দুর্গা পূজার সময় আমরা শ্রী গণেশের পাশে লাল পেড়ে শাড়িতে ঘোমটা ঢাকা একটি কলা বৃক্ষ দেখতে পাই। অনেকে একে কলা বউ (কলা বৌ) বলে থাকেন এবং শ্রী গণেশের স্ত্রী হিসাবে চিহ্নিত করে থাকেন। কিন্তু আদৌ এটি শ্রী গণেশের বউ নয়। একে ‘নবপত্রিকা’ বলা হয়। এটি মা দুর্গা। অর্থাৎ গণেশের জননী। আসলে এটি দূর্গা দেবীর শাকম্ভরী রূপ। “শাকম্ভরী” এর অর্থ হল যিনি প্রাণীকূলকে ফলমূল এবং শাকসবজি প্রদান করে রক্ষা করেন। সুতরাং এটি হল প্রকৃতি ও শস্যবধূ বা শস্যমাতা রূপের প্রতীক।
গণেশের স্ত্রীর নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি। পৌরাণিক ইতিহাস অনুসারে দেবতাদের স্ত্রীরা সবসময় দেবতাদের বাম দিকে অবস্থান করতেন। কিন্তু কলা বউ গণেশের ডান দিকে অবস্থান করেন।
✤ কলা বউ (কলা বৌ) কে ? ✤
কলা বউ হল আসলে নবপত্রিকা যা দেবী দুর্গার বৃক্ষ রূপ। মা দুর্গার নয় রূপের প্রতীক হলো নবপত্রিকা। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নয়টি পাতা নয়, নয়টি গাছ।
নয়টি গাছ দিয়ে নবপত্রিকা গঠন করা হয়। এই নয়টি গাছ মা দুর্গার নয় রূপ অর্থাৎ নয় শক্তির প্রতীক। এই নয়টি উদ্ভিদ এবং তাতে দেবী দুর্গার নয়টি রূপ হল –
➡️ ১। রম্ভা (কদলী বা কলা গাছ) ━ যেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী ব্রহ্মাণী।
➡️ ২। কচ্চি (কচু গাছ) ━ যেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী কালী।
➡️ ৩। হরিদ্রা (হলুদ গাছ) ━ যেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী দুর্গা বা উমা।
➡️ ৪। জয়ন্তী গাছ ━ যেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী কার্তিকী।
➡️ ৫। বিল্ব (বেল গাছ) ━ যেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী শিবা।
➡️ ৬। দাড়িম্ব (ডালিম বা বেদানা গাছ) ━ যেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী রক্তদন্তিকা।
➡️ ৭। অশোক গাছ ━ যেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী শোকরহিতা।
➡️ ৮। মানকচু গাছ ━ যেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী চামুণ্ডা।
➡️ ৯। ধান গাছ ━ যেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী লক্ষ্মী।
একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে সিঁদুর পরিয়ে ঘোমটা দেওয়া হয় বধূর সাজে। প্রচলিত ভাষায় এই নবপত্রিকার নাম হল “কলাবউ”।
এরপর এই কলা বউ (কলা বৌ)-কে দেবী প্রতিমার পরিবারের ডানদিকে রাখা হয়, আর ডানদিকে গনেশের পাশে রাখা হয় বলে আমরা মনে করে থাকি কলা বউ আসলে গনেশের স্ত্রী কিন্তু আসলে কিন্তু তা নয়। অর্থাৎ ঐভাবেই পুজো করা হয় দেবী দুর্গার সাথে কলা বউয়ের।
এই নয় দেবী একত্রে “নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা” নামে “নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ” মন্ত্রে পূজিতা হন।
কৃত্তিবাস ওঝা বিরচিত রামায়ণে রামচন্দ্র কর্তৃক নবপত্রিকা পূজার উল্লেখ রয়েছে – “বাঁধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।”
✤ নবপত্রিকা (কলা বউ বা কলা বৌ) পূজা ✤
✸ভগবতী দুর্গাদেবীর সপ্তমীবিহিত পূজা হল ২১শে অক্টোবর ২০২৩ (শনিবার), শুভ মহাসপ্তমী। আজকের মাতৃআরাধনার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল ‘নবপত্রিকা‘ অর্থাৎ, ‘কলাবউ‘ এর পূজা।
✸মহাসপ্তমীর সকালে সর্বপ্রথম কলাবউ স্নান করানো হয়। কলাবউ বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। সপ্তমীর সকালে নদী বা জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নবপত্রিকাকে মহাস্নান করাতে। তখনই শাস্ত্রবিধি মেনে স্নান করিয়ে নতুন শাড়ি, সিঁদুর পরানো হয় নবপত্রিকাকে ৷
নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে ফিরিয়ে আনা হয় বাড়ির পুজোর দালান অথবা বারোয়ারি পুজোমণ্ডপে ৷ সেখানে প্রবেশের পরই দুর্গাপূজার মূল প্রথাগত অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পরই দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। তবে এই নয় দেবীর মধ্যে একমাত্র দেবী চামুণ্ডা ছাড়া অন্য কোন দেবীর আবাহন ও পুজো হয়না। তারপর মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ধূপ-ধুনো, বেল-তুলসী, আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দনসহ ১৬টি উপাচার দিয়ে দেবী দুর্গাকে পূজা করা হয়।
🌸🌹 নবদুর্গায়ৈ নমঃ 🌹🌸
🌸🌹 জয় মা দুর্গা 🌹🌸
► আরও পড়ুন: Who is Devi Durga? দেবী দুর্গা কে? দশ হাতে অস্ত্র কি কি?
► আরও পড়ুন: Qualities of Lord Krishna-RadhaRani || শ্রীকৃষ্ণের ৬৪ গুণ ও শ্রীমতি রাধারানীর ২৫ গুণ বর্ণন