‘দামোদর কে?‘, ‘দামোদর লীলা (দামবন্ধন লীলা ✤Damodar Lila) মাহাত্ম্য কি?‘, ‘কেন যশোদা মা শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর কোন গর্হিত কর্মের জন্য উদুখলের সঙ্গে বন্ধন করেছিলেন?’ ইত্যাদি বহু প্রশ্নের আলোক মালায় সুসজ্জিত শ্রীশ্রীদামবন্ধন লীলা।
❝ একদা গৃহদাসীসু যশোদা নন্দগেহিনী ।
কর্মান্তর নিযুক্তাসু নির্মমন্থ স্বয়ং দধি ॥
যানি যানীহ গীতানি তদ্বালচরিতানি চ ।
দধিনির্মন্থনে কালে স্মরন্তী তান্যগায়ত॥ ❞
শ্রী শুকদেব গোস্বামী বললেন – একদিন গৃহের সমস্ত পরিচারিকারা যখন অন্যান্য কাজে ব্যস্ত ছিল, তখন মা যশোদা স্বয়ং দধি মন্থন করতে শুরু করেছিলেন। দধি মন্থন করার সময় তিনি শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলা স্মরণ পূর্বক তাঁর সেই সমস্ত কার্যকলাপ বর্ণনা করে গান করছিলেন। (শ্রীমদ্ভাগতম ১০/৯/১-২)
◼️ দামোদর কে?◼️
‘দাম‘ শব্দের অর্থ ‘রশ্মি‘ বা ‘রজ্জু‘ বা ‘দড়ি‘ এবং ‘উদর‘ হচ্ছে ‘কোমর‘। মা যশোদা শিশু কৃষ্ণকে দাম বা রজ্জুর দ্বারা বন্ধন করেছিলেন — সেজন্য পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরেকটি নাম হল দামোদর।
দামোদর লীলা বা দামবন্ধন লীলা সংগঠিত হয়েছিল আজ থেকে ৫২৪৬ বছর পূর্বে এবং সেদিন ছিল দীপাবলি মহোৎসব। সুতরাং এটি ৫২৪৭ তম দামোদর মহোৎসব ২০২৪ অনুসারে। দামোদর লীলায় শ্রীকৃষ্ণের বয়স ছিল ৩ বছর ৪ মাস।
◼️দামোদর ব্রত কি?◼️
চাতুর্মাস্যের চতুর্থ মাস অর্থাৎ কার্তিক মাসকে বলা হয় দামোদর মাস, কেননা এই মাসটি ভগবান দামোদর রূপের আরাধনার জন্য নির্দিষ্ট। মা যশোদা শিশু কৃষ্ণকে দাম বা রজ্জুর দ্বারা বন্ধন করেছিলেন, সেজন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি নাম হল দামোদর। বৈদিক সংস্কৃতিতে সুপ্রাচীন কাল হতে কার্তিক ব্রত বা দামোদর ব্রত পালিত হয়ে আসছে। দামোদর ব্রতের সময়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় কর্পূর সমন্বিত ঘৃত বা তিল তেল দ্বারা প্রদীপ প্রজ্বলন করে ভগবানকে আরতি নিবেদন করতে হয় এবং শ্রীদামোদরাষ্টকম্ (Damodarastakam) পাঠ করতে হয়।
✸✤ দামোদর মাসে পালিত অন্যান্য উৎসব ✸✤
===============================
দামোদর মাসে দামবন্ধন লীলা ছাড়াও অন্নকূট মহোৎসব, রাধাকুন্ড ও শ্যামকুন্ডের আবির্ভাব তিথি (বহুলাষ্টমী), তুলসী-শালগ্রাম বিবাহ, গোপাষ্টমী, বলিদৈত্যরাজপূজা, ভীষ্মপঞ্চক, গিরি-গোবর্ধন পূজা ও দীপাবলি লীলাও সংগঠিত হয়েছিল।
✸✤ দামোদর ব্রত পালনের সুফল ✸✤
===========================
◆ দামোদর মাসে অন্নাদি দান, হোম, তপস্যা, জপ করলে তা অক্ষয় ফলপ্রদা হয়।
◆ সর্বতীর্থে যে স্নান, সর্বদানের যে ফল তা দামোদর মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না।
◆ যে মানব দামোদর মাসে শ্রীবিষ্ণু মন্দির প্রদক্ষিণ করার ফলে সে পদে পদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলভোগী হয়।
◆ দামোদর মাসে শ্রীহরির সম্মুখে নৃত্য, গীত, বাদ্যধ্বনি এবং ভক্তিসহকারে কীর্তন করার ফলে অক্ষয়পদ বিষ্ণুধাম প্রাপ্ত হওয়া যায়।
◆ হে মুনিবর! পবিত্র দামোদর মাসে যিনি হরিকথা শ্রবণ করেন, তিনি শতকোটি জন্মের আপদসমূহ হতে নিস্তার পান।
◆ দামোদর মাসে নিমেষার্দ্ধকাল দীপদান করার ফলে সহস্রকোটি কলা অর্জিত বহু পাপ বিনষ্ট হয়।
[দামোদর ব্রত মাহাত্ম্য, স্কন্দপুরাণ]
✸✤ দামোদর ব্রত না পালনের কুফল ✸✤
============================
✤ যে গৃহী দামোদর ব্রত পালন না করেন, তার অন্যান্য ধর্মাচরণ বৃথা হয়, কল্পকাল নরকবাসী হয় এবং পিতৃমাতৃ ঘাতক সমতুল্য ও পশু-পাখি যোনিতে জন্ম লাভ করে।
✤ হে মুনিবর! যে মানব দামোদর ব্রত না করে, সে ব্রহ্মঘাতী, গোঘাতী, স্বর্ণচোর ও সর্বদা মিথ্যাবাদী।
◼️ দামোদর মাসে দীপদানের সময়সূচী ◼️
✤ ১৭ই অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার (৩০ই আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ) পূর্ণিমাঃ শ্রীদামোদরকে প্রদীপ দান আরম্ভ।
✤ ১৫ই নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার (২৯শে কার্ত্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ) পূর্ণিমাঃ শ্রীদামোদরকে প্রদীপ দান সমাপন। সেই সঙ্গে এই দিনে চাতুর্মাস্য ব্রত ও ভীষ্মপঞ্চক ব্রত সমাপ্ত হয়।
─•━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━•─
◼️ দামোদর মাসে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাহাত্ম্য কি? ◼️
প্রজ্বলিত কর্পুর সমন্বিত দীপ দ্বারা আরতি করলে সপ্তকল্প যাবত ভগবদধামে বাস হয়। মনোহরদৃশ্য দ্বারা শ্রীহরির আরতি করলে কাম-ক্রোধাদি বিদূরিত হয় এবং পুনর্জন্ম হয় না। দীপের আলোতে ভগবানের মুখমন্ডল দর্শন করলে ব্রহ্মহত্যাদি পাপ হতে মুক্ত হওয়া যায়। যে গৃহে দীপদান করা হয় তার সর্বদা ধন, যশ, পুত্র লাভ হয় এবং পূর্বপুরুষগণ সন্তুষ্ট হয়।
─•━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━•─
◼️ দামোদর মাসে আরতি নিবেদনের নিয়ম কি? ◼️
ঘৃত বা তিলের তৈল যুক্ত কর্পূর মিশ্রিত প্রদীপ দ্বারা ভক্তি সহকারে প্রথমে ভগবানের শ্রীবিগ্রহ বা চিত্রপটের চরণে ৪ বার, নাভি কমলে ২ বার, মুখমন্ডলে ৩ বার এবং তারপর সর্বাঙ্গে ৭ বার (ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরিয়ে অর্থাৎ বাম দিক থেকে ডানদিকে) প্রদীপ প্রদক্ষিণ করাতে হয়। মাটির প্রদীপ একবারই ব্যবহারযোগ্য।
এই মহান দামোদর মাসে ভগবান শ্রী হরিকে ১টি মাত্র প্রদীপ নিবেদনে ১ লক্ষ গুন প্রদীপ নিবেদনের ফল লাভ হয়!
