Join to Our Community
Community Grows With You

কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা (Kojagari Laxmi Puja) 🪔লক্ষ্মীদেবী কে?🪔

চান্দ্র পঞ্জিকা অনুসারে শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর, আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অর্থাৎ কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মী পূজার আরাধনা করা হয়, যা কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা (Kojagari Laxmi Puja) নামে পরিচিত। এই ‘কোজাগরী‘ শব্দটি হল সন্ধিবদ্ধ সংস্কৃত শব্দ। কঃ=কে এবং জাগর্তি =জাগরিত আছো অর্থাৎ ‘কে জেগে আছো?‘। 

কথিত রয়েছে, কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে দেবী লক্ষ্মী মর্তে আসেন তাঁর ভক্তদের আশীর্বাদ দান করতে। দেবী লক্ষ্মী পার্থিব এবং অপার্থিব সম্পদ, সৌভাগ্য এবং সৌন্দর্যের দেবী। এই তিথিতে যাঁরা রাত্রি জেগে দেবীর আরাধনা করে দেবীর আগমনের অপেক্ষায় থাকেন, তাঁরা লক্ষ্মীদেবীর বিশেষ আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন। ফলস্বরুপ সেই ভক্তকে দেবী ধনসম্পত্তি দান করেন। তাই ভক্তরা সারারাত জেগে থাকেন দেবীর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য।

কোজাগরী কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ হল যিনি ভগবান শ্রীহরির ভক্তি ও সেবাতে নিমগ্ন থাকেন অর্থাৎ সর্বদা হরির ভক্তিময় সেবাতে সজাগ, উদগ্রীব ও তৎপর এককথায় জাগ্রত থাকেন, তাকে যাতে জাগতিক অভাব-অনটনের অন্ধকার স্পর্শ না করতে পারে সেই কারনে তিনি তাকে জাগতিক ও পারমার্থিক ধন ঐশ্বর্যতে ভরিয়ে দেন ঠিক যেমন পূর্ণিমার আলো অন্ধকারকে মুঝে দিয়ে ধরিত্রীকে মধুরভাবে স্নাত করায়। যাতে তিনি হরিভক্তিতে আরও বেশি নিমগ্ন থাকতে পারেন, অভাব-অনটনে শ্রী হরিভক্তিতে কোনোভাবে বিঘ্ন না ঘটে, তা তিনি তত্ত্বাবধান করেন।   

কোজাগরী পূর্ণিমার অন্যান্য নাম দ্যূতপূর্ণিমা, লক্ষ্মীপূর্ণিমা আর আশ্বিনী পূর্ণিমা

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা রাতে জেগে মায়ের আরাধনা করতে হয়। দেবীর বাহন পেঁচা। লক্ষ্মীদেবী হলেন ধন সম্পত্তি অর্থাৎ ঐশ্বর্যের দেবী। তবে চতুর্ভূজা লক্ষ্মীদেবী চর্তুবর্গ ফল প্রদান করেন, যথা — ধর্ম, অর্থ, কর্মমোক্ষ। 

ধন সম্পদ, যশ, খ্যাতি, সুস্বাস্থ্যের আশায় ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেকেই সারা বছর প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী দেবীর পুজো করে থাকেন। এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি, আশ্বিন পূর্ণিমাদীপাবলীতে লক্ষ্মী দেবীর পুজো করা হয়। তবে খারিফ শস্য ও রবি শস্য কেটে ঝেড়ে ঠিক যে সময় গৃহজাত হয় তখনই বাঙালি মেতে ওঠে লক্ষ্মীর আরাধনায়। তবে পুজোর উপচারে পরিবর্তন হয় মাস ভেদে |

মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গার আগমনে উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছিল মানুষ। চিন্ময়ী দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তির বিসর্জনের আক্ষেপ ভুলে মানুষ আবার মেতে ওঠে লক্ষ্মী পুজোর উৎসব ও আনন্দে।

─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─

✤ কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা ২০২৩ : সময়সূচী ✤

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 28 অক্টোবর 2023 শনিবার কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০ই কার্তিক ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─

লক্ষ্মীদেবীর স্তুতি

❝লক্ষ্মীস্তং সর্বদেবানং যথাসম্ভব নিত্যশঃ ।
স্থিরাভাব তথা দেবী মম জন্মনি জন্মনি ॥
বন্দে বিষ্ণু প্রিয়াং দেবী দারিদ্র্য দুঃখনাশিনী ।
ক্ষীরোদ সম্ভবাং দেবীং বিষ্ণুবক্ষ বিলাসিনীঃ॥ ❞

লক্ষ্মীদেবীর ধ্যানমন্ত্র

❝ ওঁ পাশাক্ষমালিকান্তোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সোম্যয়োঃ ।
পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ প্রিয়াং ত্রৈলোক্যমাতরম্‌ ॥
গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষিতাম্ ।
রোক্নপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু॥ ❞

এতৎ পাদ্যং ওঁ লক্ষ্ম্যৈ নমঃ

অনুবাদ: দক্ষিণহস্তে পাশ (বরুণ দেবতার অস্ত্র), অক্ষমালা এবং বামহস্তে পদ্ম ও অঙ্কুশধারিণী, পদ্মাসনে উপবিষ্টা, শ্রীরূপা, ত্রিলোকমাতা, গৌরবর্ণা, সুন্দরী, সর্বালঙ্কারভূষিতা, ব্যগ্রহস্তে স্বর্ণপদ্মধারিণী এবং দক্ষিণহস্তে বরদাত্রী দেবীকে ধ্যান করি।

