শালিগ্রাম-তুলসী বিবাহ (Shaligram-Tulsi Vivah; সংস্কৃত: तुलसी विवाह), ‘তুলসী কল্যাণম‘ নামেও পরিচিত, একটি হিন্দু উৎসব। চান্দ্র পঞ্জিকা অনুসারে কার্তিক মাসের শেষ দিন দেবী তুলসীর (পবিত্র তুলসীর মূর্তি, লক্ষ্মীর একটি রূপ) সঙ্গে শালিগ্রাম শিলার (বিষ্ণুর মূর্তি) আনুষ্ঠানিক বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। কার্তিক মাসের শেষ দিনটি অতি শুভ দিন। কারণ ━
◉ এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অপ্রাকৃত রাসযাত্রা সম্পন্ন করেছিলেন।
◉ চাতুর্মাস্য ব্রতের শেষ দিন।
◉ দামোদর মাস এবং ভীষ্ম পঞ্চক ব্রতের সমাপ্ত।
◉ এই দিনে তুলসী এবং শালিগ্রাম শিলার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।
‘শালিগ্রাম-তুলসী বিবাহ তিথি‘ মানে আমাদের গৃহমন্দিরে শালিগ্রাম ভগবানের সাথে তুলসী সেবা। বলা হয় এই তিথি মহাসৌভাগ্যপ্রদায়ী, এই তিথিতে তুলসী ও নারায়ণের একত্রে সেবায় শ্রীহরি চরণে নিষ্কপট ভক্তি লাভ হয়, সমস্ত পাপ নাশ হয়, বৈকুণ্ঠ ধামে পরমগতি লাভ হয়।
কিন্তু কে এই তুলসী ও শালিগ্রাম? কেন শালিগ্রাম ও তুলসীর বিবাহ দেওয়া হয়?
এই অখিল বিশ্বে যে দেবীর তুলনা নেই, তিনিই তুলসী নামে বিখ্যাত। “যস্যা দেব্যাস্তুলানাস্তি বিশ্বেষু চাখিলেষু চ। তুলসী তেন বিখ্যাতা।”
লীলাময় শ্রীকৃষ্ণ বিশ্ববাসীর প্রতি কৃপাপরবশ হয়ে নিজসেবা প্রদানের জন্য বিচিত্র লীলা প্রদর্শন করে স্বয়ং শালগ্রাম শিলারূপে প্রকট হয়েছিলেন এবং প্রিয়তমা শ্রীবৃন্দাদেবীকে বৃক্ষ-বিগ্রহ রূপে প্রকট করিয়েছিলেন। তুলসী ছাড়া নারায়ণের পূজা হয় না, নারায়ণ নিবেদ্য গ্রহণ করেন না।
✤ ১৬ই নভেম্বর ২০২৪, শনিবার (৩০ই কার্ত্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ) কৃষ্ণ প্রতিপদে তুলসী-শালিগ্রাম বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। বিভিন্ন কল্পে তুলসী ও শালিগ্রাম শিলার বিবাহ ভিন্নভিন্ন ভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। যার বর্ণনা নীচে বর্ণিত হল ━ 👣 স্কন্দ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, ও শিব পুরাণে বৃন্দাকে বিষ্ণুর (শ্রীহরির) একজন ধার্মিক ভক্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে , তুলসী দেবী হলেন সেই বৃন্দার পার্থিব রূপ। 👣 পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, একবার দেবাদিদেব শিব ইন্দ্রের উপর বিরক্ত হয়ে তার তৃতীয় চোখ খুলেছিলেন, যে চোখে ক্রোধের প্রচণ্ড আগুন জ্বলছিল। ক্রোধের আগুনে ইন্দ্র ভস্ম হয়ে যাবে বুঝতে পেরে গুরু বৃহস্পতি শিবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ইন্দ্রকে ক্ষমা করার অনুরোধ করেন। এতে শিব শান্ত হলে তিনি তাঁর চোখ থেকে অগ্নিকে সমুদ্রে পাঠালেন। তা থেকে একটি শিশুপুত্রের জন্ম হয়। এই বালক হলেন পরাক্রমশালী অসুর রাজা জলন্ধর। অর্থাৎ জলন্ধর হল ভগবান শিবের ক্রোধ থেকে জন্মগ্রহণকারী অসুর। তার রাজধানীর নামও ছিল জলন্ধর। 👣 পরবর্তীতে তার বিয়ে হয়েছিল বৃন্দার সঙ্গে। বৃন্দা ছিলেন মথুরার রাজা দৈত্যরাজ কালনেমির কন্যা কিন্তু তিনি ছিলেন বিষ্ণুর একজন মহান ভক্ত ও আরাধনায় মগ্ন থাকতেন। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন পতিব্রতা। তবে বিষ্ণুর আরাধনা ও পতিব্রতা হওয়ার কারণে বৃন্দার স্বামী জলন্ধর অসীম ক্ষমতা সম্পন্ন ও অজেয় হয়ে ওঠে অর্থাৎ কেউ তাকে পরাজিত করতে পারত না। তার ক্ষমতায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে দেব-দেবীরাও। 👣 যেহেতু সমুদ্র থেকে জন্ম হয়েছে জলন্ধরের সেহেতু একদিন সে সমুদ্র মন্থনকালে বেরিয়ে আসা ধন-সম্পদ তার বলে দাবি করেন। দেবতারা তার দাবিকে অস্বীকার করেন। এতে জলন্ধর ভীষণ ক্রোধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটা আসুরিক স্বভাবসম্পন্ন ব্যাক্তিদের লক্ষণ, ✸কোনকিছু নিজের না হলেও নিজের বলে দাবি করা; ✸ ঝগড়া-মারামারি হিংসাপরায়ণ হওয়া; ✸ অন্যায়কে সমর্থন না করলে ক্রোধিত হয়ে অত্যাচার বা অপদস্ত করার চেষ্টা করা; ✸এদের মন এতই চঞ্চল যে, নিজেরা শান্তিতে থাকতে পারে না এবং অন্যকেও শান্তিতে থাকতে দেয় না। জলন্ধর যখন যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন বৃন্দা এসে বললেন ━ “হে পতীদেব, আপনি যুদ্ধে যাচ্ছেন, আপনি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি আপনার বিজয়ের জন্য পরম আরাধ্য বিষ্ণুর কাছে তপস্যা (প্রার্থনা) করব।” যতবারই জলন্ধর যুদ্ধে যেতেন ততবারই সে একমনে একধ্যানে ভক্তিসহিত তপস্যা (প্রার্থনা) করতেন। পতী বাড়িতে ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি তপস্যা (প্রার্থনা) থেকে উঠতেন না। জলন্ধর যুদ্ধে গেলে এবারও স্বামীর জয় ও দীর্ঘায়ু কামনায় তপস্যায় মগ্ন রইলেন। 👣 বৃন্দার ব্রত সংকল্প নিয়ে তপস্যার প্রভাবের কারণে দেবতারা জলন্ধরকে পরাস্ত করতে পারছেন না। বরং জলন্ধর দেবতাদের পরাস্ত করতে শুরু করলেন। তখন সমস্ত দেবতারা সমবেত হয়ে প্রথমে ব্রহ্মার কাছে যান, ব্রহ্মা তাদেরকে নিয়ে শিবের কাছে যান। দেবাদিদেব সব কথা শুনে বললেন, “এটি কোন সাধারন সমস্যা নয়। এই ঘটনার সাথে প্রভু শ্রীহরির নাম ও ভক্তি জড়িয়ে রয়েছে, সেহেতু এই সমস্যা থেকে উদ্ধার প্রভু স্বয়ং করতে পারবেন।” 👣 এরপর দেবাদিদেব শিবও তাদেরকে নিয়ে শ্রীহরির কাছে যান। সমস্ত দেবতা বিষণ্ণতার সঙ্গে ভগবান নারায়ণের শরণাপন্ন হলেন এবং জলন্ধরের সন্ত্রাসের অবসানের জন্য প্রার্থনা করতে লাগলেন। প্রার্থনা শুনে ভগবান নারায়ণ বললেন ━ “বৃন্দা আমার পরম ভক্ত, আমি তাঁর সাথে প্রতারণা করতে পারি না। তাছাড়া আমি আমার পত্নী লক্ষ্মীর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেহেতু তার মতো সমুদ্র থেকে জলন্ধর জন্মগ্রহণ করেছে তাই তিনি জলন্ধরকে তার ভাই বলে মনে করেন, সেহেতু আমি তাকে হত্যা করতে পারব না।” এর ফলে দেবগণ অসুরদের কাছে পরাজিত হন এবং জলন্ধর স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতালের রাজা হন। 