বৈদিক সংস্কৃতিতে কার্তিক মাসের মহিমা, মাহাত্ম্য, দামোদর ব্রত কথা (Damodar Vrat Katha) ও শাস্ত্রীয় নির্দেশাবলি বর্ণিত আছে। চাতুর্মাস্যের চতুর্থ মাস অর্থাৎ কার্তিক মাসকে বলা হয় দামোদর মাস, কেননা এই মাসটি ভগবান দামোদর রূপের আরাধনার জন্য নির্দিষ্ট। মা যশোদা শিশু কৃষ্ণকে দাম বা রজ্জুর দ্বারা বন্ধন করেছিলেন, সেজন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি নাম হল দামোদর। সুপ্রাচীন কাল হতে কার্তিক ব্রত বা দামোদর ব্রত পালিত হয়ে আসছে। দামোদর ব্রতের সময়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় কর্পূর সমন্বিত ঘৃত বা তিল তেল দ্বারা প্রদীপ প্রজ্বলন করে ভগবানকে আরতি নিবেদন করতে হয় এবং শ্রীদামোদরাষ্টকম্ (Damodarastakam) পাঠ করতে হয়।
◼️ দামোদর কে? ◼️
‘দাম‘ শব্দের অর্থ ‘রশ্মি‘ বা ‘রজ্জু‘ বা ‘দড়ি‘ এবং ‘উদর‘ হচ্ছে ‘কোমর‘। মা যশোদা শিশু কৃষ্ণকে দাম বা রজ্জুর দ্বারা বন্ধন করেছিলেন ── সেজন্য পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরেকটি নাম হল দামোদর।
দামোদর লীলা বা দামবন্ধন লীলা সংগঠিত হয়েছিল আজ থেকে ৫২৪৫ বছর পূর্বে এবং সেদিন ছিল দীপাবলি মহোৎসব। সুতরাং এটি ৫২৪৬ তম দামোদর মহোৎসব ২০২৩ অনুসারে। দামোদর লীলায় শ্রীকৃষ্ণের বয়স ছিল ৩ বছর ৪ মাস।
◼️ দামোদর মাসে দীপদানের সময়সূচী ◼️
✤ ২৮শে অক্টোবর ২০২৩, শনিবার (১০ই কার্ত্তিক ১৪৩০ বঙ্গাব্দ) পূর্ণিমাঃ শ্রীদামোদরকে প্রদীপ দান আরম্ভ।
✤ ২৭ নভেম্বর ২০২৩, সোমবার (১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ) পূর্ণিমাঃ শ্রীদামোদরকে প্রদীপ দান সমাপন।
► আরও পড়ুন: দামোদর মাসে দীপদান মাহাত্ম্য (Deepdan Mahatmya)✸কার্তিক মাহাত্ম্য (Kartik Mahatmya) ► আরও পড়ুন: দামোদর কে?✸দামোদর লীলা (দামবন্ধন লীলা✤Damodar Lila)মাহাত্ম্য✸ |
◼️ দামোদর মাসে আমলকী বৃক্ষের মাহাত্ম্য কি? ◼️
✸ কার্তিক মাসে কেন আমলকী ফল নিবেদন করবেন ❓✸
==========================================
এই দামোদর মাসে ভগবানকে আমলকী ফল নিবেদন করুন, ভোগেও দিতে পারেন। কিংবা আমলকী ফলের মালা তৈরি করে নিবেদন করতে পারেন। এতে ভগবান খুব সন্তুষ্ট হন।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন করুণাসাগর। সাধু ও শাস্ত্র সিদ্ধান্ত আমাদের জানিয়েছেন, আমরা ভগবানের কৃপা পেতে যত না উৎসুক, ভগবান আমাদের কৃপা করতে সহস্রগুণ বেশি উৎসুক। তবে, ভগবান ভক্তদের যশস্বী করতে চান বলেই কিছু নিয়মাদি দিয়েছেন, আবার অল্পের বিনিময়ে বিশাল প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে আমরা সহজেই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভগবানের প্রিয় হতে পারি। তাছাড়া কৃপা মানেই হলো, ‘নির্দিষ্ট কৃত্য করার ফলে যা লাভ হয়।’ এই দিনে আমলকি বৃক্ষকে প্রদক্ষিন, আমলকি বৃক্ষের নিচে শাস্ত্র অধ্যায়ন, আমলকি ফল ভগবানকে নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহন করলে ভগবানের কৃপা লাভ করতে পারি।
দামোদর মাস এমনই একটি সুযোগ, যার মাধ্যমে আমরা যেকোনো ভক্তিমূলক সেবায় সহস্র (হাজার) গুণ বেশী কৃপা লাভ করতে পারি। দামোদর মাসে দীপদান, তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ নিবেদনের পাশাপাশি আরেকটি সুযোগ হলো ভগবানের সেবায় আমলকী নিবেদন।
অতি ক্ষুদ্র, অম্ল যুক্ত, কস যুক্ত এই ফলটিকেই বৈদিক শাস্ত্রে বিশদ ভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছে। পুরাণে বলা হয়েছে, কোনো এক কল্পে দেবী লক্ষ্মী ও পার্বতী একত্রে হরিকথা আলোচনার সময় ভক্তিপূর্ণ অশ্রু বিসর্জন করায় সেই প্রেমাশ্রু থেকে আমলকীর উৎপত্তি। এরপর পরবর্তী কোনো কল্পে জড়জগতে আদিবৃক্ষরূপে আমলকীর আবির্ভাব হয়।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️ দামোদর মাসে অগস্ত্যফুল (বকফুলের) মাহাত্ম্য কি? ◼️
✸ কার্তিক মাসে কেন অগস্ত্যফুল (বকফুল) নিবেদন করবেন❓✸
==============================================
🕉️ যে ব্যাক্তি কার্তিক মাসে অপরাপর অন্য পুষ্প বাদ দিয়ে কেবলমাত্র অগস্ত ফুল (=বকফুল) দিয়ে শ্রীহরির অর্চনা করেন, তাঁর অশ্বমেধ যজ্ঞানুষ্ঠানের ফল লাভ হয়।
🕉️ শ্রী হরির অগস্তফুল এত প্রিয় যে, কার্তিক মাসে যিনি অগস্তফুল দিয়ে শ্রী হরির অর্চনা করেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যত দিন চন্দ্র সূর্য থাকবে তত কাল যাবৎ তিনি শ্রীহরির সমীপে বাস করবেন।
🕉️ অযুতসংখ্যক গো-দানে যে ফল লাভ হয় কার্তিক মাসে শ্রী হরির পাদপদ্মে একটি মাত্র অগস্ত ফুল (=বকফুল) অর্পন করলে সেই ফল লাভ হয়।
🕉️ পদ্মপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে বর্ণন করা হয়েছে —
❝ মুনিপুষ্পৈর্যদি হরিঃ পূজিতঃ কার্তিকে নরৈঃ।
মুনিনামেব গতিদো জ্ঞানীনামুদ্ধর্রেতসাম॥ ❞
কার্তিক মাসে অগস্তপুষ্প দ্বারা শ্রীহরির পূজা করিলে প্রভু তাহাদিগকে উর্দ্ধরেতা গনের গতি প্রদান করেন। সর্বোপরি এই দামোদর মাসে শ্রীশ্রীরাধাদামোদরের প্রিয় অগস্ত পুষ্প তাঁর সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দ্যেশ্যে পূর্ণ নিষ্কাম ভাবে নিবেদন করাই কর্তব্য।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️ দামোদর ব্রত কথা মহিমা ◼️
✸ ধৰ্মদত্ত উপাখ্যান ✸ ================ |
✺ পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে ──✺
🕉️ একবার পৃথু মহারাজ, মহর্ষি নারদ মুনিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ── “হে মুনিশ্রেষ্ঠ! কার্তিক ব্রত পালনকারী ব্যক্তির যে প্রকার মহান ফল প্রাপ্ত হয়, তা আপনি বর্ণনা করুন। কারা এই ব্রত অনুষ্ঠান করে থাকে!”
🕉️ মহর্ষি নারদ বললেন, “──হে রাজন! পূর্বকালে ধর্মদত্ত নামে এক ধর্মজ্ঞ ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি ভক্তিভরে শ্রীবিষ্ণুব্রত পালন করতেন এবং নিষ্ঠাপূর্বক সর্বদা বিষ্ণুপূজায় নিমগ্ন থাকতেন। তিনি দ্বাদশ অক্ষর মন্ত্রজপ করতেন এবং অতিথি সৎকার তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। একদিন কার্তিক মাসে শ্রীহরির সাথে জাগরণ করার মনোভিলাষ নিয়ে ভগবানের মন্দিরাভিমুখে যাত্রা করলেন; তখনও এক প্রহর রাত্রি বাকী ছিল। ভগবানের পূজার সামগ্রী নিয়ে যেতে যেতে ব্রাহ্মণ পথিমধ্যে দেখলেন যে এক রাক্ষসী তার দিকে এগিয়ে আসছে। তার আওয়াজ ছিল অত্যন্ত ভয়প্রদ। সারা শরীরে কাঁটা কাঁটা লোম, লক্ লক্ করছে জিব, নগ্ন শরীর, মুখ থেকে বেরোচ্ছে গম্ভীর ঘর্ঘর শব্দ। ঐসব দেখে ব্রাহ্মণ ভয়ে শিউরে উঠলেন । তাঁর সারা শরীর কাঁপতে থাকল। রাক্ষসী সামনে এলে কোনো প্রকারে সাহস করে পূজার সামগ্রী ও জল নিয়ে অত্যন্ত ক্রোধে রাক্ষসীর উপর ছুঁড়ে মারলেন। হরিনাম স্মরণ করতে করতে তুলসী মিশ্রিত জল রাক্ষসীর গায়ে ছুঁড়ে মেরেছিলেন। এইজন্য সেই রাক্ষসীর সমস্ত পাপ তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে গেল।
🕉️ তখন সে তার পূর্বজন্মের কাহিনী স্মরণ করতে সক্ষম হয়ে বুঝতে পারল তার পূর্বকৃত কর্মের পরিণামেই তার এই দুদর্শা। সে ব্রাহ্মণকে দণ্ডবৎ প্রণাম করে বলতে শুরু করল── “হে ব্রাহ্মণ! আমি পূর্বজন্মের কুকর্মের ফলে এই দশা প্রাপ্ত হয়েছি। এখন কিভাবে আমি উত্তম গতি লাভ করব আমাকে বলে দিন।”
🕉️ রাক্ষসীকে সম্মুখে প্রণাম করতে তথা পূর্বজন্মের কাহিনী বর্ণনা করতে দেখে ব্রাহ্মণ বড়ই আশ্চার্যান্বিত হলেন। তিনি রাক্ষসীকে বললেন ── “কোন কর্মের ফলে তুমি এই দশাপ্রাপ্ত হয়েছ? কোথা থেকে এসেছ? তোমার নাম কি? তোমার আচার আচরণই বা কিরকম ছিল? এই সমস্ত কথা আমাকে বলো।”
🕉️ সেই শাপমুক্ত রাক্ষসী তখন বলল, ──”হে ব্রাহ্মণ! আমার পূর্বজন্মের কথা শ্রবণ করুন। সৌরাষ্ট্র নগরে ভিক্ষা নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন। আমি ছিলাম তাঁর পত্নী। আমার নাম ছিল কলহ। আমি খুবই দাম্ভিক, উগ্র স্বভাবের নারী ছিলাম। আমি কথাবার্তাতেই হোক বা আচরনেই হোক কখনো নিজ পতিকে যথার্থ মর্যাদা দান করিনি। তার জন্য কখনো ভালো খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করে দিইনি। আমি সর্বদাই তাঁর আজ্ঞা অমান্য করতাম। আমি অত্যন্ত কলহপ্রিয় ছিলাম। আমার ব্রাহ্মণ পতী আমাকে নিয়ে সর্বদাই উদ্বিগ্ন ছিলেন। শেষমেশ অতিষ্ঠ হয়ে আমার পতি দ্বিতীয় বিবাহ করার মনস্থির করলেন। মনের দুঃখে তখন আমি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করি। তারপর যমদূতেরা এসে আমাকে নাগপাশে বেঁধে পেটাতে পেটাতে যমলোকে নিয়ে গেল।
🕉️ যমরাজ আমাকে উপস্থিত দেখে চিত্রগুপ্তকে জিজ্ঞাসা করলেন, ── “হে চিত্রগুপ্ত! খাতা খুলে দেখ এ কিরূপ কর্ম করেছে! এর জন্য শুভকর্মের ফল মিলবে না অশুভ কর্মের?”
