতায় বলে, দন্ত, ক্রোধ, নিষ্ঠুরতা, বিবেকহীনতা হচ্ছে অসুরগুণ সম্পন্ন ব্যক্তিদের লক্ষণ এবং আসুরিক ভাবই হচ্ছে জগতে বদ্ধ থাকার কারণ। যূপকাষ্ঠের মধ্যে ঘাড় আটকিয়ে পশুকে হত্যা করার কাণ্ডটি নিশ্চয় অসুরদের কর্ম। এসব কর্ম কোনও

ব্রাহ্মণের হতে পারে না। আমরা ব্রাহ্মণ। এখন ঐ পণ্ডিতেরা যদি আমাদের দেখতে পায়, তবে আমরা কি করব ?

এদিকে রামচন্দ্র কবিরাজনরোত্তম দাস ঠাকুর তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। রামচন্দ্র নরোত্তম ঠাকুরকে বললেন, এই দেখো, সামনে সুন্দর চেহারার এই দুই জন আসছে। এদেরকে দেখে মনে হয় এরা শ্রীকৃষ্ণ ভজনের যোগ্য ব্যক্তি । ওদের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়।

ছাগল ও ভেড়াগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে হরিরাম ও রামকৃষ্ণ ভয়ে ভয়ে তাঁদের কাছে এসে প্রণতি নিবেদন করল। নরোত্তম দাস ঠাকুর প্রশ্ন করলেন, কি নাম তোমাদের? এই ছাগল-ভেড়াগুলোকে নিয়ে তোমাদের কাজ কি? তারা তাদের পরিচয় দিয়ে বলল, আমরা ছাগল-ভেড়াগুলোর জন্যই শুভক্ষণে বেরিয়ে ছিলাম। যার ফলে আপনাদের দর্শন হলো। আজ আমাদের জীবন সফল।

তারপর তাঁদের নির্দেশে সব পশুগুলোকে তারা ছেড়ে দিল। পদ্মাতে স্নান করল। বৈষ্ণব-পাদপদ্মে বন্দনা স্তুতি করতে লাগল। তাদেরকে দুই বৈষ্ণব আলিঙ্গন করতে লাগলেন। তারপর তাঁদের সঙ্গে হরিরাম ও রামকৃষ্ণ খেতুরী গ্রামে চলে গেল। সেখানে নরোত্তম দাস ঠাকুর রামকৃষ্ণকে এবং রামচন্দ্র কবিরাজ হরিরামকে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রে দীক্ষা দিলেন। তারা গৌর-নিতাই সেবা, ভক্তিতত্ত্ব শিক্ষা, গুরুসেবা করতে লাগল। ভক্তিপ্রেমরসে কিছুদিন অতিবাহিত হলো ।

তারপর একদিন বিজয়া দশমীর পরে তারা গুরুদেবের নির্দেশে খেতুরী গ্রাম থেকে গোয়াস গ্রামে ফিরে এলো। গোয়াসে বলরাম কবিরাজ নামে এক বৈষ্ণবের গৃহে তারা রাত্রি যাপন করল । সকাল হলেই পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। পিতা শিবাই আচার্য মহাক্রোধে বলতে শুরু করলেন, “তোমরা ব্রাহ্মণ। তোমাদেরকে আবার কোন্ বৈষ্ণব কোন্ সাহসে বৈষ্ণব-দীক্ষা দিল? বৈষ্ণবের শ্রেষ্ঠত্ব কোন্ শাস্ত্রে বলে? তোমরা নিজেদেরকে কি বেশি বড় পন্ডিত বলে মনে করো ? দেবী ভগবতী তোমাদের সব কয়টাকে শাস্তি দেবেই। তোমরা দেবীর অমান্য করেছ। বলি বন্ধ করে দিয়েছ। সমস্ত পন্ডিতেরা তোমাদেরকে ধিক্কার দেবে। ভগবতীও তোমাদের দন্ড দেবে।”

পুত্র হরিরাম তখন পিতার মুখে এসব কথা শুনে ক্রোধে বলতে লাগল, কার কত শক্তি আছে, কত বড় পন্ডিত আছে, এক্ষুনি নিয়ে আসো ।