👣 এরপর দেবতারা সমবেতভাবে দেবর্ষি নারদের সাথে পরামর্শ করলেন। সেখানে বিকল্প পরিকল্পনা (alternative planning) তৈরি করা হয়। দেবর্ষি নারদ কোন কর্ম করেন যেখানে সর্বদা প্রভু শ্রীনারায়নের গুণমহিমা বর্ধিত হয়। তদানুসারে, দেবর্ষি নারদ জলন্ধরের কাছে যান এবং কথোপকথনের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে বিশদভাবে বর্ণনা করেন যে কীভাবে শিব কৈলাসের মতো সুন্দর অঞ্চলে সুন্দরী স্ত্রী পার্বতীর সাথে বাস করছেন। জলন্ধর অপরাজেয় বলে অহংকারী ছিলেন এবং তিনি যা চান তা অর্জন করতে বাধ্য ছিলেন। আবার অত্যাধিক আসুরিক গুণের প্রভাবে তার কাম, বাসনা, লালসা এবং অহংকার সবই ছিল অধিক। এইভাবে তাকে শিবের আবাস কৈলাস ও স্ত্রী পার্বতী উভয়কেই অর্জন করার জন্য প্ররোচিত করেছিল। 👣 এরপর জলন্ধর শিবের কাছে কৈলাস ও পার্বতীকে হস্তান্তর করার দাবি করে যার ফলে উভয়ের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হল। জলন্ধর রূপ পরিবর্তন করার ক্ষমতা আয়ত্ত করেছিলেন। যুদ্ধ চলাকালীন তিনি শিবের ছদ্মবেশ ধারণ করে পার্বতীকে অপহরণ করার চেষ্টা করে। তৎক্ষণাৎপার্বতী তাকে চিনতে পেরে অদৃশ্য হয়ে কৈলাস ত্যাগ করে উপস্থিত হন বৈকুণ্ঠলোকে। পার্বতী তখন নারায়ণের কাছে অভিযোগ করেন “হে প্রভু! এ কেমন বিচার! বৃন্দা সামান্য নারী হওয়া স্বত্বেও আপনার ভক্ত হওয়ার কারণে আপনি তার সতীত্ব ও তার পতিকে রক্ষা করছেন, অন্যদিকে আপনার একনিষ্ঠ ভক্ত হওয়া স্বত্বেও আমার স্বামী অন্যায়ের সাথে লড়াই করছেন আর আমি আমার সতীত্ব রক্ষার্থে পলায়ন করছি। আজ জলন্ধর যেভাবে এক সতী নারীকে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে, তার উচিত শিক্ষা পাওয়া উচিত। এতেই জগতের কল্যাণ। তার পরাক্রমশীলতা কেবলমাত্র রক্ষা পাচ্ছে বৃন্দার সতীত্বতার কারণে। বৃন্দার সতীত্বতার সামান্য আঁচড়ে তার বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব নেই। এতে জলন্ধরের পরাক্রমশীলতার মিথ্যা অহংকার ভঙ্গ হবে এবং জগতে আসুরিক গুণের প্রভাব কমবে। তাছাড়া দেবী পার্বতী ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করেন যে, বৃন্দা হরিভক্তির শক্তির দ্বারা সতীত্বকে ঢাল করে স্বামীকে অন্যায় অত্যাচার করতে প্ররোচনা করছে এবং তার কারণে তার স্বামী প্রতারণা করার সাহসকে অতিক্রম করে আরেক সতীর অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে, আপনি এর যথার্থ বিহিত করুন। প্রতারণার পরিণতি কত কষ্টদায়ক কতই করুন তা উভয়েরই বোঝা দরকার। এর যথার্থ দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন প্রভু। ” 👣 দেবতারা অবগত ছিলেন যে, যতক্ষণ না জলন্ধরের স্ত্রী বৃন্দার সতীত্ব নষ্ট না হবে ততক্ষণ জলন্ধরকে মৃত্যু স্পর্শ করতে পারবে না। তখন দেবতারা সহমত হলেন জলন্ধরের ক্ষমতা খর্ব করতে হলে বৃন্দার সতীত্ব নষ্ট করতে হবে, নচেৎ সম্ভব হবে না। শ্রীহরি যাকে রক্ষা করেন তাকে মারে কে? আর শ্রীহরি যাকে মারতে চান তাকে রক্ষা করে কে? যেহেতু ব্রহ্মান্ডের সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণ ও রক্ষনামোচন সবই শ্রীহরির তত্ত্বাবধানে হয়, তাই এই অসাধ্য সাধন করতে পারেন একমাত্র শ্রীহরি।◼️ তুলসী-শালিগ্রাম বিবাহ তিথি ◼️
◼️ তুলসী বিবাহ ব্রত কাহিনী◼️
✤✸ বৃন্দা ও জলন্ধরের কাহিনী ✸✤
👣 এরপর ভগবান বিষ্ণু মায়ার দ্বারা বৃন্দাকে এক অশুভ দুঃস্বপ্ন দেখায় যেখানে সে তার স্বামীকে মহিষের উপর বসে থাকতে দেখে। হতাশ হয়ে, বৃন্দা বাগানে ভ্রমণ করতে থাকে মানসিক শান্তির খোঁজে। অন্যদিকে ভগবান বিষ্ণু এক ঋষির রূপ ধারণ করে জলন্ধরের প্রাসাদে পৌঁছে মায়ার দ্বারা দুটি মায়াবী রাক্ষসকে সৃষ্টি করে বৃন্দার কাছে পাঠিয়ে দেন। তাদের দেখে বৃন্দা ভীষণ ভয় পেয়ে যান। তার সামনেই ওই দুই রাক্ষসকে ভস্ম করে দেন শ্রীহরি। ঋষির অসীম ক্ষমতায় বৃন্দা মুগ্ধ হন এবং ভাবলেন তিনি একজন যোগ্য ব্যাক্তি পেয়েছেন যিনি স্বামী জলন্ধর সম্পর্কে গণনা করে সঠিক সংবাদ বলতে পারবেন। এরপর গণনা করে ঋষি দুঃখের সাথে প্রকাশ করলেন যে তার স্বামী যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। সে সময় জলন্ধর কৈলাশ পর্বতে শিবের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে রত ছিলেন। বৃন্দা তার নিহত স্বামীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ঋষিকে অনুরোধ করেন। ঋষি রূপী নারায়ণ নিজের মায়াজাল বিস্তার করে দুটি বাঁদরকে প্রকট করেন। একটি বাঁদরের হাতে জলন্ধরের মাথা ও অন্য বাঁদরের হাতে তার ধড় ছিল। এই দৃশ্য দেখে বৃন্দা তার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষার জন্য আকুতি করতে করতে জ্ঞান হারান।
👣 তারপর ভগবান নারায়ণ নিজের মায়াশক্তির দ্বারা জলন্ধরের মাথা ও ধড় জুড়ে দেন এবং তিনি সেই নতুন শরীরে প্রবেশ করে প্রাণ সঞ্চার করেন। শ্রীহরির এই ছলনা বৃন্দা বুঝতে পারেননি কারণ ইতিপূর্বে যা যা ঘটেছে ভগবান তা মায়াশক্তির দ্বারা ভুলিয়ে দিয়েছেন। এরপর বৃন্দার জ্ঞান ফিরলে ভগবানকে স্বামীরূপে দেখতে পায় এবং স্বামী যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছেন ভেবে তিনি ভগবান নারায়ণের পা স্পর্শ করলেন। পতি ছাড়া অন্য পুরুষকে দর্শন কিংবা স্পর্শ করলে সতীত্ব নষ্ট হয়। সুতরাং এর ফলে বৃন্দার সতীত্ব (পতিব্রত ধর্ম) ভঙ্গ হয়। এতে জলন্ধরের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তিনি শিবের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন।
👣 দেবাদিদেব শিব ভীষণ ক্রোধে জলন্ধরের কাটা মাথা তার প্রাসাদে নিক্ষেপ করলেন। স্বামীর কাটা মাথার দিকে তাকিয়ে তিনি হতবাক হয়ে অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, “এ কি দেখছি! এটা যদি আমার পতি পরমেশ্বরের কাটা মাথা হয় তবে আমার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে? এ আমি কাকে ছুঁয়েছি?” এরপর ভগবান নারায়ণ (বিষ্ণু) তাঁর আসল রূপে এলেন, চতুর্ভুজ রূপে। বৃন্দা ততক্ষণে বুঝতে পেরেছেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এই প্রতারণার জন্য তিনি অত্যন্ত রেগে যান। তিনি শ্রীবিষ্ণুকে হৃদয়হীন পাথরে (শিলাতে) পরিণত হওয়ার জন্য অভিশাপ দিলেন, কারণ সেই মুহূর্তে তার মনে হয়েছিল সে একজন পতিব্রতা সতীসাধ্বী স্ত্রী হিসাবে স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি, তার সতীত্ব নষ্ট করেছে এবং শক্তি খর্ব করেছেন তারই আরাধ্য ভগবান, ভগবানের নির্দয় হৃদয়হীন আচরণের জন্য সে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব।