🕉️ চিত্রগুপ্ত বললেন ── “হে ধর্মরাজ! এই মনুষ্যটি কোনরকম শুভ কর্ম করে নাই, বরং নিজে গোপনে মিষ্টান্ন আদি ভোজন করত কিন্তু তার পতিকে কোনকিছু দিত না । এখন একে বল্গুলী যোনিতে জন্মগ্রহণ করে নিজ বিষ্ঠা ভক্ষণ করে জীবন ধারণ করতে হবে। এই নারী সর্বদা তার পতিকে দোষারোপ করত এবং কলহপরায়ণতা ছিল এর প্রবৃত্তি। সেইজন্য তার পরের জন্মে শুকর যোনিতে জন্মগ্রহণ করে দিন কাটাতে হবে। সে যে পাত্রে রান্না করত, সেই পাত্রেই ভোজন করত। সেই দোষের জন্য তারপরের জন্মে আপন সন্তান ভক্ষণকারী বিড়ালরূপে জন্মগ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া আপন পতির জন্য এ আত্মহত্যা করেছে, সেইজন্য এই অত্যন্ত নিন্দনীয় নারীকে এখন থেকে কিছুকাল প্রেত শরীরে অবস্থান করতে হবে। দূতেদের দিয়ে একে মরুপ্রদেশে পাঠানো দরকার যেখানে ও প্রেত শরীর ধারণ করে থাকবে। এরপর ঐ পাপিনী উক্ত তিন যোনিতে কষ্ট ভোগ করবে।“
🕉️ কলহ বলতে লাগল ──”হে বিপ্লবর! আমিই সেই পাপিনী কলহ, প্রেতশরীরে আমার পাঁচশত বৎসর অতিবাহিত হয়েছে। আমি সর্বদাই নিজ কৃতকর্মের জন্য দুঃখিত তথা ক্ষুধা পিপাসায় অত্যন্ত পীড়িত হয়ে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছি। একদিন ক্ষুধায় কাতর হয়ে এক বণিকের শরীরে প্রবেশ করি এবং তার সাথে দক্ষিণ দেশে কৃষ্ণা এবং বেণীর সঙ্গমস্থলে উপস্থিত হই। সেখানে আসার পর যখন ঐ সঙ্গমের কিনারায় দাঁড়িয়েছি তখন শিব এবং বিষ্ণুর পার্ষদেরা তার শরীর থেকে বেড়িয়ে আমাকে বলপূর্বক সেখান থেকে বিতাড়িত করে দিল। দ্বিজশ্রেষ্ঠ। তখন থেকেই আমি ক্ষুধায় কষ্ট পেতে পেতে এদিক ওদিক ভ্রমণ করছি । ঠিক এই সময়ই আপনার ওপরে আমার দৃষ্টি পড়ে। আজ আপনার হাত থেকে তুলসী মিশ্রিত জলের স্পর্শে আমার সমস্ত পাপ নষ্ট হয়ে গিয়েছে । বিপ্রবর আমাকে কৃপা করুন, এবং আমাকে বলুন আমি এই প্রেত শরীর তথা ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর তিন যোনিতে জন্মগ্রহণের যন্ত্রণা থেকে কিভাবে মুক্ত হব?”
🕉️ দেবর্ষি নারদ বললেন ──”কলহের এই সমস্ত কথা শুনে দ্বিজশ্রেষ্ঠ ধর্মদত্ত তার কর্মের পরিণাম বিচার করে বড় আশ্চার্যান্বিত এবং দুঃখিত হলেন। অনেক ভাবনাচিন্তার পরে আক্ষেপের সঙ্গে বললেন ── তীর্থ, দান এবং ব্রত আদি শুভকর্মের দ্বারা পাপ নষ্ট হয় কিন্তু, তুমি এখন প্রেত শরীরে অবস্থান করছ, এই সমস্ত শুভ কর্মে তোমার অধিকার নেই। তবুও তোমার এই দুর্দশা দেখে আমার মনে অত্যন্ত দুঃখ হচ্ছে। আমি মনুষ্যজন্ম নিয়ে এখন পর্যন্ত কার্তিক ব্রত পালন করে যে পুণ্য সঞ্চয় করেছি, তার অর্ধেক তোমাকে তাই দান করলাম। সেই অর্ধেক পুণ্য নিয়ে তুমি উত্তম গতি প্রাপ্ত হও।”
🕉️ এই কথা বলে ধর্মদত্ত কলহকে শ্রীবিষ্ণুর দ্বাদশ অক্ষর মন্ত্র জপ করে শ্রবণ করাতে লাগলেন এবং তুলসী মিশ্রিত জলদ্বারা তার অভিষেক করলেন। তখন সেই রাক্ষসী প্রেত শরীর পরিত্যাগ করে দিব্যরূপময়ী এক দেবীতে পরিণত হলো। তাকে অগ্নির সমান উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। সে এমনই অনুপম সৌন্দর্য্য লাভ করল যেন সাক্ষাৎ লক্ষ্মীদেবী। তারপর সে ভূমিতে মস্তক নত করে সেই ধর্মদত্ত ব্রাহ্মণকে প্রণাম করে বিনীত কণ্ঠে বলতে লাগল – “হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! আপনার কৃপায় আমি নরক যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার পেয়েছি। আমি পাপের সমুদ্রে ডুবে ছিলাম। আপনি আমার জন্য নৌকা সমান হয়ে আমাকে উদ্ধার করলেন। আপনি আমার প্রণাম গ্রহণ করুন।”
🕉️ সে যখন এইভাবে ব্রাহ্মণের সঙ্গে কথা বলছিল সেই সময় দেখা গেল আকাশ থেকে দিব্যবিমান অবতরণ করছে যাতে শ্রীবিষ্ণুর মতো রূপ ধারণকারী শ্রীবিষ্ণুর পার্ষদগণ রয়েছেন। কাছে এসে বিমানের দ্বার খুলে এগিয়ে এলেন পুণ্যশীল এবং সুশীল নামে দুই বিষ্ণুর পার্ষদ এবং তারা রাক্ষসী থেকে রূপান্তরিত সেই দেবীকে বিমানে ওঠালেন। এই সময় হঠাৎ এরকম বিমান দেখে ধর্মদত্ত বড়ই আশ্চার্যন্বিত হলেন। তিনি বিষ্ণুরূপধারী পার্ষদের দর্শন করে তাঁদের সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। ব্রাহ্মণকে প্রণাম করতে দেখে পুণ্যশীল এবং সুশীল দুজনে তাঁকেও বিমানে উঠিয়ে নিলেন এবং তাঁর প্রশংসা করতে করতে ধর্মীয় তত্ত্ব বলতে লাগলেন।
🕉️ দুই বিষ্ণু পার্ষদ বলতে লাগলেন ──”হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ! কারণ তুমি সর্বদাই বিষ্ণু আরাধনায় যুক্ত। দীন দুঃখীদের দয়া করা তোমার স্বভাব । তুমি অত্যন্ত ধর্মাত্মা এবং শ্রীবিষ্ণুব্রত অনুষ্ঠান আদি পালনে নিষ্ঠাযুক্ত । তুমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আজ পর্যন্ত এই কল্যাণময় কার্তিক ব্রত পালন করেছ এবং তার অর্ধেক দান করার ফলে দ্বিগুণ পুণ্য লাভে সক্ষম হয়েছ। তুমি অত্যন্ত দয়ালু, তোমার কার্তিক ব্রত এবং তুলসীপূজন আদি শুভকর্মের ফল দান করার ফলে এই স্ত্রীলোকটি আজ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর নিকট গমন করছে। তুমিও এই শরীর অন্তে দুই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভগবান বিষ্ণুর বৈকুণ্ঠধামে যাবে এবং তাঁর সমান রূপ ধারণ করে সর্বদাই তাঁর (ভগবানের) কাছে বাস করবে।”
🕉️ পার্ষদদ্বয় আরও বলতে লাগলেন ──”হে ধর্মদত্ত! যে ব্যক্তি তোমার মতো নিষ্ঠার সঙ্গে ভক্তিভরে শ্রীবিষ্ণুর আরাধনা করবে, সে ধন্য এবং কৃতকৃত্য তথা এই সংসারে তার জন্মলাভ সার্থক। যিনি পূর্বকালে রাজা উত্তানপাদের পুত্র ধ্রুবকে ‘ধ্রুবপদ‘ প্রদান করেছিলেন, সেই শ্রীবিষ্ণুকে যদি কেউ নিষ্ঠা সহকারে আরাধনা করে তাহলে সেই প্রাণীকে কেন তিনি কিছু প্রদান করবেন না? ভগবানের নাম স্মরণ মাত্রেই দেহধারী জীব সদ্গতি প্রাপ্ত হয়। পূর্বকালে যখন গজরাজকে কুমির আক্রমণ করে ধরে রেখেছিল, সেই সময় সে শ্রীহরির নাম স্মরণ করে সেই সংকট থেকে মুক্ত হয়ে ভগবানের নিকট স্থান লাভ করেছিল এবং এখনো সে ভগবানের ‘জয়’ নামে পার্ষদরূপে বিখ্যাত। তুমিও শ্রীহরির আরাধনা করেছ, অতএব তোমাকে অবশ্যই নিজসমীপে তিনি স্থান দেবেন। এই কার্তিক ব্রতে তুলসীমিশ্রিত জলের মাহাত্ম্য এমনই যে তা জীবের সর্ব পাপ বিনষ্ট করে তাকে ভগবদ্ধামে গতি লাভ করায়।”
🌸 শ্রী দামোদর ভগবান কি জয় 🌸
🌸 জয় শ্রীরাধা গোবিন্দ 🌸
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✸ কলিপ্রিয়া উপাখ্যান ✸ ================== |
✺ পদ্মপুরাণে সূত-শৌনক সংবাদে বর্ণিত আছে──✺
পুরাকালে ত্রেতাযুগে শঙ্কর নামে সৌরাষ্ট্রদেশবাসী এক বৃষল (শূদ্র) ছিল। তার পত্নীর নাম ছিল কলিপ্রিয়া। সে সর্বদা পতীকে অযোগ্য ভেবে অবহেলা করত এবং পরপুরুষাকাঙ্ক্ষিনী হয়ে পতীকে উচ্ছিষ্ট দিত। মহামূঢ় সে নীচসঙ্গবশতঃ হয়ে মদ্য-মাংস খেয়ে পতীকে তিরষ্কার করত নানভাবে ── ‘ও মরে না কেন? ও মরলে আমি শান্তি পাব!’, ‘ ওর কারনে আমার কপাল পুড়ল! ও মরলে আমি ভোগ করে বাঁচব’, ইত্যাদি… ইত্যাদি।
একদিন সেই নির্দয়ী পাষাণী নারী পরপুরুষের প্রেমের মোহে অসি (তরোয়াল) দিয়ে পতীর মস্তক ছেদন করল এবং তার জারের (উপপতি, প্রেমিক) জন্য জঙ্গলে গমন করল। সেখানে গিয়ে সে এক বীভৎস দৃশ্য দেখতে পায় তার জন্য অপেক্ষারত জার পুরুষকে বাঘে খেয়ে ফেলছে, সেই দেখে সে কাঁদতে কাঁদতে মূৰ্চ্ছা গেল।
জ্ঞান ফিরলে সেই মূঢ়া কাঁদতে কাঁদতে আক্ষেপ করতে লাগল, “হায়! হায়! আমি পতীকে হত্যা করে পরপুরুষের জন্য এলাম; কিন্তু আমার সেই জারকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। এখন কি করব! কোথায় যাব! আমি বিধাতার দ্বারা বঞ্চিত হলাম।” তারপর কলিপ্রিয়া স্বগৃহে ফিরে অনুশোচনায় বিলাপ করতে লাগল ── “হে নাথ! আমি কি নিদারুণ কর্মই করেছি! কোন্ লোকেই বা যাব! হে পতী! একটিবার কথা বলুন। আমি তোমাকে কতই না ভর্ৎসনা করেছি, কিন্তু তুমি আমাকে বারবার ক্ষমা করেছ, আমার যেন কোনো অপরাধই নেই সর্বদা এমনই ব্যবহার করেছ।”
এইরূপ বিলাপ করে সেই ভ্রষ্টা পতীচরণে প্রণামপূর্বক মনকে শক্ত করে অন্য নগরে গমন করল। সে প্রাতে নর্মদায় স্নান করার সময় কয়েকজন বৈষ্ণবগণকে দেখতে পেল। আরও দেখল, নদীতে রমণীগণ গন্ধ, পুষ্প, ধুপ, দীপ, বস্ত্র, নানবিধ ফল ও শঙ্খনাদ মহোৎসব সহকারে ভক্তিযুক্তচিত্তে রাধাদামোদরের পূজা করছে।
এই দেখে বিনয়ান্বিত হয়ে সে জিজ্ঞাসা করল, ── “হে নারীগণ! তোমরা কি করছ?”