◼️ দামোদর লীলা (দামবন্ধন লীলা) মাহাত্ম্য ◼️
✸✤ দামোদর লীলার অন্তর্নিহিত অর্থ ✸✤
=============================
👣 শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধের নবম ও দশম অধ্যায়ে লীলাপুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্তবশ্যতা স্বীকারস্বরূপ দামবন্ধন লীলা বর্ণিত আছে। অমল পুরাণ শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত বিভিন্ন লীলাদির প্রভুত রস আস্বাদন করেছেন বিখ্যাত বৈষ্ণব আচার্যগণ। তন্মধ্যে শ্রীল শ্রীধর স্বামী রচিত ‘ভাবার্থ দীপিকা’, শ্ৰীল সনাতন গোস্বামী রচিত ‘শ্রীবৈষ্ণবতোষণী’, শ্রীল জীব গোস্বামী রচিত ‘ক্রমদীপিকা’ ও ‘গোপালচম্পু’, শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী (রসিকাচার্য) রচিত ‘সারার্থদর্শিনী টীকা‘, শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ রচিত শ্রীমদ্ভাগবতের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্যে সেসব লীলার চমৎকারিত্ব ও প্রাঞ্জলতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
👣 লীলাপুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভৌমলীলায় অনেক আশ্চর্য ও চমকপ্রদ লীলা সম্পন্ন করেছেন। তাঁর অনন্ত লীলার মধ্যে শৈশব লীলা অত্যন্ত মধুর। আর শৈশবকালে সম্পাদিত সকল লীলার মধ্যে দামোদর লীলা (দামবন্ধন লীলা) ও যমলার্জুন উদ্ধার লীলা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এই দু’টি লীলাতেই ভগবান তাঁর ভক্তবশ্যতা প্রদর্শন করেছেন।
👣 শ্রীল সনাতন গোস্বামীর মতে দামোদর লীলাটি হয়েছিল দীপাবলি উৎসবের দিনে। তখন কৃষ্ণের বয়স ছিল ন্যূনাধিক তিন বছর চার মাস। শ্রীকৃষ্ণ তখন গোকুল মহাবনে ছিলেন। শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী পাদের মতে শ্রীকৃষ্ণ গোকুলে ছিলেন তিন বছর চার মাস । তারপর নন্দবাবা বৃন্দাবনে যমুনার পশ্চিম তীরে ছটিকরাতে চলে যান। সেখানে আরো তিন বছর চার মাস থাকার পর কাম্যবন এবং পরিশেষে নন্দগ্রামে অবস্থান করেন।
👣 একদিন মাতা যশোদা চিন্তামগ্ন হয়ে ভাবছিলেন যে, কৃষ্ণ কেন অন্যান্য গোপীদের দই (দধি), মাখন (নবনীত) ইত্যাদি চুরি করছে। নিশ্চয়ই তাঁর ঘরের তৈরি মাখন সুস্বাদু লাগছে না। এখানে যশোদা নামের অর্থটি খুবই প্রাসঙ্গিক। ‘যশোদা‘ = যশ + দা অর্থাৎ যিনি যশ (খ্যাতি) দান করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে মা যশোদা এক সর্বোত্তম যশ দান করেছিলেন, যা ভগবানের অন্য সকল যশকে (অর্থাৎ ভগবান সর্বশক্তিমান ইত্যাদি) পর্যন্ত হার মানায়। মা যশোদাই কৃষ্ণকে ভক্তবশ্যতার যশ প্রদান করেছেন।
👣 শ্রীকৃষ্ণ সেবার জন্য কোন্ বস্তু সর্বোত্তম হতে পারে তা চিন্তা করা সকল জীবাত্মার প্রধান কর্তব্য। তাই মা যশোদা চিন্তা করলেন যে তিনি স্বহস্তে তার প্রিয়তম পুত্র কৃষ্ণের জন্য মাখন তৈরী করবেন। একজন দায়িত্বশীল মাতা সর্বোপরি ভগবানের উত্তম ভক্ত সর্বদাই এই ভাবনাতে মগ্ন থাকেন যে কিরূপে তাঁর পুত্র এবং ভগবানের জন্য শ্রেষ্ঠ সেবা সম্পাদন করতে পারেন। কৃষ্ণ তখনও ঘুম থেকে ওঠেননি। এদিকে রোহিণী মাতাও বলরামকে নিয়ে উপানন্দের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে গিয়েছেন। তাই তিনি গৃহপরিচারিকাদের অন্যান্য কর্মে নিযুক্ত করে নিজেই দধি মন্থন করতে বসলেন।
👣 নন্দ মহারাজের নয়লক্ষ গাভী ছিল। তার মধ্যে সাত-আটটি গাভী ছিল দুষ্প্রাপ্য পদ্মগন্ধিনী গাভী। তাদের বিশেষ প্রকারের ঔষধি ও সুগন্ধি তৃণগুল্মাদি খাওয়ানো হতো, ফলে তাদের দুধও ছিল অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত। মা যশোদা সেই সমস্ত গাভীর দুগ্ধ সংগ্রহ করে তা থেকে দধি তৈরী করে তা মন্থন করে মাখন প্রস্তুত করতেন। যশোদা মাতা ভাবলেন, হয়ত দাসীরা ভালোভাবে উৎকৃষ্ট মানের দধি মন্থন করছে না। এজন্য কৃষ্ণের মধ্যে ভয়ংকর চৌর্যবৃত্তি দেখা দিয়েছে। কারণ তার কাছে বহু ব্রজগোপিকারা অভিযোগ করতেন কৃষ্ণ তাদের ঘর থেকে মাখন চুরি করছে। তিনি তার পুত্রের এই গর্হিত কর্মের জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকতেন। কোন্ মা চায় যে তার পুত্র চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত থাক্।
👣 তাই তিনি মনস্থ করলেন যে আজ তিনি এমন মাখন প্রস্তুত করবেন যা সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে কেউ কখনো দেখেনি বা আস্বাদন করেনি এবং কৃষ্ণ যখন তা গ্রহণ করবে তাতে সে অভিভূত হবে, তাহলে কৃষ্ণ প্রতিবেশী গোপীদের বাড়ীতে আর মাখন চুরি করবে না। আবার অন্যদিকে, ব্রজগোপিকারা তাদের বাড়ীতে অধীর আগ্রহে দধি মন্থন করে তা থেকে মাখন প্রস্তুত করতেন এবং একান্তভাবে অপেক্ষা করতেন যে কখন তাদের প্রিয় কৃষ্ণ আসবে এবং চুরি করে তাদের প্রস্তুতিকৃত মাখন খেয়ে তাদেরকে আনন্দ প্রদান করবে। ভক্তের সঙ্গে ভগবানের এটিই হলো মধুর প্রেমময় শাশ্বত সম্পর্ক।
👣 “দধি মন্থন করার সময় মা যশোদা ইতিমধ্যে সংঘটিত কৃষ্ণের বাল্যলীলার গান গাইছিলেন। পূর্বে প্রথা ছিল কেউ যখন কোন কিছু স্মরণ রাখতে চাইতেন তখন তা কবিতার আকারে রূপ দিতেন। মনে হয় মা যশোদা কৃষ্ণের কার্যকলাপ কখনোই ভুলে যেতে চাননি, তাই তিনি পুতনা বধ, অঘাসুর বধ, শকটাসুর বধ, তৃণাবর্তাসুর বধ আদি কৃষ্ণের বাল্যলীলা সমূহ ছন্দোবদ্ধ করে কবিতার আকারে রূপ দিয়ে ছিলেন এবং দধি মন্থন করার সময় তিনি তাঁর সেই সমস্ত কার্যকলাপ স্মরণ করে গান করতেন।” —-(শ্রীল প্রভুপাদ কৃত তাৎপর্য-১০/৯/১-২)
👣 শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত এই সকল ঘটনা আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, “যাঁরা চব্বিশ ঘণ্টা কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত থাকতে চান, তাঁদের পক্ষে এ অভ্যাসটি আয়ত্ত করা কর্তব্য। দেহ (কায়), মন ও বাক্য দিয়েই নিঃস্বার্থ ভাবনায় সেবা করতে হয়। কৃষ্ণভাবনায় পূর্ণরূপে নিমগ্ন থাকতে গেলে মাতা যশোদার ন্যায় ভগবানের ভক্তদের অনুসরণ করা একান্ত কর্তব্য।“ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুও তাই বলছেন, “কি শয়নে, কি ভোজনে কিবা জাগরণে। অহর্নিশি চিন্ত কৃষ্ণ, বলহ বদনে।” এই কলিয়ুগে আমরা সকল কাজ করার সময় অতি অবশ্যই মনে মনে “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥” মহামন্ত্র জপ করতে পারি।