লক্ষ্মীদেবীর স্তোত্রম্

❝ ওঁ ত্রৈলোক্য-পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে ।
যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা ॥
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া ।
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পৎপ্রদা শ্রীপদ্মধারিণী॥
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত ।
স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারাদিভিং সহ॥ ❞

(তিন বার পাঠ করতে হবে)

লক্ষ্মীদেবীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্ৰ

❝ ওঁ নমস্তে সর্বদেবানং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তয়ৎ প্রপন্নানাং সা মে ভুয়াত্ত্বদর্চ্চনাৎ॥ ❞

লক্ষ্মীদেবীর প্রণাম মন্ত্ৰ

❝ ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাম্‌ দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে॥ ❞

লক্ষ্মীদেবীর গায়ত্রী মন্ত্র

❝ ওঁ মহালক্ষ্ম্যৈ বিদ্মহে মহাশ্রিয়ৈ ধীমহি তন্নঃ শ্রীপচোদয়াৎ ওঁ॥ ❞

লক্ষ্মীদেবীর বীজ মন্ত্ৰ

❝ওঁ শ্রীং হৃীং শ্রীং কমলে কমলালয়ে প্রসীদ প্রসীদ শ্রীং হৃীং শ্রীং ওম মহালক্ষ্মী নমঃ ❞

লক্ষ্মীর এই বীজমন্ত্র অত্যন্ত শুভ ফলদায়ী। এই মন্ত্র জপ করলে অর্থ লাভের পথের সমস্ত বাধা দূর করা সম্ভব হয়। পদ্মবীজের মালা দিয়ে এই মন্ত্র জপ করা উচিত।

─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─

✤ লক্ষ্মীদেবী কে? ✤

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেমন সমস্ত বিষ্ণুতত্ত্বের আদি উৎস, তেমনি শ্রীমতি রাধারাণী সমস্ত শ্রীতত্ত্ব বা লক্ষ্মীতত্ত্বের আদি উৎস। অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডে অনন্ত কোটি বিষ্ণু যেমন আছেন, তেমনি বিষ্ণুপত্নীরূপে অনন্ত কোটি লক্ষ্মীদেবীও তাঁদের সেবায় রত আছেন । এই লক্ষ্মীদেবীগণ চিন্ময় জগতের বৈকুণ্ঠনিবাসী ভগবান নারায়ণের পত্নীরূপী মহালক্ষ্মীর অংশ। এই মহালক্ষ্মীর উৎপত্তি শ্রীমতি রাধারাণী থেকে। শ্রীমতি রাধিকার বিলাসমূর্তি হলেন মহালক্ষ্মী। রাধিকা পূর্ণচন্দ্র, সেই পূর্ণচন্দ্রই কলাংশে যখন দৃশমান হন তখন তা শ্রী (মহালক্ষ্মী) ও তদাংশ লক্ষ্মীসমূহ রূপে প্রতিভাত হন। চন্দ্র ১৬ কলাংশে ভিন্ন রূপে দৃশ্যমান হলেও চন্দ্র কিন্তু একটাই। সেহেতু লক্ষ্মীরূপে যখন শ্রীমতি রাধিকা আবির্ভূত হন তখন আপন মাধুর্য্যভাব গোপণ করে ঐশ্বর্যভাব প্রকাশ করেন। বিষ্ণুতত্ত্বের মতোই লক্ষ্মীতত্ত্বও পূর্ণ। তাহাদের উৎস সেই পরিপূর্ণতমা মাধুর্যমন্ডিতা বৃন্দাবনেশ্বরী কৃষ্ণপ্রাণা রাধিকা।

বৃহদারণ্যক উপনিষদে উল্লেখ আছে ━

❝ স ইমমেবাঽঽত্মানং দ্বেধাঽপাতয়ত্।
ততঃ পতিশ্চ পত্নী চাভবতাম্॥ ❞ 

                                   ━━┉┈┈‌(বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১/৪/৩)

অনুবাদ: রসরাজ আদিগোবিন্দ পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বীয় দেহকে দুইভাগে বিভক্ত করিলেন (ভগবানের বাম অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হলেন শ্রীমতি রাধিকা)।  এইরূপে তাঁরা পতি ও পত্নী হইল। 

নারদীয় মহাপুরাণে উল্লেখ আছে ━

❝ কদাচিৎ তয়া সার্দ্ধ স্থিতস্য মুনিসত্তম কৃষ্ণস্য।
বামভাগাৎ জাতো নারায়ণঃ স্বয়ম্ ॥  ১২
রাধিকায়াশ্চ বামাংগান্মহালক্ষ্মীভূব হ ।
ততঃ কৃষ্ণো মহালক্ষ্মীং দত্ত্বা নারায়ণায় চ ॥ ১৩
বৈকুন্ঠ স্থাপযামাস শশ্বত্পালনকর্মণি॥ ১৪ ॥❞

                                 ━━┉┈┈‌(নারদীয় মহাপুরাণ, পূর্বভাগ, ৩।৮৩।১২-১৪ )