সত্যি সত্যিই শিবাই আচার্য বড় বড় পন্ডিতদেরকে এনেছিলেন। বিশাল এক পন্ডিতসভার বৈঠক শুরু হলো। এক এক পন্ডিত শাস্ত্রযুদ্ধে অবতীর্ণ হবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। প্রত্যেকের মত খন্ডন করলেন হরিরাম আচার্য বেদ-পুরাণের সিদ্ধান্ত দিয়ে। বৈষ্ণব যে সর্বলোকেরই আরাধ্য, তা প্রমাণ করলেন। সব পন্ডিতেরা হরিরাম আচার্যের কাছে পরাভব স্বীকার করল ৷

সমস্ত পন্ডিত মুগ্ধ হয়ে মন্তব্য করল, এরা দুই ভাই বৈষ্ণবের কৃপা গুণেই যথার্থ জ্ঞান অর্জন করেছে। এই বলে পন্ডিতেরা সভা ছেড়ে চলে যেতে লাগল। এতে শিবাই আচার্যের ক্রোধ বৃদ্ধি পেল। তিনি ভাবলেন, আমরা ব্রাহ্মণরা আজ পরাজিত হলাম। আমাদের ক্রিয়াকান্ডের কোনও মূল্য নেই। না, আমি এ হতে দেব না। তাই তিনি মথুরাবাসী এক দিগ্বিজয়ী ব্রাহ্মণ পন্ডিতকে আনালেন। সেই পন্ডিত বড় দাম্ভিক ছিলেন। তিনিও অনায়াসে হরিরামের কাছে পরাভূত হলেন। শুধু তাই নয়, বৈষ্ণবের জয়গান ও বৈষ্ণব মহিমা প্রচার উদ্দেশ্যে সেই পন্ডিত তখন থেকে ভিক্ষুক ব্রত অবলম্বন করলেন।

এই ঘটনার পর দুর্গাপূজক শিবাই আচার্য স্তম্ভিত হলেন। পন্ডিতদের কিছু কিছু বচন স্মরণ করছিলেন। তারপর তিনি ভগবতী-চরণে মিনতি করলেন, “হে মাতঃ, আমি জানতাম না যে, তুমি পরম বৈষ্ণবী। তুমিও না কি কৃষ্ণনাম করো। হে মাতা, আমাকে কৃপা করো।”

প্রাচীন শাস্ত্র “শ্রীনারদপঞ্চরাত্রম্‘ গ্রন্থে শ্রীমহাদেব নারদমুনিকে বলছেন ━

❝পঞ্চবক্ত্রেণ সততং তন্নামগুণকীর্তনম্॥
করোমি ভার্যয়া সার্ধং পুত্রাভ্যাঞ্চাপি নারদ ।
তদ্দিনং দুর্দিনং মন্যে মেঘাচ্ছন্নং ন দুর্দিনম্ ॥
যদ্দিনং কৃষ্ণসংলাপকথাপীযূষবর্জিতম্।
তং ক্ষণং নিষ্ফলং মন্যে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনং বিনা ॥ ❞ ‌

◼️অনুবাদ: “হে নারদ! আমি, পার্বতী, কার্তিক ও গণেশের সঙ্গে সর্বদা কৃষ্ণনাম কীর্তন করি। মেঘাচ্ছন্ন দিনকে আমি দুর্দিন বলে মনে করি না। যেদিন কৃষ্ণকথা বলা হয় না, আমি সেই দিনকে দুর্দিন বলে থাকি। যেই মুহূর্তটি কৃষ্ণনাম বা কৃষ্ণকথা ছাড়া অতিবাহিত হয়, সেই মুহূর্তটি বৃথা গেল বলে মনে করি।”

◼️  মহাপ্রভুর দর্শন ও কৃপা লাভের জন্য পার্বতীর তপস্যা ◼️

এই আদি দুর্গারই অংশ বিস্তার হচ্ছেন শিবপত্নী পার্বতী। মায়াপুরের সন্নিকটে সীমন্ত দ্বীপে এই পার্বতী দেবী এসে তপস্যা করেছিলেন মহাপ্রভুর দর্শন ও কৃপা লাভ করার জন্য। নবদ্বীপের নয়টি দ্বীপের মধ্যে সীমন্ত দ্বীপ অন্যতম এবং তার সীমানা অন্তদ্বীপ তথা মায়াপুরের সীমানা ঘেঁষে। এই সীমন্ত দ্বীপ হচ্ছে নববিধা ভক্তির অন্যতম, হরিকথা শ্রবণের জন্য এক দিব্য স্থান। কি করে এই দ্বীপের নাম সীমন্ত হল, সেই কাহিনী নিম্নে বর্ণিত হল ━