👣 শ্রীল শুকদেব গোস্বামী যশোদা মাতার রূপ ও গুণ যথার্থভাবে বর্ণনা করছেন। মাতা যশোমতি তখন স্যাফরন হলুদ রঙের রেশমী শাড়ি পরেছিলেন। এটি অতি পবিত্র কাপড়। দধিমন্থন কার্যে যেন কোনো অপবিত্র প্রভাব না পড়ে সেজন্যই এ আয়োজন। খুব ভোরেই মাতা এ কাজটি শুরু করেছিলেন, যেন কৃষ্ণের নিদ্রাভঙ্গের আগেই মাখন তোলা যায়। তবুও দধি মন্থনজনিত পরিশ্রমের কারণে তিনি ঘর্মাক্ত ছিলেন। তাঁর সর্বাঙ্গ কম্পিত হচ্ছিল। মাথার ফুলের মালাটি ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে খসে পড়ছিল। তার হাতের কঙ্কন, কানের কুণ্ডল এবং মন্থন দণ্ডটি দধি মন্থনকালে অনবদ্য সুরে শব্দ উৎপন্ন করছিল।
👣 এই দৃশ্য সম্পর্কে আচার্যেরা বিভিন্ন টীকা বর্ণন করেছেন। চিন্ময় জগতে কঙ্কন, কুণ্ডল, দুধ, মাখন প্রভৃতি সবই জীবন্ত এবং স্বতন্ত্র ব্যাক্তিত্ব। কঙ্কন ও কুণ্ডল নৃত্যচ্ছলে মাতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। ‘যে হাত ভগবানের সেবায় ব্যস্ত, আমরা সেই হাতে থেকে ধন্য’ – এই ভাব হাতের কঙ্কনদ্বয় বোঝাতে চাইছে, তাই অস্ফূট ঝন্ঝন্ শব্দ করছে। কানের কুণ্ডলগুলো নেচে নেচে এটিই সূচিত করছে যে, মায়ের মুখে ভগবানের লীলাগান শুনে কান তার উৎপত্তির সার্থকতা লাভ করেছে। আর মস্তকের কবরীস্থিতি মালতি পুষ্প খসে পড়ার মাধ্যমে বোঝাচ্ছে যে, ‘হায়! হায়! বাৎসল্য প্রেমের মূর্তিমতী মাতা যশোদার মস্তকে থাকার ঔদ্ধত্য কি আমাদের সাজে, তাঁর চরণ পেলেই ধন্য হবো আমরা।’ চিন্ময় জগতে সবকিছুই স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তাই সবকিছুর পৃথক পৃথক অভিব্যক্তি রয়েছে। এদিকে মাতার হৃদয়ের স্নেহই স্তনদুগ্ধরূপে বহির্গত হচ্ছে। কেননা, একবার সুস্বাদু মাখন (নবনীত) দেখে, কৃষ্ণ যদি স্তন্যপান না করে! এই ভয়েতে কৃষ্ণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আপনাআপনি দুধ নিঃসরিত হচ্ছে। আবার, কুণ্ডল ও কঙ্কনের ঝন্ঝন্ শব্দ আর দধি মন্থনের ঘরঘর শব্দ করতাল ও মৃদঙ্গ-বাদ্যরূপ মায়ের মুখের কৃষ্ণলীলা গানে সহায়তা করছে। একারণেই আমরাও ভগবানের বিভিন্ন সেবা করে আনন্দ লাভ করি। কেননা, ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ইন্দ্রিয়াধিপতির সেবা করলেই তো ইন্দ্রিয়ের প্রকৃত তৃপ্তি লাভ করা যায়।
👣 মা যশোদা যখন দধি মন্থন করছিলেন তখন এদিকে কৃষ্ণ ঘরের ভেতর ঘুমিয়েছিলেন। আর ঘুম থেকে ওঠামাত্রই ক্ষুধার্ত হয়ে মা’কে খোঁজ করতে শুরু করেন। তখন মায়ের সুললিত কণ্ঠে গান শ্রবণ করে ভাবলেন, “আজ কী হলো! মা আমাকে রেখেই বিছানা থেকে উঠে পড়েছে। আমার জন্য কি তার কোনো দুশ্চিন্তা নেই?” তাই, তিনি দু’খানি পদ্মহস্ত দ্বারা নেত্রযুগল মার্জনা করতে করতে সেই দধি মন্থন স্থানে এলেন। মা যশোদা যেরূপ কৃষ্ণব্যাতীত থাকতে পারতেন না অনুরূপভাবে কৃষ্ণও তাঁর মা যশোদা ব্যতীত সময় অতিবাহিত করতে পারতেন না। ভক্তের সঙ্গে ভগবানের এটিই হলো অনুপম সম্পর্ক, ভক্ত ভগবান ছাড়া থাকতে পারেন না আবার ভগবানও তাঁর ভক্ত ছাড়া থাকতে পারেন না।
👣 মা যশোমতির কী প্রগাঢ় সেবানিষ্ঠা! এদিকে কৃষ্ণ এসে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর কোনো খেয়াল নেই। কৃষ্ণ ভাবলেন, আমার কিছু করা দরকার। তাই, সরাসরি মন্থন দণ্ডকে চেপে ধরলেন। কেননা, জ্ঞানীরা অগাধ শাস্ত্ররাজি মন্থন করে পরিশেষে কৃষ্ণকেই পায়। আর কৃষ্ণ এখানে সাক্ষাৎ দণ্ডায়মান। তাই, মন্থনকার্য থামানোর মাধ্যমে যশোদা মায়ের সাধনার পূর্ণতার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। মা যশোদা তখন বুঝতে পারলেন যে আমার সন্তানটি বয়সে ছোট হলেও বেশ শক্তিশালী হয়েছে। এতে মা যশোদার হৃদয় অফুরন্ত বাৎসল্য রসে ভরে উঠল।
👣 মা অবশ্য চেষ্টা করছিলেন তাড়াতাড়ি হাতের কাজটা সেরে ফেলতে, তাই স্নেহের সুরে বললেন, “একটু সবুর কর বাছা; অল্প একটু মাখন তুলে নিই।” “না, আমি এখুনি দুধ খাব”। এই বলে জোর করে মায়ের কোমরে জাপটে ধরে, জানুর উপর পা দিয়ে কোলে উঠে পড়লেন। আর স্তন্য থেকে স্বতঃনিঃসরিত দুগ্ধধারা আস্বাদনে মনোযোগ দিলেন। পরমেশ্বর নিখিল বিশ্বের অধিপতি, অদ্ভুতকর্মা শ্রীকৃষ্ণ পরমানন্দে একটি সাধারণ শিশুর ন্যায় মায়ের স্তন পান করছেন আর মা কৃষ্ণের নয়নাভিরাম সুমধুর মুখপানে তাকিয়ে রয়েছেন।
👣 মা যশোদা ছিলেন একজন অত্যন্ত পারদর্শী মহিলা। তিনি একই সঙ্গে একাধিক কাজ করতেন, যেমন দধি মন্থন, উনুনে দুধ জ্বালিয়ে প্রস্তুত রাখা যাতে কৃষ্ণকে প্রয়োজন পড়লে আরও গোদুগ্ধ খাওয়াতে পারেন, আগামীকাল মাখন তোলার জন্য দই পেতে রাখা প্রভৃতি। মা যশোদা যখন পরমতৃপ্তির সঙ্গে কৃষ্ণকে দুগ্ধ দান করাচ্ছিলেন তখন ঘরের অন্য প্রান্তে উনুনের উপরে পদ্মগন্ধা গাভীর দুধ গরম করা হচ্ছিল। দুধ তখন ভাবল, “একি! পরস্পরের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। হায়! স্নেহময়ী মা যশোদার দুগ্ধ তো কখনো ফুরাবে না, আর প্রেমবুভুক্ষু শ্রীকৃষ্ণের তৃষ্ণাও তো মিটবে না। তবে, আমার কী হবে? যুগ যুগ ধরে সেই অধর স্পর্শ লাভের তপস্যা করছি, আর পেট ভরে গেলে তো কৃষ্ণ আমার দিকে ফিরেও তাকাবে না। এ জীবন কৃষ্ণের সেবায় লাগল না। বেঁচে থেকে কী লাভ, বরং তাঁর সামনেই অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করি।” এই বলে অগ্নিতাপে স্ফীত দুগ্ধ পাত্রের গা বেয়ে উপচে পড়তে লাগল। মা হঠাৎ তা খেয়াল করলেন, আর মা যশোদা তৎক্ষণাৎ কৃষ্ণকে কোল থেকে নামিয়ে দ্রুতবেগে দুধকে রক্ষা করার জন্য ধাবিত হলেন।
👣 এখন প্রশ্ন উঠতে পারে মা যশোদার স্নেহ কী রকম? মনে হয়, কৃষ্ণের চেয়ে দুধের প্রতিই তাঁর মমতা। নতুবা তিনি কেন অতৃপ্ত অবস্থায় কৃষ্ণকে ফেলে চলে গেলেন? এর উত্তর হচ্ছে ━━ একটু পরেই কৃষ্ণ এসে বলতে থাকবে, “মা দুধ দাও, মাখন দাও”। এই দুধ শুধু কৃষ্ণের জন্যই জ্বালানো হচ্ছিল। তাই কৃষ্ণসেবার জন্যই এই দুধের সংরক্ষণ প্রয়োজন ছিল। সেই কারনেই মা যশোদা দুধ রক্ষার প্রতি এত মনোযোগ দিয়েছিলেন। ভক্তদের কাছে সেবার গুরুত্ব এত বেশী যে, কখনও কখনও তাঁরা জাগতিক বিধি নিয়ম ভেঙ্গেও ভগবানের সেবা করেন। চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে মহাপ্রভুর একটি বিশেষ লীলায় আমরা দেখি যে উনার সেবক গোবিন্দ মহাপ্রভুর গাত্র মর্দন করার জন্য তাঁর দিব্য শরীরের উপর এক খণ্ড বস্ত্র রেখে মহাপ্রভুর দিব্য দেহ ডিঙ্গিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করেছিলেন। সেবা এতই গুরুত্বপূর্ণ। শাস্ত্রে আছে যে গোপীরা যখন কৃষ্ণকে ময়ূর পাখা দিয়ে বাতাস করতেন, অনেক সময় অষ্ট সাত্ত্বিক বিকারের জন্য তারা ঠিক মতো কৃষ্ণের সেবা করতে পারতেন না। তাঁরা তখন প্রার্থনা করতেন যে দিব্য আনন্দ প্রসূত এই সমস্ত অষ্ট সাত্ত্বিক বিকার যেন তাঁদের দেহে জাগ্রত না হয়, যাতে তাঁরা নির্বিঘ্নে কৃষ্ণ সেবা করতে পারেন। এই সমস্ত দৃষ্টান্ত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে দিব্য আনন্দ আস্বাদনের থেকেও সেবা প্রদানের গুরুত্ব অনেক বেশী।
