daextlwcn_print_scripts(false);
Parama Ekadashi 2023 - পরমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প, পারণ মন্ত্র-1

Parama Ekadashi 2023 || পরমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প, পারণ মন্ত্র

1 min


222
191 shares, 222 points

এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করেছি পরমা একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Parama Ekadashi), সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত, সংকল্প মন্ত্র, পারণ মন্ত্র।

সেই সঙ্গে বিশেষভাবে আলোচনা করেছি পরমা একাদশী ব্রত (Parama Ekadashi Vrat) পালনের উদ্দেশ্য কি?

পুরুষোত্তম মাস বা অধিমাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী পরমা একাদশী বা কমলা একাদশী নামে পরিচিত। এই একাদশী প্রতি তিন বছরে একবার আসে, তাই এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই একাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলে সুখ সমৃদ্ধি, ঐশ্বর্য আসে। এই ব্রত পালনে ভগবান বিষ্ণু প্রসন্ন হন।

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

✤ পরমা একাদশী মাহাত্ম্য ✤

(Significance of Parama Ekadashi)

সাধারণত প্রতি বছর ২৪টি একাদশী হয়। কিন্তু প্রায় তিন বছর অন্তর পুরুষোত্তম মাস বা অধিমাস আসে, ফলে সেই মাসে ২টি একাদশী অতিরিক্ত পালিত হয় অর্থাৎ সেই বছরে ২৬টি একাদশী হয়। পুরুষোত্তম মাস বা অধিমাসে ২টি একাদশী হল পদ্মিনী একাদশী (শুক্লপক্ষ) এবং পরমা একাদশী (কৃষ্ণপক্ষ)।

◼️ এই তিথি মুক্তিপ্রদায়িনী, সর্বপাপ বিনাশিনী, সর্ব সুখদায়িনী এবং ভগবানের অতীব প্রিয়তমা তিথি। এই ব্রত পালনে মানুষ অন্ন, ধন সম্পদ, ঐশ্বর্য সবই লাভ করে থাকে। এই সুন্দর ব্রত ধনপতি কুবের প্রথম করেছিলেন, এতে খুশি হয়ে মহাদেব তাঁকে ধনসম্পদের দেবতা (অধিপতি) পদ প্রদন করেন। রাজা হরিশ্চন্দ্রও এই ব্রত পালনে স্ত্রী পুত্র ও রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন। 

◼️ পুরুষোত্তম মাস বা অধিমাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী পরমা একাদশী বা কমলা একাদশী নামে পরিচিত। এই একাদশী প্রতি তিন বছরে একবার আসে, তাই এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই একাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলে সুখ সমৃদ্ধি, ঐশ্বর্য আসে। এই ব্রত পালনে ভগবান বিষ্ণু প্রসন্ন হন।

◼️ পরমা একাদশী পালনের ফলে সকল পাপ বিনষ্ট হয় এবং মানুষ ইহকালে সুখ ও পরকালে মুক্তি লাভ করে।

◼️ যে ব্যক্তি ‘পরম একাদশী’ ব্রত পালন করে, সে সমস্ত তীর্থযাত্রা ও যজ্ঞ আদির ফল লাভ করে। জগতে যেমন চতুর্পদ (চার পা যুক্ত) প্রাণীদের মধ্যে গরু শ্রেষ্ঠ, দেবতাদের মধ্যে ইন্দ্ররাজ শ্রেষ্ঠ, তেমনি মাসগুলির মধ্যে অধিমাস শ্রেষ্ঠ। এই অধিমাসে পঞ্চরাত্রি অত্যন্ত শুভ। ‘পদ্মিনী একাদশী’ও এই মাসে শ্রেষ্ঠ। তার উপবাসে সকল পাপ বিনষ্ট হয় এবং পুণ্যময় বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয়।

◼️ এই একাদশীতে পঞ্চরাত্রি উপবাস অতি উত্তম।

পরমা একাদশীর দিন থেকে যারা পাঁচ দিন নির্জলা উপোসে থাকে, তারা মা-বাবা স্ত্রীসহ স্বর্গে যায়।

যারা পরমা একাদশীর দিন থেকে পাঁচ দিন কেবল রাতে প্রসাদ ভোজন করে তারা স্বর্গে যায়।

যারা পাঁচ দিন স্নান করে ব্রাহ্মণদের ভোজন করায়, তারা সকল বিশ্ববাসীকে ভোজন করানোর ফল পায়।