👣 পতির দুর্ব্যাবহার ও উচ্ছৃঙ্খলতার চেয়েও তার আরাধ্য ভগবান শ্রীহরির প্রতারণাতে অধিকতর কষ্টে কাতর হয়েছিলেন। ভগবান করুণাময়, শুদ্ধ ভক্তের উদ্ধার কিভাবে হবে তিনি সেই ব্যবস্থা ও পরিকল্পনা আগেভাগেই করে রাখেন। সাধারণের পক্ষে তা আগেভাগে বোঝা সম্ভব নয়, ঠিক যেমন বৃন্দা বুঝতে পারেন নি। তিনি কে? তিনি হলেন লক্ষ্মীর অংশ, বৃন্দা ভুলে গেলেও ভগবান ভুলেন নি। ভগবান এই লীলা রচনা করেছিলেন কয়েকটি কারণে :━
(১) প্রথমত দেবগনেরা মনে করতেন জলন্ধরের আসুরিক কর্ম দিনত্তর বৃদ্ধির প্রধান কারণ হল বৃন্দার হরি ভক্তি। কোন ব্যক্তির হরি ভক্তি কেবল তার আধ্যাত্মিক শক্তির কারণ হতে পারে, সেক্ষেত্রে ভগবান তাকে ও তার পরিবারকে রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। সেই সুযোগ নিয়ে কেউ ভগবানকে বা তাঁর ভক্তদেরকে আঘাত করলে ভগবান তাকে প্রত্যাঘাত করেন, কেউ যদি সেই সীমা উল্লঙ্ঘন করে তাকে ধর্ম রক্ষার্থে ধ্বংস করেন। ভগবতগীতাতে ভগবান সেই কথাই বলেছেন। এই ঘটনার মাধ্যমে ভগবান আমাদের শিক্ষা দিলেন, তিনি এই বিশাল জগতের ধর্ম রক্ষার্থে, শান্তি রক্ষার্থে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারেবারে অবতীর্ণ হয়েছেন, প্রয়োজনে অবতীর্ণ হবেন।
(২) দ্বিতীয়ত এই ঘটনার মাধ্যমে ভগবান আমাদের আরও শিক্ষা দিলেন যে যেমন কর্ম করে তিনি তাকে সেই অনুরূপ ফল প্রদান করেন। যেমন জলন্ধর প্রতারণা করেছিল তাই তাকে প্রতারিত হতে হয়েছে। সে দেবতা আদি ভক্তদের অত্যাচার করেছে, তাই তার বিনাশ করেছেন তাঁর পরম ভক্ত শিবের মাধ্যমে। বৃন্দা সতীত্বকে ঢাল করে স্বামীকে অন্যায় কাজে প্রলুব্ধ করেছেন, স্বামীকে শক্তি জুগিয়েছেন তাই ভগবান প্রথমে তার সতীত্বকে হরণ করেছেন, পরে স্বামীর প্রাণ হরণ করে বৃন্দার জীবন শক্তিহীন, জৌলুসহীন করে দিয়েছেন।
(৩) তৃতীয়ত বৃন্দা যেহেতু অসুররাজ জলন্ধরের পত্নী অর্থাৎ অর্ধাঙ্গিনী ছিলেন সেহেতু সুখ-দুঃখ, পাপ-পুন্যের সমান অধিকারিণী ছিলেন। পতি দ্বারা অর্জিত পাপের কারণে বৃন্দা যে পাপ, কলঙ্ক ও কলুষতা অর্জন করেছিলেন, ভগবান তাকে সমস্ত রকম পাপ, কলঙ্ক ও কলুষতা থেকে মুক্ত করান। তিনি যখনই ভগবানের পাদ স্পর্শ করেছিলেন, ভগবান তৎক্ষণাৎ তার পাপ, কলঙ্ক ও কলুষতা হরণ করে পবিত্র করে দেন। কারণ বৃন্দা ছিলেন শুদ্ধ হরি ভক্ত। এখান থেকে ভগবান আমাদেরকে শিক্ষা দিলেন, ভক্ত যখন ভক্তিতে উন্নতি লাভ করে শুদ্ধ ভক্তে পরিণত হয়, ভগবান তৎক্ষণাৎ তার পাপ, কলঙ্ক ও কলুষতা হরণ করে পবিত্র করে দেন।
👣 ভগবান উদার, কৃপাময়, করুণাময়। বৃন্দা ছিলেন সতী, হরি ভক্ত কিন্তু পাপ হরণ করার পর তিনি হলেন পবিত্র, শুদ্ধ হরি ভক্ত। ভগবান শুদ্ধ ভক্তের প্রার্থনা আকুতি সমান জ্ঞানে গ্রহন করেন (যেমন বস্ত্রহরণ কালে সাহায্য প্রার্থনার জন্য দ্রৌপদীর আকুতি ইত্যাদি) আবার শুদ্ধ ভক্তের অভিশাপ আবদারস্বরূপ জ্ঞানে গ্রহণ করেন (যেমন কৌরবদের মৃত্যুর পর মাতা গান্ধারীর অভিশাপ ইত্যাদি)। ভগবান জানেন মায়া, অভিশাপ, ত্রিগুণ প্রভৃতি তাকে স্পর্শ করতে পারে না, তবু তিনি ভক্তের মনোবাসনা রক্ষার্থে কৃপাপূর্বক তা গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রেও তাই বৃন্দার অভিশাপকে আবদারস্বরূপ জ্ঞানে স্বীকার করে নেন ভক্তবৎসল ভগবান।
👣 এরপর ভগবান নারায়ণ (বিষ্ণু) রূপান্তরিত হলেন শালিগ্রাম শিলায়। সমগ্র ব্রহ্মান্ডের শক্তির উৎস হলেন শ্রীহরি, সমগ্র ব্রহ্মান্ডের নিয়ন্ত্রন তাঁর দ্বারা, সময় যার অধীনস্থ তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে সমগ্র ব্রহ্মান্ড, সমগ্র সৃষ্টি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তখন দেবী লক্ষ্মী এবং সমস্ত দেবতারা বৃন্দাকে সমস্ত কথা খুলে বলেন ━ তিনি প্রকৃতপক্ষে কে? কেন ভগবান তার সাথে এমন লীলা করেছেন সব কিছু। তার জন্যই সমগ্র ব্রহ্মান্ড প্রলয়ের মুখে এবং সকলে প্রার্থনা করলেন এমুহূর্তে তিনিই পারেন ব্রহ্মান্ডকে রক্ষা করতে তার অভিশাপ ফিরিয়ে নিয়ে। বৃন্দা নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হলেন এবং সৃষ্টির কল্যাণে তিনি তার অভিশাপ প্রত্যাহার করে নিলেন। ভগবান নারায়ণ (বিষ্ণু) স্বমহিমায় পুনরায় প্রকট হলে বৃন্দা অনুশোচনায়, আক্ষেপে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “হে প্রভু! হে জগন্নাথ! আমি সব কিছু জানার পর আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি অনুতপ্ত। আমার শক্তি ছিল সতীত্ব, সতীত্বই ছিল আমার শক্তি, আমার অহংকার। সেই সতীত্ব রক্ষার জন্য সর্বদা শক্তি প্রদান করেছেন আপনি, সামান্য হরিভক্তির কারণে। আমার সতীত্ব আপনার শ্রীপাদপদ্মে অর্পণ করে হতে চাই মুক্ত। আমি যেন সর্বদা ভক্তিভরে আপনার সেবা করতে পারি জন্ম জন্মাতরে। হে প্রভু! আপনি আমার মিনতি গ্রহণ করুন।”
👣 শ্রীহরি বৃন্দাকে বললেন, “হে বৃন্দা! তোমার সতীত্বের কারণে, তোমার উচ্চ সাধনা ও তোমার উত্তম ভক্তির কারণে তুমি আমার কাছে লক্ষ্মীর ন্যায় প্রিয় হয়েছ। তুমি পরবর্তী জীবনে ‘তুলসী’ রূপে আবির্ভূত হবে এবং লক্ষ্মীর সমতুল্য আমার কাছে প্রিয় হবে। তুমি যেহেতু তোমার সর্বস্ব আমার সমীপে অর্পণ করে আমার চরণে স্থান নিয়েছ, তুমি ভক্তির শ্রেষ্ঠ মার্গ স্থাপন করেছ সেই কারণ হেতু তোমাকে স্থান দিলাম আমার মস্তকে। তোমার তুষ্টি হবে আমার সন্তুষ্টি। তুমি হবে পবিত্রতার দেবী, যে স্থানে তুমি অবস্থান করবে পবিত্রতা সেখানে বিরাজ করবে, কোন অশুভ শক্তি প্রবেশ করতে পারবে না। তোমার শুষ্ক দেহাঙ্গ থেকে প্রস্তুত মালা (তুলসী মালা) পরিধানে সেই ব্যক্তিকে যমরাজও স্পর্শ করতে পারবে না। আমার পূজা, আমার সাধনা তোমাকে (তুলসী) ছাড়া হবে অসম্পূর্ণ। আমাকে নিবেদিত নৈবেদ্যতে তোমার উপস্থিতি (তুলসী) থাকলে তবেই তা আমি গ্রহণ করব।” এই কারণেই তুলসীকে অবশ্যই ভগবান বিষ্ণুর নৈবেদ্যতে রাখা হয়। ভগবান বিষ্ণু তুলসী ছাড়া ভোগ গ্রহণ করেন না। ভগবানের পূজাতে তুলসী পাতা অপরিহার্য। ভগবানের সাধনার সময় তুলসীমালা দিয়ে জপ করতে হয়, তুলসীদেবী হলেন ভক্তি শিরোমণি, ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম হলেন তিনি। তুলসী দেবীর কৃপা লাভ করলে সেই অধমকে ভগবান নিঃসন্দেহে কৃপা করেন, অন্যথা তার উদ্ধার নেই।