👣 এদিকে দুধ ভাবল, “একি! আমার মতো পাপিষ্ঠ আর কোথাও নেই। আমার জন্য আজ যশোদা মাতা ও কৃষ্ণের প্রেম আদান-প্রদান ব্যাহত হলো।” তাই সেও শান্ত হয়ে পড়ল।
মাতৃস্তন দুগ্ধ পানে পূর্ণরূপে তৃপ্ত হওয়ার পূর্বেই তাঁকে এভাবে ফেলে চলে যাবার ফলে মায়ের ওপর ভীষণ রাগ হলো। এখানে দেখার বিষয় এই যে, যদিও ভগবান ‘আত্মারাম‘ (যিনি আত্মতৃপ্ত) ও ‘আপ্তকাম‘ (কামনা বাসনা যাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন), তবে তিনি ক্রূব্ধ হলেন কেন? মা যশোদার প্রীতিবন্ধনে তিনি যে কতটুকু আবিষ্ট তা প্রমাণ করেছেন একটু পরের ঘটনার মাধ্যমে। ক্রোধের কারণে, তাঁর রক্তবর্ণযুক্ত ঠোঁটেতে সাদা দুধের দাঁত দিয়ে তিনি নিজে নিজেই কামড় দিচ্ছেন আর ভাবছেন, “মা তুমি এত কৃপণ! আজ দুধ-ই তোমার কাছে বড় হয়ে দাঁড়াল। মা তুমি এত নির্দয় ! আমি কত ক্ষুধার্ত, আমার জন্য কোনো চিন্তাই নেই। আমি বৈকুণ্ঠ ধাম ছেড়ে তোমাদের কাছে এসেছি। আর সামান্য দুধের জন্য এটি করতে পারলে! ঠিক আছে, মজা দেখাচ্ছি।” এই বলে কপট অশ্রুমোচন করতে করতে একটুকরো প্রস্তর খণ্ড দিয়ে দধিভাণ্ডটি ভেঙ্গে ফেললেন। দধিভাণ্ডটি আবার তলদেশ দিয়ে ভাঙ্গলেন যেন, বড় ধরনের শব্দ না হয়। আর সদ্য উৎপন্ন মাখন খেতে খেতে পাশের ঘরে চলে যেতে লাগলেন। ভগবান তখন বুঝতে পারলেন যে আমি এখন অপরাধী। এখনই মা আসবেন এবং আমাকে শাস্তি দেবেন। তিনি তখন দৌড়াতে শুরু করলেন। য পলায়তি সঃজীবতি।
👣 মা যশোদা উনুন থেকে গরম দুধ নামিয়ে রেখে, দধি মন্থন করতে এসে দেখলেন যে, দধিভাণ্ড ভেঙ্গে রয়েছে, মাখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এবং সেখানে কৃষ্ণকে না দেখতে পেয়ে তিনি স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারলেন যে, এসব আমার আদরের দুলাল কৃষ্ণেরই কাজ, তার দুষ্টুমির ফল। এরপর চোখের সামনে কৃষ্ণকে দেখতে না পেয়ে মায়ের মন অস্থির হয়ে ওঠে। খুঁজতে খুঁজতে ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা দধির মধ্যে ছোট ছোট পায়ের ছাপ দেখতে পেয়ে হাসলেন এবং চিন্তা করলেন যে তার শিশুপুত্রটি অত্যন্ত চতুর হয়েছে। ঐ সমস্ত পদচিহ্ন অনুধাবন করে মা যশোদা কৃষ্ণকে আবিষ্কার করলেন।
👣 পাশের ঘরে উল্টোভাবে রাখা উদুখলের উপর বসে কৃষ্ণ শিকায় ঝুলিয়ে রাখা কিছু পুরানো মাখন খাচ্ছিলেন এবং বানরদের মধ্যেও তা বিতরণ করছিলেন। বানরগুলি আকণ্ঠ মাখন খেয়ে আর খেতে পারছিল না। গোস্বামীগণ খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে ভগবান যখন রামলীলায় বানরদের সাহায্য নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন, তখন তিনি ওই সব বানরদের ভাল করে খাওয়াতে পারেননি। কৃষ্ণলীলায় তিনি তাই বানরজাতির প্রতি সেই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করছিলেন।
👣 মা যশোদা যখন দেখলেন যে কৃষ্ণ বানরদের মাখন খাওয়াচ্ছে, তিনি সঙ্গে সঙ্গে একটি লাঠি তুলে নিলেন। শ্রীকৃষ্ণ যখন দেখলেন যে, মা ছড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে, তখন তিনি উদুখল থেকে লাফ দিয়ে দ্রুত বেগে পালানোর চেষ্টা করে, যেন তিনি অত্যন্ত ভীত হয়েছেন।কৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান, তিনি সর্বব্যাপ্ত। তিনি কালের নিয়ন্ত্রনাধীন নন। তাঁর কাছে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের কোন পার্থক্য নেই। তিনি তাঁর চিন্ময় স্বরূপে নিত্য বর্তমান। দ্বৈতভাবের অতীত পরম তত্ত্ব হওয়ার ফলে, যদিও তিনি সব কিছুই কার্য এবং কারণ, তবুও তিনি কার্য ও কারণের দ্বৈতভাব থেকে মুক্ত। সেই অব্যক্ত পুরুষ যিনি সমস্ত ইন্দ্রিয়ের অনুভূতির অতীত, তিনি এখন একটি সাধারণ শিশু রূপে আবির্ভূত হয়েছেন এবং মা যশোদার হাতের ছড়ির ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছেন।
👣 কৃষ্ণলীলা এতই বিভ্রান্তিকর যে এরকম একজন ভীতু শিশু যে কি করে সর্বশক্তিমান ভগবান হবেন, তা উপলব্ধি করা সত্যিই খুব রহস্যময়। বলা হয় যে ━━
❝ ভীষাস্মাদ্ বাতঃ বপতে ভিষোদেতি সূর্যঃ।
ভীষাস্মাদগ্নিশ্চন্দ্রশ্চ মৃত্যুর্ধাবতি পঞ্চমঃ॥ ❞
━━┉┈┈(তৈত্তিরিয় উপনিষদ ২/৮)
অর্থাৎ কৃষ্ণের ভয়ে বায়ুর দেবতা পবনদেব বায়ু প্রবাহিত করছেন। সূর্যদেব কৃষ্ণের ভয়ে সঠিক সময়ে উদিত হচ্ছেন। অগ্নিদেব ও চন্দ্রদেব কৃষ্ণের ভয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এমন কি মৃত্যুর দেবতা যমরাজ পর্যন্ত এই কৃষ্ণের ভয়ে পঞ্চম গতিতে ধাবিত হচ্ছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে সমস্ত দেবতারা যার ভয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন, এই সেই শ্রীকৃষ্ণ যিনি মা যশোদার ভয়ে ধাবিত হচ্ছেন। এই বিভ্রান্তিকর রহস্যের মূল সমাধান হল কৃষ্ণপ্রেম। এই সবই ভগবান করছেন প্রেমের বশীভূত হয়ে। জড় জগতেও আমরা দেখি যে বিখ্যাত ব্যক্তিরা যারা VIP-দের ভয় পান না কিন্তু তারাও নিজের মাকে সমীহ করে চলেন। এই হচ্ছে প্রেমের ক্ষমতা।
👣 মা যশোদার শরীর ছিল ভারী। তিনি আস্তে আস্তে দৌড়াচ্ছিলেন। তাঁর শরীর ও বেশভূষা দুই’ই তাঁর সঙ্গে বিরোধিতা করছিল━‘কেন মা তুমি আজ কানাইকে তাড়া করছ?‘ প্রথমে ঘরের ভেতরে দৌড়াদৌড়ি হচ্ছিল। পরে কৃষ্ণ গোকুলের রাস্তায় চলে এলেন। এদিকে ব্রজবাসীরা এ দৌড় প্রতিযোগিতা দেখছিলেন। যেখানে যোগীরা কর্মের কঠোর তপস্যার বলে তাঁকে পরমেশ্বর এবং সর্বকারণের কারণ জেনেও তাঁকে প্রাপ্ত হতে সক্ষম হন না। কিন্তু মাতা যশোদার মতো শুদ্ধ ভক্তের কাছে কৃষ্ণ ধরা দেন। এইটি যোগী এ শুদ্ধ ভক্তের স্থিতিটি নির্ধারণ করে। ‘অহম্ ভক্ত পরাধীন’, তিনি সর্বদাই ভক্তের অধীন।