মহাপ্রভুর লীলা বিলাসের সময় এই দ্বীপটি সিমুলিয়া নামে পরিচিত ছিল। দেবী দুর্গা তথা পার্বতীর একটি বিশেষ লীলার কারণে এই দ্বীপের নাম হয় সীমন্ত। নিম্নে বর্ণিত এই লীলা থেকে আমরা পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারব যে দুর্গা দেবী হচ্ছেন এক পরমা বৈষ্ণবী

একদিন দেবী দুর্গা কৈলাসে তার স্বামী শিবের সঙ্গে বসেছিলেন। দেবী দেখলেন যে তার স্বামী অকস্মাৎ ‘গৌরাঙ্গ! গৌরাঙ্গ!’ নাম কীর্তন করতে করতে উদণ্ড নৃত্য শুরু করেছেন। স্বামীর দিব্য ভাব ও উন্মাদনা লক্ষ্য করে দুর্গা দেবী স্বামীর কাছে এর কারণ জানতে চাইলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, কে এই গৌরাঙ্গ? শিব তখন পার্বতীকে সব খুলে বললেন যে এই গৌরাঙ্গ হলেন স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ যিনি কলিযুগের সমস্ত অধঃপতিত জীবদেরকে উদ্ধার করার জন্য নবদ্বীপে মায়াপুরে অবতীর্ণ হবেন এবং আপামর জন সাধারণকে হরিনাম সংকীর্তনের মাধ্যমে কৃপা বিতরণ করবেন। তিনি আরও ব্যাখ্যা করলেন যে, শ্রীগৌরাঙ্গ এই হরিনাম প্রচারের মাধ্যমে জগদ্বাসীকে কৃষ্ণপ্রেমের এক মহা আনন্দের সাগরে নিমজ্জিত করবেন।

স্বামীর মুখে এই দিব্য বর্ণনা শ্রবণ করে পার্বতী দেবী তথা দুর্গা এই স্থানে এলেন এবং ভগবান গৌরাঙ্গকে প্রসন্ন করার মানসে কঠোর তপস্যা শুরু করলেন। সুবর্ণ বর্ণ গৌরাঙ্গ পার্বতীকে দর্শন দান করে তাঁর তপস্যার কারণ জানতে চাইলেন। পার্বতী দেবী দুঃখ করে বললেন যে তিনি কখনো ভগবানের লীলায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন না এবং সর্বদাই তাঁর দিব্য সঙ্গ থেকে বঞ্চিত থাকেন।

এই কথা শুনে মহাপ্রভু দুর্গাকে সান্ত্বনা প্রদান করে কথা দিলেন যে, এই গৌরাঙ্গ লীলায় তাঁকে বিশেষ সেবার সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি প্রৌঢ়া মায়া রূপে এই নবদ্বীপ ধামের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। এইভাবে কথোপকথনের সময় দেবী পার্বতী মহাপ্রভুর চরণ থেকে ধূলি নিয়ে তাঁর সিঁথিতে ধারণ করেছিলেন। সেই থেকে এই দ্বীপের নাম হয় সীমন্ত (সিঁথি শব্দের সংস্কৃত) দ্বীপ। সীমন্ত দ্বীপে দেবী দুর্গাকে বলা হয় সীমন্তিনী দেবী এবং রাজা পুরের শ্রীজগন্নাথদেবের মন্দিরের পাশেই সীমন্তিনী দেবীর মন্দির নির্মিত হয়েছে যেখানে দেবী দুর্গা এবং মহাপ্রভুর বিগ্রহ বিরাজ করছেন।

─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─

Who is Devi Durga_ দেবী দুর্গা কে_ দশ হাতে অস্ত্র কি কি_3

সন্ধিপূজা কী ও কেন করা হয়?

দুর্গা পুজোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হল সন্ধি পুজো। মহাষ্টমী এবং মহানবমীর সন্ধিক্ষণে এই পুজো হয় বলে একে ‘সন্ধি পুজো’ বলা হয়। আসলে সন্ধিপুজো হল সন্ধ্যার প্রতীক। মহাষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট এবং মহানবমীর প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ ৪৮ মিনিট ধরে চলে সন্ধি পুজো। ১০৮টি পদ্ম এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ সন্ধি পুজোর ক্ষেত্রে দরকার পড়ে। সন্ধিপুজোর নৈবেদ্য- সন্ধিপুজোয় অন্যতম উল্লেখযোগ্য নৈবেদ্য হল পদ্ম। এই পুজোয় মা-কে ১০৮টি পদ্ম অর্পণ করা হয়, ১০৮ টি বেলপাতা এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। নৈবেদ্যয় দেওয়া হয় গোটা ফল, জবা ফুল, সাদা চাল, শাড়ি, গহনা, এবং সাজ-সজ্জার দ্রব্যও থাকে।

