ভীষ্মপঞ্চক ব্রত (Bhishma Panchak Vrat) কি, কখন ও কিভাবে করবেন? এই প্রসঙ্গে স্কন্দপুরাণের বিষ্ণুখণ্ডে, কার্তিকমাস মাহাত্ম্যে ৩২তম অধ্যায়ের বর্ণনা করা হয়েছে। ভীষ্মদেব যেহেতু আজন্ম ব্রহ্মচারিণে, আমরা তার জন্য তর্পণ করছি তার কোন সন্তান নেই, তিনি কখনো বিবাহ করেননি। তিনি গঙ্গা মাতার সন্তান। তাই যখন ভক্তরা গঙ্গায় যান, গঙ্গাদেবী প্রসন্ন হন যে তার পুত্র সম্মানপ্রাপ্ত হচ্ছেন। এভাবে এই ব্রথের ফলে মাতাগঙ্গা, মহাত্মা ভীষ্মদেব এবং সর্বোপরি পরমেশ্বর ভগবান প্রসন্ন হন। আর তাকে প্রসন্ন করাই সমস্ত যজ্ঞ, দান, ব্রত বা তপস্যার মুখ্য উদ্দেশ্য।
◼️ ভীষ্মপঞ্চক ব্রত কি? ◼️
🕉️ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অভিন্ন প্রকাশ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদপ্রবর ও গৌড়ীয় আচার্যবর্গের অন্যতম শ্রীল সনাতন গোস্বামীপাদ শ্রীশ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থে (১৬/৪৩৪) লিখেছেন ━
❝ আরভ্যৈকাদশীং পঞ্চ দিনানি ব্রতমাচরেৎ।
ভগবৎপ্রীতয়ে ভীষ্মপঞ্চকং যদি শক্নুয়াৎ॥ ❞
━━┉┈┈(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস-১৬/৪৩৪)
অনুবাদ: “কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী হতে আরম্ভ করে পূর্ণিমা পর্যন্ত এই পাঁচদিন শ্রীভগবানের প্রীতির জন্য (যদি সমর্থ হয়) ভীষ্মপঞ্চক ব্রত আচরণ করবেন।”
🕉️ চাতুর্মাস্যের শেষ মাস অর্থাৎ কার্তিক মাস তথা দামোদর মাসের বিশেষ খাদ্যতালিকা থাকে, সেই অনুযায়ী কেউ পঞ্চগব্য অথবা ফলমূল অথবা হবিষ্যান্ন গ্রহণ করতে পারেন। ভগবান এই ব্রত অনুষ্ঠানকারী ব্যক্তিকে ভগবৎপ্রেম প্রদান করেন।
❝ সর্বপাপবিনির্মুক্তঃ প্রাপ্তকামো হরিং ব্রজেৎ॥ ❞
━━┉┈┈(গরুরপুরাণ, পূর্ব খণ্ড ১২৩/২)
অনুবাদ: বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুর প্রীতিপ্রদ বলে একে বিষ্ণুপঞ্চকও বলা হয়।
সর্ববিধ বার্ষিক ব্রতের মধ্যে চাতুর্মাস্য ব্রত প্রধান, আর চাতুর্মাস্য ব্রত অপেক্ষা ভীষ্ণপঞ্চক ব্রত সর্বপ্রধান।
◼️ ভীষ্মপঞ্চক ব্রতের উপবাস কেন পালন করা হয়? ◼️
🕉️ ভীষ্মপঞ্চক ব্রত প্রসঙ্গে স্কন্দপুরাণের বিষ্ণুখণ্ডে, কার্তিকমাসমাহাত্ম্যে ৩২ তম অধ্যায়ের বর্ণনা অনুসারে ━ সত্যযুগের আদিতে ভৃগু, গর্গ ও বশিষ্ঠাদি ঋষিগণ এবং ত্রেতাযুগের প্রথমে অম্বরীষ ও ভোগ প্রভৃতি নৃপগণ চাতুর্মাস্যের শেষ মাস অর্থাৎ, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে এই ব্রতাচরণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে মহারাজ শান্তনু পুত্র ভীষ্ম ভগবান বাসুদেবের কাছ থেকে এই ব্রত প্রাপ্ত হন।
🕉️ ভীষ্মদেব হলেন মা গঙ্গা ও রাজা শান্তনুর পুত্র। তিনি পাণ্ডবদের জ্যেষ্ঠ পিতামহ, কুরু রাজবংশের মহান রাজা ভরতের বংশধর। মহাভারত এবং শ্রীমদভাগবতম অনুসারে, ভীষ্মদেব কুরু রাজবংশের সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন এবং সারা জীবন ব্রহ্মচারী থাকার ব্রত নিয়েছিলেন, যা তিনি সারা জীবন অনুসরণ করেছিলেন। গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম অনুসারে, ভীষ্মদেব হলেন বারো মহাজনের একজন। যৌবনে তিনি বর পেয়েছিলেন যে তাঁর মৃত্যু তাঁর ইচ্ছানুযায়ী হবে।
মহাভারতের যুদ্ধ শেষে গঙ্গার পুত্র ভীষ্ম যখন সূর্যের উত্তরায়ণের অপেক্ষায় তীরের শয্যায় শয়ন করছিলেন, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের নিয়ে তাঁর কাছে গেলেন এবং যুধিষ্ঠির মহারাজ ভীষ্ম পিতামহের কাছে প্রার্থনা করলেন যে ━ হে পিতামহ, আপনি আমাদের সাহায্য করুন রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে পরামর্শ দিন।