👣 কৃষ্ণ জানতেন যে, আজ মা যদি ধরতে সক্ষম হয়, তবে আর রক্ষা নেই। কেননা আজ অনেকগুলো দুষ্কর্ম করেছেন। সর্বগ্রাসী কাল যাঁর ভয়ে ভীত, সেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আজ ভীত শঙ্কিত হয়ে পলায়ন করছেন। এই পালানোর অর্থ হল ভগবানকে অতি সহজে প্রাপ্ত করা যায় না আর ভগবান অতি সহজে ধরা দেন না। তাঁকে ধরার জন্য মাকেও পরিশ্রম করতে হয়েছে! যে সম্পদ সহজে প্রাপ্ত হয় না, তা অমূল্য। যে অমূল্য সম্পদ অতীব কষ্টে প্রাপ্ত হয় তা অতি দুর্মূল্য। যে অতীব দুর্মূল্য সম্পদ অতীব দুর্লভ তা প্রাপ্ত করা অসাধ্য। সেই অসাধ্যকে প্রাপ্ত করার আনন্দ অসীম। সেই অসাধ্যকে প্রাপ্ত করার জন্য ধাবিত হচ্ছে মাতৃস্নেহ, তাহলে সেই মাতৃস্নেহ অতি অতি অমূল্য, অতি অতি অতি দুর্মূল্য, অতি অতি অতি দুর্লভ। যশোদা মায়ের মাতৃস্নেহ অসীম দুর্লভ, তা থেকে তিনি বঞ্চিত হতে চান না এবং বিনিময়ে মাকে অলীক আনন্দ প্রদান করতে চান।
👣 দূরন্ত কৃষ্ণ এদিক-সেদিক দৌড়াতে লাগলেন। কিন্তু নিতম্বভারে যশোদাদেবীর গতি মন্থর হলো। ঘর্মাক্ত কলেবর অবস্থায় মাথার কবরী খুলে গেল। মায়ের ক্লান্তি দেখে কৃষ্ণের দয়া হল। তিনি মনস্থ করলেন যে মার কাছে ধরা দেবেন। পিছন ফিরে তাকাবার অছিলায় তিনি যেই মুখ ঘোরালেন, মা তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে খপ করে তাঁর ডান হাত ধরে ফেললেন। যে কৃষ্ণকে মুনি পুঙ্গবেরা মনের গতিবেগে লক্ষ কোটি বছর দৌড়েও ধরতে পারেন না, তিনি ধরা পড়লেন তাঁর প্রেমময়ী মায়ের প্রেমের বন্ধনে।
👣 বাঁহাত দিয়ে কৃষ্ণ তাঁর পদ্মের ন্যায় দুটি চোখ থেকে অশ্রুমোচন করছিলেন। এতে চোখের কাজল সারা মুখে ছড়িয়ে পড়েছে, আর বারবার ভীতশঙ্কিত চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। মা তখন লাঠি উঁচিয়ে ভয় দেখাতে দেখাতে বলতে লাগলেন, “ওরে দুষ্টু, বানরবন্ধু, দধিভাণ্ড ভগ্নকারী! এখন মাখন কোথায় পাবে? আজ এমন ভাবে বেঁধে রাখব, যাতে সখাদের সাথে খেলতে না পার। এখন কেন ভয় পাচ্ছ?”
👣 মা যশোদা সর্বদাই কৃষ্ণের প্রতি গভীর পুত্র স্নেহে বিহ্বল থাকতেন তাই কৃষ্ণের এই ভীত সন্ত্রস্ত চেহারা দেখে তিনি অতিশয় অস্থির হলেন, এতটুকু শিশুকে বেশী ভয় দেখানো ঠিক হবে না এবং সেই ভীতিময় অবস্থা থেকে কৃষ্ণকে নিষ্কৃতি দেবার জন্য হাতের ছড়িটি ফেলে দিলেন। অথচ তাঁকে একটু দণ্ড না দিলেই নয়। তাই, কৃষ্ণকে বেঁধে রাখতে মনস্থির করলেন। কেননা, কৃষ্ণ যদি ভয় পেয়ে বনে চলে যায়, বন্য পশুরা তাঁর ক্ষতি করতে পারে। মা যশোদার বাড়িতে নয় লক্ষ গাভী ছিল। তাঁর কোনও দড়ির অভাব ছিল না। দু চারটা দড়ি নিয়ে তিনি কৃষ্ণকে বাঁধতে মনস্থ করলেন এবং বাঁধার চেষ্টা করছিলেন, তখন দু-আঙ্গুল দড়ি কম পড়ল। কেননা, ভগবানের কৃপাদৃষ্টি যাঁর ওপর পড়ে সে মুক্ত হয়ে যায়। মুক্ত জিনিসে আবার বন্ধন হবে কি করে? অথবা, গো-বন্ধনকারী (ইন্দ্রিয়সমূহ বন্ধনকারী) দড়ি আবার গো-পতিকে (ইন্দ্রিয়াধীশকে) বন্ধন করবে কী করে?
👣 কিন্তু যতবারই তিনি বাঁধার চেষ্টা করলেন, ততবারই দড়ি দুই আঙ্গুল কম পড়ছিল। না যশোদা বার বার বহু দড়ি জোড়া দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করলেন। বহু গোপী মজা দেখতে সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। তারাও মা যশোদাকে দড়ির জোগান দিচ্ছিলেন। যশোদা আজ ছাড়ার পাত্রী নয়, জেদ বসেছে চেপে। তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, “আজ যদি সন্ধ্যা হয়েও যায়, গ্রামের সমস্ত দড়ি প্রয়োজনও হয়, তবুও এঁকে ছাড়ব না।” কৃষ্ণ তাঁর চোখ রগড়াতে রগড়াতে ঐ সমস্ত গোপীদের লক্ষ্য করছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই দুই আঙ্গুল দড়ি কম হচ্ছিল। তিনি জানতেন না যে তার ছোট্ট পুত্রটি, “সমন্তাদ্ দীপ্তানল অর্কদ্যুতিম্ অপ্রমেয়ম্” (প্রজ্জ্বলিত অগ্নি ও সুর্যের মতো প্রভাবিশিষ্ট এবং অপ্রমেয়রূপে নিখিল বিশ্বে বিরাজমান) ━━ (গীতা ১১।১৭)। এই ভাবে আপাত ভীতু কৃষ্ণ তাঁর ঈশ্বর ভাব প্রমাণ করেছিলেন। সেখানে গোপীশ্রেষ্ঠা রাধাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর মস্তক থেকে তাঁর ফিতা খুলে দিলেন। মা যশোদার বাৎসল্য প্রেম আর শ্রীরাধার মাধুর্য প্রেমের শক্তিতে অবশেষে কৃষ্ণ বাঁধা পড়লেন এক উদুখলে। যাঁর ভেতর-বাহির নেই, আদি-অন্ত নেই; যিনি জগতের ভেতরেও আছেন, বাইরেও আছেন আবার জগৎরূপেও বর্তমান; শুধু তাই নয়, যিনি ইন্দ্রিয়ের অতীত, অব্যক্ত কিন্তু মনুষ্য আকৃতি গ্রহণ করায় মা তাঁকে স্বীয়পুত্র মনে করে উদুখলের সাথে বাঁধলেন। উদুখলের সাথে বাঁধার কারণ হচ্ছে, যে চুরিতে সহায়তা করে সেও চোর। তাই, দুই চোরকে একসাথে বেঁধে রাখলেন।
👣 এ থেকে আমরা শিক্ষালাভ করি, তিনি যখন ভক্তের চেষ্টা দেখেন, তখন তিনি কৃপাপূর্বক বন্ধন স্বীকার করেন। ভগবান অসীম কৃপাময়, অসীম করুণাময়। তাই, যশোদার একান্ত জেদ দেখে, ভগবান তাঁর জেদ ছেড়ে দিলেন। যিনি নিজের মায়ারজ্জুতে নিখিল জগৎ বন্ধন করে রেখেছেন, তিনি আজ মায়ের রজ্জুবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। শিব, ব্রহ্মা, ইন্দ্ৰ প্রভৃতি মহান দেবতারাসহ এ নিখিল বিশ্ব যাঁর বশীভূত, সেই স্বতন্ত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এভাবে তাঁর ভক্তবশ্যতা দেখিয়েছেন। মা যশোদা মুক্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের কাছে যে অনুগ্রহ লাভ করেছেন, তা ব্ৰহ্মা, মহেশ্বর এমনকি ভগবানের বক্ষবিলাসিনী লক্ষ্মীদেবীরও প্রাপ্ত হয়নি। যশোদানন্দন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বতঃস্ফূর্ত প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত ভক্তদের পক্ষে যেরকম সুলভ, মনোধর্মী জ্ঞানী, আত্মোপলব্ধিকামী তাপস বা দেহাত্ম বুদ্ধিপরায়ণ ব্যক্তির কাছে তেমন সুলভ নন।
👣 তবে কেন মাত্র দু-আঙ্গুল কম পড়ল, এ বিষয়ে আচার্যদের সিদ্ধান্ত হল ━━ এক আঙ্গুল ইঙ্গিত করে ভক্তের পূর্ণ প্রচেষ্টাকে, আরেক আঙ্গুল ইঙ্গিত করে ভগবানের কৃপাকে। সুতরাং এটাই বোঝার বিষয় হল যে, যদি ভক্ত সারাজীবন অনেক চেষ্টা করেও কিন্তু ভগবানের কৃপা না হলে তার উদ্ধার নেই। কৃষ্ণ প্রত্যেক লীলার মধ্যে মাকে বোঝাতে চায় তিনি পরমেশ্বর, তিনি পরম অধীশ্বর, কিন্তু মায়ের অপত্য স্নেহের কাছে তিনি কেবলই তার সন্তান, তার বেশী কিছু নয়। মায়ের সেই অপার প্রেমের কাছে তিনি বারবার ধরা দেন তার সন্তান রূপে। তাই ভগবানকে প্রাপ্ত করার একটাই মোক্ষম পথ নিষ্কাম ভগবতভক্তি অর্থাৎ ভক্তি প্রেমের রজ্জুতে আবদ্ধ করার চেষ্টা করে যাওয়া।
❝ বিশ্বম্ভর জগন্নাথে কে চালাইতে পারে?