যে ব্যক্তি এই একাদশীতে একটি ঘোড়া দান করে, সে তিন জগত দান করার ফল লাভ করে।

যারা এই একাদশীতে শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণকে তিল দান করেন, তারা তিলের সংখ্যার সমান বছর বিষ্ণুলোকে (বৈকুণ্ঠ লোকে) বাস করে। যারা ঘি এর পাত্র দান করে তারা সূর্যলোকে বাস করে।

যারা এই একাদশীতে পাঁচ দিন ব্রহ্মচারী থাকেন তারা দেবীসহ স্বর্গলোকে বাস করে।

◼️ যে মানুষ এই একাদশী ব্রত পালন না করেন তিনি চুড়াশি লক্ষ যোনিতে ভ্রমণ করেও কখনও সুখী হয় না। 

তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত এই একাদশী ব্রত পালন করা।

আরও পড়ুন: জীবের জন্ম-মৃত্যু চক্র (Cycle of Birth and Death) ও ৮৪ লক্ষ যোনি

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

✤ পরমা একাদশী ২০২৩ : সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত ✤

(Parama Ekadashi 2023 : Timing and Pārana Muhūrta)

যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।

দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 12 আগষ্ট 2023 শনিবার পরমা একাদশী।

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৬ই শ্রাবণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।

শনিবার ভোরে ( অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে)  স্নান সেরে ভগবানের সম্মুখে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করবেন।

পারণ : পরমা একাদশীর ঠিক রদিন অর্থাৎ রবিবার সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের  মধ্যে  –

সকাল ০৫:৩৩ থেকে ০৮:৪৯ মিনিটের মধ্যে ঢাকা, বাংলাদেশ সময় এবং

সকাল ০৫:১২ থেকে ০৮:২১ মিনিটের মধ্যে কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতীয় সময়।

ভোরে স্নান সেরে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের নিকট অবশ্যই অর্পণ করবেন, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন।একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প, পারণ মন্ত্র

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

পরমা একাদশী সংকল্প মন্ত্র

(Parama Ekadashi Saṅkalpa Mantra)

একাদশীর দিন ভগবান কৃষ্ণের সম্মুখে আমরা অবশ্যই সংকল্প নেব –

একাদশ্যাম্‌ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।

ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্‌ মে ভবাচ্যুত।।

অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

পরমা একাদশী পারন মন্ত্র

(Parama Ekadashi Pārana Mantra)

একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর অর্থাৎ, উপবাসের পরদিন সকালে যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে একাদশীর পারণ মন্ত্র তিনবার ভক্তিভরে পাঠ করতে হয়। এরপর প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত ভাবে দরকার, নতুবা একাদশীর পূর্ণ ফল লাভ হবে না। আর অবশ্যই একাদশীর আগের দিন ও পরের দিন নিরামিষ প্রসাদ গ্রহণ করতে হবে। 

একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ —

ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥

—- (বৃ: না: পু: ২১/২০)

অনুবাদ: হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।

 

এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

Parama Ekadashi 2023 - পরমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প, পারণ মন্ত্র-2

━━━━━━◆❃◆━━━━━━

✤ পরমা একাদশী মাহাত্ম্য কথা ✤

(Parama Ekadashi Māhātmya Kathā)

পুরুষোত্তম মাস বা অধিমাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী হল ‘পরমা একাদশী’। পদ্মপুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে অধিমাসের কৃষ্ণপক্ষের পরমা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।

মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- ‘হে গোবিন্দ! হে কৃষ্ণ! পুরুষোত্তম মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি? বিধিই বা কি? তা কৃপা করে  আমার কাছে বর্ণনা করুন। আমার আকুল হৃদয় জানতে আগ্রহী।’

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রসন্ন হৃদয়ে বললেন ‘হে ধর্মপুত্র! হে যুধিষ্ঠির! সুখভোগ, মুক্তি, আনন্দ প্রদানকারী, পবিত্র এবং পাপবিনাশিনী এই একাদশীর নাম ‘পরমা একাদশী’ অথবা ‘কমলা একাদশী’