অনুবাদ: হে মুনিসত্তম! কোনো এক সময় অর্ধাঙ্গিনী রাধা সহিত অবস্থানকালে শ্রীকৃষ্ণের বামাঙ্গ থেকে নারায়ণ আবির্ভাব হলো আর শ্রীমতি রাধিকার বামাঙ্গ হতে মহালক্ষ্মীর আবির্ভাব হলো। কৃষ্ণ তখন মহালক্ষ্মী নারায়ণকে প্রদান করলেন এবং বৈকুণ্ঠে স্থিতি প্রদান করে নিত্য পালনকার্যে নিযুক্ত করলেন।

‘নারদপঞ্চরাত্র’তে স্বয়ং মহাদেবও নারদের কাছে ব্যাখা করেছেন, কিভাবে শ্রীমতি রাধিকা হতে সমস্ত লক্ষ্মীতত্ত্বের প্রকাশ হয়েছে।

❝ রাধাবামাংশসম্ভূতা মহালক্ষ্মীঃ প্রকীৰ্ত্তিতা ।
ঐশ্বর্য্যাধিষ্ঠাত্রী দেবীশ্বরস্যেব হি নারদ ॥  ৬০
তদংশা সিন্ধুকন্যা চ ক্ষীরোদমথনোদ্ভবা ।
মর্ত্যলক্ষ্মীশ্চ সা দেবী পত্নী ক্ষীরোদশায়িনঃ ॥  ৬১
তদংশা স্বৰ্গলক্ষ্মীশ্চ শক্রাদীনাং গৃহে গৃহে ।
স্বয়ং দেবী মহালক্ষ্মীঃ পত্নী বৈকুণ্ঠশায়িনঃ॥  ৬২ ॥❞

                                 ━━┉┈┈‌(নারদপঞ্চরাত্র, ২য় রাত্র, অধ্যায় ৩, শ্লোক ৬০-৬২)

অনুবাদ: হে নারদ! শ্রীমতি রাধারানীর বামাংশ থেকে ঐশ্বর্য্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ‘মহালক্ষ্মী‘ আবির্ভূতা হন এবং বৈকুণ্ঠশায়ী নারায়ণের পত্নী হন ও স্বর্গলোকে অবস্থান করেন। তাঁর অংশ থেকে আবির্ভূতা ‘লক্ষ্মী’ সমুদ্র মন্থন কালে উঠে আসে এবং ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণুর পত্নী হন ও মর্ত্যলোকে অবস্থান করেন। 

শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে ভগবান শ্রীনারায়ণ নারদ মুনিকে বর্ণনা করেছেন ━

❝ রাধাবামাংশভাগেন মহালক্ষ্মীর্বভূব সা ।
চতুর্ভূজস্য সা পত্নী দেবী বৈকুন্ঠবাসিনী ॥  ৪৪
তদংশা রাজলক্ষ্মীশ্চ রাজসম্পৎপ্রদায়িনী ।
তদংশা মর্ত্ত্যলক্ষ্মীশ্চ গৃহিণাঞ্চ গৃহে গৃহে ॥  ৪৫
শস্যাধিষ্ঠাতৃদেবী চ সা এব গৃহদেবতা ।
স্বয়ং রাধা কৃষ্ণপত্নী কৃষ্ণবক্ষঃস্থলস্থিতো॥  ৪৬ ॥❞

                                 ━━┉┈┈‌(শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৪৮। ৪৪-৪৬)

অনুবাদ: শ্রীমতি রাধারানীর বামাংশ থেকে ত্রিলোকপ্রসিদ্ধ ‘মহালক্ষ্মী‘ দেবী আবির্ভূতা হন এবং তিনি চতুর্ভুজ নারায়ণের প্রিয়তমা; বৈকুণ্ঠে তাঁহার বাস। মহালক্ষ্মীর অংশ থেকে আবির্ভূতা ‘রাজলক্ষ্মী’ দেবী রাজগণের সম্পদবৃদ্ধি করেন। আবার রাজলক্ষ্মীর অংশ থেকে আবির্ভূতা ‘মর্ত্যলক্ষ্মী‘ দেবী প্রতি মনুষ্যের গৃহে বাস করেন। স্বয়ং শ্রীরাধিকা কৃষ্ণপত্নীরূপে শ্রীকৃষ্ণের বক্ষঃস্থলে নিরন্তর অবস্থান করেন।

কুমার সম্প্রদায় (নিম্বার্ক সম্প্রদায়) এ বহুল চর্চিত শাস্ত্র ‘সনৎকুমার সংহিতা’। উক্ত সংহিতায় উল্লেখ আছে-

❝ শ্রীভূলীলা যোগমায়া চিন্ত্যাচিন্ত্যা তথৈব চ ।
মোহিনী কৌশলীত্যষ্টৌবহিরঙ্গাশ্চ শক্তয়ঃ ॥  ২৯৫
লীলা প্রেমস্বরূপা চ স্থাপত্যাকর্ষিণী তথা ।
সংযোগিনী বিয়োগিন্য আহ্লাদিনীত্যন্তরঙ্গিকা ॥  ২৯৬
ব্রজে শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রস্য সন্তি ষোড়শ শক্তয়ঃ ।
পোষিকামধুরস্যৈব তস্যৈতা বৈ সনাতনাঃ ॥  ২৯৭
 হ্লাদিনী যা মহাশক্তিঃ সর্বশক্তি বরীয়সী।
তৎ সারভাবরূপা শ্রীরাধিকা পরিকীর্তিতা ॥  ২৯৮ ॥❞