সন্ধি পুজোয় দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয় চামুণ্ডা রূপে। এর পিছনের কারণটি হল — মহিষাসুরের সঙ্গে দেবীর যুদ্ধ শুরুর প্রারম্ভে, দেবী দুর্গা এক সুন্দরী মহিলা রূপে মহিষাসুরের সামনে আবির্ভূতা হন। হলুদ শাড়ি পরে অসুরের সামনে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। সে সময় দেবীর গায়ের রঙ ছিল স্বর্ণাভ। তাঁর দশ হাতে সজ্জিত ছিল দশ অস্ত্র। মহিষাসুরের সঙ্গে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলাকালীন অসুরের দুই সেনাপতি চন্ড ও মুন্ড পিছন থেকে দেবীকে আক্রমন করেন।  চুক্তিমত যুদ্ধ না হওয়ায় অত্যন্ত রেগে যান দেবী। ক্রমেই তাঁর মুখ নীল হয়ে ওঠে। দেবী ত্রিনয়নী চামুন্ডা রূপ ধারন করেন। এই চামুন্ডা রূপেই মা দুর্গা চন্ড ও মুন্ডের মাথা কেটে নেন। সেই থেকে দেবীর নাম হয় চামুণ্ডা। চণ্ড ও মুণ্ডকে যে সন্ধিক্ষণে দেবী বধ করেছিলেন, তাকে স্মরণে রেখেই সন্ধি পুজোর আয়োজন করা হয়।

তবে এই পুজোটি চান্দ্রমাস ক্যালেন্ডার অনুযায়ী করা হয়। সেই কারণেই এই সন্ধিক্ষণ বছরের যে কোনও সময়েই হতে পারে। কখনও কখনও আবার ভোর রাতেও হয়ে থাকে এই সন্ধিপুজো।

অনেকে আবার অষ্টমীর রাতে দেবী দুর্গার পুজো করার সময় অশোক গাছের নটি পাতা, একটি কলসি দেবী দুর্গার ছবির সামনে রেখে ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নারসিংহী, ইন্দ্রাণী এবং চামুণ্ডা দেবীর পুজো করেন। তারপর দেবী দুর্গার মন্ত্র ১০৮ বার জপ করেন।

পুরাণ অনুযায়ী, এই সন্ধিপুজোর সন্ধিক্ষণে দেবী কালিকার জন্ম হয়েছিল দেবী অম্বিকার তৃতীয় নয়ন থেকে। পরাক্রমশালী অসুর রক্তবীজের সমস্ত রক্ত দেবী কালিকা পান করেছিলেন। এই সন্ধিক্ষণে ক্ষণিকের জন্য হলেও দেবীর অন্তরের সমস্ত স্নেহ-মমতার অবসান ঘটে বলে মনে করা হয়। এজন্য সন্ধিপুজো চলাকালীন দেবীর দৃষ্টির সামনে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না। দৃষ্টিপথ পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া সন্ধিপুজোর সঙ্গে বিভিন্ন আচার ও প্রথা জড়িয়ে আছে। আগে রাজপরিবার ও জমিদার পরিবারের দুর্গা পুজোয় সন্ধিপুজোর সময়ে কামান দেগে তোপধ্বনি করা হত। এখনও অনেক জায়গায় সন্ধিপুজোয় ঢাক বাজানোর রীতি রয়েছে।

সন্ধিপুজোয় পুজোর শেষধাপ অর্থাৎ শেষ ২৪ মিনিটে বলিদান সম্পন্ন হয়। সাধারণত ছাগলের পাশাপাশি কোনও কোনও জায়গায় আখ, কলা, চালকুমড়ো ইত্যাদি দেবীকে বলি দেওয়া হয়ে থাকে। কথিত আছে, সংযমী হয়ে ভক্তিভরে নিষ্ঠার সঙ্গে উপবাসী থেকে সন্ধিপুজো করলে যমের হাত থেকেও মুক্তি মেলে। অর্থাৎ মৃত্যুর সময় দেবীর কৃপায় যমের স্পর্শও রোখা যায়।