🕉️ অতঃপর মহাত্মা ভীষ্ম শরশয্যায় শয়ণ করেই পরপর রাজধর্ম, বর্ণধর্ম, মোক্ষধর্ম, দানধর্ম প্রভৃতি প্রচার করেন, পাণ্ডবগণ ভীষ্মভাষিত সেই ধর্মতত্ত্ব শ্রবণ করেন, এমনকি কৃষ্ণও তা শ্রবণ করেন। তখন ভীষ্মভাষিত ধর্ম শ্রবণে মনে মনে প্রীত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেন ━“হে ভীষ্ম! হে গাঙ্গেয়! তুমি ধন্য, তুমি ধন্য, কেননা, তুমি কার্তিক শুক্লপক্ষের একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত পাঁচ দিনে আমাদের শ্রেষ্ঠ ধর্ম শ্রবণ করিয়েছ তাতে আমি খুবই খুশি। এই কারণে তোমার স্মরণের উদ্দেশ্যে প্রতি বৎসর ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত শুরু হবে এবং এই পাঁচ দিনে যারা ভগবান শ্রীহরির আরাধনা করবে এবং ভক্তিমূলক সেবায় নিয়োজিত থাকবে তাদের আমি শুদ্ধ ভক্তির বর প্রদান করব।
তুমি কার্তিক মাসের একাদশী দিবসে জল যাঞ্চা করেছিলে, অর্জুন বানবেগে গঙ্গাজল আনায়নপূর্বক তোমার শরীর শীতল করেছে। এতএব, তদবধি সকলেই কার্তিকের শুক্লা একাদশী হতে পূর্ণিমা পর্যন্ত অর্ঘ্যদানে তোমার সন্তোষ সাধন করবে। অতএব, সকলেই সর্ব প্রযত্নে আমার প্রীতিপ্রদ এই ভীষ্মপঞ্চক নামক ব্রত আচারণ করুক।
কার্তিক ব্রত করে যে নর এই ভীষ্মপঞ্চক ব্রত না করে, তার সমগ্র কার্তিক ব্রত বিফল হয়ে থাকে। মানব যদি কার্তিক ব্রত করতে অসমর্থ হয় তবে কেবল ভিষ্মপঞ্চক করে সমগ্র কার্তিকের ফল লাভ করতে পারে।”
পদ্মপুরাণের উত্তরখণ্ডে (১২৪/২৯-৩০) বলা হয়েছে ━
❝ ভীষ্মেণৈতদ্যতঃ প্রাপ্তং ব্রতং পঞ্চদিনাত্মকম্।
সকাশাদ্বাসুদেবস্য তেনোক্তং ভীষ্মপঞ্চকম্॥ ❞
অনুবাদ: “ভগবান বাসুদেবের নিকট থেকে ভীষ্মদেব এই পঞ্চদিনাত্মক ব্রত প্রাপ্ত হয়েছেন তাই তা ভীষ্মপঞ্চক ব্রত নামে অভিহিত।”
পাণ্ডবরা যুদ্ধে জয়লাভ করার পর, ভীষ্মদেব অবশেষে শান্তি লাভ করেন। শ্রীকৃষ্ণ পার্থ-সারথির ভূমিকা পালন করলেও তিনি প্রকাশিত ভগবানের দৈব গুণ লক্ষ্য করেছিলেন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পদ্মের মতো মুখ দেখে নিজের দেহ ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। এটি ভগবান কৃষ্ণের প্রতি তার অটল বিশ্বাস এবং ভক্তি দেখায়, যিনি জীবনের সর্বোচ্চ পরিপূর্ণতা।
শ্রীল সুত গোস্বামী পদ্মপুরাণের উত্তরাখণ্ডে বলেছেন যে, “যে ব্যাক্তি বা ভক্ত কার্তিক মাসের শেষ পাঁচ দিনে এই উপবাস পালন করবে তিনি জীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করবে এবং বড় বড় পাপ থেকে মুক্ত হবে। যে ব্যাক্তি বা ভক্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে এই ব্রত পালন করেন তিনি অবশ্যই মুক্তি লাভ করবে।”
ভীষ্ম পঞ্চকের শুভ দিনে ভগবানের সেবার উদ্দেশ্যে দান করলে শ্রী শ্রী রাধা মাধবের আশীর্বাদ ও কৃপা লাভ করেন।
কার্তিক মাসের শেষ পাঁচ দিন অর্থাৎ ভীষ্ম পঞ্চক তিথিতে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা উচিত তাই এই তিথি ‘ভীষ্ম পঞ্চক’ বা ‘বিষ্ণু পঞ্চক’ নামে পরিচিত।
❝ ব্রতানাং মুনিশার্দ্দূল প্রবরং বিষ্ণুপঞ্চকম্ ।
সমস্মিন যঃ পূজয়েদ্ভক্ত্যা শ্রীহরিং রাধয়া সহ ॥
গন্ধপুষ্পের্ধূপদীপৈর্বস্ত্রৈর্নানাবিধৈঃ ফলৈঃ ।
স যাতি বিষ্ণুসদনং সর্ববিবর্জিতঃ॥ ❞
━━┉┈┈(পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড ৪৮/৩-৪)
অনুবাদ: বিষ্ণুপঞ্চক ব্রত ব্রতসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ট (প্রবর)। সেই সময় যিনি ভক্তিসহকারে গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, বস্ত্র ও নানাবিধ ফল দ্বারা শ্রীমতীরাধাসহ শ্রীহরিকে অর্চনা করেন, তিনি সর্বপাপ বিবর্জিত হয়ে বিষ্ণুলোকে গমন করেন।”
◼️ ভীষ্মপঞ্চক ব্রত সময়সূচী ও পত্র-পুষ্প অর্পণ বিধি ◼️
🕉️কার্তিক মাসের শেষ ৫ দিন ‘ভীষ্ম পঞ্চক’ বা ‘বিষ্ণু পঞ্চক’ নামে পরিচিত। এই ৫ দিনের উপবাস উত্থান একাদশী তিথি থেকে শুরু হয়ে কার্তিক পূর্ণিমায় শেষ হয়। পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে যে যে কোন ভক্ত এই ৫ দিনের উপবাস পালন করে এই তপস্যার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং ভগবান কৃষ্ণের প্রতি বিশুদ্ধ ভক্তি লাভ করে।