                                 ━━┉┈┈‌(সনৎকুমার সংহিতা, শ্লোক ২৯৫-২৯৮)

অনুবাদ: শ্রী(মহালক্ষ্মী), ভূ, লীলা(নীলা), যোগমায়া, চিন্ত্যা, অচিন্ত্যা, মোহিনী, কৌশলী– এই অষ্টশক্তি হল শ্রীকৃষ্ণের বহিরঙ্গা শক্তি। আবার লীলা প্রেমস্বরূপা, স্থাপনী, আকর্ষণী, সংযোগিনী, বিয়োগিনীআহ্লাদিনী – এই অষ্টশক্তি হল শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা শক্তি। ব্রজধামে শ্রীকৃষ্ণ এই ষোড়শ সনাতনী শক্তি নিয়ে বিরাজ করেন এবং যাদের দ্বারা তিনি মাধুর্য্য পোষণ করেন। সমস্ত শক্তির মধ্যে মহাশক্তি ও সর্বশ্রেষ্ঠা হল হ্লাদিনীশক্তি (আহ্লাদিনী শক্তি) এবং এই হ্লাদিনীশক্তিই হল শ্রীমতি রাধারানী

দ্বাপরযুগে বৃন্দাবনেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং আবির্ভূত হলে তাঁর শক্তিসমূহ ধরিত্রীতে অবতীর্ণ হন। শ্রীমতি রাধারানী বৃষভানু কন্যা রূপে, মহালক্ষ্মী রুক্মিনী রূপে এবং সত্যভামাদি অন্যান্য লক্ষ্মীসমূহও দ্বারকায় কৃষ্ণমহিষীরূপে আবির্ভূত হন। তাছাড়া গর্গসংহিতার দ্বারকখন্ডের ১৬-১৮ নং অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিনীকে শ্রীমতি রাধিকার শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করেন এবং রুক্মিনী তা উপলব্ধি হয়ে রাধিকার আনুগত্য স্বীকার করেন। 

শাক্ত সম্প্রদায়ের ‘দেবীভাগবতম উপপুরাণে’ মহালক্ষ্মীর উৎপত্তি সম্পর্কে বর্ণন রয়েছে। (দেবীভাগবতম উপপুরাণের এই শ্লোকসমূহ শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণের ২য় অধ্যায়েও বর্ণন রয়েছে)।

❝ অথ কালান্তরে সা চ দ্বিধারূপা বভূব হ ।
বামাৰ্দ্ধাঙ্গাচ কমলা দক্ষিণার্দ্ধশ্চ রাধিকা ॥  ৫৪
এতস্মিন্নন্তরে কৃষ্ণো দ্বিধারূপো বভূব হ ।
দক্ষিণাৰ্দ্ধশ্চ দ্বিভুজো বামাৰ্দ্ধশ্চ চতুভুজঃ ॥  ৫৫
এবং লক্ষীঞ্চ প্রদদৌ তুষ্টো নারায়ণায় চ ।
স জগাম চ বৈকুণ্ঠং তাভ্যাং সার্দ্ধং জগৎ পতিঃ॥  ৫৭
বভুবুঃ কমলাঙ্গাচ্চ দাসী কোট্যশ্চ তৎসমাঃ ॥  ৫৯ ॥❞

                                 ━━┉┈┈‌(দেবীভাগবতম উপপুরাণ, ৯।২।৫৪,৫৫,৫৭,৫৯)

অনুবাদ: কিছুকাল পরে শ্রীমতি রাধারানী দুই ভাগে বিভক্ত হলেন, তাঁর বাম অংশ থেকে কমলা (মহালক্ষ্মী) হলো এবং দক্ষিণ অংশ  রাধা-ই রইল। ঐ সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণও দুই ভাগে বিভক্ত হলেন। তাঁর বাম অংশ থেকে চতুর্ভুজ নারায়ণ হলো এবং দক্ষিণ অংশ  দ্বিভুজ শ্রীকৃষ্ণই রইল। শ্রীকৃষ্ণ সরস্বতীর মতো লক্ষ্মীকেও নারায়ণের হাতে সমর্পণ করলেন। জগৎপতি নারায়ণ লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে সমভিব্যাহারে নিয়ে বৈকুণ্ঠে গমন করলেন। কমলা লক্ষ্মীর অর্থাৎ মহালক্ষ্মীর অঙ্গ থেকে যে কোটি কোটি রমণী উৎপন্ন হলেন, তাঁরা সকলেই মহালক্ষ্মীর সহচরী এবং সর্ব্বাংশে তাঁর তুল্য গুণবতী।

বৃহন্নারদীয়পুরাণের (চৌখাম্বাপ্রেস থেকে প্রকাশিত) পূর্বভাগের ৩য় পাদের ৮২ নং অধ্যায়ে রাধা-কৃষ্ণ যুগল সহস্র নামে শ্রীমতি রাধিকা ২৭, ৭৪, ১৫১, ২১৭, ৩৮৯ তম নাম যথাক্রমে ‘জিতাপদ্মা’, ‘কোটি লক্ষ্মী সুখবাহ’, ‘ লক্ষ্মী কোটি বিলাসিনী’, ‘রামরাধ্যা’, ‘শ্রীশেষদেবজননী’, ‘রামেশ্বরী’ ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে।  এ সকল নামের অর্থ হল ━