তোমার প্রতি স্নেহ বশতঃ অশেষ মহিমাযুক্ত পুরুষোত্তম মাসের কৃষ্ণ-পক্ষীয়া একাদশীর মহিমা বর্ণন করছি, অতি মনোযোগ সহকারে তা শ্রবন কর। ব্রহ্ম মূহুর্তে শয্যা পরিত্যাগপূর্বক যথাবিহিত স্নান-আহ্নিকাদি সেরে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর প্রীতি কামনায় শ্রীভগবানের নাম মন্ত্র জপ করতে হয়। গৃহেতে যে পরিমাণে জপ করবে নদীতীরে তার দ্বিগুণ, তদপেক্ষা গোষ্ঠে (গোচারণভূমিতে) সহস্রবার (হাজার বার), তীর্থে শতবার, তুলসীর নিকটে লক্ষবার এবং বিষ্ণুর সম্মুখে অসংখ্যবার জপ করতে হয়।

 

✤ ব্রত কথা ১ ✤

অবন্তীনগরে বিশ্বকর্মা নামে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তার পাঁচ পুত্র ছিল। তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল জয় শর্মা। কোন এক দুষ্কর্ম করার জন্য তার পিতা মাতা তাকে বাড়ী থেকে বহিষ্কৃত করে দেয়। ভ্রমণ করতে করতে কোন এক সময় এলাহবাদে এসে ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান কার্য সেরে ক্ষুধায় কাতর হয়ে মলিন বদনে নিকটে কোন একমুনির আশ্রমে উপস্থিত হয়। সে দিনটা ছিল আবার এই একাদশী তিথি।

অনেক ভক্তবৃন্দ মুনি মুখপদ্ম থেকে নিঃসৃত একাদশী মহিমা শ্রবণ করে ব্রত পালন করছেন। ঐ ব্রাহ্মণও দেখাদেখি ব্রত পালন করে ব্রত কথা শুনলেন। তার ব্রত উপবাসে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং লক্ষ্মীদেবী দর্শন দিয়ে বললেন – “ভক্তির সঙ্গে এই উপবাস পালন করায় আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। তোমাকে বর দান করার উদ্দেশ্যে আমি এসেছি। আমার নাম লক্ষ্মী, আমাকে আমার প্রভু পরম কৃপালু নারায়ণ পাঠিয়েছেন। আমি বৈকুন্ঠ থেকে এসেছি। এই ব্রতানুষ্ঠানে তোমার অধীনা হয়েছি। তোমার বংশে শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণগণ জন্মগ্রহণ করবে। আমি সত্যই বলছি – আমার নাম লক্ষ্মী।”

ব্রাহ্মণ বললেন – “হে কমলে! সত্যিই যদি আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে বর দিতে চান তবে এই ব্রতকথা ভালোভাবে বর্ণন করুন যাতে আরও দ্বিজগণ এই ব্রতকথায় মাহাত্ম্য লাভ করতে পারেন।”

লক্ষ্মীদেবী বললেন, “এই ব্রতে ভগবান শ্রীনারায়ণকে ভক্তিভরে পূজা করতে হয়, নিরাহারে অবস্থান পূর্বক পরদিন দ্বাদশীতে পুণ্ডরীকাক্ষের পূজা নৈবেদ্যান্তে প্রসাদন্ন পারণ করতে হয়।”

শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, এরপর লক্ষ্মীদেবী বর প্রদান করে অন্তর্হিতা হলেন। অনন্তর সেই বিপ্রধনশালী হয়ে সুখে হরিস্মরণ করে দেহান্তে ভগদ্ধামে গমণ করেন। কমলার আশীর্বাদে ব্রাহ্মণ ধন্য হয়েছিলেন। তাই এই একাদশীকে কমলা একাদশীও বলা হয়।

 

✤ ব্রত কথা ২ ✤

আবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে এই ব্রত সম্বন্ধীয় আরেকটি অতি সুন্দর মনোহর কাহিনী বর্ণনা করতে শুরু করলেন। কাম্পিল্য নগরে মুনি ঋষিদের কাছে আমি তা শুনেছিলাম। মন দিয়ে তা শ্রবণ করো।