প্রত্যুত্তরে তারা জানাল, ── “হে মাতঃ! সর্বমাসোত্তম শুভ কার্তিকমাসে রাধাদামোদরকে পূজা করছি। এতে কোটিজন্মার্জিত পাপ বিনষ্ট হয়ে যাবে।”
এই দামোদর ব্রতের মহিমা শুনে কলিপ্রিয়া বলল, “আমিও তোমাদের সাথে ঐরকম রাধাদামোদরকে পূজা করব” বলে সে স্ত্রীগণের সঙ্গে পূজা করত নির্মলা হয়ে এবং পৌর্ণমাসীতে (অর্থাৎ পূর্ণিমা তিথিতে) মারা গেল।
তারপর যমকিঙ্করগণ এসে ক্রোধে চর্মরজ্জু দ্বারা তাকে বন্ধন করল। ঠিক তখন স্বর্ণময় বিমানে বিষ্ণুদূতগণ আগমন করে চক্রদ্বারা তাদেরকে প্রহার করতে লাগলেন। সেই প্রহারে যমদূতগণ পলায়ন করল।
অতঃপর সেই নারী বিমানে চড়ে বিষ্ণুদূতগণের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে বিষ্ণুধামে (বৈকুণ্ঠলোকে) গমন করল। যে নারী বা পুরুষ কার্তিকে রাধাদামোদরের অর্চন করে, সে পাপমুক্ত হয়ে গোলোকধামে গমন করে। ভক্তিসহকারে সমাহিত হয়ে যে নর বা নারী এই কাহিনী শ্রবণ করে তার কোটিজন্মার্জিত পাপ বিনষ্ট হয়।
🌸 শ্রী দামোদর ভগবান কি জয় 🌸
🌸 জয় শ্রীরাধা গোবিন্দ 🌸
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
✸ মূষিক উপাখ্যান ✸ ================= |
✺ পদ্মপুরাণে সূত-শৌনক সংবাদে বর্ণিত আছে──✺
🕉️ পদ্মপুরাণে শৌনক সূত গোস্বামীকে বলেছেন, ──”হে সূত! কার্তিকব্রতের ফল কি? এটা না করলেই বা দোষ কি? আমাকে কার্তিক ব্রতের মাহাত্ম্য বর্ণন করুন।”
🕉️ সূত বললেন, ──”হে মুনিশ্রেষ্ঠ! জৈমিনির প্রশ্নে ব্যাসদেব যা বলেছিলেন তা কীর্তন করছি।
◆ কার্তিকমাসে যে ব্যক্তি মৎস্য, তৈল ও মৈথুন ত্যাগ করে, সে বহুজন্মকৃত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে হরিগৃহে (বৈকুণ্ঠে) গমন করে। কিন্তু যে ব্যক্তি কার্তিকমাসে মৎস্য ও মৈথুন ত্যাগ না করে, সে নিশ্চয়ই প্রতি জন্মে অজ্ঞান স্থাবরাদি ও শুকর জন্ম লাভ করে।
◆ যে ব্যাক্তি কার্তিক মাসে তুলসীপত্র দ্বারা জনার্দনের পূজা করে, সে ব্যাক্তির পত্রে পত্রে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত হয়।
◆ কার্তিকমাসে যে ব্যাক্তি অগস্ত্যপুষ্প (বক ফুল) দ্বারা জনার্দনের পূজা করে, সে হরির কৃপায় দেবগণেরও দুর্লভ মোক্ষ প্রাপ্ত হয়।
◆ যে ব্যাক্তি সর্পিসংযুক্ত (ঘৃত যুক্ত) অন্ন হরিকে দান করে, সে সর্বপাপ মুক্ত হয়ে হরিমন্দিরে (বৈকুণ্ঠে) গমন করে।
◆ যে ব্যাক্তি কার্তিকমাসে একটি পদ্মও যদি হরিকে দান করে, সে পাপবর্জিত হয়ে জীবন অন্তে বিষ্ণুপদে গমন করে।
◆ যে ব্যাক্তি হরিপ্রিয় কার্তিকমাসে প্রাতঃস্নান করে, যে সর্বতীর্থে স্নান করলে যে ফল, সেই ফল প্রাপ্ত করে।
◆ যে ব্যাক্তি কার্তিকমাসে নাভিমণ্ডলে দীপ দান করে, শ্রীহরি তার প্রতি সদা তুষ্ট থাকেন ।
তবে যে ব্যাক্তি কৃষ্ণমন্দিরে সঘৃত দীপ দান করে তার মাহাত্ম্য বিশেষরূপে বর্ণনা করছি, শ্রবণ কর।” ──
🕉️ ত্রেতাযুগে বৈকুণ্ঠ নামে একজন শুচি (পবিত্র) ব্রাহ্মণ বাস করতেন। সেই দ্বিজ একদা কার্তিকমাসে শ্রীহরির সম্মুখে ঘৃতপূর্ণ দীপ দান করে গৃহে গমন করলেন। সেই সুযোগে এক মূষিক (ইঁদুর) ঘৃত খেতে আরম্ভ করল এবং কোনওভাবে প্রদীপের শিখা আরও উজ্জ্বলভাবে জ্বলে উঠল; তখনি সে প্রাণভয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু পালানোর সময় তাকে এক সৰ্প দংশন করল, ফলে সে প্রাণত্যাগ করল।
🕉️ তখন যমদূতগণ এসে তাকে চর্মরজ্জু বদ্ধ করে নিয়ে যাবার উপক্রম করল। ঠিক সেই মুহূর্তে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী চতুর্ভূজ বিষ্ণুদূতগণ স্বর্ণ নির্মিত এক বিমানে করে সেখানে আগমন করল।
সেই দূতগণ দ্রুত নাগপাশবন্ধন ছিন্ন করে যমকিঙ্করগণকে বললেন, ──”হে মূঢ়গণ! এ মূষিক বিষ্ণুভক্ত; একে বৃথা বন্ধন করেছো। যদি তোমাদের জীবনের আশা থাকে, তবে শীঘ্র প্রত্যাবর্তন কর।”
এই কথা শুনে যমদূতগণ প্রকম্পিত শরীরে জিজ্ঞাসা করল, ──”হে বিষ্ণুদূতগণ! তোমরা একে কোন্ পুণ্যপ্রভাবে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যাচ্ছ? এ মহাপাপী; যমালয়ে শাস্তি বিধানই এর কর্তব্য।”
🕉️ তখন বিষ্ণুদূতগণ বললেন, ──”এই মুষিক বাসুদেবের সম্মুখে প্রদীপ বোধন (উষ্কিয়ে দেওয়া) করেছে; সেই কর্মের কারনেই একে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যাচ্ছি।” তাঁরা আরও বললেন ──
◆ যে ব্যক্তি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিষ্ণুর সম্মুখে দীপের বোধন করেন, সে কোটিজন্মার্জিত পাপ পরিহার করে হরির গৃহে গমন করেন।
◆ কার্তিক মাসে একাদশী তিথিতে যে ব্যক্তি ভক্তি সহকারে প্রদীপ দান করেন, তার পুণ্য আখ্যান করতে শ্রীহরি ভিন্ন আর কেউই সমর্থ নয় ।
◆ যে ব্যক্তি হরির গৃহে ভক্তিসহিত ঘৃতপূর্ণ দীপ দান করেন, তার সহস্র অশ্বমেধেই বা কি প্রয়োজন? অশ্বমেধকর্তা স্বর্গে গমন করেন, কিন্তু কার্তিকে দীপদাতা হরিধাম অর্থাৎ বৈকুণ্ঠে গমন করেন।
বিষ্ণুদূতগণ মুখে এরূপ বাক্য শুনে সেই যমদূতগণ যথাস্থানে গমন করল। তখন বিষ্ণুদূতগণ সেই মূষিককে রথে আরোহণ করিয়ে বৈকুণ্ঠ লোকে গমন করল। শত মনন্তরকাল সে বিষ্ণুসান্নিধ্যেই রইল । তারপর হরির কৃপায় সে মর্ত্যভূমে রাজকন্যা হলে জন্ম লাভ করল। সে পুত্রে-পৌত্রে সমাযুক্ত হয়ে চিরকাল সুখভোগ করল। পরিশেষে সে হরিসেবা-মাহাত্ম্যে ইহলোক হতে গোলোক ধামে গমন করল। মর্তবাসীগণ এই উত্তম দীপমাহাত্ম্য শ্রবণ করে অর্জিত সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয়ে বৈকুণ্ঠ লোকে গমন করে।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️ দামোদর ব্রতের গুরুত্ব বর্ণন ◼️
দামোদর মাস একটি অত্যন্ত বিশেষ মাস। কারণ এই মাসে আপনি যাই করুন না কেন তার জন্য আপনি বহুগুণ বেশি সুফল লাভ করবেন।
✸ তুলসী ও শংখাসুর উপাখ্যান ✸ ======================== |
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী, শংখাসুর নামক এক ভয়ঙ্কর অসুরের উপদ্রবে, অত্যাচারের ভয়ে দেবতারা মেরু পর্বতে লুকিয়ে ছিলেন। শংখাসুর জানতো না তাঁরা কোথায় লুকিয়ে ছিল? তাই সে সত্যলোকে গিয়ে মূর্তিমান বেদসমূহকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিল। কেননা এই উপায়ে দেবতারা তাদের কাছে বেদ না থাকায় শক্তি হারাবে, ফলে সে রাজত্ব করতে পারবে। তাই সে ক্রোধান্বিত হয়ে সত্যলোকের দিকে ধাবিত হল। কিন্তু মূর্তিমান বেদসমূহ তার আসার খবর পেয়ে পালিয়ে যান; সে তাদের তাড়া করে। তারা জলে লুকিয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদেরকে জলে দ্রবীভূত করে রাখে।
সে ভাবল তারা নিশ্চয়ই কোথাও লুকিয়ে আছে। তাই সে জলের নিচের গুহা, পর্বত আদি তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগল আর ক্রোধে গর্জন করতে লাগল “মূর্তিমান বেদসমূহ কোথায়?” কিন্তু বেদসমূহ জলেই মিশে ছিল। দেবতারা ভাবল এই আমাদের সুযোগ, আমাদেরকে যেতে হবে ভগবান বিষ্ণুর কাছে; কারণ শুধুমাত্র তিনিই আমাদের রক্ষা করতে পারেন। কিন্তু তারা ভাবল, “যেহেতু এখন বর্ষা ঋতুর শেষ মাস, ভগবান এই সময় বিশ্রাম গ্রহণ করেন। যদি আমরা হঠাৎ তাঁকে জাগিয়ে তুলি হয়তো ব্রহ্মান্ডের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে এবং তা ঠিক হবে না। তাই এসো আমরা সকলে ‘হরে কৃষ্ণ‘ জপ করি এবং এভাবে যখন তিনি জেগে উঠবেন তিনি ভীষণ আনন্দিত হবেন।”
তাই তারা একত্রে ক্ষীরসমুদ্রে গিয়ে জপ করতে শুরু করল ──
❝ হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে॥ ❞
ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু জেগে উঠে সমস্ত দেবতাদের জপ করতে দেখে সত্যিই খুব আনন্দিত হলেন। তিনি এতটাই আনন্দিত হলেন যে তিনি বললেন, “এই মাসের এই তিথিতে যেকোন কৃষ্ণভাবনাময় বা পারমার্থিক কর্ম করা হোক না কেন আমি তার জন্য ১০০ গুণ বেশি সুফল প্রদান করব”। এই তিথিটি ছিল একাদশী তিথি (উত্থান একাদশী) এবং মাসটি ছিল দামোদর বা কার্তিক মাস। প্রকৃতপক্ষে স্কন্দপুরাণ ও অন্যান্য পুরাণ থেকে আমরা জানতে পারি যে, যদি আমরা শ্রীরাধাগোবিন্দের বিগ্রহকে প্রদীপ নিবেদন করি সেক্ষেত্রে আমরা ১০০০ গুণ সুফল লাভ করি, সেই সঙ্গে কৃষ্ণভাবনাময় বা পারমার্থিক কর্মের জন্য ১০০ গুণ সুফল লাভ করি। কিন্তু শ্রীবিগ্রহগণকে প্রদীপ নিবেদন সত্যিই ভীষণ শুভ। প্রকৃতপক্ষে এর ফলে আমাদের পিতৃপুরুষরা মুক্ত হতে পারে। তাই ভক্তদেরকে উৎসাহিত করছি যেন তারা অন্যদেরকে ‘হরে কৃষ্ণ’ জপ (ইহাই কলিযুগের নাম যজ্ঞ) করতে উদ্বুদ্ধ করেন।”
ব্রম্মা বললেন ── “হে নারদ! যিনি কার্তিকমাসে প্রাতঃকালে কৃষ্ণ বা বিষ্ণু মন্দির মার্জন করেন, কৃষ্ণলোকে বা বৈকুণ্ঠধামে তার জন্যে সুদৃঢ় গৃহ নির্মিত হয়। কারন কার্তিকমাস দামোদরের অতিব প্রিয় মাস।” (স্কন্ধ পুরান, বিষ্ণুখন্ড, কার্তিকমাস মাহাত্ম্য, ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ৪০ শ্লোক)।
এরপর ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের কাছ থেকে শংখাসুরের অত্যাচারের বর্ণনা শ্রবন করেন এবং শঙ্খাসুরের স্ত্রী তুলসী দেবী একনিষ্ঠ আপনার ভক্ত হওয়ায় তাকে পরাস্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ও ন্যায় স্থাপনের উদ্দেশ্যে ভগবান শঙ্খাসুরকে বধ করেন। এরপর তার ধর্মপরায়ণ স্ত্রী তুলসী শ্রীহরির কাছে স্বামীকে ফেরত পাওয়ার জন্য তপস্যা শুরু করেন। তুলসীর প্রার্থনায় ভগবান প্রকট হলেও পাপী শঙ্খাসুরকে ফিরিয়ে দেওয়ার মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন নি, কারণ সে পুনরায় জীবিত হলে অন্যায় ও পাপের ভারে ব্রহ্মান্ড ভারাক্রান্ত হবে। তখন শ্রীবিষ্ণু শঙ্খাসুরের স্মৃতিস্বরূপ (প্রতীক) হিসাবে শঙ্খাসুরের হাড় দিয়ে শাঁখা উৎপত্তি করেন এবং তুলসীকে দেন। সেই থেকেই বিবাহিত মহিলারা স্বামীর মঙ্গল কামনায় শাঁখা পরা শুরু করেন এবং শাঁখার প্রচলন হয়।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️ দামোদর ব্রত পালনে শাস্ত্রীয় নির্দেশাবলি ◼️
🕉️ কার্তিক মাসের অধিষ্ঠাতৃদেব শ্রীরাধিকার সাথে শ্রীদামোদর রূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রকট হন। যাঁর প্রভাবে তাঁর প্রিয়তম কার্তিক মাস সেবিত হয়।
🕉️ শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস গ্রন্থের ষোড়শ অধ্যায়ে কার্তিক মাস তথা দামোদর মাস সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে । সেখানেই কার্তিক মাসের ব্রত পদ্ধতি, করণীয়, বর্জনীয়, দীপদান প্রভৃতি বিভিন্ন কৃত্যাদি বর্ণিত হয়েছে । নিচে সেগুলোই বর্ণিত হলো।
✤✸ কার্তিকব্রতের মাহাত্ম্য ✸✤
✺ স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা-নারদ সংবাদে বর্ণিত আছে ──✺
১। দুর্লভ মনুষ্যজন্ম লাভ করেও যে মনুষ্য কার্তিক ব্রতে বর্ণিত ধর্ম আচরণ করেন না, হে ধার্মিকবর তাকে মাতৃপিতৃ ঘাতক রূপে জানবেন।
২। দামোদরের প্রিয় কার্তিকমাসে যে মনুষ্য ব্রতহীনভাবে অতিবাহিত করে, সে মনুষ্য সর্বধর্ম বর্জিত হয়ে পশুপাখি জন্ম লাভ করে।
৩। হে মুনিবর! যে মনুষ্য কার্তিক ব্রত পালন করে না , সে ব্রহ্মঘাতী, গোঘাতী, স্বর্ণচোর ও সর্বদা মিথ্যাবাদী ।
৪। বিশেষতঃ যে বিধবা নারী কার্তিক ব্রত পালন করে না, হে মুনিশ্রেষ্ঠ! সে সত্যিই নরকে গমন করে ।
৫। কার্তিক মাসে যে গৃহী ব্রত পালন করে না, তার সমস্ত যজ্ঞদানাদি বৃথা হয় এবং কল্পকাল যাবৎ নরকবাসী হয় ।
৬। কার্তিক মাস প্রাপ্ত হয়ে যে দ্বিজ ব্রত বিমুখ, দেবরাজসহ দেবগণ সকলে তার প্রতি বিমুখ ।
৭। হে বিপেন্দ্ৰ! বহু যজ্ঞ দ্বারা পূজা করে এবং শতবার শ্রাদ্ধ করেও কিন্তু কার্তিকে ব্রত পালন না করার ফলে স্বর্গ প্রাপ্ত হয় না ।
৮। কার্তিক মাসে বৈষ্ণবব্রত পালন না করার ফলে সন্ন্যাসী, বিধবা ও বিশেষতঃ বনাশ্রমী ব্যক্তি নরকে যায় ৷
৯। হে বিপ্রবর! কার্তিক মাসে যদি মনুষ্য বৈষ্ণব ব্রত পালন না করল, তার বেদসমূহ অধ্যয়নে কি ফল? এবং পুরাণসমূহ পাঠে কি ফল?