✤ (১) জিতাপদ্মা  :  একবার শ্রীমতি রাধার অনন্য লাবণ্যের কাছে দেবী লক্ষ্মীও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন, এজন্য শ্রীমতি রাধিকার নাম ‘জিতাপদ্মা’।

✤ (২) কোটিলক্ষ্মীসুখবাহ  : শ্রীমতি রাধিকা একাই কোটি লক্ষ্মীর ন্যায় সুখের প্রদানকারী, তাই তাঁর এক নাম ‘কোটি-লক্ষ্মী-সুখবাহ’।

✤ (৩) লক্ষ্মীকোটিবিলাসিনী  : শ্রীমতি রাধিকা একাই কোটি লক্ষ্মীর মতো আনন্দদায়িনী, তাই তাঁর নাম ‘লক্ষ্মী-কোটি-বিলাসিনী’।

✤ (৪) রমারাধ্যা  :  শ্রীমতি রাধিকা রমাদেবী অর্থাৎ মহালক্ষ্মী কর্তৃক আরাধিত হন, তাই তাঁর এক নাম ‘রমারাধ্যা’।

✤ (৫) শ্রীশেষদেবজননী  :  শ্রীমতি রাধিকা হতে শ্রী(মহালক্ষ্মী), শেষ নাগ এবং দেবতাগণ জাত হন, তাই রাধিকার নাম  ‘শ্রীশেষদেবজননী’।

✤ (৬) রামেশ্বরী  :  শ্রীমতি রাধিকা রমাদেবী অর্থাৎ মহালক্ষ্মীরও ঈশ্বরী, তাই তাঁর এক নাম ‘রমেশ্বরী’

─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─

সমুদ্র মন্থনে লক্ষ্মীদেবীর আবির্ভাব

বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থ অনুসারে লক্ষ্মী দেবীর আবির্ভাব হয়েছে সমুদ্র থেকে। দুর্বাশা মুনির শাপে স্বর্গ একদা শ্রীহীন বা লক্ষ্মী-ছাড়া হয়ে যায়। তখন বিষ্ণুর পরামর্শে স্বর্গের ঐশ্বর্য ফিরে পাবার জন্য দেবগণ অসুরদের সাথে নিয়ে সমুদ্র-মন্থন শুরু করেন। মন্থন রজ্জু হলো বাসুকী নাগ। মন্থন দন্ড হলো মন্দার পর্বত। মন্থন দন্ডটি সাগরে নিমজ্জিত কূর্মদেব নিজ পৃষ্ঠে ধারণ করেন। মন্থনকারীরা দুই দলে বিভক্ত হলেন ━ বাসুকীর অগ্রভাগে দৈত্যগণ এবং পুচ্ছভাগে দেবতাগণ

🕉️ মন্থন করতে থাকলে কালকূট নামক ভয়ংকর বিষ উঠে এল। দেবাদিদেব শিব সেই বিষ পান করে জগতকে রক্ষা করলেন, কারন তিনি হলেন পরম বৈষ্ণব, ভগবান বিষ্ণু হলেন আরাধ্য। ব্রহ্মাকে জড় জগত সৃষ্টি, শিবকে সংহারের দায়িত্ব দিয়ে স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন। একদিকে অসময়ে অকারনে ধ্বংস থেকে জগতকে রক্ষা করার সেবা, অন্যদিকে আরাধ্য ভগবানকে তুষ্ট করার সেবা ━  কেমন করে এক পরম বৈষ্ণব বঞ্চিত থাকতে পারেন। বিষ পান করে শিব হলেন নীলকণ্ঠ।          

🕉️ সুরভী গাভী উঠে এল। সুরভী ঋষিগণ সেই গাভী গ্রহণ করলেন।

🕉️ উচ্চৈঃশ্রবা নামক এক উজ্জ্বল শ্বেত বর্ণের ঘোড়া উঠে এল। দৈত্যরাজ বলী সেই অশ্ব গ্রহণ করলেন।

🕉️ ঐরাবত নামে শ্বেত বর্ণের চার দাঁতওয়ালা হাতী উঠে এল। ইন্দ্র সেই হাতী গ্রহণ করলেন। 

🕉️ কৌস্তুভ পদ্মরাগ মণি উঠে এল। ভগবান বিষ্ণু সেগুলি গ্রহণ করলেন। সমুদ্র হল অশেষ ধন-রত্নের আধার অর্থাৎ পরিপূর্ণ বলে সমুদ্রকে রত্নাকরও বলা হয়। 

🕉️ পারিজাত নামক বৃক্ষ উঠে এল, ইন্দ্র তা গ্রহণ করলেন। অপ্সরাগণ উঠে এল, ইন্দ্র তাদেরকেও গ্রহণ করলেন।