কাম্পিল্য নগরে সুমেধা নামক এক ব্রাহ্মন ছিলেন, তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল পবিত্রা। তিনি অত্যন্ত পতিব্রতা ছিলেন। কিন্তু পূর্ব কর্মফলের কারনে এই ব্রাহ্মন একসময় ধনহীন হতদরিদ্র হয়ে পড়েন। ভিক্ষা চেয়েও তার কিছুই জুটত না। কিন্তু তাঁর স্ত্রী নিজ পতির সেবা অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে করতেন। গৃহে অতিথি সেবার জন্য প্রয়োজনে অনাহারে থাকতেন। স্বামীর দূরাবস্থা দেখে স্বামীকে কখনও বলতেন না যে গৃহে অন্ন নেই। এতে ব্রাহ্মণীর মনে একটুও দুঃখ ছিল না। অন্যদিকে পত্নীর শারিরীক দুরাবস্থার কথা চিন্তা করে ব্রাহ্মন নিজের ভাগ্যকে সবসময় দোষারোপ করতেন।

একদিন পত্নী পবিত্রাকে বললেন, হে কান্তে! আমি ধনবান মানুষদের কাছেও ভিক্ষা চেয়ে পাই না। বলো এখন আমি কি করব? ধন সংগ্রহের জন্য আমি অন্য কোথাও যেতে চাই। তুমি আমাকে অনুমতি দাও।

ব্রাহ্মনপত্নী তখন তাঁকে বললেন, হে বিদ্বান! আপনার চেয়ে অধিক বিদ্বান আমি নই, তবে এইটুকু জানি – বিদ্যা, ধন, দারিদ্রতা সর্বত্রই পূর্বজন্মার্জিত ফল। এ জগতে মানুষ তার পূর্ব সঞ্চিত কর্মফল ভোগ করে। পূর্ব জন্মের কোনো ফল না থাকলে স্বর্ণপর্বতে গেলেও কিছু পাওয়া যাবে না। হে স্বামী, পূর্ব জন্মে আমি বা আপনি কেউই ধন সম্পদ, অন্ন ইত্যাদি কোনো কিছুই সৎ পাত্রে দান করিনি। তাই আমাদের অন্ন জুটছে না, আমাদের এই দরিদ্রতা।  তাই আমাদের ভাগ্যে যা আছে তা এখান থেকেই লাভ হবে। আপনাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্তও থাকতে পারবো না। কেন না পতিহীনাকে সবাই দুর্ভাগা বলে নিন্দা করবে। তাই এখানে থেকে যা অন্ন লাভ হয়, তাই দিয়ে দিনযাপন করব।

 ঐ বিচক্ষণ ব্রাহ্মন পত্নীর কথা শুনে নগরেই রইলেন। একদিন মুনিশ্রেষ্ঠ কৌন্ডিন্য সেখানে এলেন। তাঁকে দেখে সুমেধা খুব খুশি হলেন। ব্রাহ্মন সস্ত্রীক মুনিকে প্রনাম জানালেন।সুন্দর আসন দিয়ে তাঁর পূজা করলেন। ঐ দম্পতি আনন্দ সহকারে মুনিকে ভোজন করালেন।

এরপর ব্রাহ্মণ পত্নী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে মুনিবর, কিভাবে পাপ-দুঃখ দারিদ্রতা নাশ হয়? বিনা দানে কিভাবে ধন, বিদ্যা, স্ত্রী লাভ হয় এবং ভগবানে ভক্তির উদয় হয়?  আমার স্বামী আমাকে এখানে রেখে ভিক্ষার জন্য দূরদেশে যেতে চান। কিন্তু আমি তাঁকে যেতে নিষেধ করেছি। এখন আমাদের ভাগ্যবশে আপনার শুভাগমন হয়েছে। আপনার কৃপায় আমাদের দারিদ্রতা অবশ্যই নাশ হবে। দারিদ্রতা নাশ হয় এমন কোনো ব্রত বা তপস্যার কথা আমাদের বলুন।’

Parama Ekadashi 2023 - পরমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প, পারণ মন্ত্র-3

এই কথা শুনে মুনিবর বললেন, ‘হে সাধ্বী! পুরুষোত্তম মাসের কৃষ্ণপক্ষে পরমা নামে সর্বশ্রেষ্ঠা এক একাদশী আছে। এই তিথি মুক্তিপ্রদায়িনী, সর্বপাপ বিনাশিনী, সর্ব সুখদায়িনী এবং ভগবানের অতীব প্রিয়তমা তিথি। এই ব্রত পালনে মানুষ অন্ন, ধন সম্পদ ঐশ্বর্য সবই লাভ করে থাকে। এই সুন্দর ব্রত ধনপতি কুবের প্রথম করেছিলেন, এতে খুশি হয়ে মহাদেব তাঁকে ধনসম্পদের দেবতা (অধিপতি) পদ প্রদন করেন। রাজা হরিশ্চন্দ্রও এই ব্রত পালনে স্ত্রী পুত্র ও রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন। হে বিশালাক্ষী, এই জন্য তোমরাও এই ব্রত পালন কর।’