১০। কার্তিক ব্রত পালন না করে যদি মনুষ্য জন্ম অবধি পুণ্য উপার্জন করেও সে সকল পুণ্য ভস্মীভূত হয়।
১১। কার্তিকে ব্রত পালন না করলে সেই মনুষ্যের উৎকৃষ্ট দান, সুমহান তপস্যা ও জপ সবই বিফলে যায়।
১২ । হে নারদ! কার্তিক মাসে উত্তম বৈষ্ণব ব্রত পালন না করলে সপ্ত জন্মার্জিত পুণ্য বৃথা হয়।
১৩। হে মহামুনে! যারা কার্তিকে পবিত্র বৈষ্ণব ব্রত পালন করে না, ইহলোকে সেই মনুষ্যগণকে পাপমূর্তি বলে জানবেন।
১৪। শ্রীবিষ্ণুর নিয়ম না করে যে মনুষ্য কার্তিক মাস অতিবাহিত করে, হে নারদ সে জন্মার্জিত পুণ্যের ফল পায় না।
১৫। হে মুনে! যে মনুষ্য নিয়মব্যতীত কার্তিক মাস যাপন করে এবং চাতুর্মাস্য ব্রত পালন করে না, সে কুলাধম ব্রহ্মঘাতী।
১৬। হে শ্রীনারদ! যে মনুষ্য পিতৃপক্ষে পিতৃগণের পিণ্ডদান করে না, কার্তিকে ব্রত পালন করে না, শ্রাবণী পূর্ণিমাতে ঋষিতর্পণ করে না, চৈত্রমাসে বিষ্ণুর দোল করে না, পবিত্র জলে মাঘস্নান করে না, পুষ্যানক্ষত্রে আমলকীব্রত করে না, শ্রাবণে জন্মাষ্টমী পালন করে না, শ্রাবণদ্বাদশীতে সঙ্গমে স্নান করে না, সেই মূঢ়গণ কোথায় যাবে আমি তা জানি না।
✺পদ্মপুরাণে শ্রীনারদ-শৌনকাদি মুনিগণ-সংবাদে বর্ণিত আছে ──✺
১৭। ভারতবর্ষে যে মনুষ্য কার্তিক মাস নিয়ম-নিষ্ঠাহীনভাবে অতিবাহিত করে, সে হাতে চিন্তামনি পেয়েও কাদাজলে নিক্ষেপ করে।
১৮। হে বিপ্রগণ! যে মনুষ্য নিয়ম-নিষ্ঠাহীনভাবে কার্তিক মাস যাপন করে, তার প্রতি কৃষ্ণ বিমুখ হন।
✸✤ কার্তিকে স্নান-দান ও বিশেষ সৎকর্মের মাহাত্ম্য ✸✤
✺ স্কন্দপুরাণে কার্তিকব্রত মাহাত্ম্যে বর্ণিত আছে ──✺
১। হে পুত্র! যে মনুষ্যরা কার্তিক মাসে দান, হোম, জপ, স্নান ও শ্রীহরিব্রত করে না, সেই দ্বিজগণ নরাধম।
২। যারা কার্তিকে দান, হোম, জপ ও ব্রত পালন করে না, সেই কারণে নিশ্চয়ই আত্মাকে বঞ্চিত করল, প্রার্থিত ফল পেল না।
৩। হে নারদ! কার্তিক মাস প্রাপ্ত হয়েও যারা জনার্দনে ভক্তি (কৃষ্ণভক্তি) করল না, তাদের পিতৃগণের সাথে যমপুরে বাস হয়।
৪। যারা কার্তিক মাসে ভক্তিভাবে কেশবদেবের অর্চনা করল না, তারা যমদূতেদের দ্বারা বন্দী হয়ে নরকে গমন করবে।
৫। সহস্র কোটি জন্মের সাধনের ফলে দুর্লভ মনুষ্যজন্ম প্রাপ্ত হয়েও সেই মনুষ্য কার্তিকে শ্রীবিষ্ণুর অর্চন করল না, তার জন্ম বিফলে গেল।
৬। যে মনুষ্য কার্তিক মাসে বিষ্ণুপূজা, বিষ্ণুকথা, বৈষ্ণবগণের দর্শন পেল না, তার দশবার্ষিক পুণ্য নষ্ট হয় ।
✸✤ কার্তিক মাসের মাহাত্ম্য ✸✤
✺ স্কন্দপুরাণে কার্তিক প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে ──✺
১। সর্বতীর্থে যে স্নান, সর্বদানের যে ফল, কার্তিক মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না ।
২। একদিকে সর্বতীর্থ, দক্ষিণাসহ সর্বযজ্ঞ, পুস্করে বাস, কুরুক্ষেত্র ও হিমাচলে বাস, মেরুতুল্য সুবর্ণ দান। হে বৎস! অন্যদিকে সর্বদা কেশবপ্রিয় কার্তিক মাস।
৩। কার্তিক মাসে শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে যা কিছু পুণ্য করা হয়, হে নারদ! তোমাকে সত্য বলছি, তা সবই অক্ষয় হয়।
৪। সব মাসের মধ্যে কার্তিক মাস নিশ্চয়ই উত্তম। পুণ্যগণের মধ্যে পরম পুণ্য, পবিত্রকারিগণের মধ্যে পরম পবিত্র ।
৫। হে নারদ! হে বিপ্রেন্দ্র! যেমন নদীসমূহের, পর্বতসমূহের, সমুদ্রসমূহের ক্ষয় জানা যায় না, সেই রকম হে ব্ৰহ্মণ! হে মুনে! কার্তিক মাসে যে যৎকিঞ্চিৎ পুণ্য করা যায় তার ক্ষয় নেই, সেই রকম কৃত পাপেরও ক্ষয় নেই ।
৬। কার্তিকের সমান মাস নেই, সত্যযুগের সমান যুগ নেই, বেদের সমান শাস্ত্র নেই, গঙ্গার সমান তীর্থ নেই।
৭। সর্বদা বৈষ্ণবগণের প্রিয় এই শ্রেষ্ঠ কার্তিক মাস। কার্তিকে উৎপন্ন সকল বস্তু বৈষ্ণবগণ ভক্তিপূর্বক সেবা করেন, হে মহামুনে! বৈষ্ণবরা নরকস্থ সকল পিতৃগণকে উদ্ধার করেন।
✺পদ্মপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে বর্ণিত আছে ──✺
৮। বারো মাসের মধ্যে কার্তিক মাস শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত প্রিয়। এই কৃষ্ণপ্রিয় মাসে অল্প উপায়ন করা মাত্রই ভগবান সম্যক্ পূজিত হন এবং তিনি বিষ্ণুলোক দান করেন, এই রকম আমি নিশ্চয় করেছি।
৯। যেমন ভক্তবৎসল দামোদর সর্বজন বিদিত, তার এই দামোদর মাস সেইরূপ ভক্তবৎসল; স্বল্প সেবাকেও বহু করে নেন।
১০। দেহধারীগণের মধ্যে মনুষ্যদেহ দুর্লভ ও ক্ষণভঙ্গুর, তার মধ্যেও দুর্লভ কাল শ্রীহরিপ্রিয় কার্তিক মাস।
১১। কার্তিক মাসে দীপদান দ্বারা এই পরমেশ্বর শ্রীহরি প্রীত হন, আকাশ দীপ প্রবোধন ফলেও শ্রীহরি সুগতি দান করেন ।
✺ স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে বর্ণিত আছে ──✺
১২। এই জগতে ব্রতসমূহের ফল মাত্র এক জন্ম অনুগমন করে কিন্তু কার্তিকে ব্রতের ফল শতজন্ম অনুগমন করে।
১৩। হে বিপেন্দ্ৰ! কার্তিক ব্রতে মথুরায় অক্রুর তীর্থে সম্পূর্ণ উপবাস করে ও স্নান করে যে ফল প্রাপ্ত হয়, কার্তিকব্রতের নিয়ম শ্রবণ করেও সেই ফল প্রাপ্ত হয় ।
১৪। বারাণসীতে, কুরুক্ষেত্রে, নৈমিষারণ্যে, পুষ্করে ও অর্বুদতীর্থে গমন করে যে ফল লাভ হয়, কার্তিকে ব্রত করে সেই ফল লাভ হয়।
১৫। সর্বদা যজ্ঞসমূহ দ্বারা যজন না করেও পিতৃগণের শ্রাদ্ধ না করেও কার্তিকমাসে ব্রতদ্বারা তারা বিষ্ণুধামে গমন করেন।
১৬। নিত্যভক্ষ্য দ্রব্যসমূহের মধ্যে কার্তিকে কিঞ্চিৎ নিয়ম করে সঙ্কোচ (কম) করলে নিশ্চয়ই পবিত্র কৃষ্ণসারূপ্য প্রাপ্ত হয়।
১৭। হে মুনিসত্তম! কার্তিকে ব্রত করলে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্র পাপার্জিত কুজন্ম প্রাপ্ত হয় না ।
১৮ । হে মুনিশাৰ্দ্দুল! কার্তিকে নিজশক্তি অনুসারে বিষ্ণুব্রত শাস্ত্রবিধিমত যিনি করেন, সংসার-মুক্তি তাঁর হস্তগত।
১৯। সুপবিত্র কার্তিক মাসে দেব, ঋষি ও পিতৃগণের সেবিত ব্রত করলে অতি অল্পেও মনুষ্যগণের মহাফল লাভ হয়।
✸✤ কার্তিক মাসে বিশেষ কর্মের মাহাত্ম্য ✸✤
✺ স্কন্দপুরাণে কার্তিকব্রত প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে ──✺
১। হে দ্বিজোত্তম! কার্তিকে অন্নাদি দান, হোম, তপস্যা, জপ যা কিছু করলে তা অক্ষয় ফলদান করে।
২। কার্তিকে মনুষ্যগণেরা বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে যা কিছু প্রদত্ত হয় তাই অক্ষয় ফল হয়, বিশেষতঃ অন্নদান।
৩। যিনি এক সম্বৎসর (পূর্ণ এক বৎসর) নিত্য হোম অনুষ্ঠান করেন, কার্তিকে যিনি স্বস্তিক রচনা করে থাকেন তিনিও তার সমান ফল পান, এতে সন্দেহ নাই ।
৪। যে নারী কার্তিক মাসে শ্রীভগবানের মন্দিরে মণ্ডল রচনা অর্থাৎ আল্পনা দেন, তিনি স্বর্গাস্থিতা হয়ে কপোতীর (পায়রার) ন্যায় শোভিতা হন।
৫। যে মনুষ্য কার্তিকে প্রতিদিন পত্রে ভোজন করেন, তিনি কল্পকাল দুৰ্গতি থেকে রক্ষা পান।
৬ । মনুষ্যগণ কার্তিকে পলাশ পত্রে ভোজন করলে সারা জন্মার্জিত পাপসমূহ নাশ হয়।
৭ । তাছাড়া কার্তিকে পলাশ পত্রে ভোজন করলে মনুষ্য সর্বকামনার ফল ও সর্বতীর্থ ফল লাভ করেন এবং নরক দর্শন করেন না ।