👣 এরপর বৃন্দা স্বামী জলন্ধরের কাটা মাথা কোলে নিয়ে আগুনে আত্মহত্যা (সতীদাহ) করেন। বৃন্দার দেহটি গণ্ডকী নদীতে রূপান্তরিত হয় (শালিগ্রাম শিলা গণ্ডকী নদী থেকে পাওয়া যায়) এবং তার উপরের চুলের অংশটি তুলসী গাছে রূপান্তরিত হয়।
👣 “যে আমার শালিগ্রাম রূপের সাথে তুলসীকে বিয়ে সম্পন্ন করাবে সে ইহলোক ও পরলোকে অপার খ্যাতি প্রাপ্ত করবে।” ━ সেই থেকে প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষ দিনটি শালিগ্রাম-তুলসী বিবাহ হিসেবে পালিত হয়।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ তুলসী ও শঙ্খচূড়ের কাহিনী ✸✤
এর উৎপত্তি বিবরণ ব্রহ্মাবৈবর্ত্তপুরাণে বর্ণিত আছে —-
তুলসী নামে এক গোপিকা গোলোকধামে কৃষ্ণপ্রিয়া শ্রীমতী রাধারানীর সহচরী ছিলেন। একদা রাধারানী দেখলেন তুলসী নির্দিষ্ট প্রদত্ত সেবা ছেড়ে তাঁর অনুমতি ব্যাতিত শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত রয়েছেন, নিয়ম লঙ্ঘন করেও উদাস থাকতে দেখে তিনি তুলসীকে শাপ দেন যে, তুমি মানবী যোনি প্রাপ্ত হও। তুলসী এই শাপ শুনে দুঃখী হৃদয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বললেন, “তুমি মনুষ্যযোনি গ্রহণ করে তপস্যার দ্বারা আমার অংশ লাভ করবে। আমার সেবা করার ইচ্ছা দেবী তোমার পূরণ হবে“। এখান থেকে শিক্ষণীয় হল ━ ভগবান তাঁর সেবকের অর্থাৎ ভক্তের ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেন না। আবার শ্রীমতী রাধারানী গোপিকার মনের বাসনা বুঝতে পেরে তাকে ভুলের শাস্তি প্রদান করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে পাঠিয়েছিলেন যাতে গোপিকা তার মনের বাসনা ভগবানকে বলতে পারেন, আর বিধানের ভার ভগবানের উপর ছেড়ে ছেড়ে দিয়েছেন কারণ তিনি জানেন তাঁর প্রাণনাথ এর যথার্থ বিহিত করবেন।
এই শাপের কারণে তুলসীদেবী ধৰ্ম্মধ্বজ রাজার ঔরসে ও তার পত্নী মাধবীর গর্ভে কার্ত্তিক পূর্ণিমার দিন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে দেখে সকলে তাঁর রূপের তুলনা দিতে পারছিলেন না বলেই তাঁর নাম রাখা হয় ‘তুলসী‘। পরে তুলসী বনে গিয়ে কঠোর তপস্যা করতে আরম্ভ করলেন। তাঁর ঘোরতর তপস্যায় সকলেই উদ্বিগ্ন হলেন। যত কঠোর তপস্যা হতে পারে, তুলসী দেবী কিছুই অবশিষ্ট রাখলেন না। এই তপস্যায় ব্রহ্মা স্থির থাকতে না পেরে তুলসীর কাছে উপস্থিত হয়ে প্রসন্নতার সঙ্গে বললেন, “তুলসী তোমার অভীষ্ট বর লাভ কর।”
দেবী তুলসী ব্রহ্মাকে বিনতির স্বরে বললেন, “হে বিধাতা! যদি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া থাকেন, তা হলে আমাকে এই বর প্রদান করুন ━ আপনি সৰ্ব্বজ্ঞ, আপনার কাছে লজ্জার আবশ্যকতা নেই। আমার নাম তুলসী গোপী, আমি পূৰ্ব্বে গোলোকে ছিলাম। একদিন আমি গোবিন্দের সেবায় এতটাই মগ্ন ছিলাম যে আমি সব কিছু ভুলে গোবিন্দকে প্রাণভরে হৃদয়ে উপভোগ করছিলাম, তাতেও আমার হৃদয় পরিতৃপ্ত হয় নি, এমন সময় রাসেশ্বরী রাধা সেখানে এসে আমাকে গোবিন্দের সেবা থেকে বিচ্যুত হতে দেখে আমাকে ভর্ৎসনা করে শাপ দেন মানবী শরীর প্রাপ্ত হবার। এরপর শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হই এবং তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেন, তুমি তপস্যা করলে আমার চতুর্ভুজ অংশ প্রাপ্ত হবে। এখন আমি নারায়ণকে পতিরূপে পেতে ইচ্ছা করি।“
ব্রহ্মা বললেন, “শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গসমুদ্ভব সুদাম নামক গোপ রাধিকার শাপে দানব গৃহে জন্মগ্রহণ করেছে। তার নাম শঙ্খচূড়, গোলোকে তুমি যাকে দেখে আবেগে উৎফুল্ল হয়েছিলে। রাধিকার ভয়ে কোনরূপ ━ অনিষ্ট আচরণ করতে পারনি। এখন তাকেই তুমি পতিরূপে গ্রহণ কর। পরে কৃষ্ণকে প্রাপ্ত হবে। নারায়ণের শাপে তুমি বৃক্ষ হইবে। তুমি অতি পূতা ও বিশ্বপাবনী। সকল পুষ্পের প্রধান ও নারায়ণের প্রাণাধিকা হবে। তুমি না হলে সকল পূজাই বিফল হবে।“
একবার গোলোক সফরে শ্রীকৃষ্ণ সুদামকে তাঁর প্রাসাদের প্রহরী হিসাবে নিযুক্ত করেন এবং কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে বারণ করে দিয়েছিলেন। আদেশের পরে, তিনি কাউকে শ্রীকৃষ্ণের প্রাসাদে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছিলেন কারণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই সময় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সে রাধারানীকেও ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেলেন না। কারণ সেটা ছিল সুদামের দাম্ভিকতা। গোলকের মহারানীকে হেয় করা, তার কথা অমান্য করা, প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করতে না দিয়ে অপমান করাই ছিল সুদামের অভিলাষ। তাছাড়াও সুদাম ক্রোধ প্রকাশ করে শ্রীমতি রাধারানীকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, তিনি শ্রীকৃষ্ণের কথা সব ভুলে যাবেন এবং গোলোককে পরিত্যাগ করবেন এবং ভূলোকে একশ বছর বেঁচে থাকবেন। সুদামের আস্পর্ধা ও আসুরিক দাম্ভিকতা দেখে রাধারানীও তাকে অভিশাপ দেয় ভূলোকে সে শঙ্খচুর হিসেবে অসুর যোনিতে জন্মগ্রহণ করবে।
দেবী তুলসী ব্রহ্মার বাক্য শুনে বললেন, “হে বিধাতা! আপনি যা বললেন, তাই যেন সত্য হয়। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকে সেবা করার অভিলাষ অপূর্ণই রয়ে গেছে হে প্রজাপতি, তাই আমি শ্যামসুন্দর দ্বিভুজ শ্রীকৃষ্ণকে অভিলাষ করি, আপনার প্রসাদে গোবিন্দ কি সুদুর্লভ! কিন্তু তার আগে আমার রাধাভীতি মোচন করুন।“