সন্ধি পুজোর বিশেষ তিথিতে দেবীকে ১০৮ পদ্ম নিবেদন করা হয়। সে সময় হনুমানকে দেবীদহ থেকে ১০৮ পদ্ম ফুল তুলে আনতে বলা হয়। কিন্তু সেখানে পাওয়া যায় ১০৭ পদ্ম। তখন রাম নিজে তাঁর পদ্ম সমান নেত্র দান করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তখনই দেবী আবির্ভূত হয়ে বরদান করেন যে, তিনি রাবণের থেকে নিজের সুরক্ষা সরিয়ে নেবেন। ষষ্ঠীর দিন রামচন্দ্র পুজো শুরু করেন। অষ্টমী এবং নবমী তিথির মাঝে রামের অস্ত্র প্রবেশ করে এবং দশমীর দিন রাবণের বিনাশ হয়।

─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─

Who is Devi Durga_ দেবী দুর্গা কে_ দশ হাতে অস্ত্র কি কি_8

মহামায়া ও যোগমায়া কে?

মহামায়া হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বহিরঙ্গা শক্তি, তিনি হলেন দেবীদূর্গা। যিনি আমাদের নিজেদের কর্মের ফলস্বরূপ কৃষ্ণের থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে এই জড় জগতরুপী দুর্গে এনে ত্রিতাপ ক্লেশ প্রদানের দ্বারা জীবকে শাস্তিপ্রদান করছেন।

অপরদিকে যোগমায়া হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা শক্তি। এর প্রকাশ হলেন রাধারানী। যিনি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কৃষ্ণভক্তদেরকে কৃষ্ণের সাথে পুনরায় যুক্ত করার জন্য ভক্তদের কৃপা করেন। তাই কৃষ্ণভক্তদের সর্বদা রাধারানীর আরাধনা করা কর্তব্য।
চিৎশক্তি যোগমায়ার ছায়া হলেন মহামায়া। শক্তি যখন শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেন তখন তিনি যোগমায়া, যখন তিনি জড়জগতে মোহনের কর্ম করেন তখন তিনি মহামায়া। ভক্তরা সর্বদাই যোগমায়ার পূজা করে। অভক্তরা কখনই যোগমায়ার পূজা করে না। অভক্তরা সব সময় মহামায়ার পূজায় আগ্রহী।
অন্তরঙ্গা শক্তির উপাসনায় কৃষ্ণভক্তি প্রাপ্তি এবং বহিরঙ্গা শক্তির উপাসনায় জড়জাগতিক বৈভব প্রাপ্তি হয়ে থাকে। যিনি যা কামনা করবেন তাঁর সেই শক্তির উপাসনা করা হয়। ‘ধন দাও, যশ দাও, পুত্র দাও, সরকারী চাকুরী দাও, সুন্দরী স্ত্রী দাও, ডিগ্রী পাস, জমিজমা ভোগ, রাজত্ব, মন্ত্রীত্ব—এই রকম কিছু বাসনা নিয়ে দুর্গাপূজা করলে তিনি বহিরঙ্গা মহামায়া রূপে মনোবাসনা পূর্ণ করেন।

শ্রীকৃষ্ণপাদপদ্মের সেবায় উন্মুখী হলে যে শক্তি সহায়তা করেন সেই শক্তিই যোগমায়া, আর কৃষ্ণবহির্মুখ হলে যে শক্তি জড়জাগতিক ভোগ্যবস্তু দিয়ে কৃষ্ণ থেকে ভুলিয়ে রাখতে সহায়তা করেন সেই শক্তিই মহামায়া।

কাত্যায়নী দুর্গারই অন্য নাম। শ্রীবৃন্দাবনের গোপবালিকাগণ যে কাত্যায়নী দেবীর আরাধনা করেছিলেন সেই ক্ষেত্রে তাঁদের আরাধনার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করা। অত্যন্ত সম্মানীয়া মহা প্রজ্ঞাবতী শ্রীবৃন্দাদেবীর নির্দেশে গোপবালিকারা নন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করবার আশায় কাত্যায়নী পূজা করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং। তিনি সচ্চিদানন্দময় পুরুষ। গোপকুমারীগণ কোনও বদ্ধ জীবকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য কাত্যায়নী ব্রত করেননি। সেই কাত্যায়নী হলেন যোগমায়া।