🕉️ তারপর লক্ষ্মীদেবী উঠে এলেন। সমুদ্র থেকে দেবীর উদ্ভব বলে দেবীকে বলা হয় সমুদ্রোদ্ভবা। কিশোরী কুমারী লক্ষ্মী অতুলনীয় সৌন্দর্যময়ী। সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মীদেবী ক্ষীর সমুদ্রকে পিতারূপে বরণ করে আবির্ভূতা হলেন। তিনি ঘটনাস্থলে স্বয়ংবর অনুষ্ঠান করে তাঁর পতি মনোনয়ন করতে অভিলাষ করলেন। সেখানে সুদর্শন ও ক্ষমতাশালী বড় বড় অসুরগণেরা ও বড় বড় দেবতারা সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু লক্ষ্মী বরণমাল্য নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন।  প্রত্যেককে পরীক্ষা করলেন। তাঁর আশ্রয় হওয়ার উপযুক্ত কাউকেই খুঁজে পেলেন না ।

লক্ষ্মীদেবী কিভাবে সভার মধ্যে সবাইকে পরীক্ষা করে মনে মনে চিন্তা করছিলেন? তিনি দেখেছিলেন কেউ অত্যন্ত মহান, কিন্তু কাম জয় করতে পারেনি। কেউ আবার জ্ঞানী, কিন্তু ফল ভোগ আকাঙ্ক্ষা জয় করতে পারেনি। কেউ কঠোর তপস্যা করছে কিন্তু ক্রোধী। কেউ ধর্ম বিশেষজ্ঞ, কিন্তু সব জীবের প্রতি দয়ালু নয়। কেউ প্রচণ্ড শক্তিশালী, কিন্তু কালের প্রভাব অতিক্রম করতে সমর্থ নয়। কেউ দীর্ঘ আয়ু সম্পন্ন, কিন্তু সদাচারী নয়। কেউ মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী এবং সদাচারীও, কিন্তু ক্ষণজীবী। কেউ সর্বতোভাবে সৎগুণ সমন্বিত, কিন্তু ভগবানের ভক্ত নয়। শিবের নিত্য জীবন আছে, তবুও শ্মশানে বাস করার অশুভ অভ্যাস আছে।

অবশেষে লক্ষ্মীদেবী চিন্তা করলেন, কে আত্মারাম? কে সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র? কে সমস্ত বদ্ধ জীবদের মুক্তিদাতা? কে সমস্ত যোগশক্তি সমন্বিত? কে সমস্ত দিব্যগুণে গুণান্বিত ? সেইরকম ব্যক্তি কি এই সভার মধ্যে আছেন ?

তারপর লক্ষ্মীদেবী দেখতে পেলেন, সেই মুকুন্দ শ্রীহরি সবেমাত্র সভায় প্রবেশ করলেন। অমনি লক্ষ্মীদেবী তাঁর দিকেই দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তাঁকে বরণ মালা পরিয়ে দিয়ে এমনভাবে সলজ্জভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন যাতে শ্রীহরি তাঁর বক্ষে লক্ষ্মীকে আকর্ষণ করে নেন।

শ্রীহরি বলেন, হে লক্ষ্মী, তুমি আমার বক্ষে বিরাজ করো । লক্ষ্মীদেবী দৃষ্টিপাতের দ্বারা দেবতা, দৈত্য ও মানুষ সবাইকেই কৃপা করতে পারেন। লক্ষ্মী যখন বুঝতে পারেন কোনও ভক্ত শ্রীহরির সেবা করার অভিলাষী, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই তাকে ঐশ্বর্য লাভের আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন। কর্মী বিষয়ী লোক লক্ষ্মীদেবীর কৃপা লাভের চেষ্টা করে কিন্তু তারা হরিভক্ত নয়, তাই তাদের কাছে লক্ষ্মীদেবী চঞ্চলা। অনেক কিছু  ধন সম্পদ পেয়ে যাবে, আবার হারিয়েই যাবে। কিন্তু ভক্তিমন্ত ব্যক্তিত্বের সবই প্রাপ্য, যদিও কখনও কখনও তাকে নিঃস্ব দরিদ্র বলে মনে হয়। কিন্তু নিত্য ঐশ্বর্য লাভের সে উপযুক্ত।

─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─

পেঁচা কেন লক্ষ্মীদেবীর বাহন?

অনেকেই এই বিষয়ে অবগত নয় যে, লক্ষ্মী দেবীর বাহন পেঁচা কেন?

🕉️পুরাণ কাহিনী ━ পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মা বিশ্বব্রাহ্মণ্ড তৈরি করার পরে দেবতারা মর্তে আগমণ করেন। তারা পায়ে হেঁটেই বিশ্ব পরিদর্শন করেন। সেই সময় অনেক প্রাণী তাদের বাহন হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। অর্থাৎ তাদের নিজেদের পিঠে বা ঘাড়ে বসিয়ে ভ্রমণ করাতে চায়। দেবতারা নিজেদের বাহন পছন্দ করে নেন। দেবী লক্ষ্মী বলেন, তিনি যেহেতু রাতে পৃথিবীতে আসবেন তাই রাতে যে প্রাণী দেখতে পায় সেই হবে তাঁর বাহন। রাতের অন্ধকারে সকলেই যখন ঘুমিয়ে পড়েছিল সেই সময় মা লক্ষ্মীর প্রতীক্ষায় একমাত্র জেগে বসেছিল পেঁচা। কারন পেঁচা হল নিশাচর প্রাণী। তাই মা লক্ষ্মী পেঁচাকেই তাঁর বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। 