আপন ইচ্ছায় চলে করিতে বিহারে॥ ❞
━━┉┈┈(চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ১৩।১৩)
👣 শ্রীকৃষ্ণ জগতপতি তিনি নিজের ইচ্ছায় লীলা বিলাস করেন। তিনি নন্দ যশোদা ভবনে সাধারণ নরশিশুর মতো আবির্ভূত হয়ে লীলা বিলাস সম্পাদন করছিলেন। যদিও পরমেশ্বর ভগবান কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন না তবুও তাঁর শুদ্ধ ভক্তেরা তাঁর শরণাগত হলে তিনি রক্ষা করেন, একইভাবে শ্রীভগবানও তাঁর শুদ্ধ ভক্তের তত্ত্বাবধানে নিজেকে আবদ্ধ করে শুদ্ধ ভক্তের প্রেমভক্তির রস আস্বাদন করেন। এটিই হলো মাতা যশোদার নিকট পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আত্মসমর্পণের অন্তর্নিহিত অর্থ। এই নিখিল বিশ্ব যাঁর বশীভূত সেই স্বতন্ত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এইভাবে তাঁর ভক্ত বশ্যতা প্রদর্শন করেছেন। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সকল জীবের মুক্তিদাতা কিন্তু মাতা যশোদা ভগবানের এই দামোদরলীলার মাধ্যমে যে বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন সেই প্রকার অনুগ্রহ ব্রহ্মা, শিব এমন কি মাতা লক্ষ্মীদেবীও লাভ করতে পারেননি।
✸✤ কুবেরের পুত্রদ্বয় নলকুবের ও মণিগ্রীবের উদ্ধার ✸✤
=======================================
👣 সামনে দু’টি অর্জুন বৃক্ষকে উদ্ধার করতে হবে, তারই সূচনা বা প্রস্তুতি নেওয়াই হল দামোদর লীলার আরেকটি মাহাত্ম্য।
👣 মা যশোদা তাঁর ছেলেকে এভাবে বেঁধে রেখে গৃহকর্মে ব্যস্ত হলেন। তখন উদুখলে বাঁধা শ্রীকৃষ্ণ বাড়ির প্রাঙ্গনে দু’টি অর্জুন গাছ দেখতে পেলেন। এ দু’টি গাছ কোন সাধারণ গাছ নয়। এরা ধনপতি কুবেরের পুত্রদ্বয় নলকুবের ও মণিগ্রীব। সাক্ষাৎ শিবের অনুচর হওয়া সত্ত্বেও এদের মাথায় কুবুদ্ধি প্রবেশ করে। তারা বারুণী নামক সুধাপানে উন্মত্ত হয়ে নগ্ন (দিগম্বর) অবস্থায় জলে নেমে, অত্যন্ত আসক্ত হয়ে উন্মত্ত হাতির মতো দেবাঙ্গনাদের (দেবতাদের কন্যার) সাথে জলক্রীড়া করতে লাগল। তখন দেবর্ষি নারদ মুনি সেই পথে আসছিলেন। তা দেখে দেবাঙ্গনারা তড়িঘড়ি তাদের স্বীয় বস্ত্র পরিধান করল। কিন্তু সেই পাষণ্ডদ্বয় নারদ মুনিকে উপেক্ষা করল। কিন্তু নারদ মুনি তাঁদের দুরাবস্থা দেখে অত্যন্ত ব্যাথিত ও করুণার্দ্র হলেন এবং বৃক্ষ যোনি প্রাপ্ত হয়ে চিরকাল নগ্ন থাকার অভিশাপ দিলেন। এরপর তাদের সম্বিত ফিরলে তাঁরা ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। এতে দেবর্ষি নারদ শান্ত হলেন এবং ক্ষমা স্বীকার করে বললেন ━━“ঠিক আছে, দ্বাপর যুগে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রকট হয়ে লীলা বিলাস করবেন, ভগবানের ইচ্ছাতেই তোমাদের মুক্তি সম্ভব হবে।” এই বলে মহর্ষি প্রস্থান করলেন। বহু যুগ ধরে তারা পাশাপাশি দুই অর্জুন বৃক্ষরূপে মর্ত্যলোকে ভগবানের প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। কৃষ্ণ ভাবলেন, “যদিও এরা কুবেরের পুত্র, এতে কিছু যায় আসে না। যেহেতু নারদ মুনি এদের উদ্ধার করতে মনস্থ করেছেন, তাই এদের উদ্ধার করতে হবে।” সেই সঙ্গে স্বয়ং বন্দী কৃষ্ণ তাদের বন্দী দশার কষ্ট অনুভব করলেন।
👣 এখান থেকে শিক্ষণীয় হল ভগবানের প্রতি ভক্তের ভাব কেমন হওয়া উচিৎ। দেবর্ষি নারদ হলেন ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত, পরম সেবক। তিনি জানেন তিনি কোন ইচ্ছা প্রকাশ করলে ভগবান তা রাখবেনই রাখবেন। সেক্ষেত্রে তিনি বলতে পারতেন “ভগবান তোমাদের উদ্ধার করবে”, কিন্তু পরিবর্তে তিনি বললেন “ভগবানের ইচ্ছাতেই তোমাদের মুক্তি সম্ভব হবে”। আপাতদৃষ্টিতে একই কথা, কিন্তু এখানে ভাবটা আলাদা। প্রথম কথাটির মধ্যে ঔদ্ধত্য রয়েছে, দাবী ভাব রয়েছে, যখন আমি বলেছি ভগবান তা মানবেন বা মানতে বাধ্য হবেন। দ্বিতীয় কথাটির মধ্যে দাসত্ব ভাব, সেবা ভাব রয়েছে, ভগবানের প্রাধান্যই প্রধান; ভগবান যদি ইচ্ছা করেন তবেই তোমাদের উদ্ধার হবে, নচেৎ নয়। একজন ভক্তের ভাব এমন হওয়া উচিত; অনেক রুচিসম্মত, অনেক মার্জনীয়। ভগবান ভক্তের জন্য কত করুণাময় অজস্র উদাহরণের মধ্যে এটি একটি। ভক্তের প্রেম ভাবে তিনি আবদ্ধ হন, ভক্তের কামনা কখনও অপূর্ণ রাখেন না; এক্ষেত্রে তার অন্যথা হয় কেমন করে।
👣 তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিলেন, বাঁধা উদুখল টানতে টানতে গাছ দুটির মাঝখান দিয়ে যেতে শুরু করলেন। অর্থাৎ ভগবান কষ্ট করলেন, কিন্তু কেন? তিনি চাইলেই ত তারা উদ্ধার হয়ে যেত, কিংবা সামান্য স্পর্শেই উদ্ধার হয়ে যেত। তিনি পরম নিয়ন্ত্রতা, তবু কষ্ট করলেন কেন? এখান থেকে শিক্ষণীয় হল, ধনপতি কুবেরের পুত্রদ্বয়ের কার্যকলাপে কষ্ট পেয়েছেন তাঁর বিশিষ্ট ভক্ত দেবর্ষি নারদ, দেবর্ষি নারদের কারণে বহুকালযাবত কষ্ট পেয়েছে কুবেরের পুত্রদ্বয়, তাদের কারণে ভগবান যে কত কষ্ট পেয়েছেন, তারই বহিঃপ্রকাশ করেছেন এই কষ্টের মাধ্যমে।
👣 ভগবান চলেছেন টানতে টানতে এবং পেছনে বাঁধা উদুখলটি দুই বৃক্ষের মাঝে আটকে গেল। এরপর তিনি হেঁচকা টান দিতেই দুটো গাছ উপড়ে পড়ল মাটিতে। তৎক্ষণাৎ বৃক্ষদুটির মধ্য থেকে অগ্নির মতো দুই মহাপুরুষ অবির্ভূত হলেন। তাঁদের সৌন্দর্যের ছটায় সর্বদিক আলোকিত হয়ে গেল এবং তাঁরা অবনত মস্তকে শ্ৰীকৃষ্ণকে প্রণতি জানিয়ে স্তুতি করতে লাগলেন।