কেউ যদি চাতুর্মাস্য ব্রত চার মাস ধরে পালন না করতে পারেন তবে তিনি ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত ৫ দিন ব্যাপী পালন করলেই চাতুর্মাস্য ব্রতের সুফল পেতে পারেন।
🕉️ ভীষ্মপঞ্চক ব্রতটি 12 নভেম্বর 2024 (মঙ্গলবার) উত্থান একাদশীর দিন থেকে শুরু হবে এবং 15 নভেম্বর 2024 (শুক্রবার) রাসপূর্ণিমার দিন পর্যন্ত ৪দিন ব্যাপী চলবে (এই দিনটিই হল চাতুর্মাস্যের শেষ দিন এবং দামোদর মাসের শেষ দিন)। এই ব্রত রাসপূর্ণিমার দিন সূর্যাস্ত (অথবা চন্দ্রোদয়) পর্যন্ত সম্পন্ন হয়। সাধারণত একাদশীতে সম্পূর্ণ উপবাস এবং তারপর পরবর্তী দিনগুলিতে ফলমূল গ্রহণ করতে বলা হয়। অথবা কেউ সবকটি দিনই ফলমূল গ্রহণ করতে পারেন।
🕉️শাস্ত্র অনুযায়ী ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন পুষ্প নিবেদনের নিয়ম রয়েছে। এ প্রসঙ্গে গরুড়পুরাণ, পূর্ব খণ্ড ১২৩ অধ্যায়ে (৮-৯) বলা হয়েছে-
❝ প্রথমেহহ্নি হরেঃ পাদৌ যজেৎ পদ্মৈর্দ্বিতীয়কে ।
বিল্বপত্রৈর্জানুদেশেং নাভিং গন্ধেন চাপরে॥
সন্ধৌ বিল্বজবাভিশ্চ পঞ্চমেহহ্নি শিরোহর্চয়েৎ ৷
মালত্যা ভূমিশায়ী স্যদেগাময়ং প্রাশয়েৎ ক্রমাৎ॥ ❞
অনুবাদ:
◉ ১ম দিন (একাদশীতে) ━ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণকমলে (পাদপদ্মে) পদ্মফুল নিবেদন
◉ ২য় দিন (দ্বাদশীতে) ━ভগবানের জানুতে (ঊরুতে) বেলপাতা নিবেদন
◉ ৩য় দিন (ত্রয়োদশীতে) ━ ভগবানের নাভিতে (নাভিকমলে) গন্ধদ্রব্য (চন্দন, অগুরু, কর্পূর) নিবেদন
◉ ৪র্থ দিন (চতুর্দশীতে) ━ ভগবানের কাঁধে (স্কন্ধদেশে) সাদা জবা ও বেল পাতা নিবেদন
◉ ৫ম দিন (পূর্ণিমা তিথিতে) ━ ভগবানের মস্তকে (শিরোদেশে) মালতীফুল অর্পণ
যদি কখনো দুটো তিথি একদিন পড়ে, তবে ঐদিন দুদিনের উদ্দিষ্ট ফুলগুলো একই দিনে নিবেদন করতে পারেন। আর যদি কারো নিকট ফুলগুলো না থাকে তবে ভগবানের নির্ধারিত স্থানে নির্ধারিত ফুলগুলো কেউ মানসিকভাবে নিবেদন করতে পারেন।
*** ভীষ্মপঞ্চক ব্রত ২০২৪ সালে ৫ দিনের পরিবর্তে ৪ দিনে সম্পন্ন হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে দিন অনুযায়ী সময়সীমা দেওয়া হল –
✤ ১২ই নভেম্বর (১ম দিন – একাদশী) ━ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে পদ্মফুল নিবেদন (বিকেল ৪:৪ এর মধ্যে)
✤ ১৩ই নভেম্বর (২য় দিন – দ্বাদশীতে) ━ভগবানের ঊরুতে বেলপাতা নিবেদন (দুপুর ১ টার মধ্যে)
✤ ১৪ই নভেম্বর (৩য় দিন – ত্রয়োদশীতে) ━ ভগবানের নাভিতে গন্ধদ্রব্য (চন্দন, অগুরু, কর্পূর) নিবেদন (সকাল ৯:৪৩ এর মধ্যে)
✤ ১৪ই নভেম্বর (৪র্থ দিন – চতুর্দশীতে) ━ ভগবানের কাঁধে সাদা জবা ও বেল পাতা নিবেদন (সকাল ৯:৪৩ এর পরে)
✤ ১৫ই নভেম্বর (৫ম দিন – পূর্ণিমা তিথিতে) ━ ভগবানের মস্তকে মালতীফুল অর্পণ করবেন (সকাল ৬:১৯ এর পরে)।
🕉️ উল্লেখ্য যে, যারা ভীষ্মপঞ্চ ব্রত হব্যিষন্ন খেয়ে করবেন, তারা উত্থান একাদশী পারন পঞ্চ রবিশষ্য এক দানা গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু যারা ফলমূলের দ্বারা ব্রত করবেন তারা ওই সময়ের মধ্যে একটু জল মুখে নিয়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে পারন করবেন। অবশ্যই একাদশীর সকালে স্নান তিলক আচমণ করে হাতে জল নিয়ে ভগবানের কাছে সংকল্প করবেন।
◼️ ভীষ্মপঞ্চক সংকল্প মন্ত্র ◼️
(হাতে জল নিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে মাথায় সিঞ্চন করুন)
❝ ওঁ অপবিত্রঃ পৰিত্রো বা সৰ্ব্বাবস্থাং গতোঽপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ॥ ❞
✸ শ্রীগুরু প্রণাম মন্ত্র ✸
=================
❝ ওঁ অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জনশলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥ ❞
✸ শ্রীল প্রভুপাদ প্রণাম মন্ত্র ✸
=================
❝ নমো ওঁবিষ্ণুপাদায় কৃষ্ণপ্রেষ্ঠায় ভূতলে ।