🕉️ ভৌতিক অর্থ ━ ধান হল লক্ষ্মীর প্রতীক। চাল, ডাল, শস্যদানা হল লক্ষ্মীর প্রতীক। তাই যারা খাদ্য অপচয় করেন , তাদের ওপর দেবী লক্ষ্মী কখনোই তুষ্ট হন না। ধানক্ষেতের আশেপাশে ইঁদুর বা মূষিকের বাস এবং এরা ধানের ক্ষতি করে থাকে। পেঁচক বা পেঁচার আহার হল এই ইঁদুর। গোলাঘরকে লক্ষ্মীর প্রতীক বলা হয়। গোলাঘরের আশেপাশে ইঁদুরের বসবাস। পেঁচা এই ইঁদুরকে খেয়ে খাদ্যশস্য রক্ষা করে।

🕉️ শাস্ত্রিক অর্থ ━ শাস্ত্র মতে পেঁচা হল শুভশক্তির প্রতীক। আধ্যাত্মিক জগতের কাছে পেঁচা হল জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধি, প্রতিভা, অন্তর্দৃষ্টি, স্বাধীনতা, শক্তি ও সুরক্ষার প্রতীক। পেঁচা দিবা অন্ধ ও নিশাচর। এর অর্থ হল রাতের বেলা যখন সাধারণ মানুষেরা ঘুমিয়ে পড়েন, তখন সাধকেরা জেগে ওঠেন। নিঃশব্দ ও অন্ধকার পৃথিবী থেকেই জ্ঞানের আলো আহরণ করেন সাধকেরা। অন্ধকার এখানে গোপন করে সাধকের সাধনাকে। পৃথিবীর বুকে ভোরের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথেই তাঁরা যোগনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঠিক একই কারণে, সাধকদের কাছে পেঁচা শুভ।

মানুষ জ্ঞানের দ্বারা অর্থ-সম্পদ অর্জন করে, দিবালোকের মতো সব শুভ হয়। আবার যখন মানুষ সম্পদশালী হয় তখন সে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন থেকে দূরে সরে যায়, তখন অশুভ অন্ধকার ঘিরে ধরে।  

🕉️ আধ্যাত্মিক অর্থ ━ পেঁচা লক্ষ্মীদেবীর সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্ম ধারণ করে। যেমন ━ পেঁচা কুৎসিত ও দিবান্ধ। অর্থাৎ যারা সারা জীবন শুধু ধনসম্পদ লাভের চিন্তায় মগ্ন থাকে, তারা মোহেতে অন্ধ হয়ে যায়, ঠিক ঐ পেঁচার মতই। তখন জ্ঞানের আলো তাদের অন্তরে প্রবেশ করতে পারে না।

পেঁচা যেমন কালো অন্ধকারে পথ চলে, ধনলোভীরাও তেমনি কালো পথে অর্থাৎ অসৎ পথে ধাবিত হয়। তাই ধন-ঐশ্বর্যের  দেবীর সঙ্গে পেঁচা থাকার অর্থ হল, যিনি হরিভক্তি ধন অন্বেষণ করবেন, তিনি স্বাভাবিকভাবেই তাকে ঐশ্বর্য লাভের আশীর্বাদ দেবেন আর যিনি পার্থিব-ধন অন্বেষণ করবেন তিনি ক্ষণিকের জন্য অনেক কিছু  ধন সম্পদ পেয়ে যাবেন, আবার তা হারিয়েও যাবে। তাদের কাছে লক্ষ্মীদেবী চঞ্চলা। হয় তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার কিংবা তাদের লোভ-লালসার কারনে পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─

কোন ফুলে লক্ষ্মীদেবী তুষ্ট হন?

শাস্ত্র মতে লক্ষ্মীদেবী তুষ্ট হন বিশেষত ৫টি ফুলে, সেগুলি হল  ━

◆ (১) পদ্ম ফুল ,
◆ (২) শ্বেত কাঞ্চন ,
◆ (৩) গাঁদা ফুল,
◆ (৪) লাল গোলাপ,
◆ (৫) লাল জবা।

─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─

লক্ষ্মীদেবীর অষ্টরূপ (Ashtalakshmi)

শাস্ত্রে অষ্টলক্ষ্মীর অর্থাৎ লক্ষ্মীদেবীর আটটি রূপের বর্ণন করা হয়েছে
(১) শ্রী আদিলক্ষ্মী,
(২) শ্রী ধান্যলক্ষ্মী,
(৩) শ্রী ধৈর্য্যলক্ষ্মী,
(৪) শ্রী গজলক্ষ্মী,
(৫) শ্রী সন্তানলক্ষ্মী,
(৬) শ্রী বিজয়লক্ষ্মী,
(৭) শ্রী বিদ্যালক্ষ্মী ও
(৮) শ্রী ধনলক্ষ্মী।

👣 অষ্টলক্ষ্মি স্তোত্রং (Ashtalakshmi Stotram) 👣

 শ্রী আদিলক্ষ্মী
=============

❝ সুমনসবংদিত সুংদরি মাধবি, চংদ্র সহোদরি হেমময়ে ।
মুনিগণবংদিত মোক্ষপ্রদায়িনি, মংজুলভাষিণি বেদনুতে ॥
পঙ্কজবাসিনি দেবসুপূজিত, সদ্গুণবর্ষিণি শাংতিয়ুতে।
জয় জয় হে মধুসূদনকামিনি, আদিলক্ষ্মি সদা পালয়মাম॥॥❞