👣 শ্রীকৃষ্ণ তখন বললেন, “দেবর্ষি নারদ অত্যন্ত কৃপাময়। ধনমদে (ধনগর্বে) অন্ধ হয়ে মিথ্যা অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে দেবর্ষিকে অপমানের কারণে তোমাদের দু’জনকে অভিশাপ দিয়ে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর মহৎ কৃপা প্রদর্শন করেছেন । যদিও তোমরা স্বর্গ থেকে অধঃপতিত হয়ে বৃক্ষ যোনি প্রাপ্ত হয়েছিলে, তবুও তোমরা নারদমুনির অনুগৃহীত। সূর্যের আগমনে যেভাবে চক্ষুর অন্ধকার দূরীভূত হয়, তেমনি ঐকান্তিকভাবে আমার শরণাগত এবং আমার সেবায় কৃত সঙ্কল্প ভক্তের সাক্ষাৎকারের ফলে, কারো আর জড় বন্ধন থাকতে পারে না। তোমরা দু’জনে এখন গৃহে ফিরে যেতে পার। তোমরা যেহেতু সর্বদা আমার ভক্তিতে মগ্ন হতে চেয়েছিলে, তাই তোমাদের বাসনা পূর্ণ হলো, আর সেই স্তর থেকে তোমাদের কখনো অধঃপতন হবে না।”
👣 তখন তাঁরা কৃষ্ণকে প্রদক্ষিণ করে চলে গেলেন । কিন্তু আশেপাশের ক্রীড়ারত বালকেরা সব দেখছিল। এদিকে প্রচণ্ড বজ্রপাতের শব্দে গাছ পড়ে যাওয়াতে নন্দ মহারাজ সহ আদি গোপেরা নতুন বিপদের আশংকা করে সেখানে এলেন। কিন্তু দুটি গাছকে পড়ে থাকতে দেখে সকলে আতঙ্কে শিউরে ওঠে, কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই শক্তপোক্ত দুটি গাছ উপড়ে পড়ল কিভাবে তার কারণ নির্ণয় করতে অসমর্থ হলেন। কৃষ্ণ তো একইভাবে উদুখলে বদ্ধ হয়ে আছে। তবে কে এই কাজটি করল?
👣 তখন সেই ছোট বালকেরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবকিছু খুলে বলল। গভীর বাৎসল্য প্রেমের ফলে নন্দ মহারাজ প্রমুখ গোপেরা বিশ্বাস করতে পারেননি যে, শ্রীকৃষ্ণ এত আশ্চর্যজনকভাবে বৃক্ষ দু’টি উৎপাটন করেছিলেন। কিন্তু কেউ কেউ ভাবতে লাগলেন, “যেহেতু ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, কৃষ্ণ নারায়ণের সমতুল্য হবে, তাই সে এই কার্য করেও থাকতে পারে।”
👣 নন্দ মহারাজ দেখলেন তাঁর পুত্র রজ্জুবদ্ধ থেকে মুক্ত হবার চেষ্টায় উদুখল সমেত টানাটানি করছে, তা দেখে হাসতে হাসতে তাঁকে বন্ধনমুক্ত করেছিলেন। এই দুটি লীলার মাঝেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ‘ভক্তবশ্যতা’ গুণ প্রদর্শন করলেন।
✸✤ বাৎসল্য প্রেমের কাছে ভগবানের ঐশ্বর্য পরাভূত ✸✤
=======================================
👣 সেদিন বলরাম ও তাঁর মা রোহিনী উপানন্দের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে কৃষ্ণকে বন্দী দেখে সে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হল। সে গর্জন করতে লাগল, “কে বেঁধেছে? কার এত বড় সাহস?” তখন সামনে বালকদের মধ্যে কেউ মাতা যশোদার নাম বলল। ততক্ষনে যশোদা মাতাও সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। বলরামকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে বলরাম? চেঁচামেচি করছ কেন?”
👣 ক্রোধান্বিত বলরাম দাপটের সঙ্গে বলল, “তুমি জানো কৃষ্ণ কে? এই কৃষ্ণই নারায়ণ, ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু, এই কৃষ্ণই বামন, কৃষ্ণই মৎস্য, কৃষ্ণই কূর্ম, এই কৃষ্ণই নৃসিংহরূপে হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদারণ করেছিল…”
👣 মাতা যশোদা গাম্ভীর্যতার সাথে বললেন, “আচ্ছা, আর তুমি কে?”
👣 বলরাম তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল, “আমি সঙ্কর্ষণ, আমি শেষ নাগ, আমার মাথায় এ সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড সর্ষপাকৃতির ন্যায় (সর্ষের দানার মতো) বিরাজ করে। আমি মুহুর্তেই এই বিশ্ব ধ্বংস করে দিতে পারি।”
👣 ছোট মুখে বড় বড় কথা শুনে মাতা যশোদা বিস্মিত হয়ে বললেন, “আরে আরে….! সব অবতারই আমার ঘরে ঢুকে বসে আছে। কেন? আর কোনো ব্রজবাসীর ঘরে কি জায়গা ছিল না? আমার ছড়িটা কোথায়? এখুনি নৃসিংহ আর সঙ্কর্ষণের ভূত পিটিয়ে ছাড়াব।” শোনামাত্রই বলরাম ভয়ে দৌড়ে পালালেন। বাৎসল্য প্রেমের কাছে ভগবানের ঐশ্বর্য আজ পরাভূত।
✸✤ দামোদর লীলায় ভগবানের আশ্চর্যমণ্ডিত গুণাবলির প্রদর্শন ✸✤
============================================
এই লীলার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ অনেকগুলো আশ্চর্যমণ্ডিত ও অপ্রকাশিত গুণাবলি প্রদর্শন করেছেন-
🕉️ স্তন্যকাম: যিনি আত্মারাম, যাঁর কিছুই দরকার নেই, তিনি মাতৃদুগ্ধের জন্য লালায়িত হলেন ।
🕉️ আপ্তকাম: যিনি সর্বদাই সন্তুষ্ট, তিনি পর্যাপ্ত দুগ্ধ পান করেও অতৃপ্ত।
🕉️ ক্রোধান্বিত: যিনি সবচেয়ে শুদ্ধ, ত্রিগুণাতীত, তিনি রজোগুণাত্মক ক্রোধান্বিত হলেন ।
🕉️ ভীতি প্রদর্শন: যাঁর ভয়ে ভয়ঙ্কর কাল, যমরাজ, এমনকি মূর্তিমান ভয়ও ভীত হয়, তিনি মাতার শাসনের জন্য ভয় পাচ্ছেন ।
🕉️ ভক্তবশ্যতা: মনের গতিতে ধাবমান হয়েও যোগীরা যাঁকে ধরতে পারেন না, মাতা যশোদা একটু দৌড় দিয়েই তাঁকে ধরে ফেললেন। যিনি কর্মবন্ধন দ্বারা ইন্দ্র থেকে শুরু করে সমস্ত দেবতা ও জীবদের কর্মবন্ধনে আবদ্ধ করে রাখেন, যাঁর আদি-মধ্য-অন্ত্য নেই, তিনি মাতা যশোদার রজ্জুতে আবদ্ধ ইত্যাদি।
🕉️ কৃষ্ণপ্রেম: কৃষ্ণের ভয়ে বায়ুর দেবতা পবনদেব বায়ু প্রবাহিত করছেন। সূর্যদেব কৃষ্ণের ভয়ে সঠিক সময়ে উদিত হচ্ছেন। অগ্নিদেব ও চন্দ্রদেব কৃষ্ণের ভয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এমন কি মৃত্যুর দেবতা যমরাজ পর্যন্ত এই কৃষ্ণের ভয়ে পঞ্চম গতিতে ধাবিত হচ্ছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে সমস্ত দেবতারা যার ভয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন, এই সেই শ্রীকৃষ্ণ যিনি মা যশোদার ভয়ে ধাবিত হচ্ছেন। এই বিভ্রান্তিকর রহস্যের মূল সমাধান হল কৃষ্ণপ্রেম। এই সবই ভগবান করছেন প্রেমের বশীভূত হয়ে।