শ্রীমতে ভক্তিবেদান্ত স্বামীনিতি নামিনে॥
নমস্তে সারস্বতে দেবে গৌরবাণী প্রচারিণে ৷
নির্বিশেষ-শূন্যবাদী পাশ্চাত্যদেশ-তারিণে॥ ❞
✸ শ্রীকৃষ্ণ প্রণাম মন্ত্র ✸
=================
❝ হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপথে ।
গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহস্তুতে॥১॥ ❞
❝ ওঁ নমো ব্রহ্মণ্য দেবায় গো-ব্রহ্মণ্য হিতায় চ ৷
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥২॥ ❞
❝ নমো নলিন-নেত্রায় বেণু বাদ্য-বিনোদিনে ৷
রাধাধর-সুধাপান শালিনে বনমালিনে ॥৩॥ ❞
✸ শ্রীমতি রাধারানী প্রণাম মন্ত্র ✸
========================
❝ তপ্ত-কাঞ্চন-গৌরাঙ্গি রাধে বৃন্দাবনেশ্বরি।
বৃষভানুসুতে দেবি প্রণমামি হরিপ্রিয়ে॥ ১॥ ❞
❝ রাধাং রাসেশ্বরীং রম্যাং গোবিন্দ-মোহিনীং পরাং ।
বৃষভানু-সুতাং দেবীং নমামি শ্রীহরি-প্রিয়াং॥
মহাভাব-স্বরূপা ত্বাং কৃষ্ণপ্রিয়া-বরীয়সী ৷
প্রেমভক্তি-প্রদে! দেবী! রাধিকে! ত্বাং নমাম্যহং॥ ২॥ ❞
✸ শ্রীপঞ্চতত্ত্ব প্রণাম মন্ত্র ✸
========================
❝ পঞ্চতত্ত্ব আত্মকম্ কৃষ্ণং ভক্তরূপ স্বরূপকম্ ।
ভক্ত অবতারম্ ভক্তাখ্যাং নমামি ভক্ত শক্তিকম্॥ ❞
✸ শ্রীনৃসিংহদেব প্রণাম মন্ত্র ✸
========================
❝ ওঁ উগ্রং বীরং মহাবিষ্ণুং জ্বলন্তং সর্বতোমুখম্।
নৃসিংহং ভীষণং ভদ্রম্ মৃত্যোর্মৃত্যুং নমাম্যহম্॥ ❞
✸ সংকল্প ✸
==============
(হাতে জল নিয়ে সংকল্প করুন)
হরি ওঁ তৎসৎ!
ওঁ গোবিন্দ! ওঁ গোবিন্দ! ওঁ গোবিন্দ!
অদ্য শ্রীশ্বেতবরাহ কল্পে বৈবশ্বত মন্বন্তরে অষ্টাবিংশতি কলিযুগে প্রথমপাদে, জম্বুদ্বীপে, ভারতবর্ষে, গঙ্গায়াং পূর্বভাগে, নবদ্বীপান্তর্গত শ্রীমায়াপুরে দক্ষিণায়নে কার্তিক মাসে শুক্লপক্ষে একাদশী -দ্বাদশী-ত্রয়োদশী-চতুর্দশী-পূর্ণিমা তিথৌ অচ্যুত গোত্রস্য নাম ……………. শ্রীকৃষ্ণপ্রীতিকাম পঞ্চদিনাত্মক ভীষ্মপঞ্চক ব্ৰতম্ অহং করিষ্যে।
✸ আচমন বিধি ✸
=================
ওঁ বিষ্ণু! ওঁ বিষ্ণু! ওঁ বিষ্ণু!
❝ ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্।
তদ্বিপ্রাসো বিপন্যবো জাগৃবাং সঃ সন্ধিতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদং॥ ❞
✸ শ্রীপঞ্চতত্ত্ব মহামন্ত্র ✸
===================
❝ (জয়) শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু-নিত্যানন্দ ।
শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌরভক্তবৃন্দ॥ ❞
✸ হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র ✸
===================
❝ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥ ❞
◼️ ভীষ্মপঞ্চক আহার বিধি ◼️
‘হরিভক্তি বিলাসের’ ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত-এ একজনকে নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে ভগবান কেশবের সন্তুষ্টির জন্য নিজের সামর্থ্য এবং ক্ষমতা অনুসারে উপবাস পালন করতে বলা হয়েছে।
ভীষ্মপঞ্চক ব্রত ব্যক্তির সামর্থ অনুসারে বিভিন্ন স্তরে উদযাপন করা যায়- কথা পদ্মপুরাণে (সর্গখণ্ড ৪৮/১৫) বলা হয়েছে-
❝ এবং কর্ত্তুমশক্তে ষঃ ফলমূলঞ্চ ভোজনম্ ।
কুর্য্যাদ্ধবিষ্যং বা বিপ্র যথোক্তবিধিনা হ বৈ॥ ❞
অনুবাদ: সাধারণত একাদশীতে সম্পূর্ণ উপবাস এবং তার পরবর্তী চারদিন ফলমূল গ্রহণ করতে বলা হয় অথবা কেউ পাঁচদিনই ফলমূল গ্রহণ করতে পারেন। ভক্তরা তাদের সুবিধামতো নিম্নোক্ত স্তরগুলোর যে কোন একটি অনুসরন করতে পারেন, যেন তাদের সাধারণ ভক্তিমূলক সেবা ও দৈনন্দিন সাধনায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করে।
ভীষ্ম পঞ্চক উপবাসের ৩টি স্তর বা শ্রেণী রয়েছে ━
✸ ১ম স্তর – পঞ্চগব্য গ্রহণ ✸
========================
৫ দিন সম্পূর্ণ উপবাস। সেই সঙ্গে পঞ্চগব্যের একেকটি একেক দিনে খুবই সামান্য পরিমানে গ্রহণ করা যেতে পারে (উৎস: গরুড় পুরাণ, পূর্বখণ্ড ১২৩/১০; পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড ৪৮/১১-১৪; স্কন্দ পুরাণ, বিষ্ণুখণ্ড- কার্তিক মাহাত্ম্য ৩২/৪৬, ৪৭, ৫০)।