ব্রহ্মা ষোড়শাক্ষর রাধিকামন্ত্র, স্তব, কবচ প্রভৃতি প্রদান করলেন এবং “তুমি রাধার মতো সুভগা হবে” এই বলে স্বস্থানে প্রস্থান করলেন। তুলসী দেবীও তপস্যা শেষ করে শান্ত ও নিশ্চিন্ত হলেন।
এরপর শঙ্খচূড় নামক দানবরাজের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। আবার শঙ্খচুড়ের বর ছিল যে, তার স্ত্রীর সতীত্ব নষ্ট হলে তার মৃত্যু হবে। শঙ্খচূড় স্বর্গরাজ্য জয় করে দেবতাদিগের অধিকার কেড়ে নেন। দেবগণ কিছুতেই তাকে পরাজিত করতে পারে না। তখন দেবগণ একত্রিত হয়ে ব্রহ্মার কাছে উপস্থিত হলেন। এই সমস্যা দেবাদিদেব শিব সমাধান করতে পারবেন, তাই ব্ৰহ্মা তাঁদেরকে নিয়ে শিবের কাছে উপস্থিত হলেন। শিব সব শুনে বললেন, তুলসীকে সতীত্বের শক্তি প্রদান করছে তুলসীর শ্রীহরি ভক্তি। সুতরাং স্বয়ং প্রভুই এর বিধান দিতে পারবেন।
এরপর শিব সকলকে নিয়ে নারায়ণের শরণাপন্ন হলেন। নারায়ণ বললেন, “ধর্ম রক্ষার্থে ও জগতের কল্যাণের স্বার্থে এর বিহিত আমি অবশ্যই করব। আপনারা সকলে শঙ্খচূড়ের সহিত যুদ্ধ করুন। আমি শঙ্খচূড়-রূপ ধারণ করে তুলসীর সতিত্বের শক্তি আমার দিকে আকৃষ্ট করব। এতে জাগতিকস্তরে তুলসীর সতীত্ব নষ্ট হলেও কিন্তু আধ্যাত্মিকস্তরে সেই শক্তি স্বয়ং আমি সংরক্ষিত রাখব। তাতে তুলসী আরও পবিত্র হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তুলসীর সতীত্ব খর্ব হলে পরে শঙ্খচূড় তোমাদের বাধ্য হবে।“
এই বলে শ্রীহরি শঙ্খচূড়ের রূপ ধারণ করে তুলসীর সামনে উপস্থিত হলেন। স্বামী যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছে ভেবে তুলসী স্বামী শঙ্খচূড়কে প্রণাম করলেন। স্পর্শ করা মাত্রই শরীরের মধ্যে প্রচণ্ড শক্তিময় তরঙ্গ (energetic vibration) অনুভব করলেন। এতে তুলসী বুঝতে পারলেন তার সামনে দাঁড়িয়ে তার স্বামীর ছদ্মবেশে অন্য কেউ! অন্য পুরুষকে দর্শন ও স্পর্শে তার সতীত্ব নষ্ট হয়েছে ভেবেই ক্রোধান্বিত হয়ে অভিশাপ প্রদান করলেন, “আপনি যেই হোন, আপনার কারণে আমার সতীত্ব নষ্ট হয়েছে, আপনি হৃদয় পাষাণসম তাই আপনি পাষাণ হয়ে থাকুন।“
এইদিকে তুলসীর সতীত্ব খর্ব হওয়ার কারণে শঙ্খচূড়ের শক্তি খর্ব হয় এবং মুহূর্তেই দেবাদিদেব শিব তার শিরচ্ছেদ করেন। এরপর শ্রীহরি চতুর্ভুজ রূপে তুলসীর সামনে উপস্থিত হলেন ও স্বামী শঙ্খচূড়ের মৃত্যু সংবাদ দিলেন। এতে তার দুঃখ পাবার কোন কারণ নেই, কারণ যা ঘটছে তা আগে থেকেই পরিকল্পিত। ভগবান তাকে তার পূর্বজন্মের সাধনা ও উদ্দেশ্য স্মরণ করিয়ে দিলেন। তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দিলেন শঙ্খচূড় আর কেউ নয় তার দেহাঙ্গ থেকে উৎপন্ন এবং রাধারানীর অভিশাপের কারণে অসুরযোনিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল।
সমস্ত শুনে তুলসী তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে শ্রীহরির চরণে পতিত হয়ে ক্রন্দন করতে থাকে এবং নিজের অভিশাপ ফিরিয়ে নেন। নারায়ণ মহান ভক্তের অভিশাপকে আবদার স্বরূপ জ্ঞান করে তা বলবৎ রাখলেন এবং তুলসীকে বললেন, “তুমি এই শরীর পরিত্যাগ করে লক্ষ্মীর সদৃশী আমার প্রিয়া হও। তোমার এই শরীর গণ্ডকী নদী এবং কেশসমূহ তুলসী বৃক্ষরূপে পরিণত হোক। তৎক্ষণাৎ তাই হল। সেই থেকে নারায়ণ শিলারূপে গণ্ডকী নদীর মধ্যে অবস্থান করছেন এবং সর্বদা তুলসী সঙ্গে থাকেন। তুলসী ছাড়া তিনি পূজা, নৈবেদ্য গ্রহণ করেন না। ━(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ১০, প্রকৃতি খণ্ড ১৩-২১ অধ্যায়)
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✤✸ ধর্ম্মদেব ও বৃন্দার কাহিনী ✸✤
🕉️ এর উৎপত্তি বিবরণ বৃহদ্ধর্ম্ম পুরাণে বর্ণিত আছে —-
🕉️ পূৰ্ব্বকালে কৈলাশ পুরে ধর্ম্মদেব নামে বিষ্ণুভক্তি পরায়ণ এক সাধুশীল ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তাঁহার পত্নীর নাম বৃন্দা। এই সাধ্বী ব্রাহ্মণী নিরন্তর ধর্ম্মচারিণী এবং পতির অনুগতা ছিলেন। একদিন ধৰ্ম্মদেব ব্রাহ্মণসভায় উপস্থিত হয়ে কৃষ্ণগুণগান করছিলেন, এতটাই মগ্ন ছিলেন যে এদিকে ভোজনের সময় পার হয়ে গেল তার খেয়াল ছিল না। বৃন্দা গৃহে উপস্থিত অতিথির পূজা করে নিজে অভুক্ত অবস্থায় মনোহর কৈলাশ শিখরে প্রতিবাসিদের বাড়ীতে পরিভ্রমণ করতে লাগলেন।
🕉️ ইতিমধ্যে ধর্ম্মদেব গৃহে এসে পত্নীকে ক্ষুধার্ত ও চঞ্চলা অবস্থায় দেখামাত্রই ক্রোধান্বিত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৃন্দাকে ভীষণ অভিশাপ দিলেন। তিনি বললেন, “তুমি ক্ষুধার্তা হয়েও নিজ গৃহ পরিত্যাগ করে ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়াচ্ছ, এতো সংসারের জন্য অমঙ্গল! সেই কারণে তোমাকে রাক্ষসী দেহ ধারণ করতে হবে।” বৃন্দা তৎক্ষণাৎ ক্ষুধার্তা রাক্ষসীদেহ ধারণ করে পৃথিবীতে এসে সমস্ত জন্তু ভক্ষণ করতে লাগলেন। কিন্তু রাক্ষসী পূর্ব্ব স্মৃতিক্রমে গো, ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণব প্রভৃতিকে হিংসা করত না। বহুসংখ্যক জীবের হত্যা হওয়াতে পৃথিবীতে হাড়ের পাহাড় তৈরি হল, হাড়ের পাহাড়গুলো হাড়ের মালা রূপে পৃথিবীকে বেষ্টন করে রইল। বৃন্দা একসময় কোন জীব না পেয়ে তিনদিন উপবাস করে রইলেন। পরে ভক্ষণের জন্য জীবের খোঁজে কৈলাশে গমন করলেন। সেখানেও শৈব ছাড়া আর কোন জীবসত্ত্বা পেল না। তখন বৃন্দা ৭ দিন অনাহারে থেকে শরীর ত্যাগ করলেন।
🕉️ একদিন মহাদেব পার্ব্বতীর সাথে ভ্রমণ করতে করতে এইস্থানে উপস্থিত হয়ে বললেন, “এই রাক্ষসী একসময় ধৰ্ম্মদেবের পত্নী রূপবতী বৃন্দা ছিলেন। অভিশাপবশে রাক্ষসীরূপ ধারণ করেও গো, ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণব হিংসা করেনি। এর দেহ নিষ্ফল হওয়া উচিত নয়। আমার বচনানুসারে এই বৃন্দা ধরাতলে তরুরূপে জন্মগ্রহণ করে জগত প্রভু শ্রীহরির প্রীতিবিধান করবে। এই বৃন্দা তরুরূপে প্রাদুর্ভূত হলেও তার পত্রে বিষ্ণুর অর্চ্চনা হবে। এই পত্র ছাড়া মণিমুক্তা প্রভৃতি কিছুতেই নারায়ণের (বিষ্ণুর) পূজা সম্পন্ন হবে না। এই বৃন্দা তরুরূপিনী ‘তুলসী‘ নামে খ্যাত হবে। এর পত্র পবিত্র থেকে পবিত্রতম জানবে। এই তুলসীর প্রতিদলে বিষ্ণুর দ্বাদশাক্ষর মন্ত্র বিরাজিত থাকবে। আমি ও পাৰ্ব্বতী তাঁর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হব এবং নারায়ণ তাঁর উপাস্য হবেন।” তুলসী কার্ত্তিক মাসে অমাবস্যা তিথিতে ধরাতলে তরুরূপে জন্ম গ্রহণ করেন। (বৃহদ্ধর্ম্ম পুরাণ ৮ অধ্যায়)