─•━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━•─
🪔🪔🪔 শ্রীদামোদরাষ্টকম্ 🪔🪔🪔
(DAMODARASTAKAM)
—- (শ্রীমৎ সত্যব্রত মুনিকৃত)
নমামীশ্বরং সচ্চিদানন্দরূপং
লসৎ-কুণ্ডলং গোকুলে ভ্রাজমানম্।
যশোদা-ভিয়োলূখা লাদ্ধাবমানং
পরামৃষ্টম্ অত্যান্ততো দ্রুত্য গোপ্যা ॥ ১ ॥
অনুবাদ: যিনি সচ্চিদানন্দ-স্বরূপ, যাঁর কর্ণযুগলে কুন্ডল আন্দোলিত হচ্ছে, যিনি গোকুলে পরম শোভা বর্দ্ধন করছেন এবং যিনি শিক্য অর্থাৎ শিকায় রাখা নবনীত (মাখন) অপহরণ করে মা যশোদার ভয়ে উদূখলের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে অতিশয় বেগে পলায়ন করেছিলেন ও মা যশোদাও যাঁর পিছনে ধাবিত হয়ে পৃষ্ঠদেশ ধরে ফেলেছিলেন, সেই পরমেশ্বররূপী শ্রীদামোদরকে প্রণাম করি।
রুদন্তং মুহুর্নেত্র-য়ুগ্মং মৃজন্তং
করাম্ভোজ-য়ুগ্মেন সাতঙ্ক-নেত্রম্।
মুহুঃ শ্বাস-কম্প-ত্রিরেখাঙ্ক-কণ্ঠ-
স্থিতগ্রৈবং দামোদরং ভক্তি-বদ্ধম্ ॥ ২ ॥
অনুবাদ: যিনি মায়ের হাতে লাঠি দেখে কাঁদতে কাঁদতে দু’খানি পদ্মহস্ত দিয়ে বারবার চোখদুটিকে রগড়াচ্ছেন, যাঁর চোখে ভয়ের লক্ষণ ফুটে উঠেছে ও ভয়ের কারণে মুহুর্মুহুঃ শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে, শ্বাস-প্রশ্বাসে কম্পন অনুভূত হচ্ছে, যাঁর কণ্ঠস্থ মুক্তাহার দোদুল্যমান হচ্ছে এবং যাঁর উদরে দড়ির বাঁধন রয়েছে, সেই ভক্তিবদ্ধ শ্রীদামোদরকে বন্দনা করি।
ইতীদৃক্ স্বলীলাভিরানন্দ-কুণ্ডে
স্বঘোষং নিমজ্জন্ত-মাখ্যাপয়ন্তম্।
তদীয়েষিতা-জ্ঞেষু ভক্তৈরর্জিতত্বং
পুনঃ প্রেমতস্তং শতাবৃত্তি বন্দে ॥ ৩ ॥
অনুবাদ: যিনি এইরকম বাল্যলীলার দ্বারা সমস্ত গোকুলবাসীকে আনন্দ সরোবরে নিমজ্জিত করেন এবং যিনি ভগবদৈশ্বর্য-জ্ঞান-পরায়ণ ভক্তসমূহে ‘আমি কর্তৃক পরাজিত অর্থাৎ ভক্তের বশীভূত’- এই তত্ত্ব প্রকাশ করেন, সেই ঈশ্বররূপী দামোদরকে আমি প্রেম-সহকারে শত শতবার বন্দনা করি।
বরং দেব মোক্ষং ন মোক্ষাবধিং বা
ন চান্যং বৃণেহ্হং বরেশাদপীহ।
ইদং তে বপুর্নাথ গোপাল-বালং
সদা মে মনস্যা বিরাস্তাং কিমন্যৈঃ ॥ ৪ ॥
অনুবাদ: হে দেব! তুমি সবরকম বরদানে সমর্থ হলেও আমি তোমার কাছে মোক্ষ বা মোক্ষের পরাকাষ্ঠাস্বরূপ শ্রীবৈকুন্ঠলোক বা অন্য কোন বরণীয় বস্তু প্রার্থনা করি না, তবে আমি কেবল এই প্রার্থনা করি যে, এই বৃন্দাবনস্থ তোমার ঐ পূর্ববর্ণিত বালগোপালরূপী শ্রীবিগ্রহ আমার মানসপটে সর্বদা আবির্ভূত হোক। হে প্রভু! যদিও তুমি অন্তর্যামীরূপে সর্বদা হৃদয়ে অবস্থান করছ, তবুও তোমার ঐ শৈশব লীলাময় বালগোপাল মূর্তি সর্বদা সুন্দররূপে আমার হৃদয়ে প্রকটিত হোক।
ইদং তে মুখাম্ভোজম্ অত্যন্ত নীলৈর-
বৃতং কুন্তলৈঃ স্নিগ্ধ-রক্তৈশ্চ গোপ্যা।
মুহুশ্চুম্বিতং বিম্ব-রক্তাধরং মে
মনস্যাবিরাস্তাম্ অলং লক্ষা-লাভৈঃ ॥ ৫ ॥
অনুবাদ: হে দেব! তোমার যে বদন-কমল অতীব শ্যামল, স্নিগ্ধ ও রক্তবর্ণ কেশসমূহে সমাবৃত এবং তোমার যে বদনকমলস্থ বিম্বফলসদৃশ রক্তবর্ণ অধর মা যশোদা বারবার চুম্বন করছেন, সেই বদনকমলের মধুরিমা আমি আর কি বর্ণন করব? আমার মনোমধ্যে সেই বদন-কমল আবির্ভূত হোক। ঐশ্বর্যাদি অন্যবিধ লক্ষ লক্ষ লাভেও আমার কোন প্রয়োজন নেই- আমি অন্য আর কিছুই চাই না।
নমো দেব দামোদরানন্ত-বিষ্ণো
প্রসীদ প্রভো দুঃখ-জালাব্ধি-মগ্নম্।
কৃপাদৃষ্টি-বৃষ্ট্যাতি-দীনং বতানু-
গৃহানেশ মাং অজ্ঞ মেধ্যক্ষিদৃশ্যঃ ॥ ৬ ॥
অনুবাদ: হে দেব! হে দামোদর! হে অনন্ত! হে বিষ্ণু! আমার প্রতি প্রসন্ন হও। হে প্রভু! হে ঈশ্বর! আমি দুঃখপরম্পরারূপ সমুদ্রে নিমগ্ন হয়ে একেবারে মরণাপন্ন হয়েছি, তুমি কৃপাদৃষ্টিরূপ অমৃত দ্বারা আমার প্রাণ রক্ষা কর।
কুবেরাত্মজৌ বদ্ধ-মূর্ত্যৈব যদ্বৎ
ত্বয়া মোচিতৌ ভক্তি-ভাজৌ কৃতৌ চ।
তথা প্রেম-ভক্তিং স্বকাং মে প্রয়চ্ছ
ন মোক্ষে গ্রহোমেহ্স্তি দামোদরেহ ॥ ৭ ॥
অনুবাদ: হে দামোদর! তুমি যেভাবে গো অর্থাৎ গাভী-বন্ধন রজ্জুদ্বারা উদূখলে বদ্ধ হয়ে শাপগ্রস্থ নলকুবের ও মণিগ্রীব নামক দুই কুবের পুত্রদেরকে মুক্ত করে তাদের ভক্তিমান্ করেছ, আমাকেও সেইরূপ প্রেমভক্তি প্রদান কর।
নমস্তেহ্স্তু দাম্নে স্ফুরদ্দীপ্তি-ধাম্নে
ত্বদীয়োদরায়াথ বিশ্বস্য ধাম্নে।
নমো রাধিকায়ৈ ত্বদীয়-প্রিয়ায়ৈ
নমোহ্নন্তলীলায় দেবায় তুভ্যম্ ॥ ৮ ॥
অনুবাদ: হে দেব! তোমার তেজোময় উদরবন্ধন-রজ্জুতে এবং বিশ্বের আধার-স্বরূপ তোমার উদরে আমার প্রণাম নিবেদন। তোমার প্রিয়তমা শ্রীরাধিকাকে আমি প্রণাম নিবাদন করি এবং অনন্তলীলাময় দেব তোমাকেও প্রণতি নিবেদন করি।
◼️ প্রতিদিন শ্রীদামোদরাষ্টকম্ পাঠ করে “শ্রীশ্রী-রাধাদামোদর” কে ঘৃত প্রদীপ, অথবা তুলসী কাষ্ট প্রদীপ। নিবেদন করতে হয়।
অষ্টকম্ পাঠ করতে সম্ভব না হলে (হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র) কীর্তন করে দীনদান করা যাবে।
─•━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━•─
► আরও পড়ুন: Who is Devi Durga? দেবী দুর্গা কে? দশ হাতে অস্ত্র কি কি?
► আরও পড়ুন: দশেরা (Dussehra) কি?✤ বিজয়া দশমীর (Bijaya Dashami) মাহাত্ম্য
► আরও পড়ুন: পিতৃপক্ষ (Pitru Paksha)✤মহালয়া (Mahalaya)✤দেবীপক্ষ (Devi Paksha) কি?