৮। হে মুনিসত্তম! সর্বকামনা প্রদাণকারী পলাশ বৃক্ষ সাক্ষাৎ ব্রহ্মার অবতার, শূদ্রের পক্ষে মধ্যম পত্র বর্জন কর্তব্য, তাতে ভোজন করলে শূদ্র কল্পকাল নরকবাসী হয়।
৯। কার্তিক মাসে তিলদান, নদীতে স্নান, সৎকথা শ্রবণ, সাধুসেবন, পলাশ পত্রে ভোজন সংসার থেকে মুক্তি প্রদান করে।
১০। কার্তিকমাসে সূর্যোদয়কালে যে মনুষ্য দামোদরের সম্মুখে জাগরণ করে, হে বিপ্রেন্দ্র! তিনি সহস্র (হাজার) গাভীদানের ফল লাভ করেন।
১১। হে মহামুনে! কার্তিকমাসে রাত্রির শেষ প্রহরে শ্রীবিষ্ণুর কাছে যিনি জাগরণ করেন, তিনি নিশ্চিত ভগবদ্ধাম লাভ করেন।
১২। কলিযুগের কার্তিকমাসে সাধুসেবা, গোগ্রাস দান, শ্রীবিষ্ণুর কথা শ্রবণ ও অর্চন, রাত্রি শেষ প্রহরে জাগরণ দুর্লভ।
১৩ । জ্যৈষ্ঠ মাসে সহস্র জলধেনু (জলের পাত্র) দান এবং জলদান করে যে ফল লাভ হয়, কার্তিকে প্রাতঃস্নান করেও সেই ফল প্রাপ্ত হওয়া যায় ।
১৪। কুরুক্ষেত্রে রবিবারে সূর্যগ্রহণের সময় সন্নিহত্যা নামক হ্রদে যে স্নানফল, কার্তিকে একদিন স্নানে সেই ফল লাভ করেন।
১৫। হে মুনিশ্রেষ্ঠ! কৃষ্ণপ্রিয় কার্তিকমাসে পিতৃগণের উদ্দেশ্যে অন্নজল দান করলে তা অক্ষয় রয়ে যায়।
✺ পদ্মপুরাণে কার্তিকব্রত প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে ──✺
১৬। কার্তিক মাসে যিনি ব্রহ্মচারী, ভূমিশায়ী, হবিষ্যভোজী, পলাশপত্রে ভোজনকারী, শ্রীদামোদরের অর্চন করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে শ্রীবৈকুণ্ঠধামে শ্রীহরির নিকট ভজনানন্দে পরিপূর্ণ বিষ্ণু সদৃশ আনন্দভোগ করেন ৷
১৭। পরিপূর্ণ কার্তিক মাসে প্রাতঃস্নানকারী, জিতেন্দ্রিয়, জপকারী, হবিষ্যভোজী ও বহিরিন্দ্রিয় (অর্থাৎ চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা ও ত্বক-এই পাঁচ ইন্দ্রিয়) সংযমকারী সর্বপাপ থেকে মুক্ত হন।
১৮। পূর্ণ কার্তিক মাসে যে মনুষ্য একবার ভোজন করে তিনি বীর, বহুতেজস্বী ও কীর্তিমান হন।
১৯। যে মনুষ্য কার্তিকে পলাশপত্রে ভোজন করেন, তিনি পাপশূন্য হন এবং যিনি শ্রীহরির প্রসাদ নৈবেদ্য ভোজন করেন, তিনি সংসার থেকে মুক্ত হন। ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্যরা পলাশ পত্রের মধ্যপত্র বর্জন করবেন।
২০। কার্তিকে শ্রীহরির পূজন করলে পূজকের সহস্র অপরাধ ও মহামহাপাতকসমূহ প্রভু ক্ষমা করেন।
২১। শ্রীহরির প্রিয় মিছরি ও ঘৃতযুক্ত পায়েস নৈবেদ্য-প্রসাদ ভক্তগণের মধ্যে বিতরন করে ভোজনকারী প্রতিদিন যজ্ঞসম ফল প্রাপ্ত হন।
✺ পদ্মপুরাণে শ্রীকৃষ্ণ-সত্যা সংবাদে বর্ণিত আছে ──✺
২২। কার্তিক মাসে যে মনুষ্য স্নান, নিশিজাগরণ, দীপদান, তুলসীবন পালন করেন, তারা শ্রীবিষ্ণুর সারূপ্য লাভ করেন।
২৩ । এইভাবে কার্তিকে তিনদিনও যাঁরা সেবা করেন, তাঁরা দেবগণেরও বন্দনীয়, আর যাঁরা আজন্ম ঐ সেবা করেন, তাঁদের কথা আর কি বলব!
✸✤ কার্তিক মাসে জপ,স্তব, শাস্ত্রালোচনার মাহাত্ম্য ✸✤
✺ স্কন্দপুরাণে বর্ণিত আছে ──✺
১। যে মনুষ্য কার্তিক মাসে প্রত্যহ গীতা শাস্ত্রাভ্যাস করেন, হে শ্রীনারদ! তাকে সংসারে পুনরাগমন করতে হয় না।
২। যে মনুষ্য কার্তিক মাসে শ্রীবিষ্ণু মন্দির হরিনাম করতে করতে প্রদক্ষিণ করেন, তিনি পদে পদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলভাগী হন।
৩। যে মনুষ্য কার্তিকে শ্রীহরির সম্মুখে ভক্তিসহকারে নৃত্য, গীত, ভজন, কীর্তন, বাদ্য বাদন করেন, তিনি অক্ষয়পদ বিষ্ণুধাম প্রাপ্ত হন।
৪ । কার্তিকে যে মনুষ্য শ্রীহরির সহস্রনাম স্তোত্র এবং গজেন্দ্রমোক্ষণ পাঠ করেন, তাকে সংসারে পুনর্জন্ম করতে হয় না ।
৫। কার্তিকে শেষ রাত্রিতে যে মনুষ্য স্তবপাঠ ও গান করেন, হে নারদ! তিনি পিতৃগণসহ শ্বেতদ্বীপবাসী হন ।
৬। যে মনুষ্য কার্তিক মাসে শ্রীহরির নৈবেদ্য দান করেন, হে মুনিসত্তম! তিনি যব সংখ্যায় ততযুগ স্বর্গে বাস করেন ।
৭। যিনি কার্তিকে কর্পূরসহ অগুরু, চন্দন, ধূপ কেশবের সম্মুখে দান করেন, হে মুনিশ্রেষ্ঠ! তার যুগান্তে পুনর্জন্ম হয় না ।
৮। যাঁরা কার্তিকে নিয়মপূর্বক ভক্তিভরে শ্রীহরিকথা শ্রবণ করেন; শ্লোকার্দ্ধ বা শ্লোকপাদ হলেও তাঁরা শত গাভীদান ফল প্রাপ্ত করেন।
৯ । হে মহামুনে! কার্তিক মাসে সর্বধর্ম পরিত্যাগ করে ভগবৎসম্মুখে পবিত্র শাস্ত্রব্যাখ্যা শ্রবণ কর্তব্য ।
১০। হে মুনিশাৰ্দ্দুল! কার্তিকে মঙ্গল কামনায় বা লোভ বুদ্ধিতে যিনি হরিকথা কীর্তন করেন, তিনি শতকুল উদ্ধার করেন ।
১১ । যিনি কার্তিকে নিত্য শাস্ত্রচর্চায় দিনযাপন করেন, তিনি সর্বপাপ নিঃশেষে দগ্ধ করে অযুত যজ্ঞের ফল লাভ করেন ।
১২। কার্তিকে শাস্ত্রকথা আলোচনার দ্বারা শ্রীমধুসূদন যতটা তুষ্ট হন, কিন্তু দানসমূহ, যজ্ঞসমূহ, গো-দান, হস্তিদানাদি দ্বারা তিনি ততটা তুষ্ট হন না।
১৩। হে মুনিশ্রেষ্ঠ! কার্তিকে যিনি হরিকথা শ্রবণ করেন, তিনি শতকোটি জন্মের আপদসমূহ অর্থাৎ দুঃখ-দুর্দশা, বিপদ প্রভৃতি থেকে নিস্তার পান।
১৪। হে মুনে! যিনি কাতিকে যত্নসহ নিত্য শ্রীমদ্ভাগবতের একটি শ্লোকও পাঠ করেন, তিনি অষ্টাদশপুরাণ পাঠের ফল প্রাপ্ত করেন।
১৫। মনুষ্য অবশ্যই ইষ্ট অর্থাৎ যজ্ঞাদি, পূর্ত অর্থাৎ জনহিতার্থে কূপ জলাশয় খননাদি সর্বধর্ম পরিত্যাগ করে কার্তিকে পরম ভক্তিযুক্ত হয়ে বৈষ্ণবগণের সাথে বাস করবেন।
✸✤ কার্তিকব্রতের অঙ্গসমূহ ✸✤
✺পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে ──✺
১। রাত্রিশেষে হরি জাগরণ, প্রাতঃস্নান, তুলসীবন সেবন, দীপদান, শেষে উৎসব উদযাপন ── কার্তিকে এই হল পাঁচটি ব্রত অঙ্গ।
২। সম্পূর্ণ কার্তিক মাসে ব্রতকারী পাঁচটি ব্রত অঙ্গ পালনের ফলে ভুক্তি মুক্তি ফল প্রাপ্ত করেন।
৩। কার্তিকে হরি জাগরণ বিষ্ণুমন্দিরে, শিবালয়ে, অশ্বত্থমূলে বা তুলসীবনে করবে।
৪ । কার্তিক-ব্রতী যদি বিপদাপন্ন হয়ে স্নানের জন্য জল না পান, অথবা ব্যাধিবশতঃ স্নানে অসমর্থ হলে শ্রীবিষ্ণুর নাম নিতে নিতে মন্ত্র স্নান করবেন।
৫। ব্রতকারী হয়ে যিনি উদযাপন বিধি করতে অসমর্থ, তিনি ব্ৰত সংপূর্তির জন্য যথাশক্তি ব্রাহ্মণগণকে ভক্তিপূর্বক ভোজন করাবেন ।
৬। কার্তিকে দীপদানে অসমর্থ হলে অন্যের প্রদত্ত দীপকে উদ্দীপিত করবে অথবা যত্নসহকারে বাতাস থেকে প্রজ্জলিত দীপকে রক্ষা করবে।
৭ । তুলসী সেবার অভাবে বৈষ্ণব দ্বিজকে পূজা করবেন, ব্রতী এ সকলের অভাবে ব্রত সম্পূর্ণের জন্য ব্রাহ্মণগণের, গাভীগণের বা অশ্বত্থ ও বটবৃক্ষের সেবা করবে ।
✸✤ কার্তিকে দীপদান মাহাত্ম্য ✸✤
✺ স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে বর্ণিত আছে ──✺
১। কার্তিকে নিমেষাৰ্দ্ধকাল (চোখের পাতা ফেলতে যেটুকু সময় লাগে অর্থাৎ অতি সামান্য সময়) দীপদান ফলে সহস্রকোটি কল্প (হাজার কোটি কল্প) অর্জিত বহু পাপ বিলুপ্ত হয় ।
২ । হে বিপেন্দ্ৰ! কার্তিকে কেশবপ্রিয় দীপদানের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর, দীপদান দ্বারা পৃথিবীতে আর পুনর্জন্ম হয় না।
৩। কুরুক্ষেত্রে সূর্যগ্রহণে, চন্দ্রগ্রহণে নর্মদাতে যে স্নানফল, কার্তিক মাসে দীপদানে তার কোটিগুণ ফল প্রাপ্ত হয় ।
৪। কার্তিকে যার দীপ, ঘৃত বা তিলতৈল দ্বারা প্রজ্জ্বলিত হয়, হে মুনিবর! তার অশ্বমেধ যজ্ঞে কি ফল?