কিন্তু অভক্তরা অর্থাৎ কৃষ্ণবহির্মুখ ব্যক্তিরা জড়জাগতিক সম্পদ উপভোগের উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করে, সেই দুর্গা হচ্ছেন মহামায়া। মহামায়ার দেওয়া সম্পদ পরিণামে দুঃখই দান করে। জড়জাগতিক ভোগবাসনার জন্য এই জড় জগৎ থেকে জীব কখনই স্বস্তি লাভ করতে পারে না। মৃত্যুময় ভবচক্র থেকে মুক্তি পেতে পারে না। তাকে জন্মমৃত্যুর চক্রে জন্ম-জন্মান্তর ধরে এই দুঃখময় জড় জগতে বদ্ধ হয়েই থাকতে হয়।

কেউ যদি কৃষ্ণভক্তি আকাঙ্ক্ষী হন তবে কৃষ্ণের পাদপদ্মে শরণাগত হয়ে এই মহামায়ার দুঃখ ও উদ্বেগপূর্ণ জড় জগৎ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারবেন। এই কথা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবতগীতার ৭/১৪ শ্লোকে উল্লেখ করেছেন ━

❝ দৈবী হি এষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া।
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়াম্‌ এতাম্‌ তরন্তি তে॥ ❞ ‌

◼️অনুবাদ: “আমার এই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তাকে কেউই সহজে অতিক্রম করতে পারে না। কিন্তু যারা আমার শরনাগত হয় (প্রপদ্যন্তে), তারাই এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারে।” (গীতা ৭/১৪)

কিন্তু জগতের অসুর প্রকৃতির মানুষেরা দুর্গা বা কালীকে পরম আরাধ্যা রূপে গ্রহণ করে এবং শ্রীকৃষ্ণকে ঐতিহাসিক পুরুষ রূপে কল্পনা করে। আবার অনেকে মনে করে কালীপূজা, দুর্গাপূজা আর কৃষ্ণপূজা একই কথা। এই ধরণের লোকেরা মায়াপহৃত- জ্ঞানাঃ। মহামায়া তাদের জ্ঞান বুদ্ধি অপহরণ করেছেন। কারণ তারা কৃষ্ণের চরণে অপরাধী। এই কথা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরবর্তী ভাগবতগীতার ৭/১৫ শ্লোকে উল্লেখ করেছেন ━

❝ ন মাম্‌ দুষ্কৃতিনো মূঢ়াঃ প্রপদ্যন্তে নরাধমাঃ।
মায়য়া অপহৃতজ্ঞানা আসুরম্‌ ভাবম্‌ আশ্রিতাঃ॥ ❞ ‌
◼️অনুবাদ: মূঢ়, নরাধম, মায়ার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে এবং যারা আসুরিক ভাবসম্পন্ন, সেই সমস্ত দুস্কৃতকারীরা কখনও আমার শরণাগত হয় না। (গীতা ৭/১৫)

কিন্তু কেউ যদি কৃষ্ণপূজা করে, তবে তাঁর প্রতি সমস্ত দেব-দেবী প্রসন্ন হন বলে ভাগবতমের ৪/৩১/১৪ শ্লোকে উল্লেখ রয়েছে।

❝ যথা তরোঃ মূল নিষেচনেন
তৃপ্যন্তি তৎস্কন্ধভুজ উপশাখাঃ ।
প্রাণ উপহারাৎ চ যথা ইন্দ্রিয়াণাং
তথৈব সর্ব অর্হণম্‌ অচ্যুত ইজ্যা ॥ ❞

                      ━━┉┈┈(ভাগবত ৪/৩১/১৪)

◼️অনুবাদ: গাছের মূলে জল সেচন করলে যেমন সেই গাছের কাণ্ড, ডাল, উপশাখা প্রভৃতি সকলেই তৃপ্তিলাভ করে এবং উদরে আহার্যদ্রব্য প্রদানের দ্বারা যেমন ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি হয়, তেমনই শ্রীকৃষ্ণের পূজা করলে সমস্ত দেবতাদের পূজা হয়ে যায়।।

❝ কৃষ্ণভক্তি আছে যার সর্বদেব বন্ধু তার॥ ❞

Read-More_4

আরও পড়ুন: Kola Bou || নবপত্রিকা (কলা বউ বা কলা বৌ) কে? কেনো একে পূজা করা হয় ??

আরও পড়ুন: পিতৃপক্ষ (Pitru Paksha)-মহালয়া (Mahalaya)-দেবীপক্ষ (Devi Paksha) কি?

আরও পড়ুন: দশেরা (Dussehra) কি?✤ বিজয়া দশমীর (Bijaya Dashami) মাহাত্ম্য

x

Like it? Share with your friends!

203
172 shares, 203 points
daextlwcn_print_scripts(true);

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]