◉ ১ম দিনঃ- গোময়
◉ ২য় দিনঃ- গোমূত্র
◉ ৩য় দিনঃ- দুধ (ক্ষীর)
◉ ৪র্থ দিনঃ- দধি
◉ ৫ম দিনঃ- গোময়, গোমূত্র, দুগ্ধ, দধি ও ঘিয়ের মিশ্রণে তৈরি পঞ্চগব্য।
✸ ২য় স্তর – ফলমূল গ্রহণ ✸
========================
যদি কেউ ১ম স্তর অনুসরণ করতে না পারেন, তবে ফলমূল গ্রহণ করা যেতে পারে। অধিকাংশ ব্যক্তি ফলমূল গ্রহণ করেন। যেসব ফলে প্রচুর বীজ রয়েছে যেমন – পেয়ারা, বেদানা, পেঁপে, শসা, তরমুজ, আতা প্রভৃতি বর্জন করা উচিত। বাকি ফল যেমন আপেল, কলা, নাশপাতি, আঙ্গুর, আম, কমলালেবু, লেবু, লেবুর রস, মাল্টা (কমলালেবু জাতীয় ফল), কূল, পানিফল, বাদাম, আখরোট, কাজুবাদাম, কিসমিস ও খেজুর খাওয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন ফলের মতো এগুলো ফল হিসেবে বিবেচিত হয়। আখ, আখের রস এবং ইক্ষুদ্রব্য যেমন মিছরি গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু গুড় অনুমোদিত নয়।
আলু, কাঁচকলা বা মিষ্টি আলু সেদ্ধ করে গ্রহণ করা যেতে পারে। স্বাদের জন্য সৈন্ধব লবণ (rock salt) ব্যবহার অনুমোদিত। তবে দুধ বা দুগ্ধজাত কোন দ্রব্য গ্রহন করা যাবে না। নারকেল ও নারকেলের জল গ্রহণ করা যাবে।
✸ ৩য় স্তর – হবিষ্যান্ন গ্রহণ ✸
========================
যদি কেউ ২য় স্তর পালনে অসমর্থ হন, তবে হবিষ্যান্ন গ্রহণ করতে পারেন। গৌড়ীয় আশ্চর্যবর্গের অন্যতম শ্রীল সনাতন গোস্বামীকৃত শ্রীশ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থের ১৩ অধ্যায়ের ১০-১৩ নং শ্লোকে হবিষ্যান্নের উপাদান উল্লেখ করা হয়েছে:
নিম্নোক্ত উপাদানগুলো হবিষ্যান্ন তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে —
হবিষ্য সাধারণত আতপ চাল এবং মুগ ডাল দিয়ে তৈরি করা হয়। যারা একাদশী থেকে একাদশী পর্যন্ত চাতুর্মাস্য পালন করেছেন, নিয়মানুযায়ী তাদের কার্তিক মাসের উত্থান একাদশী পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে, তাই তারা তাদের হবিষ্যে মুগ ডাল গ্রহণ করতে পারেন। তবে অধিকাংশ ভক্তগণ পূর্ণিমা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চাতুর্মাস্য ব্রত পালন করেন, তাই ভীষ্মপঞ্চক এর হবিষ্যে মুগ ডাল অনুমোদিত হবে না এবং সকল প্রকার তেল পরিত্যাজ্য।
নিম্নলিখিত উপাদানগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে :— | |
◉ আতপ চাল ◉ ঘি ◉ সৈন্ধব লবণ (Rock salt) ◉ কাঁচকলা | ◉ কালা শাক (সাদা পাট; Corchorus capsularis) ◉ গম ◉ বার্লি ◉ আলু |
এছাড়া নিম্নোক্ত ফলসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে :— (স্কন্দপুরাণে নাগরখণ্ডে অবশ্যই একটি বীজের অথবা কম বীজপূর্ণ ফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে) | |
◉ আম ◉ কাঁঠাল ◉ লাবালী ফল (Labali fruit; Phyllanthus acidus; Star Gooseberry; অড়বরই) ◉ কেয়া ব্যতীত সকল মূল ◉ শুকনো পিপুল (Pippalii; Piper longum; Long Pepper) ফল মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় | ◉ হরিতকি ◉আমলকি ◉ নারঙ্গ (Naranga; কমলা) ◉ ইক্ষুদ্রব্য (গুড় ব্যতীত) ◉ ননীপূর্ণ গোদুগ্ধ (মাখনযুক্ত গরুর দুধ) ◉ নারিকেলের জল |
হবিষ্যান্নে বর্জনীয় দ্রব্যসমূহ :— (নিম্নবর্ণিত দ্রব্যগুলো হবিষ্যান্নের অন্তর্ভুক্ত হলেও তা কার্তিক মাসে বর্জন করতে বলা হয়েছে।) | |
◉ মুগ ডাল ◉ তিল তেল ◉ বেতো শাক ◉ সাত্ত্বিক শাক ◉ মূলা ◉ গাজর ◉ শিম | ◉ বরবটি ◉ বিনস্ ◉ সয়াবিন ◉ বেগুন ◉ মটরশুঁটি ◉ জিরা ◉ তেঁতুল |
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️ শ্রীগঙ্গা তর্পণবিধি ও মন্ত্রাবলি ◼️