৫। কার্তিকে ভগবান জনার্দনকে দীপদান ফলে মন্ত্রহীন, ক্রিয়াহীন, শৌচহীন সকলই সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় ।
৬। কার্তিকে কেশবের অগ্রে যিনি দীপ দান করেন, তার সর্বযজ্ঞ দ্বারা পূজন ও সর্বতীর্থে স্নান হয় ।
৭। যিনি কার্তিকে যে সময় (দিন) পর্যন্ত কেশবের সম্মুখে দীপজ্যোতি প্রজ্জ্বলিত করেন না, তার সেই সময় (দিন) পর্যন্ত কৃত পুণ্যসমূহ স্বর্গে, মর্ত্যে ও রসাতলে গর্জন করে।
৮। হে দ্বিজ! যতদিন পুরাকালীয় পিতৃগণ গাথা কীর্তিত হতে শোনা যায় আমাদের কুলে পৃথিবীতে পিতৃভক্ত পুত্র জন্মগ্রহণ করবে, যে পুত্র কার্তিকে কেশবকে দীপদান দ্বারা প্রসন্ন করবে এবং চক্রপাণির (শ্রীকৃষ্ণের) প্রসাদে আমরা নিশ্চয়ই মুক্তি পাব।
৯। মেরু ও মন্দর পর্বত সদৃশ অশেষ পাপসমূহ করলেও কার্তিক মাসে দীপদানের প্রভাবে সর্বপাপ দগ্ধ হয়ে ভস্মীভূত হয় – এতে কোন সন্দেহ নেই।
১০। কার্তিকে বাসুদেবের (শ্রীকৃষ্ণের) সম্মুখে গৃহে বা মন্দিরে দীপদানের মহাফলে বৈকুণ্ঠলোক প্রাপ্ত হয়।
১১। যিনি কার্তিক মাসে মধূসুদনের (শ্রীকৃষ্ণের) সম্মুখে দীপদান করেছেন, তিনি মনুষ্যলোকে জন্ম সার্থক করেছেন। তিনি ধন্য, তিনি কীর্তিমান।
১২। কার্তিক মাসে অতি অল্পকাল মাত্র দীপদানের যে ফল, তা যজ্ঞশত দ্বারা বা তীর্থশত স্নান দ্বারা প্রাপ্য নয়।
১৩। সর্বপ্রকার অনুষ্ঠানহীন, আর সর্বপাপরত হলেও কার্তিকে দীপদান প্রভাবে পবিত্র হয়, এতে সন্দেহ নেই ।
১৪। হে নারদ! ত্রিভুবনে এমন কোন পাপ নেই, যা কার্তিকে শ্রীকেশবের সম্মুখে দীপদান দ্বারা শোধন করতে পারে না।
১৫। কার্তিকে শ্রীবাসুদেবের সম্মুখে দীপদান করে সকল বাধা মুক্ত হয়ে নিত্যধাম প্রাপ্ত হয়।
১৬। যিনি কার্তিক মাসে কর্পূর দ্বারা দীপ প্রজ্জ্বলিত করেন, বিশেষতঃ দ্বাদশীতে তার পুণ্য তোমাকে বলছি। হে নারদ! তার কুলে যারা জন্মেছে এবং যারা জন্মাবে যাদের সংখ্যা অসংখ্য, তারা চক্রপাণি শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদে দেবলোকে ইচ্ছামতো সুদীর্ঘকাল ক্রীড়া করে সকলে মুক্তিলাভ করবে।
১৭। হে বিপ্রেন্দ্ৰ! যে ব্যক্তি দ্যূতক্রীড়া ছলে অর্থাৎ খেলার ছলে কার্তিক মাসে শ্রীহরিমন্দির আলোকিত করেন, হে মহাভাগ! সে তার সপ্তপুরুষ পর্যন্ত কুলকে পবিত্র করেন।
১৮ ৷ কার্তিকে বৈষ্ণবগৃহে যে মনুষ্য দীপদান করেন, তারও সর্বদা ধন, পুত্র, যশ, কীর্তি হয় ।
১৯। যেমন আলোড়নের দ্বারা কক্ষের সর্বত্র অগ্নি দৃষ্ট হয়, সেইরূপ দীপদানের প্রভাবে ধর্ম সর্বত্র দৃশ্য হয় – এতে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।
২০ । হে বিপ্রেন্দ্ৰ! নিৰ্ধন ব্যক্তিরও আত্মত্যাগ করে কার্তিকে পূর্ণিমা যাবৎ দীপদান কর্তব্য।
২১। হে মুনে! কার্তিকে বিষ্ণুমন্দিরে যে মূঢ়ব্যক্তি দীপদান করেন না, তিনি বৈষ্ণব মধ্যে স্বীকৃত নয়।
নারদীয় পুরাণে শ্রীরুক্মাঙ্গদ-মোহিনী সংবাদে-
✺ নারদীয় পুরাণে শ্রীরুক্মাঙ্গদ-মোহিনী সংবাদে বর্ণিত আছে ──✺
২২। তুলাযন্ত্রে একদিকে সর্বপ্রকারের দান, অন্যদিকে কার্তিকে দীপদান উভয়কে সমান বলা হয় নি, সেক্ষেত্রে দীপ প্রদাতা অধিক পুণ্যবান।
✺ পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে ──✺
২৩। কার্তিক মাসে শ্রীহরিমন্দিরে যিনি অখণ্ড দীপ প্রদান করেন, তিনি শ্রীহরিধামে দিব্যজ্যোতিঃ শ্রেষ্ঠ বিমানে ক্রীড়া করেন ।
✸✤ কার্তিকে অন্যের নিবেদিত দীপ প্রজ্বলনের মাহাত্ম্য ✸✤
✺ স্কন্দপুরাণে বর্ণিত আছে ──✺
১। পিতৃপক্ষে অন্নদান দ্বারা, গ্রীষ্মকালে জলদান দ্বারা যে ফল প্রাপ্ত হয়, কার্তিকে অন্যের নিবেদিত দীপ (পরদীপ) উদ্দীপিত করলে মনুষ্যগণ সেই ফল লাভ করে।
২। কার্তিকে পরদীপ উদ্দীপিত ও বৈষ্ণবগণের সেবা দ্বারা রাজসূয় ও অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল পাওয়া যায় ।
৩। শ্রীহরির গৃহে (মন্দিরে) অন্যের প্রদত্ত দীপকে যারা উজ্জ্বল করেন, হে মহারাজ! তারা যম-যন্ত্রণা থেকে নিস্তার লাভ করে ।
৪ । হে বিপেন্দ্ৰ! মহাযজ্ঞসমূহ দ্বারা যজন করলেও সেই ফল হয় না, কার্তিকে পরদীপ প্রজ্বলনে যে ফল প্রাপ্ত হয়।
৫। কার্তিকের একাদশীতে এক মুষিক অন্যের নিবেদিত দীপকে উজ্জ্বল করে দুর্লভ মনুষ্য জন্ম প্রাপ্ত হয়ে সে পরাগতি প্রাপ্ত হয়েছিল।
✸✤ কার্তিকে শিখর দীপ মাহাত্ম্য ✸✤
✺ স্কন্দপুরাণে বর্ণিত আছে ──✺
১। শ্রীমন্দিরে কলসের উপরে যখন দীপ উজ্জ্বল হয়, হে মুনিশ্রেষ্ঠ! তখন পাপরাশি দ্রবীভূত হয় ।
২। যে মনুষ্যগণ ব্রাহ্মণগণকে সমুদ্রবেষ্টিত পৃথিবী দান করে, তার ফল শ্রীহরি মন্দিরের চূড়ায় প্রদত্ত দীপ দানের এক কলার সমানও নয়।
৩। যে ব্যক্তি সবৎসা দুগ্ধবতী কোটি ধেনু দান করে, তার ফল শ্রীহরিমন্দিরের চূড়ায় প্রদত্ত দীপের ফলের এক কলার সমান নয়।
৪। হে মহামুনে! বৈষ্ণবগণের উদ্দেশ্যে সর্বস্ব দান করে যে ফল, শ্রীহরিমন্দিরের চূড়ায় প্রদত্ত দীপদানের এক কলার সমান নয় ।
৫। হে মহামুনে! শ্রীহরিমন্দিরের শিখরের উপরে ও মধ্যে প্রদত্ত প্রদীপ যিনি মূল্য দ্বারা ক্রয় করেছেন, তিনি নিজ শতকুল উদ্ধার করেন।
৬। কার্তিকে শ্রীকেশবদেবের আলোকদীপ্ত উচ্চতর প্রাসাদ মহাভক্তিসহ যারা দর্শন করেন, তাদের কুলে কেউ নরকবাসী হয় না।
৭। বিষ্ণুদীপ প্রদানকারীকে স্বর্গে দেবগণ নিরীক্ষণ করতে থাকেন যে, কখন এই দীপদানকারী ভক্তসহ আমাদের মিলন হবে।
৮। হে মুনিশ্রেষ্ঠ! কার্তিকে পূর্ণিমা পর্যন্ত শ্রীহরিমন্দিরের চূড়ায় যিনি দীপদান করেন, তার পক্ষে ইন্দ্রপদ দুর্লভ নয়।
✸✤ কার্তিকে শ্রীহরিমন্দিরে দীপমালা রচনার মাহাত্ম্য ✸✤
✺ স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে ──✺
১। শ্রীহরিমন্দিরের বাইরে ও ভেতরে যিনি দীপমালা রচনা করেন, তিনি শ্রীবিষ্ণুর পার্ষদ।
২। যিনি শ্রীহরিমন্দিরে দীপমালা রচনা করেন, তার বংশে উদ্ভুত লক্ষপুরুষের নরক গমন হয় না ।
৩। হে মুনে! শ্রীবিষ্ণুমন্দিরের বাইরে ও ভেতরে যিনি দীপযুক্ত করেন, তাঁর পরমধাম গমনকালের পথে দেবগণ দীপ হাতে অপেক্ষা করতে থাকেন।
✺ ভবিষ্যপুরাণে বর্ণিত আছে ──✺
৪। যিনি কার্তিকমাসে বিশেষত উত্থান একাদশী ও দ্বাদশীতে অতি সুন্দর দীপমালিকা রচনা করেন, তিনি দশ সহস্র (হাজার) সূর্যতেজ সদৃশ জ্যোতিদ্বারা দশদিক্ আলোকিত করে জ্যোতির্ময় বিমানে জগৎ আলোকিত করে বিষ্ণুলোকে গমন করেন এবং যত সংখ্যা প্রদীপ ঘৃতপূর্ণ করে শ্রীভগবার্নের জাগরণ করেন, তত সহস্রবর্ষ শ্রীবিষ্ণুলোকে বিরাজ করেন ।
✸✤ কার্তিকে আকাশদীপ দানের মাহাত্ম্য ✸✤
✺ পদ্মপুরাণে কার্তিক প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে ──✺
১। যে মনুষ্য কার্তিক মাসে উচ্চ আকাশে প্রদীপ দান করেন, তিনি সর্বকুল উদ্ধার করে বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হন ।
২। যে মনুষ্য কার্তিকে শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে আকাশে ও জলে দীপ দান করেন, তার যে ফল তা শ্রবণ করুন। হে বিপ্রগণ! এইভাবে যিনি দীপদান করেন, তিনি ধনধান্য, সমৃদ্ধিশালী, পুত্রবান্ ও ঐশ্বর্যশালী হন, তাঁর নয়নযুগল সুশোভন হয় এবং তিনি বিদ্বান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
৩। কার্তিকমাসে বিপ্রগৃহে (বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের ঘরে) যিনি দীপদান করেন, মনীষিগণ বলেন ─ তাঁর অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল লাভ হয় ।
৪। চৌরাস্তায়, রাজপথে, ব্রাহ্মণ গৃহে, বৃক্ষমূলে, গোষ্ঠে (গোচারণভূমি), মাঠে, অরণ্যেও দীপদানে সর্বত্র মহাফল প্রাপ্ত হবে।
৫। আকাশ দীপ দান মন্ত্ৰ –
✺ পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে ──✺
❝ দামোদরায় নভসি তুলায়াং লোলয়া সহ ৷
প্রদীপন্তে প্রযচ্ছামি নমোহনন্তায় বেধসে॥ ❞
অনুবাদ: “কার্তিকের আকাশে শ্রীরাধিকার সাথে দামোদরকে প্রদীপ দান করছি ─ শ্রীঅনন্তকে ও ভগবান শ্রীবিষ্ণুকে নমস্কার করছি ।
► আরও পড়ুন: কার্তিক মাসের মাহাত্ম্য ✤ দামোদর মাসে দীপদান মাহাত্ম্য (Deepdan Mahatmya) কি?