এরপর ঋষি কৌণ্ডিণ্য তাদেরকে একাদশীর উপবাসের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান জানালেন। ঋষি বললেন, “হে ব্রাহ্মণী! এই একাদশীতে পঞ্চরাত্রি উপবাস অতি উত্তম।

পরমা একাদশীর দিন থেকে যারা পাঁচ দিন নির্জলা উপোসে থাকে, তারা মা-বাবা স্ত্রীসহ স্বর্গে যায়।

যারা পরমা একাদশীর দিন থেকে পাঁচ দিন কেবল রাতে প্রসাদ ভোজন করে তারা স্বর্গে যায়।

যারা পাঁচ দিন স্নান করে ব্রাহ্মণদের ভোজন করায়, তারা সকল বিশ্ববাসীকে ভোজন করানোর ফল পায়।

যে ব্যক্তি এই একাদশীতে একটি ঘোড়া দান করে, সে তিন জগত দান করার ফল লাভ করে।

যারা এই একাদশীতে শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণকে তিল দান করেন, তারা তিলের সংখ্যার সমান বছর বিষ্ণুলোকে (বৈকুণ্ঠ লোকে) বাস করে। যারা ঘি এর পাত্র দান করে তারা সূর্যলোকে বাস করে।

যারা এই একাদশীতে পাঁচ দিন ব্রহ্মচারী থাকেন তারা দেবীসহ স্বর্গলোকে বাস করে।

হে ব্রাহ্মণী! তুমি তোমার স্বামীর সাথে এই একাদশী ব্রত পালন কর। এটি অবশ্যই তোমাদের সকল পাপ বিনষ্ট হবে, ইহকালে সুখ ও পরকালে মুক্তি লাভ হবে। 

হে পাণ্ডব! কৌণ্ডিণ্য মুনির উপদেশে পতি পত্নী উভয়ে এক সাথে বিধি মতো পুরুষোত্তম মাসের পরমা একাদশী ব্রত পালন করলেন। ব্রত সমাপনের পর রাজপ্রাসাদ থেকে এক রাজকুমার তাদের কাছে এলেন। ব্রহ্মার প্রেরণায় তিনি বহু ধন সম্পদ, নতুন গৃহ ও গাভী এই দম্পতিকে দান করলেন। এই দানের ফলে মৃত্যুর পর সেই রাজা বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এবং এই পরমা ব্রতের প্রভাবে ব্রাহ্মন দম্পতির সকল দুঃখের অবসান হল।

যে ব্যক্তি ‘পরম একাদশী’ ব্রত পালন করে, সে সমস্ত তীর্থযাত্রা ও যজ্ঞ আদির ফল লাভ করে। জগতে যেমন চতুর্পদ (চার পা যুক্ত) প্রাণীদের মধ্যে গরু শ্রেষ্ঠ, দেবতাদের মধ্যে ইন্দ্ররাজ শ্রেষ্ঠ, তেমনি মাসগুলির মধ্যে অধিমাস শ্রেষ্ঠ। এই অধিমাসে পঞ্চরাত্রি অত্যন্ত শুভ। ‘পদ্মিনী একাদশী’ও এই মাসে শ্রেষ্ঠ। তার উপবাসে সকল পাপ বিনষ্ট হয় এবং পুণ্যময় বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয়।

যে মানুষ এই একাদশী ব্রত পালন না করেন, তিনি চুরাশি লক্ষ যোনিতে ভ্রমন করেও কখনও সুখী হয় না। বহু পুণ্যকর্মের ফলে দুর্লভ মনুষ্য জন্মলাভ হয়। তাই মানব জীবনে এই একাদশী ব্রতপালন অবশ্য কর্তব্য। এই মাহাত্ম্য শুনে মহারাজ যুধিষ্ঠির সমস্ত আত্মীয় বর্গের সাথে এই একাদশী ব্রত পালন করেছিলেন। 

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।।

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ!

Read-More_4

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

x

Like it? Share with your friends!

222
191 shares, 222 points
daextlwcn_print_scripts(true);

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]