এছাড়া একজন ব্যক্তির প্রতিদিন গঙ্গা বা গঙ্গার মত পবিত্র নদীতে স্নান ও তর্পণ করা উচিত। তর্পণ করার সময় উপবীতকে (পৈতাকে) পেছনদিকে নিয়ে (যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এবং উভয় হাতে জল নিতে হয়, মন্ত্র উচ্চারণ করা হয় এবং দুই হাত ডান দিকে ও নিচে কাত করে নিবেদন করা হয়, যাতে জল ডান বৃদ্ধাঙ্গুলির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যের নৈবেদ্য নিবেদনের একটি উপায়।
তবে, ভীষ্মপঞ্চক ব্রতের সময় তা ভীষ্মদেবের উদ্দেশ্য করা হয়, যা স্কন্দপুরাণের বিষ্ণুখণ্ডে কার্তিকমাসমাহাত্ন্যে (৩২/৯) বলা হয়েছে – ভীষ্মায়ৈতদ্দদাম্যর্ঘমাজন্মব্রহ্মচারিণে।
এই তর্পন সকল বর্ণের মানুষদেরই সমান অধিকার – তর্পণং সার্ববর্ণিকম্ (৩২/১০)।
নিম্নবর্ণিত মন্ত্রসমূহ উচ্চারণ করে স্নান করবেন —
✸ শ্রীগুরু প্রণাম মন্ত্র ✸
=================
❝ ওঁ অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জনশলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥ ❞
✸ শ্রীল প্রভুপাদ প্রণাম মন্ত্র ✸
======================
❝ নমো ওঁবিষ্ণুপাদায় কৃষ্ণপ্রেষ্ঠায় ভূতলে ।
শ্রীমতে ভক্তিবেদান্ত স্বামীনিতি নামিনে॥
নমস্তে সারস্বতে দেবে গৌরবাণী প্রচারিণে ৷
নির্বিশেষ-শূন্যবাদী পাশ্চাত্যদেশ-তারিণে॥ ❞
✸ তীর্থ আবাহন ✸
===============
❝ দেব দেব জগন্নাথ শঙ্খচক্র গদাধর।
দেহি বিষ্ণো মমানুজ্ঞাং-তব তীৰ্থাবগাহনে॥ ❞
✸ স্নান সংকল্প ✸
===============
বিষ্ণুরোম তৎসদদ্য (দামোদর) মাসে (শুক্লা) পক্ষে—তিথৌ
অচ্যুত গোত্রস্য …… দাস শ্রী কৃষ্ণপ্রীতি কামঃ শ্রীগঙ্গাদেবী প্রীত্যর্থে
অস্য ভাগীরথী গঙ্গায়াং প্রাতঃ স্নানমহং করিষ্যে।
✸ গঙ্গা প্রণাম ✸
================
❝ সদ্যঃ পাতক-সংহন্ত্রী সদ্যো দুঃখ-বিনাশিনী।
সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমা গতিঃ॥
নমস্তে দেবদেবেশি গঙ্গে ত্ৰিপথস গামিনী ৷
ত্রিলোচনে শ্বেতরূপে ব্রহ্মাবিষ্ণুশিবার্চ্চিতে॥ ❞
✸ গঙ্গানাম কীর্তনে গঙ্গার আগমণ – প্রার্থনা ✸
================================
❝ নন্দিনীতি চ তে নাম বেদেষু নলিনীতি চ।
দক্ষা-পৃথ্বি-বিরদগঙ্গা-বিশ্বকায়া-শিবামৃতা॥
বিদ্যাধরী-মহাদেবী তথা লোক-প্রসাদিনী ৷
ক্ষেমঙ্করী জাহ্নবী চ শান্তা শান্তিপ্রদায়িনী।
এতানি পূণ্যনামানি স্নানকালে প্ৰকীৰ্ত্তয়েৎ॥ ❞
✸ গঙ্গা জল স্পর্শ ✸
=================
❝ স্মৃতাসি গঙ্গে দৃষ্টাসি স্পর্শামি তাং মহেশ্বরীম্।
বিষ্ণুদেহ দ্রবাকারে প্রসীদে জগদম্বিকে॥ ❞
গায়ত্রী মন্ত্রে শিখা (মুণ্ডন মস্তকের পেছন দিকে মধ্যভাগে একগুচ্ছ কেশরাশি) মোচন (খোলা) করে গঙ্গায় প্রবেশ করবেন।
✸ স্নান মন্ত্র ✸
=============
❝ ওঁ বিষ্ণুপাদ প্রসুতাসি বৈষ্ণবী বিষ্ণুদেবতা।
ত্রাহি নঃ তেন সস্তস্মাদাজন্ম মরনান্তি কাৎ॥ ❞
(‘ওঁ নমঃ নারায়ন’ বলে ৪বার মাথায় জল দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের চরণ স্মরণ করে স্নান করা কর্তব্য)
স্নানান্তে শিখা বন্ধন করে তিলক ধারণ করবেন।
✸ তিলক ধারণ মন্ত্র ✸
=================
তিলক পরতে হয় এভাবে : বা হাতের তালুতে একটু জল নিন।
🕉️ জল শোধন মন্ত্র 🕉️
❝ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী নমর্দে সিন্ধো
কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু॥ ❞
অনুবাদ: হে গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নমৃদা, সিন্ধু ও কাবেরী; আপনারা এই জলে সন্নিবিষ্ট হোন।
এবার ডানহাতের এক টুকরো গোপীচন্দন নিয়ে বা হাতে ঘষতে থাকুন যতকক্ষণ না তা ধারণের উপযুক্ত হয়। তিলক ধারণ করার সময় শ্রীবিষ্ণুর বারটি নাম-সমন্বিত নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে হয় ┈
❝ ললাটে কেশবং ধ্যায়েন্নারায়ণমথোদরে।
বক্ষঃস্থলে মাধবং তু গোবিন্দং কণ্ঠ-কূপকে॥
বিষ্ণু দক্ষিণে কুক্ষৌ, বাহৌ চ মধুসূদনম।
ত্রিবিক্রিমং কন্ধরে তু, বামনং বামপাৰ্শ্বকে॥
শ্রীধরং বামবাহৌ তু হৃষীকেশঞ্চ কন্ধরে।
পৃষ্ঠে তু পদ্মনাভঞ্চ, কট্যাং দামোদরং ন্যসেৎ॥ ❞