🕉️ কার্ত্তিক মাসে তুলসী দল দিয়ে যারা নারায়ণের অর্চ্চনা করেন এবং দর্শন, স্পর্শ, ধ্যান, প্রণাম, অর্চ্চন, রোপণ ও সেবন করেন তারা কোটি সহস্রযুগ হরিগৃহে বাস করেন। যাঁরা তুলসীবৃক্ষ রোপণ করেন, ঐ গাছের মূল যতদূর বিস্তৃত হতে থাকে, তত যুগ সহস্র পরিমাণ তাদের পুণ্য বিস্তৃত হতে থাকে। তুলসীদল দিয়ে যে ভগবান নারায়ণের পূজা করেন, তাঁর জন্মাৰ্জ্জিত পাপরাশি বিনষ্ট হয়।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️ শালিগ্রাম-তুলসী বিবাহের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ◼️
◉ পবিত্র তুলসী (তুলসী) আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতার (সাত্ত্বিক) প্রতীক। ভগবান বিষ্ণুর সাথে তুলসীর বিবাহ (বিবাহ) মানে ঈশ্বর একটি গুণ হিসাবে পবিত্রতা পছন্দ করেন। বিবাহ শব্দের অর্থ হল মূর্ত আত্মা (জীব) এবং ঈশ্বরের মিলন ও একত্ব।
◉ শ্রীমতি বৃন্দাদেবী হলেন শ্রীধাম বৃন্দাবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তাঁর কৃপা হলে বৃন্দাবনে শ্রীরাধা-কৃষ্ণের নিত্য সেবার অধিকার লাভ হয়।
✺ অভিরাম লীলামৃতে বর্ণিত আছে ──✺
❝ বৃন্দা কৃপা হৈলে হয় বৃন্দাবন প্রাপ্তি।
প্রেম সেবা প্রাপ্তি হয় বৃন্দাবনে স্থিতি॥ ❞
শ্রীকৃষ্ণপ্রেয়সী শ্রীমতী তুলসী মহারাণী এই জগতে লীলাবিলাসকালে বৃক্ষরূপে অবর্তীণ হয়েছেন, ঠিক তেমনি শ্রীনারায়ণ শালিগ্রাম শিলারূপে এবং গঙ্গাদেবী নদীরূপে অবর্তীণ হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা এই জগতে এই ভাবে বিরাজিত থাকলেও নিত্য বৈকুন্ঠে নিত্য স্বরূপে নিত্য বিরাজমান।
চিন্ময় বৃক্ষরূপে তুলসী দেবীকে পূজা, শ্রদ্ধা ও প্রণাম করা উচিত। যুগপৎ তিনি চিৎবৈকুন্ঠ ধামে নিত্য বিরাজিতা আছেন এবং ভগবানের নানাবিধ সেবাযত্ন করে চলেছেন।
◉ শাস্ত্র মতে, এই তিথি হল মহাসৌভাগ্যপ্রদায়ী, এই তিথিতে তুলসী ও ভগবান বিষ্ণুর একত্রে সেবায় শ্রীহরি চরণে নিষ্কপট ভক্তি লাভ হয়, বৈকুণ্ঠ ধামে পরমগতি লাভ হয়।
◉ মৃত্যু কালে যে ব্যক্তি শালিগ্রাম শিলার জল পান করেন, তিনি পাপ থেকে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হন।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️ তুলসী পূজা কীর্তন ◼️
প্রাতঃকালে মঙ্গলারতির পরে এবং বিশেষ করে সন্ধ্যাকালেও সন্ধ্যারতির আগে সমবেত সকল ভক্তমণ্ডলী অবশ্যই প্রথমে ৩বার তুলসী প্রণাম মন্ত্র উচ্চারণ করে তুলসীদেবীকে প্রণতি নিবেদন করবেন। — তারপরে তুলসী আরতি কীর্তন করবেন। আরতি নিবেদনকালে ভক্ত ধূপ, ঘৃতপ্রদীপ ও পুষ্পার্ঘ্য সহকারে তুলসীদেবীর উদ্দেশ্যে আরতি নিবেদন করেন। এই উপকরণাদি নিবেদনের সময়ে, তুলসী আরতি করতে হলে ভক্তকে একটি আসনের উপর (উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করে) দাঁড়াতে হবে এবং তিনি বাঁহাতে ঘণ্টা বাজাতে থাকবেন।
তুলসীদেবীকে নিবেদনের পরে প্রতিটি উপকরণকে সমবেত ভক্তবৃন্দের উদ্দেশ্যে চক্রাকারে ৩বার ঘুরিয়ে বিতরণ করবেন। তুলসীপূজা কীর্তন গান শেষ হয়ে গেলে, সমবেত বৈষ্ণবমণ্ডলী অন্তত ৪বার তুলসীদেবীকে প্রদক্ষিণ করবেন এবং তুলসী জলদান অর্থাৎ কয়েক ফোঁটা জল তুলসীর মূলদেশে (কেবলমাত্র প্রাতঃকালীন পূজার সময়ে সন্ধ্যায় নয়) নিবেদন করবেন।
আরতি করার নিয়ম –
🕉️ উপকরণ: আচমন পাত্র, ধুপকাঠি, প্রদীপ, পুষ্প, ঘন্টা
🕉️ নিবেদন নিয়ম: ধুপকাঠি, প্রদীপ, পুষ্প সবগুলি উপকরণই সর্বাঙ্গে ৭বার করে ঘুরিয়ে (ঘরির কাটার দিকে বাম দিক থেকে ডান দিকে) দেখাবেন। প্রত্যেকটা উপকরণ দেখানোর আগে-পরে আচমন করে নেবেন।
🕉️ আরতির সময়: ভক্তরা দুই বেলা তুলসী আরতি করে থাকেন।
◉ সকালে(ভোরে)- মঙ্গল আরতির পর।
◉ রাতে- গৌর আরতি বা সন্ধ্যা আরতির আগে।
✤✸ তুলসী প্রনাম মন্ত্র ✸✤
❝ (ওঁ) বৃন্দায়ৈ তুলসী দেব্যৈ প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ।
কৃষ্ণভক্তিপ্রদে দেবি সত্যবত্যৈ নমো নমঃ॥ ❞
━━┉┈┈(৩ বার)
অনুবাদ: “ভগবান শ্রীকেশবের অতি প্রিয় বৃন্দা, শ্রীমতী তুলসীদেবীর উদ্দেশ্যে আমার পুনঃ পুনঃ প্রণতি নিবেদন করি। হে দেবী সত্যবতী, শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে আপনি আমাদের ভক্তি প্রদান করুন।”
✤✸ তুলসী আরতি কীর্তন ✸✤
নমো নমঃ তুলসী! কৃষ্ণপ্রেয়সী !
রাধাকৃষ্ণ-সেবা পাব এই অভিলাষী ॥
যে তোমার শরণ লয়, তার বাঞ্ছা পূর্ণ হয়,
কৃপা করি কর তারে বৃন্দাবন বাসী।
মোর এই অভিলাষ, বিলাস-কুঞ্জে দিও বাস,
নয়নে হেরিব সদা যুগলরূপরাশি ॥
এই নিবেদন ধর, সখীর অনুগত কর,
সেবা-অধিকার দিয়ে কর নিজ দাসী।
দীন কৃষ্ণদাসে কয়, এই যেন মোর হয়,
শ্রীরাধাগোবিন্দ-প্রেমে সদা যেন ভাসি ॥
অনুবাদ: “(১) হে তুলসী, কৃষ্ণপ্রেয়সী, আমি বার বার তোমাকে প্রণাম করি, শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের সেবার আমি অভিলাষী।
(২) যে তোমার শরণ গ্রহণ করে তার মনোবাসনা পূর্ণ হয়। কৃপা করে তুমি তাকে বৃন্দাবনবাসী কর।
(৩) বৃন্দাবনধামে বিলাসকুঞ্জে বাস করার আমার যে অভিলাষ তুমি পূর্ণ কর, যাতে নয়নভরে সব সময় আমি শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের সুন্দর লীলা দর্শন করতে পারি।
(৪) আমার প্রার্থনা এই যে, তুমি আমাকে ব্রজের সখীদের অনুগত কর। সেবার অধিকার দিয়ে আমাকে তোমার দাসী কর।
(৫) শ্রীকৃষ্ণের এক একান্ত পতিত ও দীন সেবক বিনতি নিবেদন করছে যে, “আমি যেন সব সময় শ্রীরাধাগোবিন্দ প্রেমে ভাসতে পারি।”
✤✸ তুলসী প্রদক্ষিণ মন্ত্র ✸✤
❝ যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যাদিকানি চ।
তানি তানি প্রণশ্যন্তি প্রদক্ষিণ পদে পদে॥ ❞
━━┉┈┈(৪ বার)
অনুবাদ: “যখন মানুষ শ্রীমতী তুলসীদেবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে, তখন প্রতি পদক্ষেপে তার কৃত সকল পাপকর্ম, এমন কি ব্রহ্মহত্যার পাপও বিনষ্ট হয়ে যায়।”
✤✸ তুলসী জলদান মন্ত্র ✸✤