 শ্রী ধান্যলক্ষ্মী
=============

❝ অয়ি কলিকল্মষনাশিনি কামিনি, বৈদিকরূপিণি বেদময়ে।
ক্ষীরসমুদ্ভবমংগলরূপিণি, মংত্রনিবাসিনি মংত্রনুতে ॥
মঙ্গলদায়িনি অংবুজবাসিনি, দেবগণাশ্রিতপাদয়ুতে।
জয় জয় হে মধুসূদনকামিনি, ধান্য়লক্ষ্মি সদা পালয়মাম॥ ॥❞

শ্রী ধৈর্য্যলক্ষ্মী
=============

❝ জয়বরবর্ণিনি বৈষ্ণবি ভার্গবি, মংত্রস্বরূপিণি মংত্রময়ে।
সুরগণপূজিত শীঘ্রফলপ্রদ, জ্ঞানবিকাসিনি শাস্ত্রনুতে ॥
ভবভয়হারিণি পাপবিমোচনি, সাধুজনাশ্রিত পাদয়ুতে।
জয় জয় হে মধুসূদনকামিনি, ধৈর্যলক্ষ্মি সদা পালয়মাম॥ ॥❞

শ্রী গজলক্ষ্মী
=============

❝ জয় জয় দুর্গতিনাশিনি কামিনি, সর্বফলপ্রদশাস্ত্রময়ে।
রথগজতুরগপদাতিসমাবৃত, পরিজনমংডিত লোকসুতে ॥
হরিহরব্রহ্ম সুপূজিত সেবিত, তাপনিবারিণি পাদয়ুতে।
জয় জয় হে মধুসূদনকামিনি, গজলক্ষ্মি সদা পালয়মাম॥ ॥❞

শ্রী সন্তানলক্ষ্মী
=============

❝ অয়ি খগবাহিনি মোহিনি চক্রিণি, রাগবিবর্ধিনি জ্ঞানময়ে।
গুণগণ বারিধি লোকহিতৈষিণি, স্বরসপ্তভূষিত গাননুতে ॥
সকল সুরাসুর দেবমুনীশ্বর, মানববংদিত পাদয়ুতে।
জয় জয় হে মধুসূদনকামিনি, সন্তানলক্ষ্মি সদা পালয়মাম॥ ॥❞

শ্রী বিজয়লক্ষ্মী
=============

❝ জয় কমলাসিনি সদ্গতিদায়িনি, জ্ঞানবিকাসিনি জ্ঞানময়ে।
অনুদিনমর্চিত কুংকুমধূসর, ভূষিতবাসিত বাদ্য়নুতে ॥
কনকধরাস্তুতি বৈভববংদিত, শংকরদেশিক মান্য়পদে।
জয় জয় হে মধুসূদনকামিনি, বিজয়লক্ষ্মি সদা পালয়মাম॥ ॥❞

শ্রী বিদ্যালক্ষ্মী
=============

❝ প্রণত সুরেশ্বরি ভারতি ভার্গবি, শোকবিনাশিনি রত্নময়ে।
মণিময়ভূষিত কর্ণবিভূষণ, শাংতিসমাবৃত হাস্য়মুখে ॥
নবনিধিদায়িনি কলিমলহারিণি, কামিতফলপ্রদ হস্তয়ুতে।
জয় জয় হে মধুসূদনকামিনি, বিদ্যালক্ষ্মি সদা পালয়মাম॥ ॥❞

শ্রী ধনলক্ষ্মী
=============

❝ ধিমি ধিমি ধিংধিমি, ধিংধিমি ধিংধিমি, দুংদুভিনাদ সংপূর্ণময়ে।
ঘম ঘম ঘংঘম, ঘংঘম ঘংঘম, শংখনিনাদসুবাদ্য়নুতে ॥
বেদপুরাণেতিহাসসুপূজিত, বৈদিকমার্গ প্রদর্শয়ুতে।
জয় জয় হে মধুসূদনকামিনি, ধনলক্ষ্মি সদা পালয়মাম॥ ॥❞

|| ইতি অষ্টলক্ষ্মী স্তোত্রং সম্পূর্ণম।।

─•••━━━━━●•⊱♦️✥♦️⊰•⊰❃*❀❁❁❀*❃⊱⊱♦️✥♦️⊰●•━━━━•••─

আরও পড়ুন: Kola Bou || নবপত্রিকা (কলা বউ বা কলা বৌ) কে? কেনো একে পূজা করা হয় ??

আরও পড়ুন: Who is Devi Durga? দেবী দুর্গা কে? দশ হাতে অস্ত্র কি কি?

আরও পড়ুন: দশেরা (Dussehra) কি?✤ বিজয়া দশমীর (Bijaya Dashami) মাহাত্ম্য

আরও পড়ুন: পিতৃপক্ষ (Pitru Paksha)✤মহালয়া (Mahalaya)✤দেবীপক্ষ (Devi Paksha) কি?

Join to Our Community
Community Grows With You
x

This website uses cookies.