অনুবাদ: “ললাটে তিলক ধারণ করার সময় কেশবের ধ্যান করা কর্তব্য। উদরে তিলক ধারণ করার সময় নারায়ণের ধ্যান করা কর্তব্য। বক্ষে তিলক ধারণ করার সময় মাধবের ধ্যান কর্তব্য এবং কণ্ঠে তিলক ধারণ করার সময় গোবিন্দের ধ্যান করা কর্তব্য। দক্ষিণ কুক্ষে তিলক ধারণ করার সময় বিষ্ণুর ধ্যান করা কর্তব্য। দক্ষিণ বাহুতে তিলক ধারণ করার সময় মধুসূদনের ধ্যান করা কর্তব্য। দক্ষিণ স্কন্ধে তিলক ধারণ করার সময় ত্রিবিক্রমের ধ্যান করা কর্তব্য এবং বাম কুক্ষে তিলক ধারন করার সময় বামনের ধ্যান করা কর্তব্য। বাম বাহুতে তিলক ধারণ করার সময় শ্রীধরের ধ্যান করা কর্তব্য, বাম স্কন্ধে তিলক ধারণ করার সময় হৃষীকেশের ধ্যান করা কর্তব্য; পৃষ্ঠের উপরিভাগে তিলক ধারণ করার সময় পদ্মনাভের ধ্যান করা কর্তব্য এবং পৃষ্ঠের নিম্নদেশে তিলক ধারণ করার সময় দামোদরের ধ্যান করা কর্তব্য।” —চৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যলীলাঃ ২০-২০২ তাৎপর্য হতে উদ্ধৃত।
শরীরের বিভিন্ন অংশে তিলকাঙ্কনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সুনিদিষ্ট মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়। নীচের ক্রম অনুসারে বিভিন্ন অঙ্গে তিলক ধারণ করতে হয় ┈
১। ললাটে – ওঁ কেশবায় নমঃ। ২। উদরে – ওঁ নারায়নায় নমঃ। ৩। বক্ষস্থলে – ওঁ মাধবায় নমঃ। ৪। কণ্ঠে – ওঁ গোবিন্দায় নমঃ। ৫। দক্ষিণ পার্শ্বে – ওঁ বিষ্ণবে নমঃ। ৬। দক্ষিণ বাহুতে – ওঁ মধুসূদনায় নমঃ। | ৭। দক্ষিণ স্কন্ধে – ওঁ ত্রিবিক্রমায় নমঃ। ৮। বাম পার্শ্বে – ওঁ বামনায় নমঃ। ৯। বাম বাহুতে – ওঁ শ্রীধরায় নমঃ। ১০। বাম স্কন্ধ – ওঁ হৃষীকেশায় নমঃ। ১১। পৃষ্ঠে – ওঁ পদ্মানাভায় নমঃ। ১২। কটিতে – ওঁ দামোদরায় নমঃ। |
ডানহাতের অনামিকা (চতুর্থ আঙুল) দিয়ে তিলক ধারণ করতে হয়। ডানহাতের বাহুতে তিলক দেওয়ার জন্য বাম হাতের অনামিকা ব্যবহার করতে হবে। সর্বাঙ্গে তিলকাঙ্কনের পর বাম হাতের তালুর অবশিষ্ট তিলক- মিশ্রন সামান্য জলে ধুয়ে ঐ জল “ওঁ বাসুদেবায় নমঃ” উচ্চারণপূর্বক মস্তকে দিতে হবে।
🕉️ আচমন 🕉️
তিলক করবার পর আচমন অবশ্য কর্তব্য।
ওঁ কেশবায় নমঃ , ওঁ নারায়ণায় নমঃ , ওঁ মাধবায় নমঃ
– এই তিনটি মন্ত্রে তিনবার আচমন করবেন।
আচমন শেষে পাঠ করবেনঃ
❝ ওঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ো দিবীব চক্ষুরাততম।❞
✸ গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে জল দান ✸
======================
❝ ওঁ গাং গঙ্গায়ৈ বিষ্ণুমুখায়ৈ শিবামৃতৈ
শান্তি প্রদান্যৈ নারায়ণ্যে নমস্তুতে। ❞
✤ ভীষ্মপঞ্চক তর্পন মন্ত্র (৩ বার) ✤
======================
শ্রী ভীষ্মদেবের উদ্দেশ্যে উত্তর দিকে মুখ করে নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে তিনবার ভীষ্মদেবের উদ্দেশ্যে তর্পন করা উচিত:
❝ ওঁ বৈয়াগ্রপদ্য গোত্রায় সংস্কৃতি প্রবরায় চ।
অপুত্রায় দদাম্যেতৎ সলিলং ভীষ্মবর্মনে॥ ❞
✤ ভীষ্মপঞ্চক অর্ঘদান মন্ত্র (৩ বার)✤
======================
❝ বসুনামাবতারায় শান্তানোরাত্মজায় চ।
অর্থং দদামি ভীষ্মায় আজন্ম ব্রহ্মচারিণে॥ ❞
✸ ভীষ্মপঞ্চক প্ৰণাম মন্ত্র ✤
======================
❝ ওঁ ভীষ্মঃ শান্তনবো বীরঃ সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ।
অভিরদ্ভিরবাপ্নোতু পুত্রপৌত্রৌচিতাং ক্রিয়াম্॥ ❞
✸ সূর্যোদেবের উদ্দেশ্যে প্রণাম মন্ত্র ✸
=========================
(সূর্যোদেবের উদ্দেশ্যে প্রণাম মন্ত্র বলে ৩ বার জল দান)
❝ ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং।
ধ্বান্তারিং সর্ব্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম ॥ ❞
✸ সমস্ত জীবের উদ্দেশ্যে জলদান✸
=========================
আব্রহ্ম স্তম্ভ জগতো ত্ৰিপত্তৈ নমঃ।
কারো প্রশ্ন হতে পারে যে, যাদের পিতা জীবিত, তারাও কি তর্পন করতে পারবে?