❝ (ওঁ) গোবিন্দবল্লভাং দেবীং ভক্তচৈতন্যকারিণীম্।
স্নাপয়ামি জগদ্ধাত্রীং কৃষ্ণভক্তিপ্রদায়িনীম্॥ ❞
অনুবাদ: “শ্রীগোবিন্দের প্রিয়তমা, জগজ্জননী, সকল ভক্তবৃন্দের চেতনা প্রদায়িনী এবং শ্রীকৃষ্ণে ভক্তিপ্রদায়িনী শ্রীমতী তুলসীদেবী, আপনাকে আমি স্নানসেবা নিবেদন করছি।”
✤✸ তুলসী চয়ন মন্ত্র ✸✤
❝ (ওঁ) তুলস্যমৃতজন্মাসি সদা ত্বং কেশবপ্রিয়া।
কেশবার্থে চিনোমি ত্বাং বরদা ভব শোভনে॥ ❞
অনুবাদ: “হে তুলসী, অমৃত থেকে আপনার জন্ম। আপনি নিয়ত ভগবান শ্রীকেশবের অতীব প্রিয়। এখন শ্রীকেশবের পূজার উদ্দেশ্যে আপনার পত্র ও মঞ্জরী আমি সংগ্রহ করছি কৃপা করে আমাকে বরদান করুন।”
✸ তুলসীচয়ণ বিধি✸
================
প্রাতঃকালে স্নানের পর শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে পুষ্প চয়ন ও তুলসী চয়নের নিয়ম ৷ মধ্যাহ্ন স্নানের পর পুষ্প ও তুলসী চয়ন নিষিদ্ধ ৷ ভগবানকে প্রণাম করে এবং তার আদেশ নিয়ে তুলসী ও পুষ্প চয়ন করতে হয় ৷ অছিদ্র হরিৎপত্র তুলসীই শ্রীকৃষ্ণার্চ্চনের যোগ্য অর্থাৎ ছেঁড়া তুলসী পাতা অর্পণ করবেন না। তিনবার করতালি দিয়ে তুলসীর শাখা-প্রশাখা কম্পন না হয় এমনভাবে বামহাত দিয়ে এক একটি শাখা ধরে ডানহাত দিয়ে মঞ্জুরীবৃন্ত সহ তুলসী পত্র চয়ন করতে হয় ৷ তুলসীর পত্র চয়ন কালে যদি শাখা-প্রশাখা ভেঙ্গে যায়, তবে শ্রীহরির হৃদয়ে ব্যথা প্রদান করা হয় ৷
✸ তুলসীচয়ণ নিষেধাঞ্জা ✸
====================
পূর্ণিমা, অমবাস্যা, দ্বাদশী ও সংক্রান্তিতে তুলসীপত্র চয়ন করতে নেই। তেল মেখে, মধ্যাহ্নে স্নান না করে, সকালে সূর্যোদয়ের আগে কিংবা সন্ধায় সূর্যাস্তের পরে, ও রাত্রিবাস (রাতে যে পোশাক পরিধান করে ঘুমানো হয়) পরিধান করে যে তুলসী চয়ন করে, তাঁহার হরির মস্তক ছেদন করে।
✤✸ তুলসী ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্র ✸✤
❝ চয়নোদ্ভবদুঃখং চ যদ্ হৃদি তব বর্ততে।
তৎ ক্ষমস্ব জগন্মাতঃ বৃন্দাদেবি নমোঽস্তুতে॥ ❞
অনুবাদ: “হে তুলসী দেবী, আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাই। হে জগন্মাতা, আপনার পত্র ও মঞ্জরী চয়নকালে যদি আপনার হৃদয়ে দুঃখের উদ্ভব করে থাকি, তবে কৃপা করে আমাকে ক্ষমা করবেন।”
✤✸ তুলসী স্তব ✸✤
❝ বৃন্দাং বৃন্দাবনীং বিশ্বপূজিতাং বিশ্বপাবনীং।
পুষ্পসারাং নন্দিনীর্ষভ তুলসীং কৃষ্ণজীবনীং ॥
এতন্নামাষ্টকঞ্চৈতৎ স্তোত্রং জ্ঞতার্থ সংযুতং ।
যঃ পঠেত্তাঞ্চ সম্পূজ্য সোহশ্বমেধ ফলং লভেৎ॥ ❞
━━┉┈┈(ব্রহ্মাবৈবর্ত্ত পুরাণ)
অনুবাদ: “যারা এই স্তব প্রতিদিন পাঠ করেন, তারা অশ্বমেধ ফল লাভ করেন।”
❝ হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে॥ ❞
🌸 শ্রী শ্রী রাধামাধব কি জয় 🌸
🌸 জয় শ্রীশ্রী-বৃন্দাদেবী-তুলসী-মহারানী কি জয় 🌸
🌸 শ্রীল প্রভুপাদ কি জয় 🌸
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️ তুলসী সম্পর্কে বিধি-নিষেধ ◼️
✸ কি করনীয় ✸
=============
১৷ প্রতিদিন তুলসী বৃক্ষে জল দান করতে হয় এবং গ্রীষ্মকালে ছায়ার মধ্যে রাখতে হয় ৷
সা দেবী কৃষ্ণশক্তিহি শ্রীকৃষ্ণবল্লভা মতা ॥
অতস্তাং বৈষ্ণবীং দেবীং নান্যপদে সমর্পয়েৎ ।
অর্পণে তত্ত্বহানিংঃ স্যাৎ সেবাপরাধ এব চ॥
অতত্ত্বজ্ঞস্ত পাষণ্ডো গুরুব্রুবস্য পাদয়োঃ।
অর্পয়ন্ তুলসীং দেবীমর্জয়েন্নরকং পদম্॥ ❞
ব্রহ্মহা স হি গোঘ্নশ্চ স এব গুরুতল্পগঃ॥ ❞
=============
১। পূর্ণিমা, অমবাস্যা, দ্বাদশী ও সংক্রান্তিতে তুলসীপত্র চয়ন করতে নেই। তেল মেখে, মধ্যাহ্নে স্নান না করে, সকালে সূর্যোদয়ের আগে কিংবা সন্ধায় সূর্যাস্তের পরে, ও রাত্রিবাস (রাতে যে পোশাক পরিধান করে ঘুমানো হয়) পরিধান করে যে তুলসী চয়ন করে, তাঁহার হরির মস্তক ছেদন করে। আগের কিংবা সকালে তোলা তুলসীপত্র শুখিয়ে গেলেও, তা শ্রীবিগ্রহ অর্চ্চনায় ব্যবহার করা চলে।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️তুলসী মাহাত্ম্য ◼️
১। পদ্মপুরাণের সৃষ্টিখন্ডে (৬০/১০৫ শ্লোকে) বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ শ্রীমহাদেব পুত্র কার্তিককে বললেন,
❝ সর্বেভ্যঃ পত্রপুষ্পেভ্যঃ সত্তমা তুলসী শিবা।
সর্বকামপ্রদা শুদ্ধা বৈষ্ণবী বিষ্ণুসুপ্রিয়া॥ ❞
অনুবাদ:“সমস্ত পত্র ও পুষ্পের মধ্যে তুলসী হলেন শ্রেষ্ঠা। তুলসী সর্বকামপ্রদা, মঙ্গলময়ী, শুদ্ধা, মুখ্যা, বৈষ্ণবী, বিষ্ণুর প্রেয়সী এবং সর্বলোকে পরম শুভা।”
সমগ্র পুষ্পের মধ্যে তুলসী শ্রেষ্ঠ এবং শ্রীহরি, দেব-দেবী সকল, ব্রাহ্মণ এবং বৈষ্ণবগণের আনন্দবর্ধনকারিণী। তিনি অতুলনীয়া এবং কৃষ্ণের জীবনস্বরূপিনী।
২। পদ্মপুরাণের সৃষ্টিখন্ডে (৬০/১১৭-১১৮ শ্লোকে) বৈষ্ণব শিরোমণি শ্রীমহাদেব পুত্র কার্তিককে আরও বললেন,
❝ যো মঞ্জরীদলৈরেব তুলস্যা বিষ্ণুমর্চয়েঃ ।
তস্য পুণ্যফলং স্কন্দ কথিতুং নৈব শক্যতে॥
তত্র কেশবসান্নিধ্যং যত্রাস্তি তুলসীবনম্।
তত্র ব্রহ্মা চ কমলা সর্বদেবগণৈঃ সহ॥ ❞
অনুবাদ: “হে কার্তিক! যে মনুষ্য ভক্তিসহকারে প্রতিদিন তুলসীমঞ্জরি দিয়ে শ্রীহরির আরাধনা করেন, এমনকি আমিও তার পুণ্য বর্ণনা করতে অক্ষম। যেখানে শ্রীতুলসীর বন আছে, শ্রীগোবিন্দ সেখানেই বাস করেন। আর গোবিন্দের সেবার উদ্দেশ্যে লক্ষ্মী, ব্রহ্মা প্রভৃতি সমস্ত দেবতা সেখানেই বাস করেন।”
যেখানে একটি মাত্র তুলসীবৃক্ষ আছে, সেইস্থানে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব সকলে অবস্থান করেন। পত্রমধ্যে কেশব, পত্রাগ্রে প্রজাপতি, পত্রবৃত্তে শিব সর্বদাই ভাবামৃত আছেন। এর পুষ্পে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গায়ত্রী, চন্দ্রিকা ও শচী প্রভৃতি দেবীগণ নিত্য বিরাজিত আছেন। ইন্দ্র, অগ্নি, শমন, বরুণ, পবন ও কুবের প্রভৃতি দেবগণ এর শাখাতে বাস করেন। ইন্দ্র আদিত্যাদি গ্রহ, বসু, মনু ও দেবর্ষি, বিদ্যাধর, গন্ধর্ব্ব প্রভৃতি সকল দেবগণ তুলসীপত্র আশ্রয় করে আছেন।
৩। সমগ্র বৈদিক শাস্ত্রের রচয়িতা শ্রীব্যাসদেব তুলসীদেবীর গুণ মহিমা পদ্মপুরাণের সৃষ্টিখণ্ডে (৬০/১২৭-২৮) অতি সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন ━
❝ পূজনে কীর্তনে ধ্যানে রোপণে ধারণে কলৌ ।
তুলসী দহতে পাপং স্বর্গং মোক্ষং দদাতি॥