✸✤ স্থান বিশেষে কার্তিক মাহাত্ম্য ✸✤
✺ পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে ──✺
১। যে কোনও দেশে কার্তিকে স্নান ও দান বিশেষতঃ পূজাতে তা অগ্নিহোত্র সমফল।
২। কুরুক্ষেত্রে কোটিগুণ ফল, গঙ্গাতেও তৎসম ফল, তার থেকে অধিক ফল পুস্করে, হে ভার্গব! দ্বারকাতেও অধিক। কার্তিক মাসে স্নান ও শ্রীভগবৎপূজন শ্রীকৃষ্ণলোকে বসবাস সম।
৩। হে মুনিগণ! যেহেতু মথুরা মণ্ডলেই শ্রীহরির দামোদর লীলা প্রকট হয়েছিল, অতএব কার্তিকে মথুরায় শ্রীগোবিন্দের প্রীতিবন্ধন, কার্তিকে মথুরাতেই চরম ফল প্রাপ্তি হয় ।
৪। যেমন মাঘে প্রয়াগতীর্থ, বৈশাখে জাহ্নবী, তেমনি কার্তিকে মথুরা সেবা, তার থেকে উৎকর্ষ আর নাই।
৫। কার্তিক মাসে মথুরাতে মনুষ্যগণ স্নান করে দামোদরের পূজা করলে তারা কৃষ্ণসমান রূপ প্রাপ্ত হবেন, এ বিষয়ে বিচার কর্তব্য নয়।
৬। হে বিপ্ৰ! এই জগতে মনুষ্যগণের পক্ষে মথুরাতে কার্তিক মাস দুর্লভ । যেখানে পূজিত হয়ে দামোদর নিজরূপ ভক্তগণকে প্রদান করেন।
৭। কার্তিকে মথুরামণ্ডলে একবারও শ্রীদামোদরের পূজা করলে সেই মনুষ্যগণকে শ্রীহরি অনায়াসে ভক্তি প্রদান করেন।
৮। শ্রীদামোদর কার্তিকে মথুরামণ্ডলে মন্ত্র-দ্রব্য-বিহীন পূজাকেও স্বীকার করেন।
৯। যে পাপের মরণান্তেই মুক্তি হয় না, তার শুদ্ধির জন্য কার্তিক মাসে মথুরাপুরীতে হরিপূজাই সুনিশ্চয়, এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্ত্রে উক্ত রয়েছে।
১০। বালক ধ্রুব কার্তিক মাসে মথুরামণ্ডলে শ্রীদামোদরের পূজা ও ধ্যান দ্বারা শ্রীভগবানকে শীঘ্র দর্শন প্রাপ্ত হয়েছিলেন, যা যোগিগণের কাছেও দুর্লভ।
১১। পৃথিবীতে মথুরা সুলভা, সেই রকম প্রতিবছর কার্তিক মাস সুলভ, তথাপি এই জগতে মূঢ় মনুষ্যগণ ভবসমুদ্রে জন্মমরণ প্রবাহে ভাসছে ।
১২। যজ্ঞসমূহের কি প্রয়োজন, তপস্যার কি প্রয়োজন, অন্য তীর্থসমূহের সেবাতে কি প্রয়োজন? যদি কার্তিকে মথুরামণ্ডলে শ্রীরাধিকা প্রিয় শ্রীকৃষ্ণ পূজিত হন ।
১৩। সকল পবিত্র তীর্থ, নদ-নদী, সরোবর কার্তিকমাসে এই মথুরামণ্ডলে সকলেই বাস করেন ।
১৪। কার্তিকে কেশবের জন্মস্থানে যে মনুষ্যগণ একবার প্রবেশ করেন, তারা পরম অব্যয় (অক্ষয় বা পরিবর্তন নেই এমন) শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্ত হন।
১৫। কার্তিকমাসে মথুরাতে হরিপূজকের মাধ্যমে হরিপূজা করলে দুর্লভ পদ প্রাপ্ত হওয়া যায়, আর ভক্তিমান হয়ে পূজা করলে যে কি ফল, তা আর কি বলব।
এইভাবে কার্তিকমাসের কৃত্যসমূহ (করনীয় কি) বর্ণিত হলো। তার মধ্যে কিঞ্চিৎ বিশেষভাবে কার্তিক-কৃত্য-বিধি এখন বর্ণিত হচ্ছে:
✸✤ কার্তিকে করনীয় বিধি ✸✤
✺ শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামা সংবাদে, কার্তিকে মাহাত্ম্যে বর্ণিত আছে ──✺
১ । আশ্বিনমাসের শুক্লা একাদশী বা পূর্ণিমা তিথি থেকে আলস্যহীনভাবে কার্তিকমাসের ব্রতসমূহ আরম্ভ করবে।
২। প্রতিদিন শ্রীভগবানকে জাগরণ করার জন্য রাত্রির শেষ প্রহরে (ব্রহ্মমুহুর্তে) উঠে শুচি হয়ে শ্রীভগবানকে জাগিয়ে অনন্তর স্তোত্রপাঠ, জপসহ প্রভুর আরতি করবে।
৩। বৈষ্ণববৃন্দসহ আনন্দে বৈষ্ণবধর্মসমূহ শ্রবণ করে গীতবাদ্যাদিসহ প্রাতঃকালে প্রভু দামোদরদেবকে আরতি করবে।
৪. নদী আদি জলাশয়ে গিয়ে আচমনপূর্বক সংকল্প করবে। প্রভুকে প্রার্থনা জানিয়ে পরে তাঁকে যথাবিধি অর্ঘ্যদান করবে।
৫. সংকল্পমন্ত্র –
❝ কার্তিকেহহয়ং করিষ্যামি প্রাতস্নানং জনার্দন ৷
প্রীত্যর্থং তব দেবেশ দামোদর ময়া সহ॥ ❞
━━┉┈┈(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস-১৬/১৭২)
অনুবাদ: হে জনার্দন! হে দেবেশ! হে দামোদর! শ্রীরাধিকাসহ আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান করব।
৬. প্রার্থনা মন্ত্র –
❝ তব ধ্যানেন দেবেশ জলেহস্মিন স্নাতুমুদ্যতঃ ৷
তৎ প্রাসাদাচ্চ মে পাপং দামোদর বিনশ্যতু॥ ❞
━━┉┈┈(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস-১৬/১৭৩)
অনুবাদ: হে দেবেশ! তোমার ধ্যানসহ এই জলে আমি স্নান করতে উদ্যত, হে দামোদর! তোমার প্রসাদে আমার পাপ বিনাশ হোক।
৭. অর্ঘ্যমন্ত্র –
❝ ব্ৰতিনঃ কার্তিকে মাসি স্নাতস্য বিধি বন্মম ।
দামোদর গৃহাণার্ঘ্যং দনুজেন্দ্ৰনিসূদন ॥
নিত্যে নৈমিত্তিকে কৃৎস্নে কার্তিকে পাপশোষণে ।
গৃহাণার্ঘং ময়া দত্তং রাধয়া সহিত হরে॥ ❞
━━┉┈┈(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস-১৬/১৭৪-১৭৫)
অনুবাদ: নিত্যনৈমিত্তিক সমস্ত পাপ শোষণকারী কার্তিক মাসে ব্রতী আমি বিধিবৎ স্নানকারী, হে দামোদর, দনুজেন্দ্রনিসূদন, হে হরে, আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য রাধিকাসহ গ্রহন করুন।
৮. আকাশ দীপ দান মন্ত্ৰ –
❝ দামোদরায় নভসি তুলায়াং লোলয়া সহ ৷
প্রদীপন্তে প্রযচ্ছামি নমোঃ অনন্তায় বেধসে॥ ❞
━━┉┈┈(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস-১৬/১৭৩)
অনুবাদ: কার্তিকের আকাশে শ্রীরাধিকার সাথে দামোদরকে প্রদীপ দান করছি, শ্রীঅনন্তকে ও ভগবান শ্রীবিষ্ণুকে নমস্কার করছি।
৯. নিজদেহকে তিলকদ্বারা লেপন করে শ্রীকৃষ্ণ নারায়াণাদি নাম উচ্চারণ পূর্বক স্নান করে নিজ বিধিমতে সন্ধ্যা উপাসনা করে গৃহে আগমন করবে।
১০. ভগবানের মন্দির মার্জনা (পরিষ্কার) করে স্বস্তিকমণ্ডল রচনা করে প্রভুকে তুলসী, মালতী, পদ্ম, অগস্ত (বক) পুষ্পাদি দ্বারা অর্চনা করবে।
১১. প্রতিদিন বৈষ্ণব সঙ্গে ভগবৎ কথা সেবন, অহোরাত্র ঘৃত, দীপ বা তিল দ্বারা অর্চন করবে।
১২. কার্তিক মাসে বিশেষ বিশেষ নৈবেদ্য অর্পন করবে, সেই রকম অষ্টোত্তর শত প্রণাম, যথাশক্তি একবার আহারাদি ব্রত আচরণ করবেন।
✺ পদ্মপুরাণে কার্তিক প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে ──✺
১৩. প্রাতঃকালে জাগরণ করে শৌচাদি সেরে পবিত্র জলাশয়ে গিয়ে বিধিবৎ স্নান, অতঃপর দামোদর অর্চন কর্তব্য।
১৪. কার্তিকে ব্রতধারী মৌন অবলম্বনে ভোজন, ঘৃত দ্বারা বা তিল তৈল দ্বারা দীপাদান কর্তব্য।
১৫. বৈষ্ণববৃন্দসহ কৃষ্ণকথা প্রবচন দ্বারা দিন যাপন, কার্তিক মাসে ব্রত সংকল্প পালন কর্তব্য।
১৬. আশ্বিনে শুক্লপক্ষের হরিবাসর (একাদশীর দিন) থেকে, অথবা পৌর্ণমাসি (পূর্ণিমাতিথি) থেকে অথবা তুলারাশি আগমনে সংক্রান্তিতে কার্তিকমাসের ব্রত আরম্ভ।
১৭. শ্রীবিষ্ণুর সম্মুখে অখণ্ড দীপদান, দেবালয়ে, তুলসী তলাতে, আকাশে উত্তম দীপ দান করবেন।
১৮. হে ভাবিনি! কার্তিকমাসে কার্তিকব্রত গৃহে করবে না, বিশেষতঃ তীর্থে কার্তিকব্রত সর্বপ্রযত্নে করবে।
✸✤ কার্তিকে বর্জনীয় দ্রব্যসমূহ ✸✤
✺ পদ্মপুরাণে ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে বর্ণিত আছে ──✺
১। কার্তিক মাসে রাজমাষ (বরবটি), ও শিমসমূহ ভক্ষণ করলে, হে মুনিবর! সে কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকবাসী হয়।
✺ সত্যযুগ=১৭,২৮,০০০ বছর
✺ ত্রেতাযুগ= ১২,৯৬,০০০ বছর
✺ দ্বাপরযুগ= ৮,৬৪,০০০ বছর
✺ কলিযুগ= ৪,৩২,০০০ বছর
✺ চারযুগ মিলে এক চতুর্যুগ= ৪.৩২ মিলিয়ন বছর
✺ ১০০০ চতুর্যুগ= এক “কল্প”= ব্রহ্মার একদিন= ব্রহ্মার একরাত= ৪.৩২ বিলিয়ন বছর
✺ ১০০ বছর হল ব্রহ্মার আয়ু= আমাদের এই ব্রহ্মান্ডের আয়ু= ৩১১.০৪ ট্রিলিয়ন বছর।
আবার এক “কল্প” সময়ের মধেয় ১৪ জন মনু আসেন। প্রথম মনুকে বলা হয় স্বায়ম্ভুব মনু এবং তাঁর স্ত্রী হলেন স্বতরুপা (এই ব্রহ্মান্ডের প্রথম নারী ও পুরুষ)। প্রত্যেক মনুর সময়কালকে বলা হয় মন্বন্তর।
✺ ১ মন্বন্তর= ৭১ চতুর্যুগ= ৩০৬.৭২ মিলিয়ন বছর
ছয়জন মনু গত হয়েছেন, মানে ৬টি মন্বন্তর চলে গিয়েছে। আমরা আছি সপ্তম মনুর অধীনে যাঁর নাম “বিবস্বত মনু”। তার মানে, এই মনুর পরে আরও ৭ জন মনু আসবেন, আরও ৭ টি মন্বন্তর অতিবাহিত হবে। তারপর পূর্ণ হবে ব্রহ্মার একদিন!! তারপর হবে রাতের শুরু!!
২। কার্তিক মাসে যে ব্যক্তি কলমী শাক, পটল, বেগুন, আচার (চাটনি) ত্যাগ না করে, তাকে কল্পকাল নরকবাসী হতে হয় ।
৩। ধর্মাত্মা ব্যক্তি কার্তিক মাসে মৎস্য ও মাংস ভক্ষণ করবেন না।
৪। পরান্ন, পরশয্যা, পরধন, পরস্ত্রী-কার্তিকে প্রাজ্ঞ (জ্ঞানী) ব্যক্তি বিশেষভাবে বর্জন করবেন।
৫। কার্তিক মাসে তৈল মর্দন, পরশয্যা, পরান্ন ও কাসার পাত্রে ভোজন ত্যাগ করলে পরিপূর্ণ ব্রতী হওয়া যায়।
৬। কার্তিক মাসে পরান্ন দর্শন করেও যে মনুষ্য তা বর্জন করেন, সে প্রতিদিন কৃচ্ছ্রব্রতের ফল প্রাপ্ত হন।
✺ পদ্মপুরাণে শ্রীরুত্মাঙ্গদ-মোহিনী-সংবাদে বর্ণিত আছে ──✺
৭। কার্তিকে তৈল, মধু, কাঁসার পাত্র ও পচা-বাসি-অম্ল দ্রব্য, আচার ইত্যাদি বর্জন করবে ।
৮ । হে সুভ্রু! মৎস্য, কচ্ছপ মাংস ঔষধ হিসেবে কিংবা অন্য মাংস ভক্ষণ করবে না। কার্তিকে মাংস ভক্ষণে চণ্ডাল হয়।
✸✤ কার্তিকে শ্রীরাধা-দামোদরের পূজাবিধি ✸✤
✺ পদ্মপুরাণে কার্তিকব্রতে বর্ণিত আছে ──✺
১। শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা, গোপিকাগণ মধ্যে শ্রেষ্ঠা, কার্তিকে শ্রীদামোদর সহিত শ্রীরাধিকার পূজা করা উচিত।
২। ব্রজবাসী ব্রাহ্মণ এবং তৎপত্নীকে বস্ত্র, অলঙ্কার ও ভোজনাদি দান দ্বারা পূজা করা কর্তব্য।
৩। হে বিপ্রগণ! কার্তিকে শ্রীরাধিকার সন্তুষ্টির জন্য যিনি শ্রীরাধিকা প্রতিমাকে পূজা করে তার প্রতি শ্রীমান্ দামোদর হরি তুষ্ট হন।
৪। কার্তিকে প্রতিদিন “দামোদরাষ্টকম্‘ স্তোত্র (সত্যব্রত মুনি কথিত) পাঠ করবে, তা দামোদরের অর্চন স্বরূপ ও শ্রীদামোদরের আকর্ষণকারী ।
◼️ দামোদর ব্রতের (নিয়ম সেবা) সংকল্প ◼️
============================
❝হৃষীকেনং হৃষীকেশ সেবনং ভক্তিরুচ্যতে❞ সর্বান্তকরণে ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারা ইন্দ্রিয়াধিপতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তথা সেবাই ভক্তি। কিভাবে সময়ের সর্বোচ্চ উপযোগ করে ভগবানের সেবা করা যায় সেটাই দামোদর ব্রতের সংকল্প হওয়া উচিত। তবে সর্বাগ্রে এটা খেয়াল রাখা উচিত যে, নিয়মগুলো (সংকল্প) যেন লোকদেখানো বা শুধুই নিয়মমাত্র থেকে না যায়। ব্রতের সময়সীমা পর্যন্ত যেন সেগুলো পালনযোগ্য হয় সেটাও বিবেচনা করতে হবে। শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রীতিবিধানার্থ নানাবিধ ব্রতনিয়ম বা সংকল্প করা যেতে পারে। যেমন-
১। নিত্য মঙ্গলারতি দর্শন ও গুরুপূজায় অংশগ্রহণ ।
২। নিত্য ভাগবত ক্লাসে যোগদান।
৩ । হবিষ্যান্ন গ্রহণ ।
৪। সন্ধ্যায় আরতিতে অংশগ্রহণ ও দামোদরের জন্য দীপদান।
৫ । বেশি সংখ্যক হরিনাম জপ – (২৪, ৩২, ৪৮, ৬৪ বা তদুর্ধ্ব)
৬ । সকাল-সন্ধ্যা প্রতিদিন তুলসী পূজা ও পরিক্রমা
৭ । তিনবেলা মন্দির পরিক্রমা ।
৮ । বেশি সংখ্যক গ্রন্থ প্রচার ।
৯ । প্রতিদিন ‘দামোদরাষ্টকং‘ পাঠ ।
১০ । ‘লীলাপুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ’, ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ’ এবং ‘শ্ৰীমদ্ভাগবত’ প্রভৃতি গ্রন্থাদি পাঠ।
◼️ প্রনিপাত ◼️
============
✸ সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।
✸ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।
✸ শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….