এক্ষেত্রে বুঝতে হবে যেহেতু এই ব্রতের তর্পণ ভীষ্মদেবের উদ্দেশ্যে করা হয়, কারো পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে নয়, সুতরাং যে কেউ তর্পন করতে পারেন।
আর যদি কেউ গঙ্গা স্নান ও তর্পন করতে যেতে না পারেন, অর্থাৎ, যদি কারো কাছাকাছি কোনো পবিত্র নদী না থাকে, তবে তিনি “ওঁ গঙ্গা, ওঁ গঙ্গা, ওঁ গঙ্গা” উচ্চারণ করে তথা গঙ্গা নাম স্মরণ করে এই পবিত্র নদীতে স্নান করার সুফল লাভ করতে পারেন, যা যে কোন স্থানেই করা সম্ভব।
❝ গঙ্গেতি নাম সংস্মৃত্য যস্তু কূপজলেহপি চ।
করোতি মানবং স্নানং গঙ্গাস্নানফলং লভেৎ ॥ ❞
━━┉┈┈(পদ্মপুরাণ, ক্রিয়াযোগসার, ৬/১১)
এছাড়া ভগবানের শ্রী বিগ্রহের উদ্দেশ্য প্রতিদিন প্রদীপ নিবেদন করা উচিত। ভীষ্ম পঞ্চক গোবিন্দের নিকট বিশেষ প্রিয় এবং এর ফলে কেউ অতি সহজে কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে পারেন।
◼️ ভীষ্মপঞ্চক পারণ মন্ত্র ◼️
পূর্ণিমার দিন তথাগত শেষদিন সূর্যাস্তের পর ব্রতের পারন করতে হবে। সেদিন বিকেলের প্রসাদ না পেলেই ভালো, কেননা কিছুক্ষণ পরেই ব্রত শেষ হবে এবং তখন মহাভোজ হবে। আগেরদিন প্রথমে পঞ্চগব্য পান করে তারপর আহার করবে।
❝ ততো নক্তং সমশ্নীয়াৎ পঞ্চগব্যপুরঃসরম্ । ❞
━━┉┈┈স্কন্দপুরাণ বিষ্ণুখণ্ডে, কার্তিকমাসমাহাত্ম্য (৩২/৫০)
কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, ভীষ্মপঞ্চক ব্রতকালে একাদশীর দিন উপবাস করার পর দিন কী খেয়ে পালন করা উচিত?
উত্তরে বলা যায় যে আমরা একটি সংকল্প করি যে আমরা ভীষ্মপঞ্চক পালন করছি। সংকল্প করার মাধ্যমে এই একাদশী পালনের দিনটিও স্বাভাবিকভাবেই ভীষ্মপঞ্চক ব্রতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। কেউ যদি হবিষ্যান্ন গ্রহণ করে প্রথম পালন করেন তবে একাদশীর পারন হিসেবে দ্বিতীয় দিন দানা গ্রহণ করতে পারেন। ১ম ও ২য় স্তরের ক্ষেত্রে যেহেতু পাঁচ দিন দানা গ্রহণ নিষিদ্ধ, সে ক্ষেত্রে ৫ম দিন ব্রতের পালন করবেন। তবে কেউ যদি সত্যিই এ ব্যাপারে চিন্তিত হন তবে তিনি একাদশীতে নির্জলা উপবাস করতে পারেন এবং জল গ্রহণ করে পারন করতে পারেন।
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
◼️ ভীষ্মপঞ্চক ব্রতের উদ্দেশ্য ◼️
যেহেতু উদ্দেশ্যটি হলো আমাদের নিয়মিত ভগবদ্ভক্তি চালিয়ে যাওয়া, এমন নয় যে, আমি উপবাস করছি, তাই আমি কিছু করব না। যাদের ডায়াবেটিস আছে অথবা যারা সম্পূর্ণ উপবাস করতে পারবেন না তারা হবিষ্যান্ন পেতে পারেন। যে ব্যাপারটি চিত্তাকর্ষক তাহলো ভীষ্মদেব তার পিতার কারণে বিবাহ না করার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
এর পেছনে এক বৃহৎ কাহিনী রয়েছে। ভীষ্মদেব যেহেতু আজন্ম ব্রহ্মচারিণে, আমরা তার জন্য তর্পণ করছি তার কোন সন্তান নেই, তিনি কখনো বিবাহ করেননি। তাই এটি আশ্চর্যজনক যে, কিভাবে সারা ভারত এবং সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ ভীষ্মদেবের জন্য ভীষ্মপঞ্চক করছেন এবং তার তর্পণ করছেন। কিন্তু তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনি গঙ্গা মাতার সন্তান। তাই যখন ভক্তরা গঙ্গায় যান, গঙ্গাদেবী প্রসন্ন হন যে তার পুত্র সম্মানপ্রাপ্ত হচ্ছেন। এভাবে এই ব্রথের ফলে মাতাগঙ্গা, মহাত্মা ভীষ্মদেব এবং সর্বোপরি পরমেশ্বর ভগবান প্রসন্ন হন। আর তাকে প্রসন্ন করাই সমস্ত যজ্ঞ, দান, ব্রত বা তপস্যার মুখ্য উদ্দেশ্য।
(উৎসঃ পদ্মপুরাণ, উত্তরখণ্ড ১২৪ অধ্যায়; প.পু. সর্গখণ্ড ৪৮ অধ্যায়; স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখণ্ড-কার্তিকমাসমাহাত্ন্য, ৩২ অধ্যায়, গরুরপুরাণ, পূর্ব খণ্ড ১২৩ অধ্যায়।)
─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─
► আরও পড়ুন: দামোদর মাসে দীপদান মাহাত্ম্য (Deepdan Mahatmya)✸কার্তিক মাহাত্ম্য (Kartik Mahatmya)
► আরও পড়ুন: দামোদর ব্রত কথা (Damodar Vrat Katha)✸শাস্ত্রীয় নির্দেশাবলি✸শ্রীদামোদরাষ্টকম্ (Damodarastakam)
► আরও পড়ুন: দামোদর কে?✸দামোদর লীলা (দামবন্ধন লীলা✤Damodar Lila)মাহাত্ম্য✸
► আরও পড়ুন: Who is Devi Durga? দেবী দুর্গা কে? দশ হাতে অস্ত্র কি কি?
► আরও পড়ুন: Gopashtami❖গোপাষ্টমী (গোপ অষ্টমী বা গোষ্ঠাষ্টমী) মাহাত্ম্য