উপদেশং দিশেদস্যাঃ স্বয়মাচরতে পুনঃ।
স যাতি পরমং স্থানং মাধবস্য নিকেতনম্॥ ❞
অনুবাদ: “শ্রীতুলসীদেবীর পূজা, কীর্তন, ধ্যান, রোপণ ও ধারণে সমস্ত পাপ নাশ হয় এবং পরমগতি লাভ হয়। যে ব্যক্তি অন্যকে তুলসী দ্বারা শ্রীহরির অর্চনার উপদেশ দেন, এবং নিজেও অর্চনা করেন, তিনি শ্রীমাধবের আলয়ে গমন করেন। শুধু শ্রীমতী তুলসীদেবীর নাম উচ্চারণ করলেই শ্রীহরি প্রসন্ন হন। ফলে পাপসমূহ নাশ হয় এবং অক্ষয় পুণ্যার্জিত হয়।”
৪। পদ্মপুরাণের ব্রহ্মখণ্ডে (৬/২২) বলা হয়েছে ━
দেবৈস্তীর্থৈঃ পুষ্করাদ্যৈস্তিষ্ঠান্ত তুলসীদলে॥ ❞
বাসুদেবাদয়ো দেবা বসন্তি তুলসীদলে॥ ❞
তদগৃহং যমদূতাশ্চ দূরতো বৰ্জ্জয়ন্তি হি॥ ❞
তদ্গৃহং তীৰ্থীভূতং হি নো যান্তি যম-কিঙ্করাঃ॥ ❞
কুৰ্ব্বন্তি তেষাং পিতরস্তৃপ্তা বর্ষাযুতং জলৈঃ॥ ❞
শুশ্রূষিতো হরিস্তৈস্তু নাত্র কার্য্যা বিচারণা ॥ ❞
যথাহি বাসুদেবস্য বৈকুণ্ঠে ভোগ-বিগ্রহঃ ॥ ❞
৬। তুলসীদেবীর অনন্তমহিমা ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের প্রকৃতিখণ্ডে (২২/৪২-৪৪) বর্ণিত রয়েছে ━
❝ শিরোধার্যাঞ্চ সর্বেসামীপ্সিতাং বিশ্বপাবনীম্।
জীবন্মুক্তাং মুক্তিদাঞ্চ ভজে তাম্ হরিভক্তিদাম্॥ ❞
অনুবাদ: “যিনি সকলের শিরোধার্যা, উপাস্যা, জীবন্মুক্তা, মুক্তিদায়িনী এবং শ্রীহরিভক্তি প্রদায়িনী, সেই সমগ্র বিশ্বকে পবিত্রকারিণী বিশ্বপাবনী তুলসীদেবীকে সতত প্রণাম করি।”
লক্ষাশ্বমেধজং পুণ্যং লভতে নাত্র সংশয়ঃ॥ ❞
তুলসী-কাননে নিত্যং কলৌ তিষ্ঠতি কেশবঃ॥ ❞
রোপিতা যৈশ্চ বিধিনা সংপ্রাপ্তং পরমং পদং॥ ❞
রোপিতা সেবিতা নিত্যং পূজিতা তুলসী শুভা॥ ❞
যুগ-কোটিসহস্রাণি তে বসন্তি হরেগৃহে॥ ❞
❝ যস্মিন্ গৃহে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! তুলসীমূল-মৃত্তিকা ।
সৰ্ব্বদা তিষ্ঠতে দেহে দেবতা ন স মানুষঃ॥ ❞
অনুবাদ: “হে দ্বিজরাজ! যার গৃহে ও দেহে সর্ব্বদা তুলসী মূলমৃত্তিকা থাকে, তিনি মনুষ্য নয় ━ তিনি দেবতা।”
❝ তুলসী-মৃত্তিকা যত্র কাষ্ঠং পত্রঞ্চ বেশ্মনি ।
তিষ্ঠতে মুনি-শার্দূল! নিশ্চলং বৈষ্ণবং পদং॥ ❞
অনুবাদ: “হে মুনিবর! যে গৃহে তুলসী-মৃত্তিকা, তুলসী-কাষ্ঠ ও তুলসী-পত্র থাকে, সেই গৃহ নিশ্চয় বিষ্ণুর স্থান হয়।”
❝ যস্য নাভিস্থিতং পত্রং মুখে শিরসি কর্ণয়োঃ ।
তুলসী-সম্ভবং নিত্যং তীর্থৈস্তস্য মখৈশ্চ কিং॥ ❞
অনুবাদ: “সর্বদা যার নাভিতে, মুখে, মস্তকে ও কর্ণদ্বয়ে তুলসীপত্র অবস্থিত থাকে, তার আর তীর্থে গমন বা যজ্ঞ করার কি প্রয়োজন আছে? ”
❝ যদা ভক্তিরতো নিত্য নরো দহতি পাতকং ।
তুলসী ভক্ষণাৎ তদ্বৎ দতহতে পাপ-সঞ্চয়ং॥ ❞
অনুবাদ: “ভক্তিমান ব্যক্তি যেমন প্রত্যহ ভক্তির অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাপ দাহ করেন, সেইরকম তুলসীপত্র ভক্ষণ করলেও সঞ্চিত পাপ দগ্ধ হয়ে যায়। ”
❝ যুক্তো যদি মহাপাপৈ সুকৃতং নাৰ্জ্জিতং ক্বচিৎ ।
তথাপি গীয়তে মোক্ষস্তুলসী ভক্ষিতা যদি॥ ❞
অনুবাদ: “যদি কোন ব্যক্তি সমস্ত মহাপাপযুক্তও হয় এবং কখনও পুণ্য কাৰ্য্য নাও করে থাকে, তবুও সে যদি তুলসীপত্র ভক্ষণ করে, তাহলে তার পরিত্রাণ লাভ হয়ে থাকে।”
৮। অগস্ত্যসংহিতায় বর্ণিত রয়েছে ━
ক্রোশমাত্রং ভবত্যেব গাঙ্গেয়স্যৈব পাথসঃ॥ ❞
ন তেষাং নরক-ক্লেশ প্রয়ান্তি পরমং পদং॥ ❞
অহোরাত্র-কৃতং পাপং তৎক্ষণাৎ প্রহরন্তি তে॥ ❞
জন্মকোটি-কৃতাৎ পাপান্মচ্যুতি নাত্র সংশয়॥ ❞
ভবতে নৈব পাপং তদ্গৃহে সংক্ৰমতে কলৌ॥ ❞
বিশিষ্যতে কায়শুদ্ধিশ্চান্দ্রায়ণ-শতং বিনা॥ ❞
❝ নিত্যং সন্নিহিতো বিষ্ণুঃ সংস্পৃহস্-তুলসী-বনে ।
অপি মেহক্ষত-পত্ৰৈকং কশ্চিৎ-বন্যোঽপয়েদিতি॥ ❞
অনুবাদ:“শ্রীবিষ্ণু সৰ্ব্বদা তুলসী-বনের কাছে এই অভিলাষ নিয়ে বাস করেন, যদি কোন ধন্য ব্যক্তি আমাকে একটি অখণ্ড তুলসীপত্র অর্পণ করে।”
পুরাণ-পঠনং যত্র তত্র সন্নিহিতো হরিঃ॥ ❞
ক্ষীরোদাশায়িনা সার্দ্ধং বসেদাচন্দ্র তারকং॥ ❞
দুৰ্ল্লভা হরিভক্তিশ্চ সংসারার্ণব-পাতিনাং॥ ❞
লভতে চাক্ষয়ং স্থানং পিতৃভিঃ সহ বৈষ্ণবঃ॥ ❞
গয়া-শ্রাদ্ধং কৃতং তেন ভাষিতং বিষ্ণুনা পুরা॥ ❞
করোতি ধৰ্ম্মকার্যাণি ফলমাপ্নোতি চাক্ষয়ং॥ ❞
তথাপি বৈষ্ণবৈস্তন্ন গ্রাহ্যং কৃষ্ণাৰ্পণ বিনা॥ ❞
তুলসী-সম্ভবং মূলং পাবনং মৃত্তিকাদ্যপি॥ ❞
ন তেষাং পুনরাবৃত্তির্বিষ্ণুলোকাৎ কথঞ্চন॥ ❞
মৃতঃ শুধ্যতি দাহেন তুলসী কাষ্ঠ-বহ্নিনা॥ ❞
তুলসীকাষ্ঠ-দগ্ধস্য মৃতস্য ন পুনর্ভবঃ ॥ ❞
দাহকালে ভবেন্মুক্তিঃ পাপকোটি-যুতস্য চ ॥ ❞
১৪। বায়ু তুলসীর গন্ধ নিয়ে যে যে দিকে গমন করে, সেই সেই দিক পবিত্র হয়।
১৫। “তুলসীর দর্শনে পাপ ও রোগ নাশ হয়, স্পর্শের ফলে শরীর শুদ্ধ হয়, জল সিঞ্চনের ফলে ভয় দূর হয়, রোপণ করার ফলে ভগবদ্ভক্তি লাভ হয় এবং শ্রীকৃষ্ণের চরণে অর্পণ করার ফলে পূর্ণ ভগবৎ-প্রেম লাভ করা যায়, সেই তুলসীদেবীর চরণে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।” ━━ (স্কন্দ পুরাণ)
১৬। তুলসীকে বলা হয় “কৃষ্ণ প্রেয়সী” অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের পরম প্রিয়। তাই তুলসী ছাড়া শ্রীনারায়ণ পূজো বা শ্রীকৃষ্ণের পূজো হয় না।
১৭। ‘স্কন্দ পুরাণ’ আর ‘পদ্ম পুরাণে’ বলা হয়েছে ━━ “যে মনুষ্যের গৃহে তুলসীবন রয়েছে, সেই গৃহ তীর্থ-স্বরূপ।”
১৮। ‘গড়ুর পুরাণে’ বলা হয়েছে – “তুলসী গাছ রোপন, দান ও তুলসী গাছের যত্ন নিলে মানুষের পূর্ব জন্মের পাপ ক্ষয় হয়।”
১৯। তুলসীবনে পিতৃশ্রাদ্ধ করলে তাহা পিতৃগণের অতিশয় প্রীতিপ্রদ হয়।
২০। যার গৃহে তুলসীতলার মাটি থাকে, তার গৃহে যমকিঙ্করগণ (যমরাজের আজ্ঞাবহ ভৃত্য) যেতে পারে না। তুলসী মাটি মেখে যদি কেউ প্রাণ ত্যাগ করে এবং সেই ব্যক্তি যদি ঘোরতর পাপী হয় তা হলেও যমকিঙ্করগণ তাকে দেখতেও সমর্থ হয় না।
২১। যিনি তুলসীমূলে দীপ দান করেন, তিনি বৈষ্ণবপদ লাভ করেন।
২২। নর্ম্মদা ও গোদাবরী নদীতে স্নান করলে যে পুণ্য হয়, একমাত্র তুলসীবন সংসর্গে সেই ফল লাভ হয়।
২৩। যিনি নিত্য তুলসী সেবা করেন তিনি সমসত ক্লেশ হতে মুক্ত গয়ে অভীষ্ঠ সিদ্ধি লাভ করেন। যে মনুষ্য তুলসী মঞ্জরী দিয়ে শ্রীহরির পূজা করেন, তাকে পুনরায় গর্ভবাস যন্ত্রনা ভোগ অর্থাৎ পুনর্জন্ম করতে হয় না। অর্থাৎ তার মোক্ষ লাভ হয়।