✸ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:
হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।।━━┉┈┈ (১০৮ বার হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হন)
🌸 জয় শ্রীল প্রভুপাদ 🌸
🌸 জয় শ্রীল গুরুদেব 🌸
◼️ হবিষ্যান্ন ◼️
==========
গৌড়ীয় আশ্চর্যবর্গের অন্যতম শ্রীল সনাতন গোস্বামীকৃত শ্রীশ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থের ১৩ অধ্যায়ের ১০-১৩ নং শ্লোকে হবিষ্যান্নের উপাদান উল্লেখ করা হয়েছে:
নিম্নোক্ত উপাদানগুলো হবিষ্যান্ন তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে —
হবিষ্য সাধারণত আতপ চাল এবং মুগ ডাল দিয়ে তৈরি করা হয়। যারা একাদশী থেকে একাদশী পর্যন্ত চাতুর্মাস্য পালন করেছেন, নিয়মানুযায়ী তাদের কার্তিক মাসের উত্থান একাদশী পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে, তাই তারা তাদের হবিষ্যে মুগ ডাল গ্রহণ করতে পারেন। তবে অধিকাংশ ভক্তগণ পূর্ণিমা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চাতুর্মাস্য ব্রত পালন করেন, তাই ভীষ্মপঞ্চক এর হবিষ্যে মুগ ডাল অনুমোদিত হবে না এবং সকল প্রকার তেল পরিত্যাজ্য।
নিম্নলিখিত উপাদানগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে :— | |
◉ আতপ চাল ◉ ঘি ◉ সৈন্ধব লবণ (Rock salt) ◉ কাঁচকলা | ◉ কালা শাক (সাদা পাট; Corchorus capsularis) ◉ গম ◉ বার্লি ◉ আলু |
এছাড়া নিম্নোক্ত ফলসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে :— (স্কন্দপুরাণে নাগরখণ্ডে অবশ্যই একটি বীজের অথবা কম বীজপূর্ণ ফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে) | |
◉ আম ◉ কাঁঠাল ◉ লাবালী ফল (Labali fruit; Phyllanthus acidus; Star Gooseberry; অড়বরই) ◉ কেয়া ব্যতীত সকল মূল ◉ শুকনো পিপুল (Pippalii; Piper longum; Long Pepper) ফল মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় | ◉ হরিতকি ◉আমলকি ◉ নারঙ্গ (Naranga; কমলা) ◉ ইক্ষুদ্রব্য (গুড় ব্যতীত) ◉ ননীপূর্ণ গোদুগ্ধ (মাখনযুক্ত গরুর দুধ) ◉ নারিকেলের জল |
হবিষ্যান্নে বর্জনীয় দ্রব্যসমূহ :— (নিম্নবর্ণিত দ্রব্যগুলো হবিষ্যান্নের অন্তর্ভুক্ত হলেও তা কার্তিক মাসে বর্জন করতে বলা হয়েছে।) | |
◉ মুগ ডাল ◉ তিল তেল ◉ বেতো শাক ◉ সাত্ত্বিক শাক ◉ মূলা ◉ গাজর ◉ শিম | ◉ বরবটি ◉ বিনস্ ◉ সয়াবিন ◉ বেগুন ◉ মটরশুঁটি ◉ জিরা ◉ তেঁতুল |
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
🪔🪔🪔 শ্রীদামোদরাষ্টকম্ (Damodarastakam)🪔🪔🪔
—- (শ্রীমৎ সত্যব্রত মুনিকৃত)
নমামীশ্বরং সচ্চিদানন্দরূপং
লসৎ-কুণ্ডলং গোকুলে ভ্রাজমানম্।
যশোদভিয়োলূখলাব্ধাবমানং
পরামৃষ্টমত্যং ততো দ্রুত্য গোপ্যা ॥ ১ ॥
অনুবাদ: যিনি সচ্চিদানন্দ-স্বরূপ, যাঁর কর্ণযুগলে কুন্ডল আন্দোলিত হচ্ছে, যিনি গোকুলে পরম শোভা বর্দ্ধন করছেন এবং যিনি শিক্য অর্থাৎ শিকায় রাখা নবনীত (মাখন) অপহরণ করে মা যশোদার ভয়ে উদূখলের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে অতিশয় বেগে পলায়ন করেছিলেন ও মা যশোদাও যাঁর পিছনে ধাবিত হয়ে পৃষ্ঠদেশ ধরে ফেলেছিলেন, সেই পরমেশ্বররূপী শ্রীদামোদরকে প্রণাম করি।
রুদন্তং মুহুর্নেত্রযুগ্মং মৃজন্তং
করাম্ভোজযুগ্মেন সাতঙ্কনেত্রম্।
মুহুঃশ্বাসকম্প-ত্রিরেখাঙ্ককণ্ঠ-
স্থিত-গ্রৈব-দামোদরং ভক্তিবদ্ধম্ ॥ ২ ॥
অনুবাদ: যিনি মায়ের হাতে লাঠি দেখে কাঁদতে কাঁদতে দু’খানি পদ্মহস্ত দিয়ে বারবার চোখদুটিকে রগড়াচ্ছেন, যাঁর চোখে ভয়ের লক্ষণ ফুটে উঠেছে ও ভয়ের কারণে মুহুর্মুহুঃ শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে, শ্বাস-প্রশ্বাসে কম্পন অনুভূত হচ্ছে, যাঁর কণ্ঠস্থ মুক্তাহার দোদুল্যমান হচ্ছে এবং যাঁর উদরে দড়ির বাঁধন রয়েছে, সেই ভক্তিবদ্ধ শ্রীদামোদরকে বন্দনা করি।
ইতীদৃকস্বলীলাভিরানন্দকুণ্ডে
স্বঘোষং নিমজ্জন্তমাখ্যাপয়ন্তম্।
তদীয়েশতজ্ঞেষু ভক্তৈর্জিতত্ত্বং
পুনঃ প্রেমতস্তং শতাবৃত্তি বন্দে ॥ ৩ ॥
অনুবাদ: যিনি এইরকম বাল্যলীলার দ্বারা সমস্ত গোকুলবাসীকে আনন্দ সরোবরে নিমজ্জিত করেন এবং যিনি ভগবদৈশ্বর্য-জ্ঞান-পরায়ণ ভক্তসমূহে ‘আমি কর্তৃক পরাজিত অর্থাৎ ভক্তের বশীভূত’- এই তত্ত্ব প্রকাশ করেন, সেই ঈশ্বররূপী দামোদরকে আমি প্রেম-সহকারে শত শতবার বন্দনা করি।
বরং দেব ! মোক্ষং ন মোক্ষাবধিং বা
ন চান্যং বৃণেহহং বরেশাদপীহ।
ইদন্তে বপুর্নাথ! গোপালবালং
সদা মে মনস্যাবিরাস্তাং কিমন্যৈঃ ॥ ৪ ॥
অনুবাদ: হে দেব! তুমি সবরকম বরদানে সমর্থ হলেও আমি তোমার কাছে মোক্ষ বা মোক্ষের পরাকাষ্ঠাস্বরূপ শ্রীবৈকুন্ঠলোক বা অন্য কোন বরণীয় বস্তু প্রার্থনা করি না, তবে আমি কেবল এই প্রার্থনা করি যে, এই বৃন্দাবনস্থ তোমার ঐ পূর্ববর্ণিত বালগোপালরূপী শ্রীবিগ্রহ আমার মানসপটে সর্বদা আবির্ভূত হোক। হে প্রভু! যদিও তুমি অন্তর্যামীরূপে সর্বদা হৃদয়ে অবস্থান করছ, তবুও তোমার ঐ শৈশব লীলাময় বালগোপাল মূর্তি সর্বদা সুন্দররূপে আমার হৃদয়ে প্রকটিত হোক।
ইদন্তে মুখাম্ভোজমব্যক্তনীলৈ-
র্বৃতং কুন্তলৈঃ স্নিগ্ধ-রক্তৈশ্চ গোপ্যা।
মুহুশ্চুম্বিতং বিম্ব-রক্তাধরং মে
মনস্যাবিরাস্তামলং লক্ষলাভৈঃ ॥ ৫ ॥
অনুবাদ: হে দেব! তোমার যে বদন-কমল অতীব শ্যামল, স্নিগ্ধ ও রক্তবর্ণ কেশসমূহে সমাবৃত এবং তোমার যে বদনকমলস্থ বিম্বফলসদৃশ রক্তবর্ণ অধর মা যশোদা বারবার চুম্বন করছেন, সেই বদনকমলের মধুরিমা আমি আর কি বর্ণন করব? আমার মনোমধ্যে সেই বদন-কমল আবির্ভূত হোক। ঐশ্বর্যাদি অন্যবিধ লক্ষ লক্ষ লাভেও আমার কোন প্রয়োজন নেই- আমি অন্য আর কিছুই চাই না।
নমো দেব দামোদরানন্তবিষ্ণো
প্রসীদ প্রভো দুঃখজালাব্ধিমগ্নম্।
কৃপাদৃষ্টি-বৃষ্ট্যাতিদীনং বতানু-
গৃহানেশ মামজ্ঞমেধ্যক্ষি দৃশ্যঃ ॥ ৬ ॥
অনুবাদ: হে দেব! হে দামোদর! হে অনন্ত! হে বিষ্ণু! আমার প্রতি প্রসন্ন হও। হে প্রভু! হে ঈশ্বর! আমি দুঃখপরম্পরারূপ সমুদ্রে নিমগ্ন হয়ে একেবারে মরণাপন্ন হয়েছি, তুমি কৃপাদৃষ্টিরূপ অমৃত দ্বারা আমার প্রাণ রক্ষা কর।
কুবেরাত্মজৌ বদ্ধমূর্ত্যৈব যদ্বৎ
ত্বয়া মোচিতৌ ভক্তিভাজৌ কৃতৌ চ।
তথা প্রেমভক্তিং স্বকাং মে প্রযচ্ছ
ন মোক্ষে গ্রহোমেহস্তি দামোদরেহ ॥ ৭ ॥
অনুবাদ: হে দামোদর! তুমি যেভাবে গো অর্থাৎ গাভী-বন্ধন রজ্জুদ্বারা উদূখলে বদ্ধ হয়ে শাপগ্রস্থ নলকুবের ও মণিগ্রীব নামক দুই কুবের পুত্রদেরকে মুক্ত করে তাদের ভক্তিমান্ করেছ, আমাকেও সেইরূপ প্রেমভক্তি প্রদান কর।
নমস্তেহস্তু দাম্নে স্ফুরদ্দীপ্তি-ধাম্নে
ত্বদীয়োদরায়াথ বিশ্বস্য ধাম্নে।
নমো রাধিকায়ৈ ত্বদীয়-প্রিয়ায়ৈ
নমোহনন্তলীলায় দেবায় তুভ্যম্ ॥ ৮ ॥
অনুবাদ: হে দেব! তোমার তেজোময় উদরবন্ধন-রজ্জুতে এবং বিশ্বের আধার-স্বরূপ তোমার উদরে আমার প্রণাম নিবেদন। তোমার প্রিয়তমা শ্রীরাধিকাকে আমি প্রণাম নিবাদন করি এবং অনন্তলীলাময় দেব তোমাকেও প্রণতি নিবেদন করি।
◼️ প্রতিদিন শ্রীদামোদরাষ্টকম্ পাঠ করে “শ্রীশ্রী-রাধাদামোদর” কে ঘৃত প্রদীপ, অথবা তুলসী কাষ্ট প্রদীপ। নিবেদন করতে হয়।
অষ্টকম্ পাঠ করতে সম্ভব না হলে (হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র) কীর্তন করে দীনদান করা যাবে।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
► আরও পড়ুন: দামোদর মাসে দীপদান মাহাত্ম্য (Deepdan Mahatmya)✸কার্তিক মাহাত্ম্য (Kartik Mahatmya)
► আরও পড়ুন: দামোদর কে?✸দামোদর লীলা (দামবন্ধন লীলা✤Damodar Lila)মাহাত্ম্য✸